আষাঢ়ে প্রেমের বর্ষণ পর্ব-০৫

0
5767

#আষাঢ়ে_প্রেমের_বর্ষণ
#হাবিবুল্লাহ_হাবিব_ফুয়াদ
#পর্ব_৫
“আপনি আমার জীবনটা নিয়ে এভাবে কেনো খেললেন আদ্র ভাই? আমি আপনার কাছে কি অন্যায় করেছিলাম যার জন্য আপনি আমাকে এত বড় একটা শাস্তি দিলেন?আজকে আপনার জন্য আমার জীবন এমন একপর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে কেউই আমার কথা বিশ্বাস করতে চাইছেনা।কেনো এমনটা করলেন আমার সাথে আদ্র ভাই,কেনো?” আদ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে হালকা রেগে বললাম।

আমার এমন প্রশ্নে আদ্র ভাইয়ার মুখটা কেমন যেনো চুপসে গেলো।তারপর অসহায় ভঙ্গিতে বলল,
–‘ফারু এখন আমি তোমার এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবোনা।তবে একটা কথা মনে রেখো, কেউই তোমার কথা অবিশ্বাস করে নি বরং সবাই তোমাকে অনেকটা বিশ্বাস করে আর ভালোবাসে।’

আদ্র ভাইয়ার এমন কথায় আমি রেগে গিয়ে বললাম,
–‘আপনি সবকিছু দেখার পর এমন কথা কিভাবে বলতে পারলেন যে সবাই আমাকে বিশ্বাস করে।যদি বিশ্বাসই করত তাহলে আমার ওপর দিয়ে এতটা ঝড় বয়ে যেত না কখনো।

আদ্র ভাইয়া আমার কথায় সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,
–‘ফারুপাখি এত রেগে যাচ্ছ কেনো?বললাম তো সময় হলে তুমি ঠিকই বুঝতে পারবে।আর তখন যদি আমাকে তোমার ভুল মনে হয় তাহলে আমাকে যা শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নিব।

আদ্র ভাইয়ার এমন কথায় আমি অনেকটা অবাক হয়ে গেলাম।তারপর বিড়বিড় করে বললাম,
~~”এটা কিভাবে সম্ভব? আর আদ্র ভাইয়া এতটা সিরিয়াস বিষয় নিয়ে মিথ্যা কিছুতেই বলতে পারে না।তাহলে কি আমি ভুল? আহ আর ভাবতে পারছিনা।”

আদ্র ভাইয়া আমার এমন অবস্থা দেখে এই বিষয়টাকে বাদ দেয়ার জন্য মুচকি হেসে বলল,
–‘থাক থাক আর বেশি ভাবতে হবে না।তোমার যে শরীরের অবস্থা আল্লাহ! বেশি ভাবতে ভাবতে যদি আবার কঙ্কাল হয়ে যাও তখন আমার ভবিষ্যৎ বাবুদের কি হবে?আমার অনেক আশা নাতি-নাতনিদের সাথে গল্প করার।তার কি হবে?’

আদ্র ভাইয়ার এমন কথায় আমি হাঁ করে ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম, বুইড়া খাটাস বলে কি! আমি এখনও পিচ্চি একটা মেয়ে আর উনি এখনই নাতি নাতনিদের চিন্তা করে ফেলেছে।

আমাকে এমন হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদ্র ভাইয়া মুচকি হেসে খোঁচা দিয়ে বলল,
–‘থাক থাক এইভাবে আর হা করে গিলতে হবে না আমাকে।আমি জানি তোমার বর অনেক হ্যান্ডসাম, এখনই এইভাবে লুক দিও না বাকি জীবনের জন্যও কিছু রাখো।যেভাবে হা করে দেখছ আমারতো কেমন কেমন একটা ইয়ে ইয়ে ফিলিংস আসতেছে।’

আদ্র ভাইয়ার এমন কথায় আমি অনেকটা লজ্জা পেলাম।কখনোই এমন পরিস্থিতিতে পড়িনি আগে।আর এই বুইড়া খাটাস,বজ্জাত চামচিকা ব্যাটায় আমাকে শুধু শুধু লজ্জায় ফেলতেছে।

–‘আমাকে মনে মনে গালি দেয়া শেষ হলে এখন ঘুমান ম্যাডাম।বেশি রাত জাগলে আমাকে এখনই না আবার আমার নাতি নাতনিদের দীদুনকে হারাতে হয় আপনার শরীরের যে অবস্থা।’
এই বলে তিনি বিছানায় শুতে নিলেই,আমি তাড়াতাড়ি করে বললাম,
–‘না না আমি আপনার সাথে এক বিছানায় ঘুমাতে পারবো না।আপনি বরং নিচে ঘুমান।’

আদ্র ভাইয়া আমার কথাকে বিন্দুমাত্র গ্রাহ্য না করে বিছানায় শুয়ে পড়ল।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
–‘আমার তো আপনার সাথে এক বিছানায় ঘুমাতে কোনো অসুবিধা নেই ম্যাডাম।আপনার যদি কোনো অসুবিধা থেকে থাকে তাহলে মেঝেতো আছেই,আপনি বরং সেখানেই ঘুমান।কিন্তু খবরদার অন্যঘরে যাওয়ার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন কেননা এখন থেকে আপনাকে আমার ঘরেই ঘুমাতে হবে।’

আদ্র ভাইয়ার এমন ব্যাবহারে আমার অনেক রাগ হতে লাগলো।আমি রেগে ফোফাতে লাগলাম।
আমার এমন অবস্থা দেখে আদ্র ভাইয়া মুচকি হেসে বলল,
–‘ম্যাডাম আপনাকে কিন্তু রাগী লুকে অনেকটা কিউট লাগে।আর তা দেখে আমার ফিলিংস আসতে শুরু করে। যদি ভুল করে কিছু একটা করে ফেলি তাহলে তার জন্য আমাকে আবার দোষ দিতে পারবেন না।তাই কিছু করার আগেই আপনি বরং ঘুমিয়ে পড়ুন তাড়াতাড়ি।’

আদ্র ভাইয়ার এমন কথায় আমি যেনো আকাশ থেকে পড়লাম।লোকটা বলে কি? রাগকে এক মুহুর্তে পানি কিভাবে করতে হয় এটা মনে হয় এনার চেয়ে ভালো কেউই জানে না। তারপর আমি আর কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে একপাশে গিয়ে শুয়ে পরলাম।
_______________________________________________
পরেরদিন সকালে খোচা খোচা কিছুর স্পর্শে আমার ঘুম ভেংগে গেল।চোখ খুলতেই দেখতে পেলাম আমি আদ্র ভাইয়ার বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছি।এটা দেখার সাথে সাথেই লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে পড়লাম।তারপর আদ্র ভাইয়াকে এখনও ঘুমাতে দেখে কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে আদ্র ভাইয়াকে এখনও ঘুমাতে দেখে মনে মনে উপরওয়ালাকে ধন্যবাদ দিয়ে নিশ্চিন্ত মনে রেডী হয়ে নিচে চলে আসলাম।
_______________
“ভাবী ঘুম কেমন হলো? ঘুম হয়েছে তো নাকি?” নিচে আসতে না আসতেই অদ্রি আমাকে দেখে প্রশ্ন করে বসলো।

অদ্রির এমন প্রশ্নে আমার অনেকটা লজ্জা পেলাম।কিন্তু কেনো পেলাম জানি না।তারপরও লজ্জা প্রকাশ না করে হালকা রাগের ভঙ্গিতে বললাম,
–‘অদ্রি এটা কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে।ভুলে যাবি না আমি তোর বড়আপু।সো বেশি এপাশ ওপাশ করলে ঠাটিয়ে দিবো একটা।’

আমার কথায় অদ্রির মধ্যে তেমন কোনো ভাবান্তরই দেখতে পেলাম না।বরং সে অধীর আগ্রহ নিয়ে আবার প্রশ্ন করল,
–‘ভাবী বলনা প্লীজ কি কি হলো তোমাদের’

অদ্রির কথায় আমার আজকে সকালের কথা মনে হতেই আমি অনেকটা বেশী লজ্জা পেলাম।আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম,
~~”ইস কি বাজে একটা পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছিল আমাকে ভাগ্যিস আদ্র ভাইয়া ঘুমের মধ্যে ছিল নাহলে কি হতো আমার?আমি কিভাবে এই মুখ নিয়ে আদ্র ভাইয়ার সামনে যেতাম।”

আমাকে কিছু বলতে না দেখে অদ্রি বলে উঠলো,
–‘ভাবী-ই-ই কোথায় হারিয়ে গেলে।এমন মুখ লাল করে কি ভাবতেছ শুনি?ভাইয়ার কথা নয়তো’

অদ্রির কথায় আমার ধ্যান ভাঙলে আমি হালকা রাগী গলায় বললাম,
–‘অদ্রি এবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে।আমি কিন্তু..’

আমার কথা শেষ না হতেই অদ্রি বলে উঠলো,
–‘আরে রাখো তো এখন ওসব কথা তারচেয়ে বলো কি ভাবছিলে এতক্ষণ?’

অদ্রির এমন কথায় আমি বুঝতে পারলাম যে আমার আজকে আর নিস্তার নেই কেননা বিপক্ষ দল আটঘাট বেধে মাঠে নামলেও আমি যে আজকে অস্ত্রশুন্য।হটাৎ রান্নাঘর থেকে বড়মা বের হয়ে এসে অদ্রিকে ধমক দিয়ে বলল,
–‘অদ্রি সকাল সকাল আমার ফারুমাকে না জ্বালালে তোর হচ্ছে না? যা এখান থেকে।’
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
–‘তুই আয় তো মা।আমার কাছে এসে বসে থাক।’
বড়মার এই কথা শোনার সাথে সাথেই অদ্রির কাছ থেকে বাচার আনন্দে খুশিতে আত্মহারা হয়ে বড়মার পিছনে পিছনে চলে গেলাম।।
______________________________________________
আদ্র ভাইয়া ছাড়া সবাই খাবার টেবিলে বসে আছি।কেননা সাহেব এখনও ঘুমে ব্যাস্ত।অদ্রি তাকে ডাকতে গিয়েছিল কিন্তু ফলাফল শূন্য।তাই তাকে ছাড়াই সবাই খেতে বসেছি।

হটাৎ আদ্র ভাইয়া এসে আমার সামনে বসে বড়মার উদ্দেশ্যে বলল,
–‘মা ক্ষুধা লাগছে আমার।কিছু খেতে দাও আমাকে’

আদ্র ভাইয়ার এমন কথায় সবাই আদ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা দেখে হা হয়ে যায়।তারপর সবাই কিছু না বলেই মুচকি হেসে মাথা নিচু করে নেয় আর অদ্রি তো জোরেই হেসে ফেলে।অদ্রিকে হাসতে দেখে আমি আদ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ওনার গলার ঠিক একটু নিচে আমার ঠোঁটের দাগ লেগে আছে যেটা আদ্র ভাইয়া মনে হয় খেয়াল করেনি।এটা দেখে আমার লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছা করছিলো সবার সামনে এমন লজ্জাস্কর একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হবে আমি কখনই ভাবতে পারিনি।লজ্জায় অসস্তিতে আমি মাথা নিচু করে থাকলাম।

এইদিকে সবাইকে এইভাবে হাসতে দেখে আদ্র ভাইয়া অবাক হয়ে বলল,
–‘সকাল সকাল তোমাদের কি ভূতে ধরলো,নাকি এলিয়েন দেখতে পেলে যে এইভাবে কোনো কারণ ছাড়াই হাসতেছ?’

আদ্র ভাইয়ার এমন কথায় অদ্রি হেসে বলল,
–‘জি ভাইয়া এলিয়েন-ই বলতে পারো।তবে তুমি এখনও দেখতে পারো নি।যদি দেখতে চাও তাহলে আয়নার সামনে গিয়ে তোমার গলার নিচের দিকে তাকাও।’

অদ্রির এমন কথায় আদ্র ভাইয়া মুখ হা করে তাকিয়ে রইল।তারপর উঠে গিয়ে যেই ড্রয়িং রুমের বেসিনের সামনে দাড়িয়েছে অমনি চিৎকার করে উঠে দৌড়ে উপরের দিকে চলে গেল।

আদ্র ভাইয়ার এমন দৌড় দেখে সবাই এবার জোরেই হেসে ফেলল আর এইদিকে আমার তো যায় যায় অবস্থা।না পারছি কিছু বলতে আর না পারছি উঠে যেতে।লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছা করছে আর আদ্র ভাইয়ার ওপর অনেক বেশি রাগ হচ্ছে আমাকে এমন একটা পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য।শেষে আমি আর থাকতে না পেরে আদ্র ভাইয়ার দেখানো পথে আমি আমার ঘরের দিকে দৌড়ে চলে গেলাম।আমার এমন চলে যাওয়া দেখে বড়মা ধমক দিয়ে বলল,
–‘এই তোমরা সবাই থামবে।মেয়েটাকে একটু শান্তি মতো খেতেও দিলেনা।'[বি.দ্র: ফুপি তার বাসায় সমস্যার জন্য কালকেই চলে গেছে]

বড়মার কথায় অদ্রি অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
–‘কই আমরা আবার কি করলাম? সকাল সকাল ওরা একটা সার্কাস দেখালো তাই একটু হাসলাম আর কি।’

অদ্রির এমন কথায় বড়মা ধমক দিয়ে বলল,
–‘বেশি কথা শিখে গেছিস।চুপচাপ খেয়ে খাবার টা নিয়ে গিয়ে ফারুমাকে দিয়ে আসবি।’

এইদিকে,আমি বিছানায় শুয়ে নিজেই নিজেকে গালি দিচ্ছি,আমি কিভাবে পারলাম আদ্র ভাইয়ার সাথে এমনটা করতে।তারপর হটাৎ আলমারির দিকে নজর পড়তেই মনটা আপনা-আপনিই খারাপ হয়ে গেল।কেননা সেখানেই তো আছে আমার পত্রপুরুষের চিঠিগুলো।যা আজকে দেখার কিংবা পড়ার অধিকার যে আমি হারিয়ে ফেলেছি।এটা মনে হতেই আমার অনেক কান্না পাচ্ছে।কিভাবে পারবো আমি আমার ভালোবাসাকে ভুলতে? এ যে অসম্ভব। যখন থেকে ভালোবাসা কি বুঝতে পারছি তখনই পত্রপুরুষের আগমন আর তার কিছুদিনের মধ্যেই ভালোবেসে ফেলছিলাম সেই অনাকাঙ্ক্ষিত পত্রপুরুষকে।এতদিনের ভালোবাসা কিভাবে ভুলবো আমি। তারপর মনে হলো না আমাকে যে ভুলতেই হবে কেননা আমি যে এখন অন্যকার ও স্ত্রী যার সাথে জুড়ে আছে আমার পরিবারের মান সম্মান।আমার পরিবারের কথা ভেবে হলেও আমাকে যে ভুলতেই হবে। এইভেবে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম পত্রপুরুষের কোনো স্মৃতিই না রাখার।তাই সেই অনাকাঙ্ক্ষিত পত্রপুরুষের দেয়া সবকিছুই কোনো একসময় বাহিরে গিয়ে ফেলে দিয়ে আসবো এই ভেবে একটা ব্যাগে ভরে ফেললাম। ব্যাগটা যেই লুকিয়ে রাখতে যাবো তখনই পিছন থেকে কারও কথায় আমার হাত থেকে পড়ে গিয়ে সব কিছু মেঝেতে ছড়িয়ে পড়লো।
হটাৎ পিছন থেকে কে যেন বলে উঠলো,
–‘………….
.
.
.
চলবে……..