আড়ালে ভালোবাসা পর্ব-০৮

0
4587

#আড়ালে_ভালোবাসা
#পার্ট_আট
#Mst_Liza

দরজা খোলার শব্দে তাকিয়ে দেখলাম প্রীয়ম দাড়িয়ে আছে।প্রীয়মের চোখদুটো ঝিম ঝিম করছে।মাথাটা চেপে ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে আমার দিকে।আমার কাছে এসে দাড়িয়ে কিছু বলতে নিলে পর যেতে লাগলো প্রীয়ম।আমি প্রীয়মকে ধরে বসলাম। বিছানার উপরে বসিয়ে দিয়ে খেয়াল করলাম নাহিদ প্রীয়মের নাম ধরে ডেকে এদিকেই আসছে।আমি গিয়ে ভেতর থেকে দরজাটা বন্ধ করে দিলাম। নাহিদ আসলে প্রীয়ম নেই বললে চলে গেলো।প্রীয়মকে কিছুতেই এই রুম থেকে বের হতে দেওয়া যাবে না কাল সকালের আগে।প্রেস আসলে প্রীয়ম সকলের সামনে যাবে।একবার ওর আসল পরিচয় সকলে জানলে কেউ আর ওর ক্ষতি করতে পারবে না এতো সহজে।ততোক্ষণ আমাকে যে ভাবেই হোক প্রীয়মকে লুকিয়ে রাখতে হবে।

আমি প্রীয়মের কাছে এসে বসলে প্রীয়ম কথা বলছে মনে হচ্ছে মুখ থেকে যেন গন্ধ বের হচ্ছে।প্রীয়ম আমাকে টেনে ফেলে দিয়ে ঝাপিয়ে আমার বুকে এসে পরলো।আমাকে বলল তোমার বাবা আমার ফুপ্পির সাথে যেটা করেছে আমি তোমার সাথে সেটা করতে পারলাম না।কিন্তু তোমার অবস্থা আমি অনেক খারাপ করে ছাড়বো।আমি প্রীয়মকে বললাম তুমি ভুল করছো।আমি কোনো অপরাধ করিনি।প্রীয়ম আমাকে বলল আমি জানি তুমি এমন ভাবে অভিনয় করবা আমার সাথে। আমি তোমাকে ভালোবাসি জেনে গিয়েছো তাই না? আমি তোমার প্রতি দূর্বল এইজন্য সহজে আমাকে বোকা বানাবা?

নাহ তুমি ভুল ভাবছো প্রীয়ম।কথাটা বলাতে প্রীয়ম হেসে উঠে বললো এইজন্য আমি নেশা করে এসেছি অনু।যেন তোমার কথার জালে আমি দূর্বল না হয়ে পড়ি।তুমি জানো কি করেছিলো তোমার বাবা আমার ফুপ্পির সাথে? আমি মাথা ঝাকিয়ে না অর্থ বোঝালে প্রীয়ম বলতে শুরু করল-

আমার ফুপ্পির একজন কোটিপতি ছেলের সাথে বিয়ে হবার কথা ছিলো।বিয়ের দিন রাতে আমার ফুপ্পি পালিয়ে যায়।ফুপ্পি একজনকে অনেক ভালোবাসতো।কিন্তু ভয়ে বলার সাহশ পাইনি।
তাকে ভালোবেসে বাড়ি থেকে পালিয়ে টাকা, গহনা সব নিজের সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলো।পালিয়ে গিয়ে নিজের ভালোবাসার মানুষটার সাথে একটা হোটেলে উঠেছিলো আমার ফুপ্পি।পরেরদিন সকালে বিয়ে হবার কথা ছিলো দুজনের।বিয়ের সাজ সাজতে ওয়াশরুমে গিয়ে চেঞ্জ করছিলো।কিন্তু ওই ওয়াশরুমে আরও একটা চোখ বসানো ছিলো যেটা আমার ফুপ্পি জানতো না।রেডি হয়ে বের হবার সময় দরজায় নক করে কেউ একটা চিরকুট আর একটা ফোন রেখে যায়।ফোনটা ছিলো আমার ফুপ্পি যাকে ভালোবাসতো তার।চিরকুটটা উঠিয়ে দেখতে পেলো ফুপ্পি সব গহনা,টাকা বিয়ের শাড়ি খুলে রেখে একটা সিম্পল শাড়ি পড়ে এখান থেকে চলে যাও।নইতো ফোনটা হাতে উঠাও ভিডিও অপশনে যাও।আর দেখও।তোমার শরীরের সব সৌন্দর্য ভাইরাল করে দেবো।সকলে দেখবে তোমাকে।তুমি ফেমাস হয়ে যাবে রাতারাতি।ফুপ্পি ফোনটা তুলে ভিডিওটা দেখে সকট খেলো।যাকে ভালোবেসে এতোকিছু ছেড়ে এসেছে সে সামান্য কিছু টাকা আর গহনার জন্য ফুপ্পির সাথে এমন করতে পারে তা কখনো কল্পনাতেও ভাবতে পারে নি ফুপ্পি। ফুপ্পি অনেক কেঁদেছিলো।কিন্তু ফিরে আসার সাহশ হয় নি।হোটেল থেকে বেড়িয়ে রাস্তা দিয়ে হাটছিলো ঠিক তখনই ফুপ্পির ভালোবাসার মানুষটি দৌড়ে এসে হাতটা ধরে বললো চলো তোমাকে বাড়িতে দিয়ে আসি।ফুপ্পি প্রথমে অবাক হলেও পরে তার হাতে একটা নিউজ পেপার দেখতে পেলো।যেখানে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিলো ফুপ্পির সন্ধান দিতে পারলে পাঁচ কোটি টাকা পুরষ্কার দেওয়া হবে।ফুপ্পি যায়নি ফিরে যেতে তবুও ব্ল্যাকমেইল করে ফুপ্পিকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসলো।যখন আমাদের বাড়িটা দেখলো উনার লোভ যেন তিনগুণ বেড়ে গেলো।এতো বড় বাড়িটা যদি নিজের করে নিতে পারে তাহলে সারাজীবন বসে বসে খেতে পারবে।নিজের মত পরিবর্তন করে ফুপ্পিকে বলল বিয়ে করবে।ফুপ্পি বিয়ে করলো শুধু মাত্র সম্মানের কথা থেকে।আমার বাবা খুব খুশি মনেই বিয়েটা দিয়েছিলো দুজনের।ভেবেছিলো ফুপ্পির ভালোবাসার মানুষ সে আমার ফুপ্পিকে খুব ভালো রাখবে।কিন্তু দুইদিন পর পর উনি বাবার কাছে অনেক টাকা দাবি করতো বিজনেস করবে বলে।ফুপ্পির সুখের কথা ভেবে বাবা সব করতো।একদিন ফুপ্পির শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে জানতে পারলাম সেই ঘরে আগেও একটা বিয়ে ছিলো।তার একটা মেয়েও ছিলো ছোট্ট। যেই মেয়েটাকে সে খুব ভালোবাসে।আমার ফুপ্পিরও কোনো আপত্তি ছিলো না তার পূর্বের বিয়েতে।তাই বাবাও আর তেমন একটা ভাবে নি।একদিন হঠাৎ বাবা খবর পেলো ফুপ্পি আত্মহত্যা করেছে।বাবা গিয়েছিলো সেখানে। কিন্তু ফুপ্পির লাশটা ছাড়া আর কাউকেই সেখানে পাই নি।যে আমার ফুপ্পিকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছিলো সে এখনও স্বাধীন ভাবে ঘুরছে।নিজের মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে আমার ফুপ্পিকে ওই অবস্থায় ফেলে রেখে গেছে।

ফুপ্পির আত্মহত্যা করা রুমের বালিশের উপরে একটা চিরকুট পরে ছিলো।সেটা পড়ে বাবা সবটা জানতে পারে।

প্রীয়মের কথা শুনে বুঝতে পারলাম আমার বাবার কথায় বলছে।কিন্তু এটাও সত্যি প্রীয়মের মনে অনেক কস্ট জমে আছে।তাই কিছুটা কমানো উচিৎ। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কিছু বলে বোঝাতে পারবো না ওকে।তাই কিভাবে বোঝাবো সেটা ভাবছি।এরই মধ্যে প্রীয়ম আমার দুই কাঁধে ভর দিয়ে ফ্লোরে শক্ত করে চেপে ধরলো।প্রীয়ম একদম আমার উপরে ওকে আমি সরাতেও পারছি না।আমি কিছু না বলে চোখদুটো বন্ধ করে রাখলাম।প্রীয়ম আমাকে ডাকলো।বলল ঘুমানো যাবে না।আমাকে কস্ট পেতে হবে।আমি কোনো সাড়া শব্দ করলাম না।প্রীয়ম কিছুক্ষণ ডেকে সাড়া না পেয়ে আমার বুকের উপর থেকে উঠে এসে উল্টো ঘুরে বসলো।খাটের পায়ায় একটা লাথি মারতেই আমি উঠে বসে ওর কাঁধে হাত রাখলাম।

প্রীয়ম কেঁপে উঠে পেছনে ফিরলে আমি বললাম আমাকে কস্ট দেওয়ার জন্য এতোটা নিচে নেমো না তুমি।আমার কথাটা একটু শোনো।বিয়ে যখন হয়েছে আমি ভেবে দেখবো তোমার সাথে সংসার করার কথা।এটা সত্যি তুমি জীবনে অনেক কস্ট পেয়েছো।সব আপনজনকে হারিয়েছো।কিন্তু আমাকেও তো ভালোবাসো তুমি।তুমি থাকতে পারবে আমাকে ছাড়া? আমাকে একটু সময় দাও প্রীয়ম।যেদিন আমার মনে হবে তোমাকে আমি ভালোবাসি সেদিন আমি নিজে তোমার কাছে আসবো।আমার সাথে যা অন্যায় করবার করেছো তুমি।আমার জীবনে কাউকে এনে আমার মনও ভেঙেছো একবার।এতেও যদি মনে হয় তোমার প্রতিশোধ বাকি আছে।তাহলে তুমি ভুল ভাবছো।যার জন্য আমাকে তুমি এতো শাস্তি দিচ্ছো তাকে আমি অনেক বছর ধরে দেখি না।এমনকি আমাকে না বলে পুলিশের ভয়ে সেদিন রাতে একটা মৃত লাশের রুমে রেখে পালিয়ে ছিলো আমার বাবা।

চলবে,,,