আ না ম পর্ব-০২

0
77

“আ না ম”- ২
-Azyah সূচনা

রাত্রির নির্জনতায় ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকটাও ভয়ঙ্কর শোনাচ্ছে।ঘড়ির কাঁটা জানান দিলো এখন রাতের তিনটে আটচল্লিশ মিনিট।দুই জোড়া কদম খরখরে শুকনো পাতা বেয়ে এগিয়ে চলছে গহীন অরণ্যে।এক হাত মাথায় চেপে আছে সাইফা অন্যহাতে টর্চ লাইট। ফোঁসফোঁস ধ্বনিতে নিঃশ্বাস ফেলছে বারবার।পাগলের কারবার ছাড়া এসব কিছুই না।এই ঘোর অন্ধকারে জঙ্গলের ভেতরে ঘুরাফেরা!এইসব কাজের চিন্তা শাবাব ছাড়া আর কারো মস্তিষ্কে আসতে পারেনা। উদ্ভট কাজের মাস্টারমাইন্ড সে।খুঁজতে এসেছে কার এত বড় কলিজার পাটা?যে তাদের জিপের দিকে গুলি ছুঁড়েছে।

-“এলার্ট থাকো সাইফা” আকষ্মিক বলে উঠলো শাবাব।

ত্যক্ত বিরক্ত সাইফা বললো,

-“ আছি”

শাবাব ফিরে চায়।একহাত কপালে আরেকহাতে টর্চ লাইট দেখে বিরক্ত সুরে বলল,

-“এলার্ট আছো?”

-“জ্বি স্যার!”

-“গান কোথায় তোমার?”

সাইফা হাত নামায় কপাল থেকে। স্ট্যারিংএ আঘাত পেয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো।এত সময় যাবৎ জঙ্গলে ঘুরে রক্তও শুকিয়ে জমাট বেঁধেছে।গান এর কথা শুনতেই কোমরের পেছনে গুজে রাখা পিস্তল নিতে হাত বাড়ায়।তৎক্ষনাৎ ভরকে উঠলো!পিস্তল সাথে নেই।হন্তদন্ত হয়ে এদিক ওদিক খুঁজছে। কোথাও পড়ে গেলো নাতো?নিজে হারিয়ে যাওয়ার অনুমতি আছে এই কর্মক্ষেত্রে পিস্তল হারালে বিশাল জরিমানার মুখে পড়তে হবে।

ভরকিত সাইফা করুন চোখে শাবাবের দিকে চেয়ে বলল,

-“স্যার আমার গান?”

-“কোথায় তোমার গান?”

-“পাচ্ছি না স্যার!”

তাচ্ছিল্য করে শাবাব বলে উঠলো,

-“ভেরি গুড অফিসার সাইফা। ভেরি গুড!”

শুধু তালি বাজানোর বাকি ছিলো শাবাবের।শুধু হাতে গান আর টর্চ লাইট থাকার কারণে সেই চিন্তা ধামাচাপা পড়ে গেছে।অপরাধীকে খুঁজতে এসে নিজেই অপরাধীর ন্যায় চক্ষু নত করে দাড়িয়ে আছে।এক বিভীষিকাময় নীরবতা!বারবার ঢোক গিলতে থাকা সাইফা নিজের মস্তিষ্ককে যথাসাধ্য চাপ প্রয়োগ করলো।শেষ কোথায় রেখেছিলো গানটা?

চিন্তামগ্ন সাইফার কপালে আকস্মিক পিস্তল চেপে ধরে শাবাব।ঘাবড়ে দুয়েক কদম পিছিয়ে যায় তৎক্ষনাৎ। হৃদস্পন্দন দ্রুতগামী হলো। বিস্ফোরিত চোখে শাবাবের দিকে চাইলে দেখা মেলে তার চরম বিরক্ত গোমড়া মুখ।

লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে শাবাব আবারো তার তেতো মুখে অপমান ঝাড়তে শুরু করে।বলে,

-“এই হচ্ছে আজকালের সি. আই. ডি অফিসারদের অবস্থা! যাদের কাজ হচ্ছে মৃত্যুকে চট করে ছুঁয়ে দিয়ে ফিরে আসা!সেই কিনা সামান্য বন্দুক তাক করায় বাচ্চাদের মতন ভরকে উঠেছে। শেম অন ইউ!”

নিজের রাগকে আর সংবরণ করতে পারলো না সাইফা।কপালের ব্যথার সাথে অপমানের চাপড় এসে পড়ছে একের পর এক।চোখ নামিয়ে মাত্রাতিরিক্ত কপাল কুঁচকে বললো,

-“আমি নতুন।আমার অনেককিছু এখনও শিখতে হবে জানতে হবে। নিজেকে প্রিপেয়ার করতে হবে।শুরুর দিকে সকলে ভুল করে।আমিও সময়ের সাথে আমার ভুল শুধরে নিবো স্যার।তবে আপনি আমাকে কথায় কথায় ডিমোটিভেট করছেন।তাতে আমি কনফিডেন্স হারাচ্ছি।আমার কথায় কিছু মনে করবেন না।”

বাঁকা হাসে শাবাব।বলে উঠে,

-“ইমপ্রেসিভ!”

সাইফার চোখ তুলে তাকায়।বলে,

-“জ্বি?”

-“এরকম অ্যাটিটিউড তোমার কাছে চাচ্ছিলাম।অবশেষে তোমার মগজ এর জট খুললো!”

শাবাব হাত পেছনে ঘুরিয়ে আরো একটি পিস্তল বের করে দিলো।সাইফা এক পলক তার দিকে চেয়ে পিস্তল হাতে নেয়।কোড লেখা এস-২৩।এটা সাইফার।গান আরেকদফা চমকে তাকায় শাবাবের দিকে।তার কাছে ছিলো যেহেতু এতক্ষন সময় নষ্ট করার অর্থ কি?

-“আপনার কাছে ছিলো?”

-“তোমার চোখ ফাঁকি দিয়ে আমি তোমার গান গায়েব করেছি।এই ধরো ত্রিশ মিনিট হবে!তুমি এখন অব্দি আচ পাওনি।গান ফেরত না দিলে হয়তো জানতেও না”

ভীষন রকমের চতুর লোক সে। স্বজ্ঞানী, দক্ষ, বিচারশীল এবং সমস্যা সম্মোহনে পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ ধরতে পারে নির্দ্বিধায়।গত একটা কেস সামলানো হয়েছে তার সাথে।সমস্যা সমাধানে সুস্থির এবং সঠিক পদক্ষেপ নেয় শাবাব।প্রবল মনোবল এবং পরিকল্পনাশীলতা দৃশ্যমান তার মাঝে।আগেই বোঝা উচিত ছিলো সাইফার।মেপে কথা বলা আর সাবধানতা অবলম্বনই সাইফাকে রক্ষা করতে পারবে এস. আই শাবাবের ধারালো অস্ত্র এর মতন মুখ থেকে।

প্রভাতের অস্পষ্ট আলো ফুটতে শুরু করেছে।কালো চক্ষের মণি এখনও এদিক ওদিক খুজে ফিরছে।এমন কাউকে?যে নিজে থেকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে তাদের।গাড়িতে গুলি ছুঁড়ে।তবে এত খোঁজাখুঁজির পরও লাভ হলো না।ঠাট্টা করলো আমিন্ত্রণকারী।ডেকে নিয়ে উধাও হয়েছে।চঞ্চল কৌতূহলে বিস্রস্ত করে হারিয়ে গেছে কোথাত্ত গভীর মৃগয়া উচু নিচু ভূমিতে।

হয়রান সাইফার ফোনে একটি মেসেজ আসে। তৎক্ষনাৎ ডাকে শাবাবকে।বলে,

-“স্যার এস. আই রবিন রোজারিও এসে গেছেন। ব্যুরোতে অপেক্ষা করছেন।”

-“চলো!”

তপ্ত নিঃশ্বাস সঁচারিত করে শাবাব পিছু ফিরে হাটা শুরু করে রাস্তার দিকে।অনেকটা দূরে রাস্তা।গাড়িটাও নষ্ট হয়েছে গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে।কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছিলো সেই মধ্যরাতে।এখন কি অবস্থা কে জানে? জঙ্গল থেকে বের হতে হতে ফোন করলো শাবাব কাউকে।নতুন জিপ পাঠানোর জন্য আদেশ করে ফোন পকেটে গুজে।

ভোরের আলোর সাথে ঘুমন্ত পাখিদের জাগাতে কারো গলার সুর বাজলো নিস্তব্ধ অরণ্য জুড়ে,

“মন্ত্রমুগ্ধ জন্তুদের মধ্যে লুকিয়ে আছে
সত্যের গুপ্তস্থান, রহস্যের বিশাল রাজ্যে।
প্রহেরে মন্ত্রনাদে স্বর্গের সুখ অনুভব,
এই অনুভূতি ভেঙ্গে নেবে কোন অনুমান?”

__

অপেক্ষা করা নিয়ে অবহেলা করেই কথা বলেছিলো শাবাব।অথচ নিজে এসেছে কাক ডাকা ভোরে। ব্যুরোতে নির্ঘুম রাত্রি কাটিয়েছে রবিন।তার সঙ্গী হিসেবে ছিলো ফরেন্সিক এক্সপার্ট আবির আর একটা ডেড বডি।সামান্য বিরক্ত হলেও প্রকাশ করলো না। কাচের দরজা টেনে শাবাব এবং সাইফাকে ভেতরে আসতে দেখেই নিশ্চিন্ত হয়।নিঃশ্বাস ফেলে।অপেক্ষার শেষ হলো।

শাবাব ভেতরে প্রবেশ করেই রবিনকে দেখতে পায়।হাত এগিয়ে দিলো হ্যান্ডশেক করার উদ্দেশ্যে।
বললো,

-“হ্যালো”

রবিন উত্তর দেয়,

-“হ্যালো এস. আই শাবাব।”

শাবাব কিছু বলতেই যাচ্ছিলো তার আগে আবির চেঁচায়।এগিয়ে আসে হন্তদন্ত পায়ে।পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাইফার কপালে ক্ষত দেখে বলেছে,

-“ওহ গড! সাইফা ব্যথা পেলে কি করে?”

-“গাড়ি আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে গিয়েছিল।”

-“ওহহো!এসো ড্রেসিং করে দেই।”

সাইফা শাবাবের দিকে চাইলো।যেমন অনুমতি চাইছে বিনাশব্দে! শাবাব তার চাহনির দিকে বিশেষ ধ্যান দিলো না।উল্টো ঘুরে রবিনের দিকে মনোযোগী হয়।

আবির পূনরায় বললো,

-“কি হলো?এসো?”

-“জ্বি আসছি”

গোল টেবিল বৈঠক চলছে। ভোর সাতটায়।সময় কোনো প্রকার মিটিং এর না হলেও শাবাবের কাছে এটাই উপযুক্ত সময়।জুনিয়র অফিসারসহ বাকি সবাইকে নিয়ে বসেছে।ঘুম তাড়ানোর ব্যবস্থাও করেছে ঠিকঠাক।কফি ম্যাশিনের কাছে দাঁড়ানো জামিল।এখানেই কুকিং এর কাজে নিয়োজিত সে। বেচারার ঘুম ভাঙ্গায় এই সাঁঝ সকালে!এই মিটিংয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের এর কাজ কি সেটা মির্জা নিজেও জানে না।তারপরও বাধ্য হয়ে আসতে হলো এখানটায়।

নিজেকে সেন্টার অফ অ্যাট্রাকশন বানিয়ে শাবাব বললো,

-“এখানে উপস্থিত সকলেই এই ৫০৭ নাম্বার কেসটা সম্পর্কে জানে।যদিও আমরা এই কেসের দায়িত্বে ছিলাম না তারপরও স্টাডি করেছি।”

এর মাঝে মির্জা বলে উঠে,

-“আমার মনে হয় এটা কোনো….”

-“লেট মি ফিনিশ মির্জা!..লেট মি ফিনিশ?”

শাবাবের এরূপ পরিবৃত আওয়াজে নিজেকে চুপ করায় মির্জা।কথার মধ্যে কথা বলা যে শাবাবের পছন্দ হয়নি সেটা দুই বাক্যের পুনরাবৃত্তিতেই বুঝে গেছে।

শাবাব কয়েক সেকেন্ডের নীরবতা পালন করে ফের বলতে লাগলো,

-“তো যেটা বলছিলাম।কেস স্টাডি করা হয়েছে।বেসিক কিছু পয়েন্ট এর মধ্যে একটি পয়েন্ট হচ্ছে এই মার্ডারগুলো একই মানুষের দ্বারা হচ্ছে।একইভাবে মারা যাচ্ছে সকলে।সবার কপালেই একই লেখা।কোনো ধস্তাধস্তির চিহ্ন নেই।কোনো ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেই।কিন্তু একটা বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয় মার্ডারগুলোর এক্সাক্ট কোনো টাইমিং নেই।সময়ের ব্যবধান কোনোটাই দশ দিন, কোনোটায় একমাস আবার কোনোটায় তিন মাস।আমার জ্ঞান যতটুক বলে যদি মার্ডারার কোনো একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে এই খুনগুলো করছে।কখনো শহরে কখনো শহরের বাহিরে। বেশিরভাগই শহরে।”

শাবাবকে চুপ থাকতে দেখে রবিন বললো,

-“যে পয়জন এর মাধ্যমে খুন করা হচ্ছে সেগুলো ভিকটিমকে কিভাবে দেওয়া হয়?ঢাকায় যিনি ফরেন্সিক এক্সপার্ট আছেন তিনি বললেন এই পয়জন ভীষণ রকমের বাজে টেস্ট করে।পানি অথবা কোনো তরল জিনিসের সাথে মিলিয়ে পান করালেও টেস্ট এমন বাজেই রয়ে যায়।কেউ কেনো স্বেচ্ছায় খাবে এসব?সেই ভিত্তিতে আমার মনে হয় ভিক্টিম আর কিলার দুজনই কোনো না কোনোভাবে পূর্ব পরিচিত”

শাবাব উত্তর দেয়,

-“হতেও পারে।আবার নাও হতে পারে।”

সাইফাও নিজের মতামত প্রকাশ করলো।বলে উঠলো,

-“সিরিয়াল কিলাররা সাধারণত বিকৃত মস্তিষ্কের হয়।হতে পারে কোনো সাইকোপ্যাথ।নিজের ইচ্ছে মোতাবেক মানুষ খুন করাই তার নেশা।”

শাবাব মির্জার দিকে চাইলো।বললো,

-“তোমার কি মতামত মির্জা?”

অবশেষে সবার কথা শুনে নিজেও সুযোগ পেলো মির্জা। শাবাব নিজেই তার মুখ থেকে কথা ছিনিয়ে আবার নিজেই সুযোগ দিচ্ছে। সুযোগের সদ্ব্যবহার করে মির্জা নিজের অভিজ্ঞতা অনুসরণ করে বলে শুরু করে,

“সাইকোপ্যাথ আর সোশিওপ্যাথ মেনশন করতে চাচ্ছি আমি এখানে।দুটো আলোচিত বিষয় মনোবিজ্ঞানে।তবে এই দুই ধরনের মানসিক রোগীদের মধ্যে ভিন্নতা আছে।আবার অনেক ক্ষেত্রে সেম। যেহেতু সাইফা সাইকোপ্যাথ এর কথা বলেছে আমি বলবো হতেও পারে সে সাইকোপ্যাথ আবার হতে পারে সেই কিলার সোশিওপ্যাথ”

মির্জার কথার প্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসু রবিন রোজারিও জানতে চায়,

-“পার্থক্য কি দুটোর মাঝে?”

-“সাইকোপ্যাথ সাধারণত ডেঞ্জারাস টাইপের হয়। আর সোশিওপ্যাথ অতটা নয়।সাইকোপ্যাথ একটা মানুষ হতে পারে বংশগত অথবা সমাজবিরোধী কাজের প্রতি আকর্ষিত।সেখানে সোশিওপ্যাথ সামাজিক কোনো কারণে।এই ধরেন কোনো মানসিক আঘাত,কোনো পুরোনো ঘটনা যা তাকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছে।অথবা সমাজ ও সমাজের মানুষের কাছ থেকে আঘাতপ্রাপ্ত।তারা সাইকোপ্যাথ থেকে কম ডেঞ্জারাস হয়।সহজ ভাষায় বললাম। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।”

সাইফা বলে উঠে,

-“তাহলে কোনো সাইকোপ্যাথই হবে স্যার।একটার পর এক মার্ডার করা কোনো ডেঞ্জারাস ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব।”

শাবাব সবার কথার মধ্যিখানে গম্ভির সুরে বলে উঠলো,

-“আর সি. আই. ডিকে উসকানির সাহসও রাখে সে।”

মির্জা জানতে চায়,

-“মানে?”

শাবাব উত্তর দিলো,

-“আমাদের গাড়িতে গুলি ছুঁড়েছিলো।ফেরার পথে।”

রবিন চমকায়!বেজায় অনুসন্ধিত্সু হয়ে জানতে চায়,

-“বডি আনার পড়ে?”

-“হুম”

একি সুরে রবিন বললো,

-“তাহলে সে ওখানেই ছিলো”

-“মনেতো সেটাই হচ্ছে।”

সাইফা বললো,

“আমরা এতক্ষন সেখানেই ছিলাম।”

রবিন জানতে চাইলো,

-“কোনো ক্লু পেয়েছেন কি?”

-“ক্লু? ক্লু এর ‘ক’ ও ছিলো না সেখানে।ঘণ্টার পর ঘণ্টা সার্চ করেছি।”

মির্জা নিজের বিচক্ষণ মস্তিষ্ক খাটায়।ভাবনায় ডুবে অল্প সময়ের জন্য।খানিক সময় বাদে বলে,

-“কিলার আপনাদেরকে উস্কানি দিয়েছে। চেইস করেছে।ধরে নিন সে একজন সাইকোপ্যাথ।তাহলে বলবো সে খুবই ঠাণ্ডা মাথার খেলোয়াড়।যেমন বাকি সাইকোপ্যাথরা হয়।মানুষের আবেগ অনুভূতি নিয়ে খেলতে জানে বেশ।এইযে আজকের ঘটনা।হয়তো সে জানতো ওই লোকটা এখানেই মারা যাবে।সে উপস্থিত ছিল ওই জঙ্গলে।সবটাই দেখেছে হয়তো।পড়ে হয়তো ভাবলো নাহ!শুধু খুন করে সস্তি মিলছে না।যারা খুনের তদন্ত করছে তাদের চেইস করা যাক।গাড়িতে গুলি ছুঁড়েছে ইচ্ছাকৃত।যেনো তোমরা তাকে খুঁজো।আর নিজেকে লুকিয়েছে সেইভাবেই যেনো তোমরা খুঁজে না পাও।”

শাবাব কথার তালে বললো,

-“এতে তার মধ্যে বিজয়ী মনোভাব তৈরি হয়েছে।তাইতো?”

মির্জা উত্তর দেয়,

-“রাইট!সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হচ্ছে সে ভুল করেও কোনো ভুল করছে না।কোনো এভিডেন্স রাখছে না নিজের বিরুদ্ধে।”

এক জুনিয়র অফিসার ফাহাদ বলে উঠে,

-“এভাবে কি কিলারকে সাইকোপ্যাথ ধরে নেওয়া ঠিক হবে?হতেও পারে সে একজন সাধারণ ব্যক্তিত্ব।”

ফাহাদের মতামতের গুরুত্ব দিয়ে শাবাব উত্তর দেয়,

-“প্রাথমিকভাবে তাকে আমরা একজন বিকৃত মস্তিষ্ক ভেবেই নাহয় চললাম?কারণ এতগুলো মার্ডার করার জন্যও অনেক সাহসের প্রয়োজন।”

সবার চিন্তার মধ্যমনি একজনই।সে হচ্ছে ‘খুনি’।রবিন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে না।ঘুরে ফিরে একই আলোচনা।তারাও নিজেদের ব্যুরোতে বসে এই আলোচনাটাই করেছিলো।কিন্তু মির্জা থাকায় এখানে কিছু ভিন্নতা আছে।চট্টগ্রাম ব্যুরো এর টিম বিশাল।প্রত্যেক সেক্টরে এক্সপার্ট।নিজেকে মনে মনে শান্তনা দিলো রবিন।এবার হয়তো কিছুদূর বেশি এগোনো যাবে।ঠোঁট কামড়ে নেয়।চোখে ভাসছে শুরু থেকে সবকিছু।প্রথম খুন,দ্বিতীয় খুন ধীরে ধীরে একটার পর একটা খুন।

-“দুপুর বারোটায় আমরা ব্যুরোতে আসবো।আবির বডির পোস্ট মর্টেম করে ফেলেছো নিশ্চয়ই?আমি বারোটার আগে রিপোর্ট চাই। সাইফা?গতকাল যেখানে এই বডি পাওয়া গেছে সেই এরিয়ার সকল সিসিটিভি ফুটেজ আমি চাই।ফাহাদ এরিয়ার আশপাশে মানুষ সেট করো।আর এস. আই রবিন?আপনি আমার সাথে থাকবেন।এখন হোটেলে গিয়ে রেস্ট করতে পারেন।”

একাই এসেছে রবিন।হোটেলে চেক ইন করার সময় পেরিয়ে গেছে বহু আগে।তারপরও ক্লান্ত শরীর আর ঘুমে জর্জরিত চোখ নিয়ে ক্যাব থেকে নামলো।লাগেজ নিয়ে রিসিপশনের দিকে হেঁটে যেতেই চোখ কপালে।ভুত দেখার মতন চমকে উঠেছে।ঘুমের চোখে ভুল দেখছে নাতো?দ্রুত পায়ে হাঁটা দিলো।লাগেজ পেছনেই ফেলে এসেছে।

এসেই সামনে দাড়ানো মানুষটির দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো,

-“তুমি?.. হোয়াট আর ইউ ডুইং হেয়ার!”

চলবে…