আমার প্রিয়দর্শিনী তুমি পর্ব-০৪

0
348

#আমার_প্রিয়দর্শিনী_তুমি(০৪)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

বিয়ের পর যে বাড়িতে থাকার কথা ওখানে যায় ওরা চারজন।যদিও সুমু আর ইসরাকের বন্ধু ফাহাদ ওদের রেখে ফিরে যায়।

বাড়ির কর্তি আলিয়া,কর্তা বিদেশে কর্মরত আছেন। দুই মেয়ে কে নিয়ে দুতলা পাকা বাড়িটাতে থাকে। বাসায় পুরুষ মানুষ নেই বলে, কিছু বখাটে ছেলে উত্তক্ত করে।সাথে হুমকি দেয় আলিয়ার মেয়ে অর্পি’কে তুলে নিয়ে যাবে!
তার জন্য আলিয়া এমন কাউকে খুঁজছে যে কিনা শ’ত্রুর বিরুদ্ধে মোকা’বেলা করতে সক্ষম হবে। তবে অবশ্যই বিবাহিত পুরুষ হতে হবে। কারণ ইয়ং ছেলে রেখে নতুন কোন ঝামেলায় পড়তে চায় না আলিয়া।এ বাসায় থাকার সুবিধা হলো থাকা খাওয়া ফ্রি।
পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে, ইসরাক যোগাযোগ করে আলিয়ার সাথে।
অতঃপর বিয়ে করে হাজির। তবে এ বাসায় আসার পূর্বে বিয়ে পোশাক চেঞ্জ করে এসেছে। কারণ আলিয়া জানে, তাদের বিয়ে অনেক আগেই হয়েছে।সদ্য বিয়ে করেছে শুনলে যদি, থাকতে দেওয়া না হয় তাই ব্যাপার টা গোপন করা হয়েছে।

________

তাকিয়া মন খারাপ করে বসে আছে বেলকনিতে গিয়ে।ইসরাকের ব্যাপার টা ভালো লাগছে না।তাই বললো,
-“মিস? না এখন তো মিসেস।আপনার কি মন খারাপ?
তাকিয়া কোন জবাব দিল না। ইসরাক আবার বললো,
-“আমার সাথে শেয়ার করতে পারেন। কিছুটা হলেও হালকা লাগবে।
এবার ও কোন জবাব নেই।

তাই তাকিয়া’কে রাগানোর জন্য ইসরাক,
মিছে মিছে ফোন কানে ধরে বললো,
-“আর বলিস না দোস্ত আমার কি রাজ কপাল? বিয়ে করেছি একটা প্রতিবন্ধী মেয়ে কে!
তাকিয়া বেলকনিতে থেকে কান খাড়া করে, ইসরাক তার ব্যাপারে কিছু বলছে। তাকিয়া’র ভাবনার সুতা কাটে ইসরাকের এহেন কথায়।

হুম দোস্ত তুই ঠিকই বলেছিস যতদিন একসাথে থাকি,প্যারাবিহিন জীবন কাটাতে পারবো। এই ধর আমি বকাবকি করলেও ফিরতি কোন জবাব দিবে না, দিবে কিভাবে কানেই তো শুনে না! তারপর আমি খাটে ঘুমাবো আর মেয়েটা ঘুমাবে সোফায়। আমি যা বলবো তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। স্বামীর আদেশ বলে কথা। তারপর…

আর বলতে পারলো না, তাকিয়া কোমরে হাত দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে।
ইসরাক তাকিয়া’কে ইগ্নোর করে ল্যাপটব নিয়ে বসে। তাকিয়া চোখ গরম করে তাকিয়ে বললো,
-“আমি প্রতিবন্ধী”?
-“অমা আপনি কথা বলতে পারেন”?
-“কি মনে হয় আপনার”?
-“তাহলে তখন জবাব দিচ্ছেলেন না কেন”?
-“তাই বলে আপনি প্রতিবন্ধী ক‌ইবেন”?

তাকিয়া’র শেষ শব্দ টা শুনে ইসরাক দুষ্টুমি করে বললো,
-“ক‌ইবেন কি?
তাকিয়া থতমত খেয়ে বললো “বলবেন?”
ইসরাক খুব ভালো করেই জানে তাকিয়া এভাবেই কথা বলে তাও তাকিয়া’র এই থতমত মুখশ্রী দেখতেই বললো।

তাকিয়া শুকনো কাশি দিয়ে বললো,
-“আচ্ছা আমি না হয় বিয়ে করতাম না বলে পালিয়ে এসে,এই মিথ্যা বিয়ে করেছি। কিন্তু আপনি কেন বিয়ে করলেন?

ইসরাত পাল্টা প্রশ্ন করে বললো,
-“আপনি বিয়ে করতে চাইছিলেন না কেন?
-“আপনারে ক্যারে ক‌ইতাম?

তাকিয়া’কে কপি করে ইসরাক বললো,
-“তো আমি ক্যারে আপনারে ক‌ইতাম?

সেদিন থেকে আজ অবধি ইসরাকের, মনের কথা জানা যায়নি! হয়তো সুমাইয়া ও জানে এ ব্যাপারে। কিন্তু তাকিয়া’কে বলেনি,নিশ্চ‌ই এর পিছনে কোন বড়সড় কারণ লুকায়িত!

_________

বর্তমান,
বড় ব‌উ বেইল (বেলা) কি কমে না বাড়ে?রান্ধন(রান্না) লাগদো (লাগবে)না নাকি?আর এই যে টাওনের (শহরের) মে (মেয়ে)কাম কাইজ জানোন আছেনি?ডেং ডেং ক‌ইরা তো হ‌ওর বাইত(শ্বশুর বাড়ি) আইয়া পরছো।

আরিসা বললো,
-“আম্মা এ কেমন কথা ক‌ইতাছো তুমি? ছোট ভাবীমণি নতুন ব‌উ।এখনি কি কাজ করবো?

লাবিবা রাগে ফেটে পড়ে বললেন,
-” তোরে বড়গো মাইধ্যে কতা ক‌ইতে না করছি না?ছোড ছোডর মতো থাকবি।
আরিসা আর কিছু বলতে পারলো না, তার আগেই মায়ের কথায় ভয়ে চুপসে গেল।

টুম্পা কথা না বাড়িয়ে রান্না ঘরে চলে যায়। তাকিয়া বললো,
-“আন্টি আমাকে বলেন কি করতে হ‌ইবো?

লাবিবা বললো,
-“টাওনের ডাক এনো ডাহন লাগবো না। আমি মুনতাসির এর মেজ আম্মা (মেজ চাচি) তুমি মেজ আম্মা ডাইকো।
-“জ্বি আচ্ছা।

তারপর লাবিবা তাকিয়া’কে রান্না ঘরে নিয়ে যায়। আনিসা আর আরিসা মনে মনে মাকে ইচ্ছে মত বকাবকি করছে।শেষে ইসরাক আর তাকিয়ার কি হলো জানার জন্য! তাকিয়া’র দ্বিতীয় বার কেন বিয়ে হতে যাচ্ছিল?যদি ইসরাকের সাথে বিয়ে হয়ে থাকে! কিন্তু সেগুরে বালি,লাবিবা এখন তাকিয়া’কে কিছুতেই ছাড়বে না।

________

তাকিয়া রান্না ঘরে গিয়ে দেখে, টুম্পা আর একজন মহিলা সবজি কাটাকাটি করছে। ভদ্রমহিলা কে এই প্রথম দেখলো তাকিয়া।লাবিবা বললো,
-“বিথীর মা দেহ মুনতাসিরের ব‌উ।
ভদ্রমহিলা মাথা তুলে তাকালো তাকিয়া’র দিকে।

আপনার চোখে পানি কেন?
নিলুফা এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে তাকিয়া’র দিকে। তাকিয়া ও তাকিয়ে আছে, হঠাৎ দেখলো নিলুফার চোখে পানি।তাই প্রশ্ন করলো।
নিলুফা চোখের পানি মুছে, রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। তাকিয়া কিছুই বুঝতে পারলো না। টুম্পা’র কাছে গিয়ে বললো,
-“ভাবী উনার কি হয়েছে?কে উনি?

উনি এবির আম্মা।আমরা সবাই ছোট আম্মা বলে ডাকি, তুমি ও তাই ডাইকো।

কিন্তু উনি কাঁদছিল কেন?
শুনেছি, অনেক বছর আগে,ছোট আম্মা’র মেয়ে হারিয়ে গেছে! সেই থেকে ছোট আম্মা কথা কম বলেন আর নিরবে চোখের পানি ফেলেন। রান্না বান্না ছাড়া ঘরেই থাকেন বেশিরভাগ সময়।

তাকিয়া দুঃখ প্রকাশ করে বললো,
-“আহারে!দো’আ করি আল্লাহ যেন উনার মেয়েকে ফিরিয়ে দেন আমীন, সুম্মা আমীন।
-“আমিন!

কি ব‌উ কতাই ক‌ইবা না কামে হাত দিবা? তোমার হাউরি (শ্বাশুড়ি)তো ঘরতে বাইরে আইতাছে না।আর বাইরে আইবো কোন মুক(মুখ) নিয়া। মুনতাসির যেই কাম করলো,মুহে এক্কেরে চুন কালি মাইক্কা দিছে।
তাকিয়া’কে কাজ দেখিয়ে দিয়ে,লাবিবা স্থান ছাড়ে।লাবিবা যেতেই টুম্পা বললো,
-“এই মহিলা যে কতো কথা বলতে পারে আল্লাহ জানেন। তুমি কিছু মনে ক‌ইরো না ব‌ইন।
তাকিয়া বললো, না ভাবি ঠিক আছে।

________

বিকাল হতেই, গ্রামের মহিলাদের আসা শুরু হয়। সবাই কে টুম্পা পান সাজিয়ে দেয়। পাশের বাসার একজন মহিলা বললেন,সোয়েলের ব‌উ মুনতাসির বলে বিয়া ক‌ইরা লাইছে?হগ্গলের মুহে মুহে এই কতা হুনলাম!কাম কাইজ রাইক্কা আইতে পারি নাই।

টুম্পা মিনমিন করে বললো,
-“এহন তো ঠিকই আসছেন।
-“ব‌উ কিছু ক‌ইলা?না না চাচি তেমন কিছু না। কি যেন বললেন?

টুম্পা খুব ভালো করেই চিনে এই মহিলাদের। বিয়ের খবর শুনে কথা শুনানোর জন্য আসছে তা খুব ভালো করেই জানে।
-“ব‌উ ক‌ই? আইছি যামন ব‌উ দেইক্কাই যাই। আরেকজন টিপ্পনী কেটে বললেন,
-“হ টাওনের মাইয়া আর কি দেহুম।টাওনের মাইয়ারা যেই পোশাক আশাক পরে।আমাগো মাইগো আর এ বাইত আইতে দেওন যাইবো না!সাথে আরেক জন তাল মেলালো।

টাওনের মেয়ে বলেই যে খারাপ এমন কিন্তু নয়? ভালো মন্দ সব খানেই কিন্তু আছে।
তাকিয়া’কে সুখি গিয়ে ডেকে এনেছে।তাই শেষের কথা গুলো শুনে, মহিলাদের মুখের উপর জবাব দিলো।

পুতুলের মা বললেন,
-“নতুন ব‌উ এমনে কতা কয় মাগো মা। আমার নাতি নাতনি অ‌ইয়া গেছে,এহোনো বউ মুহের উপ্রে কতা কয় না।আর আইতে না আইতেই কি কতা।

তাকিয়া বুঝলো না কি এমন বলেছে সে?যার জন্য এভাবে বলছে এরা। তাকিয়া তো জানতো গ্রামের মানুষ অনেক সহজ সরল।এই কি তার নমুনা?

লাবিবা এসে বললেন,
-“পুতুলের মা ভাবি, আন্নের ব‌উ নাকি আলাদা সংসার পাততে চায়?

লাবিবার মুখে এরকম কথা শুনে, পুতুলের মা র মুখে জামা ঘসে যায়! টুম্পা আর তাকিয়া মুচকি হাসে। আরো কয়েকজন মহিলা কিছু বলতে প্রস্তুত হয়েও বলতে পারলো না।লাবিবা আবার কি না কি বলে বসে।

লাবিবা’র কথা হলো ঘরের বউ’কে বাহিরের মানুষ কেন বাড়ি বয়ে এসে কথা শুনাবে?লাবিবা হাজার বার শুনাতে পারবে, এটা তার অধিকার। কিন্তু বাহিরের কারো এই অধিকার নেই।আরো কিছুক্ষণ থেকে তারপর সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেল। মাগরিবের আজান হতে বেশি সময় নেই তাই।

সাহারা’র কানে কিছু কথা গেলেও চুপ করে ছিলেন তিনি।তার মতে এভাবে অন্যায় ভাবে বিয়ে করলে, কথা তো শুনতেই হবে। মুনতাসির ঘোর অন্যায় করেছে, তিনি এতো সহজে সব কিছু মেনে নিবেন না। বহুদিন আগে মুনতাসির বলেছিল একটা মেয়ে কে পছন্দ করে। কিন্তু নিজে নিজেই বিয়ে করে নিবে, ধারণা ছিল না সাহারার।কি এমন হতো মাকে যদি বলতো বিয়ে করবে।তাহলে সে কি নিষেধ করতো? কেন মায়ের থেকে লুকিয়ে রাখলো মুনতাসির? সকাল থেকে বেশ কয়েকবার মুনতাসির কল করেছে কিন্তু সাহারা রিসিভ করেনি, অভিমান করে।
_______

মাগরিবের নামাজ আদায় করে তাকিয়া লম্বা বেলকনিতে হাঁটাহাঁটি করছে।দুতলার এক কোনা থেকে অন্য কোনা অব্দি লম্বা বেলকনি।বেলকনিটা,সবগুলো রুমের সামনে। হাঁটতে হাঁটতে তাকিয়ার একটা রুমে নজর গেল।ডান দিকে শেষ কোণে রুমটা। দরজার পাশে দুটো গোলাপ গাছ,একটাতে সাদা গোলাপ অন্যটাতে হলুদ গোলাপ ফুটে আছে। দুটোই তাকিয়া’র’ ফেভারিট। দরজার লক খুলে ভিতরে ঢুকে গেল তাকিয়া। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেয়ালে ছবির ফ্রেমের দিকে এগিয়ে গেল,।ছবিটা স্পষ্ট নয় কারণ ছবিটার উপরে সবুজ পর্দা দেওয়া।বাতাসে পর্দা মৃদু উরছে তাই বুঝা গেল এখানে কোন ছবির ফ্রেম টাঙ্গানো। এগিয়ে গিয়ে পর্দা সরিয়ে তাকাতেই চোখ দুটো বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল তাকিয়া’র!……

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।