আষাঢ়ে প্রেমের বর্ষণ পর্ব-০৬

0
4683

#আষাঢ়ে_প্রেমের_বর্ষণ
#হাবিবুল্লাহ_হাবিব_ফুয়াদ
#পর্ব_৬
“তুমি এখানে কি করতেছ?আর এসব কি,এত চিঠি কোথা থেকে আসল? তুমি কি কাউকে ভালোবাসতে নাকি যে তোমাকে এই চিঠিগুলো দিয়েছে?” চিঠিগুলো তাড়াতাড়ি করে ব্যাগে ভরে ফেলে পিছনে তাকিয়ে দেখি খাবার হাতে নিয়ে অদ্রি দাড়িয়ে এই কথা গুলো বলছে।এই অসময়ে অদ্রিকে দেখে আমার শরীরে অজানা ভয়ের একটা শিহরণ বয়ে যেতে লাগলো।আর ভাবতে লাগলাম,
~~~”এখন কি হবে? এখন কিভাবে আমি বিষয়টাকে লুকিয়ে রাখবো।কোনোভাবেই যে সম্ভব না আর।”
তারপরও হাল ছেড়ে না দিয়ে একটু চেষ্টা করার জন্য রাগের ভঙ্গিতে বললাম,
–‘এইভাবে হুট করে কেউ কারো ঘরে ঢুকে?আমি জরুরী কাজ করছিলাম আর তুই এসে সব কিছুই ভেস্তে দিলি।খাবারটা টেবিলে রেখে বের হ আমার কাজ আছে এখন।’

আমার এমন কথা শুনে অদ্রি বলে উঠল,
–‘কি হয়েছে তোমার আপু,এভাবে কথা বলতেছ কেনো? তোমার সারা শরীর দিয়ে তো ঝরঝর করে ঘাম ঝরতেছে।কোনো সমস্যা?’

অদ্রির কথার প্রেক্ষিতে আমি তাড়াতাড়ি করে বললাম,
–‘আরে কোনো সমস্যা না।তুই যা এখন আমার কিছু কাজ আছে।আমি পরে খেয়ে নিবো এখন’

আমার কথায় অদ্রির মধ্যে চলে যাওয়ার কোনো প্রবণতাই দেখলাম না বরং সে আরো বেশি আগ্রহী হয়ে বলল,
–‘আপু তুমি তো জানোই আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি।বেশ কিছুদিন থেকে তোমাকে মন খারাপ করে থাকতে দেখে,আমার একটুও ভালোলাগছে না।তোমার সরণ আছে? ছোট বেলায় আমি যখন কান্না করতাম তখন তুমি আর বড়াপু মিলে কি করতে আমার সাথে।আপু তো এখন নাই কিন্তু তুমি আমাকে কেনো এত কষ্ট দিচ্ছ?তুমি জানো না তোমাদের কষ্ট আমি সহ্য করতে পারি না।তুমি কেনো কষ্ট পাচ্ছ বলো আমাকে আমিও চেষ্টা করে দেখি।প্লীজ আপু আর চুপ করে থেকো না।’

অদ্রির এমন কথায় আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।কেননা,অদ্রি যে আজকে আর না জেনে ছাড়বে না এটা আর আমার বুঝতে বাকি নেই।

আমাকে চুপ থাকতে দেখে অদ্রি আবার বলে উঠলো,
–‘ঠিক আছে বলতে না চাইলে নাই।আমি নিজেই জেনে নিবো।আমি তোমাকে ভালোবাসলেও তুমি তো আর আমাকে ভালোবাসো না।আমাকে একটুও আপন মনে করো না। থাক তোমার বলতে হবে না..’ এই বলে ন্যাকা কান্না শুরু করলো।

অদ্রির অবস্থা দেখে মনে মনে বললাম,
~~~”ধুর এই মেয়ে দেখছি আজকে না জেনে কিছুতেই ছাড়বে না।আচ্ছা বলেই দেখি।কত আর মিথ্যা বলবো? পরে যা হবার হবে।কিন্তু ওকে বললে যদি কোনো সমস্যা হয়?আমার পরিবারের মানসম্মানের ওপর যদি কোনো আঘাত আসে?তাহলে আমি নিজেকে কিভাবে ক্ষমা করবো।”
তারপর অদ্রির উদ্দেশ্যে বললাম,
–‘ওকে বোনু এখন ন্যাকামি বন্ধ কর।আমি বলবো কিন্তু তার আগে আমাকে কথা দিতে হবে যে তুই কাউকেই বলবি না’

আমার কথা শুনে প্রায় সাথে সাথেই বলল,
–‘ওকে ওকে কাউকেই বলবো না।এখন বলো’

তারপর আমি অদ্রিকে শুরু থেকে সব কিছুই খুলে বললাম।আমার কথা শুনে অদ্রি ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলল,
–‘ভাইয়াকে এর জন্য শাস্তি পেতে হবে।ওর কত বড় সাহস তোমাকে কষ্ট দেয়।কিন্তু আপু ভাইয়া সেদিন কেনো এমনটা করলো?’

অদ্রির এমন কথার প্রেক্ষিতে আমি বললাম,
–‘সেটা তো আমিও বুঝতে পারছিনা।তবে কালকে আদ্র ভাইয়ার কথায় আমার মনে হচ্ছে আমাদের পরিবারের সবাই অথবা কেউ না কেউ তো জানতোই যে কিছু না কিছু হবেই।’

–‘কিন্তু আপু ওনারা যদি জানতোই তাহলে এত অ্যাক্টিং করলো কেনো?’

–‘সেটা তো আমিও বুঝতে পারছিনা।কিন্তু এতটুকু বুঝতে পারছি এর পিছনে নিশ্চয়ই কোনো বড়সড়ো ঘাপলা আছে।’

আমার এমন কথায় অদ্রি কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর বলে উঠলো,
–‘আপু আমি কি চিঠিগুলো দেখতে পারি?’

অদ্রির কথায় আমি চমকে গেলাম।তারপর রেগে বললাম,
–‘অদ্রি এবার কিন্তু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে।যেভাবেই হোক না কেনো আমার এখন বিয়ে হয়ে গেছে।আমি চাইলেও এটাকে অস্বীকার করতে পারবো না আর ভাঙতে পারবো না।তাই আগের বিষয় টেনে এনে অযথা বাড়াবাড়ি করার কোনো দরকার নেই।সব কিছুই ভুলে থাকাই ভালো হবে। এতেই আমাদের সবার মঙ্গল।’

আমার কথার প্রেক্ষিতে অদ্রি বলল,
–‘আরে আপু রেগে যাচ্ছ কেনো।আমি শুধু একটা চিঠি দেখবো আর কিছু করবো না এমনকি পড়বোও না।প্লীজ আপু প্লীজ প্লীজ আর না করিও না’

অদ্রির এমন কথায় আমি অসহায় ভাবে বললাম,
–‘আচ্ছা ঠিক আছে।’

তারপর আমি একটা চিঠি অদ্রির হাতে দিলাম।চিঠি খোলার প্রায় সাথে সাথেই অদ্রি চিৎকার করে উঠে বলল,
–‘ওহ মায় গড!আমি যা ভেবেছি ঠিক তাই,কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব?’

অদ্রির কথার কোনো মানেই বুঝতে না পেরে আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম,
–‘কি হয়েছে অদ্রি?কোনো সমস্যা?’

অদ্রি আমার কথার কোনো জবাব না দিয়ে আমাকে বলল,
–‘আচ্ছা আপু একটা কথা বলো তো,তুমি আদ্র ভাইয়ার হ্যান্ড রাইটটিং কতো দিন থেকে দেখো নাই?’

অদ্রির এমন কথায় আমি অবাক হয়ে ওর দিকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকলাম।এই মেয়ে বলে কি?চিঠি দেখে আদ্র ভাইয়ার হ্যান্ড রাইটিং এর কথা জিজ্ঞাসা করতেছে।পাগল হয়ে গেল নাকি?

আমাকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে অদ্রি বলল,
–‘আহা বলো না কতদিন আগে দেখেছো।আমি তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিবো।’

অদ্রির কথায় আমি বললাম,
–‘অনেকদিন হবে এই প্রায় ৮/১০ বছর।কেন বল তো?’

আমার কথা শোনার সাথে সাথে অদ্রি আমাকে অবাক করে দিয়ে হনহন করে বাহিরে চলে গেল।ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললাম,
–‘যা বাবা এর আবার কি হলো?আমাকে জিজ্ঞাসা করলো আর কিছু না বলেই চলে গেলো।ধুর বাবা কিছু বুঝতে পারছিনা’

তারপর আবার কিছুক্ষন পর ফিরে এসে আমার হাতে একটা খাতা ধরায় দিয়ে বলল,
–‘এটা দেখো’

অদ্রির কথায় আমি মুখ হা করে কিছুক্ষন তাকিয়ে তারপর রেগে বললাম,
–‘এমন মজা করার মানে কি অদ্রি? আমি ভালো ভাবেই দেখতে পারছি এটা তোর খাতা।তারপর এটা দেখতে বলার মানে কি?’

আমার রাগ দেখে অদ্রি মুচকি হেসে বলল,
–‘আহা আপু এত রেগে যাচ্ছো কেনো? আসল সারপ্রাইজ তো এখন ও বাকি আছে।আসল সারপ্রাইজ পেতে চাইলে আমি যেটা করতে বলবো সেটাই করো।’

–‘আচ্ছা বাবা সরি আর রাগবো না।এখন বল আমাকে কি করতে হবে।’

আমার এমন কথায় অদ্রি মুচকি হেসে বলল,
–‘কিছুই করতে হবে না শুধু আমার খাতার প্রত্যেকটা পৃষ্টা দেখবে।তাহলে কি হবে জানো?’

–‘কি হবে?’

আমার কথা শুনে অদ্রি মুচকি হেসে বলল,
–‘তোমার মতো অত বড় একজন মানুষের বিশাল বড় চিন্তার অবসান ঘটিয়ে দিবে আমার এই ছোট্ট খাতাটা।’

অদ্রির কথায় আমি আবারও ওর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলাম।

আমাকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল,
–‘আহা আমার দিকে এভাবে হা করে তাকিয়ে না থেকে দেখো তো’

তারপর আর কি,আমি একটা একটা করে পাতা দেখতে শুরু করলাম।এভাবে বেশ কিছুক্ষন দেখার পর হটাৎ একটা পাতায় এসে আমার চোখ আটকে গেলো,আমি অবাক হয়ে লেখা গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকলাম কেননা এই লেখাগুলো যে আমার খুব খুব চেনা।খুব বেশি কাছের কারো লেখা।আমি নিশ্চিত যে এগুলোই সেই পত্রপুরুষের লেখা।এটা দেখে আমার মুখ থেকে আপনা আপনি বেরিয়ে আসলো,
–‘এটা কিভাবে সম্ভব?’

আমাকে এভাবে চমকে যেতে দেখে অদ্রি হাহাহা করে হেসে উঠলো।তারপর হাসতে হাসতে বলল,
–‘আপু কেমন লাগলো আমার সারপ্রাইজ?’

অদ্রির কথায় আমি ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে ওর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম,
–‘এটা তো তোর লেখা নয়।তাহলে এটা কার লেখা বলনা বোন প্লীজ।’

আমার এমন আকুতি শুনে অদ্রি বিজ্ঞের ভঙ্গিতে বলে উঠলো,
–‘বালিকা আমি তোমাকে বলবো যদি তুমি আমার কিছু শর্তে রাজি হও তাহলে।’

অদ্রির কথার প্রায় সাথে সাথেই আমি বলে উঠলাম,
–‘আমি তোর সব শর্তে রাজি আছি বোনু।এখন বল তাড়াতাড়ি।’

আমাকে এভাবে অস্থির হতে দেখে অদ্রি যেনো মজা পাচ্ছে।তাই সে মুচকি হেসে বলল,
–‘ভেবে বলছো তো? পরে কিন্তু আবার না করতে পারবে না।’

আমি অস্থির ভঙ্গিতে বললাম,
–‘আমি ভেবেই বলছি।প্লীজ বোনু এবার তো বল।’

তারপর অদ্রি যা বলল তা শুনে আমি যেনো অবাকের শীর্ষে পৌঁছে গেলাম।অদ্রি যার নাম বলল তিনি হলেন………
.
.
.
চলবে….

~~ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।