আসমানী পর্ব-০২

0
176

#আসমানী
#পর্ব_২
#লেখনীতে_তাহমিনা_মিনা

রাত ১২ টার দিকে চোরের মতো হেঁটে নিজের মহল্লার চিপাচাপা গলি দিয়ে নিজের বাড়িতে ঢুকার চেষ্টা করছে নাহিদ।কিন্তু সে যেদিক দিয়েই যাচ্ছে না কেন,কেউ না কেউ সেই রাস্তা দিয়ে হাঁটছেই।নাহিদের খুব বিরক্ত লাগছে সবার উপর।কিন্তু কিছুই করার নেই।এদের সামনে গিয়ে কি আর বলা যাবে যে,” এতো রাতে রাস্তায় না ঘুরে বাসায় যাও।এইসব নেশাটেশা ছেড়ে যাও বাসায় ফিরে যাও।ঘরে তোমাদের বউয়েরা অপেক্ষা করে আছে।”
তখন তো তারাও নাহিদকে উল্টো বলবে,”আমরা তো পুরানা বউ রাইখা নেশা করতে আসছি।তুমি মিয়া আইজকা বিয়া কইরা এতো রাতে বাইরে বাইরে ঘুরতাছো কেন?”
তখন কি বলবে নাহিদ?কিছু তো বলার মতো নেই।আবার যদি উল্টাপাল্টা কিছু বলে বসে যাতে তাকে লজ্জা পেতে হয়?তাই নাহিদ কোনো কথা না বলে কারো পায়ের আওয়াজ পেলে চুপটি করে দাঁড়িয়ে পড়ে।তার বাড়িতে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে না।ইচ্ছে করছে না বললে ভুল হবে।বাড়িতে ফিরে যেতে ভয় করছে।মা না হয় বকাবকি করবে।কিন্তু বাবার সামনে কোন মুখ নিয়ে যাবে সে?বাবার শান্ত আর শীতল চোখের না বলা প্রশ্নের উত্তর সে কিভাবে দিবে?এইদিকে নাবিল ক্রমাগত কল দিয়েই যাচ্ছে।আজকের রাত টা কোনোরকমে পার হয়ে গেলেই কালকে সে কলঙ্ক মুক্ত হয়ে যাবে।সব ব্যবস্থা করে এসেছে সে।কিন্তু আজকের রাত টা কিভাবে সে বাড়িতে থাকবে সেটা বুঝতে পারছে না।নাহিদ নিজেকে সাহস দিয়ে বলে,”যা হওয়ার হবে।আগে তুই বাড়ি যা নাহিদ।তুই বাড়ি চল।কালকেই সব কালপ্রিটগুলো শাস্তি পাবে পুরো মহল্লার সামনে।তখন তুই তোর মানইজ্জত সব আবার ফেরত পাবি।”

★★★
বাড়ির কাছাকাছি আসতেই নাহিদের নাকে বিরিয়ানির গন্ধ ভেসে আসে।বিরিয়ানি তার অনেক পছন্দের একটা খাবার।সবচেয়ে বেশি তার ভালো লাগে মায়ের হাতের বিরিয়ানি।মা ছোট ছোট করে মুরগির মাংস কেটে দেয়।যাতে মনে হয় অনেক মাংসের টুকরা আছে।আগে সে নাবিলের সাথে বিরিয়ানির মাংস নিয়ে ঝগড়া করতো।কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সময় থেকে আর করে না।কিন্তু এখনও নাবিল আর নাতাশা ঝগড়া করে।তাদের বাড়িতে কালেভদ্রে বিরিয়ানি রান্না করা হয়।সেদিন আর কেউ বাড়ির বাইরে বের হয় না।রান্নাঘরে মায়ের আশেপাশে ঘুরঘুর করে।যে নাতাশা রান্নাঘরে যায় না,সেই নাতাশাও মাকে টুকটাক সাহায্য করে।লেবু কেটে নেয়,শসা কেটে নেয়,টিউবওয়েল থেকে জগভর্তি করে পানি নেয়।মাঝে মাঝে বড় ভাইয়ের কাছে এসে বলে,”ভাইয়া,তোর কাছে কি কোকা-কোলা কেনার টাকা আছে?খাবার শেষে খেতে ভালো লাগে।আনতে পারবি এক বোতল?”

আজ নিশ্চয় তার বাড়িতে বিরিয়ানি রান্না হচ্ছে না।মা হয়তো বাড়ির সামনেই চ্যালাকাঠ নিয়ে বসে আছে তাকে মারার জন্য। এখন আর এসব ভেবে লাভ নেই।যা হওয়ার হবে। নিজেই নিজেকে কথাগুলো বলতে বলতে নিজেদের বাড়ির গেটের ভিতরে ঢুকে পড়ে।কিন্তু সে যা দেখলো,তাতে তো তার অজ্ঞান হওয়ার দশা।তাদের রান্নাঘর থেকেই বিরিয়ানির গন্ধ আসছে।তার মা রান্নাঘরের সামনের কেটে রাখা টিন সরিয়ে রান্না করছে।এই ভীষণ রকম অন্ধকারে মাটির চুলোর আগুন টকটকে লাল মনে হচ্ছে।মা নিশ্চয়ই ঘেমে গেছে।মাঝে মাঝে কপালে নিজের কাপড় দিয়ে ঘাম মুছছে।বাবাকে সে দেখতে পেল বারান্দার সামনের সিঁড়িতে বসে আছে।নাতাশাকে দেখতে পেল টিউবওয়েল থেকে পানি তুলছে।নাবিলকে আশেপাশে কোথাও পেল না সে।সে চুপিচুপি দুয়ারের মাঝখানে এসে দাঁড়ালো।প্রথমে বাবাই তাকে দেখলো।তাকে দেখে বেশ স্বাভাবিক ভাবেই বললো,”আয় নাহিদ,বসে পড়।কখন গেলি।আর এখন আসার সময় হলো?”
নাহিদ বুঝতে পারলো না বাড়ির সবাই এতো স্বাভাবিক কিভাবে আছে?নাবিলকে জিজ্ঞেস করলেই সব জানা যেতো।নাহিদের বাবা নাসিরুদ্দিন আবার তাকে তাড়া দেয়।নাহিদ ধীর পায়ে তার পাশে গিয়ে বসে।কিছুক্ষন নীরবতার পরে বাবা বলে,”আল্লাহ যা করে,সব ভালোর জন্যই করে।আর বিয়ে হলো সম্পূর্ণ আল্লাহর ইচ্ছে।এই মেয়েটিকে তোমার জন্যই আল্লাহ সৃষ্টি করেছে।তাই তোমার সাথে তার বিয়ে হয়েছে।জীবনকে শুধুশুধু এতো জটিল করার কোনো দরকার নেই বাবা।তোমার যদি অন্য কোনো পছন্দ না থাকে,তবে মেয়েটিকে তুমি ভালোভাবেই স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে এই বাড়িতে রেখো।আর যদি তোমার কোনো পছন্দ থাকে,আমাকে বলো।আমি এই মেয়েটির ব্যবস্থা করবো।মেয়েটি অনাথ।তার দেখভালের দায়িত্ব এখন যেহেতু আমাদের,তুমি তার দায়িত্ব না নিলেও আমি তার জীবন ভালোভাবেই গড়ে দিব।”
নাহিদ মাথা নিচু করে বলে,”আমার কোনো পছন্দ নেই বাবা।”
“আমি জানি আগে থেকেই।তোমার প্রতি গর্ব হচ্ছে আমার।তুমি চাইলে মেয়েটিকে ঐ বাজে লোকদের হাতে ফেলে আসতে পারতে।সে ক্ষমতা তোমার আছে আমি জানি।কিন্তু ঐ মেয়েটির বদনাম হয়ে যেতো।”
“আমি ওর জন্যই করেছি বাবা।”
“জানি।আমার ছেলে বলেই কিন্তু তুই এমন করেছিস রে বেটা।” বলেই হাসে বাবা।
বাবার এই বন্ধুর মতো আচরণে নাহিদও হাসে।
নাহিদ কিছু বলার আগেই রান্নাঘর থেকে তার মা তাকে ডেকে বলে,”এদিকে আয় তো নাহিদ।”
নাহিদ যে ভয়টা নিয়ে বাড়ি এসেছিল সে ভয়টা আর নেই কিন্তু এখন একরাশ লজ্জা তাকে ঘিরে রেখেছে।কিভাবে যাবে সে মায়ের সামনে।হঠাৎ তার একটা কথা মনে হয়।কোথায় আছে মেয়েটি?মানে তার সন্ধ্যা বেলায় বিয়ে করে আনা বউ?ঘরের মধ্যে? কিন্তু কোন ঘরে আছে?তার ঘরে নাকি নাতাশার ঘরে?নাহিদ একবার ঘুরে নিজেদের ঘরের দিকে তাকায়।তার ঘর তো অন্ধকার।নাতাশার ঘরও।তাহলে কি মায়ের ঘরে আছে সে?
“এই নাহিদ?কথা কানে যায় না?ওখানেই তো আছিস।আসতে এতো সময় লাগে নাকি?”
নাহিদ কোনো উপায় না পেয়ে নতমুখে মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।মা তার দিকে একবার তাকিয়ে চামচে করে এক চামচ বিরিয়ানি তুলে দিয়ে বলে,”দেখ তো,লবন আর ঝাল ঠিকমতো হয়েছে কি না?”
বাধ্য ছেলের মতো মায়ের কথা রাখতে গিয়ে নাহিদ সরাসরি হাত দেয় চামচের মধ্যে। কিন্তু খাবার গরম থাকায় তার হাতে প্রচুর ব্যথা পায়।আর সঙ্গে সঙ্গে ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠে সে।মা তাকে বকতে বকতে বলে, “এতো বড় হয়ে গেছিস অথচ এখনও সামান্য এই কাজ টা করতে পারিস না?বিয়ে করেছিস কোন আক্কেলে?যদি সামান্য বিরিয়ানির লবণ দেখতে গিয়েই হাত পুড়াস,তাহলে সংসার করবি কিভাবে?”
তারপর পিছনে ফিরে বলে,”আমার ভোলাভালা ছেলেটার বউ হয়ে এসেছো ভাগ্যক্রমে। সৌভাগ্য নাকি দূর্ভাগ্য সেটা বলতে পারবো না।কিন্তু এই সংসারটা কিন্তু তোমাকেই দেখতে হবে।বুঝলে আসমানী?”

মায়ের কথা শুনে নাহিদও মায়ের পিছনে মাথা তুলে তাকায়।মায়ের পিছনে ছিপছিপে গড়নের একটা মেয়ে বসে আছে।খুবই সাধারণ একটা মেয়ে।সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েদের মতোই পোশাক।তাকে দেখে মাথার ঘোমটা টেনে শসা কাটতে থাকে।এই প্রথম মেয়েটাকে ভালোভাবে খেয়াল করে সে।সন্ধ্যায় তো মাস্ক পড়া ছিল।তাই চেহারা দেখতে পারেনি।মেয়েটি দেখতে বেশ ফর্সা। মুখে কয়েকটা ব্রণের দাগ আর ব্রণও আছে।একটা ব্রণ পেকে লাল হয়ে আছে গালের একপাশটা।মনে হচ্ছে মেয়েটা মুখে রঙ মেখেছে।হাতে পায়ে কোনো অলংকার নেই।সাধারণ মেয়েদের থেকেও সাধারণ মেয়েটি।কিন্তু এই প্রথম কোনো মেয়েকে তার খুঁত সহ এতো ভালো লাগলো।নাহিদ মুহুর্তেই কেমন হয়ে গেলো।মেয়েটি একবার তাকালো তার দিকে।নাহিদের মনে দোলা দিয়ে গেল কোনো এক অজানা বাতাস।নাহিদের মনে হলো এই মেয়েটিকে দেখে সে সারাজীবন পার করে দিতে পারবে।সৃষ্টিকর্তা তার জন্য যে এতো সুন্দর একটা মেয়েকে তৈরি করেছে,সেটা সে এই মেয়েটিকে না দেখলে বুঝতো না মোটেও।নাহিদ তার জীবনে একটা প্রেমও করতে পারেনি শুধুমাত্র তার লাজুক স্বভাবের জন্য।মেয়েদের সামনে গেলে তার ভীষণ নার্ভাস লাগে।প্রেম করা তো দূরের কথা।
“এইখানে দাঁড়িয়ে না থেকে দেখ তো নাবিল কই গেল?সেই কখন ওকে দই আনতে পাঠিয়েছি।এখনও খবর নেই।”
মায়ের ডাকে সম্বিত ফিরে পেয়ে সে হুড়মুড়িয়ে বেড়িয়ে পড়তে পড়তে বলে,”হ্যাঁ,হ্যাঁ, যাচ্ছি যাচ্ছি।”

নাহিদকে অবশ্য যেতে হলো না। গেটের সামনে যেতেই উল্টোপাশে থেকে নাবিলও গেট দিয়ে নিজের মাথা ঢুকিয়ে দিল।নাহিদও তাই পিছিয়ে আসলো।নাবিল এক হাতে দইয়ের হাড়ি আরেক হাতে কোকা-কোলার বোতল বারান্দায় রাখা প্লাস্টিকের টেবিলে রাখলো।নাতাশা অবাক হয়ে গেল তার হাতে কোকা-কোলা দেখে।নাবিলের চোখেমুখেও বিশ্বজয়ের হাসি।বাবা তাকে শুধু দই কেনার টাকা দিয়েছিল।সে নিজের টাকায় কোকা-কোলাও কিনে এনেছে।
★★★
খাবার টেবিলটা টেনে বারান্দার মাঝখানে আনলো নাবিল।ছোট্ট একটা ঘর তাদের।ঘরের ভিতরে ৩ টা থাকার ঘর।পূর্ব পাশেরটা তার আর তার ভাইয়ের।মাঝেরটা নাতাশার। আর পশ্চিম পাশেরটা বাবা-মায়ের।তাদের আর বাবা-মায়ের ঘরের সামনের বারান্দার জায়গায় আবার ছোট ছোট দুটি ঘর। একটাতে গ্যাসের চুলা রাখা হয়েছে।আরেকটাকে বানানো হয়েছে বসার ঘর। তাই তাদের ঘরে আলো বাতাস পায় না সামনে থেকে।নাতাশার ঘরের সামনে জানালা থাকলেও বারান্দায় রাখা ডাইনিং টেবিলটার জন্য তারও ঝামেলা।নাবিল ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ে গেল মেয়েটার সামনে।তাদেরকে কি না কি ভাবছে মেয়েটা।নাতাশা তার ঘর থেকে তার পড়ার টেবিলের চেয়ার নিয়ে এসেছে।কারণ এখন তো ৬ জন মানুষ।রঙ উঠা চেয়ারটা দেখেও নাবিলের নিজেকে ভীষণ ছোট মনে হলো।কি নিদারুণ গরিবই না তারা।

খাবার টেবিলে বসে আসমানী নামের মেয়েটি মাথা নিচু করে খেতে থাকে।নাবিলের তখনও ভীষণ মন খারাপ লাগে।এই ব্রয়লার মুরগির মাংস দিয়ে দিয়ে বিরিয়ানি মেয়েটার কেমন লাগছে কে জানে।একটু আলাদা করে গরুর বা খাসির মাংস কি দেওয়া উচিত ছিল না তাকে?তবে একটা বিষয় খুব ভালো লাগছে নাবিলের।তার বড় ভাই আড়চোখে মেয়েটির দিকে কেমন করে যেন তাকাচ্ছে।সে ভালোমতোই বুঝতে পেরেছে ভাইয়ের এই মেয়েটিকে বেশ মনে ধরেছে।

নাসিরউদ্দিন সাহেব বলে,”আসমানী মা,আজ প্রথম দিন এলে,ভালো কিছু খাওয়াতে পারলাম না তোমাকে।মনে কিছু নিও না মা।আসলে কোনো প্রস্তুতি ছাড়া, বুঝোই তো আমাদের…..”
এই প্রথম মেয়েটি মাথা উঁচু করে বাবার দিকে তাকিয়ে তার কথা শেষ না করতে দিয়েই বললো,”কি বলছেন বাবা?কতদিন পর এইভাবে ঘরের খাবার খেলাম আমার নিজেরও মনে নেই।আর এই খাবারকে সামান্য কেন বলছেন?টিউশনি করিয়ে যা রোজগার করি,আগে তো পড়াশোনার পিছনে খরচ হতো,এখন তো সব চাকরির ইন্টারভিউ এর জন্য এপ্লিকেশন আর পরীক্ষা দিতে যাওয়ার গাড়ি ভাড়াতেই যায়।এই রকম খাবারও যে শেষ কবে খেয়েছি ভুলে গিয়েছি। আগে আমার মা রান্না করতো এমন করে।আমরা ৩ ভাই-বোন কাড়াকাড়ি করে খেতাম।কারও প্লেটে একটু মাংস বেশি গেলে বাবার কাছে মায়ের দ্বিচারিতার জন্য বিচার দিতাম।এখন আর কেউ নেই আমার।না বাবা-মা না ভাই-বোন।চাইলেও আর কাউকে ফিরে পাবো না।ফিরে পেলে খোদার নামে শপথ করে বলছি আমার ভাগের টা আমার ভাই-বোনদের দিয়ে দিব। ”

মেয়েটির কথা শুনে বাবা মাথা নিচু করে ফেললো।মা নিজের খাবার ফেলে উঠে এসে মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আরেকটু খাবার তার প্লেটে তুলে দিয়ে বলে,”এইটা তোর সংসার বুঝলি?আর আমরা তোর পরিবার।যখন যা ইচ্ছে হবে তাই নিজে হাতে নিয়ে খাবি।আমরা অতো বড়লোক না।কিন্তু মাসে কিংবা দুমাসে দু একবার ভালো খাবার আমরা খাই।তুইও খাবি।লজ্জা করবি না মোটেও।”
মায়ের মমতায় মেয়েটি যেন গলে যাচ্ছিল।প্লেটের সব খাবার একটু একটু করে শেষ করলো সে।একটা দানাও বাকি রাখলো না।নাবিলের বেশ ভালো লাগলো মেয়েটিকে।তাদের মতো মধ্যবিত্ত সংসারকে গুছিয়ে একত্রে রাখার জন্য এই রকম একটি মেয়েই যথেষ্ট।
★★★
নাতাশার ঘরে বসে ছিল আসমানী।পাশের ঘরেই নাহিদ বসে আছে।বিয়ে এমন একটা সম্পর্ক যেখানে অপর একটা মানুষের সম্পর্কে কোনো কিছু না জানলেও তার প্রতি আলাদা একটা টান আসে।এই মুহুর্তে নাহিদ আর আসমানীর মনের অবস্থাও এক।কেন যেন তারা একে অপরের সাথে দেখা করতে চাইছে।কিন্তু কেউই মুখ ফুটে বলতে পারছে না।নাহিদ আড়চোখে নাবিলের দিকে তাকাচ্ছে।ও বাচ্চাদের মতো বাটিতে করে দই চেটে চেটে খাচ্ছে।আসমানী সামনে থাকায় তখন ভালোভাবে খেতে পারেনি বলে।মাঝেমধ্যে বড় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে কেমন হাসি দিচ্ছে।নাহিদের মেজাজ গরম হচ্ছে ওকে দেখে।যেভাবেই হোক,আজ তো তার বিয়ে হয়েছে।আজই তো বাসর রাত হওয়ার কথা।কিন্তু এই নাবিল তো বের হওয়ারই নাম নিচ্ছে না।আর এদিকে আসমানী দরজার দিকে বারবার তাকাচ্ছে কখন তার শাশুড়ী ঘরে এসে তাকে ঐ ঘরে যাওয়ার জন্য বলবে।

আসমানীর ভাবনার মাঝেই ওর শাশুড়ী রুমে এসে ওর পাশে বসে বলে,”আসমানী মা,তোমার শ্বশুর একজন স্কুল শিক্ষক হলেও অতোটা আধুনিক না।সে কোথায় যেন এক ইসলামি বক্তাকে বলতে শুনেছে বৈধ অভিভাবক ছাড়া নাকি বিয়ে ভালোভাবে সম্পন্ন হয় না।আমরা কেউই নিশ্চিত নই কথাটার ব্যাপারে।কিন্তু একরাতের জন্য মেনে নিতে তো কোনো সমস্যা নেই।কোনো সমস্যা হবে তোমার?”
আসমানী মাথা নিচু করে জবাব দেয়,”না মা।”
“তাহলে কালকে তোমার বড় চাচাকে খবর দিয়ে আমরা নিয়ে আসবো।সেই তো এখন তোমার অভিভাবক।কালকে নতুন করে আবার পুরো মহল্লার সামনে তোমাদের বিয়ে হবে।ঐ বাজে ছেলেগুলোর বিচারও হবে।”
“সত্যিই? ”
“হ্যাঁ।”
আসমানীর চোখে আনন্দে পানি চলে আসে।ওর শাশুড়ী ওকে রেখে নাহিদের রুমে গিয়ে ওকেও কথাগুলো জানায়।নাহিদ এই প্রচন্ড গরমে কাঁথা দিয়ে নিজের পুরো শরীর ঢেকে মুখ ভোঁতা করে শুয়ে থাকে।আর আসমানী সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া জানায় সবকিছু ভালোভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্য।সে একটা নতুন পরিবার পেয়েছে।নতুন বাবা-মা, ভাই-বোনও পেয়েছে।নাহিদ অর্থাৎ নিজের স্বামীর কথা মনে হতেই গাল দুটো লাল হয়ে উঠে তার।নিজেই নিজেকে বলে,”না রে আসমানী।আল্লাহ তোকে পরিবারের সাথে একটা স্বামীও বকশিস দিয়েছে।”

চলবে?