আড়ালে ভালোবাসা পর্ব-০৯ এবং শেষ পর্ব

0
6170

#আড়ালে_ভালোবাসা
#পার্ট_নয়
#Mst_Liza

প্রীয়ম কেঁপে উঠে পেছনে ফিরলে আমি বললাম আমাকে কস্ট দেওয়ার জন্য এতোটা নিচে নেমো না তুমি।আমার কথাটা একটু শোনো।বিয়ে যখন হয়েছে আমি ভেবে দেখবো তোমার সাথে সংসার করার কথা।এটা সত্যি তুমি জীবনে অনেক কস্ট পেয়েছো।সব আপনজনকে হারিয়েছো।কিন্তু আমাকেও তো ভালোবাসো তুমি।তুমি থাকতে পারবে আমাকে ছাড়া? আমাকে একটু সময় দাও প্রীয়ম।যেদিন আমার মনে হবে তোমাকে আমি ভালোবাসি সেদিন আমি নিজে তোমার কাছে আসবো।আমার সাথে যা অন্যায় করবার করেছো তুমি।আমার জীবনে কাউকে এনে আমার মনও ভেঙেছো একবার।এতেও যদি মনে হয় তোমার প্রতিশোধ বাকি আছে।তাহলে তুমি ভুল ভাবছো।যার জন্য আমাকে তুমি এতো শাস্তি দিচ্ছো তাকে আমি অনেক বছর ধরে দেখি না।এমনকি আমাকে না বলে পুলিশের ভয়ে সেদিন রাতে একটা মৃত লাশের রুমে রেখে পালিয়ে ছিলো আমার বাবা।

আমার কথা শেষ না হতেই প্রীয়ম আমাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেললো।আমাকে বললো আমার কোনো কথায় ও বিশ্বাস করে না।ফ্লোরের সাথে আমার দু’কাঁধে ভর দিয়ে চেপে ধরলো প্রীয়ম।আমার মুখটার দিকে লাল বর্ণের দুটি চোখ দিয়ে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। আমার মুখের কাছে কাঁপা কাঁপা মুখটা এগিয়ে এনে ছেড়ে দিলো আমায়।ঘুরে পাশ ফিরে বললো আমায় চাইলেও আমার সাথে খারাপ কিছু করতে পারে না।পারে না আমাকে কস্ট দিতে।দরজার দিকে ইশারা করে বললো বেড়িয়ে যাও এই রুম থেকে।

প্রীয়মের কন্ঠ শুনে কিছুটা এগিয়ে আসলো নাহিদ।দরজার কাছে কান পেতে আমাকে ডেকে উঠে বলল প্রীয়ম কি তোমার রুমে অনু? এমন সময় প্রীয়ম আর কোনো শব্দ করুক তার আগে আমি প্রীয়মের মুখটা চেপে ধরলাম।একটা ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলাম না প্রীয়ম এখানে কেন আসবে? কথাটা শুনে নাহিদ চলে গেলো।প্রীয়মের মুখটা আমি ছেড়ে দিলে প্রীয়ম বলল তোমার সাহস হয় কি করে আমার মুখ চেপে ধরার? নাহিদ আমাকে খুঁজছে যেতে দাও আমায়।

প্রীয়ম উঠে বসতে নিলে আমি প্রীয়মের হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিলাম। প্রীয়ম তবুও উঠার চেস্টা করছে।ওকে কিছুতেই আটকাতে পারছি না আমি।পাশেই খাটের পায়ার কাছে মদের বোতলটা দেখতে পেয়ে প্রীয়মের মুখে জোড় করে মদ ঢেলে দিলাম।প্রীয়ম ডগমগ শব্দ করে সবটুকু মদ খেয়ে নিলো।

ঝিমঝিমে চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল সবকিছু ঘোলাটে দেখতে লাগছে।মাথায় হাত দিয়ে কিছু একটা মনে করার চেস্টা করছে মনে হয় নাহিদের কথা ভুলে গেছে।

আমি প্রীয়মকে ধরে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিলাম। প্রীয়ম ঘুমিয়ে পরলে নিশ্চিত হলাম আমি।মাঝে বালিশ দিয়ে আমিও এক পাশটায় ঘুমিয়ে পরলাম।

সকালে দশটায় ঘুম ভাঙলো আমার।সব প্রেস মিডিয়া এসে হানা দিচ্ছে বাড়ির রাস্তার সাইডের মেইন গেইটের সামনে।চিৎকার চেচামেচির শব্দ পেয়ে তাকিয়ে দেখলাম পাশ ফিরে প্রীয়ম মাথাটা চেপে ধরে উঠতে চেস্টা করছে।আমি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লাম।প্রীয়ম এখন নিরাপদ।আস্তে আস্তে সবটা মনে পরছে প্রীয়মের।প্রীয়ম উঠে রেডি হয়ে বাইরে আসলে সকলে মিলে অবাক হলো।নাহিদ বাইরে থেকে ফিরছে বাড়িতে। মনে হয় সারা রাত প্রীয়মকে খুঁজেছে মেরে ফেলবার জন্য। এখন প্রীয়মকে বাড়িতে দেখে অবাক।সবচেয়ে বেশী অবাক হয়েছে প্রীয়ম নাহিদের সাথে আমার বাবাকে দেখে।

অবশেষে প্রীয়ম আমার বাবার সন্ধান পেলো।সকলের সামনে বাবাকে অনেক মারলো প্রীয়ম।সবকিছু লাইভে চলছিলো।মিডিয়া নিউজ তৈরি করছে সবটার।আমার মা টিভিতে দেখে সঙ্গে সঙ্গে চলে আসলো এখানে।পুলিশ আসলো।প্রীয়ম পুলিশকে সবটা বললো।আর বাবাও নিজের অপরাধ শিকার করলো।সেই সাথে নাহিদের কথাও বললো।কিভাবে নাহিদের সাথে হাত মিলিয়ে প্রীয়মকে হত্যা করতে চেয়েছে আর সারা রাত প্রীয়মকে মারার জন্য খুঁজে বেড়িয়েছে।সবটা শুনে প্রীয়ম রেগে নাহিদের গালে একটা চড় মারলো।পুলিশকে বলল নাহিদকেও নিয়ে যেতে।

নাহিদ অনেক বার ক্ষমা চাইলো।প্রীয়মের পায়ে অবদি ধরলো কিন্তু প্রীয়ম শুনলো না।পুলিশ টেনে হিচরে নিয়ে গেলো বাবা আর নাহিদকে।

প্রেস মিডিয়ার সামনে প্রীয়ম নিজের আসল পরিচয় দিলো।কেন নিজের পরিচয় গোপন করেছিলো সেটাও বললো।নিজের ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় আমার কথাও বললো।আমাকে কতটা ভালোবাসে।কীভাবে জীবনে প্রীয়মের ভালোবাসার সব মানুষ ওর থেকে অনেক দূরে চলে গেছে সব বললো।প্রীয়মের ভালোবাসার শুধু আমি আছি।কিন্তু আমার সাথে যেই অন্যায় করেছে তারজন্য প্রীয়ম আর আমার উপর জোড় খাটাবে না।আমি চাইলে আমার মায়ের সাথে চলে যেতে পারি।যদি আমি প্রীয়মের সাথে থাকি তাহলে প্রীয়ম আর কখনো আমাকে অভিযোগের সুযোগ দেবে না।অনেক ভালো রাখবে আমায়।আর যদি চলে যায় আমার জীবনের স্বাধীনতা আমার কাছে আছে।আমাকে মুক্তি দিয়ে দিয়েছে প্রীয়ম।

আমি কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে প্রীয়মকে থামিয়ে বললাম আমি কোথাও যাবো না।খুব কাছ থেকে তোমার কস্ট দেখেছি আমি।আর আমি বিশ্বাস করি তুমি আমাকে খুব ভালোবাসো।শুধু কস্ট আর প্রতিশোধের জন্য #আড়ালে_ভালোবাসা হয়ে থেকেছে তোমার মনের কথাগুলো।আজ যখন তুমি নিজের মুখে বলে দিলে তখন কিভাবে যায় তোমাকে ফেলে? আমি চলে গেলে আরও বেশি খারাপ থাকবো।আমার থেকে দূরে থেকে তুমি কস্ট পাচ্ছ ভেবে।তাই আমি যাবো না কোথাও।

আমার কথা শুনে প্রীয়ম ছলছল চোখের চাহনিতে হালকা হেসে উঠলো।হাত মেলে দিয়ে চোখের ইশারাই বোঝালো আমাকে কাছে আসতে।আমি ছুটে এসে প্রীয়মের বুকে মাথা রেখে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম প্রীয়মকে।তখনই প্রীয়ম আমার কপালে একটা চুমু এঁকে দিলে উপস্থিত সকলে হাত তালি দিলো।মা আমাদের জন্য দোয়া করলো। খুব খুশি হয়ে বাড়িতে গেলো।হ্যাঁ তারপর এখান থেকেই শুরু হলো প্রীয়ম আর অনুর নতুন জীবন।সবাই ভালো থাকবেন।সুস্থ থাকবেন।কোনো ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আর লেখিকা আপুর জন্য অনেক অনেক দোয়া করবেন।আল্লাহ হাফেজ।

।।।।সমাপ্ত।।।।