আ না ম পর্ব-০৩

0
83

“আ না ম”- ৩
-Azyah সূচনা

-“তুমি?.. হোয়াট আর ইউ ডুইং হেয়ার?”

চক্ষু সম্মুখে রামশাকে দেখে রবিন প্রতিক্রিয়াহীন হয়ে পড়লো।প্রশ্ন একটাই ঘুরপাক খাচ্ছে!সে এখানে কি করে এলো?প্রেমিকার দাঁত বের করে হাসিটা রবিনের এই মুহূর্তে সবচেয়ে বিশ্রী লাগছে।বোকার মতন উত্তর না দিয়ে হাসার অর্থ কি?হাত টেনে অন্যপাশে নিয়ে যায় রবিন।

বলে,

-“কথা বলছো না কেনো?এখানে কি করছো?”

রামশা মুখের হাসি বজায় রেখে বললো,

-“কথা রাখলাম এস. আই রবিন রোজারিও। আপনিতো সেটাও পারেননি”

রবিনের মুখ থেকে আপনাআপনি বেরিয়ে এলো,

-“মানে?”

হাত ছাড়িয়ে নিলো রামশা।মুখের হাসিটাও ইতোমধ্যে বিলীন।বুকে হাত বেঁধে বললো,

-“কি কথা ছিল রবিন?গতকাল রুফ গার্ডেনে দেখা করার কথা ছিল কিনা?”

-“হ্যাঁ ছিলো।কিন্তু তোমাকে আমি টেক্সট করে জানিয়েছি আমার আর্জেন্ট কাজে চট্টগ্রাম আসতে হবে।”

-“আমিও এসে গেছি তোমার পিছু পিছু।”

রামশার খাপছাড়া কথায় মেজাজ বিগড়ে গেলো রবিনের।মাথায় বুদ্ধি শুদ্ধি বলে কিছু আছে এই মেয়ের?নাকি ভবঘুরের মতন ঘুরপাক খেয়ে মস্তিষ্ক হারিয়েছে কোথাও?

-“হেয়ালি করবে না রামশা।বলো কেনো এসেছো?কখন এসেছো?”

ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে রামশা বলতে লাগলো,

-“একটু আগে এসেছি।তুমি আমাকে টেক্সট করার পর ভাবলাম তোমার সাথে যেহেতু এভাবে সময় কাটানো হবে না।তাহলে নাহয় তোমায় সারপ্রাইজ দেই।আলাদা দুজন সময়ও কাটাই?”

-“আমি এখানে কাজ করতে এসেছি।ঘুরতে নয়।তোমার সাথে সময় পরেও কাটানো যেতো”

আকস্মিক মুখের ভঙ্গি পরিবর্তন হলো রামশার।যেনো বিষাদের এক কালো মেঘ মাথার উপর ঠায় নিয়েছে। আধার ঘনাচ্ছে রামশার শুভ্র মুখে।

-“সময় কখন শেষ হয়ে যায়?কখন বদলে যায়?কে বলতে পারে রবিন?”

চট করে রাগটা কমে যায় রবিনের।এরূপ কথায় ক্ষুদ্র ভয় দানা বাঁধলো। রামশার ভাজ করা হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,

-“এভাবে বলছো কেনো?সময় কেনো শেষ হবে?কেনো বদলাবে?”

ফিক করে হেঁসে উঠে রামশা।বলে,

-“ভয় পেয়েছো?”

-“এভাবে কথা বললে ভয় পাওয়ারই কথা।”

-“আমি কথার কথা বললাম।টেনশন নিও না।আমিও তোমার সাথে ডিটেকটিভগীরি শুরু করবো কেমন?”

সাইফা বসেছে কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে।মাঝেমধ্যে নিজেকে মনে হয় যান্ত্রিক।ভাবতে বসে কেনো এই সেক্টর বেছে নিলো?সেতো প্রকৃতিপ্রেমী। দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে আবার মনোযোগী হয়।আশপাশের সিসিটিভি কন্ট্রোলরুমে কল করে ফুটেজ চেয়েছে।তারা জানালো আধ ঘণ্টার মাঝেই চলে আসবে তার কাছে।সময় কাটাতে ইচ্ছে হয় মাঝেমধ্যে!একা!একান্তে।তবে হয়ে উঠে না শাবাব নামক লোকের কারণে।যেদিন থেকে জয়েন দিয়েছে একের পর এক কাজ। ব্যক্তিগত সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টে জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠে শাবাব এর প্রোফাইল।জ্বলন্ত সিগারেট হাতে দাড়িয়ে আছে সমুদ্র তীরে।কেমন যেনো ছন্নছাড়া একটা ভাব।নামের পাশে নেই কোনো পদবী।শুধু ‘শাবাব’। সাইবার এক্সপার্ট এর তদন্তকারী মস্তিষ্ক জেগে উঠে।শুরু করলো তদন্ত শাবাব নামের এই লোকের প্রোফাইল।দুয়েকটা ছবি আছে। সেগুলোও মুখ বোঝা যায়না তেমন।আরো স্ক্রল করতে করতে দেখলো পুরোনো এক হাস্যোজ্জ্বল ছবি।

ঘোড়ার সম গতিতে মস্তিষ্ক বলে বসলো,

-“সে হাসতেও জানে? বাহ্!”

কোনো কারণবশত চোখ আটকে যায় এই ছবিতে। জুম করে দেখতে লাগলো সাইফা।পরপর মন বললো,

-“দেখতে সুদর্শন কিন্তু…”

মুখে কিঞ্চিত হাসি ফুটেছে।আনমনে হাসছে সাইফা নিজের অজান্তে।কেনো?কথায় কথায় অপমান করা লোককে দেখে কিসের হাসি?
কম্পিউটার এর মত করেই ব্রেইন সিস্টেম জবাব দিলো,

-“প্রেমে পড়ার পূর্বমুহুর্ত।ভালোবাসা নামক ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে আপনার মন। বি এলার্ট অফিসার সাইফা।”

ঝুঁকে পড়ছিলো ফোনের দিকে। বিদ্যুৎ গতিতে পিছু হটে গেলো সাইফা।কিসব উদ্ভট চিন্তা চেতনা এসব?একাকী কথা বলছে মস্তিষ্ক।দ্রুত শায়েস্তা করে নিলো এই অভদ্র মস্তিষ্ককে।চিন্তার ময়দানে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি দূর দৌড়ে চলে যাচ্ছিলো।পূনরায় ধরে এনে ঠিক জায়গায় প্রতিস্থাপন করে।প্রেমে পড়বে সে?তাও শাবাবের?অসম্ভব!

প্রতিদিনের ন্যায় কাচ নির্মিত দরজা ঠেলে ঠিক নিজের সময়মতো ব্যুরোতে এসে হাজির শাবাব।তাকে দেখার সাথে সাথে জামিল কফি মেশিনের সামনে দৌড়ে গেছে।নিজের চেয়ারে আরাম করে বসে রুমাল দিয়ে তার প্রাণপ্রিয় পিস্তল পরিষ্কার করছে।

দুহাতে কাজ করতে করতে না চেয়েই সাইফার উদ্দেশ্যে বললো,

-“কাজ কতদূর?”

নিজেকে কল্পনা জগৎ থেকে পুরোপুরি বাস্তবে এনে সাইফা বললো,

-“সিসিটিভি ফুটেজ এসেছে মাত্র।চেক করছি”

-“ওকে। হারি আপ”

সাইফার সাথে কোনো প্রকার তর্কে জড়ায়নি আজ।কাজে দেরি হওয়ায় কোনো অপমানজনক কথাও শুনালো না।আবিরের দিকে চেয়ে বলল,

-“আর তোমার কাজ?”

আবির উত্তর দেয়,

-“আমার কাজ শেষ।বডির কিছু স্যাম্পল নিলাম।টেস্ট করে জানাচ্ছি।”

-“কাজগুলো দ্রুত করো। ঢিলেমি করবে না।”

-“ওকে বস!”

রবিন এসে হাজির।নির্ধারিত সময়ের চেয়ে একটু বেশি সময় নিয়েছে।সাথে তার নতুন মুখ।এক নারী চরিত্র।অপরিচিত।ভোরের দিকে সে ছিলো না।সবচেয়ে বুঝদার মেয়েটা আজ রবিনের কাজ বুঝলো না।বাধ্য হয়ে নিয়ে আসতে হয়েছে তাকে।কে জানে কি ভূত চেপেছে মাথায়?সেও চায় ইনভেস্টিগেশন এর আংশিক ভাগীদার হতে। মিথ্যেটাও শিখিয়ে পড়িয়ে এনেছে রবিনকে।এক হৃদয়ের দুর্বলতার কাছে অসহায় সে।নাহয় কোনোদিনও কাজের মধ্যে তাকে নিয়ে আসতো না।

রবিন এসেই বললো,

-“বেশি দেরি করে ফেললাম নাতো?”

শাবাব উত্তর দেয়,

-“একটুতো করেছেনই বটে।”

রবিন কত ধৈর্য্যের পরীক্ষা দেবে? শাবাবের কথার ধাঁচ অপমানের দিকেই ইঙ্গিত করে বারবার।বাবার আদেশের কাছেও হার মানা ছেলেটি নিজের রাগী মনোভাবকে ধামাচাপা দিলো।
মিথ্যে হেসে বলে,

-“আম এক্সট্রিমলি সরি”

-“ইটস ওকে।উনি কে?”

-“উনি?…ওর নাম রামশা ডিসুজা।ক্রাইম..ক্রাইম রিপোর্টার”

শাবাব সন্দেহের দৃষ্টিতে চেয়ে প্রশ্ন করলো,

-“ঠিকতো?”

রামশা জবাবে বলে,

-“হ্যাঁ কেনো?বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি?আমি আপনাদের সাথে থেকে কাজ করতে চাই।এই পুরো কেসটা নিয়ে একটা রিপোর্ট তৈরি করতে চাই”

শাবাব বলে,

-“আইডি দেখি?”

সামান্য নীরব হলেও তৎক্ষনাৎ পরিস্থিতি সামলে নিলো রামশা।অহেতুক ব্যাগে অভিযান চালায়।কোনো আইডি কার্ড নেই তার কাছে।তারপরও ভনিতা করে বললো,

-“ওহ শিট!আইডি কার্ডটা বোধহয় হোটেলে ফেলে এসেছি।”

শাবাব মুখ ফিরিয়ে বাঁকা হাসে।পরপর রবিনের দিকে চেয়ে বলে,

-“দায়ভার বহন করতে পারবেন তো?”

অস্পষ্ট বাক্য হলেও কথার অর্থ বুঝেছে রবিন।উত্তরে নিচু গলায় উত্তর দেয়,

-“পারবো!”

__

-“ধরে নিন আপনি একটি রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন।একদম জনমানব শূন্য এক রাস্তা।রাস্তার দুই দ্বারে গভীর ঘন জঙ্গল।জীবনে অন্ত ঘনিয়ে আসছে।মাত্র আট থেকে দশ ঘণ্টা সময় হাতে।কি করে উপভোগ করবেন সময়টাকে?কি করে কাটাবেন প্রফেসর?”

পেট পুরে খাওয়া দাওয়া শেষে বড্ড এক অদ্ভুত কন্ঠস্বরের মানুষের কথা শুনে চমকে উঠলো প্রফেসর রাজিন। উদ্ভট প্রশ্নের পাশাপাশি বুঝে উঠতে পারছে না কণ্ঠস্বরের মালিক কে?একজন নারী?নাকি পুরুষ?মুখ আবৃত মাস্কে।বিশাল আকৃতির দেহ।দানবীয় আকার।ছাত্রীর রেস্টুরেন্টে প্রথমবার খেতে এসে এমন প্রশ্নের শিকার হবে ভাবেনি। আশপাশ কোলাহল শূন্য। সুস্বাদু খাবারে এতই মগ্ন ছিলো যে রেস্টুরেন্টে সে ব্যতীত আর কারো উপস্থিতি নেই খেয়াল করতেই ভুলে গেছে।সামনে দাঁড়ানো মানুষটিকে ভয়ানক লাগতে শুরু করে।

শুঁকনো ঢোক গিলে বলে,

-“আপনি কে?এসব কেমন প্রশ্ন করছেন আমাকে?”

ভয়ানক কণ্ঠে হাসির আভাস পাওয়া গেলো।উত্তর দিলো,

-“আমাকে চিনে কি করবেন?মৃত্যুর পর যদি চিন্তা করার সুযোগ থাকে তাহলে আমায় নিজের মৃত্যুদূত হিসেবে ধরে নেবেন!”

উঠে দাঁড়ালেন প্রফেসর রাজিন। উত্তেজিত গলায় বললেন,

-“ফাজলামো হচ্ছে নাকি এখানে?”

-“নাহ”

-“আমি সিকিউরিটিকে ডাকবো!”

-“ডাকুন!এখানে আমি আর আপনি ব্যতীত আর কারো অস্তিত্ব নেই।আমার জানা মতে ফোনের নেটওয়ার্ক পাবেন না।আর ল্যান্ড লাইন সংযোগ বিচ্ছিন্ন।”

উত্তেজনা ভয়ে পরিবর্তিত হলো। আশপাশে চেয়ে দেখলো রেস্টুরেন্টের মূল ফটক বন্ধ।তারপরও এগিয়ে গেলো।দরজার হাতল চেপে ধরে খোলার চেষ্টা করছে।যেমনটা মস্তিস্ক আগেই জানান দিয়েছিল।দরজা লক করা!

-“জীবনে কোনো পাপ আছে প্রফেসর?কোনো পাপ করেছেন কখনো?আপনার জীবনের মাত্র আট ঘণ্টা বাকি।স্বীকার করে নিন।”

প্রফেসর রাজিন পিছু তাকায়।কথার জবাবে বলে,

-“কিসের পাপ?আমি কোনো পাপ করিনি।কেনো আটকে রেখেছেন?আমাকে যেতে দিন ভালো হবে না বলছি!”

-“খারাপের শুরু এখান থেকেই!”

-“আমি শেষবার বলছি যেতে দিন আমায়।পুলিশ ডাকবো আমি”

-“নিজের পাপ স্বীকার করুন!”

-“আমি কোনো পাপ করিনি!” চেঁচিয়ে উঠে প্রফেসর রাজিন।

-“করেননি?..তাহলে আপনার সামনে থাকা সুস্বাদু ফ্রাইড রাইস,চিকেন এ পয়জন মিশিয়ে কি ভুল করে ফেললাম?”

রুহ কেঁপে ওঠে প্রফেসর রাজিনের।সামনে অদ্ভুত দেখতে মানুষটির শেষ বাক্যে স্তব্ধ হয়ে গেলো সম্পূর্ণ কায়া।চোখের সামনে মনে হচ্ছে মৃত্যুদূত দাড়িয়ে।সময় দিয়েছে আটটি ঘণ্টার।নিজেকে হুশে ফেরায়।বুকে গলায় হাত বুলাতে থাকে।আসলেই কি তার শরীরে বিষ প্রবেশ করেছে?মজা করে খাবারের সাথে বিষাক্ত পদার্থ খেয়ে নিলো?
নিজের গলার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চেঁচালো।

বললো,

-“মিথ্যে! মিথ্যে কথা…আমি কোনো বিষ খাইনি। মিথ্যে বলছেন আপনি।”

চেয়ার টানার কর্কশ শব্দ ভেসে উঠে সম্পূর্ণ রেস্তোরা জুড়ে।সম্পূর্ণ কালো রঙে আবৃত মানব অথবা মানবী অবয়ব দুটো চেয়ারে নিজের দেহকে ঠায় দিয়েছে।এক চেয়ারে পিঠ এলিয়ে সামনের চেয়ারে পা তুলে বসলো।

-“মিথ্যা আমি বলি না।”

একের পর এক লাইট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় ভয়ের পরিমাণ বেড়ে চারগুণ। অস্পষ্ট লাইটের আলোয় ভয়ঙ্করতম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ক্ষণিকের মাঝে।হাত পায়ের কম্পন ঊর্ধ্বগতিতে উপরে উঠছে।মস্তিষ্ক জট পাকিয়ে আক্রমণ করার বুদ্ধি দিচ্ছে।তবে হৃদয় এই বুদ্ধিকে স্বীকৃতি দিতে নারাজ।এক ঘন্টা আগে এসেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর নতুন উদ্ভোধন হওয়া রেস্তোরায় ভুঁড়ি ভোজ করতে।এই খাবার কি আসলেই তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে?

-“কি চাই আপনার আমার কাছে?বলুন!কি চাই?আমার খাবারে কেনো বিষ মেশালেন?”

বিকট ভয়ানক হাসি ঝংকার তুলে। তৎক্ষনাৎ থেমেও যায়। ক্ষপায় মোড়ানো রেস্তোরায় দুজন ব্যক্তির মাঝামাঝি আলাপন চলছে। মৃত্যুকে ভয় করে জানতে চাইছে মৃত্যুর কারণ প্রফেসর রাজিন।অপরদিকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি জানতে চাইছে তারই কোনো পাপের গল্প।উত্তর নেই।তবে প্রশ্নের ঝাঁক চতুর্দিকে।

-“পাপিষ্ঠকে তার পাপের শাস্তি প্রদান করতে।”

-“আমি কোনো পাপ করিনি”

-“আরো একবার মস্তিষ্কে চাপ প্রয়োগ করে দেখুন।মনে পড়লে পড়তেও পারে?”

-“মনে পড়ছে না!” আরেকদফা চেঁচায় প্রফেসর রাজিন।

অবয়বটি চেয়ার ফেলে উঠে দাড়ালো।কালো জ্যাকেটের পকেট থেকে লাল রাঙা মার্কারপেন বের করে বিদ্যুতের গতির ন্যায় সামনে এগিয়ে আসছে।আপনাআপনি পিছু হটে যায় রাজিন।কাছাকাছি আসতে আসতে একদম তার কয়েক ইঞ্চি দুরত্বে এসে থেমেছে। গ্লাভসে ঢাকা কালো হাতের সাহায্যে গলা ঠেসে ধরলো।অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করতে শুরু করেছে কয়েক সেকেন্ডে। রাজিনের চক্ষু কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে যেনো।মুখ খুলে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টায়।বয়সের জোরে এই তাগড়া অবয়বের সাথে পেরে উঠছে না সে।হাত শক্ত করে চেপে ধরলো সামনে দাড়ানো ভয়ঙ্কর ব্যক্তির।ছাড়ানোর চেষ্টা চলছে আপ্রাণ। তবে ব্যর্থ!

-“এত মন ভোলা শিক্ষক কি করে হয় কেউ?শিক্ষকের অতীত বর্তমান সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।আপনি কেমন শিক্ষক? সুপথ দেখানোর কারিগর?পথ ভ্রষ্ট হয়েছেন।ভেবেছিলেন বেঁচে যাবেন?”

প্রফেসর রাজিন মাথা দুদিকে দোলায়।সামান্য আলগা হয়ে আসে হাতের চাপ।মাথা উচু করে কপালের অংশে লাল কালিতে লিখেছে আবারো একই শব্দ ‘লুজার’।

পূনরায় মুখ খুলে।বলে,

-“আপনার কপালে বড় বড় অক্ষরে লুজার লিখেছি।যেনো আপনার মৃত্যুর পর মানুষ জানে! ইউ আর নট এ টিচার।ইউ আর এ লুজার!পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ ছিলো প্রফেসর!করেননি।দিব্যি ঘুরে বেড়িয়েছেন পথে ঘাটে সাধারণ মানুষের মতন!…আপনার এই সাধারণ জীবন যাপন আমার সহ্য হচ্ছিলো না। একদম সহ্য হচ্ছিলো না”

আকস্মিক গলা ছেড়ে দিলে জমিনে ধপাস করে বসে পড়ে প্রফেসর রাজিন।উচ্চ আওয়াজে কেশে উঠছে।মনে হচ্ছিলো পয়জন তাকে ধীরেধীরে শেষ হওয়ার আগেই সে নিঃশেষ হয়ে যাবে।ঠিক সময় বুঝে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তাকে।

এক পা ভাঁজ করে অজ্ঞাত ব্যক্তিটিও তার বরাবর বসলো,

-“কি ভেবেছিলেন? সময়ের আগেই পৃথিবী ছাড়া হবেন?আমাকে এত নির্দয় ভেবেছিলেন?…না প্রফেসর!আমি আপনাকে আপনার মৃত্যুর দশ কদম দূরে এনে ছেড়ে দিয়েছি।নিজে এগোবেন তার দিকে।প্রতি কদমে উপলদ্ধি করবেন।জীবন কি?আর জীবনের ভুল কি?”

উত্তর দেওয়ার মতোন অবস্থায় নেই প্রফেসর রাজিন। খটখট করে দরজা খুলে গেলো।ইশারা করা হলো তাকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য।নিজের সাথে যুদ্ধ করে উঠে দাড়ায় রাজিন। নড়বড়ে কদমে চেষ্টায় আছে দৌড়ে পালানোর।পিছু ডাকে সেই মানুষটি।

বলে উঠে,

-“মৃত্যুদূত এর নাম জানতে চাইলেন না যে?”

থমকে দাঁড়ায় প্রফেসর রাজিন।পিছু ফিরে যায়।নামটা জানা উচিত।অন্তত তাকে এভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া মানুষের নামের মাধ্যমে তাকে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা যাবে।সে জীবিত থাকুক আর না থাকুক!

ভাঙ্গা গলায় জানতে চাইলো,

-“ক.. ক..কি নাম?”

কয়েক সেকেন্ডের থমথমে নীরবতা ছেয়ে যায়।যেনো ঝিঁঝিঁ পোকারাও ডাক থামিয়ে দিল। দূর আধাঁরে কালো আবরণে আবৃত মনুষ্যের কাছ থেকে জবাবের আশায়।কয়েকবার পলক ফেলে প্রফেসর রাজিন।ঘেমে একাকার সম্পূর্ণ।কিছু সময় দিয়েই এক ভারী ভয়ানক কণ্ঠে উত্তর আসে,

-“আনাম”

চলবে…