#আমার চারু
#পর্ব-১৩
#ফারজানা নিলা(writer)
—-আপা তুমি এতো সুন্দর ভাবে সারদ বাজাও কিভাবে?
—-তুমি যদি কোনো কিছু ভালোবেসে আকড়ে ধরো তাহলে সেটা অবশ্যই সুন্দর হবে।
—-বাহ, আপা তুমিতো খুব সুন্দর বললে।
—এবার তুমি বলো তোমার কি কথা ছিলো?
—-তুমি আমাকে তোমার মতো করে শাড়ি পড়িয়ে সাজিয়ে দিতে পারবে?
—-আমার মতো!!আমার মতো কেন?তুমিতো অনেক সুন্দর ভাবে সাজতে পারো।
—আপা দিবা কিনা বলো
—-ঠিক আছে দিব।কিন্তু কারণ
—-সেটা খুব তাড়াতাড়ি জানতে পারবে।কাল সন্ধ্যায় আমাকে সাজিয়ে দিবে।এবার আমি এলাম।
রিমা চলে গেল।
চারু নিজের মনে সারদ বাজিয়েই চলেছে।কাব্য অপেক্ষা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেল সে টেরই পায়নি।
চারু সারা রাত সারদ বাজিয়ে গিয়েছে।ভোরের আলো ফুটতেই কাব্যের ঘরে হাজির।
কানের মধ্যে ফু দিচ্ছে,আর কাব্য নড়ে চড়ে উঠে
—–আর কত ঘুমাবা?এবার উঠো।না হয় চলে যাচ্ছি
কাব্য, চারুকে টান দিয়ে বিছানায় নিয়ে এলো,আর একটু ঘুমাই এসো।এসো আমার সাথে ঘুমাও।
—-তুমি উঠবা নাকি চলে যাবো।
—উফ,আচ্ছা আচ্ছা।
কাব্য, চারু রাস্তায় বের হলো।শহরে ভোর বেলায় তেমন কোনো মানুষ থাকে না গুটি কয়েক জন থাকে, যারা সকালে হাটে।
সকালে হাটলে শরীর ভালো থাকে।সকালের সব কিছু ভালো একদম পরিষ্কার। হাওয়া, আকাশ,গাছ পালা, এসবের দিকে তাকালেও মন ভালো হয়ে যায়।
—–তো ম্যাডাম, এতো ভোরে রাস্তায় নিয়ে এলেন যে
—-মন চেয়েছে একটু হাটব।দেখো কত সুন্দর সকাল।আর তুমি ঘুমাও।
—-তাই,তুমি বললে রোজ সকালে উঠব।
—-তাই নাকি,ঐ দেখো কৃষ্ণচূড়া।এনে দাও দেখি
—-যথা আজ্ঞা ম্যাডাম।
চারু হাসছে দাঁড়িয়ে,কাব্য অনেক চেষ্টা করেও ফুল আনতে পারছে না।তবে মাটিতে একটা কুড়িয়ে পেয়েছে।
—–এই যে নিন,এটা কুড়িয়ে পেয়েছি।এটাতে চলবেতো
—–হ্যা হ্যা চলবে।দাও এবার মাথায় পড়িয়ে।
—–ঠিক আছে।
কৃষ্ণচূড়া মাথায় দিয়ে যেন চারুকে বেশ মানিয়েছে। টানা টানা চোখ সাথে লম্বা চুল আর লাল কৃষ্ণচূড়া। আলাদা সুন্দর লাগছে।
—-চা খাবে?
—-খাওয়া যায়।প্রেমিকার সাথে টং দোকানে চা খাওয়ার মজা আলাদা।
—-কাকা দুইটা চা দিন।
—-প্রেমিকার সামনে সিগারেট খেলে কি প্রেমিকা রাগ করবে?
—-আপনার প্রেমিকাটা কে শুনি
—-আছে একজন।খুব সুন্দরী। আপনাকে কেন বলবো।
—-নয় টা বাজে,অফিসে যাবে না?
—-চলো তাহলে যাওয়া যাক।
তোমরা এক সাথে এতো সকালে!!
—-বের হলাম আর ওনার সাথে দেখা হয়ে গেল।
—-অহ।
রিমা যেন এক অন্য ভাবে চারুর দিকে তাকালো।রিমার মোটেও পছন্দ হয়নি,চারুর সাথে কাব্য এভাবে হাস্য রসিকতা।
—-ভাইয়া চলো আমি লুচি বানিয়েছি।
—-আমাকে বলবে না আসতে।?
—-হ্যা তুমিও আসতে পারো চাইলে।
—-না, থাক। জোর করে আমি আবার কোথাও যাইনা।
চারু তার ঘরে চলে গেল।
—-কি ব্যাপার রিমা,তুমিতো এভাবে কখনো চারুর সাথে কথা বলো না।তাহলে আজ কি হলো।
—-কিভাবে কথা বললাম।উনিতো আসতে চাইলো না।এসো তুমি লুচি খাবে আলুর দম দিয়ে।
—-না আমি খাব না।আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
কাব্য চলে গেল অফিসে।চারু ঘরেই আছে।চুলে তেল দিবে।তেল নিয়ে বসেছে।
রিমার মনে হচ্ছে,সে হয়তো এভাবে কথা বলে ঠিক করেনি।কারণ,রিমাকে চারু অনেক স্নেহ করে।
রিমা ভাবছে, চারুর ঘরে যাবে।কিন্তু যেতে যে হবেই।আজকে সে চারুর কাছে সাজবে বলেছে।
—–আপা আসব?
—-হ্যা এসো।কিছু বলবে?
—-না এমনি এলাম,তোমার ঘরের দরজা খোলা দেখলাম তাই।আজ অফিসে যাবে না।
—-আমি কদিন ছুটি নিয়েছি।শরীর টা ভালো লাগে না।তাই বিশ্রামের জন্য ঘরে আছি।
—-অহ।আপা তুমি কি আমার সাথে রাগ করেছো।আমি কিন্তু তোমাকে কিছু বলিনি।
—-রাগ করার মতো কিছু হয়েছে নাকি।যাই হোক,সন্দেশ খাবে?
—–হ্যা খাওয়া যায়।
চারু এক প্লেট সন্দেশ আর মিষ্টি নিয়ে এসেছে।
—–আপা তোমার ঘরে সব সময় মিষ্টি থাকে।তুমি কি খুব মিষ্টি ভালোবাসো?
—–হ্যা বাসি।
রিমা বেশ কিছুক্ষণ পর চলে গেল।বলে গেল,রাতে আসবে।
সন্ধ্যা সাত টার সময় রিমা হাজির।শাড়ি, চুরি,নূপুর, আলতা,কানের দুল,কাজল। এসব নিয়ে এসেছে।
—–আপা আমি চলে এসেছি।
—-আমার কাছে তো সব কিছুই ছিলো।
—-চারু, রিমাকে ঠিক নিজের মতো করে সাজিয়ে তুলেছে।
রিমাকে এতো সুন্দর হয়তো আর কখনো লাগেনি।
যে কোনো ছেলে দেখলেই হয়তো বেহুশ হয়ে পরে যাবে আর না হয় বিয়ের প্রস্তবা দিয়ে দিবে।
রিমা পুরো মোমবাতি দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে।
—–রিমা আয়নায় দেখোতো তোমায়
—–আপা, এ কে?আমিতো নিজেকেই চিনতে পারছিনা।
—–বোকা মেয়ে কি বলে।এটা তুমি।বুঝেছো।যে কেউ দেখলেই বেহুশ।
—-আপা কেন সেজেছি জানো?
—–কেন?
—–আজ আমি কাব্য ভাইয়া কে আমার মনের কথা বলবো।সে যেন বুঝে দোয়া করিও।
—-অহ।
—-আপা আমি যাই।ও হয়তো চলে আসবে।
—-আচ্ছা।
…………………………………
রিমা ঘরে অপেক্ষা করছে কাব্যের জন্য।
চারু ছাদে আরামদায়ক চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছে, আর গুন গুন করছে।
কাব্য অফিস থেকে বের হয়েছে।আসার পথে বাদাম কিনেছে আর রজনীগন্ধা নিয়েছে।
চারুর খুব পছন্দের ফুল রজনী।
দরজায় টোকা দিতেই রিমা দরজা খুললো।
—-চারু তুমি এখানে? কি ব্যাপার ম্যাডাম..
—-আমি রিমা ভাইয়া।
—–কি ব্যাপার রিমা তুমি এখানে?আর পুরো ঘর এতো অন্ধকার কেন।মোমবাতি জ্বালিয়েছো কেন?
কাব্য লাইট জ্বালিয়ে দিলো
কাব্য রিমাকে দেখে পুরো অবাক।সে চারুর মতো সেজেছে আর অসম্ভব সুন্দর লাগছে রিমাকে।কিন্তু চারুর মতো সুন্দর লাগছেনা।
চারু তো চারু।
——কি হয়েছে রিমা?
—–ভাইয়া তুমি এখানে বসো।তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে
—–হ্যা বলো।
—–ভাইয়া আমি জানিনা তুমি কখনো বুঝে উঠতে পেরেছো কিনা,আমি তোমাকে অনেক পছন্দ করি।
—–মানে,মানে কি এসব রিমা।আমি তোমাকে বোনের মতো দেখেছি সব সময়।
—–ভাইয়া আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি।
—-হাত ছাড়ো আমার।জেঠু আমাকে অনেক স্নেহ করে।এসব শুনলে, জেঠু তো ভুল বুঝবেই আর জেঠিমা তো আমাকে কখনোই তেমন পছন্দ করেন না।তোমার মাথায় এসব ঢুকলো কিভাবে।
—–তুমি আমাকে ভুল বুঝোনা।একটু বুঝো,আমি তোমাকে ছাড়া বাচবোনা।
—–কি হচ্ছে কি রিমা,ছাড়ো আমাকে।
রিমাকে ধাক্কা দিয়ে কাব্য ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
——-কাকা একটা সিগারেট দাও
—–কি হইছে কাব্য,চা দিমু?
——তেমন কিছুনা।হ্যা দাও।
চারু ছাদ থেকে তাকিয়ে আছে।
কাব্য রাস্তায় চলে গেল,হাটছে।চারু ও চলে এলো।
—–মন খারাপ?
—-রিমার কাছে আমি এটা আশা করিনি।
—-চিন্তা করো না,সব আগের মতো হয়ে যাবে।
—-তাই যেন হয়।
।
।
রিমা ফ্লোরে বসে কাঁদছে। হঠাৎ ঠান্ডা একটা বাতাস এসে সব মোমবাতি গুলো নিভিয়ে দিলো।
ধীর গলায় কে যেন বলছে,
—-রিমা রিমা এদিকে এসো।।
—কে?কে এখানে, চারু আপা?
—-না আমি চারু নই।তুমি এদিকে এসো।
রিমা এগিয়ে যাচ্ছে বারান্দার দিকে।
চারদিকে দেখছে কেউ নেই।পিছোনে ফিরতেই এক বিভৎস্ব বিশ্রী পচা মাংস ঝুলছে এক চেহারা সামনে।রিমা চিৎকার দিয়ে উঠলো।
—-ভয় পেও না।আমি তোমায় সাহায্য করতে এসেছি।
রিমা ভয়ে কাতর হয়ে আছে।
——তুমি কি কাব্যকে চাও?আমি পারি তোমার কাছে কাব্যকে এনে দিতে।
—–রিমা বেহুশ হয়ে গেল।
তিনদিন পর রিমার জ্ঞান ফিরলো।
—–আহ,কে তুমি?আমার কাছে এসো না।
—–রিমা,আমি তোমার চারু আপা। ভয় পেও না।
রিমা ধীরে ধীরে চোখ খুললো।দেখতে পেল কাব্য বসে আছে পাশে।
কাব্যকে দেখেই, কাব্যের হাত ধরে বুকে টেনে নিলো।
চারু উঠে দাঁড়িয়েছে।এখজ হয়তো রিমাকে কিছু বলা ঠিক হবে না।রিমা সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে বুঝানো যাবে।
—–রিমা ভয় পেও না।আমরা আছি তোমার পাশে।
——তুমি আমায় ছেড়ে কোথাও যেও না।কোথাও না।
—–হ্যা ঠিক আছে।
চারু তুমি কি কোনো ভাবে সাহায্য করতে পারো।
—আচ্ছা আজকের রাত টা যাক,কাল সকালে আমি দেখব কি হয়েছে।
হঠাৎ রিমা চিৎকার করে উঠলো,আমার কাছে এসো না।
চারু, কাব্য দৌড়ে এলো।
কি হয়েছে রিমা
আমি দেখলাম,একটা বিশ্রী চেহারা আমার দিকে এগিয়ে আসছে।
চারু খুব অবাক হয়ে কাব্যের দিকে তাকালো।
চলবে…….