আমার শুধু তোমাকেই চাই পর্ব-১৩

0
2417

#আমার_শুধু_তোমাকেই_চাই🍁🍁
#লেখিকা;সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব;১৩

৪০,,,,
রাত ১২টা চারিদিকে অন্ধকার রাস্তায় ল্যামপোস্ট এর আলোয় আমি মাহিদের বাড়ির নিচে গত দুই ঘন্টা যাবত দাড়িয়ে আছি।মাহিকে অনেকগুলো মেসেজ করেছি ব্যালকনিতে আসার জন্য কিন্তু ও কোনো মেসেজ এর রিপলে করেনি,, আমি মানছি আজকে আমি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি,, আরে আমি কি জানতাম নাকি যে ওই পুলিশটার বোন মাহি আমি তো জাস্ট বিয়েটা ভাঙতে চাইছিলাম কারন আমি মাহিকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো নিজের রাগটাকে একটুও কন্ট্রোল করতে পারিনা। মাহি আসছে না দেখে আবার মাহিকে মেসেজ করলাম। একে তো শীত তারপর মশা ওরে বাবা।বাবার কথায় মনে পড়ল আল্লাহ জানে আজ বাড়ি গেলে আমার কপালে কি আছে,, বাবা আজকে অনেক রেগে আছে আমার উপর,, রাগারই কথা দোষ তো আমারই তাই আমাকেই সব কিছু ঠিক করতে হবে।এই সব ভাবতে ভাবতে ওপরে তাকিয়ে দেখলাম মাহি বারান্দায় এসেছে,,, ওর আাসা দেখে আমি ওকে কল দিলাম।

কি হয়েছে বলেন এতো রাতে এই নাটক এর মানে কি (মাহি)

সরি মাহি প্লিজ এবারের মতো মাফ করে দাও (হাতে থাকা সরি বোর্ডটা উঁচু করে ধরে)

সরি?? হুম সরি কেন বলছেন আর আমার ভাইতো পাগল আর পাগলের বোনের সাথে আপনার কথা না বললেও চলবে তাছাড়া যে আমার পিতৃতুল্য ভাইকে সম্মান করতে জানেনা তাকে আমার জীবনে কোনো দরকার নেই(মাহি)

প্লিজ এভাবে বলো না তুমি একবার নিচে আসো আমি তোমাকে সব বলছি (মেহরাব)

সরি মিষ্টার মেহরাব আমি নিচে আসতে পারবো না আপনি চলে যান (মাহি)

এভাবে বলো না তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না একটি বার নিচে আসো আমি তোমাকে সব বলছি,, প্লিজ আমার কথাটা একটা বার বোঝার চেষ্টা করো। দরকার হলে আমি তোমার ভাইয়ের পা ধরে তোমায় তার কাছে ভিক্ষা চাইবো আমার কোনো সম্যসা নেই,, #আমার শুধু তোমাকেই চাই প্লিজ নিচে আসো(মেহরাব)

ঠিক আছে আমি আসছি (এই বলে মাহি ফোন কেটে মেঘ এর চোখ ফাঁকি দিয়ে খুব সাবধানে নিচে নামল)

বলেন কি বলবেন (মাহি)

আসোলে মাহি আমি সত্যি জানতাম না যে মেঘ তোমার ভাই,, আরে আমি তো ভেবেছিলাম ওই দিনের ওই ছেলেটাই তোমার ভাই,, আর আমি এটাও জানতাম না যে আমার মা বাবা তোমার সাথে আমার বিয়ের কথা বলছিলো। আসোলে আমি বিয়েটা ভাঙাবার জন্য আজকে ওই নাটকটা করেছিলাম ,, সরি (মাথা নিচু করে বলল মেহরাব)

হুম বুঝলাম,, আসোলে আপনি সেদিন আমার সাথে যাকে দেখেছিলেন সে হলো আমার মামার ছেলে শান্ত ভাইয়া,,, কিন্তু এটা বলেন যে আপনি আর মেঘ ভাইয়া দুজন দুজনকে আগে থেকে চেনেন কীভাবে (মাহি)

আসোলে কি বলোতো তারপর মেহরাব মাহিকে সব বলল যে কীভাবে মেঘ মেহরাবকে ভুল ভেবেছে।(মেহরাব)

ও মাই আল্লাহ এতো দূর এখন কি হবে,,, আপনি জানেন না ভাইয়া কতটা রাগি ভাইয়ার একবার যার উপর রাগ হয় তাকে আজীবনেও ভোলে না আর তারপর আজকে আপনি যা করেছেন এরপর আমি তো কোনো আশাই দেখতে পাচ্ছিনা (মাহি)

এভাবে বলো না প্লিজ কিছু একটা উপায় ভাবো ভাইয়ার কাছে ভালো হওয়ার,,, নইলে আমি তোমাকে ছাড়া মরেই যাবো (মেহরাব)

হুট এসব কি কথা বলছেন কিছুই হবে না আমরা দুজন মিলে একটা না একটা উপায় ঠিকি বার করবো,, এখন আপনি বাড়ি যান কাল ভার্সীটিতে ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখবো(মাহি)

আচ্ছা তবে যাওয়ার আগে একটা বার তোমায় জরিয়ে ধরবো??প্লিজ(মেহরাব)

কিহ?? কি বললেন আপনি(রেগে বললো মাহি)

নাহ কিছু না। আচ্ছা আমি গেলাম(মন খারাপ করে বললাম। বলে চলে আসতে গেলাম তখনি মাহি বলল)

এই জরিয়ে ধরে আদর না করে কোথায় যাচ্ছেন হুম(মাহি)

মাহির কথা শোনার সাথে সাথে ওকে নিজের সাথে শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম।

অনেক ভালোবাসি তোমায়,,, নিজের থেকোও বেশি বাঁচতে পারবো না তোমায় ছাড়া প্লিজ আমায় ছেড়ে কোথাও যেও না,, দেখো আমরা দুজন মিলে ঠিক ভাইয়াকে মানিয়ে ফেলবো দেখো(মাহির কপালে চুমা দিয়ে)

হুুম আমিও আপনাকে অনেক ভালো বাসি,, আজকে রাগের বসে আপনাকে কথাগুলো বলে ফেলেছিলাম সত্যি বলতে আমিও আপনাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না মেহরাবকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে (মাহি)

৪১,,,
অনেক দেরি হয়ে গেলো কি যানি বাড়িতে আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে। আল্লাহ আল্লাহ করে আস্তে আস্তে দরজাটা খুলে ভিতরে ঢুকলাম বাড়ি একটা চাবি আমার কাছে আছে তাই কোনো অসুবিধা হলো না।ড্রয়িং রুমে অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না আমি আস্তে আস্তে উপরে যাওয়ার জন্য পা বারালাম তখনি সারা ঘরে আলো জলে উঠলো দেখলাম বাবা আর মা সোফার উপর বসে আসে।

ব,,,বাবা ত,,,তুমি এখনো ঘুমাও নাই??(মেহরাব)

কেনো এসেছো তুমি,, তোমার জন্য মেঘের সামনে আমার মাথা হেট হয়ে গেছে। ছিছি আমি ভাবতেও পারিনী তুমি এমনটা করবে আমার মান সম্মান ধূলোয় মিশিয়ে দিয়েছো তুমি,,, (মহসীন)

সরি বাবা,,আমি সত্যিই জানতাম না যে তুমি আমার বিয়ে মাহীর সাথে ঠিক করেছো। আসোলে আমি আগে থেকেই মাহিকে ভালোবাসি তাই আজ৷ তুমি যখন বললে যে তুমি আমার বিয়ে ঠিক করেছো তো আমি ভাবলাম যে হয়ত অন্য কারো সাথে ঠিক করেছো তাই(মেহরাব)

তাই তুমি আমার সম্মান এর কথা না ভেবে এভাবে মেঘের সামনে আমায় নিচু করে দিলে(মহসীন)

প্লিজ বাবা এবারের মতো আমায় ক্ষমা করে দাও আমি মেঘ ভাইয়ার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইবো তবুও আমার মাহিকে চাই প্লিজ তুমি কিছু করো(মেহরাব)

আমি কিছুই করতে পারবো না। আর তুমি মেঘকে আজ অনেক অপমানিত করেছো ওর সম্মানে আঘাত করেছো আমি ওকে ছোট বেলা থেকে চিনি ও অনেক জেদি,,, নিজে অনেক কষ্ট সয্য করে আজ এখানে আসতে পেরেছে,, আর তুমি সেই ওকে অসম্মান করেছো ও সহজে তোমায় ক্ষমা করবে না। আর আমি তোমায় কোনো সাহায্য করতে পারবো না, এরপর তো আমি মেঘের সামনেই দাড়াতে পারবো না, নিজেকে ছোট মনে হবে কত বড় মুখ করে তোমার কথা ওকে বলেছিলাম আর তুমি কি করলে?(মহসীন)

বাবা ও বাবা সরি তো আমি সত্যি জেনে বুঝে ওমনটা করেনি তখন আমার যে কি হয়ে গেলো রাগের বশে ওসব বলে ফেললাম প্লিজ তুমি আমায় মাফ করে দাও (মেহরাব)

যতদিন না মেঘ তোমায় ক্ষমা করে ওর বুকে টেনে নেবে ততদিন আমিও তোমায় ক্ষমা করবো না (মহসীন)

কিন্তু কীভাবে ওনি তো আমায় খারাপ মনে করে (মেহরাব)

নিজেকে যখন ওর সামনে খারাপ ভাবে তুলে ধরেছো তেমনি তোমাকেই আবার ওর ভুল ভাঙিয়ে নিজেকে ওর সামনে ভালো প্রমানিত করতে হবে যা করার তোমাকেই করতেই হবে আমি কিছু করতে পারবো না (এই বলে বাবা চলে গেলো)

ঠান্ডা মাথায় ভাব দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে বাবা চিন্তা করিস না।এখন যা ঘুমিয়ে পড় (রাপালি)

৪২,,
সকালে,,,

কিরে মাহি তোর ভাইকে দেখলাম না কোথাও গিয়েছে নাকি??(মেঘলা)

না কোথাও যাইনি রুমে শুয়ে আছে। ভীষন রেগে আছে যাকে বলে একেবারে রেগে বোম। (মাহি)

সেকি কেনো??(মেঘলা)

তারপর কালকের সব কিছু মেঘলাকে বলল।

কি বলছিস কি তাহলে এখন কি হবে??(মাথায় হাত দিয়ে বলল মেঘলা)

আইডিয়া,,শোননা বুনো + ভাবি এখন তো ভাইয়ার খাওয়ার সময় হয়ে গেছে, আর ভাইয়া যে পরিমানে রেগে আছে আমার যেতে ভয় লাগছে তাই বলছি কি তুই একটু ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আই না প্লিজ(মাহি)

কিহ?? এই তুই আমার বান্ধবী হয়ে আমাকে সিংহের মুখে তুলে দিচ্ছিস?? এই তুই আমায় ভালোবাসিস,,, তুই জানিস না আমি ওনাকে কত ভয় পাই তার উপর আবার রেগে আছে ওরে বাবা আমি পারবো না। প্লিজ আমাকে এভাবে বলির পাঠা বানাস না বুনো আমি পারবো না,,, (মেঘলা)

শোননা জানটা ভাইয়া তো তোকে অনেক ভালোবাসে বল তাই সকাল সকাল তোর মুখটা দেখলে দেখবি মনটা ভালো হয়ে যাবে আর সাথে সাথে রাগটাও ফুটুস হয়ে যাবে(,মাহি)

ভালো তো তোকেও বাসে তুই যা মাঝখান থেকে আমাকে শহীদ বানানোর প্লান করছিস কেনো (মেঘলা)

আরে এভালোবাসা সে ভালোবাসা না। হ্যাঁ ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে সেটাতো অন্য ভালোবাসা। আর তোকে তো আরেক রকম ভালোবাসে বল তাই তুই গেলে ভাইয়ার মনে রোমান্টিক রোমান্টিক ভাব আসবে আর রাগ চলে যাবে। আর আমি গেলে এমন হবে বল?? আমি গেলে বরং ভাইয়া আরো বেশি রাগ করবে কারন আমি তো মেহরাবকে ভালোবাসি তাই সকাল সকাল আমায় দেখলে ওনার কথা মনে পড়বে আর রাগ হবে। বুঝছিস না কেন। তুই যা (মাহি)

যাবো বলছিস?? (ভয়ে ভয়ে বললো মেঘলা)

হ্যাঁ যা (তোকে তো যেতে বলছি আল্লাহ জানে কি হবে মনে মনে)

চলবে,,,

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর গঠনমূলক কমেন্ট আশা করছি)