আমি তোমার গল্প হবো পর্ব-০৮

0
687

#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::০৮

সকাল থেকেই অধরা আশ্বিনকে এটা সেটা বলে বিরক্ত করেই যাচ্ছে। আশ্বিন রাগী চোখে অধরার দিকে তাকিয়ে,

— ” তুমি কি দুই মিনিটের জন্য একটু চুপ থাকবে…প্লিজ? ”

— অধরা একটা ভেংচি দিয়ে, ” হুহহ! একটু তো কথাই বলেছি, তাই বলেই এতো বিরক্ত হচ্ছেন? যেদিন থাকবো না সেদিন ঠিকই মনে করবেন, হুম। ”

কথাটা বলেই অধরা গাল ফুলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আশ্বিন হা করে অধরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে…

— ” এটা কি বলে গেলো পিচ্চিটা?
থাকবো না মানে কি? এতো বড় সাহস, আমার মুখের উপর কথা…। দেখাচ্ছি তোমাকে। ”

আশ্বিন তারাতারি উঠে দাঁড়িয়ে তড়িঘড়ি করে নিচে নেমে দেখে অধরা কোথাও নেই। দাদির রুমে গিয়ে দেখে দাদি একা বসে টিভি দেখছে।

— আশ্বিন দাদির কাছে গিয়ে রেগে, ” দাদি অধরা কোথায়?
কোথায় আছে তোমার ওই কুখ্যাত ছোট্ট বুড়ি? ”

— দাদি অবাক হয়ে, ” কি হয়েছে আশ্বিন? অধরা তো তিশার সাথে কলেজে চলে গেলো। তোকে বলে যায়নি? ”

— আশ্বিন কিছু একটা ভেবে মাথা চুলকে, ” আসলে দাদি। না মানে, আমার খেয়াল ছিলো না। ”

— ” কি হয়েছে? পিচ্চিটা কি আবারও কিছু করেছে নাকি? ”

— ” আরে নাহহ, এমনি।
আচ্ছা, আমি যাই। ”

কথাটা বলে আশ্বিন রুম থেকে বেরিয়ে অধরাকে কল দেয়। কিন্তু কল রিসিভ না হওয়ায় আশ্বিন রেগে…

— ” সাহস বেড়ে গিয়েছে। আমার কল রিসিভ করেনি! ওকে ফাইন, আমিও দেখে নিবো। ”

🌻এদিকে🌻

অধরা আর তিশা আপনমনে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। আর অধরা একা একাই আশ্বিনকে বকে যাচ্ছে।

— তিশা আঁড়চোখে অধরার দিকে তাকিয়ে মনে মনে, ” দিন দিন দেখি অধরা পাগল হয়ে যাচ্ছে। আশ্বিন ভাইয়াকে বলে যেভাবেই হোক একে একটা ডাক্তার দেখাতে হবে। ”

এদিকে, অধরা কথা বলতে বলতে হঠাত থেমে যায়।
তিশা অধরার দিকে তাকিয়ে,

— ” কি হলো তোর? কথা শেষ হয়ে গেলো নাকি? যাক আলহামদুলিল্লাহ। ”

— অধরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে, ” তিশা দেখ সামনে মামুনি। আশ্বিনের মা। ”

— তিশা সামনে তাকিয়ে, ” আন্টি এখানে কি করছেন? হয়তো কোন কাজে এসেছেন। আমাদের কি? চল যাই। ”

— অধরা কিছু একটা ভেবে, ” তুই যা। আমার উনার সাথে কথা আছে। ”

তিশা একবার অধরার দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে চলে গেলো।

এদিকে অধরা ধীর পায়ে অনুরিমার কাছে এসে…

— ” এখানে কি করছেন আপনি? ”

— অনুরিমা হঠাত ডাক শুনে চমকে উঠে পাশে ফিরে তাকিয়ে, ” অধরা! তুমি এখানে…? ”

— অধরা একবার ভালোভাবে অনুরিমাকে পর্যবেক্ষণ করে, ” সামনেই আমার কলেজ। কিন্তু, আপনি এখানে কি করছেন? আপনার তো এখানে থাকার কথা না। ”

— অনুরিমা আমতা আমতা করে, ” আ..আসলে একজনের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম। মানে, বান্ধবী আর কি। কিন্তু পরে জানতে পেরেছি সে নাকি আসবে না। তাই চলে যাচ্ছি। ”

— অধরা গভীর ভাবে কিছু ভেবে, ” আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে। চলুন সামনের কফি শপে যেয়ে বসি। ”

— অনুরিমা অবাক হয়ে, ” কি কথা? আমার আসলে বেশি সময় নেই। যা বলার এখানেই বলো। ”

— ” আমারও বেশি সময় লাগবে না। চলুন। ”

অনুরিমা আশেপাশে একবার তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে অধরার সাথে চলে আসে।

🌻🌻

অধরা আর অনুরিমা মুখোমুখি বসে আছে। অনুরিমা বারবার আশেপাশে তাকিয়ে কিছু একটা দেখছে আর অধরা গভীর ভাবে তাকে পর্যবেক্ষণ করছে।

— অনুরিমা অধরার দিকে তাকিয়ে, ” বলো কি বলতে চেয়েছিলে? ”

— ” আমি সব জানতে চাই।
মানে, কেনো আপনি বাবাকে ডিভোর্স দিয়ে শাহিন হাসাদকে বিয়ে করেছেন? কেনো আশ্বিনকে একা ফেলে চলে গিয়েছেন?
দ্বিতীয় বিয়ে হয়ে গেলেও তো আপনি চাইলেই আশ্বিনকে নিজের কাছে রাখতে পারতেন, আর কিছু না হলেও এট লিস্ট যোগাযোগ তো রাখতেই পারতেন। কিন্তু আপনি এমন করেননি, কেনো? ”

— অনুরিমা এতোক্ষণ চুপ করে অধরার কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ” এসব অনেক পুরনো কথা। এখন এই কথা জেনে কোন লাভ নেই। সো, আমি যাচ্ছি। ”

কথাটা বলে অনুরিমা উঠে যেতে চাইলে অধরা তার হাত ধরে ফেলে।

— ” লাভ আছে। কথাগুলো পুরনো হলেও আমার জন্য নতুন। আর এই পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে কথাগুলো জানার অধিকার আমার আছে। ”

—অধরার কথা শুনে অনুরিমা চুপচাপ বসে কিছু একটা ভেবে,
” আমার আর আকাশের বিয়েটা হয়েছিলো পারিবারিক ভাবেই। আকাশ তখন নতুন বিজনেস সামলাতে শুরু করেছে।
যেহেতু আকাশের বাবা ছিলেন না, তাই আমার বাবা আকাশকে বিজনেসে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে।

সব কিছু ভালোই যাচ্ছিলো। আকাশ তার ছোট বিজনেসকে অনেকটা উপরে তুলে ফেলে আর তখনই…

হঠাত একদিন আকাশের বিজনেসে ঝামেলা হতে শুরু করে। একে একে সব কিছু আমরা হারাতে শুরু করি। আকাশ কোনভাবেই কোনকিছু সামলে উঠতে পারছিলো না তখন আমার বাবা তাকে সাহায্যের চেষ্টা করতে গিয়ে, উল্টো উনি নিজেও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা কেউই জানতাম না আসলে কি হচ্ছে, কে এমন করছে?

আমাদের মাঝে প্রতিনিয়ত ঝগড়া হতে থাকে। দুজনের মাঝে দুরত্ব বাড়তে থাকে।
কেনো জানি না, আমার মনে হয়েছিলো এসব আকাশ ইচ্ছা করেই করছে।
রোজ রোজ এসব ঝগড়া বিবাদে আমি একপ্রকার অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলাম তাই সেদিন বাসা ছেড়ে চলে আসি। তখন বাবার ইচ্ছেতেই আমি তাকে ডিভোর্স দেই। ”

— অধরা এতোক্ষণ মনোযোগ দিয়ে সবকিছু শুনছিলো, ” সব তো বুঝলাম। কিন্তু আশ্বিন..? তার কথা কি বলবেন? ”

— অনুরিমা কিছুক্ষণ চুপ থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে,
” ডিভোর্সের পর দীর্ঘদিন ধরে যখন বাসায় ছিলাম তখন আশেপাশের মানুষেরা নানারকম কথা শুনাতো। অনেকে তো বাজে কথাও বলতো।

তখন বাধ্য হয়ে বাবা আমার আর শাহিনের বিয়ে দেয়।
অবশ্য শাহিন নিজেই আমাদের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে। বাবা তখনই আমাদের বিয়ে দিয়ে কিছুদিনের মাঝেই ইতালি, আমার ভাইয়ের কাছে চলে যায়।

বিয়ের পর আমি চেয়েছিলাম আশ্বিনকে আমাদের সাথে রাখতে কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। আর আমিও চেয়েছিলাম নতুন জীবনে নতুন করে সব কিছু শুরু করে আকাশকে দেখিয়ে দিবো।
জানতাম না আশ্বিনের জীবনটা এভাবে নষ্ট হয়ে যাবে। ভেবেছিলাম আকাশ সবসময় আশ্বিনকে সামলে রাখবে। কিন্তু…। ”

কথাগুলো বলেই অনুরিমা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। অধরা কিছুক্ষণ চুপ করে বসে…

— ” নিজেদের জীবনকে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে কিভাবে একটা ছোট্ট জীবনকে নষ্ট করে দিলেন? একটা অবুঝ মনের ইচ্ছাগুলো, স্বপ্নগুলো হঠাত করেই কিভাবে ভেঙে দিলেন? ”

— অনুরিমা উঠে দাঁড়িয়ে, ” অধরা, আমি জানি আমি অন্যায় করেছি আশ্বিনের সাথে। কিন্তু শেষ একটা কথা বলতে চাই, অনেক সময় পরিস্থিতি আমাদের অনেক কাজ করতে বাধ্য করে। যা আমরা কখনোই করতে চাই না।
আমি আসি। ”

কথাগুলো বলেই অনুরিমা চলে যায়। অধরা ভ্রু কুঁচকে উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

🌻রাতে🌻

অধরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে অনুরিমার কথাগুলো গভীর ভাবে চিন্তা করছে। কোনভাবেই সে কথাগুলো গুছিয়ে মিলাতে পারছে না। কোথাও না কোথাও একটা ঝামেলা তো আছেই।
অধরা ফোন নিয়ে একটা কল দেয়…

— ” হ্যালো জনি ভাইয়া। ”

— ওপাশ থেকে, ” আরে ছোট মনি! কেমন আছো? ”

— ” আমি ভালো আছি ভাইয়া। আমার আপনার একটা হেল্পের খুব দরকার। ”

— ” আরে এভাবে বলো না। শুধু বলো কি করতে হবে? ”

— ” আমার কিছু তথ্য খুঁজে বের করতে হবে। যদিও তথ্যগুলো অনেক আগের। তাও যদি কোনভাবে বের করতে পারো…। ”

— ” আরে সমস্যা নেই। তুমি শুধু বলো কি তথ্য। বাকিটা আমি দেখছি। ”

— ” অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। ”

অধরা ফোনে কথা শেষ করে সামনে তাকাতেই দেখে আশ্বিন তার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে…

— অধরা আমতা আমতা করে, ” এ..এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? চোখ দিয়ে গিলে ফেলবেন নাকি? ”

অধরার কথাটা শেষ হতেই আশ্বিন অধরাকে এক টানে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে দুহাত চেপে ধরে…

— ” সাহস দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে তাই না? আমার মুখের উপর কথা শুনিয়ে আবার রাগ দেখিয়ে চলে যাওয়া?
এখন কি করবে? কোথায় পালাবে? ”

আশ্বিনের বলা কথাগুলোর কোন হুশ অধরার নেই। সে চোখ বড় বড় করে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে আছে।

আসলে আশ্বিন তার অজান্তেই অধরার অনেকটা কাছে চলে এসেছে। আশ্বিনের নিঃশ্বাস অধরার মুখে এসে পড়ছে। এই মাত্র শাওয়ার করায় আশ্বিন খালি গায়ে, একটা কালো টাওজার পরে আছে। চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। অধরা আশ্বিনকে এভাবে দেখে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। হা করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।

আশ্বিন কিছুক্ষণ অধরার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে যখন বুঝতে পারে সে অধরার কতটা সামনে তখন এক ঝটকায় দূরে সরে আসে।
আশ্বিন সরে যেতেই অধরা বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে শুরু করে।

— আশ্বিন অন্যদিকে ফিরে কিছুক্ষণ চুপ থেকে, ” আর কখনো যদি আমাকে না জানিয়ে বাসা থেকে বের হও তাহলে আর বাসায় ঢুকতে দিবো না।
মনে থাকে যেন? ”

কথাটা বলে আশ্বিন রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। অধরা তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে চিৎকার করে…

— ” কেনো দিবেন না? এটা এখন আমারও বাসা। আমি এই বাসার বউ হই, বউউউউ। মিসেস আশ্বিন চৌধুরী।
ভালোবেসে না বিয়ে হয়েছে আমাদের? ”

আশ্বিন যাওয়ার সময় অধরার শেষ কথাটা শুনে বাঁকা হাসি দিয়ে দাদির রুমে চলে আসে।

—চলবে💜