আ না ম পর্ব-০৪

0
79

“আ না ম”- ৪
-Azyah সূচনা

পদপৃষ্ট তীব্রভাবে ক্রমাগত। জরাগ্রস্ত শব জীবনহানির দিকে এগিয়ে চলছে নিজে থেকে।মেনে নিয়েছে জীবনের সময়সীমার স্বল্পতা।তারপরও শেষ চেষ্টা করে যাবে। অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলে সৌভাগ্য।মৃত্যু বরণ করলে তাকে বিনা কারণে মৃত্যু দেওয়া মানুষের সমস্তটা ফাঁস করে দিয়ে যাবে।এই অভিপ্রায়ে পায়ের গতি বাড়িয়ে গেলো কালি মন্দিরের পাশের থানায়। পুলিশের কাছে সাহায্য চাইবে।তারা ঠিক খুঁজে নিবে “আনাম” নামী এই অজ্ঞাত মনুষ্যকে।প্রবল বেগে দখিনা হাওয়া বইতে শুরু করে আকস্মিক।আকাশের গর্জন জানান দিলো ঝড় উঠবে।মন্দিরের ঘণ্টার আওয়াজ বাজছে অনবরত।চোখে মুখ ধুলোমাখা।থানার লাইট চোখে পড়তেই আরো একটু জোর বাড়ায় হাঁটার।এক প্রকার দৌড়ে যায় প্রফেসর রাজিন।

থানার দরজা ধরে দাড়িয়ে হাঁপিয়ে বলতে লাগলো,

-“আমি মারা যাবো!আমি মারা যাবো!”

কনস্টেবল দ্রুত পায়ে এগোয়। অদ্ভুত কথার বিপরীতে প্রশ্ন ছুঁড়ে।বলে,

-“মারা যাবেন মানে?”

-“আমাকে বিষ দেওয়া হয়েছে!খাবারের সাথে মিশিয়ে।যে বিষ দিয়েছে সে নিজে বলেছে আমার জীবনের মেয়াদ আট থেকে নয় ঘণ্টা।”

মাথার উপর হলুদ বাল্ব এর আলো প্রজ্বালিত।সমক্ষ শ্বেতাভ ছড়াচ্ছে প্রফেসর রাজিন এর কপালে। মধ্যিখানে লাল কালিতে কিছু একটা লিখা।ঘামে ভিজে প্রায় অদৃশ্য।মার্কার পেনের কালিটা টিকতে পারেনি। আংশিক ‘ল’ আর ‘র’ অক্ষরটা বোঝা গেলো।তবে পূর্ণাঙ্গ শব্দ নয়।সামনেই ইন্সপেক্টর বসে আছেন।গ্লাস ভর্তি পানিও দিয়েছেন প্রফেসর রাজিনকে এগিয়ে।সাথে কিছু সময়। সুস্থির হওয়ার জন্য। ইন্সপেক্টর মাহফুজ সরু চোখে রাজিনকে দেখে নিলেন কয়েকদফা।নাজেহাল; শঙ্কিত দশা।সময়ের কোটা পূর্ণ মনে হলে মুখ খুলে ইন্সপেক্টর মাহফুজ।

জানতে চেয়ে প্রশ্ন করেন,

-“আপনি এবার ঠান্ডা মাথায় বিস্তারিত বলেন।কি সমস্যা?কে আপনাকে মারতে চায়?”

কণ্ঠের ছটফটানি বাড়লো।উত্তরে রাজিন বললো,

-“মারতে নয় মেরে ফেলেছে অলরেডি।আমি..আমি কিছুক্ষন আগে আমার স্টুডেন্টের নতুন রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলাম।রাতের খাবার।সেখানেই আমার খাবারে বিষ মেশানো হয়।এক বিশাল দেহের লোক আসে।জানি না নারী না পুরুষ!অহেতুক জেরা করে আমায়।আমাকে জানায় নিজ থেকেই যে সে আমার খাবারে বিষ মিলিয়েছে।তারপর আমি রেস্টুরেন্টের আশপাশ চেয়ে দেখলাম কোনো মানুষ নেই।আমার গলা চেপে ধরা হলো।আমার কপালে লুজার শব্দ লিখে দেওয়া হয়েছে।”

ইন্সপেক্টর মাহফুজ এতটুক শুনে রাজিনকে থামায়।এত কথার মধ্যে তার মনেও প্রশ্ন জমেছে।দ্রুত করে ফেলাই ভালো।হাত তুলে থামতে ইশারা করে।

বলে,

-“খাবার খেতে এত মগ্ন ছিলেন?যে আশপাশ শূন্য হয়ে গেছে কোনো খবর রাখেননি?”

রাজিন ঢোক গিলে বললো,

-“আমি আমার ফোনে মুভি দেখছিলাম আর খাচ্ছিলাম।টিচার হওয়ার সুবাদে আমাকে যতক্ষণ ইচ্ছে ততক্ষন রেস্টুরেন্টে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ম্যানেজার বলে গিয়েছে!”

-“আচ্ছা আপনার সেই স্টুডেন্ট কোথায়?আর ম্যানেজার?বেরিয়ে আসার আগে তাকে দেখেছিলেন?”

-“আমার স্টুডেন্ট শহরের বাইরে।আর নাহ!আমি আসার সময় না কোনো মানুষ ছিলো না ম্যানেজার!শুধু…”

-“শুধু?”

-“শুধু ‘আনাম’ ছিলো!”

-“আনাম?” আশ্চর্য্য হয়ে জানতে চাইলেন ইন্সপেক্টর মাহফুজ।

-“যে আমার খাবারে বিষ মিশিয়েছে।”

উদ্দীপিত গলায় ইন্সপেক্টর মাহফুজ জানতে চাইলেন,

-“আচ্ছা আপনার মনে আছে সে দেখতে কেমন?আপনি বললেন বিশাল দেহের লোক!তার কোনো এমন বৈশিষ্ট্য?যেটা আপনার মনে পড়ছে।ভিন্ন কিছু?কোনো মার্ক কোনো বিহেভিয়ার।”

ভঙ্গুর মুখভঙ্গি প্রকাশ করে প্রফেসর রাজিন জবাব দেয়,

-“অদ্ভুত কন্ঠস্বর ছিলো তার!যেনো কোনো রোবট কথা বলছে।নারী পুরুষ কারো মতনই ছিলো না আওয়াজ।আর তার সম্পূর্ণ শরীর কালো আর গাঢ় খয়েরী রঙের কাপড়ে আবৃত ছিলো।চোখটা পর্যন্ত প্রকাশ্যে আনেনি।”

বলেই খুক খুক করে কেশে উঠে প্রফেসর রাজিন। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ঘড়ির দিকে নজর বুলায়।যেনো ঘণ্টা গুনছে নিজের জীবনের।কাশির জোর অল্প অল্প করে বাড়তে শুরু করলে ইন্সপেক্টর মাহফুজ উঠে দাঁড়ায়।আরো এক গ্লাস পানি দিয়ে দুজন কনস্টেবলকে ডাকলো।

একজনকে আদেশ করলো, -“দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স ডাকো। ওনাকে যত দ্রুত সম্ভব হসপিটালে ভর্তি করাও।আমি আসছি।”

থানায় থাকা ডাক্তার প্রাথমিক পর্যায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।কখনো স্বাভাবিক আবার কখনো বড্ড অস্বাভাবিক আচরণ করছে রাজিন।আধ ঘন্টার মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স এসে হাজির।সমস্ত ডিটেইল প্রদান করে পাঠানো হয় রাজিনকে হসপিটালে।

থানার দরজায় দাড়িয়ে ছুটে অ্যাম্বুলেন্সের লাল নীল বাড়ির দিকে চেয়ে ইন্সপেক্টর মাহফুজ।দৃষ্টি সীমানার বাহিরে চলে যেতেই মাথা ঘোরায়। সহকারি ইন্সপেক্টর মিশালকে বললো থমথমে গলায়,

-“শাবাবকে কল লাগাও”

-“এস আই শাবাব?”

-“হ্যাঁ”

-“কিন্তু কেনো স্যার?”

-“আমার মনে হচ্ছে শাবাব তার কেসের প্রথম ক্লু পেয়ে গেছে।”

চারকোনা টেবিলের উপর টেবিল ল্যাম্প জ্বলছে।একহাত টেবিলে ছড়িয়ে নিজের ভারী মাথাটাকে সেখানে ঠায় দিয়েছে শাবাব।অন্যহাতে কলম।মাথা নামিয়েই আঁকাআঁকিতে ব্যস্ত।কোনো প্রকৃতিক দৃশ্য নয়। ছক!অপরাধীকে কাবু করার ছক।ফোন বাজলে মাথা তুললো।

রিসিভ করেই বলল,

-“বলো মিশাল”

-“আমি মাহফুজ”

-“ইয়েস ইন্সপেক্টর মাহফুজ?রাত বিরাতে আমার কথা কেনো মনে পড়ছে?”

শাবাবের আচরণ সম্পর্কে অবগত মাহফুজ।বাড়তি কথা বললেন না। সোজাসুজি মূল কথায় এসেছেন।কান খাঁড়া হয়েছে শাবাবের।

হেঁয়ালিপনা বাদ দিয়ে জোরালো গলায় জানালো,

-“এক্সট্রা ডাক্তারের টিমকে এলার্ট করেন ইন্সপেক্টর মাহফুজ!আমি আবিরকে পাঠাচ্ছি।এনি হাও!ইন এনি কস্ট আমি প্রফেসর রাজিনকে জীবিত চাই!”

পুল পাড়ে পা ভিজিয়ে আছে রবিন আর রামশা।আজকে স্পটে যাওয়ার কথা ছিল।কি যেনো হলো শাবাবের।ঠিক দশ মিনিট আগে এই প্ল্যান ক্যানসেল করে জানায় আজকে থাক।সেই সুবাদে প্রেম নামক রোগের সাথে নিজেকে আরো আক্রান্ত করতে বসেছে।মাত্রই এলো এখানে।এতখন ব্যুরোতে ছিলো।আর রামশা একা হোটেলে।সময় দিতে পারেনি তাকে।তাই রাতের বেলায়ই এসে বসে একান্তে দুজন।তারও ফোন বাজলো। শাবাব কল করেছে।রবিন দ্রুত রিসিভ করে।

-“ঘুমোচ্ছেন,জেগে আছেন অথবা প্রেম করছেন। যাই করছেন আবেদীন হাসপাতালে পৌঁছান।”

-“কিন্তু…”

-“রাঘব বোয়াল হাতে এসেছে।আর দোহাই লাগে!আপনার ক্রাইম রিপোর্টার ওরফে আপনার গার্লফ্রেন্ডকে সাথে আনবেন না।”

থতমত খেয়েছে রবিন। কিচ্ছুটি বলতে পারলো না। বলবেও বা কাকে? শাবাব একই পদের লোক হয়ে অর্ডার দিয়ে মুখের উপর ফোন কেটেছে। রবিনও বেশিকিছু ভাবলো না।উল্টো পায়ে হাঁটা দিলো।পেছনে রামশা চেঁচিয়ে যাচ্ছে।কোনো উত্তর দেয়নি রবিন।

হাসপাতালে চলছে ডাক্তারদের তোড়জোড়।সাথে যোগ দিয়েছে আবির।কেসের সমস্ত বিষয়ের পাশাপাশি কিভাবে বিষ এর প্রভাব থামানো যায় সেই বিষয়ে নানান চেষ্টা চলছে।চারজন এক্সপার্ট এর একটা টিম কাজ করতে শুরু করলো।তারাও ধরে নিয়েছে তাদের হাতে সময় আট ঘণ্টা।ইতিমধ্যে উদ্ভট ব্যবহার করতে শুরু করেছিলো প্রফেসর রাজিন।মৃত্যু ভয়ের চেয়ে ব্যতিক্রম ছিল তার আচরণ। ডাক্তাররা সন্দেহ করে পয়জন এর পাশাপাশি ড্রাগ জাতীয় কিছু মিশ্রিত ছিলো।পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মধ্যেই রিপোর্ট আসে।সবার কাছে পরিষ্কার।অতিরিক্ত মাত্রার ড্রাগ মিশ্রিত থাকায় পাগলের মতোন আচরণ করছিলো রাজিন।সৌভাগ্যবশত পুরো দেহে এই বিশেষ পয়জনটি এখনও ছড়ায়নি। আশার আলো আছে সামান্য তার পাশাপাশি ঝুঁকিও।

আবির বেরিয়ে এলো।বাহিরেই দাঁড়িয়ে আছে শাবাব,রবিন, সাইফা আর মির্জা।ইনফরমেশন ট্রান্সফার জরুরি।

বেরিয়ে এসেই বললো, -“যেমনটা সন্দেহ করছিলাম। বিষ এর সমপরিমাণ ড্রাগ মেশানো ছিলো খাবারে।”

শাবাব বললো, -“সে কি ঠিক আছে? বেঁচে যাবেতো?”

-“আশা আছে শাবাব কিন্তু কোনো শিউরিটি দিতে পারছি না।”

-“আবির যে করেই হোক একে আমি চাই। প্রফেসর বেঁচে থাকলে আমাদের কেস অনেকটা সলভ এর পথে চলে আসবে।তার জীবনসহ আরো অনেক মানুষের জীবন বাঁচবে।”

আবির উত্তর দেয়, -“উই আর ট্রাইং আওয়ার বেস্ট!”

শাবাব সাইফাকে ডেকে বললো, -“ওই রেস্টুরেন্ট এ সার্চ চালাও।একটা অংশও যেনো বাদ না যায়। রেস্টুরেন্টের মালিককে ধরো। ব্যুরোতে নিয়ে যাও।”

-“ওকে স্যার!” জবাব দিলো।

শাবাব পূনরায় বলে ঠান্ডা গলায়, -“একা যাবে না।টিম নিয়ে যাও।”

-“স্যার আমি একা…”

-“শাট আপ।নো মোর ওয়ার্ডস। মুভ!”

শাবাব কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে।মাথায় ঘুরছে চক্র।কি করবে?কি করবে না?মুখটা শক্ত করে দাঁড়িয়ে ভাবনা চিন্তা করলো কিছু সময়।অন্যদিকে রবিন ঢাকা থেকে অফিসারদের আসার নির্দেশ দেয়।

ইতিমধ্যে শাবাব বলে উঠলো, -“আমার কি মনে হয়?এইযে প্রফেসর বেঁচে আছে এখন অব্দি? মানে বাঁচার চান্স আছে।এই খবরটা প্রচার করলে কেমন হয়?সে জীবিত থাকুক আর না থাকুক।আমরা নিউজপেপার,টিভিতে এই প্রচার করতেই পারি যে প্রফেসরকে আমরা বাঁচিয়ে ফেলেছি।এতে করে ওই আনাম এর জেদ বাড়বে।কোনো না কোনোভাবে আসবে এখানে অসমাপ্ত কাজকে পূর্ণতা দিতে।”

রবিন বলল, -“হিতের বিপরীতও হতে পারে।সে রেগে গিয়ে যদি আরো নিরীহ মানুষের প্রাণ যদি নেয়?কারণ সে জানে এখানে পুলিশ প্রটেকশন আছে।আড়ালে খুন করে পাড় পাচ্ছে।আমাদের উপস্থিতিতে পারবে না।”

মির্জা রবিনের কথায় সায় দিয়ে বললো, -“এস. আই রবিন ঠিক বলেছেন।এত কাচা খেলোয়াড়তো সে নয়।হলে আগেই ধরা পড়তো।তবে আমি বলবো দুজনের কথার ওয়েট আছে।কিছু সময় যাক।তারপর নাহয় সিদ্ধান্ত নেই?কি বলো?”

শাবাব উপর নিচ মাথা দোলায় সামান্য।বলে ধীর গলায়, -“ওকে”

__

রেস্টুরেন্ট তালাবদ্ধ।এসেই বিশাল এক তালা ঝুলতে দেখে সাইফা আশ্চর্য্য হয়।কিছুক্ষন আগে ঘটে যাওয়া কান্ডের পর কেইবা এত যত্নে তালা আটকে দিয়ে গেছে? প্রফেসরের কথা মোতাবেক এখানে কেউ ছিলো না।শুধু সেই খুনী আনাম ব্যতীত।সেও এখন নেই।না থাকাটাই স্বাভাবিক।অপরাধী অপরাধ করে বসে থাকবে নাকি ধরা দেওয়ার জন্যে?হাতে সাদা রঙের গ্লাভস পড়ে পাশে থাকা অফিসারদের মধ্যে একজনকে বললো,

-“ব্যাগে ইনস্ট্রুমেন্টস আছে না?”

-“জ্বি ম্যাম”

-“দাও দেখি তালা খোলা যায় কিনা”

-“দিচ্ছি ম্যাম”

নানান ইনস্ট্রুমেন্ট দিয়ে চাবিবিহীন তালাকে খোলার চেষ্টা করছে সাইফা।পারছে না। মিনিট দশেক যাবৎ পালাক্রমে সকলেই চেষ্টা করলো।ভেতর থেকে কারো গোঙানির আওয়াজ ভেসে এলো স্পষ্ট।যেনো তালার শব্দের সাথেসাথে কেউ আওয়াজ করছে।খুলতে না পেরে সাইফা বললো,

-“কাটার দিয়ে তালা কেটে ফেলো আর কোনো উপায় নেই।ভেতরে নিশ্চয়ই কেউ আছে”

পুলিশ,আর্মি,অপরাধ তদন্ত বিভাগের অফিসারদের যেনো সবকিছুতেই যোগ্য হতে হয়।তালা কেটে চুরি করা চোরের কাজ।এখানে তদন্তের জন্য সেই কাজও করতে হচ্ছে।তাও অনুমতিসহ। ওয়ারেন্ট সাথেই এনেছে। নিপুণ হাতে তালা কেটে ভেতরে প্রবেশ করেছে।গোঙানির আওয়াজ অনুসরণ করে ভেতরে ঢুকে গেলো।কিচেনের সামনে আসতেই আওয়াজ তীব্র হয়েছে। ক্যাবিনেটের পাশে এক যুবককে হাত পা বেঁধে বসিয়ে রাখা হয়েছে।মুখে এটে আছে স্কচটেপ।সামনে কয়েকজন মানুষ দেখেই দেহের নড়চড় বাড়ায় যুবকটি। ইঙ্গিত করে তার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দেওয়ার জন্য।

সাইফা দ্রুত হাতের বাঁধন খুলেছে।পরপর পায়ের এবং মুখের।বাকিদের সার্চ কাজে লাগিয়ে দিয়ে নিজে বসলো যুবকটির সামনে।কিচেনে খুঁজে খুঁজে এক গ্লাস পানি এসে তাকে বললো,

-“আপনি একটু শান্ত হন”

অর্ধ গ্লাস পানি ধীর গতিতে পান করে ছেলেটি বলল,

-“আপনারা?”

-“আমরা সি.আই.ডির লোক।আপনি ভয় পাবেন না।কে বেঁধে রেখেছে আপনাকে এখানে?আর কেনো?”

-“একটা লোক!”

-“আপনি তাকে দেখেছেন?”

-“কিভাবে দেখবো তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকা ছিলো।”

প্রোফেসর রাজিন এর বর্ণনার সাথে মিলে যাচ্ছে।সাইফার বুঝতে বাকি নেই এই কাজটি কার।যে খাবারে বিষ মিশিয়েছে সেই।

সাইফা পূনরায় প্রশ্ন করলো,

-“আচ্ছা বলুনতো এখানে এক্সাক্টলি কি ঘটেছিলো?”

-“রাত দশটা পর্যন্ত এই রেস্টুরেন্ট খোলা রাখার অনুমতি আছে আমাদের কাছে।কিন্তু একজন কাস্টমার আসেন।তিনি জানান সে রুবি ম্যাডামের টিচার।প্রথমবার এসেছেন।তখন আমি ম্যাডামকে কল করলাম।তখন প্রায় রাত সাড়ে দশটা ।আমরা সব গোছগাছ করে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।চারজন কাস্টমার ছিলেন তারাও দশ পনেরো মিনিটে চলে যেত। সেই সুবাদে আমি স্যারকে বসতে দেই। ম্যাডামকে তখনও কল করছিলাম সে পিক করেনি।তারপর আমি মেসেজ করলাম। তৎক্ষনাৎ রিপ্লাই এসেছে।বলেছে তাকে ভালোভাবে সার্ভিস দিতে।রেস্টুরেন্ট একটু দেরিতে বন্ধ করলেও চলবে।আমাদের একজন শেফ তার খাবার রেডি করে দিয়ে সেও চলে যায়। ধীরেধীরে পুরো রেস্টুরেন্ট খালি হয়।আমি অপেক্ষায় ছিলাম স্যার কখন যাবেন।আমিও চলে যেতাম কিন্তু সে বসে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত।এরপর রুবি ম্যাডামকে ফোন মেসেজ কোনোটাই পাইনি।আরো বিশ মিনিট পর একটা লোক আসে।কোনো কথা না বলে কিচেনের দিকে এগিয়ে এসে আমাকে ঘুরিয়ে হাত পেছনে টেনে বেঁধে দিলো। চিৎকার করতে চাইলে মুখ চেপে ধরে। মুখেও স্কচটেপ এটা পা বেঁধে দেয়।এরপর কি হয়েছে আমি জানি না।তিন ঘণ্টা যাবৎ আমি এখানে বন্দী!”

সাইফা সবটাই শুনলো।উত্তরে বললো,

-“রেস্টুরেন্টের মালিক কি রুবি ম্যাডাম?”

যুবকটি মাথা নাড়ায় বলে, -“হ্যাঁ।আর আমি ম্যানেজার।”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাইফা বললো, -“আপনি সুস্থবোধ করছেনতো?কোন সমস্যা নেইতো?”

-“ম্যাডাম আমি ঠিক আছি।কিন্তু যা ঘটলো আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।”

-“ধীরেধীরে বুঝবেন।তার আগে আপনার আমাদের জন্য কাজ করতে হবে।এটা একটা মিস্ট্রী কেস।আপনাকে আমাদের যেকোনো সময় প্রয়োজন পড়তে পারে। শেফ আর রুবির নাম্বার দিন আপাদত।”

__

ঘন্টার পর ঘন্টা হাসপাতালে কাটিয়ে ব্যুরোতে ফিরেছে শাবাব।একে একে সবাইকে আদেশ করলো যারযার বাড়ি ফিরে যেতে।আপাদত কাজ শুধু আবিরের। অতিরিক্ত সিকিউরিটি মোতায়ন করা হয়েছে হাসপাতালে। প্রোফেসর রাজিন বাঁচলেই কেস আগ বাড়বে বলে আশা করা যায়।তাছাড়া আর নয়। শাবাবের যেনো ঘর নেই বাড়ি নেই।রাত বিরাত পড়ে থাকে ব্যুরোতে।কে জানে কিসের টানে?রাতের সময় সে কাউকে এলাও করে না সেখানে।একা থাকে। জামিলকেও দারোয়ান এর ঘরে পাঠিয়ে দেয়।আজও ব্যতিক্রম কিছু নয়।রবিনকে কিছু ফাইল ধরিয়ে দিয়ে হোটেলে চলে যেতে বলেছে। সাইফা ইনফরমারদের এলার্ট করে দিয়েছে রুবির খোঁজের জন্য।তার বাড়ি গিয়ে তার পাওয়া যায়নি। শাবাবের আদেশে নিজেও বাড়ি গিয়ে নাম্বার ট্র্যাকিং এর চেষ্টায়।

হোটেল রুমে অর্ধেক দেহ ঝুঁকিয়ে ফাইল দেখছে রবিন। দুয়ে দুয়ে চার মেলানোর চেষ্টায়।আজ ঘটে যাওয়া অনেক কিছুই কেসের ক্ষেত্রে দরকারি। ভোর চারটে বাজতে চললো প্রায়।ঠিক সেই মুহূর্তে দরজায় টোকা পড়ে। ফাইলের দিকে ধ্যানমগ্ন রবিন নড়েচড়ে উঠে।দরজার দিকে চেয়ে উঠে যায় দরজা খোলার উদ্দেশ্যে।

দরজার বাহিরে রামশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,

-“ঘুমাও নি?”

-“তুমিওতো ঘুমাও নি।”

-“আমি কাজ করছি রামশা।ঘুমোনোর প্রশ্নই উঠে না এই সিচুয়েশনে।”

-“শুনো রবিন এসব কাজে মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়।যত চাপ দিবে তত গুলিয়ে ফেলবে।একটু শান্ত হও!”

রবিন রামশার কথা নিশ্চুপ শুনলো।মেকি হেসে বললো,

-“চলো চা খেয়ে আসি।আবার সকাল আটটায় ব্যুরো যেতে হবে”

-“এখন?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করে রামশা।

-“হ্যাঁ এই ভোরের বেলায় চা জমবে ভালো। প্রায়শয়ই মাথা ঠাণ্ডা করতে ভোরের ধোঁয়া তোলা চা আমার কাজে দেয়”

রামশা খুশিখুশি রাজি হয়ে গেল।রবিনের মন ভালো হবে এতে।মাথা থেকে চাপ কমবে প্রকৃতির হাওয়া বাতাস পেলে।ওড়না গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে পড়লো দুজনে।হোটেল থেকে বেরিয়ে দুয়েক মিনিট হেঁটেই ছোট্ট চায়ের দোকান চোখে পড়েছে।দোকানী মাত্রই দোকান খুলছেন।রবিন আর রামশা একই সঙ্গে গিয়ে বেঞ্চিতে বসলো। দোকানীকে সব এটে নেওয়ার সময় দিয়েছে।সাথে দু কাপ রং চায়ের অর্ডার দিয়ে একে অপরের দিকে চাইলো।

-“আমার মনে হচ্ছে রামশা আমি কিছুই করতে পারছি না। শাবাব আমাকে এই কেস থেকে দূরে দূরে রাখছে।”

-“এস. আই শাবাবকে অদ্ভুত লাগে আমার।কি ইগো বাবাহ্!”

রবিনের কথায় জবাব দেয় রামশা।

চা এসে গেছে।দোকানী বাকি কাজ বাদ দিয়েই দুজনকে চা দিয়ে গেলো সর্বপ্রথম।গরম চা মুখে তুলেই রবিন বলল,

-“বাদ দাও।আমি নিজের জায়গা নিজে বানিয়ে নিবো। একই কেসে দুজন সিনিয়র ইন্সপেক্টর থাকলে এমনি হয়।আমি নাহয় ক্রেডিট কম পাই।এটা কোনো কম্পিটিশন নয়।কিন্তু শাবাবের বদৌলতে খুনি ধরা পড়লে অনেক মানুষের জীবন বাঁচবে।”

-“আমি পূর্ণ বিশ্বাসী তোমার উপর।”

-“হুম”

-“আচ্ছা তোমাকে একজনের কথা বলা হয়নি।”

ইতিমধ্যে গরম চায়ে বড় বড় চুমুক দিয়ে প্রায় অর্ধেক কাপ শেষ।চোখ তুলে তাকায় রবিন।জানতে চেয়ে বলে,

-“কার কথা?”

-“আমি কক্স-বাজার গিয়েছিলাম যখন?সেখানে আমার এক অদ্ভুত মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে জানো?তার চোখজোড়া ছিলো বড্ড ভয়ঙ্কর।সবুজ রঙের চোখের মনি।আমি হ্যালুসিনেট করেছি বারবার তার চোখের দিকে চেয়ে।তারপর ওর সাথে তিন দিন কাটিয়ে ভাবলাম।সে জাগতিক সকল বিষয় থেকে আলাদা।অনেকটা ভিন্ন সে।অদ্ভুত।তবে মনটা সচ্ছ পানির ন্যায়।”

-“ঠিক বুঝলাম না”

-“শুনবে গল্প?”

আরো এক কাপ চা অর্ডার করে নেয়।পরপর আগ্রহী গলায় জানতে চায় রবিন,

-“শুনাও দেখি।অদ্ভুত মেয়ের নামটা কি?”

-“লিয়ানা”

চলবে…