আসমানী পর্ব-০৪

0
165

#আসমানী
#পর্ব_৪
#লেখনীতে_তাহমিনা_মিনা

নাবিলের ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে।এইভাবে যে সে ফেঁসে যাবে সেটা ঘুনাক্ষরেও টের পায়নি সে।পাশের বাড়ির সেলিমের ঘরে শুয়েছে আজ সে।তার ঘরটা মানে তার আর তার ভাইয়ের ঘরটা এখন শুধু তার ভাইয়েরই।নাহ,ভাইয়ের না।ভাবীর ঘর।এখন থেকে ওটা ভাবীর ঘর।ভাই থাকলেও কিছুদিন পর থেকে নাতাশা বলবে ভাবীর ঘর।সেও বলবে।যেমন সবাই বলে মায়ের ঘর।কেন?শুধু মায়ের ঘর কেন হবে ওটা?বাবাও তো থাকে ঐ ঘরে।তাহলে তারা সবাই কেন শুধু বলে ওটা মায়ের ঘর?এতোদিন নাবিল এই বিষয়টা খেয়াল করেনি।আজই প্রথম করলো।৪ বছর আগেও যখন নাতাশার সাথে দাদা-দাদী থাকতো,তখনও তো সবাই বলতো দাদীর ঘর।প্রথমে দাদা, তারপর দাদী চলে গেল তিন মাসের ব্যবধানে।বড্ড ভালোবাসতো বুড়ো-বুড়ি একে অপরকে।তাই হয়তো আলাদা থাকতে পারেনি বেশিদিন।তারপর তো ওটা নাতাশার ঘর।এটাই কি দুনিয়ায় নিয়ম?নতুন যে আসবে,তার জন্য কি সব দাবী ছেড়ে দিতে হবে?

“কিরে এতো নড়ছিস কেন?ঘুমাবি না নাকি?” ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে সেলিম।
“তুই ষাঁড়ের মতো নাক ডাকলে কিভাবে ঘুমাবো?”
“অহ।আমি নাক ডাকি নাকি?আচ্ছা,ঘুমো।আর ডাকবো না।”
কিন্তু সেলিম বেশিক্ষণ তার কথা রাখতে পারলো না।কয়েক মুহুর্ত পরেই আবার নাক ডাকা শুরু করে দিল।নাবিল নিজের মাথা বালিশের নিচে রাখলো।তাতে যদি ওর নাক ডাকার শব্দ একটু কম আসে কানে।এমনিতেই অচেনা বিছানায় ওর সহজে ঘুম আসে না।তার উপর আবার এই নাক ডাকাডাকি।হঠাৎ করেই নাবিলের একটা কথা মনে আসে।সেলিমের বউ ঘুমুবে কিভাবে?ওর এই নাক ডাকার শব্দে যদি ঘুম ভেঙে যায়?রাতে ঘুমাতে না পারলে তো পাগল পাগল লাগে।সেলিম কে ঠেলা দিয়ে বলে,”সেলিম।এই সেলিম শোন।”
সেলিম ঘুমের মধ্যে থেকেই বলে,”কিহ?ঠেলছিস কেন?”
“বিয়ের পর যদি তোর বউ তোকে ছেড়ে চলে যায় তোর এই নাক ডাকার জন্য?যে শব্দ করিস তুই।তখন কি করবি?”
“রাত দুপুর সময় এই ফালতু কথা বন্ধ করবি?আমার চিন্তা বাদ দিয়ে তুই নিজের চিন্তা কর।শুধু কি ছেলেরাই নাক ডাকে নাকি?মেয়েরাও ডাকে।পাশের ঘরে গেলে বুঝবি আমার দাদী কি পরিমাণ নাক ডাকে।আর আমার দাদা সেখানে আরামেই ঘুমায়।তোর বউ যদি নাক ডাকে তখন তুই কি করবি তাই ভাব।”

সেলিম আরও কিছুক্ষন বিরবির করে কি যেন বলে আবার ঘুমিয়ে পড়ে।কিন্তু ঘুম আসে না নাবিলের চোখে।সূদুর ভবিষ্যতের চিন্তায় ওর ঘুম আসে না।কি করবে বুঝে উঠতে পারে না সে।কিন্তু এটুকু বুঝে,জীবন সবসময় এক নিয়মে চলে না।জীবনের রঙ বদলায়।গতি বদলায়।
★★★
নাহিদের বাহুতে মাথা রেখে আসমানী বলে,”আপনি সত্যিই আমাকে পছন্দ করেছেন তো?নাকি আমাকে দয়া দেখাচ্ছেন?”
“এক কথা আর কতবার বলবে আসমানী?ভালোলেগেছে বলেই তো বিয়ে করেছি।ভালো না লাগলে নিজেদের জীবন নষ্ট করতাম না।তবে,একটা কথা জানো কি?”
“কি?”
“আল্লাহ যা করেন,সব মঙ্গলের জন্যই করেন।”
“কি রকম?”
“এই যে আমি চার বছর ধরে বেকার বসে আছি।কবে জব পাবো সেই আশায়।জব পেতাম,বাড়িঘর ঠিক করতাম।কিছু টাকা পয়সা জমাতাম।বউয়ের জন্য সামান্য হলেও অলংকার বানাতাম।আবার মোহরানার টাকা জোগাড় করতাম।তারপর না বিয়ে করতাম।ততোদিনে আমার চুলে সাদা পাখিরা বাসা বাঁধতো।”

আসমানী খিলখিল করে হাসে।নাহিদ তাকিয়ে থাকে ওর মুখের দিকে।এতোটা সাবলীল কেউ কিভাবে থাকতে পারে নাহিদ ভেবে পায়না।মেয়েটার আপন বলতে কেউ নেই।অথচ দেখে মনেই হয় না।তাদের সাথে নিজেকে কতটা মানিয়ে নিয়েছে।
আসমানী নাহিদ কে আবার জিজ্ঞেস করে,”সত্যি করে বলুন তো,আমার কোন জিনিসটা দেখে আমাকে পছন্দ করলেন?হুট করেই কি কাউকে পছন্দ করে ফেলা যায় নাকি?”
“বললাম তো এই প্রশ্নের জবাব আজ দিবো না।”
“নাহ,দিতে হবে।আর আজই,এক্ষুণি।”
নাহিদ নিজের আচরণে নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছে।একটা মেয়ে তার শরীর ঘেঁষে তার উপর কত সহজেই অধিকার দেখাচ্ছে।অথচ সে কিছু বলতেও পারছে না।এমনিতে তো লাজুক নাহিদ ভার্সিটির মেয়েদের সাথে রাস্তায় দেখা হলেও মাথা নিচু করে হেঁটে যেতো।যাতে হাই হ্যালো বলা না লাগে।
“কি হলো বলেন।”
অবশেষে হার মানতে হলো নাহিদকে।কিন্তু কথাটা বলতে তার ভীষণ লজ্জা লাগছে।কোনো মেয়ে কি এটা মেনে নিবে নাকি বিশ্বাস করবে?
“চুপ করে আছেন কেন বলেন?”
“বলবো।এক শর্তে।”
আসমানী ঠোঁট উলটে বলে, “কি?”
“আমাকে তুমি করে বলবে।”
আসমানী মাথা চুলকে বলে,”এখনই?”
“নাহ।এটা আসলে অভ্যাসের ব্যাপার।ধীরে ধীরে বলো।”
“ওকে।বাট এখন আপনি বলেন আমাকে কি দেখে পছন্দ করলেন।”
নাহিদ নিজের চোখ বন্ধ করে বলে,”তোমার মুখের ব্রণ গুলো দেখে।বিশেষ করে ঐ গোলাপি ব্রণ দেখে।”
আসমানী প্রথমে অবাক হলেও পরমুহূর্তে হেসে দেয়।প্রথমে আস্তে আস্তে হাসলেও ধীরে ধীরে হাসির মাত্রা বাড়তে থাকে।জোরে জোরে হাসতে শুরু করলে নাহিদ ওর মুখ চেপে ধরে ওকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।আসমানী হঠাৎ হাসি থামিয়ে নাহিদের চোখের দিকে তাকায়।তারা দুজনের উপলব্ধি করতে পারে একে অন্যের মনের আর চোখের ভাষা।নাহিদ ওর মুখ থেকে হাত সরিয়ে চু*মু খায় ওর সেই গোলাপি রঙের ব্রণ এর উপর।আসমানী চোখে পানি চলে আসে।সে বুঝে যায় তার স্বামী মিথ্যে কথা বলছে না।সে তাকে ভালোবেসেছে তার খুঁত দেখেই।নাহিদ আসমানীর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,”ভালোবাসি।”
★★★
“তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে না তো এতো সকালে গোসল করলে?তোমার চুলও তো বেশ বড় বড়। ”
“আমার অভ্যাস আছে মশাই।হোস্টেলে আমি সকালেই গোসল করতাম।দিনে তো সিরিয়ালই পাওয়া যেতো না।”
“হুমম।”
“এখানেও সকালেই গোসল করতে হবে।”
“হ্যাঁ, তা তো অবশ্যই। “বলেই চোখ টিপে দেয় নাহিদ।
আসমানী লজ্জা পেয়ে বলে,” বজ্জাত লোক।”
“ভুল কিছু কি বলেছি?”
“নাহ।তবে আরেকটা ব্যাপারও আছে।”
“কিহ?”
আসমানী একটু ইতস্তত করে বলে,”আপনাদের বাড়ির দুইপাশেই বিল্ডিং।দিনে গোসল করলে উপর থেকে দেখা যাবে।টিউবওয়েল এর চারপাশে তো বেড়াও নেই।”
নাহিদের কপালে চিন্তার ছাপ পড়ে।আসমানী ভুল কিছু বলেনি।সে তো সারাজীবন ফ্ল্যাট বাড়িতেই থেকেছে।সে সেখানেই অভ্যস্ত। মাও সারাজীবন সকালের দিকেই গোসল করে।কিন্তু সমস্যা হয় নাতাশাকে নিয়ে।মাঝে মাঝেই ও এটা সেটা বলে।একটা আলাদা গোসলখানা বানানোর জন্য।না পারলে টিউবওয়েল এর চারপাশে বেড়া দেওয়ার জন্য। একবার দিয়েছিল ওর বাবা।কিন্তু সেবার আগুন লেগে সেগুলোও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।নাহিদ গম্ভীর মুখে বলে,”চিন্তা করোনা আসমানী।আমি বেড়া দেওয়ার ব্যবস্থা করবো চারপাশে।”
“উপরেও একটু দিয়েন।বিল্ডিং থেকে দেখা যায়।আমাদের হোস্টেলর পাশে এইরকম কয়েকটা বাড়ি ছিল।উপর থেকে দেখা যেতো।”
“হুমম। দেখছি আমি ব্যাপারটা।”
★★★
“নাবিলের পড়ার টেবিলটা তোর ঘর থেকে বসার ঘরে এনে রাখ নাহিদ।আর একটা সোফা ওর টেবিলের জায়গায় রাখ।”
“কেন বাবা?”
“বুঝিস না কেন?পরের বাড়ি কতদিন থাকবে?আর আসমানী আর তোর জন্যও তো আলাদা ঘর লাগবে এখন।এক ঘরে থাকবো নাকি সবাই?”
“হ্যাঁ।ঠিকই বলেছো তুমি।”
“দেখি আমি কি করি।ততোদিন বসার ঘরেই নাহিদের থাকার ব্যবস্থা করি।বাজার থেকে একটা চারপায়া চৌকি কিনে নিয়ে আসিস দুপুরে।”
“আচ্ছা।বাবা।”
“কি?”
“টিউবওয়েল এর চারপাশে বেড়া দেওয়া দরকার।আসমানী, মা আবার নাতাশাও বড় হয়ে গেছে এখন।”
“হ্যাঁ। সে কি আর বুঝি না আমি?অতো সাধ্য কই আমার? তাও দিব।চিন্তা করিস না।”
“হুমম।”
“নাহিদ,তোর বন্ধু এসেছে। তোকে ডাকছে।বাইরে আয়।”
মায়ের ডাকে বাইরে বের হয়ে দেখে ওর বন্ধু রাসেল সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিষ্টির প্যাকেট হাতে নিয়ে।তাকে দেখে হাসিমুখে বলে,”বউ পেয়ে দুনিয়া ভুলে গেলি নাকি?”
“স্যরি রে দোস্ত। তোকে জানাতে পারিনি কালকে।তোদের বাড়িতে তো নাবিলকে পাঠিয়েছিলাম কালকে।ও বললো তুই বাসায় নাই।”
“হ্যাঁ। কাজে গিয়েছিলাম।তুই তো একবার ফোন দিয়েও জানাতে পারতি।”
“কালকে সারাদিন ফোন কই ছিল খেয়াল ছিল না।”
“হ্যাঁ, সেটাই।বউ পেয়ে বন্ধু তো দূরের কথা।ফোনের কথাও ভুলে গেছিস।ফোনটা কালকে হাতে থাকলে এতোক্ষণে বাড়িতে আর একটা বিয়ের বাজার বসে যেতো।”
বাবা-মার সামনে এইভাবে বলায় নাহিদ বেশ লজ্জা পেল।কথা ঘুরাতে তাড়াতাড়ি বলে,”কি সব বলিস না।আয় আয় ঘরে আয়।”
“তা তো আসবোই।আজ দুপুরের খাবার খেয়েই যাবো।তার আগে চাচীকে মিষ্টিমুখ করাই।”
রাসেল নাহিদের মায়ের কাছে গিয়ে একটা মিষ্টি খাইয়ে বলে,”আমার জন্য দোয়া করবেন চাচী।আমি চাকরিটা পাইছি।নাহিদ তো মিষ্টি খাওয়াইবো না।ওর টাও আমিই খাওয়াই।”বলেই আরেকটা মিষ্টি মুখে দিয়ে দেয় নাহিদের মায়ের।
নাহিদ বা কারোই বুঝতে বাকি থাকে না রাসেল কি কথা বলছে।সে তাড়াতাড়ি ঘরে গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে মেসেজ অপশনে গিয়ে দেখে সত্যিই তার চাকরি কনফার্ম হয়েছে।নাহিদের যেন বিশ্বাস হয় না।তার হাত পা থরথর করে কাঁপতে থাকে।আসমানী তাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,”কি হয়েছে আপনার? এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?খারাপ লাগছে?”
নাহিদ কিছু না বলে আসমানীকে জড়িয়ে ধরে বলে,”তোমার সব দায়িত্ব আর শখ আহ্লাদ এখন পূরণ করবো আমি।কথা দিচ্ছি।”
নাহিদ বের হয়ে বাবা-মায়ের পা ছুঁয়ে সালাম করে।রাসেল বলে,”চাচী,আজ কিন্তু পোলাও মাংস খেয়েই তারপর বাড়ি যাবো।নাহিদ তো এখন অফিসের স্যার।৬০ হাজার টাকা মাসিক বেতন।”
“হ্যাঁ, হ্যাঁ।খেয়েই যাবি তুই।”
শাহেদা বেগম নিজের চোখের পানি লুকাতে ঘরে যায়।দেখে তার স্বামী বিছানায় বসে আছে।তার কাছে গিয়ে বলে,”অবশেষে ছেলেটা চাকরি পেল।আমাদের দিন এবার ফিরবে বলো?একটু সুখের মুখ দেখবো।তাইনা?”
“আল্লাহর কাছে চাও।”
“আসমানী আমার ঘরে আসলো আর এতো বড় খুশীর
খবর।মেয়েটা সৌভাগ্য নিয়ে আসছে আমাদের জন্য। আর ঐদিন আমি কত বাজে কথাই না শুনাইলাম ওরে।”

নাহিদের বাবা জানে ওনার স্ত্রীর এমন ধারণা ভুল।তারপরও সে তার ভুল টা ভাঙিয়ে দেয় না।ভাবুক না একটু ভুল।তাতে যদি সম্পর্ক ভালো থাকে,তাহলে ক্ষতি কি?
★★★
নাহিদের বড় চাচার মেয়ে রোজিনা এসেছে আসমানীকে দেখতে।মেয়েটার দিকে আসমানী তাকিয়েই আছে।কি সুন্দর দেখতে একটা মেয়ে।একেবারে পরীর মতো।শরীরের অলংকার গুলো যেন তার সৌন্দর্য আরো ফুটিয়ে তুলেছে।কিন্তু মেয়েটার মুখে কেন যেন হাসি নেই।কেমন একটা বিষাদের ছাপ।এই আচরণ আসমানী ভালোভাবেই বুঝে।তার পরিবার যখন আল্লাহর কাছে চলে গেল,তখন সে এভাবেই থাকতো।সবাই বলতো,পরীর মতো মেয়েটার মন টা কি খারাপ।এখন আর আসমানী দেখতে পরীর মতো নেই।এতো পরিশ্রমের কাজ করে,ভালো খাবার না খাওয়ার ফলে তাকে দেখতে আর আগের মতো লাগে না।কেমন শুকিয়ে গেছে।মুখেও অনেক ব্রণ হয়েছে।
“আমার ভাইকে ভালো লেগেছে তো ভাবী?”
হঠাৎ এমন প্রশ্নে আসমানী বেশ লজ্জা পেয়ে মুচকি হেসে মাথা নিচু করে রাখে।
“আমরা কিন্তু প্রায় সমবয়সী।ও আমার চেয়ে কয়েক দিনের ছোট।ভাই-বোনদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমিই ওকে চিনি।আমি ছাড়া ওর বাইরের মেয়েদের সাথে তেমন কোনো সাক্ষাৎ নেই।এমনকি বাকি বোনেরাও ওকে বেশ ভয় পায়।রেগে গেলে ওর মাথা ঠিক থাকে না।”
“আপনি কালকে এলেন না যে?কালকে তো সবাই এসেছিল।কালকেই আপনার কথা শুনলাম।”
“কি শুনেছো?”
“আপনি কত সুন্দর,শান্তশিষ্ট আর ভালো তাই সবাই বললো।”
“ব্যস, এইটুকুই?আর কিছু বলেনি?”
“আর কি বলবে?”
“এই যে আমার ভাগ্য।সাত বছর হলো বিয়ে হয়েছে, অথচ এখনও মা ডাক শুনতে পারিনি।জীবনে পারবোও না। আমার শ্বশুর বাড়ির লোক আমার স্বামীর জন্য মেয়ে খুঁজছে।” বলেই একটু মুচকি হাসি দেয় সে।আসমানীর বুক টা ধ্বক করে উঠে।হাসির মাঝেও যে এতো কষ্ট, এতো অভিমান লুকিয়ে থাকে সেটা সে এই মেয়েটার হাসি দেখেই বুঝলো।সে কি বলবে ভেবে পেল না।তখনই বাইরে থেকে শুনতে পেল,তার বড় চাচা শ্বশুর বেশ রাগের স্বরেই বলছে,”ওদের নাকি ভিটায় বাত্তি জ্বালানোর মতো কেউ নাই।তিন তিনডা ভাই।দুই টার একটাও ছেলে নাই।শুধু ওর শ্বশুরেরই এক ছেলে।তা নিয়ে নাকি ওর শাশুড়ীর কত অহংকার।এখন আমার মেয়ের বাচ্চা হইতাছে না তাই তাদের ছেলেরে আরেকটা বিয়ে করানো লাগবো।কেন?তাদের যে আগে মেয়ে হইছে,তারা আরেকটা কইরা বিয়ে করে নাই কেন ছেলের জন্য।”
আসমানী ঘরের ভিতর থেকেই শুনলো তার শ্বশুর বলছে,”জামাই কি বলে?”
লোকটা আরো রাগের স্বরে বলে,”ঐ কা-পুরুষ আর কি বলবে?ও নাকি বলছে বিধবা বিয়া করবো।কত্ত বড় বেয়াদব দেখছোস?শেষমেষ বিধবা বিয়া করবো,তাও বিয়া করবোই।”
“রোজিনা কি চায়?”
“ওরেই জিজ্ঞেস কর তুই।”
আসমানী এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়বে ভাবতে পারেনি।দুনিয়ার মানুষের কত ধরনের দুঃখ।তবু তারা বেঁচে আছে।আর আসমানী তার পরিবারের মৃত্যুর পর কতবার সুইসাইড করতে চেয়েছে তার হিসেব নেই।
চলবে……