আড়ালে ভালোবাসা পর্ব-০২

0
6308

#আড়ালে_ভালোবাসা
#Mst_Liza
#পার্ট_০২

সারা ঘরে পাইচারি করছেন উনি।ডাক্তার আসলে ছুটে গিয়ে অনেক যত্ন করে ডাক্তারকে নাহিদের রুমে নিয়ে এলেন।আমাকে বললেন রুম থেকে বেড়িয়ে আসতে।আমি রুমের থেকে বের হলে উনি দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিলেন।ডাক্তারকে হাত জোর করে বললেন যতো টাকা লাগে আপনাকে দেবো এই ছেলেটাকে আপনি মেরে ফেলুন।এমন ভাবে মারুন যেন সবাই ভাবে মৃত্যুটা একটা এক্সিডেন্ট।আমি বাইরে থেকে উনার কথাটা শুনে চমকে উঠলাম। নিজের ভাইকে মেরে ফেলতে বলছেন উনি? আমি আরেকটু এগিয়ে কান পেতে শোনার চেস্টা করলাম। উনি বলতে শুরু করলেন,

এই ছেলেটা আমার ভাই নয়।বিজনেস ম্যান প্রীয়ম চৌধুরী।আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।আমেরিকাতে একসাথে পড়াশোনা করেছি আমরা।কিছুদিন আগেই এক সড়ক দূর্ঘটনায় প্রীয়মের বাবা-মা, বোন সহ পুরো পরিবারটা মারা যায়।প্রীয়মের বাবার একজন শত্রু ছিলো।তার মেয়েই অনুরাধা। যাকে ও বিয়ে করেছে।বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য।প্রীয়ম দেশে এসেছিলো ছদ্মবেশে।নিজের পরিচয় গোপন করে।আমাকে নিজের পরিচয় দিয়ে আমার ছোট ভাই সেজে বাবার পুরো বিজনেস নিজ হাতে সামলাচ্ছিলো।বাবার শত্রুর অনেক খোঁজ করেছিলো প্রীয়ম কিন্তু পাই নি।তারপর যেদিন ওর অফিসে অনুরাধা ইন্টারভিউ দিতে আসে সেদিন প্রীয়ম অনুরাধার পরিচয় জানার পর বুঝতে পারে অনুরাধা তার বাবার শত্রুর মেয়ে।অনুরাধার বাবা কি করেছিলো।কিসের শত্রুটা ছিলো সেটা আমাকে প্রীয়ম বলে নি।শুধু বলেছিলো আমাকে দেশে এসে অনুরাধার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করতে।আমি দেশে আসলাম।সমস্ত প্রেস, মিডিয়ার সামনে প্রীয়ম সেজে ইন্টারভিউ দিলাম।প্রীয়ম অনুরাধার সামনে অনেক খারাপ রূপ ধারণ করলো।আর আমাকেই বললো।কিছুদিনের জন্য অফিসের থেকে ওকে দূরে থাকতে বলতে।এই সুযোগে অনুরাধাকে আমার প্রেমে ফেলে বিয়ের জন্য রাজি করাতে হবে।আমি সবটা করলাম।তারপর প্ল্যান অনুযায়ী অনুরাধার সাথে প্রীয়মেরই বিয়ে হলো।অনুরাধা জানে আমি প্রীয়ম।আমিই ওর স্বামী।কিন্তু না আমি তো প্রীয়মের বেস্ট ফ্রেন্ড নাহিদ।সারা প্রেস, মিডিয়া, দেশ সবাই জানে বিজনেস ম্যান প্রীয়ম চৌধুরী আমি।এতো টাকা, এতো সম্মান আমি হারাতে পারবো না।তাই আসল প্রীয়মকে মরতেই হবে।এমন কোনো ওষুধ দিন ডাক্তার যেটা নিলে প্রীয়ম একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে পরবে।এমন কোনো বিষ যা ঘুমের ওষুধের মতো ধীরে সুস্তিতে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাবে।কেউ বুঝবে না এটা খুন।

কথাগুলো শুনে আমি যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না।আমার পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে যাচ্ছে।একটা মানুষ এতোটা খারাপ কিভাবে হয়? যাকে আমি এতোটা ভালোবেসেছি। নিজের স্বামী ভেবে এসেছি।সে আমার কেউই না।আর নাহিদ? না প্রীয়ম চৌধুরী। একটা খারাপ মানুষ। সবসময় আমার দিকে কু নজরে তাকিয়েছে সে আমার স্বামী? কিসের এতো শত্রুটা আমার বাবার উপরে যে আমার উপর থেকে তার মাসুল নিতে হচ্ছে?

আমি ছুটে নিজের রুমে চলে আসলাম।রুমে এসে ফোন করলাম আমার মাকে।মা জানতে চাইলো আমার স্বামী কেমন আছে? আমি নিজের মুখ টিপে কাঁদছি।কি উত্তর দিবো নিজেও জানি না।শুধু মাকে বললাম বাবার ভুলের মাসুল আর কত দেবো আমরা? মা নিশ্চুপ হয়ে রইলো।কিছুটা আচ করলো।আমাকে প্রশ্ন করলো কিছু কি হয়েছে? আজ হঠাৎ কেন এমন কথা বললাম আমি? আমি কোনো উত্তর না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলাম।

ডাক্তার চলে গেলে উনি এসে আমার রুমের দরজায় নক করলেন।আমি দরজা খুলতেই একটা শিশি আমার হাতে তুলে দিলেন।তারপর বললেন দুই ঘন্টা পরপর এই শিশির থেকে একটা করে টেবিলেট নাহিদকে খাওয়াতেই হবে।তাহলে নাকি তারাতাড়ি নাহিদ সুস্থ হয়ে উঠবে। আমি উনার মুখের দিকে তাকালাম না।কেন জানি আজ একটুও সম্মান করতে ইচ্ছা করছে না এই মানুষটাকে আমার।যাকে এতোটা ভালোবেসে বিশ্বাস করেছিলাম সেই মানুষটাই যে মিথ্যা।পরিচয়টাই যে মিথ্যা।আমাকে থুতনিতে হাত রেখে নরম গলায় বললেন, কি বলেছিলাম মনে নেই তোমার? যাও নাহিদের রুমে।নাহিদকে সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলবে তুমি।তারপর আমার উদ্দেশ্য সফল হলেই আমার রুমে আসবে।কথাটা বলে আমার হাত ধরে আসল প্রীয়ম চৌধুরীর রুমে এনে বাইরে থেকে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে গেলেন।

আমি মুখটা ঘুরিয়ে দেখতে পেলাম বিছানায় রক্তাক্ত কপালটা ব্যান্ডেজ করা বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে এই মানুষটা।যাকে আমি এতো ঘৃণা করি।সামান্য আরেকটু এগিয়ে এসে স্যালাইন চলা হাতটাতে দেখতে পেলাম একটা পোড়া দাগ।স্পর্শ লেখা আছে অনু।এটাতো আমার ডাক নাম।আমি বুঝলাম না এমন একটা মানুষের হাতে আমার নাম কেন লেখা? কিছু একটা মনে পরতেই বুঝলাম প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই হয়তো লিখে রেখেছে। শত্রুর মেয়ে আমি।যদি কখনো ভুলে যায় এই নামটাই হয়তো শত্রুতার কথা মনে করিয়ে দিবে।তাই লিখে রাখছে।

চলবে,,