আমার গল্পে আমি খলনায়ক পর্ব-৯+১০

0
127

#আমার_গল্পে_আমি_খলনায়ক
#MD_Nachemul_Hasan
#part_9

“মীরা আমার কাছে বলেছে আহিল নাকি রোশানের মৃত্যুর কথা ওকে বলেছে, আবার আহিলের কাছে বলেছে আমি নাকি বলেছি ওকে রোশানের মৃত্যুর ব্যাপারে!ও মিথ্যা কথা কেনো বলছে, কোনো ভাবে কি রোশানের মৃত্যুর পিছনে মীরার কোনো হাত আছে,,

তিশা আর রায়হানের রক্তের সেম্পল নিয়ে গেছে টেষ্ট করার জন্য।
আহিল আর তিশা এখন ডাক্তারের চেম্বারের বাহিরে চেয়ারে বসে আছে। রায়হান গিয়েছে ডাক্তারের সাথে কথা বলার জন্য। টাইম ও অনেকটা হয়ে গিয়েছে। আহিলের আবার চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যেতে হবে। এরি মধ্যে রায়হান ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে এসে বলে,,,

__আহিল তুমি তিশাকে নিয়ে বাড়িতে চলে যাও।

আহিল কিছু বলতে যাবে তার আগেই তিশা বলে ওঠে,,,

__কিন্তু আব্বু এখনও তো রক্ত দিলামই না,,,,!

__তার আর কোনো প্রয়জোন নেই। তোমার শরীরে ও রক্তের পরিমাণ কম। তাই তোমার থেকে রক্ত নেওয়া যাবে না,তাতে তোমার আবার ক্ষতি হতে পারে। তাই, এখানে ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্তের ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে। আমি একদম রক্ত দিয়ে আসবো, এখন তোমরা বাড়িতে চলে যাও, তা না হলে আহিলের আবার চাকরির ইন্টারভিউ দিতে দেরি হয়ে যাবে।

__আব্বু, তাহলে আমি আপনার সাথে থাকি, আহিল একাই চলে যাক,,,

__ না তার কোনো প্রয়জন নেই, এখানে অনেক সময় লাগতে পারে। আর আমি গাড়িতো রেখে দিচ্ছি তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। আমি ঠিক সুন্দর ভাবে বাড়িতে পৌঁছে যাবো।এখন তোমারা তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পরো।

__আপনার কোনো সমস্যা হলে, আমাকে কিন্তু কল করেন আব্বু!

__আচ্ছা ঠিক আছে তা না-হয় করবো,,,,আহিল তিশাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে তুমি কাপর চেঞ্জ করে, তোমার যাবতীয় কাগজ পএ সাথে নিয়ে বেরিয়ে পরো।

__আচ্ছা কাকা আমি তিশাকে বাসায় পৌঁছে দিয়েই তারপর বের হবো।

বলেই তিশাকে সাথে নিয়ে রায়হানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে, হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসে আহিল।হাসপাতাল থেকে বের হতেই আহিল একটা গাড়ি দার করায় বাসায় যাওয়ার জন্য, আর তিশা রাস্তার অপর পাশে ফোসকার দোকান দেখে দৌড়ে গিয়ে ফোসকার দোকানের সামনে দাঁড়ায়। দোকানদার কে উদ্দেশ্য করে বলে,,,,

__আংকেল তাড়াতাড়ি ঝাল ঝাল করে এক প্লেট ফোসকা দেন। আর সাথে কিন্ত তেঁতুলের টক দিতে ভুলবেন না।

তিশার এই দৌড়ানো দেখে আহিল ভয় পেয়ে যাই, যদি কোনোভাবে গাড়ির নিচে পরে! এই মেয়ে কবে যে বড়ো হবে আল্লাহ মালুম। ওর বয়সী মেয়েদের কোলে দুই একটা বাচ্চা থাকে, আর ও নিজেই একটা বাচ্চা। এসব ভাবনা বাদ দিয়ে আহিলি ও যায় ফোসকার দোকানের কাছে,,,,

__তুমি কি বাচ্চা, এভাবে কেও দৌড়াদৌড়ি করে! যদি কোনো ভাবে গাড়ির নিচে পরতে, তাহলে কি হতো!আর তুমি এখন এখানে ফোসকা খেতে এসেছো, আমার এমনিতেই চাকরির ইন্টারভিউতে লেইট হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি ওই গাড়ির ওখানে যাও,,, (রাগ দেখিয়ে কথা গুলো বললো আহিল)

__আমিতো,,,,,, ( তিশা কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়, অপমানবোধে চোখ দিয়ে পানি চলে আসছে। কিছু না বলে গাড়ির কাছে গিয়ে দাড়ায়)

তিশার চোখে পানি দেখে আহিলের রাগ সাথে সাথে কমে যায়, এমন করে বলা উচিত হয় নাই ওকে। ওর রাগ ভাঙাতে হবে আগে এখন, তাই আহিল ফোসকার দোকানি কে বলে তিশার জন্য ফোসকা পার্সেল এর ব্যবস্থা করে নিয়ে হাটা দরে গাড়ির দিকে।তিশা আগে থেকেই গাড়িতে ওঠে, অন্য দিক মুখ ফিরিয়ে বসে আছে। ওর পাশে যে কেও একজন এসে বসেছে তার কোনো ভাবান্তর নেই। আহিল গাড়িতে ওঠতেই গাড়ি চলতে শুরু করেছে।তিশা এখনো মুখ ফুলিয়ে রেখেছে, সে আহিলের দিকে একবার ফিরে ও তাকাচ্ছে না। তাই আহিল ফোসকার পার্সেলের প্যাকেট টা খুলে, ফোসকা নিতে যাবে তার আগেই তিশা ওর হাত থেকে পোরো ফোসকার প্যাকেট টা নিয়ে যায়,,,

__তুমি আবার কবে থেকে ফোসকা খাও! আগেতো কখনোই খেতে না! আমি যখনি বলতাম আহিল চলো ফোসকা খাবো,তুমি বলতে আমি এইসব বাহিরের খাবার খাই না। আমি এখন ফোসকা খেতে গিয়েছিলাম, আমাকে ঠিকই ধমক দিয়ে গাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছো,আর এখন নিজের একার জন্য ফোসকা নিয়ে আসছো।

__আরে বোকা, আমি কখনোই ফোসকা খাই না আর খাবোও না। এগুলো তোমার জন্য এনেছি, না হলে আমার ওপর যে অভিমান করে থাকবে এটাতো আমি জানি।এখন তাড়াতাড়ি ফোসকা শেষ করো।

__কে বললো তোমার ওপর অভিমান করে থাকবো!তুমি আমার দশ-টা না পাঁচ-টা একটা মাএ বয়ফ্রেন্ড। এরকম ফোসকা যদি আমাকে প্রতিদিন খাওয়াও তাহলে আমি তোমার ওপর কখনোই রাগ করবো না।

__হুম,,,,, তাহলে তুমি কোনো ফোসকা ওয়ালা দেখে বিয়ে করে ফেলো, সারা দিন শুধু ফোসকা খাবে।

__কি,,,,,তারপর তুমি অন্য মেয়েকে বিয়ে করবে! তা হচ্ছে না কখনোই,,,, তুমি শুধু আমার, শুধুই আমার, আর কারো নও।

__আচ্ছা আমি শুধুই তোমার, এখন হ্যাপি!

__না, হ্যাপি না। তুমি আব্বু -আম্মুকে বিয়ের কথা কবে বলবে! চার বছর হয়ে গিয়েছে আমাদের এই সম্পর্কের। এখনো পর্যন্ত তুমি বিয়ের জন্য সিরিয়াস না, যখনি বিয়ের কথা বলি তুমি শুধু এড়িয়ে যাও।আর তখন তো শুধু আম্মু ছিলো, আর এখন আব্বু ও চলে আসছে! যদি অন্য যায়গা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলে!

__আজকে চাকরিটা হয়ে যাক, এখানে নিজেকে একটু গুছিয়ে নেই, তারপর তোমার বাবার কাছে গিয়ে বুক ফুলিয়ে তোমার হাত চাইবো।আশা করি তখন তোমার বাবা আমাকে ফিরাবে না! শুধু দোয়া করো আজকে চাকরিটা যেনো হয়ে যায়।

__ইনশাল্লাহ,,,, আমাদের সব ইচ্ছে পূরন হবে।

তিশা আর আহিলের প্রনয়ের চার বছর চলছে।এখনো পর্যন্ত কেও জানে না, আহিল যখন কলেজ শেষ করে তারপর ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে ঢাকা হোস্টেলে চলে আসে,তখন থেকেই তাদের প্রনয়ের শুরু। আহিলের ভার্সিটি তিশাদের বাসার কাছাকাছি হওয়ায় সপ্তাহে একবার হলেও আসা হতো তিশাদের আগের বাসায়। আর তখন থেকেই আস্তে আস্তে তাদের মধ্যে একটা বন্ধু সুলভ সম্পর্ক হয়, এরপর এই বন্ধু সুলভ সম্পর্ক গড়ায় ভালো বাসা পর্যন্ত।

________

রায়হান ডাক্তারের চেম্বারের বাহিরে পায়চারী করছে, তার খুব টেনশনে হচ্ছে। ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট কি যে আসে!এভাবে কিছুখন পায়চারী করে ধাপ করে বসে পরে, ডাক্তারের চেম্বারের বাহিরে পেসেন্টদের বসার চেয়ারে। মাথা নিচু করে গভীর চিন্তায় মগ্ন সে,,,আজকেইতো নারী পাচারের ডেইট! কিন্তু রাজিব তো এখনো তাকে একটি বারের জন্য ও কল দেই নায়, এরকম তো হওয়ার কথা না! প্রত্যেকটা ডেলিভারির আগে কল দিয়ে রায়হানের মাথা খাই, আর এইবার একটি বারের জন্য কল করে নাই। রায়হানের এইসব চিন্তার মাঝেই ওর সামনে এসে একজোড়া পা স্থীর হয়েছে,রায়হান নিচ থেকে দৃষ্টি ওপরে তুলতেই দেখে ডাক্তার সাহেব দাড়িয়ে আছে, তার হাতে ডিএনএ টেস্টে রিপোর্টের ফাইল।

__মি. রায়হান আপনার কাজ হয়ে গিয়েছে,আপনার জন্য রুলসের বাহিরে গিয়ে আমি এখন রিপোর্ট এনেছি, আমারা সচরাচর একদিন পরে টেষ্টের রিপোর্ট দেই, কিন্তু আপনার জন্য যেনো আমার যেনো আমার কোনো ক্ষতি না হয়। এই নিন,,, আপনার ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট চলে এসেছে। (ফাইলটা রায়হানের দিক বারিয়ে দিয়ে)

__রিপোর্ট কি এসেছে! ডাক্তার সাহেব,,,,

__সেটা আপনি নিজেই দেখে নিন! আর আমার টাকাটা,,, আজ রাতের মধ্যে পাঠিয়ে দিয়েন। (কথাটা বলেই ডাক্তার সাহেব আবার চলে গলো)

ডিএনএ টেস্ট রিপোর্টের ফাইলটা খুলার সাথে সাথে রায়হানের হাত থেকে নিচে পরে যায় ফাইলটা,,,,

তিশা সত্যি আমার মেয়ে!তিশা আমার মেয়ে, রোশানের মেয়ে নয়,,,,,

চলবে,,,,,

#আমার_গল্পে_আমি_খলনায়ক
#MD_Nachemul_Hasan
#Part_10

তিশা সত্যি আমার মেয়ে!তিশা আমার মেয়ে, রোশানের মেয়ে নয়,,,,,,,,,,

আর এক মূহুর্ত দেরি না করে ডিএনএ টেস্ট রিপোর্টের ফাইলটা মাটি থেকে তুলে , হন্তদন্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে আসে রায়হান। তাড়াতাড়ি গিয়ে গাড়িতে ওঠে পরে,গাড়ি আগে থেকে পার্কিং এড়িয়াতে ছিলো। তারপর গাড়ি চালিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বাসায় আসার সাথে সাথে ফাইলটা টেবিলের ওপর রেখে সোফায় বসে পরে। (ছিঃ কতটা নিচু আমি! কি করে নিজের মেয়েকে পাচার করে দিতে চেয়েছিলাম। না আমাকে এখনোই রাজিবের সাথে কথা বলেতে হবে) কিন্তু এখানে কথা বললে কেও শুনে ফেলবে,তাই রায়হান দ্রুত পায়ে ছাদে চলে আসে, আর ছাদের দরজা বন্ধ করে দেয় ভিতর থেকে।
তারপর সাথে সাথে রাজিব কে কল করে, রিং হচ্ছে কিন্তু রাজিব কল তুলছে না,রায়হানের মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। অনবরত রাজিব কে কল করে যাচ্ছে, প্রায় বিশ বারের মাথায় গিয়ে রাজিব কলটি রিসিভ করে,,,,,

__সরি স্যার,,,, আমি একটু বিজি ছিলাম তাই কলটা তুলতে পারি নাই।

__কিসের বিজি তুমি!কয়টা কল দিয়েছি, ইউ হ্যাব এনি আইডিয়া! (খানিকটা রাগ দেখিয়ে কথা গুলো বললো রায়হান)

__স্যার,,,,,আসলে ম্যাডাম আসছিলো আজকে এখানে।ওনার সাথে কথা বলতে বিজি ছিলাম, আপনি যে কল করেছেন তা আমি দেখি নাই। তাই আপনার কল ধরতে পারি নাই।

__হঠাৎ ম্যাম আসছিলো কেনো!আর কি বলে গেছে,, আমার ব্যাপারে কিছু বলেছে। (কৌতুহল নিয়ে রায়হান প্রশ্নটা করলো রাজিব কে)

__দুইদিন পরে তো মেয়ে পাচারের ডেট, তাই ম্যাম মেয়েদের পর্যবেক্ষন করতে আসছিলো। কিন্তু এখনো একটা মেয়ে কম দেখে আমার সাথে অনেক রাগারাগি করেছে। বলেছে এই একদিনের ভিতরে মেয়ের ব্যবস্তা না করতে পারলে, আমাকে জব থেকে বের করে দিবে,আর সাথে আপনাকেও। ম্যাম বলেছেন আপনাকে সব দায়িত্ব দিয়ে কি লাভ হয়েছে!যদি একটা মেয়ে জোগার না করতেই পারেন, এত এত টাকা কেনো দেওয়া হয়।এটাও বলেছেন যদি এই ড্যালিবারিটা ক্যান্সেল হয় তবে আমাদের দুইজন কে পথে নামিয়ে ছাড়বে।আর আমাদের পুলিশের হাতে দিবে। স্যার আপনি এখন একটা কিছু করেন! পুলিশ কেস হলে আমাদের সারা জীবন জেলে কাটাতে হবে, এমকি ফাঁশি ও হতে পারে। আমি এত তাড়াতাড়ি মরতে চাই না।আমার ছোটো ছোটো দুইটা বাচ্চা আছে। আমি মারা গেলে ওদের কি হবে।স্যার আপনি না বলেছিলেন আপনার কাছে একটা মেয়ে আছে! তাকে তো এখনো এখানে নিয়ে আসেন নাই স্যার। তা না হলে আমরা দুইজন শেষ স্যার। একেবারে শেষ,,,,

__থামো তুমি,,,,তোমার ম্যাম কে বলো আমাকে কল করার জন্য। আমার সাথে কথা বলতে ওনার এতো কি সমস্যা,পঁচিশ বছর ধরে ওনার আন্ডারে কাজ করছি, ওনি একবার ও আমার সাথে কথা তো দূরে থাক দেখো পর্যন্ত কর নাই। ওনাকে বলে দিও আমার কাছে কোনো মেয়ে নেই, আমি কোনো মেয়ে দিতে পারবো না। ওনাকে বলো অন্য কোথাও থেকে মেয়ের ব্যবস্তা করে নিতে।বিপদের সময় রায়হান কে শুধু মনে পড়ে, আর অন্য সময় রাজিব রাজিব করে না। এখন তুমিই ওনাকে মেয়ের ব্যবস্তা করে দিবে। ( বলেই রাগে কলটি কেটে দেয় রায়হান)

__হ্যালো স্যার,, স্যার,,,,,( কলটি কেটে দিয়েছে বুঝতে পেরে একরাশ হতাশা নিয়ে আবার কাওকে কল দিয়ে রায়হানের বলা কথা গুলো বলে রাজিব)

______

বাসায় ঢুকতেই টেবিলের ওপর রাখা ফাইলটা দেখে অবাক হয় , তারপর ফাইলটা হাতে নিয়ে খুলেতেই চোখে মুখে চিন্তার ছাপ ফুটে ওঠে। তার পর আস্তে করে ফাইলটা আবার টেবিলের ওপর রেখে নিজের রুমে চলে যায় ।

আহিল বাসায় ফিরেছে কিছুখন আগে, তার চাকরি টা হয়ে গিয়েছে। কালকে থেকে ডিউটিতে জাবে,বেতন ও মোটামুটি ভালো। এখন শুধু এখানে একটা বাসার ব্যবস্তা করতে হবে, তারপর তিশার জন্য বিয়ের কথা বলবে রায়হান কে।অবশ্য এখনো বলতো কিন্তু ব্যপারটা কিরকম খারাপ দেখা যায় না, যে আমার বাড়িতে থেকে আমার মেয়েকে বিয়ের কথা বলো। এইসব ভেবে আহিল এখন কিছু বলছে না, এক মাসেরইতো ব্যপার বেতন পেলে বাসা নিয়ে মা-কে এখানে নিয়ে আসবে এবং নিজের প্রেয়সিকে ঘরে তুলবে। এসব কথা মনে মনে ভাবতে ভাবতে তিশার রুমের দিকে যাচ্ছে আহিল,এখন প্রায় রাএ বারোটা বাজে। মীরা নিজের রুমে শুয়ে আছে, আর রায়হান ও নিজের রুমেই আছে, কিন্তু ঘুমিয়ে আছে নাকি জেগে আছে তা দেখতে পারেনি। আহিল তিশার রুমে আসার আগে চুপিচুপি ওদের রুমে একবার উঁকি দিয়ে এসেছে। যদি কোনোভাবে মীরা /রায়হান কেও জানতে পারে যে, রাতে লুকিয়ে তিশার রুমে গিয়েছে তাহলে আর আস্ত রাখবে না। বিয়ে করবার আগেই সব ভেস্তে যাবে। আহিল তিশার রুমে সামনে এসে দেখে তিশার রুমের দরজা খুলা, তাই আহিল তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকে পড়ে। রুমে ঢুকতেই আহিল কে দেখে তিশা বলে ওঠে,,,,,

__তুমি এখানে কেনো এত রাতে, কি করতে এসেছো! তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি ওই রকমের মেয়ে না, যা হবার তা বিয়ের পরে হবে। এখন তুমি তাড়াতাড়ি তোমার রুমে যাও, আব্বু বা আম্মু দেখে ফেল্লে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

__কেও দেখবে না, তোমার আব্বু আম্মু ঘুমাচ্ছে। এখন তাড়াতাড়ি আমার সাথে চলো,,,

__এতো রাতে আবার আমি তোমার সাথে কোথায় যাবো! তোমার মাথায় কি চলছে বলোতো, তুমি আমাকে নিয়ে পালানোর প্লেন করছো!আমি আমার আব্বু আম্মুর মান সম্মান ডুবিয়ে তোমার সাথে পালিয়ে বিয়ে করতে পারবো না।

প্রথম ভেবেছে খারাপ উদ্দেশ্যে রুমে ঢুকেছে, এখন আবার সাথে আসার কথা বলাতে ভাবছে পালিয়ে বিয়ে করার জন্য ওকে সাথে যেতে বলছে।আসলেই সকলে বলে না যে মেয়েরা একটু বেশি বুঝে, আহিলের ও এখন তাই মনে হচ্ছে তিশার কথা শুনে। ও এসেছে কিসের জন্য, আর এই মেয়ে ভাবছে কি,,,,,,

__গাদা তোমার মাথায় কি গোবর পোরা! এই চার বছরে রিলেশনে আমাকে তুমি এই চিনেছো।তোমার অনুমতি না নিয়ে তোমাকে স্পর্শ পর্যন্ত করি নাই। আর তুমি ভাবছো,,,,,ছিঃ।আর বিয়ে করার হলে সবার অনুমতি নিয়ে,সবার সম্মতিতে বিয়ে করবো, পালিয়ে কেনো বিয়ে করবো। এখন তাড়াতাড়ি ছাদে চলো তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে,,,,

__সরি আহিল আমি কি বলতে, কি বলে ফেলেছি তোমাকে। ( কানে ধরে মুখটা ইনোসেন্ট করে কথা গুলো বলছে তিশা)

__আচ্ছা ঠিক আছে এখন চলো, কাল থেকে আমার আবার অফিস আছ।আমাকে ছাদ থেকে এসে ঘুমাতে হবে। (কথাটা বলে আহিল তিশার রুম থেকে বেড়িয়ে ছাদের সিড়ির দিকে যায়,তিশাও আহিলের পিছু পিছু ছাদের সিড়ি দিকে যায়)

______
রায়হান দুই চোখের পাতা এক করতে পারছে না, দুশ্চিন্তায়। একটার পর একটা সিগারেট ধরিয়ে খাচ্ছে,তাও মাথা ঠান্ডা করতে পারছে না। এখন যে ভাবে হোক তিশাকে নিয়ে ইতালি চলে যেতে হবে। কিন্তু মীরার চোখে ফাঁকি দিয়ে কীভাবে নিয়ে যাবে ইতালি।এসব চিন্তা ভাবনার মাঝে রায়হানের মুঠোফোনটি আবার বেজে ওঠে।হাতে নিতেই দেখে রাজিব আবার ফোন করেছে,এবার রায়হান মনে মনে ভেবে নিয়েছে রাজিব কে কিছু করা কথা শুনিয়ে দিবে।তাই তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে ছাদের দিকে যাচ্ছে, রুমের মধ্যে কথা বলাটা রিক্স।কারন দেওয়ালেরও কান আছে, তাই সেই রিক্স রায়হান নিতে চাই না।

____

আহিল আর তিশা ছাদের ওপর রেলিঙের সাইটে দাড়িয়ে আছে, আকাশে খুব সুন্দর একটা চাঁদ উঠেছে। ছাদের পাশে লাগিয়ে রাখা বেলি ফুলের সুবাস,হালকা ঠান্ডা বাতাস সব মিলিয়ে এ যেনো এক মনোরম পরিবেশ। হঠাৎই আহিল হাটু গেরে বসে পরে, বসেই তিশার দিকে একটা আংটির বক্স বাড়িয়ে দিয়ে,,,,

___- সারাটা জীবন বুকের সাথে জড়িয়ে রাখার অধিকার দিবে প্লিজ? ক্লান্ত দিনের শেষ অংশে উষ্ণ আদরে নিজেকে হারানোর সুযোগ দিবে প্লিজ? আমার “ভালোবাসি” র উত্তরে এক টুকরো লাজুক হাসির দায়িত্বটা নিবে প্লিজ? তোমার লম্বা চুলে বেলীফুলের মালা জড়ানোর ইচ্ছেটা পূরণ করতে দিবে প্লিজ? তোমার এই বাজে প্রেমিক টাকে শেষ নিশ্বাষ পর্যন্ত নিজের কাছে আপন করে নিবে প্লিজ?তেমাকে আমার জিবীনসঙ্গী করার অধিকারটা দিবে প্লিজ?

__হুম,,,,,,,,,

__হয়তো তোমাকে রানীর মতো রাখতে পারবো না। কিন্তু তোমার ছোটো ছোটো ইচ্ছে গুলোকে নিজের সবটা দিয়ে পূরন করার চেষ্টা করবো।( বলেই তিশার হাতে আংটি টা পরিয়ে দিতে যাবে এমন সময় ছাদের দরজায় আওয়াজ হওয়ার সাথে সাথে দুজন ছিটকে দূরে গিয়ে দাড়ায়)

রায়হান রাজিবের সাথে কথা বলতে ছাদে আসছিলো, সিড়ির কাছে আসতেই ছাদের দরজা খুলা দেখে কিছুটা অবাক হয়। তারপর ছাদে এসে যা দেখেছে তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। সাথে সাথে রায়হান গিয়ে তিশার গালে একটা চর বসিয়ে দেয়,,,,

__তুমি আমার মেয়ে হয়ে একটা পর পুরুষের সাথে ছাদে চলে এসেছো, তোমার একটুও লজ্জা করছে না। লজ্জা করবে কি করে! আমিতো ভুলেই গেছিলাম তোমার শরীরে তো মীরার ও রক্ত আছে।

__কাকা,,,,,, (আহিল কিছু বলতে যাবে রায়হান হাত দিয়ে ইশারা করে থামিয়ে দেয়)

__এখানে আমার আর আমার মেয়ের মধ্যে কথা হচ্ছে, তুমি মাঝখানে কথা বলার কে! এতবড়ো সাহস হয় কি করে তোমার আমার বাড়িতে দাড়িয়ে আমার মেয়ের সাথে এইসব করছো।

আহিল মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে, সে এখন কি বলবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না, আর তিশা অপর পাশে দাড়িয়ে কান্না করছে,তার বাবা কি করে এইসব কথা বলতে পারে! সে ভেবে পাচ্ছে না।

__তুমি এখনো এখানে দাড়িয়ে আছো! তাড়াতাড়ি নিচে যাও, আমি এই কয়েকদিনের মধ্যে তোমার বিয়ের ব্যবস্তা করবো। কথা গুলো বেশ রাগ নিয়ে তিশাকে বললো রায়হান।

বিয়ের কথা শুনতেই, আহিল একদৌড়ে রায়হানের পায়ের নিচে এসে ঝাপিয়ে পড়ে। কান্না করতে করতে বলে,,,,, আমি ওকে ছাড়া বাঁচবো না কাকা, আমাদের চার বছরের সম্পর্ক। আপনি এইভাবে শেষ করে দিয়েন না,,,,,

চলবে,,,,,,

( রিচেক করা হয় নাই, ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন আমি ঠিক করে নেওয়ার চেষ্টা করবো)