আষাঢ়ে প্রেমের বর্ষণ পর্ব-০১

0
6183

#আষাঢ়ে_প্রেমের_বর্ষণ
#হাবিবুল্লাহ_হাবিব_ফুয়াদ

আজকে আমাকে দেখতে এসেছ।বিয়ে প্রায়ই ঠিকঠাক হয়ে গেছে হটাৎ আদ্র ভাইয়া কোত্থেকে দৌড়ে এসে সবার সামনে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।আমি ভাইয়াকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেছি কিন্তু ফলাফল শূন্য।আদ্র ভাইয়ার এমন ব্যাবহারে সবাই যেনো অবাকের শীর্ষে পৌঁছে গেছে।এলাকার সবচেয়ে ভদ্র ছেলে তারওপর আবার নামকরা ইউনিভার্সিটির প্রফেসর সবার সামনে এমন একটা কাজ করতেছে,ভাবা যায়?

বেশ কিছুক্ষণ পর আদ্র ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে কাউকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে হনহন করে বাহিরে চলে গেলো।

সবাই এখনও আমার দিকে মুখ হা করে তাকিয়ে আছে।কি হলো এটা?আদ্র কেনো হটাৎ করে এমনটা করলো?তার মতো একটা ছেলে এমনটা করতে পারে কিভাবে?সবার মনেই এই প্রশ্ন চলতে লাগলো।আর এইদিকে আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি লজ্জা আর অসস্তিতে কিছু বলা তো দূরে থাক মাথা তুলতেই পারছি না।কি হলো এটা আমার সাথেআদ্র ভাইয়া এমনটা কেনো করলো আমার সাথে?এমন নানা প্রশ্নে নিজেকে জর্জরিত করে চলছি..

আদ্র ভাইয়ার এমন ঘটনায় পত্রের বাবা ফুপিকে বলল,
–‘মিসেস রাহমান আপনি আমাদের ডেকে এনে এইভাবে অপমান করবেন আমি ভাবতেও পারিনি।’

পাত্রের বাবার এমন কথায় ফুপির মুখটা লাল হয়ে গেল।এমনিতেই তিনি এক কথার মানুষ তাকে কেউ কিছু বলবে এটা তিনি শুনতে একদমই পছন্দ করেন না।কিন্তু পরিস্থিতি এখন ঠিক উল্টো।তাই তিনি বিনয়ের সাথে বললেন,
–‘দেখেন ভাইসাহেব এমনটা যে হবে আমরা সেটা বুঝতে পারি নাই।হটাৎ যে আদ্র এমন কিছু করবে এটা আমাদের ভাবনার ও বাহিরে ছিলো।এই ঘটনার জন্য আপনাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার মুখ আমার নাই তারপরও পারলে আমাকে ক্ষমা করবেন’

পাত্রের বাবা এতে একটুও না দমে আগের চেয়েও বেশী জোরে চেচিয়ে বললেন,
–‘আপনারা আমাদের ডেকে এনে অপমান করেছেন।আপনাদের যদি নিজেদের ভিতরেই এমন ঠিক করাই ছিলো তাহলে আমাদের ডেকে এনে এভাবে অপমান করলেন কেনো?আপনাদের আমি দেখে নিব।’ এই বলে তিনি সবাইকে নিয়ে চলে গেলেন।

পাত্রপক্ষ চলে যেতে না যেতেই ফুপি হুংকার দিয়ে বলল,
–‘ফারিহা_আ_আ এসব কি? আমার মানসম্মান রাখলে না আর’

ফুপির এমন হুংকারে আমি কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছি না,তাই মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি এখন ও আর ভয়ে সারা শরীর ঝিমঝিম করছে আমার।আমার এমন অবস্থা দেখে বড়বাবা ফুপিকে বলল,
–‘আহা আপু ওকে এভাবে ধমকাচ্ছো কেনো?ওকে এখন একটু রেস্ট নিতে দাও আদ্র আসলে সবাই আমরা তার সাথে কথা বলবো এখন’

বড়বাবার এমন কথায় ফুপি যেনো আরো ক্ষেপে গিয়ে দ্বিগুণ জোরে চিৎকার দিয়ে বলল,
–‘দাও আরো আস্কারা দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলো।এতবড় একটা কাহিনী ঘটে গেলো আর ওনারা এখন কিছুই বলছে না।আসুক আজকে আদ্র ওর একদিন কি আমার একদিন।’ এই কথা বলে হনহন করে রুমে চলে গেলেন তিনি।ফুপি চলে গেলে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো সবাই ফুপিকে জমের মতো ভয় পায় বললেই চলে।ফুপি চলে যেতেই বড়বাবা সবার উদ্দেশ্য বললেন,
–‘তোমরা এখনও দাড়িয়ে আছো যে?আরো কোনো নাটক দেখার বাকি আছে নাকি?’

বড়বাবার এমন কথায় সবাই যার যার ঘরে চলে গেল আর আমি আমার ঘরে গিয়ে ভাবতে লাগলাম,
~~’কি হলো এটা?আমার সাথে আদ্র ভাইয়া এমনটা কেনো করলো?ভাইয়া কি আমাকে ভালোবাসে?না না তা হবে কেনো।তাহলে কি?’এমন নানা প্রশ্ন মনের মধ্যে উকি দিতে শুরু করলো।

এবার পরিচিত হওয়া যাক,
আমি ফারিহা মেহবুব।আহসান মেহবুব এবং আফসানা মেহবুবের প্রথমা কন্যা ছোট ভাই আফসান মেহবুব।
আর যার জন্য আজকে এত কিছু হলো উনি হলেন আদ্রিয়ান মেহবুব আদ্র।আবরার মেহবুব(বড়বাবা) রোমানা মেহবুবের(বড়মা) ২ মাত্র সন্তান বড় বোন আদ্রিতা মেহবুব বিয়ে করে এখন স্বামী নিয়ে লন্ডনে পাড়ি জমিয়েছে আর ছোট বোন অদ্রি মেহবুব।বাকিটা গল্পে আস্তে আস্তে জানতে পারবেন।
________________________________________________
ড্রয়িং রুমে আজকে বৈঠক বসেছে।বৈঠকে আলোচনার বিষ়য় হলো আদ্র ভাইয়ার তখনকার ঘটনা।
ড্রয়িং রুমের একপাশে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি।আর ঐদিকে সবাই আদ্র ভাইয়াকে নানা প্রশ্ন করে চলছে কিন্তু ওনার যেনো কারো কোনো কথাই কানে যাচ্ছে না।সেই তখন থেকে ফোনে কি যেনো করতেছেন।ওনার এমন ব্যাবহারে বড়বাবা ধমক দিয়ে বলল,
–‘আদ্র এটা কেমন ব্যাবহার?সবাই তোমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করতেছে আর তোমার সেদিকে কোনো খেয়াল নাই’

আদ্র ভাইয়া বড়বাবার কথায় এবার বলে উঠলো,
–‘সবাই একসাথে প্রশ্ন করতে থাকলে আমি কিভাবে জবাব দিবো?আমাকে কি জবাব দেয়ার সুযোগ দিছো তোমরা? এক এক করে জিজ্ঞাসা করো তোমরা কি কি জানতে চাও?’

আদ্র ভাইয়ার এমন কথা শুনে ফুপি সাথে সাথে ঝঙ্কার দিয়ে প্রশ্ন করে বসলো,
–‘তুমি তখন মেহমানদের সামনে ফারিহার সাথে ঐরকম বাজে ব্যাবহার কেনো করলে? তুমি কি জানতে না যে ফারিহার বিয়ের জন্য ওদেরকে আমি এনেছি?’

ফুপির এমন সিরিয়াস কথায় আদ্র ভাইয়া কিছুই হয়নি এমন একটা ভাব করে বলল,
–‘হুম,তাতে কি হয়েছে?’

ফুপি আদ্র ভাইয়ার ব্যাবহারে অনেকটা বিরক্ত হয়ে বলল,
–‘কি হয়েছে মানে?তুমি কি বুঝতে পারছো না আজকে তোমার জন্য আমাদের মানসম্মান কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে?’

আদ্র ভাইয়া এবার একটু সিরিয়াস মুডে বললো,
–‘হুম তাতে কি আমি আমার বিবাহিত স্ত্রীর সাথে যা খুশি করতে পারি।এটার জন্য কি পাড়ায় পাড়ায় বলে বলে অনুমতি নিতে হবে নাকি?’

আদ্র ভাইয়ার এমন কথায় আমি যেনো আকাশ থেকে পড়লাম এতক্ষণ মাথা নিচু করে থাকলেও এবার মাথা তুলে একটু দেখলাম।তারপর অবাক হয়ে আদ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম,
~~’বিবাহিত স্ত্রী?আমার আবার কখন বিয়ে হইলো আদ্র ভাইয়ার সাথে?তাহলে আদ্র ভাইয়া মিথ্যা বলতেছে কেনো?না না মিথ্যা কেনো বলবে,তাহলে আমি কি স্বপ্ন দেখতেছি নাকি?
এইদিকে আদ্র ভাইয়ার এমন কথা শুনে সবার মুখ ইয়া বড় হা হয়ে গেছে।কি বললো এটা আদ্র?ধাক্কাটা সামলে নিতে বেশ কিছুক্ষণ লাগলো।সামলে নিয়েই বাবা আদ্র ভাইয়াকে বলল,
–‘মানে,কি বলছিস এসব আদ্র?’

–‘জি চাচ্চু ঠিক-ই তো বলছি।’

আদ্র ভাইয়ার এমন কথায় ফুপি হুঙ্কার দিয়ে বলল,
–‘ফারিহা_আ_আ_আ_আ_আ_আ এসব কি শুনছি আমি?

–‘ও আর কি বলবে ফুপি যা বলবে টা তো এই কাবিননানা।’ এটা বলে একটা কাগজ এগিয়ে দিলো বাবার উদ্দেশ্যে।

বাবা কাগজ টা পড়ে চেচিয়ে বললেন,
–‘ফারিহা_আ_আ_আ_আ_আ_আ_আ_আ..’

বাবার এমন চিৎকারে মাথা নিচু করে কান্না করে মিনমিন করে বললাম,
–‘বাবা এসব কিছু ঠিক না।আদ্র ভাইয়া মিথ্যা বলতেছে আমি এর কিছুই করি নি।’ কিন্তু আমার কথা মনে হয় না কেউ শুনতে পাইছে বাবা,ফুপি আর আদ্র ভাইয়াকে জমের মতো ভয় করি কিনা তাই তাদের সামনে মুখ ফুটে ভালোভাবে বলতে পারলাম না।

আমার এমন অবস্থা দেখে বড়বাবা বললেন,
–‘আহা তোমরা অযথাই আমার ফারুমাকে এমন ভাবে ধমকাচ্ছ কেনো? আমার মনে হচ্ছে এইসব কিছুর মুলে হলো এই আদ্র আর তোমরা ওকে ছেড়ে আমার ফারুমা-কে ধমকাচ্ছ।’

বড়বাবার এমন কথায় আমার কান্না যেনো বেড়ে গেল।আমি বড়বাবার পাশে গিয়ে দ্বিগুণ গতিতে কান্না করতে করতে বললাম,
–‘দেখো না বড়বাবা,আদ্র ভাইয়া শুধু শুধু মিথ্যা বলে আমাকে ফাসাচ্ছে আমি এর কিছুই জানি না।শুধু শুধু আমাকে দোষারোপ করছে।’

আমার এমন কথায় আদ্র ভাইয়া হনহন করে উঠে এসে আমাকে টেনে নিয়ে গিয়ে কাবিননামার কাগজটা হাতে ধরায় দিয়ে বলল,
–‘তোর কাছ থেকে এটা আশা করিনাই আমি ফারু ছি ছি।নিজের বিবাহিত স্বামীকে বিয়ে হওয়ার পর অস্বীকার করছিস।তুই আমাকে বিয়ে করে এটা আমার সাথে করতে পারলি কিভাবে?তোর একটুও বিবেকে বাঁধলো না?’

আদ্র ভাইয়ার এমন কথার আমি কি জবাব দিবো বুঝতে পারছিলাম না। কাবিননামার দিকে তাকিয়ে দেখি কনের জায়গায় স্পষ্ট জ্বলজ্বল করছে ‘ফারিহা মেহবুব’ নামটা আর বরের জায়গায় ‘আদ্রিয়ান মেহবুব আদ্র’ সাথে স্বাক্ষরের জায়গায় আমার স্বাক্ষর দেখে আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো।এটা কিভাবে সম্ভব?আমি কখনো এমন কাগজে স্বাক্ষর করি নাই,তাহলে এটা কি?
তারপরও আমি মিনমিন করে বললাম,
–‘না এটা মিথ্যে,আমি কখনো বিয়ে করি নাই তোমাকে।এই কাগজটা ও মিথ্যে।’

আমার এমন কথায় আদ্র ভাইয়া একটু রাগী ভাব নিয়ে বলল,
–‘এর পরও তুই অস্বীকার করছিস ফারু?তুই নিজের বিয়েকে অস্বীকার করবি আমি ভাবতেও পারি নাই,ছি ফারু ছি!’

আমাদের এমন কথা কাটাকাটি দেখে এবার ফুপি চেচিয়ে বলল,
–‘তোমরা থামবে..আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি দেখো তোমাদের পছন্দ হয় কিনা।সেটা হলো…’
.
.
.
চলবে….