আমি তোমার গল্প হবো পর্ব-০৭

0
699

#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::০৭

🌻সকালে🌻

শাহিন হাসাদ খাবারের টেবিলে বসে আছে। অনুরিমা তাদের নাস্তা সার্ভ করে দিচ্ছে। তখন সাহিল শার্টের হাতা ফোন্ড করতে করতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে শাহিনের পাশে বসে,

— ” গুড মর্নিং ড্যাড। গুড মর্নিং মম। ”

— শাহিন মুচকি হেসে, ” গুড মর্নিং মাই সান। কি ব্যাপার? আজ কেমন খুশি খুশি মনে হচ্ছে। ”

— সাহিল বাঁকা হেসে, ” ইয়েস ড্যাড।
কাল রাত থেকে একজনের কথা ভেবে একদমই ঘুমাতে পারিনি।
কেমন যেন, প্রথম দেখায়ই তাকে আমার ভালো লেগে গিয়েছে। ”

— অনুরিমা খুশি হয়ে, ” এটা তো খুব ভালো কথা। আমিও ভাবছিলাম তোর বিয়ে নিয়ে। বলো তো, মেয়েটা কে? নাম কি? ”

— সাহিল একটা হাসি দিয়ে, ” নাম শুনলে তো তোমরা চমকে উঠবে। ”

— শাহিন কফির মগে চুমুক দিয়ে, ” আগে তো বলো মেয়েটা কে? ”

— ” অমিত রহমানের মেয়ে অধরা ওহি। ”

সাহিলের কথা শুনে অনুরিমার মুখ মূহুর্তেই কালো হয়ে যায়, অবাক হয়ে সাহিলের দিকে তাকিয়ে,

— ” কিন্তু, অধরা তো আশ্বিনের…। ”

— সাহিল অনুরিমাকে থামিয়ে দিয়ে, ” উফ মম। তো কি হয়েছে?
আশ্বিন কোনভাবেই অধরার হাসবেন্ড হওয়ার যোগ্য না। তাই ভাবছি, অধরাকে আমি নিজের করে নিবো। কি বলো ড্যাড? ”

— অনুরিমা জোর দিয়ে, ” সাহিল আশ্বিন তোমার ভাই হয়। ছেলেটার সাথে এমন করো না। আর অধরাও এমন মেয়ে না যে..। ”

— শাহিন খাওয়া থামিয়ে, ” অনু, মনে হচ্ছে আশ্বিনকে নিয়ে একটু বেশিই ভাবছো। যে তোমাকে মা হিসেবে মনেই করে না তার জন্য এতো কিসের মায়া।
আর, অধরা যদি আমার ছেলেকে পছন্দ করে তাহলে ক্ষতি কিসের? সাহিল, তোমার পছন্দই আমার ইচ্ছা। ”

— ” দ্যাটস লাইক মাই ড্যাড। লাভ ইউ সো মাচ। বাই দ্য ওয়ে, চলো আমিও তোমার সাথে বের হবো। ”

কথাটা বলেই সাহিল আর শাহিন একসাথে চলে যায়। অনুরিমা এক ধ্যানে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।

— মনে মনে, ” আমি যে ভুল করেছি অধরাকে এই ভুল করতে দেওয়া যাবে না।
আশ্বিনের সাথে আমি অন্যায় করেছি, আমি জানি অধরা কখনোই এমন করবে না। ”

🌻এদিকে🌻

অধরা আর দাদি খাওয়ার টেবিলে বসে আশ্বিনের অপেক্ষা করছে। অধরা এক নজর তাকিয়ে দেখে দাদি মন খারাপ করে চুপচাপ বসে আছে। কিছুক্ষণ পর আশ্বিন রেডি হয়ে নিচে নেমে…

— ” দাদি আমাকে এখনি বেরুতে হবে। একটা জরুরী মিটিং আছে। আমি আসছি। ”

কথাটা বলে চলে যেতে নিতেই অধরা এক চিৎকার দিয়ে দৌড়ে আশ্বিনে সামনে এসে,

— ” না খেয়ে চলে যাচ্ছেন কেনো? আগে চলুন আমার সাথে। ”

— আশ্বিন শান্ত কণ্ঠে, ” অধরা আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি পরে কিছু খেয়ে নিবো। ”

কে শোনে কার কথা, আধরা জোর করে আশ্বিনে চেয়ারে বসিয়ে নিজে আশ্বিনের কোলে বসে পড়ে।

— আশ্বিন অবাক হয়ে, ” এটা কি হচ্ছে? দাদির সামনে এসব কি ধরনের অসভ্যতা? ”

— ” কি করেছি আমি? আমি জানি আপনি বারবার উঠে যাবেন।
খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেন আপনি যেতে না পারেন তাই আমি এভাবে বসেছি। কি বলো দাদি? ”

— দাদি মুচকি হেসে, ” খুব ভালো করেছিস পিচ্চি। এই না হলে আমার আশ্বিনের বউ। ”

অধরা দাদির দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে নিজ হাতে আশ্বিনকে খাইয়ে দেয়।
অধরার কাজে আশ্বিন প্রথমে অবাক হলেও পরে নিজেকে সামলে নেয়। এদিকে দাদি তাদের একসাথে দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

🌻🌻

অধরা কলেজে বসে আছে আর তিশা তাকে এটা সেটা বলেই যাচ্ছে। অধরা কিছু একটা ভেবে..

— ” এই তিশা জানিস? আমার মাথায় না একটা বুদ্ধি এসেছে। ”

— তিশা চোখ ছোট করে তাকিয়ে, ” আবার কি ঝামেলা করতে চাচ্ছিস? দেখ আমি কিন্তু তোর সাথে নেই। একদম না। ”

— ” আরে ভাগ। তোর সাপোর্টের কোন প্রয়োজনও নেই আমার। হুহহ। ”

— তিশা একটা ভেংচি কেটে, ” তো, কি করবি তুই? ”

— অধরা বাঁকা হাসি দিয়ে, ” দাঁড়া দেখাচ্ছি তোকে। ”

কথাটা বলেই অধরা ফোন নিয়ে আশ্বিনকে কল দেয়। দুইবার রিং বেজে ফোন রিসিভ হতেই…

— ” হ্যালো আশ্বিন…। ”

— ওপাশ থেকে, ” হ্যালো ম্যাম। আমি স্যারের পিএ। আশ্বিন স্যার মারিয়া ম্যাডামের সাথে মিটিয়ে আছে। ”

— অধরা অবাক হয়ে, ” কিহহ? কার সাথে আছে? ”

— ” মারিয়া ম্যাম। ”

কথাটা শুনে অধরা চুপ হয়ে ফোন কেটে দেয়। তিশা ভ্রু কুঁচকে অধরার দিকে তাকিয়ে,

— ” কি হলো? তোর চোখ এমন রসগোল্লার মতো বড় হয়ে গেলো কেনো? ”

— ” মারিয়ার বাচ্চা…। ”

— তিশা অবাক হয়ে, ” কার বাচ্চা? ”

— ” শাকচুন্নি মারিয়া। জামাই চোর। আমার আশ্বিনকে চুরি করতে চায়। কিন্তু নাহহহহ (কথাটা বলেই এক লাফে দাঁড়িয়ে)। আমি বেঁচে থাকতে আমার বরকে চুরি হতে দিবো না।
কখনোই নাহহহহ। ”

কথাটা বলেই অধরা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে এক দৌড়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে যায়। তিশা হা করে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে…

— ” জামাই চোর? শাকচুন্নি? এসব কি বললো অধরা? ”

🌻এদিকে….

অধরা এক দৌড়ে আশ্বিনের অফিসে এসে সোজা আশ্বিনের রুমে ঢুকে পড়ে।
মারিয়া এতোক্ষণ আশ্বিনের পাশে বসে বকবক করছিলো আর আশ্বিন বিরক্ত ভাব নিয়ে ল্যাপটপে কাজ করতে করতে মারিয়ার সাথে কথা বলছিলো।

— অধরা একনজর তাদের দেখে দৌড়ে আশ্বিনের সামনে গিয়ে, ” আমি এসেছিইইইই। ”

হঠাত চিৎকার শুনে আশ্বিন চমকে সামনে তাকিয়ে দেখে অধরা। আশ্বিন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে,

— ” তুমি এখানে? তোমার না এখন কলেজে থাকার কথা? ”

— অধরা একটা চোখের ইশারা দিয়ে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে, ” আমি তো তোমাকে দেখতেই এসেছি। তোমাকে না দেখা আমার এক মুহূর্ত চলেই না। তাই…। ”

— আশ্বিন অধরাকে থামিয়ে, ” আচ্ছা, থামো থামো। বুঝেছি আমি…। ”

মারিয়া এতোক্ষণ রাগী দৃষ্টিতে অধরার দিকে তাকিয়ে ছিলো। শেষে রাগে উঠে দাঁড়িয়ে,

— ” আশ্বিন, আমি আজ আসি। পরে আবার আসবো। বাই। ”

কথাটা বলেই মারিয়া রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায়। অধরা একটা ভেংচি কেটে…

— মনে মনে, ” তোকে আর আসতে হবে নারে শাকচুন্নি। আমার বরকে আমি নিজেই দেখে রাখবো। হুহহহ ”

মারিয়া রুম থেকে বেরিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে,

— ” এই অধরা জাস্ট অসহ্য। একে তো আশ্বিন আর আমার মাঝে চলে এসেছে আবার নিজের অধিপতি বিস্তার করতে চাইছে।
নাহ, এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না, কিছু একটা তো করতেই হবে। ”

আশ্বিন অধরার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে,
— ” হঠাত কি মনে করে এখানে এসেছো পিচ্চি? পড়া ফাঁকি দিয়ে এসেছো তাই না?
এখনি বই নিয়ে পড়তে বসো। কুইক। ”

আশ্বিনের ধমক শুনে অধরা চোখ ছোট করে একবার আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কাটে বই নেয়।

🌻রাতে🌻

সকাল থেকেই অনুরিমা আশ্বিনকে নিয়ে ভাবছে। সাহিল যা বলে সে তা করেই ছাড়বে আর যদি অধরাও তার মতো ভুল করে তাহলে আশ্বিনের কি হবে?

— ” ছেলেটা জীবনে অনেক দিন পর আলোর সন্ধান পেলো। আমি পারবো না তার জীবন আবার অন্ধকারে ফেলে দিতে। কিছু একটা তো করতেই হবে। ”

কথাটা বলেই অনুরিমা ধীর পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে সাহিলের রুমের সামনে আসতেই কিছু কথা শুনতে পায়।

— সাহিল ফোন নিয়ে, ” হ্যালো মারিয়া ড্যালিং, কেমন আছো? ”

— ওপাশ থেকে, ” আরে সাহিল! আমি ভালো আছি। ভুলেই তো গিয়েছো আমাকে।কাল পার্টিতেও কথা বলোনি। আফটার অল আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড। ”

— ” আরে বলিস না…কাল পার্টিতে এক সুন্দরীকে দেখে আমি তো পুরো ফিদা হয়ে গিয়েছি। ”

— ” কি বলিস? কে মেয়েটা? নাম জানতে পেরেছিস? ”

— ” অবশ্যই। নাম কেনো… পুরো ডিটেইলস জানি।
মেয়েটা আর কেউ না আশ্বিনের অধরা। ”

— ” হোয়াট! অধরা? তুই কি পাগল হয়ে গিয়েছিস? ”

— ” ইয়েস, অনলি ফর হার। আমি অধরাকে চাই, যেভাবেই হোক তাকে চাই। আর আমি জানি তুইও আশ্বিনকে লাইক করিস। তাই আমার তোর হেল্প দরকার। ”

— ” বল কি করতে হবে আমাকে। আমি রাজি আছি। ”

— ” কাল দেখা করে তোকে বলবো। এখন রাখছি। বাই। ”

কথাটা বলেই সাহিল ফোন রেখে একটা ভিলেন হাসি দেয়।

এদিকে, দূর থেকে অনুরিমা তাদের কথা শুনে চিন্তায় পড়ে যায়।

—চলবে❤