আমার খাঁচায় তুমি বন্দি পর্ব-০৮

0
3564

#আমার_খাঁচায়_তুমি_বন্দি
#Avigya_Ayaat
#পর্ব:৮

অয়ন: রিফাত এসব কি করে হলো। তুই তো রাহিকে দেখতেই পারতি না আবার সব সময় তোদের ঝগড়া লেগেই থাকে। দোস্ত তাহলে কেমনে কি হলো?
রিফাত মুচকি হেসে বলে…
রিফাত: জানি না কবে, কি করে এমন হলো।তবে ওর সাথে ঝগড়া করতে খুব ভাল লাগে, ও পাশে থাকলে খুব ভাল লাগে, ওকে সব সময় চোখে চোখে রাখতে মন চায় আর এখন তো নিজের করে পেতে মন চায়।
অয়ন:বাবাহহহ্, তুই তো দেখি রাহির প্রেমে হাবু ডুবু খেয়ে কবির মতো কথা বলতে শিখেগেছিস।
রিফাত: তোরর ও হবে সময় আসুক।
অয়ন: আচ্ছা আমি এখন চলি পরে আবার দেখা হবে।বিয়েতে দাওয়াত দিস।
রিফাত: তার আগে রাহি রাজি হয় কিনা তা দেখতে হবে রে।
অয়ন : হবে হবে সে ও তোকে বিয়ে করবে।
রিফাত: তাই জেনো হয়।
এরপর অয়ন চলে যায়। রিফাত নিজের কেবিনে বসে রাহির কথা ভাবছে। রাহি কি রাজি হবে তাকে বিয়ে করার জন্য।
বিভিন্ন কথা ভাবছে এমন সময় রাহি আসে।
রাহি: আনমনে বসে কার কথা ভাবা হচ্ছে।
রিফাত: কারো কথা না।
রাহি: মিথ্যে বলেন কেনো।
রিফাত: আচ্ছা সত্যি বলছি তবে কাউকে বলবে না।
রাহি: ঠিক আছে বলেন।
রিফাত: আমার প্রেমিকার কথা ভাবছি।
রাহি: সে আবার কে?
রিফাত: আছে একজন যাকে আমি খুব ভালবাসি।
রাহি রিফাতের কথা গুলো শুনে মনে মনে খুশি হয়।
রাহি: তার নাম কি?
রিফাত: তার নাম বলা যাবে না। তবে ১মাস পর যেদিন আমরা আমাদের পরিবারকে বলবো যে আমরা বিয়ে করবো না তারপরে দাদুর সাথে তার পরিচয় করিয়ে দেবো।
রিফাতের এই কথা শুনে রাহির মন খারাপ হয়ে যায়। রাহির মনে হচ্ছে তার মনে কেউ ছুরি দিয়ে আঘাত করছে।
নিজেকে সামলে রাহি বলে…
রাহি: ও আচ্ছা ভাল।
রিফাত: হুমম।
রাহি: আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি ।
রাহি রিফাতের কেবিন থেকে বের হয়ে অফিসের ছাদে চলে যায়।
ছাদে এসে রাহি এক কোনে দাড়িয়ে ভাবছে…..
রাহি: রিফাত অন্য কাউকে ভালবাসে আর আমি ভেবেছিলাম সে আমাকে হয়তো ভালবাসে। আমাকে ভাল না বাসলে সে তাহলে তাদের চাকরি থেকে বের করে দিলো কেনো। আমার এতো খারাপ লাগছে কেনো।
এই বলে রাহি কান্না করে দেয়।
কিছু সময় পর….
রিফাত রাহিকে খুজতে খুজতে ছাদে আসে। ছাদে এসে দেখে রাহি ছাদের এক কোনে চেয়ার রাখা সেখানে বসে আছে। রিফাত রাহির কাছে গিয়ে বলে….
রিফাত: রাহি তুমি এখানে বসে। আমি তোমাকে খুজতে ছিলাম।
রাহি শান্ত কন্ঠে বলে….
রাহি: কেনো?
রিফাত: আমি একটু আমার প্রেমিকার সাথে দেখা করতে যাবো। তাই তোমাকে তোমার বাসায় দিয়ে আসি।
রাহির মন খারাপ ছিলো রিফাতের কথা শুনে মন আরো খারাপ হয়ে যায়।
রাহি: আপনি চলে যান। আমি একাই বাসায় চলে যেতে পারবো।
রিফাত: আরে না চলো তোমাকে দিয়ে আসি।
রাহির রিফাতের সাথে তর্ক করার কোনো ইচ্ছা নেই। তাই চুপচাপ রিফাতের সাথে চলে আসে।
কিছু সময় পর …
রাহির বাসার সামনে এসে রিফাত গাড়ি থামায়।
রিফাত: রাহি তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নামো তোমার বাসার সামনে চলে এসেছি।
রাহি: আজ এতো তাড়াতাড়ি নামতে বলতাছেন কেনো?
রিফাত: আমার প্রিয়তমা আমার জন্য অপেক্ষা করছে তাড়াতাড়ি যেতে হবে তাই।
রাহি: ওও।
এরপর রাহি গাড়ি থেকে নেমে পরে আর রিফাত তাকে বাই বলে চলে যায়।
রাহি নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে রুমের বেলকনিতে দাড়ায় আর আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে….
রাহি: আমার কেনো রিফাতের প্রিয়তমার কথা শুনে কষ্ট হয়। কখনো মনে হয় তার প্রিয়তমাকে খুন করে দেয়,আমার খারাপ লাগে কেনো। তার মানে আমি তাকে চাই তবে সে তো অন্যের হয়ে গেছে। আমি আর তার পাশে থেকে তার প্রিয়তমাকে নিয়ে বলা কথা শুনতে পারবো না। তাই আমি অন্য কোথাও চলে যাবো ভাল হবে। পুরো বিকেল রাহির মন খারাপ হয়ে থাকে।
পরেরদিন….
সকালে রাহির ঘুম ভাঙ্গে রিফাতের কলে।
রাহি ঘুম ঘুম চোখে ওঠে রিফাতের কল ধরে..
রাহি: হ্যালো। কি হয়ছে এতো সকালে ফোন দিছেন কেনো?
রিফাত: তোমার একটা হেল্প লাগবে আমার।
রাহি: কি হেল্প?
রিফাত: আমার প্রিয়োতমাকে বিয়ের জন্য প্রপোজ করবো তাই রিং কিনতে হবে। তবে ওর হাতের সাইজ জানি না তাই তোমার হেল্প লাগবে।
রাহির রিফাতের কথা শুনে রাগ ওঠছে আর মনে মনে বলছে…
রাহি: বুইড়া খাটাশ সব সময় আমার সামনে শুধু ওই মেয়েটার কথা বলে মনে তো চায় ওই মেয়ের সব চুল ছিড়ে ফেলি আর রিফাতকে খুন করে ফেলি।
রিফাত: হ্যালো, রাহি কিছু বলছো না কেনো?
রাহি: তো আমি কি করতে পারি।
রিফাত: তোমার মতোই দেখতে আমার প্রিয়তমা তাই তোমার হাতের সাইজের রিং কিনলেই হবে। তাই তুমি যদি আমার সাথে রিং কিনতে যেতে তাহলে অনেক ভাল হতো।
রাহি মনে মনে…
রাহি: তোর রিংয়ের কপালে ঝাটা। আমি জীবনে যামু না তোরে রিং কিনে দিতে বদের হাড্ডি।

রিফাত: কিছু বলো তো
রাহি: আসলে আমি অসুস্থ। সরি আমি যেতে পারবো না। আমার ভাল লাগছে না এখন বাই।
এই বলে রাহি ফোন কেটে দেয়।
রাহি সকালের নাস্তা করে ড্রইংয় রুমে বসে অাছে এমন সময় বাসার কলিংবেল বাজে। রাহির মা দরজা খুলে দেখে রিফাত দাড়িয়ে।
রাহির মা: রিফাত তুমি এই সময়।
রিফাত: আসসালামু আলাইকুম আন্টি।রাহি বলে অসুস্থ তাই দেখতে আসলাম।
রাহির মা: কই রাহি তো সুস্থই।ওইযে বসে বসে কার্টুন দেখছে।
রিফাত রাহির দিকে রাগি চোখে তাকায় আর রাহি তা দেখে রাহি দাত কেলিয়ে হাসি দেয়।
তা দেখে রিফাতের আরো রাগ হয়ে যায়। রিফাত রাহির কাছে গিয়ে বলে
রিফাত: চল আমার সাথে।
রাহি মনে মনে…
রাহি: এখন এর সাথে গেলে আমারে মারবো যা রেগে আছে। আল্লাহ বাঁচাও….
রিফাত: কি হলো চল…
রাহি: আমি যামু না।
রিফাত: আর একবার বলবো চল।
রাহি: যামু না তুই একাই যা।
রাহির কথা শুনে রিফাত রাহির হাত ধরে টেনে বাসার বাহিরে নিয়ে আসে আর তার জন্য রাহি বলে
রাহি: আরে আমি যামু না রে, ওই বদের হাড্ডি আমার হাত ছার , ওই মা এই ফাজিল রে থামাও না কেনো রে,তোমার মেয়েরে মারতে নিয়ে যাইতাছে রে।
রাহির মা: রাহি তোর ড্রামা বন্ধ কর।
রাহি: মা তুমি এই সব কি বলো গো……।
রিফাত: চুপ, ড্রামা করা বন্ধ কর।না হলে সত্যি মেরে ফেলবো।
রাহি চুপ হয়ে যায়।
তারপর রাহি আর রিফাত একটা শপিংমলে যায় আর রিংয়ের দোকানে যায়।
রিফাত রাহিকে রিং পছন্দ করতে দিছে। রাহির মন খারাপ তাও বসে বসে রিং পছন্দ করছে।কতো গুলো হাতে পরছে আর খুলছে। এমন সময় রাহির চোখ যায় একটা ডায়মন্ডের সুন্দর একটা রিংয়ের ওপর। রাহি তাড়াতাড়ি সেইটা হাতের আঙ্গলে পরে আর রিফাতকে বলে যে ওইটা পছন্দ হইছে। রিফাতের ও অনেক পছন্দ হয়। রাহি হাতে নিয়ে দেখছে এমন সময় রাহির পিছন থেকে অচেনা এক লোক বলে
অচেনা: আপনার হাতেই এই আংটিটা বেশ মানিয়েছে।এই আংটি আপনার হাতের আঙ্গল ছারা আর কোনো হাতে মানাবে না।
রাহি মনে মনে বলে
রাহি: আইছে বেয়দপ ছেলে আমারে পাম দিতে। আমি মনে হয় তারে বলতে বলছি।
এসব মনে মনে বলে রাহি যেই কিছু বলতে যাবে তখনি রিফাতের দিকে তাকায়। রাহি দেখে রিফাত সেই ছেলের কথা শুনে রাগে ফুসছে আর জ্বলছে। রাহি রিফাতের এমন অবস্থা দেখে আরো জ্বালাতে রাহি রাগি কন্ঠে কিছু না বলে হাসি মুখে সেই ছেলেকে বলে…
রাহি: ধন্যবাদ আপনাকে,এতো সুন্দর প্রশংসা করার জন্য।
অচেনা: আপনাকে ও ধন্যবাদ এতো সুন্দর হবার জন্য।
রাহি ভিতরে ভিতরে রাগছে তবে মুখে হেসে বলে
রাহি: আপনি ও না,হাহাহা…
অচেনা: আপনার হাসিটা ও আপনার মতো সুন্দর।
রিফাত রাগে রাহির হাত থেকে আংটি খুলে দোকানদার কে বলে এটা আমরা নিবো না।অন্য একটা রিফাত পছন্দ করে তাড়াতাড়ি টাকা দিয়ে রাহিকে নিয়ে বের হবে
তখন পিছন থেকে সেই ছেলেটি রাহিকে উদ্দেশ্য করে বলে
অচেনা: আপনার নামটা কি বললেন না, আর ওনি কি হয় আপনার?
রাহি মুচকি হেসে বলে…
রাহি: আমার নাম রাহি আর ওনি আমার বস।
রিফাতের রাগে মাথা গরম হয়ে আসছে তাই রাহির হাত ধরে টেনে বাহিরে নিয়ে আসে।
রিফাত: এতো অচেনা মানুষের সাথে তোর হেসে কথা বলতে হবে কেনো।
রাহি: আমার ইচ্ছা।
রিফাত: কোনো ছেলের সাথে তুই কথা বলবি না বুঝেছিস।
রাহি একটা মুখ ভেংচি দেয়।
তারপর দুজনে চলে আসে।
পরেরদিন…
রাহি আর রিফাত অফিসের কেবিনে বসে আছে এমন সময় রিফাতের কেবিনে একটা মেয়ে আসে…
-হাই বেবি,কেমন আছো রিফাত জানু।
এই বলে রিফাতের কাছে যায়।
রাহির কথা গুলো শুনে অনেক রাগ হয়।
রাহির মন বলছে মেয়েটার গালে চড় বসাতে।
কিন্তু কিছু না বলে চুপচাপ বসে আছে।
রিফাত: রাহি ওর নাম আলিনা। আর আলিনা ওর নাম রাহি।
আলিনা: হ্যালো রাহি।
রাহি: হ্যালো।
আলিনা:রাহি তুমি যদি কিছু মনে না করো তাহলে কি বাহিরে যাবে। আমি আর রিফাত একটু একা কথা বলতাম।
রাহি: ওকে।
এই বলে রাহি কেবিন থেকে বের হয়ে যায়।
রাহি বাহিরে দাড়িয়ে একা একা বলে…
রাহি: মনে তো বলছিলো মেয়েটার হাত পা ভেঙ্গে দেয় কিন্তুু পারলাম না।
রাহি একা একা বকবক করছে তখনি পিছন থেকে বলে
-হ্যালো মিস।
রাহি পিছনে তাকিয়ে বলে
রাহি: আপনি
– কাল তো নামটা বলা হয়নি আর আপনি এখানে কেনো?
রাহি: আমি জব করি এইখানে।
অচেনা: আমার নাম শিহাব হোসেন আর এখানে একটা কাজের জন্য এসেছি।তবে ভাল হলো আপনার সাথে দেখা হলো।
রিফাত নিজের কেবিনে বসে দেখে রাহি কার সাথে যেনো হেসে হেসে কথা বলছে। যখন দেখে সেই কালকের ছেলেটির সাথে রাহি হেসে কথা বলছে তখন রিফাতের মাথায় রাগ ওঠে যায়।
রাগে নিজের কেবিন থেকে বের হয়ে রাহির গালে জোরে একটা চড় দেয়।
হঠাৎ এমন হওয়ায় রাহির কি হয়ছে তা বুঝতে একটু সময় লাগে। বুঝার পা রাহি গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে রিফাতের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আর রিফাত………
চলবে…..