আ না ম পর্ব-০৬

0
58

“আনাম”- ৬
-Azyah সূচনা

“নারীর বিষণ্ণ মন হলো সমুদ্রের মতো, যেন জলের নিম্নতম মহাশূন্যে নামে, অজানা কোথায় শেষ হতে চায়।”

নারী প্রান্তে আবহে দেখা গেল। তার চোখে আলো নেই, ঠোঁটে তার সুরের অভাব।মনে বয়ে গেছে ঘর নীরবতা এবং সুস্থির হয়ে বসে আছে আরাম কেদারায়।এতটা খারাপ অনুভব করার যুক্তিযুক্ত অর্থ প্রশ্নের সম্মুখীন।এতটা নিরাশ কেনো মনস্থ সেই বাক্যে?উপলদ্ধি করায় শাবাবের অবহেলা একদম সহ্য হচ্ছে না।ঠিক যেমন সে বললো?নারী স্পর্শ তার কাছে অসহনীয়। দূর্বল মন কিছু ক্ষেত্রে। শাবাবের চলে যাওয়ার পানে ঠাঁয় চেয়ে ছিলো।

যান্ত্রিক মস্তিষ্ক চলে উঠলো।বললো,

-“হৃদয় তোমার উৎসাহি শাবাবের প্রতি”

মস্তিষ্কের এমন কথায় হৃদয় আরো ভার হয়।কান্না এসে ঝাপটে পড়তে চাইলে ফোন কল হুঁশিয়ার করে।ফাহাদ কল করেছে।নিঃশ্বাস ফেলে ফোন রিসিভ করে সাইফা।

-“হ্যালো”

-“ম্যাম?”

-“হ্যাঁ বলো ফাহাদ।এনি আপডেট?”

-“ম্যাম রুবি নিখোঁজ।গতকাল রাতে ঠিক ম্যানেজারকে মেসেজ করার পরপর ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে তার ফোন অফ হয়।আন্দাজ করা যাচ্ছে সে হয়তো ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলো।এরপর তার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।তার বাবা মাও ভীষণ চিন্তিত।চব্বিশ ঘণ্টা পর থানায় মিসিং কমপ্লেইন লিখাতে যাবেন”

-“ঢাকায় রুবির ফটো আর যাবতীয় ডিটেইলস পাঠাও।তাকে পেলেই আমাদের জানানোর অনুরোধ করবে।”

-“ইয়েস ম্যাম!”

হসপিটালে ক্যাবিনের বাহিরে দাড়িয়ে আছে রবিন, শাবাব এবং মির্জা।একে অপরের সাথে আলোচনায় মশগুল।আবির আসবে কিছুক্ষনের মধ্যেই।তার অপেক্ষায় আছে।দুহাত কোমরে ঠেকিয়ে দাঁড়ানো শাবাবের কপালের মধ্যমভাগে তিনটে রেখা।রবিন ঢাকা থেকে যেসব অফিসারদের আসতে বলেছিলো তাদের বারণ করে দেয়।এই মুহূর্তে রুবি নামক মেয়েটিকে খোঁজা বেশি দরকারি।তাদের বলেছে রুবির খোঁজ করতে।হতে পারে ‘আনাম’ পর্যন্ত পৌঁছানোর সেই হবে প্রথম এবং শক্তিশালী মোহরা।

রবিন বলে,

-“রুবির সাথে নিশ্চয়ই কিলারের কোনো সম্পর্ক আছে।একজন মানুষ তার নতুন ব্যবসা ছেড়ে এভাবেই গায়েব হতে পারে না।আর যদি হতো তাহলে ফোন অফ রাখার কি কারণ দাঁড়ায়?কোনো একটা ঝামেলা আছে এখানে”

শাবাব জবাবে বলে,

-“কিলারের সাথে জড়িত নয়তো?”

-“আমারও তাই মনে হচ্ছে।এভাবেই এত সময় কেউ রেস্টুরেন্টে অবস্থান করেছে। সন্দেহজনক কাপড় পড়ে।আবার ম্যানেজারকে বেঁধে রেখেছে।খাবারে পয়জন মিশিয়েছে।এতগুলো কাজ করার জন্য ফ্রি স্পেস দরকার।” বললো রবিন।

মির্জা তাদের দুজনার আলাপনের মাঝে প্রশ্ন করে,

-“আর শেফ?সে খাবার তৈরি করে চলে গিয়েছিল।খাবার সার্ভ করেছে কে?”

রবিন জবাব দেয়,

-“অফিসার সাইফা বলেছে ম্যানেজারই নাকি খাবার সার্ভ করেছে।কারণ সেই সময় কোনো ওয়েটার ছিলো না।আর যেহেতু প্রফেসর রুবির টিচার অর্থাৎ বিশেষ সম্মানীয় তাই সে আরো বেশি কেয়ার দেখিয়েছে তাকে।সবাই চলে যাওয়ার পরও সেও প্রফেসরের জন্য কেনো বসে থাকবে বলুন?”

শাবাব বলে,

-“পয়জন মেশানোর জন্য অন্তত পনেরো মিনিটের মতন সময় প্রয়োজন হবে।কম বেশিও হতে পারে। কাজটা হয়তো রান্নার মধ্যে অথবা রান্নার শেষে করেছে।”

রবিনের মাথায় এলো ভিন্ন চিন্তা।সকলেই রুবি এবং ম্যানেজারকে নিয়ে পড়ে আছে।তার মধ্যে একজন উধাও আর একজন গতরাতের ঘটনায় ভুক্তভুগী।অথচ শেফ এর দিকে কেউ সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছেই না।হতে পারে সেই মিশিয়েছে বিষ।

রবিন চিন্তিত গলায় বললো,

-“এনি হাও এটা কি শেফ এর কাজ হতে পারেনা?যতদূর শুনলাম শেফ আর কিলার পুরুষ হবে।আর দুজনার দৈহিক বর্ণনা ম্যানেজার যতটুক দিয়েছে তাতে অলমোস্ট ৫০% মিল আছে।আমরা শেফকে হালকাভাবে নিচ্ছি।ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত।”

রবিন এর কথার তালে তাল মিলিয়ে ফোনে টাইপ করেছে শাবাব।রবিনের চোখ সেথায় গেলে স্পষ্ট দেখলো লেখাগুলো।সবটা পড়ার পূর্বেই শাবাব বললো,

-“আমি রেস্টুরেন্ট এর শেফকে খোঁজার জন্য বাকি টিমকে পাঠাচ্ছি।আপনি আর কিছু অ্যাড করবেন এস. আই রবিন?”

-“নাহ আপাদত এতটুকুই”

টুক করে মেসেজ সেন্ড করে দিলো শাবাব।রবিন অবাক হলো।কোন কাজের জন্য মানুষ নেই শাবাবের?একত্রিত এক শক্তি।এত বিশাল টিমের সকলকেই কাজে লাগিয়েছে। ইনফরমার হিসেবে আছে আরো কিছু মানুষ।তার মনে হলো জনশক্তির অভাব বোধহয় তাকে এখনও পিছিয়ে রেখেছে।

ঘন্টাখানেক পর আবির আসে। জানালো আরো কয়েক ঘন্টা অপেক্ষার প্রয়োজন।কিছুটা রিস্ক রয়েই গেছে। পয়জনের রিয়েকশন দেখা যাচ্ছে প্রফেসরের দেহে।ভবিষ্যতে কি হবে ডাক্তার কোনো আশ্বাস দিতে পারছে না।তাদের দেওয়া টেম্পোরারি চিকিৎসায় দশ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরও প্রফেসর বেঁচে আছে এটাই স্বস্তিদায়ক বিষয়।অপেক্ষা পছন্দ না হওয়া সত্বেও শাবাব কিছু বললো না। তারও কিছু করার নেই। রবিনকে নিয়ে চলে গেলো চারতলার ক্যাবিনে।আবার জিজ্ঞাসাবাদ করবে ম্যানেজারকে।

-“আমাদের প্রত্যেকটা কথার সঠিক উত্তর দিবে।প্রশ্ন আমরা তিনজনই করবো তোমাকে।” রেস্টুরেন্ট এর ম্যানেজার এর উদ্দেশ্যে বললো শাবাব।

ম্যানেজার মাথা দুলায়।বলে, -“জ্বি আচ্ছা”

শাবাব রবিনের দিকে চাইলো।চোখ দিয়ে ইঙ্গিত ছুঁড়ে।প্রশ্ন উত্তর শুরু করার জন্যে। রবিনকে আজ নিজ থেকে সূযোগ দেওয়ায় সেও হাতছাড়া করলো না। ম্যনেজার এর উদ্দেশ্যে বললো,

-“আমাকে বলো এই রেস্তোরাটা কবে ওপেন হয়েছে?”

-“সপ্তাহখানেক হবে স্যার।”

-“তোমার সাথে রুবির কি সম্পর্ক?তোমরা পূর্ব পরিচিত নাকি জব এর জন্য এপ্লাই করেছিলে।”

-“আমরা পূর্ব পরিচিত স্যার।আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে কাজ করতাম।সাথে পড়ালেখা।রুবি ম্যাডাম আমাকে খুব ভালোবাসতেন।একজন ছোট ভাই হিসেবে।আমার বাবা অসুস্থ।খরচ চালাতে হয়।বিকেলের পর ক্যান্টিনে অন্য লোকের ডিউটি থাকে।আমার অর্ধেক বেলা।ম্যাডাম বললেন বাকি সময় তার রেস্তোরায় ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতে।”

-“কিছু মনে না করলে বলতে পারো তোমার শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে?”

-“আমি অনেক কষ্টে কলেজ পাশ করেছি।”

দুজনার কথার মধ্যিখানে কয়েক সেকেন্ডের বিরতিতে শাবাব নিজের প্রশ্ন ছুড়লো।কাটকাট গলায় জানতে চাইলো,

-“তুমিতো কাজ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে।যেহেতু তোমাকে রুবি খুব পছন্দ করতো তাহলে তো তোমার জানার কথা প্রফেসরের সাথে রুবির কোনো ঝামেলা আছে কিনা?”

-“নিজের ব্যক্তিগত বিষয় কারো সাথে বলতেন না ম্যাডাম।তার কোনো বন্ধুও আমি কখনো দেখিনি।নিজের মতন থাকতেন।একা”

-“আচ্ছা আর কিছু জানো রুবি সম্পর্কে?তার পরিবার বা পড়ালেখা?”

-“না স্যার।শুধু জানি এই বছর ম্যাডামের মাস্টার্স শেষ”

-“আচ্ছা।” বলে শাবাবও থেমে যায়।

মির্জা এতোসময় চুপ ছিল।তার মনের মধ্যে চলছে বিভিন্ন প্রশ্ন।এর মাঝে অর্ধেকই রবিন আর শাবাব জিজ্ঞেস করে ফেলেছে।পালা বদলে মির্জার দিকে চাইলো দুজন। মির্জা কয়েকদফা চোখের পলক ফেলে সোজা হয়ে বসে।

প্রশ্ন করে,

-“তোমাকে যদি সময় দেই?তাহলে তুমি মনে করে বলতে পারবে?তোমাকে যখন বাঁধা হচ্ছিলো তখন সেই লোকের শরীরে,আচরণে কিছু ভিন্নতা লক্ষ করেছো?সময় নাও তুমি।ভেবে বলো।”

শাবাব ম্যানেজার এর দিকে একটি নোট প্যাড আর কলম এগিয়ে দিল।আর বললো,

-“যা ভাববে তাই এটাই লিখে রাখবে।একটা দাড়ি কমাও যেনো বাদ না যায়।আমি আমরা আবার আগামীকাল আসবো।”

পরপর শাবাব মুচকি হেসে আরেকবার বলে উঠে,

-“পালানোর চেষ্টা করবে না কিন্তু বাছা।তোমার চৌদ্দ গুষ্টির খবর আছে।সন্দেহের তালিকা থেকে তুমিও মুক্ত নও।মাটির নিচে গিয়ে পালালেও খুঁড়ে নিয়ে আসবো।তো সাবধান”

ম্যানেজার সামান্য ভীত হলো এরূপ ঠান্ডা হুমকিতে।শাবাব,রবিন আর মির্জা উঠে দাঁড়ালো।তাদের বাহিরের দিকটাও দেখতে হবে।অপেক্ষা প্রফেসরের জ্ঞান ফেরার। বুট জুতোর খটখট আওয়াজে বেরিয়ে আসে ক্যাবিন থেকে।

বাহিরে এসে শাবাব বললো,

-“এস. আই রবিন ঢাকা ব্যুরোতে কল করে জানুন রুবির কোনো খোঁজ পাওয়া গিয়েছে কিনা।আর আপনি সাইফার কাছে যান।”

মির্জার উদ্দেশ্যে বললো,

-“তুমি একটু খেয়াল রেখো এই ম্যানেজারকে।”

মির্জা শাবাবের কথার বিপরীতে প্রশ্ন করলো, -“আর তুমি?”

শাবাব দৃষ্টি নামিয়ে লম্বাটে গরম নিঃশ্বাস ফেললো।বললো,

-“কিছু কাজ আছে আমার”

__

-“কি করতে এসো এখানে?”

-“জানি না”

-“পরিবার ত্যাগ করে নিজের মন মতন চলেছো।সারা জীবন নিজের ইচ্ছেকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছো।নিজের সিদ্ধান্তের প্রতি আজকাল তোমায় বড্ড হতাশ মনে হয় শাবাব।”

জন্মদাতা পিতার মুখে এসব কথাগুলো শুনতে মোটেও ভালো লাগছে না।প্রতিবার এরকম প্রশ্ন করে।প্রতিবার জানতে চায় কেনো আসে বাড়ি?তার পরিবার এখানে থাকে।তার বাবা মা।তার কাছের জন।এখানে আসতে অনুমতি চাইতে হবে কেনো?

একরোখা মানুষ সে।শৈশব থেকেই।বদমেজাজ আর রাগ নাকের ডগায় লেগে থাকে সর্বক্ষণ। শাবাব জবাব দেয়,

-“আমি আমার সিদ্ধান্তের উপর হতাশ নয়।বরং আপনারা চেয়েছিলেন আপনাদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে।আমি কেনো সেই সিদ্ধান্ত সাদরে গ্রহণ করলাম না সেই নিয়ে আপনারা হতাশ।আমি নই”

লুৎফর বেইগ পরাভূত হন!ছেলেটা এমন কেনো এই একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছেন সেই কবে থেকে।এখনও জবাব মেলেনি।কিসের কমতি তার?টাকা?ভালোবাসা?নেইতো কোনো অভাব।তারপরও!

-“এই তোমার আক্রোশের কারণ?যে নিজের বাবার পদবীটা অব্দি ব্যবহার করো না নামের সাথে।”

ভাবলেশহীন শাবাব। গাছে আবৃত বাগানের দিকে চোখ বুলায়।দু মাস আগে এসেছিলো।তখন নানান রঙের ফুল গাছগুলো এখানে ছিলো না।নতুন এসেছে।কে এনেছে সেটা বুঝতেও অসুবিধে হচ্ছে না তেমন।তারই জননী।রিনা বেগম।পেশায় ডাক্তার তিনি।এখনও নিয়োজিত আছেন মানুষের সেবায়।সামনে বসে থাকা পুরুষটি।যিনি সম্পর্কে শাবাবের বাবা হন সেও একজন রিটায়ার্ড ইঞ্জিনিয়ার।আজকাল ঘরে থাকেন।শেফ হওয়ার ভুত চেপেছে মাথায়।করেন টুকটাক কাজ।

-“উত্তর দিচ্ছ না যে?” লুৎফর বেইগ পুনরায় প্রশ্ন করেন।

-“শাবাব নামটা সুন্দরতো!আগে পিছে শব্দ যোগ করে কেনো নামের সৌন্দর্য নষ্ট করবো?”

শাবাবের সোজাসাপ্টা কথার বিপরীতে লুৎফর বেইগ বলে উঠেন,

– “এই নামটাও কিন্তু…”

থামিয়ে দেয় তাকে শাবাব।বলে,

-“প্লিজ সবকিছুর ক্রেডিট নিজে নিবেন না।আমার নাম রেখেছে শাম্মা আর দাদী দুজনে মিলে।এখন বলে নামটাও আপনার দেওয়া?”

থতমত খেয়ে উঠেন লুৎফর বেইগ।বারংবার চোখের পলক ফেলছেন।সে এটাই বলতে যাচ্ছিলেন নামটা সে রেখেছেন। তিনিতো আর জানতেন না এই ছেলের সবই মনে আছে।তার মা এবং বড় মেয়ে মিলে রেখেছিলো এই নাম।

-“এতদিন পর এসেছি।চা নাস্তার ব্যবস্থা করছেন না কেনো?আশ্চর্য্য!…আপনি না নতুন নতুন কুকিং শিখেছেন?”

-“তুমি আমার কথা শুনেছিলে যে আমি শুনবো?”

-“বৃদ্ধ বয়সে বাচ্চাদের মতন করছেন।”

-“মোটেও না শাবাব।তুমি বলো কেনো গেলে ওই সেক্টরে? লাইফের কত রিস্ক সেখানে জানো?তোমার ব্রেইন ভালো তুমি ডাক্তার হতে পারতে ইঞ্জিনিয়ার হতে পারতে?সব রেখে জীবন ঝুঁকি নিয়ে কেনো অপরাধ তদন্ত বিভাগের অংশ হতে হবে?”

-“যেখানে আমার মন টেনেছে সেখানে আমি আমার দেহকে টেনে নিয়ে গেছি। দ্যাটস ইট! চা দিবেন কিনা বলেন? হাতে সময় কম আমার”

দমে যাচ্ছেন ছেলের কাছে বারবার।এতটা রুক্ষ মেজাজেরতো সে নয়।তাহলে এই মেজাজ আসলো কোথা থেকে? জীনগত হতেই পারে না।এটা তার নিজস্ব আলাদা ব্যক্তিত্ব।নিজেই তৈরি করেছে। শাবাবকে বসিয়ে রেখে চা তৈরি করতে চলে গেলেন।ঠিক সেই সময় ফোন বাজে শাবাবের।এক পলক স্ক্রিনে চেয়ে রিসিভ করলো।

-“বল”

-“বাবাকে দেখতে গিয়েছিস?” মেয়েলী গলার স্বর আসে অন্য পাশ থেকে।

শাবাব ছোট্ট করে উত্তর দেয়, -“হুম”

-“ঠিক আছে তো?”

-“চা বানাতে পাঠিয়েছি”

শাবাবের এমন উত্তরে কপাল কুঁচকে এলো শাম্মার।প্রজেক্টের কাজে দেশের বাহিরে আছে আটমাস যাবৎ।পেশায় সেও একজন ইঞ্জিনিয়ার।

শাম্মা খানিকটা রাগী সুরে বলল,

-“বাবা অসুস্থ আর তুই তাকে দিয়ে চা বানাচ্ছিস?”

-“কিসের অসুস্থ? এতক্ষন সামনে তরতাজা বসে ছিলো”

-“ভেতরে ভেতরে অসুস্থ”

হেয়ালি করে শাবাব উত্তর দেয়,

-“অত মনের অসুখ আমার বোধগম্যতার বাহিরে।চোখে দেখা এভিডেন্স এর উপর বিশ্বাসী আমি।”

-“আহারে এস. আই শাবাব।এটা আপনার ব্যুরো না”

-“ফোনটা রাখ।মাথা গরম করিস না”

ব্যুরোতে এসেছে ঘণ্টাখানেক আগে।এসে নিজের আলাদা ক্যাবিনে কাটিয়েছে সময়।বাড়ি থেকে ঘুরে এসে হালকা অনুভব হচ্ছে।মন বোঝাতে চাইছে এই সস্তি শাবাবকে।বারেবারে।সে একে প্রাধান্য দিতে নারাজ। সস্তি নামক শব্দটাকেও দূরে ঠেলে দিলো।দরজার বাহির থেকে সকলকে কাজ করতে দেখে চলে গেলো ছাদে।আবার দেখবে আকাশ আর এই বিশাল শহরকে পালা বদলে।

বিচক্ষণ চক্ষু নিবদ্ধ হয়েছে নিচে।আর দু হাত রেলিংয়ে।উচু বিল্ডিং থেকে শহরকে দেখা যাচ্ছে যাচ্ছে ক্ষুদ্র।দ্রুত বেগে চলা গাড়িগুলো নিমিষেই উধাও হয়ে যাচ্ছে।মানুষের হাটা চলা ধীর গতির। পিঁপড়ার ন্যায় আকার তাদের।ঘণ্টা খানেক বিভ্রমের মতন চেয়ে রইলো শাবাব।এরই মাঝে কারো পায়ের আওয়াজ আচ করে পেছন থেকে।ঘুরে তাকায় নি শাবাব।একইভাবে দাঁড়িয়ে।

চোখের পলক ফেলে বললো, -“কি সমস্যা সাইফা?”

-“নিচে ডাকছে আপনাকে”

-“আসছি একটু পর”

-“মির্জা স্যার এখনই ডেকেছেন”

সাইফার গলার আওয়াজ তীক্ষ্ম মনে হলো শাবাবের।ফিরে চাইলো এবারে।তীর্যক দৃষ্টি তার রুষ্ট মুখের দিকে ছুঁড়ে।সময় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করলো ফুলে থাকা মুখটা।

পকেটে হাত গুঁজে বললো, -“আমি কি তোমার প্রেমিক হই?”

মুখ তুলে গোলগোল চোখে চায় সাইফা। আগামাথাহীন প্রশ্নে কিংকর্তব্যিমূঢ়। চটপট করে বললো,

-“এগুলো কেমন কথা স্যার?আপনি আমার প্রেমিক হতে যাবেন কেনো?”

-“তাহলে কথার এত তেজ কেনো?অভিমানী প্রেমিকার মতন মুখ ফুলিয়ে আছো কেনো?”

-“মানুষ আমি।কষ্ট হয় আমার।খারাপ লাগে।আর সেই কষ্ট পাওয়ার জন্য প্রেমিক প্রেমিকা হতে হয়না।ক্ষমা করবেন আমায়।যদি মনে হয়ে থাকে আপনার সাথে আমি ঝাঁঝালো সুরে কথা বলেছি” চরম সাহসিকতা দেখিয়ে শাবাবকে চমকে দেয় সাইফা তার কথায়।

চলবে…