আষাঢ়ে প্রেমের বর্ষণ পর্ব-০২

0
5825

#আষাঢ়ে_প্রেমের_বর্ষণ
#হাবিবুল্লাহ_হাবিব_ফুয়াদ
#পর্ব_২
আদ্র আর ফারিহা যেহেতু একটা কান্ড ঘটায় ফেলেছে তাই আমি চাই সামাজিকভাবে আবার ওদের বিয়ে পুনরায় দেয়া হবে এবং সেটা খুব জলদি।কেননা এলাকায় আমাদের পরিবারের একটা সম্মান আছে।

ফুপির কথা শুনে আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো।কি হচ্ছে আজকে আমার সাথে এসব?আমার সাথে আজকে সকাল থেকে শুধু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেই চলেছে একে তো হটাৎ করে দেখতে আসলো কেউ তারওপর আবার আদ্র ভাইয়ার তখনকার ঘটনা এখন আবার বিয়ে।উপরওয়ালা আমাকে রক্ষা করো এই বিপদ থেকে।আমি এই বিয়ে কখনো করতে পারবো না কেননা আমি তো অন্যকাউকে ভালোবাসি শুধু ভালোবাসি না মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি।তাই এবার আর চুপ না থেকে বলে উঠলাম,
–‘না ফুপি আমি আদ্র ভাইয়াকে কখনোই বিয়ে করতে পারবো না।’

আমার এমন কথায় ফুপি যেনো রেগে লাল হয়ে গেল।আমার দিকে হুঙ্কার দিয়ে চেচিয়ে বলল,
–‘লুকিয়ে বিয়ে করার সময় এই কথা মনে হয় নাই তোমার,এখন আমরা সামাজিকভাবে আবার বিয়ে দিচ্ছি এখন তোমার এই কথা মনে হচ্ছে?’

ফুপির এমন হুঙ্কারে যেনো আমার অন্তর আত্তা পর্যন্ত কেপে উঠলো সাথে আমার অনেক কান্না পেল।আমি কাউকেই সত্যিটা বোঝাতে পারছিনা।কেউই আমার কথা বিশ্বাস করছে না। তারপরও আমি বললাম,
–‘না ফুপি আদ্র ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে হয় নাই। সত্যি ফুপি আমাকে বিশ্বাস করো।’

ফুপি আমার এমন কথায় আমার দিকে রাগীভাবে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলল,
–‘চুপ আর একটাও কথা নয়।আমি যেহেতু বলেছি বিয়ে হবে সুতরাং বিয়ে হবেই।’ তারপর অন্যদের দিকে তাকিয়ে বললেন,’এতে তোমাদের কারো কোনো আপত্তি আছে?’

(ফুপি যেহেতু বলেছে তাই কেউ আপত্তি করবে না আর হলো ও তাই।যেমনটা হয়েছিল আজকে,ফুপির জোরের কারণেই পাত্রপক্ষ আমাকে আজকে দেখতে এসেছিল।)
বাবা ফুপি বলল,
–‘তুমি যেহেতু বলেছ তাই আমার আর কোনো আপত্তি নাই যদিও শুরুতে একটু আপত্তি ছিল।কিন্তু এখন ভেবে দেখলাম আদ্র ছেলে হিসেবে বেস্ট তারওপর ফারিহাকে সারাজীবন আমাদের সাথেই থাকতে পারবে।’

বাবার এমন কথা শুনে আমার যা ও অল্প একটু ভরসা ছিল ওটাও ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেলো।আমি দৌড়ে সেখান থেকে ঘরে চলে আসলাম।এসে বালিশে মুখ গুজে কাদতেঁ শুরু করলাম কেননা এইটাই এখন আমার একমাত্র কান্নার সঙ্গী।

এইদিকে,ফারিহাকে এইভাবে দৌড়ে চলে যেতে দেখে আদ্র অনেকটা ভয় পেয়ে যায়।তাই সে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে উঠে ফারিহার ঘরের সামনে এসে দেখতে পায় ফারিহার দরজা বন্ধ করে দেয়া।এটা দেখে তার ভয়ের মাত্রা যেনো দ্বিগুণ হয়ে যায়।তাই সে জোরে জোরে দরজা ধাক্কাতে শুরু করে।

দরজায় কারোর জোরে জোরে ধাক্কা দেয়ার কারণে ফারিহার অনেকটা রাগ হয়।আর মনে মনে বলে,
~~”এমনিতেই তো তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করলে না।আমাকে জমের গলায় ঝুলিয়ে দেয়ার ব্যাবস্থা করলে।এখন একটু শান্তিমত কাদতেঁ পারবো না।খুলবো না আমি দরজা দেখি কত ধাক্কাতে পারো।”

বেশকিছুক্ষন ধরে দরজা ধাক্কা দেয়ার পরও ভিতর থেকে যখন কোনো আওয়াজ আসলো না,তখন আদ্র’র যেনো যায় যায় অবস্থা।সে এবার দ্বিগুণ জোরে দরজা ধাক্কা দিয়ে বলল,
–‘ফারু দরজা কি খুলবি,নাকি ভেঙে ফেলতে হবে?’

আদ্র এমন হুমকি শুনে মনে মনে ভাবলাম,
~~”ধুর ভালো লাগে না।এখন আবার আরেক বিপদ।যদি দরজা না খুলি তাহলে যেই মানুষ হয়তো সত্যি সত্যি দরজা ভেঙে ফেলবে।তার চেয়ে দরজা খুলেই দেই” এই ভেবে দরজা খুলতে না খুলতে আদ্র ভাইয়া আমাকে নিয়ে বিছানার ওপর পড়ে গেলেন।(মনে হয় ভাঙ্গার জন্য জোরে ধাক্কা দেয়ার মুহূর্তে আমি দরজা খুলে ফেলেছি আর বিসানা পাশেই ছিল)

বেশ কিছুক্ষণ ধরে আদ্র ভাইয়া আমার ওপর পরে আছে।সরার কোনো নামই নেই একধ্যানে তাকিয়ে আছে।এর এইদিকে আমি বেচারি যে তার চাপে চ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছি সেই দিকে তার কোনো খেয়ালই নেই মনে হয়।

এইদিকে আদ্র মনে মনে ভাবতেছে,
~~”ফারু তোমার মধ্যে এমন কি আছে যার মায়ায় আমি বারবার পরে যাই?তোমার চোখে এমন কি আছে যার গভীরতায়,যার আবেশে আমার হৃদয় জুড়িয়ে যায়।বলো ফারু বলো”
কিন্তু আমি বলবো কিভাবে আদ্র তো মনে মনে বলেছে আর বেচারি আমি তো শেষ এই বুইড়া খাটাস টার ওজনে তো আমি চ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছি।ওনাকে অনেক জোর দিয়ে সরাতে চেষ্টা করতেছি কিন্তু কুলিয়ে উঠতে পারছি না।অবশেষে রেগে কিছু বলতে যাবো তার আগেই….

–‘আপু~উ~উ~উ~উ…এই না না আমি কিছু দেখি নি।’এই বলে দুই চোখ হাত দিয়ে ঢেকে নিল অদ্রি।

হটাৎ এমন কথায় আদ্র’র ধ্যান ভেঙে গেলে সে দেখতে পায় অদ্রি দুই হাত দিয়ে তার চোখ ঢেকে রেখেছে।এটা দেখে সে লজ্জা পেয়ে তাড়াহুড়া করে সেখান থেকে চলে গেলো।

এইদিকে আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে।ছি ছোট বোনের সামনে আবার একটা বাজে পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে আমাকে।তারপর বললাম,
–‘ওই হাত নামা।এইখানে কিছুই চলছে না আর তখনকারটা একটা দুর্ঘটনা ছিল।’

আমার এমন কথা শুনে অদ্রি মুচকি হেসে বলল,
–‘সেটা তো বুঝতেই পারছি কেমন দুর্ঘটনা।তারপরও বলছি আরো কয়েকদিন একটি ধৈর্য ধরো ভাবী_ই’

–‘ওই কে তোর ভাবীরে?আমি কখনোই তোর ভাবী হবো না।তোর ওই বুইড়া খাটাস ভাইকে টি জীবনেও বিয়ে করবো না।’ রেগে বললাম।

–‘সেটা তো দেখাই যাবে তুমি বিয়ে করো আর না করো।আর করবে কি তুমি তো বিয়ে করেছ-ই। ভাবীই’

অদ্রির কথায় এবার আমি রেগে ধমক দিয়ে বললাম,
–‘ওই আর একবার যদি ভাবী ভাবী করিস না তাহলে তোর একদিন কি আমার যতদিন লাগে।’

আমার কথায় অদ্রি পুনরায় মুচকি হেসে বলল,
–‘হুঁ, সেটা তো সময় হলেই দেখা যাবে।যে কথার জন্য আসলাম ফুপি তোমাকে ডাকে।তোমাকে জলদি যেতে বলেছে।আমি যাচ্ছি তুমিও আসো,তোমার জন্য বিশাল একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।’ এই বলে চলে গেলো অদ্রি।

এইদিকে আমি ভাবতে লাগলাম,
~~”সারপ্রাইজ! কি সারপ্রাইজ দিতে পারে?আচ্ছা ওনারা মত চেঞ্জ করলো না তো যে আর আদ্র ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে দিবে না?ওয়াও এটা হলে তো ভালোই হবে।”
এইসব ভেবে আগ্রহ নিয়ে ফুপিদের দিকে চলে গেলাম।

আমাকে আসতে দেখে ফুপি বলল,
–‘ফারিহা আমরা সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আদ্র আর তোমার বিয়ে আগামী শুক্রবার বাদ জুমা অনুষ্ঠিত হবে।যদিও আগেই তোমাদের বিয়ে হয়েছে।কিন্তু সেটা তোমরা ভুলে যাও আর তোমার যাকে যাকে বলার প্রয়োজন বলবে’
ফুপির কাছ থেকে এমন কথা শুনে সারপ্রাইজের আশা সারাজীবনের জন্য মিটে গেল আমার।আমার অনেক কান্না পাচ্ছে কিন্তু সবার সামনে কান্নাও করতে পারছি না কেননা আমার কান্নার মূল্যই যে কারো কাছে নাই।তাই আর কিছু না বলে ঘরে চলে আসলাম।

এসে আমার দীর্ঘ ৪ বছরের ভালোবাসা পত্রপুরুষের চিঠি গুলো বের করে জড়িয়ে ধরলাম কাদতে শুরু করলাম।আমার তো কান্নাই একমাত্র সঙ্গী হয়েছে আর কেউ নাই আমার। কান্না করে ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলতে লাগলাম,
–‘কৈ আছো তুমি পত্রপুরুষ?আমাকে কি এই বিপদ থেকে উদ্ধার করবে না? আমি যে আর পারছিনা।আমাকে এসে নিয়ে যাও।আমি না হয় তোমার নাম ঠিকানা কিছুই জানি না কিন্তু তুমি তো জানো তাহলে আমার এই বিপদে কিভাবে তুমি পারছো চুপ করে থাকতে?তুমি না আমার একটুও কষ্ট সহ্য করতে পারতে না তাহলে এখন কিভাবে সহ্য করতেছ?আমি যে আর নিতে পারছি না।প্লীজ আমাকে এখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাও।’
এইভাবে কান্না করতে করতে কখন যে ঘুমায় পড়ছি জানি না।
_______________________________________________
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মনটা অনেক ফুরফুরে লাগছিল কিন্তু যখনই আমার বিয়ের কথা মনে হলো তখনই কান্না করতে করতে মনে মনে ভাবতে লাগলাম,
–‘না আমি পারবো না অন্য কাউকে ভালোবাসতে অন্য কাউকে বিয়ে করতে।আমাকে কিছু একটা করতেই হবে।’ এইভেবে বাবার কাছে এসে দেখলাম উনি চেয়ারে বসে পত্রিকা পড়তেছে।এটা দেখে বাবার পায়ের কাছে বসে কান্না করতে করতে বললাম,
–‘প্লীজ বাবা,আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।আদ্র ভাইয়ার সাথে আমার কিছু ছিল না। প্লীজ তুমি বিশ্বাস করো।আমি যে অন্য কাউকে ভালোবাসি।’

আমার এমন কথা শুনে চোখ মুখ শক্ত করে বলল,
–‘……
.
.
.
চলবে..