আরশি পর্ব-৩০

0
2187

#আরশি
#Part_30
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat

— বাবাই!!

অহনার উৎফুল্ল কন্ঠস্বর শুনে সাদের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে। সে অহনাকে নিজ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ওকে কোলে তুলে নেয়। অহনার তুলতুলে গাল দুই-তিনটে চুমু খেয়ে মিষ্টি কন্ঠে বলে,

— আমার এঞ্জেলটা ভালো আছে তো?

অহনা সাদের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,

— এতক্ষণ ছিলাম না কিন্তু এখন একদম ফাস্ট ক্লাস আছি৷

— উমম! তাই নাকি?

অহনা জোরে জোরে মাথা দুলিয়ে বলে,

— হ্যাঁ!

সাদ অহনাকে কোলে নিয়েই বাসার ভিতরে ঢুকে। আর আমি দরজা দিয়ে ওদের পিছন পিছন আসি। সাদ ড্রয়িংরুমে এসে অহনাকে নামিয়ে সোফায় বসে। তারপর অহনাকে নিজের কোলে বসিয়ে আদুরে সুরে বলে,

— ফাংশন কখন তোমার?

— ১১ টায়!

সাদ বা হাত দিয়ে নিজের চুল ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলে,

— তাহলে তো সময় আছে।

সাদের কথ শুনে অহনা গাল ফুলিয়ে বলে,

— না নেই৷ তুমি বলেছিলে ৯ টায় আসবে। আর এখন সাড়ে নয়টা বাজে।

সাদ অপরাধী সুরে বলে,

— সরি! আসলে হয়েছিল কি…

অহনা সাদকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

— থাক বলতে হবে না। তুমি এসেছ এইটাই অনেক।

সাদ অহনার গালে চুমু খেয়ে বলে,

— দ্যাট’স মাই গার্ল!

কথাটা বলেই সাদ নিজের বুক পকেট থেকে একটা ক্যাডবেরি ডেরিমিল্ক চকলেট বের করে অহনার দিকে এগিয়ে দেয়। চকলেট দেখে অহনার খুশি দেখেই বা কে? সে ফট চকলেটটা নিয়ে সাদের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,

— থ্যাংক ইউ!!

সাদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি তাদের কথার মাঝে ফোড়ন দিয়ে বলি,

— অহনা দেখেছ কয়টা বাজে? যাও তারাতাড়ি রেডি হতে যাও৷ আমাদের আবার বের হতে হবে তো। তুমি হাত মুখ ধুয়ে নাও আমি আসছি৷

— আচ্ছা আম্মি!

এই বলে অহনা দৌড়ে রুমে চলে গেল। আমি সাদের দিকে তাকিয়ে বলি,

— মিটিং কেমন হলো?

সাদ হালকা হেসে বলে,

— হ্যাঁ ভালো।

— যাও ফ্রেশ হতে আসো৷ এতটা পথ জার্নি করে এসেছ। তাই চেঞ্জও করে নাও।

সাদ ভ্রু কুঁচকে বলে,

— কিন্তু…

আমি সাদকে কথা বলতে না দিয়ে বলি,

— মামার বিছানায় কাপড় রাখা আছে।

সাদ মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে,

— আচ্ছা। কিন্তু মামা কোথায়?

— সে তাগাদার জন্য ঢাকার বাইরে গিয়েছে। এক সপ্তাহ পর ফিরবে।

— অহহ আচ্ছা। বাই দ্যা ওয়ে তোমার বেকারির কাজ কেমন চলছে? আজ কাজ আছে নাকি?

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আর আজ একটা কেকের অর্ডার আছে। অবশ্য কাজ প্রায় শেষ। জাস্ট লাস্ট ফিনিসিং দিয়ে সোহেলকে দিয়ে বেকারিতে পাঠিয়ে দিব।

— ভাই আমরাও তোমার গৃহবন্দী গ্রাহক। আমাদের কথাও একটু ভাব। মাঝে মধ্যে ফ্রি ফ্রি একটু কেক বানিয়ে খাওয়াতেও তো পারো নাকি?

আমি আড়চোখে সাদের দিকে তাকিয়ে বলি,

— ভেবেছিলাম আজ সন্ধ্যায় রেড ভেলভেট কেক বানাবো। বাট প্ল্যান ক্যান্সাল।

সাদ বিদঘুটে এক চেহেরা বানিয়ে বলে,

— এএএএএএএ!!

সাদের এমন রিয়েকশন দেখে আমি ফিক করে হেসে দেই। অতঃপর বলি,

— যাও তো আগে ফ্রেশ হয়ে এসো। নাস্তা দিচ্ছি টেবিলে আমি। খেয়ে নিও। আমাকে আবার অহনাকে সাজাতে হবে।

সাদ মুখ ফুলিয়ে বলে,

— তোমার নাম মিস দর্পণ না রেখে বরং মিস কিপ্টুস রাখার দরকার ছিল৷ হুহ!

বলেই সাদ মামার রুমের দিকে এগিয়ে গেল। আর আমি হালকা হেসে নিজের কাজে মনোযোগ দেই।

______________________

অডিটোরিয়াম ভর্তি শত শত মানুষ। চারদিক কোলাহলে পরিপূর্ণ। কিছু ভলেন্টিয়াররা এইদিক সেদিক ছুটাছুটি করছে, তো কিছু ভলেন্টিয়াররা সকলকে বসার জায়গায় দেখিয়ে দিচ্ছে ও বসিয়ে দিচ্ছে। নিচের প্রথম সারিটি জার্জদের জন্য ও এর পরের সারিটি ভি আই পি পার্সনদের জন্য। এরপর থেকে যত সারি আছে সবই দর্শকদের জন্য। অডিটোরিয়ামের বিশাল বড় স্টেজটি খুব সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। মাঝখানে টানানো ব্যানারটির মধ্যে গোটা গোটা অক্ষরে লিখা “ইন্টার ফেস্ট ডান্স কম্পিটিশন”। তার চারপাশে আবার আর্টিফিশিয়াল ফুল লাগানো। স্টেজের পিছে সকল প্রতিযোগিতারা সিরিয়াল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। একজন যুবতী মেয়ে সকলের উপস্থিতি নিচ্ছে। সাথে এইটাও দেখছে কেউ বাদ পড়েছে কিনা। আমি অহনার উপস্থিতি নিশ্চিত করে ওকে ভালো মত সব বুঝিয়ে দেই আর নার্ভাস হতে মানা করি৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই গার্ডিয়ানদের স্টেজের পিছন থেকে সরে আসতে বললে আমি অহনাকে “বেস্ট অফ লাক” জানিয়ে ওর কপালে এক চুমু এঁকে দিয়ে চলে আসি।

বাইরে এসে দেখি সাদ সপ্তম সারিতে বসে আছে। তার পাশের সিট ফাঁকা। হয়তো আমার জন্যই জায়গায় রেখে গিয়েছে। আমি চুপচাপ গিয়ে ওর পাশে বসি। মনটা বেশ খচখচ করছে। কেমন এক ভয় কাজ করছে। নার্ভাস লাগছে খুব। এমন নয় যে অহনা এই প্রথম বারের মত এত মানুষের সামনে স্টেজে ডান্স করছে, এর আগেও সে অনেকবার স্টেজে পারফর্ম করেছে। কিন্তু তাও মায়ের মন তো। সাদ আমার মনে ভাব বুঝতে পেরে হালকা হেসে বলে,

— অহনাও এতটা ডেস্পারেট হয় না যতটা না তুমি হও।

আমি সাদের কথা শুনে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলি,

— ও তুমি বুঝবে না। মায়ের মন এমনই হয়।

— তাহলে বলতে এইদিক দিয়ে আমার ভাগ্য ভালো যে, বাবার মন মায়ের মত হয় না।

কথাটা বলে সাদ হাসে। সেই সাথে তার চামড়ার ভাঁজে ফুটে উঠে এক গভীর গর্ত। আমি চাপা স্বরে বলি,

— সাদ!

সাদ সোজা হয়ে বসে বলে,

— টেনশন করো না। সব ঠিকই হবে।

— তাই যেন হয়। অহনার এই ডান্স নিয়ে অনেক স্বপ্ন। ওর ডান্সের প্রতি এত উৎসাহ দেখেই ওকে এতোটা পথ উৎসাহ দিয়ে এসেছি। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ওকে নিয়ে গিয়েছি। কিন্তু এখন এই পর্যায়ে যদি এসে ও পিছিয়ে পরে তাহলে ও অনেক কষ্ট পাবে। আর আমি ওর সেই কষ্টটাই সহ্য করতে পারবো না।

— অহনা এতটাও দূর্বল না যে অল্প কিছুতে কষ্ট পাবে। ও অনেক বুঝদার। আর এইভাবেও অহনা তার মায়ের মতই হয়েছে। ভাঙবে কিন্তু মচকাবে না। সো ডোন্ট ওয়ারি।

— হুম!

মুখে ‘হুম’ বললেও আমি বেশ ভয় পাচ্ছিলাম।তাই মনে মনে আয়াতুল কুরসি পড়তে থাকি। এরই মিনিট দশকের মধ্যেই অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায়। একেক করে সকল ধরনের ফরমালিটিস শেষ করে প্রতিযোগিতাটি শুরু হয়। অতঃপর একেকজনের নাম ধরে ডাকতেই সে স্টেজে এসে তার নৃত্য প্রদর্শন করে যায়। সকলের নাচই ছিল মনোমুগ্ধকর। আমি তাদের নাচ বেশ মনোযোগ দিয়েই দেখছিলাম। অবশেষে অহনার নাম উচ্চারিত হতেই আমার বুক ধক করে উঠে। আমার ভিতরে থাকা অস্থির ভাবটা তীব্র হয়ে আসে। আমি উৎসুক চোখে সামনে তাকিয়ে থাকি। ধীরে ধীরে অহনা স্টেজে আসে। আমার দৃষ্টি স্থির হয় ওইদিকে। হঠাৎ চারদিকে “ফাগুন হাওয়ায়” গানটা বাজতে শুরু করে আর সেই সাথে তাল মিলিয়ে অহনার নাচ শুরু হয়। দেখতেই দেখতে অহনার পারফর্মেন্স শেষ হয় আর চারদিকে করতালি বেজে উঠে। আমিও একটু স্বস্তিবোধ করি। কেন না অহনা বেশ ভালোই নেচেছে।
অহনা নাচ শেষ করেই স্টেজের পিছনে যেতেই আমি সেদিকে চলে যাই। অহনা আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে। আমিও ওকে আগলে নেই আর ওর নাচের প্রশংসা করি। সাথে এইটাও বুঝাই প্রাইজ পাওয়া বড় কথা না,অংশগ্রহণ করা বড় কথা। অহনাও আমার কথা মেনে নেয়। কিন্তু তাও মনের মাঝে একটা আশা যে থেকেই যায়। আমি আর কিছু না বলে অহনাকে সব বুঝিয়ে- সুঝিয়ে আমি আবার আমার সিটে ফিরে আসি। আর রেজাল্টের প্রতিক্ষা করতে থাকি। অবশেষে ঘন্টা দুই-এক পরে রেজাল্ট এনাউন্সড হয়। সেখানে জানা যায় অহনা দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। এ নিয়ে সে যে কি পরিমানে খুশি। সাথে আমিও। প্রাইজ পাওয়ার ছবি তুলা শেষে সে আমার কাছে দৌড়ে আসে আর আমায় জড়িয়ে ধরে। আমি ওর মাথায় চুমু একে দিয়ে ওকে উৎসাহ দেয়। এরপর ও আমাকে ছেড়ে সাদকেও জড়িয়ে ধরে। আমাদের সকলের ঠোঁটের কোনেই এক প্রশান্তির হাসি।

___________________

আমি রেড ভেলভেট কেকটা ফ্রিজ থেকে বের করে ডেকরেশন করতে থাকি। ডেকরেশন শেষে আমি তা ড্রয়িং রুমে নিয়ে যাই। ড্রয়িং রুমে সাদ আর অহনা দুষ্টুমি করছে। আমার হাতে কেক দেখেই দুইজনেই উৎফুল্ল সুরে চেঁচিয়ে উঠে। আমি তা দেখে মুচকি হাসি। কেক সেন্টার টেবিলের উপর রাখতেই ওরা আমার দিকে এগিয়ে আসে। আমি অহনার হাতে একটা প্লাস্টিকের ছুরি ধরিয়ে দিয়ে বলি কেকটা কাটতে। অহনা নিজের হাতে ছুরিটা নিয়ে আমাদেরও টেনে নিয়ে আসে। সে নাকি একা একা কেক কাটবে না। আমাদের সাথে মিলে কেক কাটবে। তাই বাধ্য হয়ে আমি আর সাদও ওর দুইপাশে হাটু গেড়ে বসি আর তিনজনে মিলে কেকটা কাটি। কেক খাওয়া শেষে অহনা সাদকে উদ্দেশ্য করে বলে,

— বাবাই আমার কিন্তু তোমার থেকে কিছু চাই।

সাদ হাসি মুখেই বলে,

— কি চাই আমার এঞ্জেলটার?

— আগে বলো আমি যা চাই তা দিবে।

সাদ অহনাকে কোলে নিয়ে বলে,

— এমন কখনো হয়েছে কি যে, আমার এঞ্জেলটা আমার কাছ থেকে কিছু চেয়েছে আর আমি তাকে তা দেয়নি?

অহনা দুইপাশে মাথা দুলিয়ে না সূচক উত্তর দেয়। সাদ মিষ্টি হেসে বলে,

— বলো তোমার কি চাই।

— আমি চাই তুমি আমাকে ফুটবল খেলা শিখাও।

— ফুটবল?

— হুম।

— তা হঠাৎ ফুটবল খেলার ইচ্ছা জাগলো কেন?

— আমার স্কুলে না ইরফান নামে এক ছেলে আছে। সে বলেছে মেয়েরা নাকি ফুটবল খেলতে পারে না। তো আমিও তাকে বলেছি আমি তার সাথে ফুটবল খেলব আর ওকে হারিয়ে দেখাব।

অহনার কথা শুনে সাদ ফিক করে হেসে দেয়। অতঃপর গম্ভীর হয়ে বলার চেষ্টা করে বলে,

— এইটা তো দেখছি গুরুতর ব্যাপার। এখন তো তোমাকে ফুটবল খেলা শিখাতেই হবে আর ইরফানকে হারাতেই হবে।

— হু!

— আচ্ছা সামনের শুক্রবার তোমায় পার্কে নিয়ে যাব নে। সেখানে গিয়ে আমরা প্রেক্টিস করবো নে।

অহনা কথাটা শুনে সাদের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,

— আই লাভ ইউ বাবাই।

সাদও অহনাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

— আই অলসো লাভ মাই লিটেল এঞ্জেল।

আমি দুইজনের এমন ভালবাসা দেখে মুচকি হাসি। অতঃপর অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলি,

— অনেক কথা হয়েছে মামণি এইবার যাও তোমার পড়া শেষ করে নাও। ম্যাম না তোমায় বাড়ির কাজ দিয়ে গিয়েছে।

— হুম যাচ্ছি।

কথাটা বলেই অহনা সাদকে ছেড়ে দিয়ে রুমে চলে যায়। আমি সাদের পাশে বসে বলি,

— শোভা আন্টির মৃত্যু বার্ষিকী না পরের সপ্তাহে।

— হ্যাঁ সোমবারে।

বলে সাদ চুপ হয়ে যায়। তা দেখে আমি সাদকে বলি,

— এইবারও কি অনাথ বাচ্চাদের খাওয়াবে?

সাদ আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

— হুম।

বলে সাদ আর আমি চুপ করে বসে রই। হঠাৎ সাদ বলে উঠে,

— সময় কত দ্রুত গতিতে অতিবাহিত হয় তাই না? দেখতেই দেখতে কিভাবে যে মাকে ছাড়া দুইটা বছর কাটিয়ে দিলাম বুঝাই গেল না।

আমি সাদের এই কথার বিপরীতে কোন কথা বলতে পারলাম না। আসলে কি বলবো তাই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। সাদ মাথা নত করে বলে,

— সবাই কেন আমাকে ছেড়ে চলে যায়? একা করে দিয়ে যায়? আল্লাহই বা কেন সবসময় আমার আপনজনকে আমার থেকে কেড়ে নেয়?

আমি সাদের কথায় ওর কাঁধে আলতো করে হাত রাখি। তারপর বলি,

— সবই তো ওই উপরওয়ালার মর্জিতে হয়। তাই না? সেখানে আমরা এই প্রশ্ন করারই বা কে? নিশ্চয়ই তিনি যা করেন আমাদের ভালোর জন্য করেন। হয়তো আমরা ভালো দিকটা বুঝে উঠতে পারি না। কিন্তু এইটা আমাদের মানতে হবে আল্লাহ তা’য়ালা কখনো তার বান্দার খারাপ চান না।

— মৃত্যু জিনিসটা এত খারাপ কেন? সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু। এক অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু শুধু একজনের জান নেয় না বরং তার সাথে জড়িত আপন মানুষদের জীবনও নাড়িয়ে দিয়ে যায়।

আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম। সান্ত্বনা দেওয়ার মত আমার ভাষা নেই। আর আমি সান্ত্বনা দিতেও চাই না। কেন না এইটা সবসময় অপর পাশের ব্যক্তিকে দূর্বল করে, শক্ত করে না। কিছুক্ষণ চুপটি মেরে বসে থেকে আমি উঠে গিয়ে অহনার কাছে চলে গেলাম। ওর কাছে গিয়ে বললাম সাদের সাথে গিয়ে খেলতে। বাড়ির পড়া আমি পরে শেষ করিয়ে দিব নে। অহনা আমার কথা শুনে দৌড়ে সাদের কাছে চলে যায় আর আমি অহনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রই। অহনাকে সাদের কাছে পাঠানোর কারণ হচ্ছে, একমাত্র এখন অহনাই পারবে সাদের মন ভুলাতে। ওকে হাসিখুশি রাখতে। আমি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে চলে যাই রান্নাঘরের দিকে।

_________________

ফাহাদ অস্থির হয়ে পড়েছে। সাথে ভয় পাচ্ছে সে। ফারদিনের জ্বর কোনভাবেই কমছেই না। ঔষধ-পানি দিয়েও এখন তেমন কাজ হচ্ছে না। ডাক্তার দেখালে সে তাকে বলেছে ফারদিনকে ঢাকায় নিয়ে যেতে। কেন না তারাও বুঝতে পারছে না আসলে ফারদিনের হয়েছেটা কি। ফারদিনের রোগ বুঝার জন্য তাদের কিছু টেস্ট করার দরকার কিন্তু সেই টেস্ট করার জন্য তাদের কাছে উপযুক্ত মেশিন নাই। তাই আপাতত তাকে ঢাকাই নিয়ে যেতে হবে আর টেস্ট গুলো করাতে হবে। সেখানেই তার বাকি চিকিৎসা করালে ভালো হবে। তাই ফাহাদও আর দেরি না করে আজকের মধ্যেই খুলনা টু ঢাকার বাসে টিকিট কেটে নেয়। সেই সাথে অফিস থেকেও এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে নেয়। ফাহাদ সবকিছু গোছগাছ করে রওনা দেয় ঢাকার উদ্দেশ্যে। বাসে উঠতেই তার বুক ধক করে উঠে। ঢাকা শহরের কথা চিন্তা করতেই তার মস্তিষ্কের মাঝে দুইটি নাম হানা দিয়ে বসে। সাথে সাথে সে বিচলিত হয়ে পড়ে। মনের মাঝে ক্ষুদ্র এক আশা জাগ্রত হয়। কিন্তু সে জানে না এই আশা আদৌ পূরণ হবে কি না। পরবর্তীতে কি হবে সে তাও জানে না৷ শুধু এতটুকু জানে, সামনে তার জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু অপেক্ষা করছে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে সেটা কি তার জন্য ভালো নাকি মন্দ? কথাটা ভেবেই ফাহাদ দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেয়। স্থির চোখে বাইরের দিকে তাকায়।

#চলবে
গত পর্বে আমি একটা তথ্য ভুল দিয়েছিলাম। আর তা হলো সরকারি ব্যাংকে চাকরি করার জন্য বিসিএস পরীক্ষা দিতে হয় না। ব্যাংকে চাকরি করার জন্য আলাদা নিয়োগ পরীক্ষা দিতে হয়। ভুল তথ্য দেওয়ার জন্য দুঃখিত।