আসক্তিময়_ভালবাসা পর্ব-১৪

0
3433

#আসক্তিময়_ভালবাসা
#Part_14
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat

রাত প্রায় ১১ টা৷ রুমে বসে চুপচাপ পড়ছি। আর বা হাতে থাকা কলমের কেপটা চিবুচ্ছি। পড়ার সময় কলম চিবানোটা হচ্ছে বদ অভ্যাস। ওই বদ অভ্যাসের জন্য ছোট থেকেই মায়ের কাছে কতটা যে বকুনি খেয়েছি তার হিসেব নেই। কিন্তু তাও শুধরাই নি। বদ অভ্যাস কি আর এত সহজে বদলে নেওয়া যায়? যায় না। কিন্তু এইটা মা নামক জাতিকে কে বুঝাবে? এরা হচ্ছে বুঝদার জাতি। এদের বুঝের উপর কোন বুঝ কাজ করে না। কিন্তু তাও পৃথিবীর সবচেয়ে কিউট ব্যক্তি কিন্তু তারাই।

আমি এক ধ্যানে পড়ছি। অতঃপর হুট করে মনে হলো শুভ এর খবর নেওয়া উচিৎ। কেমন অবস্থা ওর কে জানে? মেডিক্যালে ভর্তি থাকা অবস্থায় দেখা করেছিলাম। এরপর ডাক্তার রিলিজ করে দেওয়ার পর দেখা হয় নি। ডাক্তার ওকে বেড রেস্ট নিতে বলেছিল। সে জন্য ও আর মেডিক্যাল আসে নি। আমার দেখাও হয় নি। ব্যস্ততা আর এত শত ঝামেলার মধ্যে শুভর কথাটা মাথা থেকেই বের হয়ে গিয়েছিল। ভাবলাম ফোন করে দেখি। অতঃপর মনে পড়লো আমার কাছে তো ওর নাম্বারই নেই। দরকার পরে নি বলে নাম্বারও নেওয়া হয় নি। এই যুগে তো নাম্বার ছাড়া তো কাউরো খোঁজই পাওয়া যায় না। কাউরো বাসায় যেতে হলেও এখন আগে ফোন করে যেতে হয়। বেশিরভাগ মানুষের জীবনই এখন মোবাইল নির্ভর। মোবাইল ছাড়া তারা যেন একদম অচল। অথচ আশির দশকে মোবাইলের তেমন কোন নাম গন্ধই ছিল না। তখন মানুষের মধ্যে ছিল সুসম্পর্ক। এখন তো সবই নাম মাত্র সম্পর্ক।

আমি এইসব ভেবে এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেই। ফোনটা সাইডে রেখে আবার পড়ায় ধ্যান দেই। এমন সময় দরজায় নক পড়ে। সাথে সাথে আমার ভ্রু কুটি কুঞ্চিত হয়ে আসে। এইসময় কে আসতে পারে তা ভাবতে থাকি। অতঃপর আন্টির আওয়াজ শুনে দ্রুত উঠে দাঁড়াই আর দরজার দিকে অগ্রসর হই। দরজা খুলতেই রেনু আন্টির হাস্যজ্জ্বল মুখটি ভেসে উঠে। আমিও আন্টিকে দেখে মিষ্টি হাসি দেই আর বলি,

— আন্টি এত রাতে? কিছু দরকার ছিল কি?

রেনু আন্টি হেসে বলে,

— তেল হাল্কা গরম করে এনেছিলাম তোর মাথায় দিয়ে দেওয়ার জন্য। সন্ধ্যায় না বললি যে মাথা ব্যথা করছিল। তেল দিয়ে ভালো মত মালিশ করে দিলেই দেখবি ভালো লাগবে।

আমি নাক ছিটকে বলি,

— তেল দিব না। চুল পরে তেলে চেপ চেপ করে।

রেনু আন্টি হেসে বলে,

— করলে করবে। কালকে শ্যাম্পু করে নিস। এখন আয়!

এই বলে আমাকে ভিতরে নিয়ে আসে। টেবিলে বই দেখে বলে,

— কিরে পড়ছিলি?

আমি মাথা নাড়াই। যার অর্থ “হ্যাঁ”। আন্টি হেসে আমাকে নিচে বসিয়ে নিজে বিছানার উপর বসে। তারপর চুলে তেল দিয়ে দিতে শুরু করে। আর মালিশ করে দিতে থাকে। বেশ আরামই লাগছিল। আন্টি বলে,

— কি হাল করেছিস চুলে। শেষ কবে তেল দিয়েছিলি মাথায়?

আমি কিছুক্ষণ ভাবার অভিনয় করে বলি,

— ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন মঙ্গল গ্রহ।

আন্টি আমার কান মলে বলে,

— মজা করা হচ্ছে আমার সাথে?

আমি শব্দ করে হেসে বলি,

— আবার জিগায়!

আন্টি হাল্কা হেসে আমার মাথা চাপড় মারে। অতঃপর আবার মাথায় তেল দেওয়ার দিকে নজর দেয়। তেল দেওয়া শেষে আন্টি বেনুনী করে দেয়। অতঃপর মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যায়। আমি দরজা দিতে যাব এমন সময় রিয়ান এসে হাজির। তার হাতে কয়েকটা বই। আমি তাকে দেখার সাথে সাথে অপ্রস্তুত হয়ে যাই। ভেবেছিলাম গোসল করার আগ পর্যন্ত এই তেল ওয়ালা লুক নিয়ে রুম থেকে বের হবো না। সেটা তো এখন গুড়ে বালি। এইদিকে সে আমার আমার দিকে তাকাতেই থ হয়ে যায়। চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে। অতঃপর শান্ত কন্ঠে বলে,

— ছকিনার মা সেজে আছো কেন? কোথাও কি ” যেমন ইচ্ছা তেমন সাজো” প্রতিযোগিতা চলছে নাকি?

এতক্ষণ আমার মধ্যে অপ্রস্তুতকর একটা ভাব বিরাজমান করলেও রিয়ানের কথা শুনে আমি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠি। রাগে ফুসফুস করতে করতে বলি,

— হোয়াট ডু ইউ মিন বায় ছকিনার মা? আমাকে মোটেও ছকিনার মা লাগছে না।

রিয়ান দেয়ালের সাথে একটু ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,

— ঠিকই বলেছ। তোমায় ছকিনার মা লাগছে না। বরং পেত্নি পেত্নি লাগছে। নিজের চয়েসের উপর এখন ডাউট হচ্ছে। এইটা আদৌ আমার চয়েস তো? আমার চয়েস তো সবসময় বেস্ট হয়। কিন্তু এবার এত নিম্ন কিভাবে বের হলো?

কথাটা বলে গভীর ভাবনায় মগ্ন হয়ে আছে এমন একটা ভাব নিয়ে দাঁড়ালেন সে। আমি তার কথা শুনে ছোট ছোট চোখ করে তার দিকে তাকাই। তার কথার অর্থ বুঝার চেষ্টা করতে থাকি। অতঃপর তার কথার অর্থ বুঝতে পেরে তার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকাই। রুদ্ধদ্বার কন্ঠে বলি,

— বান্দার ক্যায়া জানে আদরাক ক্যা সোয়াদ। হুহ!

এই বলে ভেংচি কাটি। আমার কথা শুনে রিয়ান আমার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকায়। অতঃপর কি জানি ভেবে মুচকি হেসে বলে,

— বিয়ের পর জেনে নিব নে সোয়াদটা। কেমন!

এই বলে চোখ টিপ দিয়ে ঠোঁট টিপে হাসতে থাকে সে। আর আমি বোকা বোকা চোখে তার দিকে তাকাই। বেশ কিছুক্ষণ বুঝতে পেরে মাথা নুয়ে যায়। লজ্জায় আমার গাল লাল হয়ে যায়। সে তা দেখে হাল্কা হেসে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। অতঃপর মাথায় হাল্কা টোকা দিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,

— কথায় আছে, ” লজ্জাই নারীর ভূষণ।” কথাটির জীবন্ত প্রমাণ তুমি। এত লজ্জা পাও কই? গোডাউনে বস্তা বস্তা ভরে রেখেছ নাকি? স্টোক শেষই হয় না।

আমি তার দিকে চোখ তুলে কিছুক্ষণ কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেই। রিয়ান মুচকি হেসে তার হাতে থাকা বইগুলো এগিয়ে দিয়ে বলে,

— সামনেই তো ইয়ার চেঞ্জ এক্সাম। সো মেইন বইগুলোর পাশাপাশি এই বই গুলোও পড়বে। এইখানে ইমপোর্টেন্ট ইমপোর্টেন্ট কিছু পয়েন্ট আছে। সাথে এক্সপ্লিনেশনও। বইগুলো পড়লে সকল বিষয় গুলো সহজ লাগবে বলে আশা করি।

আমি বইগুলো নিয়ে মিষ্টি হাসি হেসে বলি,

— থেংক ইউ।

রিয়ান আমার একটু কাছে এসে নাকটা টেনে দিয়ে বলে,

— একদম ৫ বছরের একটা বোকা সোকা মেয়ে লাগছে।

এই বলে উল্টো পথে হাঁটা দেয়। আর আমার গাল দুটো আবার লাল হয়ে যায়। উফফ! এই ছেলেটার সামনে এত লজ্জা পাই কিভাবে কে জানে? তার উপর সেও আমায় বার বার লজ্জায় ফেলে। খারুশ একটা। হুহ!

#চলবে