আড়ালে ভালোবাসা পর্ব-০৫

0
4579

#আড়ালে_ভালোবাসা
#পার্ট_০৫
#Mst_Liza

আমি একদম একা হয়ে গেছি।আমার দুনিয়াতে কেউ নেই।বাবা হয়তো বোনের টেনশনে ওই রাতে গাড়ি ড্রাইভ করতে পারেনি সাবধানে। কিন্তু যে আমার বোনের মৃত্যুর জন্য দায়ী তাকে আমি ছাড়বো না।আমি দেশে এসেছি শুধুই প্রতিশোধ নিতে।প্রত্যেকটা মানুষকে সারা পৃথিবী খুঁজে বের করে হলেও শাস্তি দেবো।আর তার পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষকে বোঝাবো আপনজন হারানোর কস্টটা কি!

ডায়েরির পাতায় নিজের অজান্তে আমার চোখ বেয়ে দু’ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল।এতোটা কস্ট প্রীয়ম পেয়েছে জেনে খারাপ লাগলো।যাকে আমি এতোটা অপছন্দ করি তার মনে এতো কস্ট? আমি কিছু পাতা উল্টালাম।দেখলাম বড় বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে অনু। শুধুই অনু। আমার অনু।এরকম আরও কত শব্দ অনুকে নিয়ে লিখেছে।তা গুণে শেষ করতে পারবো না।কিছু পাতা উল্টানোর পর দেখলাম কিছু একটা লেখা।মন দিয়ে পড়তে শুরু করলাম-

ভালোবাসা এতো কাঁদায়? আমার সাথেই কেন এমনটা হয়? দেশে এসে প্রথম যেদিন ট্রাফিক জ্যামের ভীর ঠেলে একজন পেশেন্টকে এম্বুলেন্সে তুলে দিতে দেখেছিলাম সেদিনই অনুর প্রেমে পরে গিয়েছিলাম।দূর থেকে শুধু ওর মুখটা দেখেছিলাম। দেখেছিলাম ওর মুখের হাসি।তারপর থেকে শুধুই অনু।চোখ বন্ধ করলেই ওর পুরো ছবিটা ভেসে উঠতো আমার সামনে।যে একজন অপরিচিত মানুষকে হেল্প করছিলো।আমি তো ওর এই ভালো দিকটাকে অনেক ভালোবেসেছিলাম।কিন্তু এমন কেন হলো? ওর নাম কি কোথায় থাকে কিছুই জানতাম না আমি।তবুও খুঁজতাম। অপেক্ষা করতাম।ভাবতাম অনু আসবে আমার কাছে।কিন্তু এলো যখন তখন এমন ভাবে যে আমি চাইলেও ওকে ভালবাসি বলতে পারবো না।

আমার অফিসে ইন্টারভিউ দিতে এসেছিলো অনু।আমিতো ওকে দেখে একদম বাকরূদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।কি করবো বুঝছিলাম না।ওর কাছে কোনো প্রশ্ন না করে শুধুই ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ওর কথাগুলো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুনছিলাম। ও যখন বললো কোনো প্রশ্ন করবেন না? তখন ওর পরিচয় চাইলাম। অনু আমাকে নিজের পরিচয় দিলো।নিজের পরিবারের অবস্থার কথা বললো।এই মুহূর্তে ওর জন্য জবটা কতটা জরুরি সেটা জানালো।যখন অনু নিজের বাবার পরিচয় দিলো তখন আমার আগ্রহটা বাড়লো।আমি অনেক আগ্রহ নিয়ে শুনলাম আর পরেরদিনই জয়েন করতে বললাম।

আমি বাড়িতে এসে সারা রাত বিরহে কাটিয়েছি।রাতে ঘুমাইনি আমি।সকাল হতেই ভেবে নিলাম অনুকে আমার ভালোবাসা যাবে না।অনুর বাবা আমার ফুপ্পিকে আত্নহত্যা করতে বাধ্য করেছে।আমার ফুপ্পি আজ নেই তার জন্য শুধুই অনুর বাবা দায়ী।আমি যেমন আমার পরিবারকে হারিয়ে কস্ট পাচ্ছি তেমন অনুকেও পেতে হবে।অনু শাস্তি পেলে আমার প্রতিশোধ পূর্ণ হবে।

অনুর সামনে আমি নিজেকে অনেক খারাপ ভাবে প্রদর্শন করলাম।অনুকে বিভিন্ন ভাবে বিরক্ত করতাম।অফিসে আমার পার্সোনাল এসিস্টেন্ট ছিলো অনু।আমি যা বলতাম ওকে মানতেই হবে বলে জোড় খাটাতাম।কিন্তু অনু খুব ভালো ভাবে বুদ্ধি খাটিয়ে সবকিছু সামলে নিতো।আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নাহিদের সাথে আলোচনা করলাম বিষয়টা।নাহিদ আমাকে বোঝালো শত্রুর মেয়ে শত্রুই হয়।আমি বুঝছিলাম না কি করবো।নাহিদকে আসতে বললাম। নাহিদ আসলো।একটা প্ল্যান করলাম দু’জন মিলে।সেই অনুযায়ী নাহিদ ছদ্মবেশে প্রীয়ম হয়ে সকলের সামনে আসলো।আর আমি নাহিদ হয়ে ওর ছোটভাইয়ের পরিচয়ে চলতে লাগলাম।

প্ল্যান মতো আমাকে অফিস থেকে নাহিদ চলে আসতে বললে আমি আসার পর অনুকে প্রেমে ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।অনু বিয়েতে রাজিও হয়।কিন্তু বিয়েটা করি আমি আসল প্রীয়ম।আমি চাইনি যতোই অনুকে কস্ট দিই না কেন।অনুর সতিত্বটাকে নষ্ট করতে।তাই আমি নিজে বিয়ে করেছি।এখন আমি অনুর সাথে ঠিক সেটাই করবো যেটা ওর বাবা আমার ফুপ্পির সাথে করেছিলো।অনু জানবে ওর সতিত্বটা নষ্ট হয়েছে অন্য একটা পুরুষের কাছে।ও কস্ট পাবে।নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা হবে।আর এভাবে বেঁচে থাকতে হবে সারাটা জীবন। তারপর আমি ওকে ব্ল্যাকমেইল করবো।যেভাবে ওর বাবা করতো আমার ফুপ্পিকে।

আমি দেশে এসে খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম আমার বোনের সাথে ঘটা ঘটনাটাও অনুর বাবার সাথে জড়িত।অনুর বাবা টাকার লোভ দেখিয়ে ছেলেটাকে দিয়ে এমন করিয়েছে।ছেলেটার মতো এমন অনেক ছেলে আছে যাদেরকে ছোটবেলা থেকে নিজের খারাপ বুদ্ধিতে বড় করেছে।কিভাবে মানুষকে ঠকাতে হয়, মানুষের ক্ষতি করতে হয় এসব শিখিয়েছে। একটা গ্যাঙ তৈরি করেছে।

আমি ছেলেটাকে পুলিশে দিয়েছি কিন্তু অনুর বাবা পালিয়েছে।ছেলেটা শিকার করেছে অনুর বাবা জানতো আমার বাবার অনেক টাকা তাই আমার বোনের সাথে এমনটা করতে বলেছে।ছেলেটা এখন যতো শাস্তি পাবে খুব কম হয়ে যাবে। কিন্তু অনুর বাবার শাস্তি এখনো বাকি।তার শরীরের রক্ত অনুর শরীরে বইছে। আমি কিভাবে অনুকে ভালোবাসবো? ওকে আমি শাস্তি দেবো এটা ভাবলেও খুব কস্ট হয়।কিন্তু আমার বোনের আর ফুপ্পির মুখটা যখন চোখের সামনে ভেসে ওঠে তখন খুব ঘৃণা হয় অনুকে দেখলে।

চলবে,