আড়ালে ভালোবাসা পর্ব-০৪

0
5545

#আড়ালে_ভালোবাসা
#পার্ট_০৪
#Mst_Liza

প্রীয়মের রুমে টেবিলের উপরে একটা ডায়েরি রাখা ছিলো।সেটার উপর চোখ পরলো আমার।আমি এগিয়ে এসে ডায়েরিটা হাতে নিলাম।উপরে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিলো পার্সোনাল ডায়েরি কেউ হাত দিবেন না।এটা দেখে ভাবলাম অন্যের ডায়েরি খোলা ঠিক হবে কিনা।তারপরও খুললাম যদি কিছু জানতে পারি।কিসের শত্রুতা ছিলো আমার বাবার সাথে প্রীয়মের বাবার?

চেয়ার টেনে বসলাম আর ডায়েরির পাতা গুলো উল্টালাম।বেশ কয়েকটা পাতা খালি।মাঝ বরাবর এসে দেখতে পেলাম কিছু একটা লেখা।আমি মনোযোগ দিয়ে পড়তে শুরু করলাম-

জীবনে আর কতকিছু হারাবো? কত কস্ট পাবো আমি আর? আমি যে আর এতো কস্ট নিতে পারছি না।ছোটবেলা ফুপ্পিকে হারিয়ে ছিলাম। যেই ফুপ্পি আমাকে এতোটা ভালোবেসতো।আমি হোস্টেলে থেকে পড়তাম।আমাকে কখনো বলেনি বাবা-মা ফুপ্পির মৃত্যুটা কিভাবে হয়েছে। বড় হয়ে জেনেছি ফুপ্পি আত্নহত্যা করেছিলো।আমার ফুপ্পি আমাকে এতো ভালোবাসতো অথচ শেষবারের মতোন তার লাশটার মুখও দেখতে পারলাম না।আমি যখন ঈদের ছুটিতে বাড়িতে ফিরলাম ফুপ্পির মৃত্যুর কথাটা শুনলাম। আমার ভেতরটা কস্টে ফেটে যাচ্ছিলো।আমি ফুপ্পির হত্যাকারীকে ছাড়বো না।মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছি।যে ফুপ্পিকে আত্নহত্যা করতে বাধ্য করেছে তাকে আমি নিজের হাতে শাস্তি দেবো।

আমার আদরের বোন রুমকি।ওকে আমার বাবা মাথায় করে রাখতো।আমি বিদেশে পড়ালেখা করলেও ওর সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো বন্ধুর মতোন।কোথাও কোনো পার্টিতে গেলে আমাকে ভিডিও কলে ড্রেস দেখাতো।কোনটা পড়লে ওকে ভালো লাগবে? বাবার কাছে কিছু চাইতে ওর লজ্জা করতো।তাই আমাকেই বলতো।ওর সব কথা সব আবদার আমার কাছে রাখতো।আমি বাবাকে বলে ওকে সবকিছু পাইয়ে দিতাম।রুমকি আমার মায়ের নয়নের মণি ছিলো।মাকে ফোন দিলে ওর কোনো না কোনো একটা কাজ করতেই থাকতো।এই নিয়ে মায়ের সাথে রাগ করে মুখটা গোমড়া করে রাখতাম আমি।কিন্তু কত্ত ভালোবাসতাম আমার ছোট্ট বোনটাকে।একদিন এক জানোয়ার আমার বোঁকা বোনটাকে নিজের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ওর সর্বনাশ করেছে।ওর সাথে গোপনে কাটানো কিছু মুহূর্তের ভিডিও করে বাবার ফোনে পাঠিয়ে দিয়েছে।ওতো কিছু জানতোই না।বাবা ওকে কিচ্ছু বলেনি।গোপনে জানোয়ারটাকে টাকা দিতো বাবা।শুধু আমাকে বাবা বলেছিলো।যেন আমি বোঝায় আমার বোনকে জানোয়ারটার থেকে দূরে থাকতে।জানোয়ারটাকে ভুলে যেতে।বাবার মুখে সবটা শুনে আমি এমন একটা পর্যায়ে ছিলাম যে তখনি দেশে চলে আসবো।জানোয়ারটাকে নিজের হাতে খুন করবো।কিন্তু বাবা আমাকে শান্ত হতে বলল।বোনের জন্য নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বোনকে ঠিক পথটা দেখিয়ে দিতে বলল।আমাকে বলল বাবা তার বোনও একদিন আত্মহত্যা করেছিলো।সে চাই না আমি এমন কিছু করি যার জন্য আমার বোন আত্মহত্যা করুক।আমাকে ঠান্ডা মাথায় বোনকে বোঝাতে হবে।যতো টাকা লাগে জানোয়ারটাকে বাবা দেবে।শুধু বোনকে ওর থেকে দূরে থাকতে হবে।যেন পরেরবার বোন ওর কাছে না যায়।

আমার মনও মস্তিষ্ক কাজ করছিলো না।একদিকে বাবার কাছে ফুপ্পির মৃত্যুর সত্যিটা জানতে পারলাম অন্যদিকে আমার আদরের বোনটার সাথে ঘটা এতো বড় একটা সত্যি।আমি পাগলের মতো কাটাচ্ছিলাম।দুজন মানুষকে হাতের সামনে পেলে টুকরো টুকরো করে কুকুরকে দিয়ে খাওয়াতাম।

মাঝ রাতে রুমকি কল করলো।আমি রিসিভ করতেই কান্না শুরু করে দিলো।আমাকে কান্না জড়িত কন্ঠে বলল ভাইয়া আমাকে ক্ষমা করে দিস কখনো কিছু ভুল করে থাকলে।আমি ওকে বললাম এমন কথা কেন বলছিস পাগলি? ও বলল আমার খুব কস্ট হচ্ছে।ফোনে ওর চিৎকার শুনতে পেলাম।কিছুক্ষণ আমি ওকে ডাকলাম ওর কোনো রেন্সপন্স নেই।শুধু চিৎকার করে যাচ্ছে।তারপর বাবা-মায়ের কন্ঠ শুনতে পেলাম। ফোনের ওপাশ থেকে মা চিৎকার করে কেঁদে উঠে বলল রুমকি বিষ খেয়েছে ওকে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে চলো।বাবা এমন পরিস্থিতিতে কি করবো বুঝছিলো না।আমি ফোনে অনেকক্ষণ ধরে রুমকি, মা, বাবা বলে ডেকেছি।হয়তো আমি লাইনে আছি বাবা-মা জানেও না।ওই রাতেই ঠিক করি আমি দেশে চলে আসবো।সারারাত টেনশনে কাটিয়ে দিই।বাবাকে কল দিই।বাড়িতে কত কল দিই বেজেই যায়।কেউ রিসিভ করে না।সকাল হতেই বাবার পার্সোনাল এসিস্টেন্ট ফোন করে আমাকে খবর দেয় মাঝ রাতে একটা এক্সিডেন্টে আমার বাবা-মা, বোন সকলে একসাথে মারা গিয়েছে।

আমি একদম একা হয়ে গেছি।আমার দুনিয়াতে কেউ নেই।বাবা হয়তো বোনের টেনশনে ওই রাতে গাড়ি ড্রাইভ করতে পারেনি সাবধানে। কিন্তু যে আমার বোনের মৃত্যুর জন্য দায়ী তাকে আমি ছাড়বো না।আমি দেশে এসেছি শুধুই প্রতিশোধ নিতে।প্রত্যেকটা মানুষকে সারা পৃথিবী খুঁজে বের করে হলেও শাস্তি দেবো।আর তার পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষকে বোঝাবো আপনজন হারানোর কস্টটা কি!

চলবে,