আমার গল্পে আমি খলনায়ক পর্ব-১৩+১৪

0
130

#আমার_গল্পে_আমি_খলনায়ক
#MD_Nachemul_Hasan
#part_13

“গাড়ি এসে থেমেছে তিশাদের বাসার সামনে।তারপর সায়ান তিশাকে ধরে গাড়ি থেকে নামায়, সায়ানকে এখনো ধরে দাড়িয়ে আছে তিশা। সায়ান একহাতে ওয়ালেট বের করে গাড়ির ড্রাইবার কে টাকাটা দেয়। তারপর তিশার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,

__বাসা পর্যন্ত তো এনে দিয়ে গেলাম,এখন যেতে পারবেনতো!

সায়ানের কথা শুনার সাথে সাথে তিশা সায়ানের হাত ছেড়ে দিয়ে। হাঁটার জন্য পা বাড়াতেই আবার পড়ে যায়,,, ও,মা,,গো,,,,আমার কোমরটা এইবার নিশ্চিত ভেঙে গেছে।

সায়ান দ্রুত এসে তিশাকে এক হাত দিয়ে ধরে ওঠানোর চেষ্টা করে, কিন্তু তিশা কিছুতেই ওঠতে পারে না। বাধ্য হয়ে সায়ান তিশাকে কোলে তুলে নেয়।

__আরে, আরে,,,, কি করছেন কোলে কেনো নিচ্ছেন! আমি আমার আব্বু বা আম্মুকে ডাক দিচ্ছি ওনারা এসে আমাকে নিয়ে যাবে। এখন আপনার কোলে আমার আব্বু আমাকে দেখলে কেলেঙ্কারির হয়ে যাবে, প্লিজ আপনি আমাকে নিচে নামান।

__আপনার বাসায় মনে হচ্ছে কেও নেই! তা না হলে এখন পড়ে গিয়ে এতো জুড়ে চিল্লালেন কেও তো বাহিরে বেড়িয়ে আসলো না। তা আপনার বফ কোথায়! এতো সুন্দর গার্লফ্রেন্ডকে রাস্তায় ছেড়ে দেই কোনো খেয়াল রাখে না,, কে কখন তুলে নিয়ে যায়,,,সে খবর নেই।

__আপনাকে কে বলেছে,,, আহিল আমার খেয়াল রাখে না! ওয়েট,, ওয়েট আমার যে বফ আছে সেটা আপনি জানালেন কি করে! আপনি আমাকে আগে থেকে চিনতেন! ইচ্ছে করে আমার সাথে ধাক্কা খেয়ে আমাকে কোমরে ব্যাথা দিয়েছেন। আপনার মতলবটা কি, আপনি আবার কোনো নারী পাচারকারী চক্রের লোক নয়তো!(সায়ানকে এই কথা গুলো বলে তিশা চিল্লাতে শুরু করে,,,,)কে কোথায় আছো,, আমাকে বাঁচাও! আমাকে পাচার করে দিবে,,,,আব্বু আম্মু তাড়াতাড়ি বাহিরে আসো তোমাদের মেয়ে নারী পাচার কারী খপ্পরে পরেছে,,,,

__চুপ! একদম চুপ! আর একটা কথা বললে কোল থেকে ফেলে দিবো। আমি নারী পাচার কারী, কে বলেছে তোমাকে! আমি তোমাকে আগে থেকে চিনে,আর তোমার সাথে আজকে ধাক্কা খেয়েছি এই কারণে আমি নারী পাচারকারী হয়ে গিয়েছি! আজিব মেয়ে তুমি।আমি ওইদিন ফুচকার দোকানের সামনে তোমাকে দেখেছিলাম তোমার বফের সাথে। তাই আজকে দেখার সাথে সাথে তোমাকে চিনতে অসুবিধা হয়নি। এইজন্যই যে আমি নারী পাচারকারী হয়ে যাবো! যদি তোমাকে আমার পাচার করারই থাকতো তাহলে তোমাকে বাসায় নিয়ে আসতাম না।ওইখান থেকেই তোমাকে উঠিয়ে নিয়ে যেতাম।মাথায় কী গোবর পোরা নাকি,,, আল্লাহ মালুম।

___ সরি,,, আমি আসলে বুঝতে পারিনি। আমাকে ক্ষমা করবেন, আমি আপনাকে তখন থেকে কত কিছু বলে যাচ্ছি। তাও আপনি আমাকে সাহায্য করে বাসা পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন।

__ইটস্ ওকে।এখানেই কি দাড়িয়ে থাকবো!

সায়ান এখনো তিশাকে পাজোকোলে নিয়ে রেখেছে। তিশা কথা বলতে বলতপ ভুলেই গেছিলো সে যে এখনো সায়ানের কোলেই আছে। তাই তিশা তাড়াতাড়ি সায়ান কে বলে,,,,

__আম্মু আব্বু মনে হয় বাসায় নেই, আপনি আমাকে বাসার ভিতরে নিয়ে চলেন।(সায়ান সাথে সাথে তিশাকে নিয়ে বাসার ভিতরে প্রবেশ করে)

__তোমার রুম কোনটা! (তারপর তিশার রুমে নিয়ে তিশাকে শুইয়ে দেই)

__ধন্যবাদ আপনাকে,আপনার প্রতি আমি চিরো কৃতজ্ঞ থাকব। আপনি না থাকলে হয়তো আমাকে এখনো রাস্তায়ই পরে থাকতে হতো।

__ইটস্ ওকে মেনশন নট! আচ্ছা আমি এখন আসছি ,আমার সাথে আপনাকে ফাঁকা বাড়িতে কেও দেখে ফেল্লে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

তিশা খানিকটা ভ্রুকুচকে সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,,
__মানে! কি সর্বনাশ হয়ে যাবে। এটা আমাদের বাড়ি, কারো সাহশ ও হবে না আমার ব্যপারে কিছু বলার।আর আপনিতো আমার আব্বু কে চিনেন না, তাই এমন বলছেন।

__আচ্ছা যায় হোক! আমি এখন আসছি, ভালো থাকবেন। আশাকরি আমাদের আবার দেখা হবে। খুব তাড়াতাড়ি, যদি আপনি চান।

__মানে! আপনার কথা বুঝলাম না।

__ আপনি যদি আমাকে ধন্যবাদ দিতেই চান, তাহলে আপনার শরীর ভালো হলে একদিন কফি শপে যেতে পারি আমরা।

__হুম,, অবশ্যয়।

__মনে যেনো থাকে,, তা না হলে আমি কিন্তু আবার বাড়িতে চলে আসবো। তখন কিন্তু আবার কিছু বলতে পারবেন না।

__তিশা চৌধুরী কখনো কথার খেলাপ করে না। আপনাকে কথা যেহেতু দিয়েছি আমি অবশ্যয় যাবো। আচ্ছা আপনি আমার নাম্বারটা নিয়ে যান,আমাকে ফোন দিয়েন আমি চলে যাবো।

তারপর সায়ান তিশার থেকে নাম্বার নিয়ে একদিন কফি খাওয়ার কথা বলে তিশাদের বাসা থেকে বেড়িয়ে আসে। সায়ান চলে যাওয়ার কিছুখন পর একটা ব্লাক গাড়ি এসে তিশাদের বাসার সামনে দাঁড়ায়।

______

রায়হান কিছুটা ভ্রুকুচকে মীরার দিকে তাকায়, মীরা এসব জানলো কি করে! আমি এখানে এসেছি, কে বলেছে ওকে।আর ও আমাদের ঘরে ঢুকতে চাইছে কেনো! ওর মনে কি চলছে,,,নিরবতা ভেঙে মীরা আবার বলে ওঠে,,,

__কি হলো রায়হান! চাবি কোথায় দিচ্ছো না কেনো!

মীরার কথায় আমার হুঁশ আশে, এতখন মনে মনে করছিলাম অন্য চিন্তা। হঠাৎ করে মীরা এই ঘরে ঢুকতে চাইছে কেনো! আগেও নাকি অনেক বার এই বাড়িতে এসেছে, তাহলে তখন তালা খুলে ঘরে ঢুকে নি কেনো!এখন আমার সাথে এসেই কেনো ঘরে ঢুকতে চাইছে! ও কি প্রতিশোধ নিতে চাইছে আমার থেকে। নাকি অন্য কোনো কারন আমাকে সাবধানে থাকতে হবে।

__তালার চাবিতো আনি নাই, এখন তালা ভাঙতে হবে। আচ্ছা তুমি ঘরের সামনে দাঁড়াও আমি তালা ভাঙার জন্য হাতুড়ি নিয়ে আসছি। বলেই রায়হান আহিলদের দুচালা ঘরে ঢুকে আহিল কে বলে হাতুড়ি নিয়ে আসে । আর সবার চোখের আড়ালে,,, বেড়ায় গুজে রাখা একটা ছোট ছুরি পকেটে ডুকিয়ে নেয়।তারপর ঘরের সামনে এসে তালা ভেঙে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে, মীরা আর রায়হান।

__রায়হান একটা কোদালের আনার ব্যবস্তা করো।আমার মাটির নিচে কিছু গহনা আছে, ও-ই গুলো তুলতে হবে।

__তুমি আবার মাটির নিচে গহনা রাখলে কখন!

__যখনই রাখি তা তোমার জানতে হবে না। তোমকে কোদাল আনতে বলেছি,, তুমি কোদাল আনো। আর আহিলকে ও ডেকে নিয়ে আসবা আসার সময়। ওকে দিয়ে মাটি খুরতে সুবিদা হবে।

কোনো উপায় না পেয়ে, রায়হান ঘর থেকে বেড়িয়ে। আবার দুচালা ঘরে এসে আহিলকে বলে,, কোদাল নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে।

__আহিল মাটি খুরতে শুরু করো। আজকে আমার সাথে আমার গহনা ও নিয়ে যাবো।।

__আচ্ছা কাকিমা। (বলেই আহিল মাটি খুরতে শুরু করে)

প্রায় এক দুই ঘন্টা মাটি খুরার পর অনেকটা যায়গা খুরা হয়ে যায়।কিন্তু ওইদিন আমি যেই পুতুলটা তুলেছিলাম সেটা এখন আর নেই। আমি অনেকটা অবাক হয়! এই পুতুলটা আবার কে নিলো! পুতুলের যায়গায় একটা গয়নার সিন্দুক।

__ কি হলো রায়হান অবাক হচ্ছো! অবাক হওয়ারই কথা, তাই না। তুমি ওইদিন দেখেছিলে পুতুল, কিন্তু এখন গয়নার সিন্দুক।

__মানে পুতুল কে দেখেছে!আর তোমাকে কে বলেছে,, আমি এখানে পুতুল দেখেছি।

রায়হানের কথায় মীরা জোরে জোরে হাসতে শুরু করে। রায়হানের দিকে এগিয়ে এসে মুখে ক্লোরোফম মারে,।ক্লোরোফম মারার সাথে সাথে রায়হানের শরীর ডলতে থাকে,, চোখ আস্তে আস্তে বুঝে আসে।আহিল রায়হানের দিক এগিয়ে এসে রায়হানকে ধাক্কা দিয়ে গর্তে ফেলে দেয়। তারপর মাটি চাপা দিতে শুরু করে,,,,,,,

____
তিশাদের বাড়ির সামনে এসে থামা ব্লাক গাড়ি থেকে দুইজন লোক বেড়িয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকতে নিলে দারোয়ান এসে বাধা দিয়ে বলে,,,,

__আপনারা কোথায় যাচ্ছেন! রায়হান স্যার তো বাড়িতে নেই, শুধু ওনার মেয়ে বাড়িতে আছে।

__আমারা তোর স্যারের কাছে আসি নাই, তার মেয়ের কাছেই এসেছি। (বলেই দারোয়ানের মুখে স্প্রে মেরে দারোয়ান কে অজ্ঞান করে বাসায় প্রবেশ করে)

কিছুখন পরে একজন কোলে করে তিশাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়। তিশাকেও স্প্রে মেরে অজ্ঞান করে ফেলেছে। তারপর তিশাকে গাড়িতে উঠিয়ে,,, তারাতাড়ি ওখান থেকে চলে যায়,,,,

চলবে,,,,,,

#আমার_গল্পে_আমি_খলনায়ক
#MD_Nachemul_Hasan
#part_14

“রায়হানের কথায় মীরা জোরে জোরে হাসতে শুরু করে। রায়হানের দিকে এগিয়ে এসে মুখে ক্লোরোফম মারে,।ক্লোরোফম মারার সাথে সাথে রায়হানের শরীর ডলতে থাকে,, চোখ আস্তে আস্তে বুঝে আসে।আহিল রায়হানের দিক এগিয়ে এসে রায়হানকে ধাক্কা দিয়ে গর্তে ফেলে দেয়। তারপর মাটি চাপা দিতে শুরু করে,,,,,,

ফজরের আজান শুনা যাচ্ছে,রাতের তমা নিশা কাটিয়ে সোনালী সূর্য একটু দেখা দিচ্ছে। হঠাৎ রায়হান ঘুম থেকে লাফিয়ে ওঠে! কি ভয়ানক স্বপ্ন ছিলো! যদি এটা সত্যি হতে!সত্যিই সত্যিই যদি আহিল আর মীরা আমাকে মেরে ফেলতো! কালই শহরে ফিরার কথা থাকলেও,আহিলের জন্য ফিরতে পারিনি। মায়া মারা যাওয়াই একদম ভেঙ্গে পরেছে। আত্মীয় স্বজন কেও আসে ও-নি, তাই বাধ্য হয়ে থাকতে হলো। আমার অবশ্য ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো, কিন্তু এই মীরা নামের আপদটার জন্য যেতে পারলাম না।জোর করে রেখে আবার স্বপ্নে আমাকে মারতে আসে, কি সাংগাতিক মহিলা ভাবা যায়! ওখানে তিশা একা আছে, একবার ও ওর সাথে কথা বলতে পারি নাই, যতবারই কল দিয়েছি মোবাইল বন্ধ বলছে। হয়তো রাগ করে মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে।কি আর করার অগত্যা রাতটা এখানে কাটাতে হলো।

এইরকম একটা স্বপ্ন দেখার পর রায়হানের মনে ভয় কাজ করছে,এখানে আর একমুহূর্ত ও থাকবে না সে।যদি এই মীরা আর আহিল মিলে স্বপ্নটা সত্যি করে দেয়। না, না,এ-সব কিছু হতে দেওয়া যাবে না, তাই রায়হান মীরাকে ডাকে,,,,

__মীরা তাড়াতাড়ি ওঠে ফ্রেশ হয়ে না-ও, আমরা এখনই শহরে ফিরে যাবো।

__মানে! এই সাতসকালে কি তোমার মাথা খারাপ হয়েছে! এখন শহরে যাবে মানে, আমারা এখানে তিন দিন পর্যন্ত থাকবো। ছেলেটাকে একা বাড়িতে ফেলে যাওয়া ঠিক হবে না।

__তোমার কি মাথা খারাপ নাকি,তিন দিন থাকবে এখানে!আমি আর এক মূহুর্ত ও এখানে থাকতে পারবো না।তোমার থাকার হলে তুমি থাকো,আমি এখনই শহরে ফিরে যাবো।বাসায় তিশা একা আছে, ওর একা থাকতে সমস্যা হবে।

__আহিল তোমার ভাইয়ের ছেলে নাকি আমার ভাইয়ের ছেলে! কোথায় তুমি ওর এই খারাপ সময়ে পাশে থাকবে, আর তা না করে তুমি কি না শহরে যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছো। আমারা তিনদিনের আগে কোথাও যাচ্ছি না, আর যদি যায় ও তো আহিল আমাদের সাথে যাবে।

___আহিল আমাদের সাথে যাবে কেনো!ও এখানে থাকুক, তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসো। আমারা এখন বেরোবো।

__না,,, আমি আহিল কে একা ফেলে কোথাও যাচ্ছি না। ও আমাদের সাথেই যাবে, আর না হলে আমি যাবো না। তখন তিশাকে কি জবাব দিবে তা ভেবে নিও! আমাকে তিশা ফোন করলে আমি কিন্তু বলে দেবো, তুমি যে তিশার ডিএনএ টেস্ট করিয়েছো! এটা প্রমান করার জন্য যে, তিশা সত্যিই তোমার মেয়ে কি না।

__কিসের ডিএনএ টেস্ট! আর তুমি এসব কি বলছো আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না।

__সত্যিই তুমি বুঝতে পারছো না! আবার আগের মতো বোকা বানানোর জন্য সরল সাজছো!কিন্তু তোমার এই ফাঁদে আমি মীরা আর পা দিবো না। আমার কাছে কিন্তু ডিএনএ টেস্ট রিপোর্ট এর ফাইলটা আছে। আশাকরি তুমি চাইবে না, যে আমি এটা তিশাকে দেখায়! যদি চাও তাহলে,, তুমি একাই চলে যাও। আর যদি না চাও তাহলে আহিল কে ও আমাদের সাথে নিয়ে চলো।

__তুমি কি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছো!

__এমা,,,,!ব্ল্যাকমেইল করবো কেনো!আসলে, তুমি যেমন আমি তোমার সাথে ঠিক তেমনটাই করছি।

এখন যদি মীরাকে সাথে নিয়ে না ফিরি তাহলে , তিশাকে সব কিছু বলে দিবে। আর যদি এখানে থাকি তাহলে এই মীরা আর আহিল মিলে আমার ক্ষতি করার সম্ভবনা আছে। তারচেয়ে ভালো হবে ওদের কে শহরেই নিয়ে চলি,, ওখানে নিয়ে ওদের একটা ব্যবস্থা করবো।

__আচ্ছা তাহলে আহিল আমাদের সাথে যাচ্ছে, কিন্তু আমার মেয়ের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। তিশার আসে পাশে যেনো আমি একদম না দেখি।এখন তাহলে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসো, আর আহিল কে ডাক দিয়ে বলো ওঠে রেডি হওয়ার জন্য।লেইট যেনো না হয়,,,

__আচ্ছা,,,
বলেই হাট থেকে নেমে গেলে মীরা, তারপর দুচালা ঘর থেকে বেড়িয়ে আহিল যে ঘরে ঘুমিয়েছে সেই ঘরে যায়। আহিল কে ডেকে ঘুম থেকে উঠিয়ে,শহরে যাওয়ার জন্য রেডি হতে বলে।আহিল প্রথমে না করলেও মীরার জোরাজুরিতে অবশেষে রাজি হয়ে যায়। আর এমনিতেও আহিল কে দুই তিন দিন পর শহরে ফিরে যেতে হতো। নতুন চাকরি নিয়ে একদিনও ডিউটি করতে পারলো না , এর আগেই খবর আসলো। তার মা-কে কেও মেরে ফেলেছে। কিছু দিন আগে বাবার মৃত্যু এখন আবার মার মৃত্যু, কেও আর আপন রইলো না তার এই দুনিয়ায়।নিজের প্রেয়সীর থেকেও এখন অনেকটা দূরে, ওইদিন রাতের, রায়হানের বলা কথাগুলো মনে পরলে এখনে চোখ দিয়ে পানি পড়ে।গরিব কেনো হলো!

____
কাল সকালেই মেয়ে পাচারের ডেট।আজকে পাচারের কথা ছিলো , কিন্তু পুলিশ চেকের কারনে পারে নাই।কালকেই একটা নতুন মেয়েকে আনা হয়,, মেয়েটা অসুস্থ। তাও এই নরপিশাচদের মায়া হয় না,, অসুস্থ মেয়েটাকে সকলের সাথে ই হাত পা বেধে ফেলে রেখেছে। কালকে যে মেয়েটিকে তুলে আনা হয়েছে তা আর কেও নয়, তিশা। হুম রায়হান চৌধুরীর ছোট মেয়ে তিশা চৌধুরী। কে জানতো যে নিজের বাবার অপকর্মের শাস্তি তাকে এভাবে বোগ করতে হবে। রাজিব সকাল থেকে রায়হানকে ফোনে ট্রাই করছে, কিন্তু রায়হান ফোন তুলছে না। হয়তো এখনো রাজিবের ওপর রেগে আছে,,,,,

_____
রায়হান, মীরা আর আহিল বাসায় এসেছে কিছুখন হলো।দারোয়ান এর কাছ থেকে তিশার কথা শুনার সাথে সাথে মীরা কান্না শুরু করে দেয় , কে তার মেয়েকে কিডন্যাপ করলো!রায়হান তিশার কথা শুনার সাথে সাথে যেনো তার পায়ের তলার মাটি সরে যায়! এই কাজ কে করতে পারে! কার এতো বড়ো সাহস যে রায়হান চৌধুরীর মেয়েকে কিডন্যাপ করলো!কালকে যেই ছেলেটা তিশাকে কোলে করে বাসা অব্দি দিয়ে গেছে, সে কি কোনো ভাবে এইসব করেছে।”কিন্ত দারোয়ান তো বললো ওই ছেলেটা যাওয়ার কিছুখন পরে,কালো গাড়ি করে কয়েকটা ছেলে এসে তিশাকে নিয়ে যায়। বলাতো, যায়না হয়তো এই ছেলেটাও তিশার কিডন্যাপের সাথে জড়িত। আর কিছু না ভেবে রায়হান বাসা থেকে বেড়িয়ে পরে,, পুলিশ স্টেশনে যাওয়ার জন্য। চব্বিশ ঘন্টার ওপরে হয়ে গিয়েছে তিশা গায়েব যদি ওর কোনো ক্ষতি হয়! রায়হান সেই রিস্ক নিতে চাই না,,,,
বাসা থেকে বেড়িয়ে গেইটের কাছে আসতেই কারো সাতটা ধাক্কা খেয়ে রায়হানের হাত থেকে ফোনটা নিচে পরে যায়।

__কোথা থেকে যে এগুলো আসে! এই ছেলে দেখে চলতে পারো না! দিলেতো আমার ফোনটা ফেলে।কে তুমি! আর এই বাসায় কেনো এসেছো, কার থেকে অনুমতি নিয়ে ভিতরে ঢুকেছো।

সায়ান কিছুটা ভ্রকুচকে তাকায় রায়হানের দিকে,তারপর ভালো ভাবে দেখে ভাবে এইটা নিশ্চিত এই বাড়ির দারোয়ান। তাই মনে মনে ভাবে একটু ভাব নিয়ে,, কথা বলে দেখা যাক জানা যায় কি না যে তিশার আম্মু -আব্বু বাসায় আসছে কি না,,,,,

__আমি এই বাসার খবু জামাই, আমার কারো অনুমতি লাগে না। এটা আমার ভবিষ্যত শ্বশুর বাড়ি। তাই আমার যখন মন চাই, আমি তখনই আসবো। আপনি কে কিছু বলার আমাকে,, আমার শ্বশুরের রায়হান চৌধুরির কাছে আপনার নামে বিচার দিবো।এখন আগে বলেন যে আমার শ্বশুর -শ্বাশুড়ি বাসায় আসছে কি না,,,,,,,

রায়হান যেনো অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়! এই বাসায় তো শুধু আমারা থাকি , আর তিশা তো আহিল কে ভালোবাসে! তাহলে এইছেলে কে! আর আমাকে খবু শ্বশুর বলছে,,,

__এই ব্যয়াদপ ছেলে থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দিবো! তুই কাকে কি বলছিস,জানিস আমি কে! আমি রায়হান চৌধুরী।

রায়হানের মুখে এই কথা শুনার সাথে সাথে সায়ানের মুখের হাসি সাথে সাথে উধাও । বিয়ে হাওয়ার আগেই তার সম্পর্ক শেষ। ভেবেছিলো শ্বশুর শ্বাশুড়িকে পটিয়ে তিশার জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিবে।কিন্তু এখানেতো আরো ঝামেলা! এই তিশার বাপ টাও না পুরো তিশার ফোটো কপি,একটা কথা সুন্দর ভাবে বলতে পারে না,সারাক্ষণ শুধু রেগে থাকে।

__সরি আংকেল আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। আর এইসব তো আমি মজা করে বলেছি।আপনি কিছু মনে করবেন না।

__এইগুলা কি ধরনের মজা! আর তুমি এখানে কেনো এসেছো সেটাতো বললে না।

__আসলে,,, আংকেল আমি তিশাকে দেখতে এসেছিলাম।

__তুমি তিশাকে চিনো কিভাবে!

__কিছুদিন আগে তিশাকে একটা ফুচকার দোকানের সামনে দেখেছিলাম একটা ছেলের সাথে , তখনই প্রথম দেখায় ওর প্রেমে পড়ে যায়।কিন্ত পড়ে বুঝতে পারি ছেলেটা তিশার বয়ফ্রেন্ড তাই ওখান থেকে চলে যায়। তারপর আর ওর সাথে আমার দেখা হয় নাই,, কিন্তু কালকে সকালে আমি অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বের হয়ে রাস্তায় এসে দেখি একটাও গাড়ি নেই। আমার বাসা থেকে অফিসের রাস্তা প্রায় বিশ মিনিট তাই হেটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।রাস্তায় হাঁটছিলাম তখন কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে আমার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায় কাদা পানিতে , সাথে আমি ও পড়ে যায়। আমি যখন মেয়েটির দিকে তাকায় তখন গিয়ে চিনতে পারি,, এটা যে তিশা। যাকে দেখার পর থেকে আমার রাতের ঘুম বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ওর সাথে ধাক্কা খাওয়া অবস্তায় তখন আমার গায়ে সাদা শার্ট ছিলো। আর রাস্তায় কাঁদা থাকায় আমার শার্টের অবস্থা একদম নাজেহাল। আমি কিছু বলতে যাবো তিশাকে, তার আগেই আমার ওপর রাগ জারতে শুরু করে,আমিও কিছু কথা শুনায়। তারপর এরকম ভাবে কিছুখন তর্কাতর্কি হওয়ার পর আমি ওকে এখানে বসে থাকেন বলে চলে যাচ্ছিলাম। কিন্তু তিশা আমাকে পিছু ডাকলো,,,তার নাকি কোমরে ব্যাথা পেয়েছে!রাস্তা থেকে ওঠার চেষ্টা করে ও ওঠতে পারছিলো না। তাই বাধ্য হয়ে আমার কাছে সাহায্য চায়।আমিও আর না করতে পারিনি,তারপর ওকে কোলে তুলে গাড়িতে উঠিয়ে বাসা পর্যন্ত আনি,এখানে আসার পর অনেকক্ষন আপনাদের ডাকবার পরেও কোনো সারা পাওয়া যাচ্ছিলো না। তাই আবার বাধ্য হয়ে,, তিশকে কোলে করে ওট রুম অব্দি পৌঁছে দিয়ে আমি ওর থেকে একদিন কফি খাওয়ার কথা বলে নাম্বারটা নিয়ে, বিদায় নিয়ে চলে যায়। ও বার বার আপনার কথা বলছিলো আপনি দেখতে পারলে নাকি খবর আছে!আংকেল ওকে বকাবকি করার দরকার নেই,আসলেই ও অনেকটা ব্যাথা পয়েছিলো।তাই বাধ্য হয়ে আমার থেকে সাহায্য নিয়েছে। ( একদমে কথাগুলো বলে থামলো সায়ান, কি বলতে কি বলে ফেললো সে! তিশার বাবার সামনেই তিশাকে যে ভালোবাসে তা কিভাবে বলে দিয়েছে,এখন শুধু রায়হানের রিয়াকশন দেখার জন্য অপেক্ষা করছে)

রায়হানকে চুপ থাকতে দেখে সায়ান আবার বলতে শুরু করে,,,,,,

__আংকেল তিশা কেমন আছে! ওর শরীর এখন কেমন! কোমরের ব্যাথা কমেছে।

রায়হান করছে অন্য চিন্তা, যদি এই ছেলেটাই তিশাকে কিডন্যাপ করতো তাহলে, আজকে তিশাকে দেখার জন্য এখানে আসতো না। আর ওর কথা শুনে যা বুঝতে পারলাম ও সত্যিই তিশাকে ভালোবাসে। তা না হলে একটা অপরিচিত মেয়েকে রাস্তা থেকে কোলে করে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিতো না, আবার পরের দিন তার খুঁজ নিতে আসতো না। তাহলে কে করেছে তিশাকে কিডন্যাপ।কিচুখন চিন্তা ভাবনা করে সায়ানকে বলে,,,,

__তিশাকে কারা যেনো কিডন্যাপ করেছে ! আমি এখন তিশাকে খঁঝতেই বের হচ্ছিলাম।

তিশার কিডন্যাপ এর কথা শুনে সায়ানের মাটির নিচ থেকে যেনো মাটি সরে যায়। তার বুকে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করতে পারছে সে।এই দুই দিনের মধ্যেই কি কারো জন্য এতো সীমাহীন ভালোবাসা জন্মায়! হয়তো বা জন্মায়, না হলে সায়ানের কেনো জন্মালো। সায়ান আবার রায়হানকে বলতে শুরু করে,,,

__কিডন্যাপ হয়েছে মানে! কিভাবে কিডন্যাপ হয়েছে,আর কখন হয়েছে, কেও কি মুক্তিপনের জন্য ওকে কিডন্যাপ করেছে।

__কাল কে তুমি ওকে বাসায় রেখে যাওয়ার কিছুখন পরে ও কিডন্যাপ হয়।কিছু কালো মাস্ক পরা লোক ক্লোওরোফোম দিয়ে ওকে অজ্ঞান করে উঠিয়ে নিয়ে যায়।

সায়ন কিছু বলতে যাবে তার আগেই রায়হানের মুঠোফোনটি বেঝে উঠে,,ফোনের স্ক্রীনে কারো নাম দেখার সাথে সাথে রায়াহানের হাত থেকে মুঠোফোনটি মাটিতে পরে যায়,,,,,,,,,,,,,,

চলবে,,,,,,,,