আমার চারু পর্ব-০৮

0
239

#আমার চারু
#পর্ব-৮
#ফারজানা নিলা (writer)

একি করছেন,আপনি আমায় কাধে নিলেন কেন?
— চুপচাপ আমায় ধরে রাখুন।

চারু তো আর মানুষ নয়,তাই সে যেকোনো কাজই খুব সহজে করে নিতে পারে।জ্বীনদের কাছে অনেক শক্তি থাকে।তারা চাইলেই পাথর ও তুরি মেরে ভেংগে ফেলতে পারে।আরে এখানে তো একটা মানুষ ছিলো।



চারু কাব্যকে নিয়ে বিশাল এক পাহাড়ের চুরায় নিয়ে দাড় করালো।মনে হচ্ছে অনেকটা উপরে ঠিক যেন আকাশের কাছে।

–চারু আপনি আমায় কোথায় নিয়ে এলেন।

–মাত্র তো শুরু দেখতে থাকুন শুধু।

পাহাড়ের চূড়ায় অনেক বাতাস। রাত প্রায় ১.৩০। মনে হচ্ছে আকাশের তারা চাঁদ সব যেন ঘুর পাক খাচ্ছে আর কাব্য, চারু মাঝখানে।

–কাব্য,জায়গাটা কেমন?
–অনেক অনেক সুন্দর।আমি কখনো ভাবিনী আমি এমন সুন্দর জিনিস দেখতে পারব। চারু দেখো মেঘ গুলো মনে হচ্ছে ঠিক আমার উপরে।দেখো না।চারু!!

কাব্য, চারুকে নিজের অজান্তেই তুমি করে বলে ফেলেছে।চারু তাই অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে।

–চারু কি হলো আপনার?
–আমার কিছু হয়নি,আপনি একটু আগে কি বললেন,আবার বলুন তো।
–আমিতো মেঘের কথা বলছিলাম।
–না।আমাকে আপনি তুমি বলে ডেকেছেন।
-কেন?ডাকতে বারণ নাকি?
-তোমার কাছে আমার কোনো বারণ নেই।আমি তোমার কাছে সম্পূর্ণ ভাবে আত্মসমর্পণ করেছি।তুমি কি বুঝোনা।

চারু উঠে এসে কাব্যর হাত ধরে, চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে আছে।চারুর চোখে তৃষ্ণা ছিলো,স্পষ্ট ভেসে উঠছিলো। কাব্য, চারুর দিকে তাকিয়ে ভাবছে,এই অগ্নীঝরা চোখেও তৃষ্ণা।

চারু হঠাৎ তার ভেতরের রাগ সামনে নিয়ে এলো।মাটিতে হাতের ইশারায়,বালু ঘূর্ণি উঠে কাব্য আর চারুর পাশে ঘুর পাক খাচ্ছে।
চারুর এই কালো মেঘের চুল কাব্যের চোখে মুখে।
কাব্য বুঝতে পারছিলো না।কেন চারু আচমকা রেগে গেল।
এতো রেগে যাওয়ার পরও কাব্য স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।চারু বড় চোখ করে কাব্যের দিকে তাকিয়ে আছে।
বালু ঝর এই বুঝি উড়িয়ে নিলো।

কাব্য হঠাৎ কি করবে ভেবে না পেয়ে,
চারুর গলায় ধরে, উষ্ণতায় ভরা ঠোট চারুতে মিশিয়ে দিলো।
চারু তার চোখ বুজে নিলো।

চুমু খাওয়ার সময় মানুষ চোখ বন্ধ করার এই নিয়মটা একদম মাথায় আসে না।

বেশ ১৫ সেকেন্ড পর কাব্য ধীরে ধীরে তার ঠোট সরিয়ে নিলো।চারু এখনো চোখ খুলছে না।বালু ঝড় ও কমে গেল নিমিষেই।

কাব্য চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।হয়তো চারুর চোখ খোলার অপেক্ষা করছে।

চারু চোখ খুললো
–কাব্য তুমি একি করলে?
–কেন,তোমায় শান্ত করেছি।
—তুমি যে আমায় এক অন্য স্বাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলে।এ স্বাদ যে আমি ভুলবনা।আমার যখন এ স্বাদের ইচ্ছে হবে আমি তখন কই পাবো।
—আমি আছিতো।তোমার সব ইচ্ছে আমি পূরণ করব।


চারু নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
কাব্য হয়তো চারুর কাছের কেউ।।


এক মাস পর……

কাব্য অফিসের কাজে দার্জিলিং যাবে।তিন দিন পর ফেরত আসবে।ব্যাগ পত্র গুছাতে হবে।চারু দাঁড়িয়ে আছে।কিছু খাবার বানিয়ে দিয়েছে।

—তুমি কদিন থাকবে?
—তিনদিন।এবার শোনো,আমাকে তোমার একটা কথা দিতে হবে।বলো আমার কথা রাখবে।
—হ্যা রাখব,বলো কি কথা।
—তুমি বাসায় আমার জন্য অপেক্ষা করবে।দার্জিলিং চলে এসোনা।রাখবেতো কথা।
-ঠিক আছে।দিলাম কথা।


দার্জিলিং এর জন্য কাব্য আর তার এক বড় বাবু রওনা হয়ে গেল।বেশ অনেকটা পথ।
দার্জিলিং এ তারা একটি বাংলো বাড়িতে উঠবে।সেখান থেকে মিনিট পাচঁ এক সময় লাগে।অল্প সময়ের কাজ।

—কাব্য এই হলো মন্টু।মন্টুই এ বাড়ি দেখাশোনা করে।যখন চা প্রয়োজন হবে একে বলবা।
—আচ্ছা বড় বাবু।
—-বাবু আপনারা আপনাদের ঘরে গিয়া হাত মুখ ধুয়ে নিন।আমি চা এর ব্যবস্থা করছি।


কাব্য চাবি নিয়ে ঘরে ঢুকলো।ঘরে একটি সিংগেল খাট,পাশে একটা সোফা, একটা চেয়ার টেবিল।
বেশ বিরাট এক জানালা।জানালার পর্দা সরিয়ে দেখে সামনে কিছু দূরে এক বিরাট ঝর্ণার মতো।বেশ সুন্দর।কিন্তু দূর থেকে মনে হচ্ছে বেশ বহু বছর এখানে কেউ আসেনি।
ঝর্ণার আশে পাশে সব শুকনো পাতা।ঘাস গুলো প্রায় মরা মরা।
বৃষ্টি পরলে হয়তো আবার জেগে উঠে।

———

কাব্য গোসল করে নিলো।বেশ লম্বা জার্নি সেরে গোসল না করলেই নয়।গোসল করলে শরীর টা অনেক হালকা হয়।
আজকে কোনো কাজ নেই।কারণ বিকেল হয়ে গেল প্রায়।

—বাবু চা বিস্কুট আনছি।

—-মন্টু,যাও তো কাব্য কে ডেকে আনো।
—জ্বি আচ্ছা।
—-বাবু, বাবু ও বাবু।
—–হ্যা, দাড়াও আসছি।
—-আপনাকে বাবু ডাকছে।

কাব্য ঘর থেকে বেরিয়ে বড় বাবুর কাছে যাচ্ছে।সামনে মন্টু।

—-বাবু আপনি চলে এসেছেন।আমি আপনাকেই ডাকতে যাচ্ছিলাম।
—–তুমি এই মাত্রই তো আমায় ডাকলে।
—–আমিতো মাত্র যাচ্ছিলাম ডাকতে।

কাব্য আর কিছু জিজ্ঞেস না করে, বড় বাবুর কাছে গিয়ে বসলো।

—-কাব্য এসো, চা খাও।জায়গাটা কেমন।
—-হ্যা বড় বাবু ভালো।কিন্তু একটু ঘুরে দেখতে চাই।
—-হ্যা ঘুরে এসো।সন্ধ্যা হওয়ার আগেই ঘুরে এসো।


কাব্য চা খেয়ে বের হলো জায়গাটা একটু ঘুরে দেখবে।বেরিয়ে দেখলো কোথাও তেমন কিছুই নেই।নির্জন রাস্তা,শুকনো ঘাস।
কাব্য হাটতে হাটতে একটা ভাংগা গ্যারেজ এর কাছে আসলো।মনে হচ্ছে এটি অনেক পুরোনো। হয়তো ব্রিটিশ আমলের।এর ঠিক বা পাশেই ঝর্ণা।

কাব্য এগিয়ে গেল ঝর্ণার দিকে।
ঝর্ণার চার পাশে কিছু পাথর আছে বেশ বড়ই।সব শ্যাওলা পরে আছে।আর ঝর্ণা টি থেকে ধীরে ধীরে পানি পরছে।বেশ উপর থেকেই।
কাব্য এগিয়ে গেল একটা পাথর এর উপর গিয়ে দাঁড়ালো, এর পাশে একটা শুকনো গাছ আছে।বেশ বড়। কিন্তু একটি পাতা ও নেই। কি গাছ বুঝা যাচ্ছিলো না।হয়তো ভিতরে উই পোকা খেয়ে নিয়েছে।
কাব্য এগিয়ে যাচ্ছে পানি দেখার জন্য।পানিটা মনে হচ্ছে বেশ গভীর। দেখে বুঝা যাচ্ছে না।পানির দিকে তাকাতে গিয়ে পিছলে পানিতে পরে গেল।কেমন যেন সুরঙ্গ। দেখতে ছোট হলেও ছোট না।পানির উপর নানা ধরনের লতা পাতা, কাব্য কিছুতেই উঠে আসতে পারছে না।হঠাৎ কেউ যেন টেনে উপরে উঠিয়ে নিলো।
কাব্য বেশ পানি খেয়ে নিয়েছে,কারণ হুট করেই পানিতে পরে গেল তাই।
কাব্য কাশতে কাশতে পানি বের করছে…
—-আমাকে কেউ টেনে তুললো মনে হলো।কিন্তু কে টানবে।

কাব্য বাংলোতে ফিরে গেল।

—-বাবু আপনার এ কি হাল হয়েছে।
—-ও কিছু না।কাদাতে পরে গিয়েছি।

কাব্য ঘরে গিয়ে গোসল খানায় ঢুকলো।গায়ের শার্ট খুলতেই,পিঠে কি যেন লেগে আছে মনে হচ্ছে।পিঠে হাত যায় না।এপাশ ওপাশ করতে করতে হাতে এক লম্বা চুল আসলো।পিঠে লেগে ছিলো।অনেক লম্বা চুল।এমন চুল মেয়েদেরই হতে পারে।কিন্তু এতো বড় চুল।
কোথা থেকে এলো।
কাব্যকে রাতের খাবারের জন্য মন্টু ডাকতে আসলো।

—-কাব্য এসো।বসে খেয়ে নাও।
তো কোথায় ঘুরলে।
—এদিকেই। আচ্ছা বড় বাবু,দেখলাম এখানে একটা ঝর্ণা, পুরোনো গ্যারেজ।

—-হ্যা,এই জায়গাটা সেই ব্রিটিশ আমলের।এখানে অনেক দিন কেউ নেই।আর এই বাংলোতে ও নানা ধরনের ঘটনা হয়েছে।আমাদের কাজের সুবিধার জন্য এখানে আসা।
—-কি ঘটনা?
—-এটা একটা গ্রাম ছিলো।এখানের লোক জন খুব সুন্দর,বিশেষ করে মেয়েরা খুবি সুন্দরী ছিলো।এক ব্রিটিশ এখানে এই বাংলো টি বানায়।তারা গ্রাম এ তাদের হুকুম খাটাতো।তাদের কথা মতো সব কাজ করতে হতো।
পিটারসন ছিলো সেই লোকের নাম।তার সাথে আরো লোক ছিলো।তারা প্রতি রাতে গ্রাম থেকে মেয়ে তুলে আনতো, শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য।একটি মেয়েকে এক সপ্তাহ ধরে শারীরিক বেদিনা পোহাতে হতো।মেয়েদের রাখার জন্য আলাদা করে ঘর আছে।তোমাকে দেখাবো।এক সপ্তাহ হয়ে গেলে তাদের গ্রামে দিয়ে আসা হতো।
একদিন পিটারসন তার ঘরে মদ্য পান করতে করতে, জানালায় চোখ পরে।দেখে ঝর্ণার পানিতে এক সুন্দরী গোসল করছে।
মেয়েটির নাম ছিলো, অম্রিতা।
বেশ অনেক্ষন তাকিয়ে থাকার পর পিটারসন এগিয়ে গেল, সে ঝোপে দাঁড়িয়ে দেখছে অম্রিতাকে।

অম্রিতা পরনে ছিলো সাদা শাড়ি।গায়ে কোনো ব্লাউজ ছিলো না।চারদিক পুরো শূণ্য।এখানে কেউ আসে না।অম্রিতা প্রায় সময় এখানে এসে গোসল সারে।
অম্রিতা তার চুল গুলো খুলে গিয়ে ঝর্ণার নিচে গিয়ে বসলো।পানি পরার সাথে সাথে, পুরো শরীর যেন আয়নার মতো ভেসে উঠেছে।পানি নিয়ে খেলা করছে।অন্য দিকে পিটারসন , অম্রিতার এই ভরা যৌবন চোখের সামনে দেখে নিজের মধ্যে নেই।
অম্রিতা গোসল সেরে বাড়ি চলে গেল।

পিটারসন ঘরে গিয়ে জানালার সামনে বসে বসে মদ্য পান করছে আর সেই ঝর্ণার দিকে তাকিয়ে আছে।

পরদিন ঠিক আবারো অম্রিতা হাজির।
অম্রিতা আজ পরেছে হালকা নীল শাড়ি।পিটারসন সেই ঝোপে বসে আছে।বেশ অনেক্ষন অপেক্ষার পর অম্রিতা এসেছে।অম্রিতার বেশ সুরেলা কন্ঠ।গোসলের সাথে গানও গায়।বয়স হবে ১৭।চোখ যেন হরিণী।তাকালেই যেন হ্রদয় ছিড়ে দিবে।

অম্রিতা পা দোলাতে দোলাতে পাথর এর সাথে পিছলে পানিতে পরে গেল।ঝর্ণার পানিটা ঠিক যেখানে পরে সেখানে অনেক লম্বা সুরঙ্গ। একবার গভীরে নেমে গেলে আর উঠে আসা যাবে না।
অম্রিতাকে পরতে দেখে পিটারসন এগিয়ে গেল।
পিটারসন ঝাপ দিয়ে অম্রিতার মাথাটা পানি থেকে বের করলো।অম্রিতা তাকিয়ে আছে পিটারসন এর দিকে।পিটারসন অম্রিতার কোমরে ধরে ছিলো।পানিতে পরে যাওয়ার কারণে,শাড়ির আচল বুক থেকে সরে গিয়েছে। অম্রিতার সেই খেয়াল নেই।পিটারসন তার আচলটি গায়ে জড়িয়ে দিলো।
অম্রিতা বাড়ি ফিরে গেল।পিটারসন যেন অম্রিতার প্রেমে পড়ে গিয়েছে।
বেশ কিছুদিন হয়ে গেল অম্রিতা ঝর্ণায় আসে না।পিটারসন বেশ উদ্বেগ হয়ে পরেছে।
সে গ্রামে গেল অম্রিতার খোজ করতে।
গিয়ে দেখে অম্রিতা উঠোনে কাজ করছে।অম্রিতাকে তুলে নিয়ে আসা হলো।

চলবে…..