আমি গোপনে ভালোবেসেছি পর্ব-০৮

0
262

#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ৮
#Writer:Mishmi_muntaha_moon

ফুপ্পিদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি।জামাকাপড় প্যাকিং করা শেষ।
গাড়ো গোলাপি রঙের একটা নরমাল গাউন পরেছি আজ।কিছুটা সাজলাম অবশ্য মাস্ক তো পড়বোই দেখা যাবে না কিছুই তবুও মনের শান্তি। কানে একটা ঝুমকা পড়ে ওড়নাটা ঘোমটা দিয়ে গলায় একবার ঘুড়িয়ে সামনে টেনে নিলাম।
যেহেতু ফুপ্পিদের বাড়ি অনেকটা দূর না কিন্তু সেখানে তো মেহোমান এসেছে নিশ্চিত তাই একটু ভালো ভাবেই তো যেতে হবে।
রেডি হয়ে ফোন টা হাতে নিয়ে দেখলাম কোনো মেসেজ অথবা কল এসেছি কিনা কিন্তু না কোনো কিছুই আসে নি।মাঝে একদিন পেরুলো কিন্তু উনার সাথে কোনো কথা হয় নি।ওইদিন তো বললাম আজ ফুপ্পিদের বাড়িতে যাবো কিন্তু পরিবর্তে উনিতো কিছুই বলল না।

আম্মু তাড়া দিতেই কাধের ঝুলানো হ্যান্ডব্যাগে মোবাইল ঢুকিয়ে বাহিরে গেলাম।
আম্মু গেটে তালা লাগিয়ে নিচে এসে রিকশা থামলে আম্মু আমি আর ফায়াজ রিকশায় উঠে পড়ি।

~~~~~~~~~

ফুপ্পিদের বাড়িতে যেতেই কোলাহল পূর্ন পরিবেশ নজরে এলো।
আমার আব্বুরা দুই ভাই দুই বোন। বড় বোনের ফরিদপুরে বিয়ে হয়েছে সেইখানেই থাকে।আর ছোট ভাই ঢাকায় থাকে কেরানীগঞ্জ এর দিকে। তো বড় ফুপ্পি আর ছোট চাচাকে ছোট ফুপ্পি আরও আগেই হয়তো বলেছিলো। তাই আমরা গিয়েই উনাদের সাথে সাক্ষাৎ করলাম।

ছোট ফুপ্পির একটি মাত্র ছেলে জুবায়ের আর চাচা এক ছেলে এক মেয়ে এক ছেলে তুষার আর তিশা।
তিশা আমার থেকে ৩ বছরে ছোট কিন্তু আমার সাথেই অলওয়েজ চলাচল করে তাই আমাকে দেখেই একটা রুমে নিয়ে গেলো সেই রুমে জুবায়ের ভাই,তুষার ভাই তিশা আর তরু আপু বসে ছিলো।
উনাদের দেখে কুশল বিনিময় করে সাথেই বসলাম।
তুষার আর তিশা দুই ভাই বোন মিলে তরু আপুর মজা নিচ্ছিলো।

” কিরে তরু তোর গালটা কেমন লাল হইয়া আছে ফুপ্পি তোরে ধামাধাম ধুয়ে দিছে না?”

তুষার ভাইয়ার কথা শুনে হাসি পেলো খুব।ওর সাথে তাল মিলয়ে তিশাও বলছে

” আরেহ ওইটা বাদ দাও ভাইয়াকেও পিটা করেছে নাকি ফুপ্পি তো যেই”

বলে হাসতে লাগলো।ওরা দুই ভাই বোন এমনই দুটোই এক নাম্বারের দুষ্টু। তুষার ভাই কিছু বললে ও সাথে মিলে আরো পচাতে থাকে।
ওদের কথার মাঝে আমি বলে উঠলাম

” আহা ভাইয়া আর তিশা তোমরা পারো ও।আচ্ছা তরু আপু ওদের কথা বাদ দাও আমার কথা শোনো। ভাইয়ার নাম কি? আর ছবি আছে তোমার কাছে দেখবো আমি।

আমার কথা শুনে তরু আপু বলল

” উনার নাম ইমতিয়াজ”

বলে মোবাইল বের করে উনার আর ভাইয়ার একসাথে কয়েকটা সেল্ফি দেখালো।

ছবি দেখে আমি উত্তেজিত হয়ে তরু আপুকে আবারও বললাম

” ওয়াও ভাইয়া তো খুবই হ্যান্ডসাম।আচ্ছা তোমাদের লাভ স্টোরি শুনাও না”

আমার কথার পরিবর্তে আপু কিছু বলবে তার আগেই তুষার ভাইয়া এক ধমক দিয়ে বলল

” ধুর! কি আবালগো প্রেম কাহিনি শুনবি তুই।আমার প্রেম কাহিনি শুন ”

তুষার ভাইয়ার কথা শুনে তিশা আর আমি একে অপরের দিয়ে চাওয়াচাওয়ি করে তিশা বলল

” না ভাইয়া ”

আমিও ভাইয়ার দিকে ভ্রু কুচকে বললাম

“থাক ভাইয়া দরকার নেই আমাদের উপর দয়া করো”

তুষার ভাইয়া হলো একটা চিস।উনার এই প্রেম কাহিনি যে আমাদের কতবার শুনিয়েছে তার কোনো হিসেব নেই।যখনই দেখা হবে উনার প্রেম কাহিনি একবার হলেও শুনতে হবে।তাও ছোট থেকে উনার সব প্রেমিকদের কাহিনি কে কেমন ছিলো কিভাবে নিজের পিছে ঘুরিয়েছে তার কাহানি শুনিয়েই ছাড়ে।

” আরেহ ধুর আমার ইনট্রেস্টেড প্রেম কাহানি শুনতে চাইতাসোস না তাইলে এই তরুন লতার বোরিং প্রেম কাহানি কেমনে শুনবি।ধুর তোগো লোগে কোনো মজাই নাই।ওই জুবায়ের তুই কি করোস ওই চিপায় বইয়া?”

তুষার ভাইয়ের কথা শুনে জুবায়ের ভাই কর্নারে বসা থেকে উঠে তুষার ভাইয়ের পাশে বসলো।

” আর বলিস না।এই লবনের গুষ্টিটায় জীবনটা তেজপাতা কইরা ফালাইতাসে”

জুবায়ের কথা শুনে তুষার ভাইয়া বলল

” আহা! বেবি বেবি কইরা চেটিং তো ভালোই করো আবার এহোন কটা লাগে নি লবনের মতোন?”

তুষার ভাইয়ের কথা শুনে জুবায়ের ভাই বালিশ দিয়ে তুষার ভাইয়ের মুখে বারি দিলো।
আমি আর তিশা তো অবাক উনাদের কথাবার্তা শুনে।অবাক হয়ে আমি বললাম

” বাব্বাহ জুবায়ের ভাই তুমি তো ভালোই। গার্লফ্রেন্ড ও আছে তোমার।আর সবার সামনে সাধু হইয়া থাকো।”

আমার কথা শুনে আমার মাথায় চাটি মেরে বলল

” চুপ কর!বড় ভাই দের সাথে পাকনামি।আর শুন এইগুলো ভিতরের কথা বুঝলি সো মুখ অফ।”

ভাইয়ার কথা শুনে মুখ ভেংচি কেটে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালাম।

~~~~~~~~~~

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠিয়ে দিলো ছোট ফুপ্পি এসে।আজ নাকি আরও কিছু মেহোমান আসবে।তাই তারাতারি রুম পরিষ্কার করে খাবারের কাজ সেড়ে নিতে।
তিশা,আমি আর তরু আপু এক রুমে ঘুমিয়েছিলাম।ফুপ্পির ধমকানো ডাকে সবাই উঠে পরি।
একে একে হাত মুখ ধুয়ে খেয়ে দেয়ে নেই।আজকে সিম্পল ভাবে মেহেদি অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হবে।এই আরকি তরু আপুকে পার্লারের দুটো মেয়ে এসে মেহেদি লাগিয়ে দিবে।আমরা কয়েকটা মেয়েও আপুর সাথে মেহেদি দিবে তারপর পার্লারের মেয়েদুটো চলে যাবে আর বাদ বাকি যারা লাগাবে আমরাই লাগিয়ে দিবো।
আমিও মোটামুটি মেহেদি লাগাতে পারি আর তিশা তো খুব সুন্দর করেই লাগাতে পারে তো ঝামেলা হবে না।মেয়ে বলতে আমরা দুটো মেয়েই আছি আর তরু আপুর একটা বড় ভাই আছে তমাল ভাই উনি ইটালি থাকায় বিয়েতে থাকিতে পারবে না।
দুপুর একটা বাজতেই একে একে সবাই গোসল সেরে নিলাম।সবার লাস্ট গোসল করলাম আমি।
গোসল করে বেরিয়ে দেখি ৩ টা বেজে গেছে।তরু আপুর রুম ছাড়া সব রুম ভরাট আই মিন বড়রা উনাদের আড্ডা নিয়ে বসেছে।
তরু আপুর রুমে যেতেই দেখলাম তরু আপুকে তিশা সাজিয়ে দিচ্ছে নরমাল ভাবেই।শেষ হতেই ও নিজেও একটু সেজে নিলো।
আমিও আজ একটা কলাপাতা রঙের সিম্পল গাউনই শুধু গলা,হাতা আর নিচের ঘেরটাতে স্টোনের কিছু কাজ আছে।
ড্রেস পড়ে চোখে আইলাইনারের রেখা টানলাম আর ঠোঁটে লিপ্সটিক লাগালাম।মাশকারা তো মাস্ট কারণ এইটা আমার ফেভারিট সবথেকে।

সাজতে গুজতেই ৫টা বেজে গেলো।সেজেগুজে বাহিরে হাটছি আমি আর তিশা।জুবায়ের ভাই আর তুষার ভাই বিকাল হতেই বেরিয়ে গেছে।মেহেদি টেহেদি তো আর লাগাবে না তো মহিলাদের ভিতরে বসে থাকা উনাদের কর্ম না তুষার ভাইয়ের কথা।

” ফিয়ানা আপু। ফুপ্পি না বলল কোন মেহোমান আসবো কিন্তু কারো আসার তো নাম গন্ধ ও নেই”

তিশার কথা শুনে আমি বললাম

” কি জানি!হয়তো আমাদের জাগানোর জন্যই বলেছে।”

আমার কথায় তিশাও সায় দিলো।

_

তরু আপুর মেহেদি লাগাতে লাগাতেই ১ ঘন্টা পেরিয়ে গেলো।দুই হাতে ভরে ভরে লাগিয়েছে।
তারপরে আমার আর তিশার পালা আসলো।একটা মেয়ের কাছে আমি বসেছি আরেকটার কাছে তিশা।

৭ টা ৪৬ বাজে।এখন মাত্র এক হাত দেওয়া হলো আরেক হাতেরটাও অর্ধেক হয়েছে।
তারমাঝেই বেল বেজে উঠলো।আর ফুপ্পি দরজা খুলতেই মুখে হাসি ফুটিয়ে বলতে লাগলো।

” আরে এসেছেন আপনারা এতোক্ষণে? এহসান ভাই কোথায় এখানে আসো উনারা এসে পড়েছে”

কে এসেছে বুঝলাম না কিন্তু ফুপ্পির এতো আমোদিত হওয়ার কারণ কি!হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যাক্তির আগমন।
আবার আব্বুকেও ডাকলো।
ফুপ্পির ডাকে আব্বুও গিয়ে কুশল বিনিময় করতে লাগলো।

আমার নজর তখনও দরজার দিকে।এক পলকও ফেলছি না। আমিও দেখি এসেছে টা কে?

আব্বু কুশল বিনিময় করে উনাদের ঘরে ঢুকতে বলল।
তিনজন ব্যাক্তি ঘরে প্রবেশ করতে আমি অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকাই আর বিরবির করে বললাম

” উনি!”

চলবে,,,