আমি গোপনে ভালোবেসেছি পর্ব-০৯

0
258

#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ৯
#writer:Mishmi_muntaha_moon

আব্বুর সেই ঘনিষ্ঠ বন্ধু লিয়াকত আংকেল উনার স্ত্রী আর ছেলে আই মিন রুদ্ধ সাহেব এসেছেন।আমাকে উনার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি কথার ফাকে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চোখ টিপ দিলো।

দেখেই আমার এক ভ্রু উঠে গেলো।উনি গাড়ো সবুজ রঙের পাঞ্জাবী পরেছে।
উনাকে দেখে আনন্দে মুচকি হাসি ফুটলো মুখে।উনার দিকে তাকিয়ে থাকার মাঝেই তিশা আমার কানের সামনে মুখ এনে ডেকে বলল

” কিগো আপু!এই ছেলেটা কে গো?”

তিশার কথায় একপলক ওর দিকে তাকিয়ে আবারও উনার দিকে তাকালাম তারপর বললাম

” বাবার বন্ধুর ছেলে।”

” কিউট তো”

ওর কথা শুনে মাথাটা হাল্কা কাত করে তাকালাম ওর দিকে।তারপর বললাম

” পছন্দ হয় নাকি?”

” হুম”

তিশার হাসিমাখা প্রশ্ন শুনে জোড়পূর্বক হাসি টেনে কনুই দিয়ে পিঠে গুতা দিয়ে বললাম

” এক থাপ্পড় দিয়ে দাত সব ফেলে দেবো।এতোটুকু কালে ভালো লাগা আবার তাও নিজের থেকে প্রায় ৮ বছর বড় ছেলেকে।”

আমার কথায় বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বলল

” আহা আপু কি যে বলো না আমার বয়সি মেয়ের জন্য ২৭ ২৮ বয়সের ছেলেই পার্ফেক্ট বুঝলা”

” কিন্তু উনি না। কারণ উনি অন্য কারো জন্য পার্ফেক্ট ”

আমার কথায় ও উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন ছুড়লো

” কে পার্ফেক্ট তাহলে”

ওর প্রশ্ন কে পাত্তা দিলাম না।সামনের সোফায় বসে থাকা রুদ্ধ সাহেবকে দেখতে লাগলাম।উনিতো হাতে থাকা পায়েসের পিরিচ থেকে পায়েস খাচ্ছে আর আব্বু, চাচার সাথে টুকটাক কথা বলায় ব্যস্ত।

~~~~~~~~~~

তুষার ভাই আর জুবায়ের ভাই এসেই উনার সাথে জমিয়ে আড্ডা দিতে লাগলো।
আমি তো শুধু সুযোগ খুজছি উনার সাথে কথা বলার।কিন্তু নাহ সুযোগ কোথায়?

মেহেদী শুকাতেই তিশা আর আমি একসাথেই মেহেদী উঠিয়ে ফেললাম।অনেক সুন্দর কালার হয়েছে।

ছাদে তুষার ভাই আর জুবায়ের ভাই রুদ্ধ সাহেবকে সাথে নিয়ে কথা বলছে।
আমি আর তিশা যেতেই তুষার ভাই আমাদের পাঠিয়ে দিলো।কি করার আর!

রাত ১০টা বাজে কিন্তু কেউ ঘুমায় নি। কালকে তরু আপুর গায়ে হলুদ তারই অনেক কাজ বাকি।বড়রা সেই সব কাজ করছে এখনো। ছোটরাও তাদের কাজে ব্যস্ত।

আমার চোখে ঘুম কিন্তু ঘুমাতে পারছি না। কারণ কোনো রুম খালি না।ফুপ্পি দের তিন রুমের ফ্ল্যাট সেইখানেই যেমন তেমন ভাবে সব মেহোমান আছে।

সোফায় বসা থেকে উঠে দাড়ালাম। ভাবলাম বাহির থেকে হেটে আসি ঘুমটা যদি তাহলে একটু যায়।
যেমন ভাবনা তেমন কাজ।ফুপ্পিদের দুই তালার বিল্ডিং নিচেই ডান পাশে ছোট একটা জংগল এবং বাম পাশে বাগান।মাঝে দিয়ে হাটার রাস্তা একটু হেটে সামনেই বড় রাস্তা।

তিশা সোফায় বসে বসেই ঝিমুচ্ছে।আমি ডেকে নিচে যাওয়ার কথা বললে ও যাবে না বলল।
তাই আমি একাই ওড়না দিয়ে শরীর ডেকে নিচে নামতে লাগলাম।

_

ফুপ্পিদের বাড়ির বাগান যতোটা সুন্দর জংগল টা ততটাই ভয়ংকর লাগে রাতের আলোতে।মেইন গেটের দুই পাশে দুইটা লাইট লাগানো তাও আবার কম আলোর।আবছা আবছা দেখা যায় আশে পাশে।

বাগানে বড় একটা সাদা জবা গাছ আছে দেখলাম।কি সুন্দর ভাবে সাদা ফুল গুলো ফুটে আছে।আরও কত গাছ বেলি গাছও আছে। বেলি ফুলের কাছে গিয়ে ঝুকে ফুল থেকে গ্রান নিতে লাগলাম একে একে।
হঠাৎ চুলে কারোর ছোয়া পেতেই শরীর পুরো ভয়ে জমে গেলো।
রাত তো কম না সাড়ে ১০ টার মতো বাজে।
আস্তে আস্তে করে উঠে দাড়ালাম।পিছে তাকানোর সাহস হচ্ছে না।মনে হচ্ছে জংগল থেকে কোনো জ্বিন এসে পিছে দাঁড়িয়ে আছে।
পিছে তাকিয়েই একটি মুর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ দেখে দিলাম এক চিৎকার।
সাথে সাথেই উনি চাপা স্বরে বললেন

” হুশ!আমি রুদ্ধ, মানুষ দিয়ে মার খাওয়ানোর ইচ্ছে আছে নাকি?”

উনার কথায় বুকে থু থু দিয়ে দাড়ালাম তারপর বললাম

“এখন জ্বীন ভুত ছাড়া কোনো মানুষ থাকার কথা না”

উনাকে ওই যে লাস্ট ছাদে দেখলাম আর দেখা হয় নি।গায়ে এখন তার পাঞ্জাবীর পরিবর্তে কাঠ কালারের একটা শার্ট পড়া আর কালো ট্রাউজার।
আমি উনাকে আড়চোখে দেখছি তার মাঝেই উনি বললেন

” এতো রাতে এইখানে একলা ভয় লাগে না।”

” নাহ আমি ভয় পাই না ভুত কে বুঝলেন”

বলে আমি বাগানের কর্নার দিয়ে হাটতে লাগলাম।উনিও আমার পাশে হাটছে।দুজনে একসাথে হাটছি দূরত্ব বেশি না দু এক ইঞ্চির দূরত্ব কিন্তু কারো মুখে কোনো কথা নেই।
আশেপাশের অন্ধকারে কিছু পরোখ করা মুশকিল কিন্তু মেইন গেটের আবছা আলোয় আমাদের ঠিকই দেখা যাচ্ছে।
আর কোনো খেয়াল রাখলাম না আদৌ কেউ আমাদের দেখছে কিনা! কারণ আমার জন্য বর্তমান মুহূর্ত টাই বেশি প্রয়োজনীয় আর দামি উনি যে আমার পাশে আছে।

_
নিচ থেকে আমি আগে উপরে গেলাম উনিই বলেছেন আমাকে যেতে উনি কিছুক্ষন পরে আসবেন বলল
উপরে গিয়ে দেখি তিশা আমার খোজেই এদিক সেদিক হাটছে।
আমাকে দেখে সামনে এসে বলল

“কোথায় ছিলে আপু?আমাকে একা রেখে”

ওর কথা শুনে ভ্রু কুচকে ওর মাথায় একটা চাপড় মেরে বললাম

” তোকে না বললাম আমি নিচে হাটতে যাচ্ছি তুই যাবি কিনা?এখন বলে আমি বলি নি!”

“ওহ বলেছিলে”

হাল্কা কন্ঠে বলে আমার চুলে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে চুলে হাত দিয়ে একটা বেলি ফুল নিয়ে বলল

” ওয়াও আপু তোমার চুলে বেলি ফুল কোথা থেকে এলো।ওয়াও সুন্দর লাগছে তো খুব”

বলেই হাতের একটা ফুল থেকে গ্রান শুকতে লাগলো।আমিও কিছু মনে করে বিরবির করে বললাম

“ওহ তাহলে চুলে হাত দিয়ে এই কাজ সেরেছে”

” কি বললা কে কাজ সেরেছে?”

আমি ওর হাত থেকে বেলি ফুলটা নিয়ে তরু আপুর রুমে যেতে যেতে বললাম

” কিছু না।”

রুমে গিয়ে দেখি তরু আপু ঘুমিয়ে আছে।আমি আমার হ্যান্ডব্যাগটা থেকে ডায়েরিটা বের করে হাতের বেলি ফুলটা রেখে দিলাম ডায়েরির ভাজে।তারপর আয়নার সামনে গিয়ে চুল দেখতে লাগলাম বেলি করা চুলে ডান পাশে ৩ টা বেলি এখনো গুজা।
মুচকি হেসে গুটিয়ে গুটিয়ে দেখতে লাগলাম নিজেকে।

~~~~~~~~

ঘুম ভাংতেই দেখি ১১ টা বাজে।আজকে আর ফুপ্পিরা জ্বালালো না।যাক ভালোই একটা ঘুম দিতে পারলাম।
ঘরেই ছোটখাটো ভাবে হলুদ দেওয়া হবে আর কাল বিয়ে পড়ানো হবে সেইটটাও এই ফ্ল্যাট এই সারবে আই মিন যারা যারা এসেছে তাদেরকেই রান্না বান্না করে দাওয়াত খাইয়ে দিবে।

এই সাধারণের মধ্যে ও তুষার ভাই আর জুবায়ের ভাই অনেকগুলো গাদা আর গোলাপ ফুল এনেছে হল সাজাবে সেইখানেই হলুদ লাগাবে তরু আপুকে। দুই ভাই মিলেই গোলাপ আর গাদা ফুল দিয়ে সাজাচ্ছে রুদ্ধ সাহেব ও উনাদের হেল্প করছে জুবায়ের ভাই কিছুক্ষন কাজ করে ফোনের রিং বাজায় ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে যায়। তখনই তুষার ভাই তার বাজখাঁই কন্ঠে বলে

” এই জুবায়ের শালার জ্বালায় বাচা গেলো না।ওই দুই মাইয়া তোরা দারাইয়া রইসস কে হেল্প কর আইয়া।তামাশা দেখতাসে দাড়াইয়া দাড়াইয়া।”

তুষার ভাইয়ের কথায় মুখ বাকিয়ে সুই সুতা দিয়ে গাদা ফুল গুলো সুতোয় ঢুকাতে লাগলাম আর তিশাও তুষার ভাইয়ের হাতে একেটা জিনিসপত্র এগিয়ে দিতে লাগলো।
আমি কাজের ফাকে ফাকে রুদ্ধ সাহেব কে দেকছি।উনি মনোযোগ সহকারে গোলাপ ফুল সুতোয় গুজছে।

” ভাইয়া কোনো হেল্প লাগবে?”

তিশার কথায় উনি তাকালেন ওর দিকে সাথে আমিও।উনি মুখে কিছুটা হাসি টেনে বললেন

” উম,,, নিচ থেকে কিছু বেলি ফুল লাগতো এনে দইতে পারবে?”

তিশা সায় দিয়ে আমাকে ওর সাথে আসতে বলল আমি প্রথম না করলেও ওর টানাপোড়েনে উঠে গেলাম ওর সাথে।

নিচে গিয়ে দেখলাম বেলি গাছে ভরে ফুল ফুটে আছে।তিশা হাতে থাকা ঝুড়িতে একে একে বেলি ফুল ছিড়ে রাখতে লাগলো।আমি আর হাত লাগালাম না বেলি গাছে।
তিশা যথেষ্ট ফুল নিয়ে যেতে যেতে আমাকেও আসতে বলল কিন্তু আমি আর গেলাম না।ওকে একাই যেতে বললাম।

বর্ষা মানেই বৃষ্টি। আকাশে থাকে মেঘের ভেলার আনাগোনা। পরিবেশ থাকে নিরব নিঃস্তব্ধতা।
খুবই সুন্দর বাতাস বইছে।সন্ধ্যায় হলুদের কার্যকর শুরু হবে।সেই হিসেবে বিকেল ৬টায় আমাদের রেডি হয়ে বসে থাকতে হবে আর ৪টায় শুরু করতে হবে রেডি হওয়া।
মনে মনে ছক সাজানোর মাঝেই একটা ছেলের কন্ঠে পিছন ফিরে তাকালাম
হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে আমার দিকে হাসিমাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি ভ্রু কুচকে তাকাতেই বলল

” হ্যালো।তুমি কি তরু আপুর কিছু হও?”

ছেলেটার কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকেই বললাম

” আপনি কি হন তরু আপুর?”

” আমি উনার ফুপাতো ভাই”

যতোটুকু আমার মনে পড়ে তরু আপুর একটি মাত্র ফুপ্পি আর ফুপাতো ভাইয়ের নামটা কি যেনো হ্যা আবির যিনি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে এইবার নিউ।
মানে আমার থেকে ছোট।আমার ভাবনার মাঝেই ছেলেটা আবারও বলল

” নাম জানতে পারি তোমার,,,ওহ সরি কিন্তু তুমি তো আমার ছোট তাই না তো তুমি বলেই তো বলতে পারি আর বললা না কি হও তুমি তরু আপুর?”

ছেলেটার কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। দুঃখী মিয়া মনে হচ্ছে নিজেকে নিজে।কি দিন এসে পড়লো আমার থেকে ছোট ছেলেরা আমার সাথে ফ্লার্ট করছে।দুঃখীভাব নিয়েই বললাম

” তরু আপু আমার ফুপাতো বোন হয়”

ছেলেটা হেসে আরও কিছু বলতে নিবে তখনই রুদ্ধ সাহেব আমার পাশে এসে দাড়ালেন।আমি উনার দিকে তাকিয়ে থাকতেই আমার দিকে তাকিয়ে থেকে হেসে বলল

” ছোট ভাইয়ের সাথে কি কথা হচ্ছে মিস ফিয়ানা?”

উনার কথা শুনে সামনের ছেলেটার দিকে তাকালাম।মুখটা ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমিও জোরপূর্বক হেসে বললাম

” এই আরকি পরিচয় হচ্ছিলাম।হাহা”

” ওহ আচ্ছা”

আমাদের দুজনের কথা বার্তা শুনে ছেলেটা মাথা নিচু করে নিচু স্বরে বলল

” ওহ সরি আপু।আমি ভাবলাম আপনি আমার থেকে ছোট হবেন।আচ্ছা আমি আসি তাহলে”

ছেলেটা চলে যেতেই উনার হাসির আওয়াজে ঠোঁট কামড়ে উনার দিকে তাকালাম।হাসি যেনো থামছে না উনার। কিছুক্ষন চুপ করে তাকিয়ে থেকে আমিও হাসতে লাগলাম।

কিছুক্ষন পর উনি হাসি থামিয়ে আমার হাত টেনে সামনে ধরলো তারপর পিছন থেকে একটা গোলাপ আর বেলির মালা সামনে ধরে হাতে পেচিয়ে বেধে দিলো সুন্দর করে।
বেধে দিয়ে হাত ছাড়তেই আমি ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে দেখতে লাগলাম।এইটা সেই মালায় যেইটা এতোক্ষন বসে বসে উনি নিজ হাতে বুনলো তিশা কে দিয়ে বেলি ফুল আনালো।
আমি মুচকি হেসে কিছুক্ষন দেখে হাত নামিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম

” ফুল মনে হয় আপনার অনেক প্রিয় ”

আমার কথার পরিবর্তে উনি চুল গুলো হাত দিয়ে ব্যাকব্রাশ করে সাদা জবা ফুলের গাছ থেকে একটা ফুল পেরে আমার চুলের ভাজে গুজে দিয়ে বললেন

” ফুল মানেই তো ভালোবাসা”

চলবে,,,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ❤️❤️)