#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ৭
#writer: Mishmi Muntaha Moon
শেষ পরীক্ষা ছিলো আজ।এক্সাম শেষে হাসি মুখে হল থেকে বের হলাম।পরীক্ষাটা অনেক ভালো হয়েছে বলতে হবে।বের হতেই ভেবেছিলাম রুদ্ধ সাহেবকে দেখবো কিন্তু নাহ উনাকে দেখলাম না।উনাকে দেখতে না পেয়ে মনটা খারাপ হলো কিছুটা।
সোজা রিকশা নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রোওনা দিলাম।বাড়িতে পৌছে জানতে পারলাম তরু আপু উনার প্রেমিকের সাথে ভেগে গেছে।আমারই ফুফাতো বোন যেই ফুপ্পিদের বাড়িতে আম্মুরা গিয়েছিলো।
শুনেই আচমকা আমার মুখ দিয়েই হাসি বের হয়ে গেলো। কারণ আমার এই ফুপ্পি এক নাম্বারের চুসকা টাইপ মহিলা।সকলে খবর নিয়ে ঘাটাঘাটি করে কার মেয়ে কার সাথে পালালো এই সকল বিষয় আলোচনা করায় পটু।কিছু মাস আগে আমাকে নিয়েও অযথাই কথা রটিয়েছিলো আম্মুর কানে।
আমার হাসি দেখে আম্মু রাগী চোখে আমার দিকে তাকালেই আমি গম্ভীর হয়ে বসলাম।
ফুপ্পি ফুপা মিলে মেয়েকে ধরে এনেছে এখন দুই পরিবারের সম্মতিতে ছোট অনুষ্ঠান করে বিদায় দেবে মেয়েকে।আমাদের ওইখানে যেতে হবে।
পরশুদিন যাবে তিনদিন ওইখানেই কাটিয়ে তারপর বাড়িতে ফিরবো।
মন খারাপ হলো আমার।ওইখানে গেলে তো উনার সাথে আর দেখা হবে না।আর এমনেতেও তো উনার সাথে আর দেখা হওয়ার কথা না কারণ পড়ার জন্যই তো দেখা হতো যেহেতু এক্সাম শেষ তাহলে আর পড়াও নেই।
ক্লান্তি নিয়ে হেটে রুমে গিয়ে গোসল করে নিলাম।তারপর একটু ঘুমিয়ে নিলাম।
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ লাগছে।চুলগুলো কাটা দিয়ে বেধে বিছানা থেকে উঠে দাড়াতেই ফোন বেজে উঠে। স্ক্রিনে ‘ রুদ্ধ সাহেব’ নামটা ভেসে উঠেছে। কিছুক্ষন নামটার দিকে তাকিয়ে থেকে রিসিভ করে সালাম দিলাম।উনিও উত্তর নিয়ে গমগমে কন্ঠে বললেন
” কোথায় ছিলে?”
“কোথায় থাকবো আবার বাড়িতেই আছি।কেনো?”
কিছুক্ষন নিঃস্তব্ধতায় ছেয়ে থাকার পর উনি বললেন
” পাঁচবার কল করলাম।যাইহোক নিচে আসো।”
উনার কথা শুনে অবাক হয়ে বললাম
“কেনো আপনি কি নিচে?”
বলেই বারান্দায় গেলাম।তারপর কল কেটে একদৌড়ে আম্মুর কাছে গেলাম।
” আম্মু একটু জিয়ার সাথে দেখা করতে যেতাম। যাই?”
আমার কিথা শুনে আম্মু থালাবাসন ধোয়া বন্ধ করে আমার দিকে তাকালেন।
” কি জন্যে? ”
” ওই একটু এক্সামের ব্যাপারে কথা ছিলো।ওর সাথে তো দেখা হয় নি কারণ ওর অন্য ক্লাসরুম এ সিট পরেছে।”
আমার কথা শুনে আম্মু কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আবারও থালাবাসন ধোয়ায় মনোযোগ দিতেই আমি বলে উঠলাম
” যাই?”
“তারতারি ফিরবে।নাহলে একদম ভালো হবে না।”
আম্মুর কথা শুনে রুম থেকে ওরনা নিয়ে ঘোমটা টেনে গেট খুলে বেরিয়ে পরলাম।
নিচে যেতেই চোখে পড়লো কাঙ্ক্ষিত সেই ব্যাক্তিকে।
ধূসর রঙের পাঞ্জাবী গায়ে তার আজ।বা হাতে কালো রঙের ঘড়ি।চুল গুলো সাধারণ ভাবে একপাশে সুন্দর ভাবে সেটিং করা।উনি শুধু কাজে গেলেই চুল গুলো জেল দিয়ে সেটিং করে এছাড়া লাগায় না জেল।
দূর থেকে উনাকে দেখার মাঝেই উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা জোরে বললেন
“ওখানে দাঁড়িয়ে কি দেখছো এইখানে আসো মিস ফিয়ানা”
উনার কথা শুনে উনার সামনে এসে দাড়ালাম।
” এক্সাম কেমন হয়েছে?”
উনার কথা প্রসন্নময়ী হাসি দিয়ে বললাম
“অন্নেক ভালো।”
আমার কথা শুনে উনি মুচকি হাসলেন।তারপর রাস্তায় তাকিয়ে আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়লেন
” আন্টিকে কি বলে এসেছো?”
” জিয়ার সাথে দেখা করতে যাবো বলে এসেছি”
আমার দিকে একপলক তাকালেন আমার কথা শুনে তারপর হাসি দিয়ে একটা রিকশা ডাকলেন।
~~~~~~~
কোথায় নিয়ে এলো জানিনা।কিন্তু খুবই সুন্দর একটা জায়গা সামনে নদী দেখা যাচ্ছে। গাড়ো নীল আকাশের প্রতিবিম্ব অনায়াসে বিশাল নদীর পরিষ্কার পানিতে দেখা যাচ্ছে।রোদ নেই নীল আকাশের মাঝে কিছু সাদা মেঘ জমাট হয়ে উড়ে বেরাচ্ছে।
হাটতে হাটতে আরেকটু সামনে বাড়তেই ঘাসের আবরনে পা রাখলাম। সবুজ কচি ঘাস আমি উনাকে রেখেই নদীর আরেকটু কাছে গিয়ে জুতো খুলে পরিষ্কার ঘাসে বসে পড়লাম।
উনিও আমার পাশে বসলেন।
মনটা একদম প্রফুল্লতায় ভরে উঠলো।আনন্দ নিয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে উনার দিকে দৃষ্টি পড়তেই দেখলাম উনি হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে।আমিও কিছুক্ষন উনার দৃষ্টি তে তাকিয়ে থেকে চোখ নদীতে রেখে বললাম
” আপনার চোখ গুলো সুন্দর কিন্তু খুব।বাদামি লেন্স”
আমার কথায় উনি মাথা নিচু করে হাসলেন।উনার হাসি দেখে আমি এক ভ্রু উচিয়ে উনার দিকে তাকালাম।প্রশংসা শুনে হাসলো নাকি!
উনার হাসিকে পাত্তা না দিয়ে আমি বললাম
” পরশু আমার ফুপাতো বোনের ঘরোয়াভাবে বিয়ে।সেইখানে তিনদিন থাকা পড়বে।”
আমার কথা শুনে অনুভূতি শূন্য দৃষ্টিতে আকাশে তাকিয়ে জবাব দিলেন
“ওহ।”
উনার কোনোরকম রিয়েক্ট না দেখে ভালো লাগলো না আমার।উনার দৃষ্টি অনুসরণ করে আমিও খোলা নীল আকাশে তাকালাম।
উনিও চুপ আমিও চুপ।হঠাৎ উনি মৃদু কন্ঠে বললেন
” মিস ফিয়ানা,,,”
উনার কন্ঠটা শুনে বুক ধুকপুক বাড়লো।উফফ উনার মুখে মিস ফিয়ানা টা যে এতো কেনো ভালো লাগে একদম অন্যরকম। কন্ঠটাও কেমন যেনো কোমল শুনালো একদম হৃদয় ছোয়ার মতো।
” জ্বী বলুন”
আমার উত্তরে উনি আমার দিকে তাকিয়ে প্রসারিত হাসি নিয়ে আকাশে তাকিয়ে বলল
” মেঘ তার আকাশকে অনেক ভালোবাসে জানো তো”
” কে মেঘ আর এই আকশটাই বা কে?”
উনার কথায় অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করতেই উনি শব্দ করে হেসে উঠলো।তারপর আমার দিকে হাসিমাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন
” মিস ফিয়ানা কেমন বোকা কথা বললা।আমি উপরের আকাশের কথা বলছি আর ভেসে যাওয়া মেঘের কথা বলেছি কোনো ব্যাক্তি নয়”
উনার কথা কিছুটা ভ্রু কুচকে আকাশে তাকালাম তারপর বললাম
” আপনি কি করে জানলেন? ”
উনার চাওয়া অনুযায়ী প্রশ্ন করতে উনি হাসি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
” ভালোবাসে বলেই তো প্রতিদিন নিয়ম করে দেখা দেয় আর এভাবে আগলে রাখে।”
উনার কথা শুনে আকাশের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে উনার দিকে তাকালাম।উনি অপলক ভাবে আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলো তখনও।
আবছা অন্ধকার হয়ে আসছে দেখে আমি চিন্তিত হয়ে উঠে দাড়ালাম।তারপর উনার দিকে তাকিয়ে বললাম
“অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে।আম্মু বলেছিলো তারাতারি ফিরতে”
আমার কথায় উনিও বসা থেকে উঠলেন।তারপর আমার আগেই হাটতে লাগলে আমিও তার পিছু পিছু হাটি।
রাস্তায় একটা রিকশা আগে থেকেই ছিলো হয়তো উনি দাড় করিয়ে রেখেছিলেন।
উনি রিকশার পাশে দাঁড়িয়ে আমাকে বললেন
“মিস ফিয়ানা। এই রিকশাটাতে উঠে পরো।”
রিকশায় উঠে উনার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালাম।উনি কি উঠবে না? প্রশ্নটা মাথাউ উকি দিলো কিন্তু কিছু জিজ্ঞাসা করলাম না।
রিকশায় বসতেই উনি রিকশাচালক মামাকে আমাদের ঠিকানা বলে আমার দিকে তাকিয়ে পিছনের হাত থেকে একগুচ্ছ কদম ফুল আর সাথে একটা ছোট হ্যান্ডব্যাগ এগিয়ে দেয়।
আমি না নিয়ে উনার দিকে তাকাতেই উনি চোখ দিয়ে ইশারা করে নিতে বললে আমি উনার হাত থেকে নিতেই উনি রিকশাওয়ালা মামাকে রিকশা ছাড়তে বলেন।
রিকশা চলতে লাগে।চুলগুলো কানে গুজে রিকশা থেকে উকি দিয়ে পিছে তাকাতেই উনাকে চোখে পরে।পাঞ্জাবী তে অনেক নেশাক্ত লাগে উনাকে একদম কিউটের ডিব্বা।
প্রথম দিনের রুদ্ধ সাহেবকে মনে পড়তেই হাসি ফোটে ঠোঁটের কোনে।
কতটা অভদ্র ভেবেছিলাম কিন্তু আসলে তো উনি অনেক ভদ্র কিউট আর ভালো একজন মানুষ।
আস্তে আস্তে করে রাস্তার ভাজে মিলিয়ে গেলেন উনি আর দেখতে না পেয়ে মাথাটা সোজা করে বসলাম।
আমার কাছে উনি আস্ত একটা অনুভূতি। সেই অনুভূতি টা কি? ভাবতেই আপনমনেই বলে উঠলাম ‘ ভালোবাসা’
কোলের উপরে থাকা কদম ফুলে নজর যেতেই হাসি প্রসারিত হয়।উফ আমার এতোদিনের চাওয়া পূরণ হলো।কদম মানেই একরাশ ভালোবাসা।
ছোট ব্যাগটিতে হাত ঢুকাতেই অনেকগুলো চকলেট দেখতে পেলাম।সাথে একটা চিরকুট দেখে তারাতারি বের করলাম।
আস্তে আস্তে করে চিরকুট টা খুলে চোখের সামনে ধরতেই ভেসে উঠে কয়েকটা লাইন সুন্দর করে লিখা।সম্ভবত গানের কিছু অংশ,
❝অবুঝ মনের ঠিকানা তুমি কি হবে
মুগ্ধ আমার প্রেমে জুরিয়ে রবে
মুখে বলো না কে তোমার অনুভবে❞
পড়ে আনমনে মুখে হাসি ফুটে উঠলো।মনে মনে আমিও পরের কিছু লাইন আওড়ালাম।
❝আমার চোখের মাঝে তুমি যে কালো
স্বপ্ন ভুবন জুরে তোমারই আলো
আমি তোমাকে বেসেছি কত ভালো
ও প্রিয়❞
বাড়িতে পৌছে উনার দেওয়া কদমের পাপড়ি গুলো ছিড়ে ডায়েরির ভাজে রাখলাম কারণ আস্ত কদম রাখা তো সম্ভব না ডায়েরি তে।
ডায়েরিটা ড্রয়ারে রেখে বাকি কদম গুলো বুকে জরালাম।
উনার দেওয়া তৃতীয় ফুল কদম।
চলবে,,,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ❤️❤️)