আমি তোমার গল্প হবো পর্ব-১২

0
619

#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::১২

🌻পরদিন🌻

অধরা আর তিশা একসাথে কলেজে বসে আছে। তিশা একা একা এটা সেটা বলেই যাচ্ছে আর অধরা এক ধ্যানে কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসি দিচ্ছে।

— তিশা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে, ” কিরে? এভাবে একা একা হাসছিস কেনো? আবার কি কান্ড করে এসেছিস? ”

— অধরা তিশার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে, ” সময় হোক, জানতে পারবি। ”

অধরার কথা শুনে তিশা ভ্রু কুঁচকে তাকায় অধরা বাঁকা হাসি দিয়ে বইয়ের দিকে মনোযোগ দেয়।

🌻এদিকে🌻

আশ্বিন শাহিন সহ আরো কয়েকজন বিজনেস ম্যানদের নিয়ে একটা মিটিং রাখা হয়েছে। ডিলাররা সবাই এটা সেটা নিয়ে আলোচনা করছে।

— ” যেমনটা আপনারা বুঝতে পারছেন, আমরা একজন ভালো ডিলারকেই আমাদের এই প্রোজেক্ট দিতে চাচ্ছি। আমরা সবার সাথেই এই বিষয়ে কথা বলেছি, সবার মতামত জেনেছি। এখন আমরা আমাদের নিজেদের মত প্রকাশ করছি…। ”

কথাটা শুনে শাহিন হাসাদ একটা বাঁকা হাসি দিয়ে আশ্বিনের দিকে তাকায়। আশ্বিন চুপচাপ বসে আছে।

— ” আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমরা এই প্রোজেক্ট মিস্টার আশ্বিন চৌধুরীকেই দিতে চাই।
কেননা মিস্টার আশ্বিন চৌধুরী একজন নতুন বিজনেস ম্যান হলেও তিনি নিজেকে অনেকটাই সফল করতে পেরেছেন।
তাই আমরা উনার কাছে ভালো কিছুই আশা করি। ”

— আশ্বিন খুশি হয়ে, ” অনেক ধন্যবাদ। আশা করি আমি ভালোভাবে প্রোজেক্ট পরিচালনা করতে পারবো। ”

এদিকে শাহিন হাসাদ রাগী চোখে একবার আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

— শাহিন নিজের অফিসে এসে, ” কিভাবে? এটা কিভাবে সম্ভব? এতোগুলো টাকার অফার দেওয়ার পরেও কিভাবে তারা ডিলটা আশ্বিনকে দিয়ে দিলো? ”

— সাহিল অবাক হয়ে, ” এর মানে কি ড্যাড? এতোটা প্ল্যান করার পরেও আশ্বিন কিভাবে ডিলটা পেলো? ”

” আশ্বিন চৌধুরী তার নিজ যোগ্যতায় ডিলটা পেয়েছে, মিস্টার শাহিন হাসাদ। ”

হঠাত কারো কণ্ঠ শুনে শাহিন আর সাহিল পিছনে ফিরে দেখে অধরা দরজার সামনে মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে আছে।
অধরা কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ভেতরে প্রবেশ করে চেয়ারে বসে পড়ে।

— শাহিন অবাক হয়ে, ” অধরা! তুমি এখানে? ”

— অধরা মুচকি হেসে, ” মিষ্টি নিয়ে আসলাম। আশ্বিন এতো বড় একটা ডিল পেলো মিষ্টি না দিয়ে হয় নাকি?
আজ আমি অনেক খুশি, অবশ্য একটু খারাপও লাগছে। এতো চেষ্টা করেও আশ্বিনকে হারাতে পারলেন না।
কতো টাকা যেনো অফার করেছিলেন? আশ্বিনের তিনগুণ রাইট? ”

— সাহিল অবাক হয়ে, ” তুমি এসব কিভাবে….? ”

— অধরা বাঁকা হাসি দিয়ে, ” কি ভেবেছিলেন? আশ্বিনকে সবসময় কষ্ট দিবেন আর নিজেরা জিতে যাবেন?
এতোদিন ধরে হয়তো আশ্বিনের সাপোর্টে কেউ ছিলো না বাট এখন আমি আছি। ”

— শাহিন হাসতে হাসতে, ” তুমি?
তুমি আছো সাপোর্টে?
হুহহ, আচ্ছা শুনি তো কি কি করতে পারো তুমি? ”

— অধরা একটা বাঁকা হাসি দিয়ে, ” এখনও বুঝতে পারছেন না? এতো ভালো অফার দেওয়ার পরেও কেনো ডিলটা পেলেন না? ”

অধরার কথা শুনে শাহিন আর সাহিল অবাক হয়ে যায়। অধরা তাদের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দেয়…

🌻ফ্লেশব্যাক🌻

ক্লায়েন্টরা একটা কফি শপে বসে আছে। হঠাত জনি আর অধরা তাদের সামনে এসে বসে।

— ক্লায়েন্টদের একজন, ” অধরা মামুনি, হঠাত আমাদের এখানে ডাকলে। কোন সমস্যা? ”

— অধরা মুচকি হাসি দিয়ে, ” তেমন কিছু না আঙ্কেল। শুনেছি কাল শাহিন হাসাদের সাথে গোপন বৈঠক করে আমার স্বামীর বিপক্ষে ডিল করেছেন? ”

— থতমত খেয়ে, ” এসব কি বলছো মামুনি? আমরা কখনোই এমন করতে পারি না। তুমি তো জানোই আমরা সৎ এবং যোগ্য ব্যক্তিকেই ডিল দিয়ে থাকি। আশ্বিন চৌধুরীর বিপক্ষে আমরা কেনো যাবো? ”

অধরা বাঁকা হেসে নিজের ফোনটা নিয়ে তাদের সামনে ধরে একটা ভিডিও দেখিয়ে…

— ” কিন্তু এই ভিডিওটা তো অন্য কথা বলছে আঙ্কেল। তিনগুণ টাকার কাছে নিজেদের ডিল বিক্রি করছেন।
জনি ভাইয়া, ভিডিওটা ভাইরাল হলে কেমন হবে? ”

— জনি মুচকি হেসে, ” ভালোই হবে ছোটমনি। তাদের আসল চেহারা সবার সামনে চলে আসবে। আর তারপর…। ”

— ক্লায়েন্টরা স্তব্ধ হয়ে, ” নাহহ।
অধরা মামুনি এমন করো না প্লিজ। নাহয় আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। ”

— ” হুম। তাহলে আজকে মিটিংয়ে আশ্বিনের বিপক্ষে কোন ধরনের কাজ করলে…। ”

— ” নাহহ। আমরা আশ্বিনকেই এই প্রোজেক্ট দিবো। কারণ সেই এই প্রোজেক্টের যোগ্য। ”

— অধরা জনির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে, ” গুড। ”

বর্তমানে…

অধরার কথা শুনে শাহিন আর সাহিল অবাক হয়ে যায়। অধরা মিষ্টির প্যাকেট শাহিনের সামনে রেখে বাঁকা হাসি দিয়ে…

— ” অধরাকে ছোট ভেবে ভুল করবেন না মিস্টার শাহিন হাসাদ। কারণ, অধরা যদি একবার গেইম খেলতে শুরু করে তখন আপনারা নিজেদের অস্তিত্বই আর খুঁজে পাবেন না। ”

কথাটা বলেই অধরা রুম থেকে বেরিয়ে যায়। শাহিন আর সাহিল হা করে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

🌻🌻

বাসায় আসতেই অধরার ফোন বেজে ওঠে। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে অর্ণব। অধরা খুশি হয়ে ফোন রিসিভ করতেই…

— ” ভাইয়া, কেমন আছো? ”

— ” বোন, আমি ভালো আছি। তুই কেমন আছিস? ”

— ” ভালো না।
এতোদিন পর তুমি আমার খোঁজ নিচ্ছো। তুমি আমাকে ভুলেই গিয়েছিলে তাই না? এক তো জোর করে বিয়ে দিয়েছো এখন আমার কথাই ভুলে গিয়েছো। ”

— ” কি বললি? তোর কথা কি ভুলে যাওয়া যায়? আমার একটা মাত্র বোন তুই। আর জোর করে বিয়ে দিয়েছি মানে? অধরা তুই কাকে বোকা বানাচ্ছিস? তোর বিয়ের রহস্য আর কেউ না জানলেও আমি কিন্তু জানি। ”

— অধরা একটা কাশি দিয়ে, ” ইয়ে মানে, আচ্ছা এই কথা বাদ দাও। হঠাত ফোন দেওয়ার কারণ কি…? ”

— ” ওহ হে। কণার বিয়ে ঠিক হয়েছে। দুদিন পর এনগেস্টমেন্ট। তাই আমি আর কণা এসে কাল তোকে নিয়ে যাবো। আশ্বিনকে আমি বলে রেখেছি। ”

— ” সত্যি?? তাহলে তো খুব ভালো হবে। কাল তাড়াতাড়ি চলে এসো। ”

— ” ঠিক আছে বোন। বাই। ”

অধরা কথা বলে ফোন রেখে নাচতে নাচতে ওয়াশরুমে চলে যায়। লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে অধরা রুমে আসতেই দেখে আশ্বিন সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।

— অধরা একটা হাসি দিয়ে, ” আরে, আপনি কখন আসলেন? ”

— আশ্বিন অধরার দিকে তাকিয়ে মজা করে, ” ওহ, তুমি তাহলে বেঁচে আছো। না মানে, এতোক্ষণ ধরে তুমি ওয়াশরুমে ছিলে তো। তাই ভাবলাম…। ”

আশ্বিনের কথা শুনে অধরা চোখ ছোট করে একটা ভেংচি কেটে আয়নার সামনে এসে চুল মুছতে শুরু করে। এদিকে আশ্বিন ঘোর লাগা চোখে অধরার দিকে তাকিয়ে…

🎶 আয়নাকে ওই মুখ দেখবে যখন
কপলের কালো তিল পড়বে চোখে
ফুটবে যখন ফুল বকুল শাখে
ভ্রমর যে এসেছিলো জানবে লোকে 🎶

আশ্বিনের গান শুনে অধরা পিছনে ফিরে মুচকি হাসি দেয়।

— আশ্বিনের সামনে এসে, ” ভাইয়া ফোন দিয়েছিলো আপনাকে? ”

— ” হুম দিয়েছিলো। কাল তোমাকে এসে নিয়ে যাবে। ”

— ” আপনি আর দাদি যাবেন না? ”

— ” না। নতুন প্রোজেক্টের কাজ অফিসের স্টাফদের বুঝিয়ে দিতে হবে। সমস্যা নেই, আমি দাদিকে নিয়ে ফাংশনের দিন চলে আসবো। তারপর ফাংশন শেষে একসাথে চলে আসবো। ”

— ” কিহহহ? আমি তো সাতদিন আগে আসবোই না। এতোদিন পর যাচ্ছি। ”

— ” দেখো অধরা জেদ করো না। চলে আসবে আমার সাথে। কথা শেষ। ”

— ” না না না। আমি আসবো নাহহহ। ”

অধরার চিৎকার শুনে দাদি রুম প্রবেশ করে..

— ” কি হয়েছে? অধরা এভাবে চিৎকার করছিস কেনো? ”

— অধরা দাদির কাছে এসে, ” দাদি দেখো আমি বাসায় গিয়ে সাতদিন থাকতে চেয়েছি বলে উনি কেমন করছেন। ”

— দাদি আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে, ” কি ব্যাপার আশ্বিন? বউয়ের প্রতি এতো ভালোবাসা কবে হলো যে সাতদিনের জন্যও যেতে দিচ্ছিস না। ”

— আশ্বিন থতমত খেয়ে, ” আরে কিসব বলছো দাদি? তোমার আদরের বউমা যে একটা পড়া চোর ভুলে গিয়েছো? তার কলেজ মিস যাবে আর তুমিও তো একা হয়ে যাবে। ”

— ” তোকে এতো কিছু ভাবতে হবে না। অধরা তার বাসায় গিয়ে সাতদিন থাকবে। কথা শেষ। ”

দাদির কথা শুনে অধরা দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে আশ্বিনকে একটা ভেংচি কাটে।

—চলবে❤