আমি ফাইসা গেছি পর্ব-৬+৭

0
206

#আমি_ফাইসা_গেছি(০৬)
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

তোড়া তার দুই হাত দিয়ে কুশানের মাথার চুল টেনে ধরে চিৎকার করে বললো, তুই আমার পিছে পিছে কেন এসেছিস?এসব আজাইরা দরদ দেখাবি না আমাকে খবরদার।তোর বোন আর মা যখন আমাকে উল্টাপাল্টা কথা বলতেছিলো তখন কি করেছিলে?
কুশান তখন বললো তোড়া ব্যাথা পাচ্ছি আমি।চুল ছেড়ে দাও আমার।
–না,দেবো না ছেড়ে।তোর মা আর বোনের উপর হওয়া রাগ সব আমি তোর উপর ঝাড়বো।তুই যে এতো টা বলদ সত্যি আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।এই বলদটার সাথে আমি কোন দুঃখে প্রেম করতে গিয়েছিলাম?এখন তো আমার মরতে ইচ্ছে করতেছে।

কুশান তখন বললো আমি আমার আম্মু আর বোনের মুখে মুখে কোনো তর্ক করতে পারি না।এখন আমি কি করতে পারি?

তোড়া তখন কুশানের চুলগুলো আরো জোরে জোরে টানতে লাগলো।আর বললো,তোকে তর্ক করতে বলেছে কে?তুই কি ন্যায় অন্যায় বুঝিস না?তুই ন্যায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করবি।সবাই যে আমাকে অপমান করে করে কথা বলছে সেটা শুনতে কি তোর খারাপ লাগে না?তোর কি কষ্ট হয় না?এটা তোর কিসের ভালোবাসা?সত্যি করে বল দেখি আদৌ কি তুই আমাকে ভালোবাসিস?না আমি মরিচীকার পিছনে পড়ে আছি।

হঠাৎ কামিনী প্রবেশ করলো রুমে।আর তিনি যখন দেখলেন তোড়া কুশানের চুল ধরে টানছে তখন কামিনী চিৎকার করে বললো,এই মেয়ে কি করছো এটা?
তোড়া কামিনী কে আসা দেখে একদম হতভম্ব হয়ে গেলো।সে এই মুহুর্তে কি করতে পারে?এদিকে কুশানের তো ভয়ে কাঁপা-কাঁপি উঠে গেছে।নিশ্চয় তার আম্মু আবার তোড়াকে অপমান করবে।

কিন্তু তোরা কামিনী কে না দেখার ভার করে
ধীরে ধীরে তার মুষ্টি খুললো।তারপর আলতো করে চুলগুলো ধরে বললো,
কি অবস্থা হয়েছে চুলগুলোর?আজকেই সেলুনে যাবে।বুঝেছো?

কামিনী তখন বললো এই মেয়ে চুল ধরতেছো কেনো বাবুর?ও ব্যাথা পাবে।চুল ছেড়ে দিয়ে কথা বলো।

তোড়া তখন তাড়াতাড়ি করে কুশানের চুল ছেড়ে দিয়ে বললো,আম্মু আমি তো ওকে চুলগুলো কাটার জন্য বলছিলাম।দেখো না কেমন বড় বড় হয়েছে চুল গুলো।

কামিনী তখন বললো সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।আমার বাবুর চুল কখন কাঁটতে হবে তা আমি ভালো করেই জানি।

তোড়া তখন বললো, হ্যাঁ সেটা তো ঠিকই আছে।কিন্তু এখন যেহেতু আমি ওর স্ত্রী। সেজন্য তো এখন আমাকেও ওর ব্যাপারে ভাবতে হবে।

কামিনী তখন বললো স্বামীকে নিয়ে কেমন ভাবো তা তো দেখতেই পারছি।বাবু যে এখন পর্যন্ত সকালের নাস্তা খায় নি সে খেয়াল আছে তোমার?ঘরের মধ্যে বসে থাকলে বাবুর কি পেট ভরবে?আসছে বাবুর দরদ দেখাতে।আজাইরে।কথায় আছে না মায়ের থেকে মাসীর দরদ বেশি।
এই বলে কামিনী কুশানকে সাথে করে নিয়ে আবার ডাইনিং টেবিলে আসলো।আর নিজের হাতে খাইয়ে দিতে লাগলো।

কুশান তখন কামিনীর হাত সরিয়ে দিয়ে বললো, আম্মু আজ আমি নিজের হাতে খাবো।তোমাকে খাওয়াতে হবে না।

কামিনী তখন তার ভ্রু উল্টিয়ে বললো,কি বলছিস?তুই কি আমার উপর রাগ করেছিস বাবা?

কুশান তখন রাগ করে বললো হ্যাঁ করেছি।তোমরা তখন তোড়ার সাথে ওরকম বাজে ব্যবহার কেনো করলে?তোড়া ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।

কামিনী তখন বললো কখন বাজে ব্যবহার করলাম?ওকে তো শুধু বললো একটু পরে নাস্তা করতে।বাড়ির বউদের একটু দেরীতেই খেতে হয়।এতে দোষের কি দেখলি বাবা?

কুশান তখন বললো এখন তো ওর নাস্তা করা উচিত তাই না?ডেকে আনো ওকে।আমরা দুইজন একসাথে নাস্তা করবো।

কামিনী কুশানের কথা শুনে দাঁত কটমটিয়ে বললো,বাবু তুমি খেয়ে নাও।আমি বলছি গিয়ে।
এই বলে কামিনী আবার কুশানের রুমে গেলো।

এদিকে তোড়া গলা ছেড়ে দিয়ে জোরে জোরে কাঁদছে।সে ভাবতেই পারছে না কুশান এতো টা অপদার্থ?তার তো প্রতিবাদ করার কোনো ক্ষমতাই নাই।এই ছেলের কি দেখে সে পাগল হয়েছিলো?

হঠাৎ কামিনী প্রবেশ করলো রুমে।আর সে তোড়াকে বললো,এভাবে ঘরের মধ্যে বসে থাকলে কি পেট ভরবে?না চারটা খেতে হবে।যাও তাড়াতাড়ি নাস্তা করে নাও।নাস্তা খেয়ে তাড়াতাড়ি দুপুরের জন্য খাবার রেডি করো।

তোড়া এবার আর চুপ করে থাকতে পারলো না।সে তখন তার কান্না মুছিয়ে বললো,
আম্মু আমি কিন্তু এ বাড়ির কাজের মেয়ে না।যে আপনার হুকুম মতো আমাকে চলতে হবে।আমার যখন মন চাইবে তখন আমি নাস্তা করবো আর যখন মন চাইবে দুপুরের জন্য রান্না করবো।

কামিনী তখন রেগে গিয়ে বললো কি বললে তুমি?আমাকে তুমি এতো বড় কথা বললে?কামিনী তেড়ে আসতে ধরে থেমে গেলো।আর বললো,থাক এখন কিছু বলবো না।দুপুরে মেয়েরা যখন খেতে এসে খাবার রেডি পাবে না তখন দেখো কি করি?

তোড়া তখন বললো,কি করবেন?মারবেন আমাকে?আমার গায়ে যে হাত তুলবে তার হাত আমি একদম ভেঙ্গে ফেলবো।আর হ্যাঁ আপনার বাড়িতে আমি কাজ করার জন্য আর চারটা ভাত খাওয়ার জন্য আসি নি।ওরকম ডাল ভাত আমার বাড়িতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।আপনারা যেমন পায়ের উপর পা তুলে খান আমিও আজ থেকে তেমন পায়ের উপর পা তুলেই খাবো।কারণ আমি এ বাড়ির বউ।আপনাদের চাকরানী না।

কামিনী তখন বললো, ও মোর আল্লাহ। আমরা কি তাহলে ভুল মেয়ের সাথে কুশানের বিয়ে দিলাম?খুবই তো সহজ সরল মনে করেছিলাম একে।কিন্তু এ তো মোটেও সহজ সরল নয়।এই বলে কামিনী রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

কামিনী চলে যাওয়ার পর তোড়া আবার গলা ফাটিয়ে কাঁদতে লাগলো।সে বুঝতে পারছে না জেনেবুঝে কি করে এই জাহান্নামে সে পাঁ রাখলো।তার কপালে যে কি লেখা আছে তা উপরওয়ালা ছাড়া কেউ বলতে পারবে না।

হঠাৎ তোড়ার ফোনে কল বেজে উঠলো। তোড়া তখন তাড়াতাড়ি করে রিসিভ করলো ফোনটা।অপর পাশ থেকে তোড়ার আম্মু বললো,মা কেমন আছিস?

কেমন আছিস শুনেই তোড়ার আরো বেশি কান্না পেলো।সে যতই তার কান্না চেপে রাখতে চাইলো ততই তা আরো জোরে বের হয়ে আসলো।
চামেলি বেগম তখন বললো, মা তোড়া!কথা বলছিস না কেনো?
এরই মধ্যে আবার কুশান এলো খাবার নিয়ে।সে খাবারের প্লেট তোড়ার সামনে নিয়ে এসে বললো,আম্মু যে তোমাকে ডাকতে এলো গেলে না কেনো?
তোড়া কুশানের কথায় জবাব না দিয়ে চামেলি বেগম কে বললো,এই তো ভালো আছি আম্মু।তোমরা কেমন আছো?
–আমরা তো ভালোই আছি।কিন্তু তুই ছাড়া বাড়িটা একদম ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।

তোড়া তখন বললো এখন এভাবে বলছো কেনো?তোমরা তো এটাই চাইতে সবসময়।মাসের মধ্যে ১৫ দিনই পাত্রপক্ষের সামনে নিয়ে যেতে।যাতে তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যায়।এখন তো তোমাদের খুশি হওয়ার কথা।

চামেলি বেগম তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো,এভাবে বলিস না মা।মেয়েদের কে বাবা মা সব দিতে পারে কিন্তু তাদের ঘরে যে রাখতে পারে না।এটাই যে দুনিয়ার নিয়ম।

তোড়া তখন বললো মন খারাপ করো না আম্মু।এমনিতেই বললাম।আচ্ছা রাখছি এখন।পরে কথা বলবো।

–ঠিক আছে মা।ভালো থাকিস।

কুশান কে দেখে তোড়া বললো, খাবারের প্লেট ঘরের মধ্যে আনছো কেনো?যাও প্লেট রেখে আসো।

কুশান তখন একটু রুটি আর সবজি তোড়ার মুখের সামনে নিয়ে গিয়ে বললো হা করো। তোমার জন্য এনেছি খাবার টা।

তোড়া তখন চিৎকার করে বললো কুশান! যাবে আমার সামনে থেকে?

–না যাবো না।এই বলে সে জোর করেই তোড়ার মুখে ঢুকে দিলো খাবার।
তোড়া এখন না পারছে খেতে না পারছে ফেলে দিতে।সে খাবার মুখে নিয়ে বললো,আমি খেতে পারি এক শর্তে।

–সবসময় এতো শর্ত জুড়িয়ে দাও কেনো?এই বলে কুশান আরো একবার খাবার তুলে দিলো তোড়ার মুখে।

তোড়া তখন বললো,কুশান!প্লিজ থামাও তোমার এসব ভন্ডামি।আমাকে কিন্তু ভালো লাগছে না কিছু।

কুশান তখন বললো ওকে।বলো তোমার কি শর্ত?

তোড়া তখন বললো,এতোদিন তো অনেক মিথ্যা কথা বলেছো।আজ কিছু সত্য কথা বলবে আমাকে?

–হ্যাঁ বলবো।তার আগে খাবার টা শেষ করো।

তোড়া তখন বললো কেনো ভয় লাগতেছে আম্মুকে?বউ কে খাওয়ানো দেখলে তো তোমার মায়ের প্রেসার আরো হাই হয়ে যাবে।

কুশান তখন বললো কাজের কথা বলো।

— তুমি তো জব করো না।তাহলে করো টা কি?আজ একদম সত্য কথা বলবে।

;কিছুই করি না।আম্মু আমাকে কোনো চাকরিই করতে দেয় না।

তোড়া তখন বললো এই একদিনে যা বুঝলাম,তোমাদের পুরো ফ্যামিলিকে মেইনটেইন করে তোমার আম্মু আর বোনেরা।

–হ্যাঁ।

–কিন্তু তোমার বাবার ব্যবসা তো সবার আগে তোমার সামলানো উচিত।তুমি ঘরে এভাবে মেয়ে মানুষের মতো কেনো বসে থাকো?

কুশান তোড়ার মুখে আরো একবার খাবার তুলে দিলো আর বললো,সবাই ভাবে আমি এখনো ছোটো। আমি এসব ব্যবসা বানিজ্যের কিছুই বুঝবো না।

তোড়া তখন বললো তাহলে এতো ছোটো বাচ্চাকে ওনারা বিয়ে করালো কেনো?সারাবছর মায়ের আঁচলের তলে রাখলেই তো পারতো।

কুশান তখন বললো এটা আমাদের বংশের নিয়ম।আমাদের বংশে ছেলেমেয়েদেরকে খুব তাড়াতাড়িই বিয়ে দেওয়া হয়।আর আমাদের বংশের আরেকটা নিয়ম তা হলো এই বংশের কেউ বিয়ের আগে প্রেম ভালোবাসা করতে পারে না।সেজন্য আমি আমাদের প্রেম ভালোবাসা প্রকাশ করি নি।যার জন্য তুমি আমাকে শুধু শুধু ভুল বুঝছো।

তোড়া তখন চিৎকার করে বললো তাহলে প্রেম কেনো করেছিস?কেনো আমার জীবন টা এভাবে নষ্ট করলি?কেনো আমাকে প্রপোজ করলি?কেনো এতোদিন রিলেশন টা চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলি?প্রেম টা কি তোর কাছে ছেলে খেলা মনে হয়েছে?

কুশান তখন তোড়ার হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো, তোড়া প্লিজ বিশ্বাস করো আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।প্রথম ফোনে তোমার কথাবার্তা শুনে আমি একদম ফিদা হয়ে গিয়েছিলাম।তারপর প্রথম যেদিন দেখলাম সেদিন থেকে দিন রাত শুধু তোমার চেহারায় চোখের সামনে ভাসতো আমার।তখন একবারের জন্যও মনে হয় নি আমার মনে এসব প্রেম ভালোবাসার চিন্তা আনা যাবে না।আমার জন্য এসব প্রেম ভালোবাসা নয়।প্লিজ বিশ্বাস করো আমার ভালোবাসা কিন্তু মিথ্যে ছিলো না।

তোড়া তখন বললো এই চুপ কর।মেয়েদের মতো এতো ভ্যা ভ্যা করে কাঁদবি না।তুই আমারে যে ঠকায়ছিস তার জন্য জীবনেও মাফ পাবি না।তুই তো একটিবার সত্য কথাগুলো বলতে পারতি আমাকে।

কুশান তখন বললো সত্য কথা বললে তুমি ভালোবাসতে আমাকে?তুমি যদি শুনতে আমি একজন বেকার ছেলে তখন কি কথা বলতে?যদি শুনতে আমাদের পরিবারে এতোগুলো মেম্বার,যেখানে তিন বোন জামাই ই শশুড় বাড়ি থাকে তখন কি রাজি হতে?যখন শুনতে আমি আম্মু আর বোনের মুখের উপর কোনো কথা বলতে পারি না, পুরো সংসার মায়ের কথামতো চলে তখন কি একসেপ্ট করতে আমার ভালোবাসা?আমি তোমাকে হারাতে চাই নি তোড়া।প্লিজ ব্লিভ মি।এজন্য মিথ্যে কথা বলে পটিয়েছি।

তোড়া তখন বললো, তোমার ভালোবাসার এমন সস্তা গল্প আর বিশ্বাস করছি না আমি।তুমি যদি এতই ভালোবাসতে আমাকে তাহলে এভাবে অন্য মেয়েকে দেখতে যেতে না।শত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আমাকে বেছে নিতে।

কুশান তখন বললো দেখতেই তো পারছো আমার হাত পা বাঁধা।আম্মু আর বোনের মুখে মুখে তর্ক করতে পারি না।শুধু আমি না।আমাদের পরিবারের সবাই আম্মু আর আপুদের কথার উপর কথা বলতেই পারে না।

তোড়া তখন বললো, কি হবে বললে?আমি তো বলছি।কি করেছে তারা আমার সাথে?আজ থেকে তুই ও বলবি।যদি না বলিস তাহলে কিন্তু আমি তোকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যাবো।

কুশান এবার আর কোনো জবাব দিলো না।

তোড়া তখন বললো, আর একটা সত্য কথা বলবে?

কুশান তখন বললো আর আমি একটা মিথ্যা কথাও বলবো না।তোমার যা মন চায় জিজ্ঞেস করতে পারো তুমি।

–তুমি কি সত্যি অনার্স পাশ করেছো?না সেটা নিয়েও মিথ্যা কথা বলেছো?

কুশান তখন বললো আসলে আমি তোমার সাথে প্রেম করার সময় যা যা কথা বলেছি সবই মিথ্যায় বলেছি।

তোড়া অবাক হয়ে বললো মানে?

কুশান তখন বললো, আমি এখনো অনার্স শেষ করি নি।আমি এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে উঠেছি মাত্র।

তোড়ার আবার প্রচন্ড রাগ উঠলো।সে তখন দুই হাত দিয়ে আবার কুশানের চুলগুলো টেনে ধরে বললো,তুই পড়ালেখা নিয়েও মিথ্যা বলেছিস?ছিঃ ছিঃ ছিঃ।তুই তো এক নাম্বারের চিটার,বাটপার আর ফালতু একটা ছেলে।

হঠাৎ কামিনী আবার আসলো রুমে।কামিনী কে দেখামাত্র কুশান ভয়ে নিজের মুখে খাবার তুলে দিতে লাগলো।তোড়া তখন বললো কি হলো দাও আমাকে?এই বলে সে নিজেই কুশানের হাত টেনে নিলো তার মুখে।
কামিনী তা দেখে বললো, বাবু তুই তো নিজের খাবারই কখনো হাত দিয়ে খাস নি।সেখানে এই মেয়েটাকে তুলে খাওয়াচ্ছিস?
কুশান তখন বললো আসলে আম্মু,আসলে হয়েছে কি,না মানে আমি,
কুশান এইভাবে আবোলতাবোল বকতে লাগলো।

তোড়া তখন বললো,স্বামী বউকে তুলে খাওয়াচ্ছে এতে প্রবলেম কি শাশুমা?আর হ্যাঁ এখন আপনার বাবু আর আগের সেই বাবু নেই,যে যখন তখন এভাবে পারমিশন ব্যাতিত তার রুমে ঢুকবেন।নেক্সট টাইম এভাবে বিনা পারমিশনে আমাদের রুমে ঢুকবেন না প্লিজ।এতটুকু ভদ্রতা আপনার জানা উচিত ছিলো।যেহেতু এটা সদ্য বিবাহিত একটা কাপলের বেডরুম।আমরা কখন কোন মুডে থাকি সেটা নিজেরাও জানি না।

কামিনী তোড়ার কথা শোনামাত্র একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।মনে হচ্ছে তিনি আর দুনিয়ায় নাই।কামিনী হঠাৎ মাথা ঘুড়ে পড়ে গেলো মাটিতে।

কুশান তখন চিৎকার করে বললো,আম্মু,আম্মু।কি হয়েছে তোমার?ওঠো আম্মু।কিন্তু কামিনী চোখ ও খুললো না,কথাও বললো না।

কুশান তখন চিৎকার করে বললো,আব্বু,দুলাভাই তোমরা কোথায়?তাড়াতাড়ি এসো আমার রুমে।

তোড়ার বিন্দুমাত্র মায়া হলো না,বা তার একটুও খারাপ লাগছে না।সে বরং খুশিই হয়েছে।

কুশান তখন তোড়াকে বললো,আম্মুকে এভাবে অপমান করে কথা কেনো বললে?
এটা কিন্তু তুমি ঠিক করলে না তোড়া।

তোড়া তখন বললো, বাহঃ ভালোই তো প্রতিবাদ করতে জানো।নিজের মায়ের অপমান সহ্য করতে পারো না।আর আমাকে নিয়ে যখন সবাই অপমান করে,হাসাহাসি করে তখন তোমার প্রতিবাদ করার ক্ষমতা থাকে না।তখন তুমি দূর্বল হয়ে যাও।

এদিকে কুশানের চিৎকার শুনে সবাই তার ঘরে আসলো।

তখন কুশান তোড়ার সাথে আর তর্ক না করে সে তার আম্মুকে কোলে করে বিছানায় ওঠালো।তারপর চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিতে লাগলো।

কামিনী সাথে সাথে চোখ মেলে তাকালো।আর তাকাতেই কুশানকে জড়িয়ে ধরে বললো, বাবা এই দিন দেখার জন্য কি আমি বেঁচে আছি?তোর বউ আমাকে এইভাবে অপমান করে কথা বললো আর তুই কিছুই বললি না?ভাবতে পারছিস সে আমাকে তোর ঘরে আসতে নিষেধ করছে?

জারিফ চৌধুরী তখন কামিনী কে বললো, কি হয়েছে কামিনী তোমার?আমাদের ও বলো।

কামিনী তখন বললো কিছু হয় নি।তবে এখন হবে।আমি এই মেয়ের সাথে আর কুশানকে থাকতে দেবো না।তাড়াতাড়ি তোমরা ডিভোর্সের ব্যবস্থা করো।এই মেয়ে মোটেও সহজ সরল নয়।এই মেয়ে একটা কালনাগিনী। আমার ছেলের জীবন টা এ শেষ করে দিবে।

কামিনীর কথা শুনে সবাই যেনো আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে গেলো।মাত্র এক দিন হলো বিয়ে হয়েছে আর তাতেই কামিনী ডিভোর্সের কথা বলছে।কি করেছে তোড়া?

কামিনী তখন বললো ওভাবে সবাই হা করে আছো
কেনো?আমার মেয়েদের তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ডাকো তোমরা।
নিশ্চয় এই মেয়ে আমাদের শত্রুপক্ষের লোক।ছদ্মবেশে আমাদের সংসার টা তছনছ করার জন্য এসেছে।আমার কুশানকে বশ করার আগেই আমাদের কে একে এ বাড়ি থেকে তাড়াতে হবে।

এই বলে কামিনী নিজেই কল দিলো মেয়েদের।আর কাঁদতে কাঁদতে বললো,কই আমার ইরা,মিরা,লিরা?মা তোরা তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।মস্ত বড় একটা ভুল হয়ে গেছে আমাদের।

চলবে,

#আমি_ফাইসা_গেছি(০৭)
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

দুপুরের খাবার রেডি করার জন্য তোড়া রান্নাঘরে প্রবেশ করলো।শাহিন,মাহিন,তুহিন তোড়ার আগেই রান্না ঘরে চলে গিয়েছে।কারণ রান্না করা যে তাদের নিত্যদিনের কাজ।অন্যদিকে টুনি আর জয়া থালাবাসন মাজছে।হঠাৎ লুতফা এসে একটা লিস্ট বের করে বললো,
আজকে হবে মুগের ডাল,খাসির মাংসের রেজালা,চিংড়ি মালাইকারি,সর্ষে ইলিশ,মিক্সড সবজি,বেগুন ভাজি,ছোট মাছের চচ্চড়ি,আর চাটনি।ঝটপট কাজ শুরু করে দাও সবাই।
তোড়াকে রান্না ঘরে দেখে লুতফা বললো,তুমি এখানে কেনো?নিজের ঘরে যাও।তোমাকে রান্না ঘরে আসতে নিষেধ করেছে কামিনী বুবু।

তোড়া লুতফার কথা শুনে খাবারের লিস্ট টা হাতে নিয়ে বললো,এটা আমার সংসার,আমি রান্নাঘরে থাকবো না তো কে থাকবে?আপনি আমাকে নিয়ে ওকালতি না করে ঘরে গিয়ে আরাম করুন।
আর যদি মনে করেন রান্নায় সাহায্য করবেন তাহলে আমাদের সাথেই থাকুন।

লুতফা তোড়ার কথা শুনে বললো, এই মেয়ে কি বলছো এসব?মাথা কি ঠিক আছে তোমার?

–হ্যাঁ ঠিক আছে চাচীমা।আপনি এখন আসতে পারেন।আর হ্যাঁ,আজ থেকে আমি পরিচালনা করবো এসব।কোন দিন কি রান্না হবে সব আমার পরিকল্পনা মতো হবে।
লুতফা তোড়ার কথা শুনে চিৎকার করে করে কামিনী কে ডাকতে লাগলো।
বুবু,বুবু?কই তুমি?তাড়াতাড়ি এসে দেখে যাও।এই মেয়ে তো তোমার সংসার টা প্রায় নিয়েই ফেললো।

তোড়া লুতফার কথায় কান না দিয়ে শাহিন,মাহিন আর তুহিন কে বললো,দুলাভাই আপনারাও প্লিজ চলে যান রান্নাঘর থেকে।

শাহিন সেই কথা শুনে বললো,এবার কিন্তু একটু বেশি বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে তোড়া।নিজের লিমিটের মধ্যে থাকো।
মাহিন আর তুহিন ও চুপচাপ থাকলো না। তারাও প্রতিবাদ করতে এলো।
তোড়া তখন বললো শালা কাপুরুষের দলেরা।লজ্জা করে না এভাবে শশুড় বাড়িতে বসে রান্নাবান্নার কাজ করতে?যদি ঘরজামাই থাকার ইচ্ছাই হয় তাহলে নিজেদের সম্মান বজায় রেখে থাকো।

শাহিন তোড়ার কথা শুনে একদম তেড়ে এসে বললো, তোড়া?মুখ সামলিয়ে কথা বলো।

তোড়া তখন বললো,একবার ঠান্ডা মাথায় নিজের বিবেক কে প্রশ্ন করুন।আপনারা যা করছেন তা ঠিক করছেন কিনা?এভাবে অপমান সহ্য করার চাইতে মরে যাওয়া কিন্তু অনেক ভালো।

তুহিন তখন বললো, তুমি কিন্তু আমাদের অপমান করছো।এভাবে কথা বলার সাহস তোমার হয় কি করে?

তোড়া তখন বললো, দুপুরের রান্নাবান্নার সময় পার হয়ে যাচ্ছে দুলাভাই।আমি এখন অযথা তর্ক করে সময় নষ্ট করতে চাই না।প্লিজ আপনারা ঘরে গিয়ে রেস্ট করুন।আজ থেকে আমি টুনি আর জয়া সামলাবো রান্নাঘর।আপনাদের কে এভাবে মেয়েদের মতো রান্না করতে হবে না।

মাহিন তখন হেসে হেসে বললো,কামিনীর সংসারে তোমার হুকুমদারি চলবে না তোড়া।কামিনী এমনিতেই তোমার উপর রেগে আছে।ওনার তিন কালনাগিনী আসলেই তোমাকে নিয়ে ছোটো খাটো একটা সালিশ শুরু হবে।তার ভিতর তুমি নতুন করে অশান্তির সৃষ্টি করো না।

তোড়া তখন বললো সেটা পরে দেখা যাবে।এখন আমি যেটা বলছি সেটাই শুনুন আপনারা।এতে আপনাদের কোনো ক্ষতি হবে না কিন্তু।বরং লাভই হবে।আপনারা কি চান না এ বাড়িতে আত্নসম্মানের সহিত থাকতে?আপনারা হলেন জামাই মানুষ।আপনারা কেনো বাবুর্চির মতো দিনরাত এভাবে রান্না করবেন?

শাহিন, মাহিন,তুহিন তোড়ার কথা শুনে চলে গেলো।কারণ তাদের কেও আর মেয়েদের মতো এভাবে রান্নাবান্না করতে ইচ্ছে করে না।

হঠাৎ কুশান এলো রান্নাঘরে।সে এসেই তোড়াকে হাত ধরে টেনে বের করলো রান্না ঘর থেকে।আর বললো, তোড়া প্লিজ বাড়াবাড়ি করো না।ওদের সংসার ওদের মন মতোই চলতে দাও।আমার এসব অশান্তি ভালো লাগছে না কিন্তু।

তোড়া তখন কুশানের হাত ঝাটকা দিয়ে ফেলে দিয়ে বললো,আমি তো অশান্তি করার জন্যই এসেছি এখানে।যেদিন এই সংসারে শান্তি ফিরে আসবে সেদিন তো থাকবো না আমি।তবে যতদিন অশান্তি আছে আমিও ততোদিনই আছি।

–মানে?

তোড়া তখন বললো মানে আবার কি?তোর মতো অপদার্থ, আনস্মার্ট, দূর্বল,ভিতু মিথ্যাবাদী ছেলের সাথে সংসার করবে টা কে?এই বলে তোড়া আবার রান্নাঘরে চলে গেলো।কুশান তখন তোড়ার পিছে পিছে চলে গিয়ে হঠাৎ তোড়াকে কোলে তুলে নিলো।
তোড়া এদিকে কুশানের পিঠে খামচি আর চিমটি দিতে দিতে বললো, কুশান নেমে দাও আমাকে।তা না হলে কিন্তু খুবই খারাপ হয়ে যাবে।
কুশান সোজা তার ঘরে নিয়ে গিয়ে নেমে দিলো তোড়াকে।তারপর ঘরের দরজা লাগিয়ে দিয়ে বললো,তোড়া!তুমি কিন্তু এবার একটু বেশি বেশি করছো।প্লিজ থামিয়ে দাও তোমার এই জিদ।আমার বোন আর মায়ের সাথে তুমি পারবে না কিন্তু।

তোড়া তখন বললো তুই ভিতু হতে পারিস কিন্তু আমি না।আমি এদের মা বেটিদের শেষ দেখে ছাড়বো।তুই তোর মতোই চুপচাপ থাক।শালা ভিতু কোথাকার।তোরে খুন করলেও আমার মনের দুঃখ যাবে না।

কুশান তখন তোড়ার হাত তার গলায় দিয়ে বললো, হ্যাঁ খুনই করো।আমার ও আর বেঁচে থাকতে মন চায় না।এমন ঠুনকো জীবন দিয়ে আমি করবো টা কি?

তোড়া তখন বললো আমাকে যেতে দাও কুশান।প্লিজ আমাকে যেতে দাও।

কুশান হঠাৎ তোড়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো, আমি জানি তুমি জিদ করে আমাকে বিয়ে করেছো। তাই বলে কি আমাদের সম্পর্ক টা এভাবেই এগোবে?আমরা যে দুইজন দুইজনকে ভালোবাসি সেটা কি করে ভুলে গেলে তোড়া?আমাকে কি ক্ষমা করে দেওয়া যায় না?সবকিছু ভুলে প্লিজ আমাকে তোমার আপন করে নাও।

তোড়া তখন বললো না,এটা জীবনেও সম্ভব না।তোরে আমি আর বিশ্বাস করছি না।শুধু তোর মা আর বোনদের উচিত জবাব দেওয়ার জন্য পরে আছি আমি।এই বলে তোড়া দরজা খুলতেই দেখে দরজার সামনে ইরা,মিরা,লিরা আর কামিনী দাঁড়িয়ে আছে।

ধীরে ধীরে সেখানে সবাই আসতে লাগলো।
মনে হচ্ছে তোড়া মস্ত বড় কোনো অপরাধ করেছে সেজন্য তাকে এভাবে ঘিরে আসে সবাই আর কেমন যেনো সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইছে।
তোড়া মাঝখানে আর তার চতুর্পাশে জানোয়ার রুপি কিছু মানুষ সে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছে।মানুষ শব্দ টা আসলে তাদের সাথে যায় না।ইরা,মিরা,লিরা হলো তিনটি বিষাক্ত নাগিন।আর কামিনী হলো নাগরানি।

তোড়া নিচ মুখ হয়ে বসে আছে।সে কোনো কথা বললো না।

হঠাৎ ইরা তোড়ার মুখ উপর করে বললো,তুই আমার আম্মুকে কি বলেছিস?
মিরা এবার তোড়ার মুখ তার দিকে ঘুরে নিয়ে বললো,আমাদের বাড়ি,আর আমাদের ঘর, আর তুই কিনা আমার আম্মুকেই পারমিশন নিয়ে রুমে ঢুকতে বলিস?
লিরা হঠাৎ কুশানের শার্টের কলার টেনে ধরে তাকে ঘর থেকে বের করে বললো, তোর বউ তোরই চোখের সামনে আমার আম্মুকে অপমান করলো আর তুই বসে থেকে দেখলি শুধু?

কুশান তখন লিরার হাত সরিয়ে দিয়ে বললো, আপু এবার কিন্তু তোরা বেশি বাড়াবাড়ি করছিস।যদি ভালো চাস তাহলে যে যার রুমে চলে যা।আমার মুখ খুলিস না প্লিজ।একবার কথা বলা শুরু করলে আমাকে কিন্তু তোরা থামাতে পারবি না।

কামিনী কুশানের কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে তার মেয়েদের বললো,আমার ছেলেটাকে নিশ্চয় এই মেয়েটা বশ করেছে।তা না হলে আমার ছেলে এভাবে কখনো বলতেই পারে না।

তোড়া এখনো সেই আগের মতো চুপচাপ হয়ে আছে।সে এবারও কিছুই বললো না।

ইরা হঠাৎ কুশান কে ধাক্কা দিয়ে বললো, কি বললি তুই?আরেকবার বল।

কুশান তখন বললো, আপু আমি তোদের কে যথেষ্ট সম্মান করি।সেজন্য কিছু বলি না।কিন্তু এবার তোরা অতিরিক্ত করতেছিস।তোড়া মাত্র একদিন হলো এই বাড়িতে এসেছে।আর তাতেই যেভাবে ওর সাথে উঠেপড়ে লেগেছিস তাতে কিন্তু আমি আর চুপ থাকতে পারতিছি না।কারণ ও আমার কিন্তু বউ হয়।ওকে অপমান করে কথা বললে সেটা কিন্তু আমার গায়েও লাগে।

মিরা তখন জারিফ চৌধুরীকে বললো,বাবা তুমি কিছু বলছো না কেনো?কুশান আমাদের কে এসব কি বলছে?ও কি পাগল হয়ে গেলো নাকি?

জারিফ চৌধুরী তখন বললো কুশান তো ঠিকই বলেছে।তোরা সামন্য একটা বিষয় নিয়ে যেভাবে মেয়েটার সাথে কথা বলছিস তাতে মেয়েটা এ বাড়িতে থাকবে কি করে?এবার যে যার রুমে চলে যা।আর ঝামেলা করিস না কেউ।

কামিনী তখন বললো তোমার এটাকে সামান্য বিষয় মনে হচ্ছে?ওই মেয়েটা আমাকে অপমান করলো আর তুমি সেটা সামান্য বিষয় মনে করছো?

এতোক্ষনে তোড়া কথা বলে উঠলো।

তোড়া বললো,
আমি এক দিনেই এই পরিবারের সবাইকে চিনে ফেলেছি।কে কি রকম সেটা আমার জানা হয়ে গেছে।তোমাদের সবাইকে আমি একটা সুযোগ দিতে চাই।যদি তোমরা নিজেদের ভালো চাও তাহলে শুধরে যাও।আর যদি ভালো না চাও তাহলে আমার সাথে পাঙ্গা নিতে এসো না।আমার সাথে বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমি কিন্তু ডাইরেক্ট একশন নিবো।

ইরা,মিরা,আর লিরা তিনজনই তোড়ার কথা শুনে এগিয়ে এসে বললো, কি করবি তুই?দেখা তোর ডাইরেক্ট একশন।

তোড়া তখন বললো, কাল থেকে কুশান আর তিন দুলাভাইও বাবার সাথে অফিস যাবে।তোমরা মেয়ে হয়ে যদি অফিস করতে পারো তাহলে তারা ছেলে হয়ে কেনো ঘরে বসে থাকবে?এটাই আমার ডাইরেক্ট একশনের প্রথম ধাপ।

ইরা তখন বললো তোর কথামতো সব হবে নাকি?তুই কে রে এ বাড়ির?তোকে এক্ষুনি বের করে দিলে তুই চলে যাবি।

তোড়া তখন বললো আমি এ বাড়ির বউ।আমাকে জোর করে বের করে দেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই।আর হ্যাঁ,তোমরা মনে হয় ভুলে গেছো দেশে আইন বলে কিছু একটা আছে।বাড়ির বউকে নির্যাতনের অপরাধে কিন্তু পুলিশের কাছে কম্পিলিন করবো আমি।

ইরা, মিরা আর লিরা তখন একসাথে তোড়ার সামনে এসে বললো,তুই আমাদের আইনের ভয় দেখাচ্ছিস?কি করবে তোর আইন?দেখা একটু তোর বাহাদুরি। আমরাও দেখতে চাই তোর ক্ষমতা কতটুকু?

তোড়া সেই কথা শুনে পুলিশ কে কল দিলো।তোড়ার উপর তার শশুড়বাড়ির লোকজন কিভাবে ঝাপিয়ে পড়েছে সব খুলে বললো তোড়া।

এদিকে কামিনী হঠাৎ দৌঁড়ে রান্নাঘরে চলে গেলো।আর একটা ছুড়ি হাতে নিয়ে ওনার হাত ঘেঁচ করে কেটে ফেললো।
কুশান তা দেখে চিৎকার করে বললো,আম্মু?কি করলে এটা?পাগল হইছো তুমি?
কুশান তাড়াতাড়ি করে তার মাকে নিয়ে ঘরে চলে গেলো। আর হাত টা ব্যান্ডেজ করে দিলো।তবুও রক্ত পরা বন্ধ হচ্ছে না।কুশান তখন তাদের ফ্যামিলি ডাক্তারের কাছে কল করলো।আর ডাক্তার সাহেবকে ইমিডিয়েটলি আসতে বললো।

কামিনী তখন কুশানকে বললো,ডাক্তার ডাকছিস কেনো?পুলিশকে ডাক।তোর বউ যে আমার হাত কেটে দিলো তার আগে বিচার করবি না? তারপর ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাস।

কুশান তার মায়ের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো।কুশানকে বোবার মতো চুপ থাকা দেখে কামিনী চিৎকার করে বললো, তুই কি কল করবি না? না আমি ডাকবো পুলিশকে?তাড়াতাড়ি কল কর বলছি।আমার হাত কেটে রক্ত পড়ছে দেখতে পারছিস না?
কুশান তার মায়ের ধমকানি শুনে কল দিলো পুলিশকে।

কামিনীর কান্ড দেখে বাড়ির সবাই অবাক।তারা কেউই বিশ্বাস করতে পারছে না এই ঘটনা।ইরা,মিরা,লিরা তাদের মায়ের কাছে গিয়ে বললো, আম্মু তুমি কি ঠিক আছো?কি করলে এটা?

কামিনী তখন বললো তাছাড়া আর কোনো উপাই দেখছি না।এই মেয়েকে যে করেই হোক তাড়াতে হবে।তা না হলে এ আমার ছেলেটাকে সারাজীবনের জন্য কেড়ে নেবে।আমি আমার ছেলেটাকে এভাবে হারাতে পারবো না।

কিছুক্ষণ পর হঠাৎ সুমন বাসার ভিতর এসে বললো,বাহিরে পুলিশ এসেছে।
সুমন পুলিশের কথা বলতেই সত্যি সত্যি পুলিশ এসে হাজির হলো বাসার ভিতরে।

পুলিশ কে দেখামাত্র কামিনী চিৎকার করে উঠলো।আর বললো, স্যার বাঁচান আমাকে।তা না হলে এই মেয়ে মেরেই ফেলবে আমাকে।এই দেখেন আমার হাত টা কিভাবে কেটে দিয়েছে?

কামিনীর কথা শুনে তোড়া হা হয়ে গেলো।সে তখন এগিয়ে এসে বললো, মিথ্যা কথা স্যার।ইনি মিথ্যা কথা বলছেন।

কামিনী তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো, স্যার মিথ্যা কথা বলে আমার কি লাভ বলুন তো?মাত্র এক দিন হয়েছে আমার ছেলের সাথে তার বিয়ে হয়েছে।আর তাতেই সে আমাদের পরিবারে রাজত্ব শুরু করে দিয়েছে।তার কথা মতো আমাদের চলতে বলছে। শেষ মেষ আমাকে মেরে ফেলারও হুমকি দিচ্ছে স্যার।

তোড়া তখন বললো, ইন্সপেক্টর, ইনি কিন্তু মিথ্যে বলছে।পুরাই নাটকবাজ মহিলা ইনি।ইনি নিজেই কিন্তু আমাকে নানাভাবে হেনস্তা করছে।আমি উচিত কথা বলি দেখে আমি এখন খারাপ হয়ে গেছি। সেজন্য আর আমাকে এ বাড়িতে রাখতে চাচ্ছেন না ইনি।আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য আমার স্বামীকে জোর করছেন।আর এখন নিজেই নিজের হাত কেটে আমাকে দোষারোপ করছে।

কামিনী তখন বললো স্যার আপনি সবাইকে জিজ্ঞেস করে দেখুন।কে সত্য বলছে আর কে মিথ্যা বলছে?

পুলিশ ইন্সপেক্টর এবার চিৎকার করে বললো, শাট আপ।আগে আমাকে তদন্ত করতে দিন।আমি সবাইকে জিজ্ঞেসাবাদ করতে চাই।এই বলে ইন্সপেক্টর প্রথমেই জারিফ চৌধুরীকে বললো,আপনি আসল ঘটনা খুলে বলুন চৌধুরী সাহেব।আপনার স্ত্রী যা যা বলছে তা সত্য না মিথ্যা?

জারিফ চৌধুরী একবারে ডাইরেক্ট বলে দিলো তিনি কিছু দেখেন নি।তিনি মাত্র আসলেন বাসায়।

ইন্সপেক্টর এবার জয়া কে বললো,তুমি কি দেখেছো?কে মিসেস কামিনীর হাত কেটে দিয়েছে?

জয়া তখন বললো স্যার আমিও কিছু দেখি নি?সেজন্য আমিও বলতে পারছি না।

কামিনী তখন চিৎকার করে বললো, আজ থেকে তুই আর কাজে আসবি না জয়া।আমাদের খেয়ে আমাদের সাথেই বেঈমানী করছিস?তুই তো নিজের চোখেই দেখলি তোড়ার কান্ড।

তোড়া তখন বললো দেখছেন স্যার?আপনার সামনেই কিভাবে হুমকি দিচ্ছে জয়াকে।ঠিক এইভাবেই এরা হুমকি আর ভয় ভীতি দেখিয়ে সবার মুখ দিয়ে মিথ্যে কথা বলাবে এখন।
আমাকে যদি আপনি পাঁচটা মিনিট সময় দেন আমি পুরো ঘটনা আপনাদের শোনাতে চাই।তারপর বিশ্বাস করবেন কি করবেন না সেটা আপনাদের ব্যাপার।

ইরা তখন বললো ইন্সপেক্টর! আপনি এই থার্ড ক্লাস মেয়েটার কথা কেনো শুনছেন?এই মেয়ে যে মিথ্যা বলছে তা তো বোঝাই যাচ্ছে।আমাদের দেখে কি মিথ্যাবাদী মনে হয় স্যার?আমাদের আম্মু কি মিথ্যা কথা বলতে পারে?

তোড়া তখন বললো স্যার আমাকে কি পারমিশন দেবেন কিছু বলার?তারপর এসব ফোর ক্লাস মেয়েদের কাহিনি শোনেন।

ইন্সপেক্টর তখন বললো,ওকে বলেন।আমরা নোটস করে নিচ্ছি।

তোড়া তখন বললো, স্যার বিশ্বাস করুন এরাই আমার উপর অত্যাচার করছে।আর আমার উপর অত্যাচার করার একমাত্র কারণ হলো আমি উচিত কথা বলি সেজন্য।এ বাড়ির একমাত্র ছেলে হলো কুশান।যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।কিন্তু এরা সবাই কুশানকে বাড়ির মধ্যে বসে রেখে তাদের তিন মেয়েকে অফিসে পাঠায়।অথচ উত্তরাধিকার সুত্রে কুশানের যাওয়া উচিত অফিসে।আপনি আশ্চর্য হবেন স্যার এরা বাড়ির জামাইরে দিয়ে রান্নাবান্না করায়।স্বামীদের গোলাম করে রেখেছে।

ইন্সপেক্টর তখন তোড়াকে ধমক দিয়ে বললো, এটা ওনাদের পার্সোনাল ব্যাপার।ওনারা কাকে দিয়ে রান্না করাবেন আর কাকে অফিসে বসাবেন সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।আসল কথা বলো।

তোড়া তখন বললো, আসলে স্যার,আমার হাজব্যান্ড একটু বেশিই ভালোবাসেন আমাকে।সবসময় সত্যের পক্ষে কথা বলেন তিনি।অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন।এজন্য আমার শাশুড়ী কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না আমাকে।শুধু আমার শাশুড়ীই না।ওনার তিন মেয়েও আমাকে তাড়ানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।শেষমেশ আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য আমার স্বামীর উপর চাপ সৃষ্টি করতেছে।যখন দেখলো আমার স্বামী কিছুতেই রাজি হচ্ছে না তখন আমাকেই শেষ করতে ধরেছিলো এরা।আর এখন নিজেই নিজের হাত কেটে আমাকে দোষারোপ করছে।দুইদিন পর তো আত্নহত্যা করে আমাকে ফাঁসাবে এরা।আমি এর বিচার চাই স্যার।এই বলে তোড়া কাঁদতে লাগলো।

কুশান তোড়ার কথা শুনে বুঝতে পারলো তোড়া অনেক বেশি কষ্ট পেয়ে তার নামে এই মিথ্যাকথা গুলো বললো।সে তো কখনোই তোড়ার পক্ষে কথা বলে নি।বরং সে কোনো প্রতিবাদ না করে চুপ করে থেকেছে।কিন্তু আজ তোড়া কিভাবে বললো কুশান সবসময় তার পক্ষে কথা বলেছে।আর কতদিন এভাবে মুখ বুজে থাকবে সে?সে কি আজও মুখ খুলবে না?কুশান নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলো।

হঠাৎ ইন্সপেক্টর কুশানকে বললো,আপনার বউ যা যা বলছে তা কি সত্য বলছে?না আপনার মা সত্য কথা বলছে?

কুশান পরে গেলো মহা বিপদে।সে কার পক্ষ নিবে সত্যি বুঝতে পারছে না।তবে আজ তার কেনো জানি সত্য কথা বলতে ইচ্ছে করতেছে।জীবনে তো অনেক মিথ্যা কথা বলেছে সে।

কুশানকে চুপ থাকা দেখে ইন্সপেক্টর বললো,কি হলো কুশান চৌধুরী? কিছু বলছেন না কেনো?

কুশান তখন বললো স্যার,দুইজনই আমার আপনজন।একজন হলো আমার গর্ভধারিণী মা,আরেকজন হলো আমার প্রিয়তমা স্ত্রী।দুইজনকেই আমি সমান ভাবে ভালোবাসি।সেজন্য আমি কখনোই কারো পক্ষে কথা বলি না।সবসময় চুপচাপ থেকে গেছি।কারন মায়ের পক্ষে কথা বললে বউ মন খারাপ করবে আর বউ এর পক্ষে কথা বললে মা মন খারাপ করবে।তবে আজকের ঘটনা দেখে কিছুতেই চুপ থাকতে পারলাম না।কারণ আজ আমার আম্মু যা করেছে তা মোটেও ঠিক করেন নি।তিনি যে কেনো তোড়ার উপর রাগ করে এভাবে তার হাত কাটলেন সত্যি আমার মাথাতেই ঢুকছে না।

ইন্সপেক্টর কুশানের কথা শুনে বললো থাক,আর কিছু বলতে হবে না।আমি বুঝে গেছি সব।এই বলে ইন্সপেক্টর কামিনী কে বললো,নেক্সট টাইম এরকম জঘন্য কাজ আর করবেন না মিসেস কামিনী।আপনাদের পরিবারের একটা সুনাম আছে।আশা করি সেটা বজায় রেখে চলবেন।বাড়ির বউদের উপর অত্যাচার করে নিচু মন মানসিকতার মানুষেরা।বুঝতে পারছেন?

কামিনী কোনো কথা না বলে ঘরে যেতে ধরলেন।

ইন্সপেক্টর তখন বললো, দাঁড়ান।আগেই কোথাই যাচ্ছেন।আপনাকে এবার ক্ষমা করে দিলেও কিন্তু নেক্সট টাইম আর ক্ষমা করবো না। সোজা বউ নির্যাতনের জন্য জেলে নিয়ে যাবো।মনে থাকবে?

কামিনী চুপ করে রইলো।

মিরা তখন বললো অফিসার!আপনি আমার মাকেই শুধু বকছেন কেনো?ওই মেয়ে যে বড়দের সাথে সম্মান দিয়ে কথা বলে না,মুখে যা আসে তাই বলে তার কি হবে?

ইন্সপেক্টর তখন তোড়াকে বললো আপনি আজ থেকে বাড়ির বউদের মতো ভদ্রতার সহিত থাকবেন।কারো সাথে কোনো দুর্ব্যবহার করবেন না।তারপরেও যদি আপনার সাথে এনারা অত্যাচার করে বা আপনাকে অপমানজনক কথা বলে সাথে সাথে খবর দিবেন আমাকে।

ইন্সপেক্টর এবার জারিফ চৌধুরীকে বললো,আপনার ছেলেকে কাল থেকে অফিস পাঠাবেন।যদিও এটা আপনাদের পার্সোনাল ব্যাপার তবুও বলতে হচ্ছে কথাটা।কারণ সবার আগে আপনার ছেলের অধিকার বেশি।তাকে ঘরে বসে রেখে মেয়েদের অফিস পাঠান ব্যাপারটা স্বাভাবিক লাগলো না চৌধুরী সাহেব।

জারিফ চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো,কুশান আমাদের একমাত্র আদরের ছেলে তো। সেজন্য ওকে আমরা কোনো পরিশ্রম করতে দেই না।কিন্তু ওর বউ যখন চাইছে না সে এভাবে ঘরে বসে থাকুক।তাহলে ঠিক আছে কাল থেকে সেও অফিসে যাবে।

ইন্সপেক্টর এবার শাহিন, মাহিন,তুহিনের কাছে গিয়ে বললো, রান্নাবান্না করার যদি এতই শখ থাকে তাহলে বাবুর্চি পেশা গ্রহন করলেই তো হয়।এভাবে ঘর জামাই থাকার চাইতে বাবুর্চি পেশাটা হাজারগুন ভালো আছে।নিজেদের আত্নসম্মানবোধ বজায় রাখা উচিত ছিলো আপনাদের।

শাহি,মাহিন,তুহিন তখন একসাথে বলে উঠলো,স্যার আমাদেরকে ফাঁসানো হয়েছে স্যার।আমাদের কে বাঁচান স্যার।আমরা এভাবে ঘর জামাই ও থাকতে চাই না।আর এভাবে মেয়েদের মতো রান্নাবান্নাও করতে চাই না।

চলবে,