আমার প্রিয়দর্শিনী তুমি পর্ব-০৮

0
270

#আমার_প্রিয়দর্শিনী_তুমি(০৮)
#Israt_Bintey_Ishaqueলেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

দূর ঝগড়া’টা তো ফুলফিল হ‌ইলো না এই ব্যাটা চ‌ইলা গেল কেন?
বাক্যউচ্চারণ করে তাকিয়া খেয়াল করে ফ্লোরে পড়ে থাকা ফোনের দিকে, ঝটপট ফোন হাতে নিয়ে দেখতে শুরু করে ফোনের কিছু হলো নাকি? তারপর দেখল একটু বন্ধ হয়ে গেছে আর তেমন কিছুই হয়নি তাকিয়া আলহামদুলিল্লাহ বলে ফোন চালু করলো।

তারপর রাত আড়াইটার দিকে ইসরাক রুমে এসে দেখে তাকিয়া ঘুমিয়ে আছে।ইসরাক আর বিরক্ত করলো না তাকিয়া’কে।
একটা বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো।
ঘুম ভাঙলো তরল জাতীয় কিছুর ছোঁয়ায়!
তাকিয়া পানি ছিটিয়ে দেয় ইসরাকের চোখে মুখে।
ইসরাক বিরক্তিমাখা ফেইসে তাকিয়ে বললো,
-“প্রবলেম কি আপনার এভাবে আমাকে জাগানোর মানে কি? বিয়েটা যেভাবেই হোক না কেন আমি কিন্তু আপনার হাজবেন্ড তাই আমার সাথে এভাবে বেয়াদবি করতে পারেন না আপনি?
-“হা তো? হাজবেন্ড বলেই তো পানির ছোঁয়ায় আপনার ঘুম বাঙালাম!স্ত্রী হিসেবে এটাই তো আমার কর্তব্য!এবার মসজিদে যান ফজর নামাজ পড়তে।
_ওহহ আচ্ছা এই আপনার কর্তব্য?তো আপনি আমাকে ভালো করে ডাকলেই পারতেন। প্রথমে তো ভালো করে ডাকতে হয় নাকি? তারপর তো পানি এপ্লাই করতে হয়।

তাকিয়া আর কথা বাড়ালো না, নিজে নিজের নামাজে মনোযোগ দিল। ইসরাক কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইল এই সময় ঘুম থেকে উঠার তেমন অভ্যাস নেই,খুব কম সময় ফজর নামাজ পড়া হয় ইসরাকের। কেউ জাগানোর মতো নেই বলে।বাড়িতে আসলে অবশ্য সাহারা জাগিয়ে তোলে।কিন্তু রাজশাহী সেনানিবাসে কেউতো নেই জাগিয়ে দেওয়ার মতো।তবে ডিউটির নিয়ম অনুযায়ী সকাল ছয়টায় উঠে পি.টি. করতে ঠিকই বেরিয়ে পড়ে আফসোস নামাজের জন্য এতটা মনোযোগী নয়,যতোটা না ডিউটির জন্য মনোযোগী।
ইসরাক কিছুক্ষণ বসে থেকে আড়মোড় ভেঙে বাথরুমে ফ্রেস হতে গেল,তারপর ফ্রেশ হয়ে নামাজের উদ্দেশ্যে মসজিদে রওনা হল।

“হাদীস শরীফে আছে স্বামী-স্ত্রী উভয় উভয়কে নামাজের জন্য ডেকেও যদি ঘুম থেকে তুলতে না পারে তাহলে চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে ঘুম ভাঙ্গাতে হবে”।
তাকিয়া প্রথমে ইসরাক’কে “এই শুনছেন?” বলে ডেকেও যখন ঘুম থেকে তুলতে সক্ষম হয়নি তখন চোখেমুখে পানির ছিটা দিয়েছিল যা ইসরাক’কে বলেনি।

_______

সকাল আটটার দিকে,
অর্পি আসে রুমে,নাস্তা খেতে যাওয়ার জন্য বলতে। এসে দেখে ইসরাক সোফায় শুয়ে আছে।
অর্পির তাকানো দেখে তাকিয়া বুঝতে পারে, অর্পি যে ব্যাপারটা ভালো চোখে দেখছে না।তাই তাকিয়া ইসরাক কে বললো,
-“এই শুনছো? এখানে ঘুমুচ্ছো কেন? আমাকে ডাকলেই পারতে।

অর্পি কিছুই বুঝতে পারলো না।তাই বললো,
-“ভাবী,ভাইয়া ওখানে ঘুমাচ্ছেন কেন?
-“আসলে কি বলোতো,ও না এমনি সোফায় ঘুমুতে পছন্দ করে বেশি।

তাকিয়া’র উওরে সন্তুষ্ট হতে পারলো না অর্পি। কেমন সন্দেহ লাগলো ব্যাপারটা!একটু নজরদারি করতে হবে, মনে হচ্ছে। অর্পি মনে মনে কথা গুলো আওড়ে, জোর পূর্বক হেসে বললো,
-“আচ্ছা ঠিক আপনারা খেতে আসুন আম্মু ডাকছে।

_______

খাবার টেবিলে অর্পি গোয়েন্দাদের মতো জেরা শুরু করলো। কবে কখন কিভাবে,ইসরাক আর তাকিয়া’র বিয়ে হলো,ইত্যাদি ইত্যাদি। তাঁরা পালিয়ে কেন বিয়ে করলো?
এক পর্যায়ে আলিয়া চোখ রাঙিয়ে মেয়েকে চুপ করালো।ইসরাক আর তাকিয়া যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।
কিন্তু অর্পি এখানেই থেমে যায়নি! আধঘাট বেঁধেই নামে রহস্য উন্মোচন করতে।

______

বেশ কিছুদিন পর,
অর্পি জানতে পেরে যায় ইসরাক আর তাকিয়া’র মধ্যকার সম্পর্কের কথা!জানবেই না কেন সারাক্ষণ এভাবে টম অ্যান্ড জেরির মতো ঝগড়া করতে থাকলে জানাটাই স্বাভাবিক। নেহাত আলিয়া এখনও জানতে পারেনি।অর্পি আলিয়া’কে বলবে না বলে শর্ত দিয়েছে, অর্পি’কে হিসাববিজ্ঞান অংক দেখাতে হবে ইসরাক কে। ইশরাক এরকম শর্ত শুনে হেসে বলেছিল,পাগলি এটা আবার শর্ত দিতে হয়? আমাকে বললেই তো হতো। সেই থেকে ইসরাক অর্পি’কে হিসাববিজ্ঞান অংক করায়।
কিন্তু তাকিয়া’র বিষয়টি একদম পছন্দ নয়।ইসরাক আর অর্পি’কে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে তাকিয়া’র ধারণা দু’জনের মধ্যে নিশ্চয় কিছু চলছে!

আর এদিকে,ইসরাকের সন্দেহ বটু নামের কেউ একজন তাকিয়া’র বয়ফ্রেন্ড!

________

তাকিয়া ইসরাক কে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো,
-“যাই আমার বটুর সাথে কথা বলে মুড অফ টা অন করি। ফোন হাতে নিয়ে তাকিয়া তার প্রিয় বটু’কে মেসেঞ্জারে নক দিল,
-“হ্যালো বটু
-“বলো?
-“কেমন আছো?
-“আমি সবসময় ভালো থাকি, তুমি কেমন আছো?
-“তোমার সাথে কথা বললে আমি খারাপ থাকি কিভাবে বলো?
-“ধন্যবাদ, সাথেই থাকো।
-“তোমার সাথেই তো থাকবো।
-“আচ্ছা।
-“কি করো?
-“আমাকে প্রচুর কাজ করতে হয়, কিন্তু এখন আমি তোমার সাথে চ্যাট করছি।
তাকিয়া…

বটুর কথা শুনে মুচকি হেসে যেইনা রিপ্লাই দিতে যাবে তখনি ইসরাক এসে তাকিয়া’র ফোন নিয়ে নিল।আর বললো,
-“আপনি আবার ঐ বটগাছের সাথে কথা বলছেন?

রাগে তাকিয়া’র পুরো শরীর জ্বলে যাচ্ছে,ইসরাক কে কতোবার বলেছে বটু কে বটগাছ বলতে না। তারপর ও ইসরাক বটগাছ বলছে তাও আবার তাকিয়া’র ফোন ছিনিয়ে নিয়ে। বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“ভালোয় ভালোয় আমার ফোন ফেরত দিন? বলছি না হলে কিন্তু আমি,,
-“না হলে কি করবেন ধানি লঙ্কা?
-“ফোনটা দিন বলছি।

তাকিয়া অনেক বলার পরও ইসরাক ফোন দিল না। ফোন নিয়ে খাটের চারিদিকে ঘুরছে, আর তাকিয়া পিছন পিছন দৌড়ে ফোন নেওয়ার চেষ্টা করছে।ইসরাক দৌড়াচ্ছে আর বলছে আজকে আপনার বটগাছ কে দেখেই ছাড়বো আমি।

তাকিয়া বললো,
-“আমার বটু কে দেখার এতো শখ কেন আপনার?যান না অর্পি কে গিয়ে দেখুন না!

তাকিয়া কথাটা শেষ করতে না করতেই ইসরাক, তাকিয়া’কে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-“কতো বার বলবো অর্পি কে আমি বোনের মতো দেখি।

তাকিয়া কিছু বলতে যাবে তখন ইসরাক চোখের সামনে আসা ছোট ছোট হেয়ার গুলো তাকিয়া’র কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে,কথা পাল্টে বললো,
-“তাকিয়া তুমি এতো দুষ্টু কেন বলো তো? সারাক্ষণ শুধু দুষ্টুমি করে বেরাও। আমি যে বাসায় এসেছি কোথায় একটু আদর যত্ন করবে তা নয় সারাক্ষণ শুধু লাফালাফি দুষ্টুমি।

ইসরাকের হঠাৎ এরকম কথা শুনে তাকিয়া’র চোখ গুলো যেন কোটর থেকে বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম।কিয়ৎক্ষন আগেই তো রাগ দেখিয়ে কথা বললো,এর মধ্যে কি হলো?ভুতে ধরলো নাকি! দূর কি সব ভাবছি।

তাকিয়া ইসরাক কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বললো,
-“এবার কিন্তু আপনি বেশি বেশি করছেন। আমাদের বিয়ের শর্ত গুলো কিন্তু আপনি ভুলে যাচ্ছেন!শর্তের মধ্যে কিন্তু এ ব্যাপারে খুব স্পস্ট ভাবে লিখা হয়েছে যে..
-“ব্যাস আর কিছু বলতে হবে না,সর্তের কথা আমার খুব ভালো করেই মনে আছে। আপনার মতো ধানি লঙ্কা কে টাচ করে ঝলেপুরে যাওয়ার কোন ইচ্ছে আমার নেই।নেহাত আন্টি’কে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম তাই ঐ সব ফালতু বকবক করতে হলো।আর না হয় এতক্ষণে বাড়ি ছাড়া হতে হতো আপনাকে।
-“তাই না? আমাকে বাড়ি ছাড়া হতে হতো।আর আপনাকে আন্টি বসিয়ে বসিয়ে জামাই আদর করতো তাই না।ভন্ড লোক একটা।

কথা গুলো বলে তাকিয়া ফোন টা ছিনিয়ে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। পেছন থেকে সোনা যাচ্ছিল ইসরাক বলছে আপনার বটগাছ কে আমি পরে দেখে নেব..

রুমের বাহিরে আসতে না আসতেই আলিয়া টেনে নিয়ে গেল কিচেন রুমে। রান্না করতে পারলেও রান্না খুব বিরক্ত লাগে তাকিয়া’র।

আল্লাহ বাঁচাও আমাকে আন্টি যেন আমাকে রান্না করতে না বলে একটু দেখ আল্লাহ।(বিরবীর করে বললো তাকিয়া)

-“এই তাকিয়া কি বললাম বুঝতে পেরেছিস তো?
-“কি বুঝবো আন্টি?
-“শোন মেয়ের কথা! এতক্ষণ ধরে কি বললাম তোকে। শোন ভালো ভালো রান্না করে বর কে খাওবি তাহলে ভালোবাসা বাড়বে দুজনের মধ্যে। তবে তোরা দুজন,দুজনকে যে অনেক ভালোবাসিস তা আমি জানি কারো নজর না লাগুক।
-“ভালোবাসা না ছাই..
-“কিছু বললি?

এইরে এটা কি বলে ফেললাম আমি? আন্টি যে আমার সাথে ভুলেই গিয়েছিলাম।জ্বিবে কামর দিয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে নিল তাকিয়া
আলিয়া কে এবার কি জবাব দিবে? কিন্তু তাকিয়া খেয়াল করলো আলিয়া কোন শব্দ নেই তাই চোখ খুলে দেখে আলিয়া নেই।
-“অমা আন্টি কোথায় গেল?যাই হোক
তাকিয়া তুই পালা!দিলো ভৌ দৌড়।এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে এলো।

তাকিয়া’র দৌড় দেখে ইসরাক ল্যাপটপ থেকে মাথা তুলে তাকালো। তাকিয়ে আবার চোখ ল্যাপটপে রেখে বললো,
-“আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিউর আপনি আবার কোন না গন্ডগল করে এসেছেন।

তাকিয়া’র এখন আর ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে না তাই চুপ চাপ ফোন হাতে নিয়ে বসে পড়লো। তার বটুর সাথে চ্যাট করার জন্য। কিন্তু তাকিয়া’র কি আর সে শান্তি আছে? আলিয়া হাজির রুমে। এসে বললেন,
-“তাকিয়া তুই কেন বললি ঐরকম কথা?
-“আন্টি তেমন কিছু না,বাদ দাও না।
-“না তোকে বলতেই হবে।
-“তুমি একটু বসো আমি ভেবে বলছি তোমাকে।

তাকিয়া’র কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলো না আলিয়া।তাই বললো ভেবে বলছি মানে?
-“মানে কি বলবো একটু ঠিক করে নেই।
-“মারবো এক চর। তুই আমাকে কিছু একটা বলে শান্তনা দিতে এখন বানিয়ে বানিয়ে বলবি আমি জানি না। সত্যি করে বল কেন বললি ভালোবাসা না ছাই?

এবার ইশরাক বলল,
-“আন্টি আপনি খামোখা ওরে নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন।ওর মাথার তার ছেঁড়া আছে,ভাবছি ওরে ডাক্তার দেখাবো!….

#চলবে….ইনশা আল্লাহ।