আসল সম্পর্ক পর্ব-০৪

0
175

#আসল_সম্পর্ক
#পর্ব_৪
#ইশরাত_জাহান

রাতে খাবার খেয়ে যে যার মত নিজের রুমে আসে।প্রিয়তা গল্পের বই নিয়ে বসেছে। গল্পপ্রেমী প্রিয়তা। আর অনুপম বসেছে ক্যামেরা নিয়ে।ছবিগুলো এডিট করবে এখন।ছবিগুলো ভালোভাবে দেখছিলো অনুপম।কিছু কিছু ঝাপসা এসেছে।আবার কিছু কিছু সুন্দর।এডিট করার ভিতর প্রিয়তার একটি ছবিতে চোখ আটকে যায় অনুপমের।জুম করে দেখলো ছবিতে প্রিয়তার চোখে গারো কাজল,ঠোঁটে হালকা লিকস্টিক,মুখে ফুটন্ত হাসি আর কপালে কালো টিপ।ছবিটির দিকে একাধারে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলো।যেনো এক ঘোরের ভিতর ছিলো সে।হঠাৎ কিছু ভেবে ঘোর কাটলো তার।প্রিয়তা তার জীবনে আছে ক্ষণিকের জন্য।এর ভিতরে এসব কি ভাবছে সে।বিড়বিড় করে অনুপম নিজেকে নিজে বলতে লাগলো,”মানব লালসা বড়ই অদ্ভুত।সুন্দরের প্রতীক হয়ে মানুষ রং বদলায়।এই যেমন আমাদের প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ।ওনার লেখা গল্পগুলো মন ছুঁয়ে যায়।কিন্তু জীবনে কি করলো!সন্তান সহ বউকে ত্যাগ।নিজের মেয়ের এক সিনিয়র বান্ধবীকে বিয়ে করেছিলো।হুমায়ূন ফরীদি তিনিও তো কম না।নারী আসক্তি নিয়ে কত কিছু লিখতেন।অথচ তিনিও তো বউ থুয়ে বান্ধবীর দিকে বেশি আসক্ত ছিলো।কথা কতটুকু সত্য আজও জানা নেই।এবার আসা যাক প্রিন্সেস ডায়ানার দিকে।প্রিন্সেস ডায়ানা যে কি না সেরা সুন্দরী।তার রূপের কাছে সবকিছু হার মানে।তার বর কি ঠিক থেকেছে তার প্রতি?না পারেনি।কিছু কিছু মেয়েরাও আছে এমন।আসলে বাস্তব জীবনে কেউই পারফেক্ট হিরো হিরোইন না।সবাই কাল্পনিক জগতে পবিত্র।জীবনে চলতে গেলে যত বাধা অতিক্রম করতে হয়। ততই যেনো আসল রূপ বেরিয়ে আসে।একটি দম্পতির বিচ্ছেদ হলে এক দল বলবে মেয়েটি খারাপ,মানিয়ে নেয় নি।আরেক দল বলবে আরেহ ছেলেরা এক নারীতে টিকতে পারে না।ছেলেটির দোষ আছে এখানে।কিন্তু সম্পর্ক ধরে তো স্বামী স্ত্রী কেউই পারছে না।আবার নারী নির্যাতনে কেউ সাহায্য করতে দু পা না এগিয়ে বরং পিছিয়ে যায়।বলে মানিয়ে নে।কেউ কেউ আবার নারী নির্যাতন না করেও ফেঁসে যায়।এটাই তো হয় সমাজে।ভিতরে চলে এক বাইরে দেখায় আরেক।”বলেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো অনুপম।
এডিটের কাজ শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ে।

প্রিয়তা গল্পের বই পড়তে পড়তে ডুপ দেয় পুরনো স্মৃতিতে।রাজীবকে নিয়ে কত স্মৃতি তার।এগুলো কি ভোলা যায়।জীবনের প্রথম পুরুষ ভালো হোক বা খারাপ।কখনও ভোলা যায় না তাকে। আর ভুলতে পারবে কিভাবে?কেউ কি তাকে ভুলে থাকার দায়িত্ব নিয়েছে?না নেয়নি।একা একা এক ঘরে বাচতে গেলে তো অতীত তারা করবেই।গভীর রাতে অন্ধকারে একাকীত্বে প্রেমিক পুরুষটি কল্পনায় আসবে।বালিশ ভিজিয়ে দিতে হয় তখন।কেউ কি আছে যে শুকনো বালিশে ঘুম পাড়িয়ে দিবে! নেইতো।বিধাতা তার ভাগ্যে যাকে দিয়েছে তার মনে অন্য কেউ বাসা বেধেছে।সময় চেয়েছিলো ঠিকই,কিন্তু বুঝতে পারেনি সময়ের দূরত্ব সম্পর্কের ফাটল ধরবে।এই বিয়ে হয়েছে ঠিকই।কিন্তু বিয়ের পর কোনো মুহূর্ত কি আছে,যেখানে সম্পর্ক আগানোর বিন্দুমাত্র ব্যাবস্থা আছে?মানুষ উপর দেখে মন্তব্য দিবে।কিন্তু পাশে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে কষ্টের মোচন করবে না।ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো প্রিয়তা।

সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা বানাচ্ছে প্রিয়তা।অনুপম বাজারে গেছে।বাবা মা আসবে কয়েক মাস পর।ভালো মন্দ খাওয়াতে হবে।বাবা মায়ের পছন্দের বাজার করে আনলো অনুপম।এসে প্রিয়তাকে বুঝিয়ে দিলো কিভাবে করে কি কি রান্না করবে।সব শুনে প্রিয়তা বললো,”ফুফু আম্মা ও ফুফা আব্বা তো আমারও নাকি!আমি জানি তারা কি খেতে ভালোবাসে।তুমি চিন্তা করো না।আমি রান্না ঠিকমতো করবো।তুমি নাস্তা করে অফিসে যাও।”

অনুপম আর কথা বাড়ালো না।প্রিয়তার দেওয়া নাস্তা খেয়ে অফিসে গেলো।প্রয়োজনের বাইরে একটি কথাও তারা বলে না।

অনুপম যাওয়ার পর রাহেলা(কাজের বুয়া) আসলো।প্রিয়তা ও অনুপম তাকে বুবু বলে ডাকে।এসেই একটি হাসি দিলো। প্রিয়তাকে তার কাছে মিষ্টি দেখতে লাগে।অনুপম ও প্রিয়তাকে দেখলে মনে হয় একদম সিনেমার হিরো হিরোইন।মাঝে মাঝে প্রিয়তাকে এসবই বলেন তিনি।আজও বললো,”জানো আফামণি আজ আমি স্বপ্নে কি দেখছি।”

হাতের কাজ করতে করতে প্রিয়তা বলে,”কি দেখেছো বুবু?”

রাহেলাও রান্নাঘরের ভিতরে এসে প্রিয়তাকে সাহায্য করতে করতে বলে,”আমি স্বপ্নে দেখছি তোমার আর ভাইজানের একটা ফুটফুটে মাইয়া হইবো।”বলেই হেসে দিলো।

থমকে যায় প্রিয়তার হাত।কি অদ্ভুত সপ্ন।তারা তো বিচ্ছেদ হবে।সেখানে এই সপ্নের কোনো মানে হয়!প্রিয়তা কোনো প্রতিক্রিয়া না করে বললো,”কি যে বলো তুমি!ধুর।”

রাহেলা বিষয়টিকে লজ্জা ভেবে নিলো।তাই বললো,”আরে আফামণি সত্য কইতাছি।গরীবের সপ্ন কিন্তু বৃথা যায় না।”মজা করেই বললো কথাগুলো।

প্রিয়তা কথা এড়াতে বললো,”শুনো বুবু,আজ আমার ফুফু আম্মা ও ফুফু আব্বা আসবে।তুমি মসলাগুলো ভালো করে বেটে দিও।ঘরগুলো সুন্দর করে পরিষ্কার করো।ফুফু আম্মা কিন্তু প্রচুর সুচিপাই।”

প্রিয়তাকে খোচা দিতে রাহেলা বলে,”একদম তোমার মত।তোমার ভাগ্য ভালো সাথে ভাইজানেরও।তুমি তোমার ফুফুর মত শাশুড়ি পাইছো। আর ভাইজান ছোট থেকে তোমারে চিনে এখন বউ হিসেবে পাইলো।চিন্তা কইরো না।আমি সব গুছিয়ে রাখবো। যা যা করতে হইবো বইলা দিও।এই রাহেলা সুন্দর ভাবে কাম কইরা দিবো।”

স্মিত হাসলো প্রিয়তা।বুবুর উপর ভরসা আছে তার।বেশি বকবক করলেও মানুষ মন্দ না।মনোযোগ দিয়ে সব কাজ করে। প্রিয়তাকে সে ভালোবাসে। প্রিয়তা চুপচাপ থাকলেও তার চলাফেরা ও ব্যবহারকে মন ছুয়ে দেয় সবার।এই যে রাহেলার তেমন হয়েছে।

বিকালের দিকে বাসায় ফিরে অনুপমের বাবা মা।ফুফুকে দেখেই জড়িয়ে ধরে সে।ফুফুও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে তাকে।একদম মায়েদের মত করে বললো,”কি রে প্রিয়!নিজের যত্ন নিস না নাকি?এত শুকিয়ে গেছিস কেন!”

ফুফু আম্মা তার মায়ের থেকে কম না।এটা জানে প্রিয়তা।বাড়ির সবাই তো বলে,”প্রিয়তা হয়েছে একদম পুরোভির মত। নাক,মুখ তো ফুফুর মত হলোই।এখন আবার চলাফেরা ফুফুর মত।সারাক্ষণ বই নিয়ে বসে থাকে।”

ফুফুর টেনশন দেখে এক গাল হাসলো।পাশে তাকিয়ে ফুফাকে দেখে বললো,”আসসালামু আলাইকুম ফুফা আব্বা।আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো?”

মিস্টার অরুণ স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন,”ওয়া আলাইকুমুস সালাম।না মা অসুবিধা হয়নি।তবে তোদের জন্য ফল মিষ্টি কিনতে যেয়ে এ দোকান ও দোকান করতে হয়েছে।তাও যেনো তোর ফুফু আম্মার কোনো কিছুতে মন ভরে না।এদিকে যে আমার পা অবাশ হলো।তার কোনো খোঁজ নেয় না।”

মিসেস পুরোভি এবার তেতে উঠেছে।বলতে লাগলো,”কতদিন পর আমার সন্তানদের দেখতে আসছি।তুমি বুড়ো হয়ে গেছো বলে আমি ওদের জন্য সেরা খাবার না নিয়ে পঁচা খাবার নিবো?”

কথা বারালের না মিস্টার অরুণ।বউয়ের মুখের উপর কথা বাড়ালে কুরুক্ষেত্র বেধে যাবে। এ যেনো বউ না মিলিটারি।তফাৎ শুধু গুলি আর মুখের বাণী।কিন্তু কাজ এক। দুটোই একাধারে বাজতে থাকে।

প্রিয়তা মিটিমিটি হাসতে থাকে।ফুফা আব্বা যেনো সব সময় মাথায় করে রাখে তার ফুফু আম্মাকে।এটা দেখে প্রিয়তার ভীষণ ভালো লাগে।

চলবে,