আড়ালে ভালোবাসা পর্ব-০১

0
7368

#আড়ালে_ভালোবাসা
#Mst_Liza
#পার্ট_০১

আমার স্বামী অক্ষম।উনি কখনো আমায় মাতৃত্বের সুখ দিতে পারবেন না।কথাটা জানার পর আমি যেন থমকে আছি।বিয়ের কিছুদিন পরই জানতে পারলাম এই সত্যিটা।এতো রাতে উনি আমাকে সাজিয়ে উনার ছোট ভাইয়ের রুমে নিয়ে যাচ্ছে শুধু একটা সন্তানের পাওয়ার আসায়।

আমি অনুরাধা।আমার স্বামী প্রীয়ম চৌধুরী। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম উনাকে আমি।উনি হচ্ছে এই শহরের অনেক বড় একজন বিজনেস ম্যান।এক নামে সবাই উনাকে চেনে।যেদিন প্রথম উনার অফিসে ইন্টারভিউ দিতে যায় সেদিনই উনার ভাইয়ের কু নজরে পরে যায় আমি।আমি ছিলাম উনার ভাইয়ের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট।অফিসে বিভিন্ন মেয়ের সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক ছিলো।সে আমাকেও নানান রকম প্রলোভন দেখাত।কিন্তু আমি সাড়া দিতাম না।উনি বিজনেসের কাজে কিছুদিন দেশের বাইরে ছিলো।যখন ফিরলেন।সবটা জানতে পেরে ভাইকে বললেন অফিসে আর না আসতে।তারপর আমার কাজের প্রতি এতো আগ্রহ আর সততা দেখে উনি আমায় ভালোবেসে প্রপোজ করে বসলেন।উনার মতোন একটা ভালো মানুষকে না বলতে পারলাম না তখন আমি।আমার হ্যাঁ বলতেই দুই পরিবারের মতামত নিয়ে বিয়ের দিন সামনে এগোতে লাগলো।আমাদের মধ্যে চেনা জানা শুরু হলো।কিছুদিন পর বুঝতে পারলাম উনাকে আমি ভালোবাসি।ভেবেছিলাম বিয়ের পর প্রথম রাতে উনাকে নিজের মনের কথাটা বলবো।কিন্তু সেদিন উনার দেখা আর পেলাম না।আমি বাসর রাতে উনার জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পরলাম।সকালে আমাকে উনি একটার পর একটা সারপ্রাইজ দিলো।আর বোঝালো জরুরী একটা মিটিং এটেন্ড করতে রাতে বাইরে থাকতে হয়েছে। আমি উনাকে চোখ বন্ধ করে অন্ধের মতোন বিশ্বাস করলাম।কিন্তু আজ উনি যেটা করতে চাচ্ছেন সেটা সত্যি অতি জঘন্যতম একটা কাজ।

আমাকে নিজের হাতে সাজিয়ে নিয়ে এসে উনি উনার ছোট ভাই নাহিদের রুমের দরজায় নক করলো।আমার হাত পা এখন থরথর করে কাঁপছে।মাথায় কিছু আসছে না কি করবো।আমার স্বামী যে এমন জঘন্য একটা কাজ করতে চাইবে আমি কখনো কল্পনায়ও ভাবতে পারি নি।দরজা খুলতেই প্রথমে নাহিদ আমাকে দেখে সয়তানি হাসি হাসলো।তারপর আমার হাত ধরে একটানে রুমের মধ্যে নিয়ে নিলো।আমি চিৎকার করলাম।ওপাশ থেকে আমার স্বামী বললো মুখ বেঁধে নিতে।নাহিদ মুখ বাঁধতে এগিয়ে আসলে আমি বলে উঠলাম,

-এসব করে লাভ কি?

দরজার ওপাশ থেকে উনি বলে উঠলেন,

-এসবের দরকার আছে অনুরাধা।তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি।কিন্তু একটা সন্তান আমার চাই।আমার সব আছে।টাকা, সম্মাণ, ধন-দৌলত সব।কিন্তু এগুলো ভোগ করার জন্যও একটা সন্তান আমার চাই।আমি বাবা হতে পারবো না তো কি হয়েছে।আমার ভাই তো আছে।নাহিদের শরীরে আমার বংশের রক্ত বইছে।তাই ও পারবে আমাকে সন্তান দিতে।জানি তোমার কস্ট হবে কিন্তু আমার কিছু করার নেই।আমার জন্য একটু কস্ট সহ্য করও অনুরাধা।

নাহিদ আমার মুখটা বাঁধতে লাগলে আমি ওর হাতে একটা কামড় বসিয়ে দিলাম।নাহিদ রেগে গেলো।রাগি দৃষ্টিতে হিংস্র জানোয়ারের মতো আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

-তোর এতো বড় সাহস তুই আমাকে কামড় দিলি? ভালোবেসে আদর দিতে চেয়েছিলাম বুঝলি না এখন দেখ কি করি তোর সাথে।

কথাটা বলে আমার দিকে আগাতে লাগলো নাহিদ।আমি মাথা ঝাকিয়ে পেছনে সরতে লাগলাম।নাহিদ আগাচ্ছে আমি পেছুচ্ছি।পেছনে সরতে সরতে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকলে নাহিদ এসে আমার শাড়ির আঁচলটাতে হাত রাখলো।আমি ভয়ে কাঁধ ঘুরিয়ে অপর পাশের টেবিলে একটা মদের বোতল দেখতে পেলাম।আস্তে করে বোতলটা উঠালাম আমি।আঁচলে টান পরার আগেই নাহিদের মাথায় সজোরে আঘাত বসাতে লাগলাম।নাহিদ চিৎকার করতে করতে ঢলে পরলো মাটিতে।আমি ছুটে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম। আমার স্বামী এগিয়ে আসলেন।আমাকে পাশ কেটে উনি ছুটে গেলেন নাহিদের কাছে।নাহিদ নিচে পরে কাতরাচ্ছে। মাথা ফেটে ফ্লোরে রক্ত পরে আছে।উনি বললেন আমাকে ধরতে নাহিদকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।আমি মাথা ঝাকিয়ে না অর্থ বুঝিয়ে বেড়িয়ে আসলাম বাড়ি থেকে। গেইটের কাছে আসতেই দারোয়ান আমাকে আটকালো।আমি কিছুতেই যেতে পারলাম না।ফিরে আসলাম বাড়িতে।

উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম হসপিটালে যেতে চাইছিলো যাবে কিনা।উনি না বলে দিলেন।হসপিটালে গেলে ব্যাপারটা জানা জানি হতে পারে।উনার সম্মানের প্রশ্ন।নিউজের হেডলাইন হয়ে যাবে এটা।উনার এতোদিনে উপার্জিত নামে দাগ লেগে যাবে।তাই শহরের সবচেয়ে বড় ডাক্তারকে আসতে বলেছে বাড়িতে।আমার উপর রাগলেন না।শুধু বললেন আমি নাকি কাজটা ভালো করিনি।এখন আমাকেই নাহিদের সেবা করে তুলতে হবে যতোদিন না নাহিদ পুরোপুরি সুস্থ হয় আর উনার উদ্দেশ্য সফল না হয়।

চলবে,,,