আমার গল্পে আমি খলনায়ক পর্ব-৭+৮

0
132

#আমার_গল্পে_আমি_খলনায়ক
#MD_Nachemul_Hasan
Part_7

“এটা কি করে সম্ভব মীরার লাশের এখনো কিছু হয়নি, পঁচিশ বছরে তো লাশ একদম মাটির সাথে মিশে যাওয়ার কথা, কিন্তু এখানে তো আমি যেই প্লাস্টিকের ব্যাগের মধ্যে ডুকিয়ে মাটি চাপা দিয়েছিলাম সেই ব্যাগ এখনো আগের মতো আছে শুধু একটু আধটু ফোটো হয়েছে আর মাটিতে বরে আছি।আমি কোনোমতে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগসহ মীরার লাশটি কে ওপরে তুললাম। তারপর প্লাস্টিকের ব্যাগটি খোলার সাথে সাথে আমি অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলাম,,,ব্যাগের ভিতরে একটি শাড়ি পরানো পুতুল। যা দেখে আমার শরীর কাঁপছে,এটা কি করে সম্ভব মীরার লাশের যায়গায় এখানে পুতুল কে রাখলো।রোশান! নিশ্চয়ই ও মীরাকে বাঁচিয়েছিলো, না হলে মীরা বেচেঁ গেলো কিভাবে। এখন তাড়াতাড়ি ব্যাগটা আবার মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে, যদি আহিল বা মায়া দেখে ফেল্লেই কেলেংকারী হয়ে যাবে। সময় নষ্ট না করে আমি আবারও পুতুলটা মাটিতে পুঁতে ফেললাম। এর মধ্যে আহিল দুইবারের বেশি এসে জিজ্ঞেস করছিলো আমার কাজ হয়েছে কি না। অনেক কষ্টে আবার মাটিগুলো ঠিক ভাবে পুতুলটির ওপরে রেখে ঘর থেকে বের হয়ে আসি।এবং আহিলের থেকে চেয়ে নতুন আরও একটা তালা লাগিয়ে আসি। আর চাবিটা আগের বারের মতো এইবার ও আমার সাথে নিয়ে যাবো।

__ আহিল আমি এখন, ঢাকায় ফিরে যাবো।আমার কাজ হয়ে গিয়েছে,আর এই ঘরের ভিতরে যেনো আমি ছাড়া অন্য কেও না ঢুকতে পারে।

__ কাকা আপনি আসলেন কিছুখন আগে, আবার এখনোই চলে যাবেন! আপনি তো এখন পর্যন্ত নাস্তা ও করেন নি। আম্মু আপনার জন্য কখনোই দুচালা ঘরে নাস্তা রেখে গেছে,আপনি অন্তত নাস্তাটা খেয়ে যান। আর আপনার শরীরে, আর কাপরে অনেক মাটি লেগে আছে, এই অবস্থায় আপনি ঢাকা যাবেন। কালকে সকালে যান আমিও আপনার সাথে যাবো, আমার একটা চাকরির জন্য।

__আচ্ছা,,ঠিক আছে কাল সকালেই যাবো। তুমি কিসের চাকরির জন্য ঢাকা যাবে।

__ এতোদিন তো বাবা ছিলো,আমার কোনো কাজ করতে হয় নাই পড়াশোনা ছাড়া। আলহামদুলিল্লাহ আমার পড়াশোনা এখন শেষ তাই একটা চাকরির জন্য কালকে এমনিতেই ঢাকা যেতাম।

__ওহ্,,,,ঢাকা গিয়ে থাকতে কার কাছে,,!

__বন্ধুর বাসায়,, পরে একটা চাকরি পেলে নিজে রুম নিয়ে নিবো।

__আমি থাকতে তুমি বন্ধুর বাসায় থাকবে,আমার সাথে কালকে চলো,তুমি আমার বাসায় থাকবে এখন থেকে। আর আমি তোমাকে চাকরির ব্যবস্তা করে দিবো।

__আচ্ছা ঠিক আছে কাকা।আপনি আগে কল পারে এসে ফ্রেশ হন , আম আপনার জন্য আমার কাপড় নিয়ে আসছি।

“গাড়ির জন্য রাস্তায় দাড়িয়ে আছিন প্রায় ত্রিশ মিনিট, এখনো একটা গাড়ি আসার কোনো নাম নেই।আমার সাথে আহিলও আছে, ওকে এনেছি আমার নিরাপত্তার জন্য। আহিল থাকলে মীরা আর তিশা আমার ক্ষতি করতে চাইলে ও দশবার ভাববে। নয়তো একা বাসায় ওরা মা মেয়ে মিলে আমাকে মেরে ফেলবে।

__কাকা গাড়ি আসছে তাড়াতাড়ি ওঠে পরেন,নয়তো গাড়ি আবার চলে যাবে।

__হুম তুমি ওঠো, আমি ও উঠছি।

বাসায় আসার সাথে সাথে আমি তিশাকে আহিল কে গেস্ট রুম দেখিয়ে দেওয়ার কথা বলে,ছাদে আসলাম। আমার মাথায় একটা কথা ঘুরছে এটা যদি মীরা হয়ে থাকে তাহলে তিশা তো আমার মেয়ে! নাকি রোশানের মেয়ে।আমাকে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে, ও যদি আমার মেয়ে হয়ে থাকে তাহলে ওকে আমি কি করে পাচার করে দিবো।না,, না, আমার যে করে হোক না কেনো জানত হবে তিশা আমার মেয়ে কি না! ও যদি আমার মেয়ে হয়ে থাকে তাহলে আমি ওকে কিছুতেই পাচার করতে পারবো না,
কিন্তু কিভাবে! কিভাবে জানবো ও আমার মেয়ে নাকি রোশানের!এরি মধ্যে আবার আমার মুঠোফোনটি বেজে ওঠে,,

__হ্যালো স্যার আপনি না বলেছিলেন, আপনার কাছে একটা মেয়ে আছে। কালকে কিন্তু মেয়েটা লাগবে, পরের দিন ওদের দেশের বাহিরে পাচার করে দেওয়া হবে।আর ডাইনা ম্যাম ফোন করেছিলো আপনার টাকা নাকি পাঠিয়েছে, আপনার ব্যাংক একাউন্টে।

__আচ্ছা আমি দেখছি,, তুমি এখন কল রাখো। কালকের মধ্যে মেয়ে পৌঁছে যাবে তোমার অফিসে।আর ম্যাম কে আমার তরফ থেকে সালাম দিও।

__আচ্ছা স্যার, ভালো থাকবেন। বলেই ফোন কেটে দিলো রাজিব।

আমি এখন কি করবো!আমার হাতে সময়ও খুব কম, এই সময়ের মধ্যে কি করে জানবো ও আমার মেয়ে নাকি রোশানের।

রায়হান আর রাজিবের কথা শুনে কেও হাসছে,, আর বলছে ,,,
আমি তোমার সালাম গ্রহন করলাম না রায়হান,,,

চলবে,,,,,

#আমার_গল্পে_আমি_খলনায়ক
#MD_Nachemul_Hasan
#Part_8

“হসপিটালের বাহিরে দাড়িয়ে আছি অনেকটা সময় ধরে, আমার সাথে তিশা আর আহিল ও ছিলো। ওদের কে আমি বাড়িতে চলে যেতে বলেছি, এতখনে মনে হয় বাড়িতে চলেও গেছে। ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট আসতে আর কতখন জানি লাগবে, আজকে আবার মেয়ে দিতে হবে রাজিব কে। এখন তাড়াতাড়ি ডিএনএ রিপোর্ট টা আসলেই হয়।

আজ খুব সকাল সকাল রায়হানের ঘুম ভেঙে গেলো, তাই তাড়াতাড়ি ওঠে রেডি হয়ে নিচে এসেছে ডাইনিং টেবিলে।আসতেই দেখে তিশা আর আহিল টেবিলে বসে নাস্তা করছে, তাদের কে মীরা নাস্তা পরিবেশন করে দিচ্ছে। সময় নষ্ট না করে রায়হান ও গিয়ে তাদের পাশে বসে পরলো।রায়হান উসখুস করছে কি করে বলা যায়,,,,

__আব্বু আপনি কিছু বলবেন! (তিশা)

__হুম,, মা আসলে আমার শরীর ভালো না তাই, ওইদিন হাসপাতালে গিয়েছিলাম।ডাক্তার বলেছেন আমার শরীরের রক্ত শূন্যতা, তাই এখন রক্ত দিতে হবে। ব্লাড ব্যাংকে গিয়েছিলাম কিন্তু ওখানে আমার গ্রুপের রক্ত নেই।

__ওহ্,,আব্বু আপনি চাইলে আমি রক্ত দিতে পারি আমার রক্তের গ্রুপ O+,,,

__আমারও তো O+, তাহলে নাস্তা শেষ হলে রেডি হয়ে নিচে এসো আমরা হাসপাতালে যাবো।আহিল তুমিও আমাদের সাথে যাবে, আমার আসতে একটু দেরি হবে তুমি তিশা কে নিয়ে বাড়িতে চলে আসবে। বাড়িতে এসে তুমি আবার রেডি হয়ে চাকরির ইন্টারভিউ জন্য বেরিয়ে পরবে,আমি তোমার হোয়াটসঅ্যাপ এ ঠিকানা দিয়ে দিয়েছি।ওখানে গিয়ে শুধু আমার না বলবে তাহলেই হবে।

__আচ্ছা কাকা।

__আব্বু আপনি না আমাকে আপনার বন্ধুর অফিসে চাকরির জন্য নিয়ে যাবেন বলেছিলেন। কখন নিয়ে যাবেন!

__আমি আগে হাসপাতাল থেকে আসি তার-পর না হয় তোমাকে নিয়ে বের হবো।তোমারা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আসো, আমি এখানে বসে আছি।বলার সাথে সাথেই আহিল আর তিশা যার যার রুমে চলে যায় রেডি হওয়ার জন্য।

__তোমার আবার কি হলো হটাৎ করে! শরীর খারাপ হলো কখন, আমার তো দেখে মনে হচ্ছে তুমি একদম ঠিকই আছো।

কিছুটা বিরক্তি নিয়ে মীরার দিকে তাকিয়ে রায়হান বলে,,

__শরীরের রক্ত শূন্যতা কি আমাকে দেখলে বুঝবে, আজব!আমার শরীর খারাপ নাকি ভালো তা দিয়ে তুমি কি করবে! এখানে আসার পরে আমার সাথে ভালো করে কথা বলেছো!এখন আসছো আমার অসুস্থতার ওপর আঙুল তুলতে। এই সাতসকালে এতো সাজগোজ করেছো কেনো, তুমি কি কোথাও বের হবে নাকি?

__হুম আমার একটা বন্ধুর সাথে দেখা করার জন্য একটু বের হবো।

__কোন বন্ধু রোশান নাকি,,,,

__রোশান হবে কেনো! রোশান ছাড়া কি আর কেও নেই?

__তা থাকতেই পারে,কিন্তু তোমার মতো মহিলার সাথে দেখা করতে এট লিস্ট রোশান ছাড়া আর কেও হতে পারে না।

__তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো!

__পঁচিশ বছর আগে তুমি আমার সাথে ঠিক এমনটাই করেছিলে।

__আগের কথা টেনে কোনে লাভ নেই, তুমিও যে আমার সাথে খুব ভালো কিছু করেছো তা কিন্তু নয়,,যদি রোশান ঠিক টাইমে,,,,,

__যে বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাচ্ছো, এটা যানো না যে তোমার বন্ধু আর এই দুনিয়াতে নেই।

__হুম জানি,,,,মহুয়া যেদিন মারা গেছিলো, ওইদিন নাকি ঢাকা আসার পথে নাকি এক্সিডেন্ট করে মারা যায়।

__তুমি জানলে কি করে! রোশান যে আর বেঁচে নেই।

__কিছুখন আগে নাস্তা করার সময় আহিল আমাকে বললো।

আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আহিল আর তিশা এসে হাজির। তাই আর টাইম ওয়েস্ট না করে বেড়িয়ে পরলাম।গাড়ির সামনে এসে তিশাকে গাড়িতে ঢুকতে বলে, আমি আহিল কে থামতে বললাম।

__আহিল,তোমার আব্বুর মৃত্যু নিয়ে কি এখন নাস্তা করবার সময় কথা বলেছো!

__না কাকা,, কাকিমা আমাকে জিজ্ঞেস করছিলো যে আব্বু মারা গেলো কিভাবে! আপনি নাকি কাকিমা কে বলেছেন আব্বুর মৃত্যুর ব্যাপারে।কিছু কি হয়েছে কাকা,,,,

__না কিছু হয় নায়, তুমি গাড়িতে ওঠে বসো।

মীরা আমার কাছে বলেছে আহিল নাকি রোশানের মৃত্যুর কথা ওকে বলেছে, আবার আহিলের কাছে বলেছে আমি নাকি বলেছি ওকে রোশানের মৃত্যুর ব্যাপারে!ও মিথ্যা কথা কেনো বলছে, কোনো ভাবে কি রোশানের মৃত্যুর পিছনে মীরার কোনো হাত আছে,,,,,

চলব,,,,,