আসমানী পর্ব-০৩

0
161

#আসমানী
#পর্ব_৩
#লেখনীতে_তাহমিনা_মিনা

শাহেদা বেগমের আজ কাজের শেষ নেই।সকাল থেকেই রান্নাঘরে আছে সে।তাদের কাছের বেশ কিছু আত্মীয়স্বজন এসেছে বড় ছেলের বিয়ে উপলক্ষ্যে। তাদের জন্য রান্নাবান্না করতে হবে।সবাই নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত।কেউ তাকে একটু সাহায্য করার মতো নেই।নিজের ভীষণ রকম সৎ স্বামীর একার রোজগারে সংসার যে আর চলে না।তার ভাসুর আর দেবর দুজনই অঢেল সম্পদের মালিক।দুটো বাড়ির পরেই পরপর তাদের দুজনের বিল্ডিং আছে।অথচ তার স্বামীর সততার জন্য তেমন কিছুই করতে পারেনি।একদিকে তার অবসর নেওয়ার সময় এসে গেছে আরেকদিকে তার বড় ছেলে এখনও চাকরি পাচ্ছে না।পড়াশোনা শেষ করেছে আরো ৪ বছর আগে।এই দুর্মুল্যের বাজারে একার রোজগারে আর সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছে না।ছেলেটাকেই বা আর কি বলবে?ঘুষ ছাড়া যে ইদানীং চাকরি পুরো সোনার হরিণ এর মতো, সেটা তো তার মতো মূর্খ মানুষও বুঝে।
“আসমানী কে জিজ্ঞেস করেছিলে ওর চাচার কথা? আসছেন উনি?”
স্বামীর ডাকে সামনে না তাকিয়েই খিচুড়ি নাড়তে নাড়তে বলে,”হ্যাঁ, বলছে তো আসছে।ওকে শুনলাম অনেক বকাবকি করছে।মেয়েটা কান্নাকাটি করলো অনেক।বাপ-মা মরা মেয়ে।এতিমের সাথে এ কেমন দুর্ব্যবহার।”
“সবই হচ্ছে মানুষের বিবেক বুঝলে?”
“হুমম।”
“নাহিদ কই?সকাল থেকে দেখছিনা যে ওকে।”
“বন্ধুদের নিয়ে ঐ ছেলেগুলোকে আনতে গেছে।”
“অহ।”
“আমার নিজেদের অনেক ছোট ছোট লাগছে গো।”
“কেন?”
“বাড়ির বড় ছেলের বিয়ে দিচ্ছি। কোনো আনন্দ অনু্ষ্ঠান নেই।কত গণ্যমান্য মানুষ আসবে।তাদের শুধু চা মিষ্টি খাইয়ে বিদায় করবো।ভাবতেই খারাপ লাগছে।”
নাসিরুদ্দিন সাহেব একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে।তারপর বলে,”আমাদের সেই সাধ্য কোথায়?আর আমার জমানো যা আছে,সেটুকু দিয়ে ছেলের ভবিষ্যৎ গড়ে দিব।এতো আচার অনুষ্ঠান করে পাপ কামানোর কি দরকার।আর আজকের ব্যাপারটা খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই।অনেক মানুষ আসবে।তামাশা দেখতে আশেপাশের মহল্লা থেকেও মানুষ আসবে।কতজন কে খেতে দিতে পারবো আমরা বলো তো?”
“হ্যাঁ, তা তো ঠিকই।”
★★★
নাবিল এতোক্ষণ যার আশায় বসে ছিল,অবশেষে সে এসেছে।সাথে এসেছে অনেক দামী দামী মিষ্টি আর সন্দেশ।এইবার সে তাদের জন্য কোনো উপহার না আনলেও তার বড় ভাই আর ভাবীর জন্য উপহার এনেছে।নাবিল মাঝেমধ্যে বুঝতে পারেনা তার বড় ফুপা ঠিক কতোটা বড়লোক যে বিয়ের কথা শুনেই পুরো একসেট সোনার গয়না পাঠিয়ে দিয়েছে ফুপির হাতে।মা আনন্দে বারবার চোখ মুছছে।নাবিল ভালো করেই জানে তাদের মধ্যবিত্তের সংসারে আগামী এক বছরে চাইলেও তার ভাবীকে এতো দামী গয়না গড়িয়ে দিতে পারবে না।কিন্তু যে এতোকিছু নিয়ে এসেছে,সে সম্পূর্ণ নির্বিকার।এইসব যেন কোনো বিষয়ই না তার কাছে।সে এসেই মায়ের সাথে রান্নাঘরে ঢুকে গেছে।অথচ তার বাকি ফুপি আর মামা-মামী কিছু ফলমূল আর চিপসের প্যাকেট এনেই নিজেদেরকে ফ্যানের নিচে শুইয়ে বসিয়ে রেখেছে।হঠাৎ গেটের কাছে নজর পড়তেই তার পিলে চমকে উঠে।গতকাল রাত থেকে একবারও এই আসন্ন বিপদের কথা মনে পড়েনি তার।এখন কি হবে?নুসাইবা এসে কি আসমানী ভাবীর সাথে ঝগড়া শুরু করে দিবে?এই মেয়েটা যে কিশোরী বেলা থেকেই তার ভাইয়ের কাছে নিজের মন দিয়ে বসে আছে।কিন্তু তার বোকা ভাই যে সেইসব বুঝেও না বুঝার ভান করে বসে থাকে।

নাবিল যেরকম টা ভেবেছিল,হলো ঠিক তার উল্টো। নুসাইবা নামের তার একমাত্র খালাতো বোনটি প্রথমে এসে তার খালার সাথে দেখা করে ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নাবিলকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে নাতাশার ঘরে ঢুকে গেল।নাবিলের দম প্রায় বন্ধ হয়ে আসার অবস্থা।নুসাইবা ঘরের ভিতর ঢুকার পর নাতাশা আর তার ছোট চাচার মেয়ে আফিয়াও চমকে উঠে।তারাও যে জানে নুসাইবার মনের কথা।কি না কি করে বসে এখন মেয়েটা।
নুসাইবা আসমানীর কাছে গিয়ে বলে,”তুমি কি সুন্দর গো ভাবী।ভাইয়া বুঝি তোমায় খুব ভালোবাসে?”
হুট করে একটা অচেনা মেয়ে এইভাবে এইসব জিজ্ঞেস করায় বেশ ভড়কে যায় আসমানী।একবার নাতাশার দিকে তাকালে সে বলে,”ও আমার একমাত্র খালাতো বোন।ওর নাম নুসাইবা।”
নুসাইবা মেয়েটি আসমানীর চেয়ে বেশ ছোট হবে।কিন্তু আসমানী তাকে বলে,”কেমন আছেন?”
নুসাইবা একটু হেসে বলে,”কেমন আছি বলে তোমার মনে হয়?বড় খালাতো ভাইয়ের বিয়ে হচ্ছে।ভেবেছিলাম কত আনন্দ করবো।কিন্তু কোথা থেকে কি হয়ে গেল।”
নাতাশা বলে,”একভাবে হলেই হয়।বিয়ে তো বিয়েই।সেই তো কবুলই বলতে হবে।বড় লোকের বিয়েতেও কবুল বলেই বিয়ে হয়,আমাদের মতো গরিবের ঘরেও কবুল বলেই বিয়ে হয়।আচার অনু্ষ্ঠান তো বিলাসিতা আমাদের জন্য।”
নাতাশার এতো কাটখোট্টা জবাবে নুসাইবা শুধু একপলক তার দিকে তাকিয়ে থাকে।নাতাশার সাহসে কুলোয় না ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার।কত অভিযোগ আর অভিমান লুকিয়ে রেখেছে ও ওর ঐ চোখে তার ভাইয়ের প্রতি।কিন্তু নাতাশা জানে এখন আর কিছুই করার নেই।যার প্রতি মনই না টানে,তার সাথে সংসার করবে কিভাবে?নাতাশা নিজের ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে এর থেকে বেশি আর কিছুই বুঝে না।বুঝার কথাও না।সে শুধু জানে যেহেতু বিয়ে হয়ে গেছে,এখন তার ভাই শুধু তার ভাবীকেই ভালোবাসবে।বাইরের মেয়েদের দিকে ঘুরেও তাকাবে না। ক্লাস নাইনে পড়ুয়া একটা মেয়ের পক্ষে এর থেকে বেশি আর কি ই বা বুঝার ক্ষমতা থাকে?

নুসাইবা কোনো কথা না বলে চলে যায় সেখান থেকে।নাতাশা ওর কথা লুকাতে চায় আসমানীর থেকে।কিন্তু বুদ্ধিমতী আসমানী বুঝে যায় কিছু তো একটা সমস্যা আছেই।না হলে নাতাশা ওর সাথে এভাবে কথা বলতো না।নাতাশাকে আসমানী জিজ্ঞেস করে,’কি হয়েছে ওর?”
নাতাশা জবাব দেওয়ার আগেই ক্লাস সেভেনে পড়া ওর চাচাতো বোন আফিয়া বলে,”ওর মনের অসুখ হয়েছে গো ভাবী।আপনার বরকে ও ভালোবাসে সেই ছোট্ট বেলা থেকে।আপনার সাথে বিয়ে হওয়ায় ওর মনটা ভেঙে খান খান হয়ে গেছে।ঐ যে বলে না ছ্যাঁকা খাইছে।আহারে মাইয়াডা কাছে আইলো আর আমি বেগুন পুড়ার গন্ধ পাইলাম।”
নাতাশা, আসমানী আর ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা নাবিল হঠাৎই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে গেল।নাবিলের ইচ্ছে করছে আফিয়াকে ধরে আছাড় মারতে। কিন্তু ওর ই বা কি দোষ?ক্লাস সেভেনে পড়া বুদ্ধিহীন ইঁচড়েপাকা মেয়ের কাছে এর থেকে আর কি ই বা আশা করতে পারে সে?
★★★
এলাকার চেয়ারম্যান সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বখে যাওয়া কিশোরদের উদ্দেশ্য করে বলে,”তোমরা কি অন্যায় করেছো বুঝতে পেরেছো?কারো সম্মানে আঘাত হানলে কেমন লাগবে বলোতো?তোমাদের বাবা-মাকে সবাই ছিছি করছে।ভালো লাগছে তোমাদের?আর এই ছেলে মেয়ে দুটোর চরিত্রে যে এইভাবে কলঙ্ক মাখাইলা,তাহলে এদের কেমন লাগছে?”
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।তাদের চোখ মুখের বেহাল দশা।চেয়ারম্যান সাহেব তাদের আবার জিজ্ঞেস করে,”কোন এলাকার মুরুব্বি ধইরা আইনা বিয়া পড়াইছো কও তো?”
একটা ছেলে কাচুমাচু করে বলে,”চিনি না চাচা।মনে হয় তাবলিগ বা চিল্লা থিকা ফিরতেছিল।একজন কাজীও নাকি ছিল।তারাই বললো তাড়াতাড়ি বিয়ে পড়ায়ে ওনাদের পাপ থেকে মুক্তি দিতে।আমরা তো শুধু টাকার জন্য চিল্লাপাল্লা করছিলাম।ওনারা এসে যে এইভাবে বিয়ে পড়িয়ে দিয়ে যাবে,বুঝতে পারিনাই।”
চেয়ারম্যান সাহেব এবার নাহিদের উদ্দেশ্যেই বলে, “চোররেও তো মাইনষে এমন কইরা পিটায় না বাপ।এতো মাইর দিছো যে চোখ মুখ ফুইলা গেছে।”

নাহিদের বেস্ট ফ্রেন্ড সোহাগ বলে,”চাচা,ওরা এলাকা ছাইড়া পালাচ্ছিল।কি আর করবো?গেল মাথা গরম হয়ে,দিলাম কয়েকটা।”
“যাক গে,সেই সব বাদ দাও।নাসিরুদ্দিন স্যার আমাদেত অত্র এলাকার একজন গণ্যমান্য মানুষ।আমার ছোট ভাই-বোন তার কাছে পড়াশোনা করছে।আমার ছেলে মেয়েও করতেছে।আমরা সবাই জানি সে কেমন মানুষ।আর তার ছেলে নাহিদের চরিত্র কেমন,সেটাও আমরা সবাই জানি।ভুলক্রমে হোক আর যেভাবেই হোক,বিয়ে তো হয়েছে তাদের।তারাও মেয়েকে মেনে নিয়েছে।যেহেতু মেয়েটা অনাথ,এক আপন বলতে শুধু এক চাচা আছে।সে আমাদের সাথেই আছে।তারও এই বিয়েতে কোনো আপত্তি নেই।ছেলে-মেয়েও একে অন্যকে পছন্দ করেছে।তাই তারা আজ সবার সম্মতিতে আবার বিয়ে করতে চাচ্ছে।আপনাদের দুই পরিবারের কারো কিছু বলার থাকলে বলেন।
নাসিরুদ্দিন সাহেব বলে,” আমাদের কিছুই বলার নেই।মেয়ে আমাদের ঘরেই যেহেতু আছে,আমরাও চাই ও মেয়ের মতোই থাকুক।মেয়ের চাচার কোনো কথা আছে কি?”
আসমানীর চাচা আনোয়ার হোসেন খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বলেন,”আমার আবার কি বলার থাকবো?যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে।এখন আপনাদের কোনো দাবিদাওয়া থাকলে বলতে পারেন।আমিই যেহেতু এখন একমাত্র অভিভাবক, আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করবো।”
নাসিরুদ্দিন সাহেব বলেন,”আমি কেমন মানুষ, সেটা আমার এলাকার মানুষ জানেই।আমি আর কি বলবো?আমার কোনো কিছুরই দরকার নেই।আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।”
নাবিল আসমানীর চাচার কথা শুনে মনে মনে বলে,”দিতে তো চাইবেই।সবই তো নিজের ছেলেদের নামে করে নিছো।একটু অংশ ছিড়ে তো দিতে চাইবেই এবার।যত্তসব আজেবাজে মানুষ।থাকবে না, একটুও থাকবে না।সব জলে ভেসে যাবে। টেকোমাথা কোথাকার।”
★★★
জলভরা চোখে নুসাইবা তাকিয়ে দেখলো তার ভালোবাসার মানুষটা অন্য একটা মেয়ের সাথে তিন কবুল বলে বিয়ে করে নিলো।উপস্থিত সবাই বেশ খুশি।নুসাইবার মনে হলো তার নাহিদ ভাইও খুশি।না হলে কি এভাবে আড়চোখে মাঝে মাঝে বউয়ের দিকে তাকাতো নাকি এতো মুরুব্বির মাঝেও?আফিয়ার থেকে শুনেছিল কালকে রাতে নাকি তারা আলাদা ছিল।নুসাইবার মনে একটা ক্ষীণ আশার সঞ্চার হয়েছিল নাহিদ ভাই হয়তো মেয়েটিকে মেনে নিতে পারেনি বলেই আলাদা ছিল।সে ভেবেছিল কোনোভাবে বিয়েটা ভেঙে দিবে।নাহিদ ভাই যদি মেয়েটিকে পছন্দ করতো,তাহলে নিশ্চয়ই কালকে তারা আলাদা থাকতো না।কিন্তু বারবার তার বড় খালাকে তার মনের কথাগুলো বলতে চেয়েও বলতে পারেনি।কিন্তু যখন মনস্থির করলো বলার জন্য, তখনই দেখলো নাহিদ ভাই হাসিমুখে লাল বেনারসি নিয়ে বাড়িতে ঢুকছে।নুসাইবা আর কিছু বুঝতে না পারলেও তার ভালোবাসার মানুষটার মুখের হাসি যে কতোটা আনন্দের, সেটা মুহুর্তেই বুঝে গিয়েছিল।নাতাশাকে চেপে ধরতেই নাতাশা বলেছিল বিয়ে বৈধ নয় বলেই নাকি মা তাদের আলাদা থাকতে বলেছিল।
“আলহামদুলিল্লাহ, বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।আপনারা নবদম্পতিকে দোয়া করুন যেন তারা সারাজীবন একসাথে সুখে শান্তিতে থাকতে পারে।”
নুসাইবা ঘোর ছেড়ে বের হয়ে আসে কথাগুলো শুনে।বিয়ে হয়ে গেছে?তার ভালোবাসার মানুষটাকে পাওয়ার আর কোনো সম্ভাবনা নেই?সে এখন অন্য কারো?এতোক্ষণ নুসাইবা নিজের চোখের পানি আঁটকে রাখতে পারলেও এখন আর পারে না।দুয়ার থেকে সবার অগোচরে নাহিদের ঘরে গিয়ে আলনা থেকে ওর একটা শার্ট নিয়ে নিজের ব্যাগে ভরে মায়ের কাছে গিয়ে বলে,”মা,আমাকে যেতে হবে।আমার কোচিং-এ যেতে হবে।বিয়ে তো হয়ে গেছে।আমি চলে যাই?”
ওর মা দুয়ারেই ছিল।সবার সাথে আনন্দ করছিল।মেয়ের কথায় বিরক্ত হয়ে বলে,”এতো অল্প সময়ের জন্য আসলে আসার কি দরকার ছিল?কবুল বলা শোনার জন্য কি আসছিলি?খেয়ে যা।বাড়িতে তো আমি রান্না করিনি।”
“সমস্যা নেই।আমি কিছু কিনে খেয়ে নিবো।”
“আচ্ছা,যা।সাবধানে যাস।পৌঁছে আমাকে একটা মিসডকল দিবি।”
মায়ের কথার উত্তর না দিয়ে নুসাইবা মাথা নিচু করে বের হয়ে আসে বাড়ি থেকে।শেষবারের মতো একবার পিছনে ফিরে দেখে তার ভালোবাসার মানুষটা তার স্ত্রীকে কি যেন বলছে।তার মা-বাবা সবাইকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছে।হঠাৎ কে যেন তার দিকে তাকিয়ে বলে,”নুসাইবা,মিষ্টি তো খেয়ে যা।”
নুসাইবা আর দাঁড়ায় না সেখানে।এই মিষ্টি তার গলা দিয়ে নামবে না।নুসাইবা চিৎকার করে কান্না করতে চাইছে কিন্তু গলার কাছে কান্নারা যেন কুন্ডলী পাকিয়ে বসে আছে।শুধু চোখদুটো থেকে বৃষ্টির মতো করে পানি পড়ছে।
★★★
কালকে রাতে নাহিদের সান্নিধ্যে যাওয়ার কথা ভাবলেও এখন আসমানীর ভীষণ লজ্জা আর ভয় লাগছে।তার ফুপি শাশুড়ীর ছেলের বউ এসে তাকে সাজিয়ে দিয়েছে।পাশের ঘরে নাহিদের বন্ধুরা বাসর ঘর সাজাচ্ছে আর নাহিদের থেকে ট্রিট চাইছে।মাঝেমধ্যে এমন এমন কথা বলছে যার কিছু শব্দ এ ঘরেও আসছে।আসমানী লজ্জায় লাল-নীল হয়ে যাচ্ছে।তার এই অবস্থা দেখে তার ফুপি শাশুড়ীর ছেলের বউ বলে,”আসমানী,আমার দেবর কিন্তু বড্ড লাজুক।তোমাকেই কিন্তু সবকিছু শুরু করতে হবে।”বলেই ফিঁচকে হাসি দেয় সে।
আসমানীর কান গরম হতে থাকে।তার অবস্থা দেখে ভাবী বলে,”আরেহ,মজা করলাম।আমার দেবর লাজুক সেটা ঠিক আছে।জীবনে একটা প্রেমও করতে পারেনি।তার মানে কি জানো তো?”
“কি?”
“তার সব ভালোবাসা তার বউয়ের জন্য লুকিয়ে রেখেছে।আর বাইরে থেকে দেখতে যেসব ছেলেরা লাজুক লাজুক হয়,তারা কিন্তু বেশ বউ পাগলাও হয়।এইদিক থেকে কিন্তু তোমার বেশ সুবিধা।”
আসমানী কিছুই বলে না।নাহিদের এক বন্ধু এসে বলে,”নতুন ভাবীকে নিয়ে আসেন ভাবী।নাহিদের থেকে টাকাও নিতে হবে।”
“চলো আসমানী।তোমাকে বসিয়ে দিয়ে আসি।অপেক্ষা করতে হবে এখন।অপেক্ষার প্রহর এখন এমন হবে যে মনে হবে সে আসছে না কেন?আর যখন আসবে,তখন মনে হবে এখন কি হবে?” কথাগুলো বলেই তিনি আবার খিলখিল করে হাসে।
আসমানীকে নিয়ে সে পাশের ঘরে বসায়।বাইরে সবাই নাহিদের থেকে টাকা চাইছে। না হলে ঘরে ঢুকতে দিবে না তাকে।আসমানী নিজের দিকে তাকায়।কেমন হবে তার জীবন? যা হলো,তা কি ভালো হলো?সে সব মানিয়ে নিতে পারবে তো?নাকি তার মনে ভাগ্যের মতো এই আশ্রয়ও হারাতে হবে?
উফফ।এখন বিরক্ত লাগছে অপেক্ষা করতে।ভাবী ঠিকই বলেছিল।এই অপেক্ষার প্রহর সত্যিই শেষ হচ্ছে না।
চলবে……