আষাঢ়ে প্রেমের বর্ষণ পর্ব-৮+৯ (শেষ পর্ব)

0
7063

#আষাঢ়ে_প্রেমের_বর্ষণ
#হাবিবুল্লাহ_হাবিব_ফুয়াদ
#পর্ব_৮ ও ৯(শেষ পর্ব)
“তোর সাহস তো কম না। তুই আমার ভালোবাসা এই আদ্র মেহবুবের ভালোবাসার মানুষকে তুই প্রোপোজ করতে চাস তোকে তো আমি..’ এই কথা বলে আকাশ ভাইকে মারতে নিলেই অদ্রি চিৎকার করে উঠে।অদ্রির চিৎকার শুনে আদ্র ভাইয়া অদ্রির দিকে তাকিয়ে দেখে,অদ্রি ক্যামেরা দিয়ে এসব ভিডিও করতেছে।এটা দেখে উনি রাগে গজগজ করতে করতে অদ্রির দিকে তাকিয়ে গর্জে উঠে বলতে থাকে,
–‘তোর কি কোনো কমন সেন্স নাই? এইখানে কেউ তোর ভাইয়ার স্ত্রীকে ভালোবাসার কথা বলতেছে আর তুই সেটা নির্লজ্জের মতো ভিডিও করছিস?’

আদ্র ভাইয়ার এমন রাগী গলার ধমক শুনেও কিছু হয় নাই এমন একটা ভাব নিয়ে অদ্রি বলে উঠলো,
–‘তো কি হয়েছে?ফারু আপু আমার ভাবী হওয়ারও আগে থেকে আমার বোন।আর আমি আপুকে অনেক ভালোবাসি।তুমি তো আপুর সাথে একপ্রকার জোর করেই বিয়ে করছো।যেখানে না আছে কোনো ভালোবাসা না আছে কোনো কিছু।তাহলে আপু কেনো তোমার সাথে থাকবে? কেনো তোমার সাথে সারাজীবন কষ্টে কাটাবে? তার চেয়ে আপুকে ভালোবাসে তার সাথে থাকাটা কি বেটার নয়?আর আপুর ভালোর জন্য এটা করাতো আমার নৈতিক দায়িত্ব’

–‘আমিও তো ফারু-কে ভালোবাসি শুধু ভালোবাসি না অনেক বেশি ভালোবাসি আর তাছাড়াও ফারু আমার স্ত্রী।’

–‘স্ত্রী তো কি হয়েছে? এখন স্ত্রী আছে কিন্তু সারাজীবন যে থাকতে হবে তার কি মানে? যেইখানে ভালোবাসা নাই আছে শুধু প্রতারণা সেখানে থাকার চেয়ে না থাকায় বেটার’

–‘ না না আমি ফারুকে অনেক বেশিই ভালোবাসি ইভেন যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই ভালোবাসি।’ তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
–‘প্লীজ ফারুপাখি আমাকে এত বড় শাস্তি দিও না।আমি সত্যিই তোমাকে অনেক ভালোবাসি’

আদ্র ভাইয়ার এসব কথায় আমার মনের মধ্যে অদ্ভুত একটা শিহরণ বয়ে যেতে লাগলো। আষাঢ়ের বৃষ্টির পর পরিবেশটা যেমন শান্ত হয় ঠিক তেমনি এতদিনের দুঃখ,কষ্ট,বেদনা সব কিছু মুছে গিয়ে যেনো পরিপূর্ণ শান্তি বিরাজ করতেছে, নিজেকে অনেকটা হালকা লাগতেছে।আমার মুখ দিয়ে কোনো কথায় বের হচ্ছে না।আসলেই এতটা সুখ কি আমার প্রাপ্য ছিল? আসলেই কি আমি আমার পত্রপুরুষ,আমার ভালোবাসাকে পাবো? নানা প্রশ্ন মনের ভিতর মাথা চারা দিয়ে উঠতে লাগলো।

আমি কিছু বলার আগেই অদ্রি বলে উঠলো,
–‘শুধু ভালোবাসি ভালোবাসি বললে তো হবে না ভাইয়া।হয় তোমাকে এখন প্রোপোজ করতে হবে নাহলে ….. বুঝতেই তো পারতেছো….’

অদ্রি কথা শেষ হতে না হতেই আদ্র ভাইয়া তাড়াতাড়ি করে বলল,
–‘না না তার আর দরকার নেই।আমি রাজি আছি।’

–‘সেটা তো ঠিকই আছে কিন্তু আরো একটা কথা মনে রাখবে যদি তোমার প্রোপোজ আপুর পছন্দ না হয় তাহলে তুমি রিজেক্ট।কথা টা ভালো করে মাথায় রাখবে।’,অদ্রি ভাইয়াকে ছটপট করতে দেখে মজা করে বলল।

অদ্রির কথায় আদ্র ভাইয়ার চোখে মুখে একটা চিন্তার ছাপ ফুটে উঠল।আচ্ছা কতটা ভালোবাসলে একটা মানুষ ভালোবাসার জন্য এতটা অবুঝ হতে পারে? আসলেই কি আদ্র ভাইয়া আমাকে এতটা ভালোবাসে?

___________
আদ্র ভাইয়া দৌড়ে গিয়ে কোথা থেকে যেন ফুল নিয়ে এসে হাঁটু গেড়ে বসে আমার দিকে ফুল এগিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করল,
–‘ আমি এমন একটা তুমি চাই,
যে কিনা বুঝে নিবে আমার নিরবতার ভাষা,অব্যক্ত আক্ষেপ।
আমি এমন একটা তুমি চাই,
যে কিনা শুধুই আমার,অন্য কারো নয়।
যে কিনা এই অবেলায় ফিরে আসুক মেঘের কোলে বৃষ্টির ফোঁটার শীত-লতায়।
যে কিনা কল্পনার রং গুলো বাস্তবে এঁকে দিবে তার তীব্র মমতায়।
আমি এমন একটা তুমি চাই,
যে আমাকে নতুন করে আবিষ্কার করবে।
একটু একটু করে ভালোবাসবে।
বৃষ্টি ফোঁটা হয়ে ছুঁয়ে যাবে আমায় প্রেম আলাপে,
বসন্তের রং দিয়ে সাজাবে আমায় নতুন করে।
আমি এমন একটা তুমি চাই,
যে জোছনা রাতে চাঁদ দেখার বায়না করে
চাঁদের আলোয় আমাকে খুঁজবে।
প্রখর শীতে আমায় চাদর করে রাখবে।
আমি এমন একটা তুমি চাই,
যার মনের শহরে সঙ্গী করে রাখবে আমায়।
যার হৃদয় আঙ্গিনায়
পুরো অস্তিত্ব জুড়ে থাকবে আমার বসবাস।
যে আপন করে রাখবে আমায় মনের পিঞ্জিরায়।

হবে কি আমার সেই তুমি? দিবে কি আমাকে তোমার তোমার হৃদয়ের আঙিনায় বাস করতে?

আদ্র ভাইয়ার এসব কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পরতে লাগলো।এটাতো সুখের অশ্রু যার আবির্ভাব হয়েছে তীব্র বেদনার কালে একটুকরো সুখের মোহময় শীতল আবেশে।নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলাম না।তীব্র গতিতে আদ্র ভাইয়ার বুকে আঁচড়ে পরেই কান্না শুরু করে দিলাম।এতদিনের ভালোবাসার তীব্রতা যেনো আকাশ ছুঁয়েছে,যেনো মেঘমিলন হয়েছে যার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ঝর ঝর করে চোখ দিয়ে পানি ঝরছে।আমার এমন অবস্থা দেখে আদ্র ভাইয়া মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মায়াময় কণ্ঠে আমাকে বিভিন্ন ভাবে শান্তনা দিতে লাগলো।

বেশকিছুক্ষন পর অদ্রি কথায় আমার ধ্যান ভাঙলো।অদ্রি বলল,
–‘ম্যাডাম আপনি কি ভুলে গেছেন যে আপনি এখন একটা পাবলিক প্লেসে আছেন?এখানে আপনারা ছাড়াও আরো অনেক মানুষ আছে এবং তারা আপনাদেরকে দেখতেছে।’

অদ্রি কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম তারপর মাথা তুলে চারপাশে তাকিয়ে দেখি অনেকেই আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।এটা দেখার সাথে সাথেই আমি আদ্র ভাইয়াকে ছেড়ে দিয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলাম।

আমাকে এভাবে লজ্জা পেতে দেখে অদ্রি মুচকি হেসে খোঁচা দিয়ে বললো,
–‘বাবা ম্যাডামের দেখি আবার লজ্জাও আছে।যেভাবে জড়িয়ে ধরেছিলেন আমি তো ভাবছিলাম এ জীবনে আর ছাড়বেন না মনে হয়’

অদ্রির কথায় আমার লজ্জার পরিমাণটা যেনো দ্বিগুণ হয়ে গেল।সবার সামনে এটা আমি কি করলাম? ছি ছি! লজ্জায় আমার মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছা করছে।

–‘থাক থাক ম্যাডাম এইভাবে আর আপনাকে লজ্জায় লাল হতে হবে না হাজার হোক বরটা তো আপনারই।’
তারপর আকাশ ভাইয়ার উদ্দেশ্যে বলল,
–‘আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।আপনি আমাদের হেল্প না করলে এমনটা করতে পারতাম না।’

–‘ধন্যবাদটা আমাকে না দিয়ে বরং তিশাকে দিও।কেননা ও না বললে আমি কখনোই আসতাম না।’

অদ্রিদের এমন কথা শুনে আদ্র ভাইয়া ওদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।আদ্র ভাইয়াকে এইভাবে অবাক হতে দেখে অনেক ভালোই লাগছে।অদ্রি; আদ্র ভাইয়ার এমন হা মুখটা আরো বেশি হা করে দেয়ার জন্য, সকাল থেকে এখন পর্যন্ত সব ঘটনাই একে একে বলে দিলো কিভাবে কি কি প্ল্যান মাফিক করা হয়েছে। অদ্রির এমন কথায় আদ্র ভাইয়ার মুখটা দেখার মতো ছিল।তারপর হুট করে অদ্রির কান চেপে ধরে বলল,
–‘বেশি পাকনামো শিখছিস এই বয়সে।বাড়ি টা ফিরে নেই তারপর তোর হচ্ছে’

–‘আহা ভাইয়া লাগছেতো প্লীজ ছেড়ে দাও না।’

তারপর আদ্র ভাইয়া অদ্রিকে ছেড়ে দিয়ে আকাশ ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বলল,
–‘সরি ভাই আপনাকে ভুল বুঝে অনেক কিছুই বলেছি।আর আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।’

–‘ইটস ওকে ভাই।আর ফারিহা কিন্তু আপনাকে অনেক ভালোবাসে কখনো ওকে কষ্ট দিবেন না।তিশা আর আমার বিয়ে আগামী মাসে।আপনারা কিন্তু অবশ্যই আসবেন,আসতে ভুলবেন না যেনো।’

–‘সে আর বলতে..’
তারপর আকাশ ভাইয়াকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করলাম।

_____________________________________________
চারদিকে রাতের কুচকুচে অন্ধকার বিরাজ করছে।আকাশে হালকা হালকা মেঘ উড়ে বেড়াচ্ছে আর মেঘের আড়াল থেকে চাঁদ মাঝে মাঝে উকি দিয়ে তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।ঝির ঝির করে বৃষ্টি পরছে আর হালকা বাতাসের সাথে সামনের বাগান থেকে ভেসে আসা কৃষ্ণচড়া,বকুল,কেয়া সহ বিভিন্ন ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ যেনো আষাঢ়ের এই পরিবেশটাকে আরো মোহনীয় করে তুলেছে। আমি আদ্র ভাইয়ের বুকে মাথা রেখে চোখ বুঝে আছি আর উনি আলতো করে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন।এমন এক পরিস্থিতিতেও আমার চুপচাপ থাকতে ভালো লাগছিলো না তাই মুখটা বাংলার পাঁচের মত করে বললাম,
–‘আচ্ছা সেদিন আপনি আমার সাথে কেনো এমনটা করেছেন এখন ও আমাকে বলেন নাই কিন্তু।আজকে আমাকে বলতেই হবে কেনো এমন লজ্জাস্কর একটা কাজ করেছিলেন আপনি?’

আদ্র ভাইয়া আমার এমন অবস্থা দেখে মুচকি হেসে বললেন,
–‘বলতেই হবে?না বললে হয় না?’

–‘না হয় না।বলেন তো’

আমার এত আগ্রহ দেখে আদ্র ভাইয়া বলল,
–‘ওটার কারণ যদি শুনতে চাও তাহলে তোমাকে আরো আগে থেকেই শুনতে হবে।’

–‘হুম বলুন’

–‘আজ থেকে ঠিক ১৫ বছর আগের কথা,
যখন আমার বয়স ছিল ১১ আর তোমার ৫ তখন দাদু মারা যায় এটা তো জানো?’

–‘হুম জানি,মায়ের কাছ থেকে শুনেছি।’

–‘দাদুর নাকি ইচ্ছা ছিল তার কোনো একজন নাতি/নাতনির বিয়ে দেখবে।কিন্তু যখন বুঝতে পারলো তার শেষ সময় ঘনিয়ে আসছে,তখন এই কথাটা বাবা ছোটবাবাদের জানায়।আর দাদুর এমন কথা শুনে ওনারা অনেক চিন্তায় পরে যায় কিভাবে কি করবে। ফুপিরাও তখন বিদেশে ছিল আর আপুর বয়সও তখন অল্প ছিল।ওই বয়সে আপুকে বিয়ে দেয়াটা সম্ভব ছিল না তাই বাকি ছিলাম আমি।আমার বয়স ছিল তখন মাত্র ১১।এই বয়সে কোনো মেয়েই আমাকে বিয়ে করবে না।অবশেষে,দাদুর ইচ্ছা পূরণের জন্য তোমার সাথে আমার পারিবারিকভাবে বিয়ে দিয়ে দেয় যেটা আমরা ছাড়া কেউই জানতো না।আর তুমি তখন তো ছোট ছিলে তাই তোমারও স্মরন নেই সেই কথা।’

আদ্র ভাইয়ার এমন কথা শুনে আমি অবাক হয়ে হা করে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি।তারপর বললাম,
–‘তাহলে পরে আমাকে জানানো হয় নাই কেন?’

–‘বিয়ের পর বাবা সবাইকে কঠোর ভাবে নিষেধ করে দিয়েছিল যাতে এই কথা আর কোথাও জানাজানি না হয়।এতে সবাই যদি তোমাকে উল্টা পাল্টা কিছু বলে তাহলে তোমার ছোট মস্তিষ্কে চাপ পড়তে পারে বা তোমার পড়ালেখায় ক্ষতি হতে পারে।’

–‘কিন্তু ফুপি তাহলে সেদিন বিয়ের জন্য কেনো অন্য একটা ছেলে নিয়ে এসেছিল?আর আপনি কেনোই বা অমনটা করেছিলেন বুঝতে পারছি না আমি এখনও’

–‘ওই যে বললাম না আমরা ছাড়া কেউই জানতো না তাই ফুপিও জানতো না।কেউ ওনাকে আগে জানায়নি।আর ফুপি এই বিষয়টা না জেনেই কোনো একজনকে হুট করে বাসায় নিয়ে এসেছে।তাই ওই অবস্থায় বিয়ে ভাঙ্গার জন্য ঐটা করেছিলাম।’

আদ্র ভাইয়ার এমন কথায় যেনো আমি অবাকের পর অবাক হচ্ছি।আমার লাইফে কত কিছু ঘটে গেছে যার বিন্দুমাত্রও আমি জানি না।তারপর হালকা একটু রেগে বললাম,
–‘সেই জন্য সবার সামনে আপনি এমনটা করবেন?’

–‘আরে আমি কি করতাম তখন? ছোটবাবা যখন আমাকে ফোন দিয়ে বিষয়টা জানালো আমার মাথা তখন খারাপ হয়ে গিয়েছিল।কি করবো, কি না করবো, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।আর ওই অবস্থায় আমার মাথায় ওটা ছাড়া অন্য কিছু আসে নাই।’

–‘জানেন আমার কেমন লাগছিল তখন?
কি বাজে একটা পরিস্থিতি।আমার ইচ্ছা করছিলো মাটিতে মিশে যেতে।আচ্ছা আর একটা কথা বলুন তো…’

আমার কথা শেষ না হতেই আদ্র ভাইয়া বলে উঠলো,
–‘কি কথা?’

–‘আপনি আমাকে পত্রপুরুষ সেজে চিঠি কেনো দিতেন?আর আপনার পরিচয়ই বা কেনো দিতেন না?’

–‘বাবা মানা করেছিল তোমাকে এত তাড়াতাড়ি আমাদের বিয়ের কথা না জানাতে।ওনারা চাইছিল আমি ভালো ভাবে সেটেল হওয়ার পর ধুমধাম করে বিয়ে দিতে।ইনফ্যাক্ট আর কিছুদিন পরই আমাদের বিয়ে হতো কেননা আমি এখন প্রায় সেটেল হয়ে গেছি।’

–‘সেটা বুঝলাম কিন্তু আসল কারণটা তো এখনও বললেন না।’

–‘হুম।যখন আমি ভালোবাসা কি বুঝতে পারলাম তখনই বুঝতে পারলাম আমি তোমাকে অনেকটা বেশিই ভালোবাসি এটা হয়তো সৃষ্টি হয়েছিল উপরওয়ালার নির্ধারিত পবিত্র একটা বন্ধনে আবদ্ধ ছিলাম তার জন্য।তাই, বাবা আমাকে যতই মানা করুক না কেনো আমার ভিতরে তোমার জন্য আলাদা একটা চিন্তা সব সময় আমাকে তারা করে বেড়াত।যদি তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো? বা অন্য কেউ তোমাকে তার মায়ায় ফেলে? সেটা যাতে না হয় তাই আমি তোমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে চিঠি দিয়ে আমার সাথে বেধে রাখতাম।যাতে অন্য কারো ওপর তোমার মন না যায়।’

আজকে যেনো আমাকে অবাকের ভূতে ধরেছে।একের পর এক কাহিনী ঘটে আমাকে হা করে দিচ্ছে।

আমাকে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদ্র ভাইয়া মুচকি হেসে বলল,
–‘আপনার প্রশ্নের জাহাজ কি শেষ হইছে ম্যাডাম?নাকি এখনো আরো বাকি আছে?’

আদ্র ভাইয়ার এভাবে বলায় আমি একটু লজ্জা পেয়ে বললাম,
–‘আপনার কাছে প্রশ্নের আমার আবার শেষ আছে নাকি? কিন্তু আজকে আর করবো না। এখন আমি আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবো খবরদার আপনি আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না।’
এই কথা বলে ওনার বুকে মাথা দিয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম।

আমার এমন কথা শুনে আদ্র ভাইয়া মুচকি হেসে বলল,
–‘ বাহ বাহ আমার বউ তো দেখি সেই লেভেলের রোমান্টিক। তা ম্যাডাম শুধু আপনার কথায় ভাবলে হবে?আমার কথা ভাবতে হবে না? ১৫ বছর হলো আমার বিয়ের। তাও আবার একবার না, দুই দুইবার বিয়ে করেছি কিন্তু বউয়ের সাথে এখনও বাসর-টাই করতে পারলাম না’

আদ্র ভাইয়ার এমন কথায় লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেল।আমি ওনাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,
–‘আপনার বউ কি আপনাকে মানা করছে নাকি?আপনি করতে পারেন নাই,আপনার ১৫ বছরের বিয়ে করা বউ যে এখনও কুমারীই আছে সেটা তো আপনার ব্যর্থতা।’
এই বলে আমি আদ্র ভাইয়াকে ছেড়ে উঠতে নিলেই উনি আমার হাত টেনে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে একটা চোখ টিপ দিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বললেন,
–‘বালিকা এই গর্ব আর করিও না কেননা এই গর্ব আর বেশিক্ষন টিকবে না।’
এই বলে আলতো করে আমার কপালে একটা চুমু দেয়ার সাথে সাথেই আমি ওনার বুকে মাথা দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে নিলাম। মিশে যেতে লাগলাম একে অন্যের ভালোবাসায়।

আপনারা কি এখনও পড়তে চান?হয়তো আজকে দুই কপোত কপোতীর মিলন হবে পূরণ হবে তাদের দীর্ঘ ভালোবাসার প্রতীক্ষা।একে অন্যকে বলবে তাদের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে নির্গত ভালোবাসার কথা।তাই একটু প্রাইভেসি তো লাগবেই তাই না?তাহলে এখন আপনারা বিদায় হোন।
.
.
.
সমাপ্ত

~~ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।এই গল্পটা স্বাভাবিকভাবে লিখলে আর সব টুইস্ট আস্তে আস্তে শেষ করতে একটু সময় লাগতো কিন্তু তাড়াতাড়িই শেষ করার কারণে হয়তো এন্ডিং টা আপনাদের মনের মত করে দিতে পারি নাই।তারপরও কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না।
ধন্যবাদ সবাইকে।