ইচ্ছে কথন পর্ব-০৯

0
640

#ইচ্ছে_কথন
#writer_falak_moni
#পর্ব_৯

9.

প্রিয়র হাতটা তরু শক্ত করে ধরে দাড়িয়ে আছে বারান্দায়।যেন এ হাত ছুটে না যায়। প্রিয় হাতটা ধরে তরু মনের ভেতর এক প্রকার শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সেটা কিসের শক্তি সেটা বোঝা বড়ই দায়। তরু এভাবে প্রিয়র হাত চেপে রেখেছে দেখে প্রিয় বলতে লাগলো,

তরু এখন যদি তুই আমাকে প্রশ্ন করিস যে তকে নিয়ে আমার অনুভূতি ঠিক কত পারসেন। তার উত্তরে আমি জবাব দেব, ০%। তাই বলছি এভাবে হুটহাট কিস করা। হাত ধরা এগুলো থেকে বিরত থাক। কারন তর প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই আপাতত।তর প্রতি কেন পৃথিবীর কোনো মেয়ের প্রতিই আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। সো বি কেয়ার ফুল। নেক্সটাইম এসব থেকে দূরে দূরে থাকবি।

প্রিয় কথাগুলো বলার সাথে সাথেই তরু৷ হাতটা ছেড়ে দেয়। না চাইতেও কেন যে চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়তে লাগে। হয়তো চোখের কোনে বেশি পানির জমাটবদ্ধতা হয়ে আছে। যা এটুকু একটা কথায় বলায় প্রতিস্থাপন হয়ে পড়তে লাগলো। তবে লোকটা কি বুঝে না তার এমন বিচলিত হওয়া কথাগুলোতে বড্ড কষ্ট পায় যে মেয়েটা। তরু হাতটা ছেড়ে দিয়ে কান্না মুখে একটা মৃদু হাসি দিয়ে বলতে লাগলো,

আচ্ছা প্রিয় ভাইয়া আমার দোষটা কোথায় একটু বলতে পারবে । যার কারনে আমি এমন শান্তি নামক শাস্তি পাচ্ছি। যেই শান্তিতে রয়েছে হাজারো তীব্র যন্ত্রণার নির্যাজ। আমার মা তো বলে যায়নি। আমাকে বিয়ে করে আমার দায়িত্বের ভার নিতে। মানছি মা তোমাকে কিডনি দিয়ে বাঁচিয়েছে। সেটা হয়তো মানবতার খাতিরে। কিন্তু আমার জীবনটাকে তো এভাবে নরপিশাচরা কর্নপাতের মতো করে রাখতে বলে নি। আমি কেন ঝুলে আছি তোমাদের এই সম্পর্কের মাঝ দেয়াল হয়ে। এতই যখন নাতাশা আপুকে ভালোবাসতে তাহলে আমাকে কেন বিয়ে করেছিলে। আমাকে তো এতিম খানায় দিয়ে আসলেও পারতে। আমি তো তোমাদের রক্তের কেউ না। আমি বড় হওয়ার জন্য ঐটাই যথেষ্ট ছিল।

কথাটা বলার সাথে সাথেই প্রিয় জোরে একটা থাপ্পর দিল তরুর গালে। তরু গালে হাত দিয়ে নিশ্চুপ হয়ে আছে। প্রিয় এবার বলতে লাগলো,

মুক্তি চাস আমার থেকে এটা বল্লেই তো পারিস। এত কাহিনী বলার কি দরকার।

তরু হাতটা গাল থেকে নামিয়ে প্রিয়র দিকে রাগী মোড নিয়ে তাকিয়ে বলতে লাগলো,

মিষ্টার প্রিয় চৌধুরি মুক্তি আমি কখনো তোমার থেকে চাইনি। আর চাইবো না। তবে আমার ধৈর্য্য কম। আজ তোমাকে একটা কথা বলে রাখলাম। তরু আর কখনো তোমাকে নিজ থেকে ছুতে যাবে না। যতদিন না তুমি আসছো। তবে দেখবে তুমি বেশিদিন আমার থেকে দূরে থাকতে পারবেনা।। ইট’স মাই চ্যালেঞ্জ।

বলেই তরু কান্না করতে করতে চলে গেল রুমের ভেতর।

প্রিয় তরুর গালে থাপ্পর দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু এখন সে নিজেই আফসোস করছে।নিজের কাছেই নিজেকে অপরাধ হিসেবে শাস্তি দিতে মন চাচ্ছে। সত্যিই তো মেয়েটার তো কোনো দোষ নেই।তাহলে অহেতুক কেন তাকে মারতে গেলাম এসব ভেবেই রুমের ভেতর গিয়ে দিয়াশলাই দিয়ে মোমের ভেতর আগুন জ্বালায়।তারপর সেই হাত মোমের উপর রেখে বিবেকের প্রায়শ্চিত্ত করে।

__________

নাতাশা বিছানা ঠিক করছে। রাত ১২টা বাজতে চলল।এখন ঘুমানোর দরকার সেটা ভেবেই নাতাশা বিছানা ঠিক করতে ব্যস্ত। একদিকে বিছানা ঝাড়ছে অন্য চোখ দিয়ে কল্পের দিকে তাকাচ্ছে একটু পরপর। কারন কল্পের হাব ভাবটা তার কাছে একটু সন্দেহজনক লাগছে। নাতামা বিছানা করা প্রায় শেষ বালিশ ঠিক করতেই কল্প ল্যাপটপটাকে রকিং চেয়ারে রেখে।ধপাস করে শুয়ে পড়লো কাথা নাকে মুখে মুরি দিয়ে। নাতাশা এতক্ষণ যেটা সন্দেহ করেছিলো সেটাই তাহলে ঠিক। নাতাশা কর্কট গলায় ঝাড়ু হাতে নিয়ে বলতে লাগলো,,

কল্প দুপুরের জেদটাও কিন্তু এখনো ঢালিনি তোমার উপর। তাই ভালোয় ভালোয় বলছি এখান থেকে উঠো নয়তো এই ঝাড়ু দিয়ে তোমার তেরটা বাজাবো। বলেছিলাম না দুপুরে যে তেরটা বাজবো এখনই তার প্রতিফলন দেখাচ্ছি।

কে শুনে কার কথা কল্প নাক টানতে ব্যস্ত। নাতাশার এবার রাগ উঠতে লাগলো। তাই বিছানার উপর বসে এক কামড় বসালো কল্পের মুখের মুখের উপর। কল্প এখনো কোনো রিয়েক্ট দিচ্ছে না। সে এখনো নাক টানছে। নাতাশা নিজে নিজেই বলতে লাগলো,

এটা কি কোনো মানুষ নাকি এলিয়েন। এত জোরে কামড় দিলাম। এখনো ঘুমাচ্ছে। কিভাবে সম্ভব।

বলেই নাতাশা কোল বালিশ বের করলো। তারপর মাঝখানে বাংলাদেশ পাকিস্তান বর্ডার বানিয়ে শুয়ে পড়লো কল্পকে তার কাথা দিয়ে। কিছুক্ষন পর কল্প পরিবেশটা নিরিবিলি কিনা দেখার জন্য মাথা থেকে কাথাটা নামালো।এতক্ষণ যাবতো কল্প ঘুমানোর এক্টিং করে গিয়েছিলো। যদি তেমনটা না করতো তাহলে তাকে সোফায় নয়তো ফ্লোরে শুতে হতো। কল্প উঠে দেখতে পেল নাতাশা ঘুমিয়ে গেছে। তাই সে আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালো। আয়নার সামনে গিয়ে নিজের মুখ দেখে নিজেই লজ্জা পাচ্ছে। কারন নাতাশা ভুলবশত কল্পের ঠোঁটের উপর কামড় দিয়েছে যার জন্য ঠোঁট কেটে রক্ত বের হচ্ছে।

দেখতে দেখতে ১২ তারিখ চলে আসলো। এই কয়টা দিন তরু প্রিয়র সামনে গেলেও তার সাথে কোনো কথা বলে নি। প্রিয়ও প্রয়োজন মনে করে নি। নাতাশা সেটা বুঝতে পেরেছে। তাই সে নিজের ব্যাগপত্র রেড়ি করে প্রিয়র রুমে গেল। গিয়ে দেখতে পেল প্রিয় ব্যাগ পত্র প্যাকিং করছে। নাতাশা দরজায় দাড়িয়ে বলতে লাগলো,

আসবো প্রিয়?

প্রিয় নাতাশার দিকে কিছুক্ষণ তাকালো। তারপর নিচের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,

হুম আসো,

নাতাশা এবার প্রিয়র কাছে এসে বলল,

সম্পর্কে তুমি আমার বাসুর হও। তোমাকে কথাগুলো বলা ঠিক না। তবে তবুও বলছি ,

তরুর সাথে তোমার কি ঝামেলা হয়েছে??
প্রিয় কিছুই বলল না।

নাতাশা আবারো একই প্রশ্ন প্রিয়কে বলল প্রিয় এবার বলতে লাগলো,

তরুর বাচ্চা মেয়ে। এত আবেগ এত অনুভূতি আমার সামনে উপস্থিত করে যেগুলো দেখলে আমার রাগ হয়।

নাতাশা প্রিয়র কথা শুনে হাসতে হাসতে বলতে লাগলো,

প্রিয় তুমি ওর স্বামী। তাহলে সে তোমার কাছে তার অনুভূতি প্রকাশ করবে না তো কার কাছে করবে।

প্রিয় কিছুক্ষণ স্থির হয়ে রইলো।সত্যিই তো তেমন ভাবে কিছু ভেবে দেখেনি। তবে এটা ঠিক ৩০বছর বয়সের একটা ছেলেকে ১৮বছ বয়সের একটা মেয়ের স্বামী ভাবতে প্রিয় আনইজি ফিল করে। কিন্তু তা ছাড়া তো উপায়ও নেই।একটা উপায় আছে সেটা হলো ডিভোর্স। কিন্তু তরু তাকে সাফ সাফ বলে দিয়েছে বিয়ে জীবনে একবারই হয়। ঐটুকু বয়সে যদি মেয়েটা বিয়ে নিয়ে এতটা সিরিয়াস হতে পারে তাহলে এখন তো আরো বেশি।যদিও প্রিয় এখন ডিভোর্স নিয়ে কিছু বলতে যায় তাহলে মেয়েটার চোখে তার জন্য কাপুরুষের চেয়ে আর বেশি কিছু ভাববে না। নাতাশা প্রিয়র একটা হাত ধরে বলতে লাগলো,

তোমাকে আমি রিকোয়েস্ট করছি প্রিয়। তরুর চোখের এক ফোটা জল মাটিতে পড়তে দিও না। কারন মেয়েটা যে তোমাকে অনেক ভালোবাসে সেটার প্রমান তুমি না দেখলেও আমি দেখেছি ।

#চলবে