আমি তোমার গল্প হবো পর্ব-০৯

0
699

#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::০৯

সকালে…

অধরা হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আশ্বিন এক ধ্যানে অধরার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। পিচ্চিটা বড় হয়ে গেলেও এখনো সেই আগের মতোই আছে।
হঠাত মনে পড়ে গেলো সেই দিনটার কথা…

🌻অতীতে🌻

আশ্বিন দাদিকে নিয়ে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে আসে।
আশেপাশের কেউ তেমন পরিচিত না হওয়ায় আশ্বিন চুপচাপ এক জায়গায় বসে ছিলো। হঠাত পাঁচ ছয় বছর বয়সী একটা পিচ্চি মেয়ে তার সামনে এসে দাঁড়ায়।

আশ্বিন মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে, গুলুমলু একটা পিচ্চি মেয়ে, একটা লাল জামা পড়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
মেয়েটার একহাত কোমরে গুজে অন্যহাতে চকলেট খেতে খেতে আশ্বিনের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।

— ” এই ছেলে, তুমি এখানে একা একা বসে আছো কেনো? ”

আশ্বিন ভ্রু কুঁচকে একবার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নেয়। তা দেখে পিচ্চিটা আশ্বিনের আরো সামনে এসে,

— ” তুমি কি আমার কথা শুনতে পারছো না?
কেউ কি তোমাকে বকে দিয়েছে? নাকি কেউ তোমার সাথে খেলছে না? কোনটা? আমাকে বলো। ”

— আশ্বিন ভ্রু কুঁচকে, ” তোমাকে বললে কি হবে? ”

— পিচ্চি চকলেট খেতে খেতে আশ্বিনের পাশে এসে বসে, ” আমাকে বলো তোমাকে কে বকে দিয়েছে। আমি গিয়ে এখনই তার চুল টেনে দিবো, হুম। ”

পিচ্চি কথাটা বলতেই কেউ একজন এসে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে,

— ” অধরা বোন, তুই এখানে কি করছিস? ”

— অধরা অর্ণবের দিকে তাকিয়ে, ” ভাইয়া দেখো, এই ছেলেটার মন খারাপ। আমাকে বলছে না কেনো তার মন খারাপ। ”

— অর্ণব আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে, ” আশ্বিন, কি হয়েছে তোর? এখানে চুপচাপ বসে আছিস কেনো? চল আমার সাথে। ”

আশ্বিন অধরার দিকে একবার তাকিয়ে উঠে যেতেই অধরাও উঠে দৌড়ে এসে তাদের পিছু পিছু হাটতে শুরু করে।
পুরোটা অনুষ্ঠান অধরা আশ্বিন আর অর্ণবের পিছু পিছু ঘুরঘুর করে। কিন্তু আশ্বিন একবারে জন্যও অধরার দিকে ফিরে তাকায় না। তাই অধরা গাল ফুলিয়ে একটা চেয়ারে বসে পড়ে।

— অধরার খালামনি তার পাশে বসে, ” কি হয়েছে আমার পিচ্চি বুড়িটার? ”

— অধরা গালে হাত দিয়ে, ” আমি একটা কথা ভাবছি…। ”

— ” ওরে বাবা, তাই নাকি? আমিও একটু শুনি আমার বুড়িটা কি নিয়ে এতো ভাবছে। ”

— ” আচ্ছা খালামনি, বিয়ে মানে কি? ”

— খালামনি অধরাকে কোলে নিয়ে, ” বিয়ে মানে?
বিয়ে মানে হলো দুইটা মনের মিলন, একটা পবিত্র বন্ধন। যেখানে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে সারাজীবন একে অপরের পরিপূরক হয়ে থাকে। একে অপরকে অনেক ভালোবাসে। ”

— অধরা খালামনির দিকে তাকিয়ে, ” তাহলে আমার বিয়ে কবে হবে? কার সাথে হবে? ”

— কথাটা শুনে খালামনি হাসতে হাসতে, ” তা তো আমি জানি না।
আচ্ছা তুমি থাকো আমি একটু আসছি। ”

কথাটা বলেই খালামনি চলে যেতেই অধরা কিছু একটা ভেবে ধীরে ধীরে উঠে আশ্বিনের সামনে আসে। আশ্বিন তখন অর্ণবের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো। হঠাত অধরা তার সামনে এসে,

— ” এই ছেলে…! হ্যা, তোমাকেই বলছি। তুমি কি আমার বর হবে? আমি বড় হয়ে কিন্তু তোমাকেই বিয়ে করবো। ”

অধরার কথা শুনে আশ্বিন আর অর্ণবের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। অধরা স্বাভাবিক ভাবেই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
এক পর্যায়ে আশ্বিন আর অর্ণব একসাথে হেসে ওঠে। অধরা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে,

— ” তোমরা এভাবে হাসছো কেনো? আমি সত্যি সত্যি বলেছি কিন্তু। ”

আশ্বিন আর অর্ণব একসাথে হেসে যাচ্ছে। এদিকে তাদের এমন ভাবে হাসতে দেখে অধরা ঠোঁট উল্টে কান্না করতে করতে সেখান থেকে চলে যায়। অধরাকে এভাবে কান্না করতে দেখে আশ্বিনের কিছুটা খারাপ লাগলেও সে আর কিছুই বলেনি।

সেদিনের পর থেকে আর কখনো অধরার সাথে আশ্বিনের দেখা না হলেও অর্ণবের ফোনে অধরার ছবি অনেক দেখেছে আশ্বিন।
কে জানতো পিচ্চিটার কথা একদিন সত্যি হবে, আশ্বিনের সাথে অধরার বিয়ে হবে।
অধরার হয়তো সেই দিনের কথাগুলো এখন আর মনে নেই।

🌻বর্তমানে🌻

আশ্বিন এতোক্ষণ এক ধ্যানে অধরার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবছিলো।

হঠাত একটা কল আসায় আশ্বিন ফোন রিসিভ করে একটু দূরে যেতেই অধরা ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসে।

এদিকে, আশ্বিন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা কথা শুনেই দৌড়ে নিচে নেমে আসে। আশ্বিনকে এভাবে নিচে যেতে দেখে অধরাও দৌড়ে তার পিছু নেয়।

— দাদি আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে, ” কি হয়েছে দাদুভাই? এভাবে অস্থির হয়ে আছিস কেনো? ”

আশ্বিন দৌড়ে নিচে নেমে টিভি অন করতেই দেখে পুরো নিউজ চ্যানেল জুড়ে দেখানো হচ্ছে,
” আশ্বিন চৌধুরীর ফ্যাক্টরীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। ”

নিউজ দেখে অধরা দাদি আর আশ্বিন স্তব্ধ হয়ে যায়।

— দাদি কাপা কাপা কণ্ঠে, ” এসব কি বলছে আশ্বিন? আমাদের ফ্যাক্টরী…। এসব কিভাবে..? ”

— আশ্বিন কোনমতে নিজেকে সামলে নিয়ে, ” দাদি প্লিজ তুমি এতো টেনশন করো না। আমি বিষয়টা দেখছি। তুমি শান্ত হও। সব ঠিক হয়ে যাবে।
অধরা দাদিকে দেখে রাখো। আমি আসছি। ”

কথাটা বলেই আশ্বিন দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়। এদিকে অধরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

🌻এদিকে🌻

অনুরিমা টিভিতে নিউজটা দেখেই স্তব্ধ হয়ে যায়। আর শাহিন আর সাহিল নিউজ দেখে মুচকি হাসি দেয়।

— অনুরিমা সাহিলের দিকে তাকিয়ে, ” সাহিল… এসব কি? এখানে কোনভাবে তোমার হাত নেই তো? ”

— সাহিল ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে, ” মম.. আমি কি করেছি? তোমার কেনো মনে হচ্ছে এসব আমি করেছি? ”

— অনুরিমা অস্থির হয়ে, ” সাহিল…। ”

— শাহিন তাকে থামিয়ে দিয়ে, ” অনুরিমা, তুমি কিভাবে সাহিলকে এর জন্য দায়ী ভাবতে পারো?
তোমার ছেলে নিজের ফ্যাক্টরী সামলাতে পারেনি এখানে আমার ছেলের কি দোষ?
অবশ্য এটাই হওয়ার ছিলো, অল্প বয়সে বেশি নাম ডাক হয়ে গেলে এমনই হয়। ”

কথাটা বলে শাহিন আর সাহিল সেখান থেকে চলে যায়। অনুরিমা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।

— ” কোন সন্দেহ নেই সাহিল অধরাকে পাওয়ার জন্যই আমার আশ্বিনের সাথে এমনটা করেছে।
আমি এখন কি করবো? সাহিল কিভাবে এমনটা করলো…। ”

🌻🌻

অধরা আর দাদি পাশাপাশি বসে আছে। দাদি অনেক বেশি টেনশন করায় একটু অসুস্থ হয়ে গিয়েছে। অধরা কোনভাবে দাদিকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে।

অধরা কিছু একটা ভেবে জনিকে কল দেয়। কল রিসিভ হতেই…

— ” হ্যালো জনি ভাইয়া। ”

— ” হ্যা ছোট মনি। কি খবর?
নিউজে এসব কি দেখছি? ”

— ” হুম। ভাইয়া আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে এই অগ্নিকাণ্ড পূর্ব পরিকল্পিত। যেভাবেই হোক খোঁজ খবর নিয়ে আসল অপরাধীর নাম জানতে হবে ভাইয়া।
আপনি এখনি খোঁজ নেওয়া শুরু করুন। তবে, বিষয়টা যেনো গোপন থাকে। ”

— ” ঠিক আছে। আমি দেখছি কী করা যায়।
আর আমার কিছু কথা ছিলো ছোট মনি। ”

— ” জি বলুন…। ”

— ” আমার মনে হচ্ছে আজকের এই অগ্নিকাণ্ডে কোনো না কোনো ভাবে শাহিন হাসাদের হাত আছে। ”

— ” শাহিন হাসাদের? কিন্তু উনি এমন কেনো করবেন? ”

— ” ছোট মনি, হতে পারে এটা পূর্ব পরিকল্পিত কোন ষড়যন্ত্র। আমার মনে হচ্ছে শাহিন কোন না কোন ভাবে আশ্বিনকে বড় ধরনের বিপদে ফেলতে চাইছে।
কারণ আশ্বিন দিন দিন বিজনেসে উনার সমতুল্য হয়ে যাচ্ছে। হয়তো এই কারণেই…। ”

— ” কথাটা একদম অস্বীকার করার মতো না। আপনি এই বিষয়ে আরো খোঁজ নিতে শুরু করুন। আমি কোনভাবেই শাহিনের মাধ্যমে আশ্বিনকে আর কষ্ট পেতে দিবো না। ”

— ” ঠিক আছে ছোট মনি। ”

কথাটা বলেই অধরা ফোন কেটে দেয়। গভীর ভাবে কিছু একটা ভেবে…

— ” নতুন করে কি করতে চাইছেন উনি? আশ্বিনের সাথে গেইম খেলতে চাইছে? ওকে ফাইন, আমিও দেখিয়ে দিবো, অধরা ওহি কি করতে পারে। ”

—চলবে❤