আষাঢ়ে প্রেমের বর্ষণ পর্ব-০৭

0
5602

#আষাঢ়ে_প্রেমের_বর্ষণ
#হাবিবুল্লাহ_হাবিব_ফুয়াদ
#পর্ব_৭
“কিরে ফারু এভাবে লাফাচ্ছিস কেনো?কালকেই না তোর বিয়ে হলো,আর বিয়ের পরেরদিনই এমন পাগলের মতো লাফাচ্ছিস?একটু তো লজ্জা কর মা।যতই নিজেদের মধ্যে বিয়ে হোক না কেনো বিয়ে তো বিয়েই” আমাকে এইভাবে লাফানো দেখে মা বলল।
মায়ের কথার প্রেক্ষিতে বড়মা; মাকে বললো,
–‘আহা ওকে এভাবে বকছিস কেনো।এটা তো ওরই বাড়ি আর আমার ফারূমাকে এইভাবেই হাসি-খুশি থাকতে দেখতেই ভালো লাগে।তাই ওর যা ইচ্ছা করুক না।’
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
–‘বল তো মা কি হইছে যে তুই লাফাচ্ছিস?’

বড়মার কথায় আমি বললাম,
–‘আসলে বড়মা আদ্র ভাইয়া…না না কিছু না তোমাদের বলা যাবে না’
এই বলে সেখান থেকে দৌড়ে চলে আসলাম।আর এসেই বড়বাবার সামনে পড়লাম।আমাকে এইভাবে দৌড়াতে দেখে বড়বাবা বলল,
–‘কি হয়েছে আমার ফারুমার?এভাবে দৌড়াচ্ছ কেনো?’

বড়বাবার কথা শুনে আমি দৌড়ে গিয়ে বড়বাবাকে জড়িয়ে ধরে ওনার পাশে বসে পড়লাম।আমাকে এমন করতে দেখে বড়বাবা বলল,
–‘কি হয়েছে আমার ফারুমার?আজকে এত খুশি যে?খুশির সংবাদ আমাকেও একটু বলো আমিও শুনি।’

বড়বাবার এমন কথায় আমি বললাম,
–‘না না তোমাকে এটা বলা যাবে না। জানো বড়বাবা অদ্রি আমাকে আজকে অনেক বড় একটা খুশির সংবাদ দিয়েছে। তাই আমার অনেক আনন্দ লাগতেছে।তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে অদ্রিকে আজকে শপিং করিয়ে দিবো আর ঘুরতে নিয়ে যাবো প্লীজ বড়বাবা না করিও না’

আমার কথা শুনে বড়বাবা বলল,
–‘আমার ফারুমা যেহেতু বলেছে আমি না করি কিভাবে? তবে মা তোদের একা যেতে দিবো না। বুঝতেই তো পারছিস দিনকাল ভালো নয়,তাই তোদের সাথে আদ্র যাবে।’

বড়বাবার কথায় মনে মনে অনেক খুশি হলেও বাহিরে সেটা প্রকাশ না করে বললাম,
–‘না না বড়বাবা ওনাকে কেনো যেতে হবে আমরাই পারবো তো।’

আমার এমন কথা শুনে বড়বাবা বলল,
–‘আমি জানি তো তোরা পারবি।কিন্তু মা দিনকাল যে ভালো না।তাই তোদের সেফটির জন্য আদ্র’কে যেতে বলা,তোদের কিছু হলে আমাদের কি হবে?’

বড়বাবার কথায় আমি বললাম,
–‘ঠিক আছে বড়বাবা।’
______________________________________________
“অনেক উড়েছো বালিকা এখন মাটিতে পা রাখো কেননা এখন তোমার ওড়ার সময় শেষ হয়েছে আর চোখের জলে নাকের জলে হওয়ার সময় এসেছে।” বড়বাবার কাছ থেকে এসে আমি অদ্রির পাশে বসতে না বসতেই অদ্রি বলে উঠলো।

অদ্রির এমন কথায় আমি চমকে গেলাম।এখন আবার কি এমন সারপ্রাইজ দিবে?তারপর আমি অদ্রির উদ্দেশ্যে বললাম,
–‘এটা কেমন ব্যাবহার অদ্রি?এভাবে ভয় দেখানোর মানে কি?’

আমার কথা শুনে অদ্রি অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
–‘ওমা! ভয় দেখালাম আবার কখন?আমি তো সত্যি টাই বললাম।’

অদ্রির কথা শুনে আমি ওর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম,
–‘এটা সত্যি?তাহলে এখন আমার অবস্থা কেনো চোখের জলে নাকের জলে হবে?’

আমার কথা শুনে অদ্রি মুচকি হেসে বলল,
–‘আমি করবো তাই।কেনো?তুমি কি তখনকার শর্তের কথা ভুলে গেছো নাকি ম্যাডাম?’

অদ্রির এমন কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম,
~~”সত্যিই তো আনন্দে আত্নহারা হয়ে আমি তখনকার শর্তের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।এখন আমার কি হবে?”
তারপর অদ্রির উদ্দেশ্যে বললাম,
–‘এখন শর্তের বিষয়টা বাদ দিলে হয় না বোনু? আজকে আমি তোকে শপিংয়ে নিয়ে যাবো আবার ঘুরতে নিয়ে যাবো এখন।’

–‘ঘুষ দিতে চাচ্ছো আমাকে?কিন্তু বালিকা একটা কথা মনে রাখো এই অদ্রি আপনার কাছ থেকে কোনো ঘুষ নিবে না।’

–‘আরে ঘুষ বলছিস কেন?তুই আমাকে একটা খুশির সংবাদ দিয়েছিস তাই আমার পক্ষ থেকে এটা তোর জন্য উপহার।’

আমার কথা শুনে অদ্রি বলল,
–‘তাহলে নেয়া যায় কিন্তু তারপরও শর্ত বাদ দেয়া যাবে না।কিন্তু তুমি যেহেতু আমাকে উপহার দিচ্ছ তাই একটু ছার দিতে পারি যাতে তোমার চোখের জলে নাকের জলে অবস্থা না হয়।কিন্তু তাতেও একটা টুইস্ট আছে।’

অদ্রির এমন কথা শুনে আমি অসহায় ফেস করে বললাম,
–‘কি সেটা? বল শুনি।’

আমার এমন ফেস দেখে অদ্রি মুচকি হেসে বলল,
–‘ওমা এখনই এমন কান্না করতেছ কেনো,তোমার এমন মুখ দেখে আমার মায়া হচ্ছে তাই তোমার জন্য কোনো শর্ত রাখলাম না জাস্ট অল্প একটু ছাড়া।আর পুরো শর্তটাই রাখলাম তোমাদের ভালোবাসার ওপর।’

অদ্রির এমন কথায় আমি চমকে গেলাম।কি বলে এই মেয়ে মাথা ঠিক আছে তো? ভালোবাসার ওপর আবার কোনো শর্ত দেয়া যায় নাকি?

আমাকে এইভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে অদ্রি মুচকি হেসে বলল,
–‘হুম।এখন শর্ত গুলো বলতেছি ভালো করে শুনো।
তোমাকে আমার কথা মতো অন্য কারো সাথে ভালোবাসার অভিনয় করতে হবে আর সেটাও আবার তোমার স্বামীর সামনে।এটা দেখে যদি আদ্র ভাইয়া আজকে তোমাকে তার ভালোবাসার কথা জানায় তাহলে তোমার সব কিছুই মাফ।’

অদ্রির কথা শুনে আমি অসহায় ভঙ্গিতে বললাম,
–‘আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোর শর্তে রাজি।কিন্তু কখন অভিনয় করতে হবে?’

আমার কথা শুনে অদ্রি বলল,
–‘আজকে কোথায় নিয়ে যাবে বললে না।আজকেই তাহলে করলেই হবে।শুধু টুইস্ট আনার জন্য কোনোভাবে আদ্র ভাইয়ার কানে কথাটা বললেই কাজ হয়ে যাবে বাকিটা…’
এটা বলে মনে মনে ভাবতে লাগল,
~~”কি ভেবেছিলে আপু,আমি তোমাকে কষ্ট দিবো?কখনোই না।তোমাকে আর এইভাবে দেখতে ভালো লাগছে না তাই তো তোমার ভালোর জন্যই এমন কিছুর ব্যাবস্থা করলাম যাতে আদ্র ভাইয়ার সাথে তুমি খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হতে পারো।”
_______________________________________________
গাড়িতে বসে শপিংমলের দিকে যাচ্ছি আমরা। মানে হলো আমি,আদ্র ভাইয়া আর অদ্রি।হটাৎ অদ্রি বলে উঠলো,
–‘ভাইয়া গাড়ি থামাও আমরা নামবো।’

অদ্রির কথা শুনে আদ্র ভাইয়া অদ্রির উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
–‘এইখানে নামবি মানে কি অদ্রি? আর শপিংমল তো এখনও অনেক দূর।আর এইখানে পার্কের সামনে নামার কারণ কি?’

–‘ফারু আপুর একজন স্পেশাল মানুষের সাথে দেখা করতে যাবো আমরা।কিন্তু খবরদার তুমি আসবে না।আমরা কিছুক্ষন পর আসবো এখন।’

অদ্রির কথা শুনে আদ্র ভাইয়া বলল,
–‘আমি যাবো না কেনো? বাবা তোমাদের সব সময় খেয়াল রাখতে বলেছে।’

–‘তোমার এখন আসতে হবে না এইটুকু সময় আমরা আমাদের খেয়াল রাখতে পারবো।আর তাছাড়া আকাশ ভাইয়া তো আছেই ঐখানে।’

অদ্রির কথায় আদ্র ভাইয়া রেগে বলল,
–‘এই আকাশটা আবার কে?’

আদ্র ভাইয়ার রাগ দেখে অদ্রি ও সমান তালে রাগ দেখিয়ে বলল,
–‘আপুর বয়ফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।এবার হইছে?আর কোনো কথা না আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে আমরা গেলাম আর খবরদার আমাদের পিছনে আসবে না।’
এই বলে অদ্রি আমাকে টেনে নিয়ে হনহন করে হাঁটতে লাগলো।
আর এইদিকে আদ্র কি বলবে বুঝতে না পেরে ওদের দিকে হা করে তাকিয়ে রইল।তারপর যখন অদ্রির কথার মানে বুঝতে পারলো তখন তারাহুরো করে গাড়ি থেকে বের হয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে অদ্রিদের পিছু করতে শুরু করলো।

বেশ কিছুক্ষন হাঁটার পর অদ্রি বলে উঠলো,
–‘আপু কাজ হয়ে গেছে।আদ্র ভাইয়া আমদের পিছু নিয়েছে।এখন তোমার অভিনয়ের পালা।তুমি শুধু ভালোভাবে অভিনয় করে যাবে বাকিটা আমি সামলে নিবো।আর সাবধান আমি যেভাবে যেভাবে করতে বলেছি সেভাবেই করবে।বেশি মাতব্বরি দেখিয়ে অন্য কিছু করতে যেও না তাহলে হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে।’
_______________
আকাশ ভাইয়ার সামনে দাড়িয়ে আছি।উনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে টুকটাক কথা বলতেছে।তারপর যেই প্ল্যান অনুযায়ী প্রোপোজ করতে যাবে তখনই আদ্র ভাইয়া এসে……
.
.
.
চলবে….
~~ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।