আমি তোমার গল্প হবো পর্ব-২০

0
592

#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::২০

🌻দুদিন পর

সকাল থেকেই অধরা একমনে বই পড়ে যাচ্ছে। আশ্বিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে অধরার দিকে তাকিয়ে,

— ” হুহহ, সারা বছর পড়ার নাম নেই। আর এখন পড়ে উনি একদম বিশ্ব জয় করে ফেলবেন। ”

— অধরা আড়চোখে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে, ” দেখতেই তো পারছেন একটা মানুষ মন দিয়ে পড়ার চেষ্টা করছে, তাকে এভাবে বিরক্ত করছেন কেনো? ”

অধরা কথাটা বলে আবার পড়ায় মনোযোগ দেয়। এদিকে আশ্বিন অধরার কথা শুনে অনেক কষ্টে নিজের হাসি থামিয়ে রেখেছে।

— ” হয়েছে আর পড়তে হবে না। কিছুক্ষণ পর থেকে পরীক্ষা শুরু হবে। যাও গিয়ে রেডি হয়ে নাও। ”

অধরা এক নজর আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে রেডি হতে চলে যায়। আশ্বিন অধরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়।

কিছুক্ষণ পর অধরা রেডি হয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলে চিরুনি করতে থাকে। হঠাত আশ্বিন এসে অধরার পিছনে দাঁড়িয়ে অধরার চুলে বেণী করতে শুরু করে।
অধরা কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে পর মূহুর্তে মুচকি হাসি দেয়।

🌻🌻

আশ্বিন অধরাকে নিয়ে তার কলেজের সামনে এসে,

— ” যাও।
ভালো মতো ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষা দিবে, বুঝেছো? আর পরীক্ষা শেষে একা একা চলে যাবে না। আমি আসবো তোমাকে নিতে। ”

— ” ঠিক আছে। ”

কথাটা বলেই অধরা কলেজে প্রবেশ করে। আশ্বিন তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে পাশে ফিরে একজনের দিকে তাকায়, সেও আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে একটা চোখের ইশারা দেয়। তা দেখে আশ্বিন গাড়িতে উঠে বসে।

আশ্বিন অফিসে প্রবেশ করতেই দেখে অর্ণব বসে আছে।

— ” এতোক্ষণ পর তাহলে আসলি। ”

— ” হুমম। অধরাকে কলেজে রেখে আসলাম। আজ থেকে তো তার পরীক্ষা।
আল্লাহ জানেন, কেমন পরীক্ষা দেয়। ”

— অর্ণব মুচকি হেসে, ” আমার বোনের রেজাল্ট সব সময়ই ভালো হয়। তুই এতো চিন্তা করিস না তো। ”

— আশ্বিন হালকা হেসে, ” যে কিনা বিয়ে হয়েছে বলে বই খাতা সব বিক্রি করে দেয়, তার রেজাল্ট হবে ভালো? হাস্যকর। ”

— অর্ণব মুচকি হেসে, ” হুহহ। বন্ধু, অধরাকে তুই এখনও চিনতে পারিসনি। ”

— ” মানে? চিন্তে পারিনি মানে? ”

— ” তোর কি মনে হয়? অধরা সত্যিই তার বই খাতা বিক্রি করে দিয়েছিলো?
এখনো জানিস না তুই…? ”

— ” কি জানবো আমি? তুই সোজাসুজি বল আমাকে। ”

— ” আরে আশ্বিন, অধরা তোকে মিথ্যা বলেছিলো।
তার সব বই খাতা বাসার স্টোর রুমে রাখা আছে। সে এসব বলে তোকে পরীক্ষা করতে চেয়েছিলো। ”

— ” পরীক্ষা মানে? কিসের পরীক্ষা? ”

— অর্ণব কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে, ” তোর মনে আছে ছোটবেলার কথা যেদিন অধরা তোকে বলেছিলো সে তোকে বিয়ে করবে। ”

আশ্বিন কথাটা শুনে একটা মুচকি হেসে মাথা নেড়ে হ্যা বোঝায়।

— ” অধরা তখন অনেক ছোট ছিলো তবুও সে ভেবেই নিয়েছিলো বড় হয়ে তোকে বিয়ে করবে। তারপর একটু বড় হয়ে যখন বুঝতে শিখলো তখন থেকেই তোর প্রতি তার একটা অদ্ভুত আগ্রহ ছিলো, তোর লাইফ স্টাইল কেমন? কিভাবে সবার সামনে নিজেকে প্রেজেন্ট করিস এসব নিয়ে দিনদিন তোর প্রতি তার ভালোলাগা বাড়তে থাকে।
আর তারপর শুরু হয় তোর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা। কে তাকে হেল্প করতো জানিস?
জনি। হ্যা, জনিই অধরাকে তখন থেকে তোর সব ইনফরমেশন কালেক্ট করে দিতো। ”

— আশ্বিন অবাক হয়ে, ” কি বলিস এসব? আমি তো এর কিছুই জানি না। ”

— ” আরে এখনি অবাক হয়ে যাচ্ছিস? এখনো তো কিছু বলা শুরুই করিনি।

অধরা জনির হেল্প নিয়ে তোর সম্পর্কে সব তথ্য সংগ্রহ করতো। কিভাবে পড়ালেখার পাশাপাশি তুই আঙ্কেলের বিজনেস হ্যান্ডেল করছিস, কবে কোথায় ট্যুরে যাচ্ছিস।
এমনকি তোকে কয়জন মেয়ে পছন্দ করতো। কয়জন মেয়ে তোকে ভালোবাসি বলেছে, এটা হয়তো তুই না জানলেও অধরা ঠিকই জানতো। ভাবা যায়? ”

অর্ণবের কথাগুলো শুনে আশ্বিন বাকশক্তি হারিয়ে ফেলার মতো করে তাকিয়ে আছে। অর্ণব আশ্বিনকে এভাবে দেখে হালকা হেসে,

— ” আর সব থেকে বড় যেটা করেছে,
সেদিন যখন দাদুভাই বাসার সবাইকে ডেকে বলেছিলো আশ্বিন চৌধুরীর সাথে কণার বিয়ে ঠিক করেছে। সেদিন তো অধরার কান্না দেখে কে? আমি আর কণা কতো বোঝালাম, কিন্তু কাজ হয়নি।
তারপর তো অধরাই সব প্ল্যান করে তোর সাথে কণার বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে। যদিও অধরার প্ল্যানের কথা আমি আর কণা আগে থেকেই জানতাম। ”

— আশ্বিন চোখ বড় করে তাকিয়ে, ” কিহহহ? এসব কিছু তোরা প্ল্যান করে করেছিস?
তাহলে অধরা বারবার কেনো বলে তাকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। ”

— ” ড্রামা কুইন একটা। সব তো তার ইচ্ছাতেই হয়েছে।
অধরা ভেবেছিলো তুই হয়তো তাকে বলবি এই বিয়ে তুই মানিস না। তাছাড়া দাদু ভাইকে সে বোঝাতে চেয়েছিলো তাকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে,তাই সে আর পড়ালেখা করতে চায় না, তারপর প্ল্যান করে বই গুলো স্টোর রুমে লুকিয়ে রেখেছিলো। ”

— আশ্বিন অবাক হয়ে, ” এতো কিছু করে ফেললো অথচ আমরা বুঝতেই পারলাম না। ”

— ” হুহহ। আশ্বিন, অধরার এই সবকিছু কাজের মূলে আসল কথা হলো, সে তোকে অনেক ভালোবাসে। ভাই আমার, তাকে কখনো ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে দিসনা। অধরাকে যত্ন সহকারে নিজের বুকে আগলে রাখিস।
কারণ ভালোবাসা সবার জীবনে আসে না। ”

অর্ণব কথাটা শেষ করে মুচকি হাসি দেয়। আশ্বিনও তার কথা শুনে মুচকি হেসে মাথা নেড়ে হ্যা বোঝায়।

🌻রাতে🌻

অধরা বই নিয়ে একমনে পড়ছে। আর আশ্বিন তার পাশে বসে কফি খেতে খেতে ল্যাপটপে কাজ করছে।
মূলত এই মুহূর্তে তার মাথায় অর্ণবের বলা কথাগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে।

— অধরা বিরক্ত হয়ে, ” উফ কতক্ষণ ধরে পড়ছি। এখন আমার অনেক বিরক্ত লাগছে। এতো পড়া যায় নাকি? ”

— আশ্বিন ঘোরের মধ্যে, ” তাহলে চলো কিছুক্ষণের জন্য ছাদে যাই। ”

আশ্বিনের কথা শুনে অধরা অবাক হয়ে তাকায়। সে যেনো বিশ্বাসই করতে পারছে না।
তাই তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে আশ্বিনের হাত ধরে ছাদে চলে আসে।

আশ্বিন অধরাকে নিয়ে ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। হালকা একটা বাতাস চারদিকে বয়ে যাচ্ছে।

— অধরা মুচকি হেসে আকাশের দিকে তাকিয়ে, ” আজকের চাঁদটা অনেক সুন্দর তাই না? ”

— আশ্বিন মুচকি হেসে, ” আমার চাঁদ তো আমার কাছে সবসময়ই সুন্দর। ”

আশ্বিনের কথা শুনে অধরা তার দিকে ফিরে তাকায়। আশ্বিন অধরার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দেয়। তা দেখে অধরা মুচকি হাসে।

— ” তারপর বলুন, কোন খোঁজ পেয়েছেন নানাভাইয়ের? ”

— ” নাহ। আমি আমার কিছু লোক আর জনিকে দায়িত্ব দিয়েছি আবার নিজেও অনেক খুঁজে যাচ্ছি। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। হয়তো অনুরিমা মিথ্যা বলেছে। ”

— ” তো কি হয়েছে আজ খুঁজে পাননি? আপনি খোঁজ চালিয়ে যান। আমার মনে হয় আমরা খুব শীঘ্রই নানাভাইকে পেয়ে যাবো। ”

— ” হুমম ইনশাআল্লাহ।
আর তুমি এসব নিয়ে একদম ভাববে না, বুঝেছো? ভালোমতো পরীক্ষা দাও আগে। আমি আর অর্ণব আছি। আমরা সব সামলে নিবো। ”

— ” হুমম। ঠিক আছে। ”

অধরা কথাটা বলে চুপ হয়ে যায়। আশ্বিনও আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়। বেশ কিছুক্ষণ দুজন নিরব থাকে।
হঠাত আশ্বিন অধরার দিকে এগিয়ে আসে…তা দেখে অধরা স্তব্ধ হয়ে যায়। তার হৃৎস্পন্দন ক্রমান্বয়ে বাড়তে শুরু করে।

আশ্বিন অধরার কাছে এসে তার মুখের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে অধরার দুইগালে হাত রেখে,

— ” অধরা,
তুমি আমার জীবনে হুট করে এসে অজান্তেই আমার অভ্যাসে মিশে গিয়েছো। যাকে এখন আমার প্রতিটি মূহুর্তে পাশে চাই। আমি চাই তোমার সাথে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পাশে থাকতে।
আমরা নাহয় একসাথেই বুড়ো হবো। ”

কথাটা শুনে দুজন একসাথে হেসে ওঠে।

— ” অধরা আমি জানি আমার মা যেভাবে আমার বাবাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো তুমি তা কখনোই করবে না। আমার বিশ্বাস আছে তোমার উপর। তুমিও আমার এই বিশ্বাস ধরে রেখো।
জানি না কখন কিভাবে মনের অজান্তেই তোমাকে মন থেকে ভালোবেসে ফেলেছি অধরা। সত্যিই অনেক ভালোবাসি তোমায়। আমার জীবনের এই নামহীন গল্পে…। ”

— অধরা আশ্বিনকে থামিয়ে, ” আমি তোমার গল্প হবো। ”

অধরার কথাটা শুনে আশ্বিন মুচকি হেসে আলতো করে অধরার কপালে চুমু দেয়। অধরাও মুচকি হেসে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে থাকে।

—চলবে❤