ইচ্ছে কথন পর্ব-০৮

0
646

#ইচ্ছে_কথন
#writer_falak_moni
#পর্ব_৮

৮.

সকালে প্রিয় নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। আজ শরীরটা বেশি ভালো লাগছে না। তাই ফজরের নামায পড়তেও ওঠেনি সে। ভীষণ ক্লান্তহীন হয়ে শুয়ে আছে বিছানার উপর। সকাল নয়টা বাজতে চলল,তরু সবার জন্য সকালের ব্রেকফাস্ট রেড়ি করে টেবিলের উপর সাজিয়ে রেখেছে। নাতাশা আর কল্প আজ শপিংমল যাবে। আজ ফ্রাইডে কল্পের ছুটির দিন। তাই তারা আগে আগে ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়ে। আফজাল চৌধুরি তার বোন আফিয়া বেগমের বাসায় যাবে। কেননা আজ অনেক দিন হতে চলল বোনটাকে একটু চোখের দেখার জন্য সুভা পাচ্ছে না। বয়স তো অনেক হলো,ওনার সব কিছুর ভার প্রিয়কে দিয়ে তিনি এবার একটু বিশ্রাম নিতে চায়। একে একে সবাই ব্রেকফাস্ট করে নেয়।তরু আর প্রিয় বাদে। তরু সবাইকে খাবার খাইয়ে সবার শেষে খায়।কিন্তু আজ প্রিয়কে দেখছে না। যদি প্রিয় আসতো তাহলে এক সাথেই খেতে বসতো। সবাই খাওয়া দাওয়া করে বেরিয়ে যাওয়ার পর। তরু প্রিয়কে দেখার জন্য তার রুমের দিকে যেতে লাগলো।তখনই তরুর ফোন বেজে উঠলো,

ফোনের স্কিনে দেখতে পেল তার বান্ধবী নীলিমার কল। তাই সাথে সাথেই তরু ফোন রিসিভ করলো,

হ্যা নীলিমা বল?

কেমন আছিস তরু?

হুম ভালো, তুই কেমন আছিস?

এই তো ভালো। তকে একটা গুড নিউজ দেব বলে ফোন করেছি,

হুম বল,

ফোনে বলা যাবে না কলেজে আসলে বলব।

আচ্ছা ঠিক আছে।

রাখি

ওকে আল্লাহ হাফেজ।

তরু নীলিমার সাথে কথা বলে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখতে পেল। সাড়ে নয়টা বাজে। তাই প্রিয়র রুমের দিকে না গিয়ে তাড়াতাড়ি করে রেড়ি হয়ে নিল কলেজে যাবে বলে।কিন্তু কি মনে করে যেন আবারও প্রিয়র রুমের সামনে এসে দাড়ালো। দাড়িয়ে দেখতে পেল প্রিয় এখনো ঘুমাচ্ছে। তরু আরেকটু সামনে গিয়ে একটা টোল টেনে গালে হাত দিয়ে বসে পড়লো।বসে বসে প্রিয়র ফেইজ দেখে যাচ্ছে। আহা কি প্রাসান্তরিত সেই হাসি যা ঠোঁটের কোনে ফুটে আছে। ঘুমন্ত অবস্থা লোকটাকে তো বেশ লাগছে। এটা বলেই তরু ওঠে প্রিয়র কপালে ওঠে একটা চুমু দিল।

চুমু দিতেই সাথে সাথে ঠোঁট তুলে নিয়ে আসলো। কারন প্রিয়র কপাল অগ্নিক্ষণের মতো গরম হয়ে আছে। তরু সাথে সাথে ওঠে জলপট্টি দেওয়ার ব্যবস্থা করলো। তরু অনেকক্ষন যাবতো বসে বসে জলপট্টি দিতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ প্রিয়র ফোন বেজে উঠলো। ফোন বাজতেই প্রিয় চোখ খুলে বড় সড় ধাক্কা খেল তরুকে দেখে। তরু এখনো সেদিকে ব্রুুক্ষেপ করে নি। তরু নেবু ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট কালারের ড্রেস পড়ে আছে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে কলেজ ড্রেস। কিন্তু এই বেসে এই রুমে তার দিকে এভাবে ঝুঁকে আছে কেন। সেটাই বুঝতে পারছেনা। চুলগুলো খোপা বেধে রাখা। স্কার্ট সরে যেতেই প্রিয় অভাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তরুর খোপার দিকে। এটা কি খোপা বেঁধেছে নাকি চুল পেচিয়ে রেখেছে ক্লিপ সেফটিপিন দিয়ে বুঝতে পারছে না। হঠাৎ কপালে ঠান্ডা কিছু অনুভব করলো।প্রিয়র বুঝতে আর বাকি নেই যে তরু তার মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে। প্রিয়র ফোন আবারো বাজতে লাগলো। তরু দেখতে পেল প্রিয় তার দিকে তাকিয়ে আছে। তরুর ভীষন লজ্জা লজ্জা লাগছে। এভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে। তরু প্রিয়র ফোনটা বালিশের নিচ থেকে এনে প্রিয় সামনে ধরলো তাকিয়ে দেখতে পেল।সিধু কল দিয়েছে। সিধু হলো প্রিয়র বেষ্ট ফ্রেন্ড। যাকে সে তার জীবনের সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ অবদান দিয়ে রাখে।

প্রিয় কলটা রিসিভ করলো।তরু তখন জলপট্টি রেখে ওঠে যেতে নেয়। প্রিয় এক হাত দিয়ে তরুর হাতটা ধরে ফেলে।তারপর প্রিয় ফোনে সিধুর সাথে কথা বলতে লাগে,

কেমন আছিস সিধু?

হুম ভালো, তর কি অবস্থা?

হুম এইতো ভালো আছি।

শুনলাম তুই নাকি দেশে ফিরেছিস?

হুম,

তাহলে ভাবি কেমন আছে?

প্রিয় তরুর দিকে তাকালো , তারপর একটা হাসি দিয়ে বলল,

হুম ভালো,

আচ্ছা শুন তকে একটা কথা বলি। আগামী ১২তারিখ আমরা পিকনিক যাব। আমি, আকাশ, নীলিমা , সাথী। ভাবিছি বরিশাল টু কয়াকাটা যাব । তুই ভাবি আর কল্পকে নিয়ে আসবি । আর সাথে হানিমুনটাও সেরে ফেলবি।

আরে গাদা রাম। কল্প তো বিয়ে করে ফেলছে তাকে কি করে নিয়ে যাব।

তাহলে তো আরো ভালো। কল্পের বৌকেসহ নিয়ে আসবি।

আচ্ছা দেখা যাক।
দেখা যাক না তোদের কিন্তু আসতেই হবে। বলেই ফোন কেটে দিল।

প্রিয় এখনো তরুর হাতটা ধরে আছে। তরু ছাড়ার জন্য আপ্পায়ন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু লাভ হচ্ছে না। প্রিয় ফোনটা বিছানার উপর রেখে তরুর দিকে তাকিয়ে রইলো। এই মেয়েটার প্রতি সে এতটা নার্ভাস হচ্ছে কেন। প্রিয় তরুর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,

তরু যা করেছিস ভালো করিস নি । নেক্সটাইম আর এমন করবি না। তুই হয়তো ভেবেছিস আমি কিছু বুঝতে পারিনি। আমি সব কিছুই অনুভব করতে পেরেছি। বাট মুখে সেটা প্রকাশ করতে পারছি না। আমি কিন্তু এতটাও ভালো লোক নয়।

তর প্রিয়র চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। তাহলে কি প্রিয় তার চুমু দেওয়ার ব্যপারটাকে ধরে ফেলেছে। কিন্তু কিভাবে সে তো ঘুমিয়ে ছিল। তরু এসব ভেবে কাপতে লাগলো, প্রিয়র হাতটা এক জাটকা নিধন করে দৌড়ে বের হয়ে গেল রুম থেকে। তারপর নিজের রুমের ভেরর গিয়ে দরজা লক করে। হাপাতে লাগলো বুকের উপর হাত রেখে।

কি হলো এটা। এমন অস্থিরতা মনস্তাপ জুড়িয়ে যাচ্ছে কেন। যেখানে নিঃস্বার্থভাবে বিতরিত হয়ে যাচ্ছে হৃদয়ক্ষরন। এক অচাল্য ঢেউ বয়ে যাচ্ছে হৃৎস্পন্দনের আনাচে কানাচে।

প্রিয় রুমের ভেতর বসে বসে হাসতে লাগলো। তরুর কথা মনে করে। আসলেই মেয়েটা এখনো বাচ্চাই রয়ে গেল। দুদিন পর এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়ে ভার্সিটিতে উত্তীর্ণ হবে। এখনো বাচ্চা বাচ্চা সভাবটাই গেল না। মেয়েটা কি এটা বুঝতে পারলো না। যে তার ঐ ঠান্ডা নরম কোমল ঠোঁটের স্পর্শে ঘুম থেকে উঠে যাওয়াটা কোনো অস্বাভাবিক কিছু না। তবে যখন তাকে হাতে নাতে ধরেছি তখন ফেইসটা দেখার মতো ছিল। এসব ভেবেই প্রিয় হাসতে লাগলো।

__________________

দুপুরে কল্প আর নাতাশা বাড়ি ফিড়লো। আজ অনেক জানিং হয়ে গেছে। ক্লান্ততা ভরপুর দিচ্ছে সারা শরীর। নাতাশা ব্যাগগুলো বিছানার উপর দুম করে ফেলে ওয়াস রুমে চলে গেল শাওয়ার নিতে। এদিকে কল্প এমন এলোমেলো থাকাটা একদম পছন্দ করে না। তাই সে বিছানা থেকে সব তুলে নিয়ে কাবার্ডের ভেতর ভাজে ভাজে রেখে দিল। ১০মিনিট পর নাতাশা শাওয়ার নিয়ে বাহির হলো। নাতাশার দিকে কল্প তার দৃষ্টিভঙ্গি রেখে এক গভীরতার চাহনিতে নিক্ষেপ করে রইলো,

নাতাশা ব্লাক কালার একটা জর্জেট শাড়ি পরে চুল মুছতে মুছতে বের হচ্ছে ওয়াস রুম থেকে। কল্প নাতাশার কাছে গিয়ে দাড়িয়ে বলতে লাগলো,

নাতাশা একটা কথা বলি?

নাতাশা মুখ বাকিয়ে বলতে লাগলো,

তোমাকে কি নিষেধ করছি নাকি।

কল্প নাতাশার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,

শুনেছি মেয়েদেরকে নাকি ভেজা কোনো অপসরী চেয়ে কম লাগে না। ছেলেরা নাকি ফিদা হয়ে যায়।কিন্তু আমার কাছে তোমাকে এখন কি লাগছে জানো,

নাতাশা একটু আগ্রহী হয়ে কল্পের পাশে এসে বসলো তারপর গালে হাত দিয়ে বলতে লাগলো,

কি বলো বলো,,

হট। এটা বলেই কল্প দিল দৌড়। নাতাশা রেগে ফুসে একাকার হয়ে বলতে লাগলো,

ফাজিল কোথাকার। আসিও রুমে তোমার তেরটা না বাজাচ্ছি। তাহলে আমার নামও নাতাশা না।

রাতে সবাই ডিনার করে আফজাল চৌধুরির কক্ষে বসে আছে। কারন প্রিয় সবাইকে ডেকেছে। পিকনিকের ব্যপারে সমালোচনা করার জন্য। বিশেষ কোনো মতামতের সিদ্ধান্ত তারা বাবার রুমের ভের বসেই ঠান্ডা মাথায় আলোচনা করেন।

প্রিয়ই প্রথম মুখ খুলে বলতে লাগে,

কল্প সিদ্ধার্থ ফোন করে পিকনিকের কথা বলেছিল। তুই তর ওয়াইফ আমি তরু সবাইকে যেতে। এখন তর মতামতটা কি। পারবি তো হসপিটাল থেকে কিছুদিনের ছুটি নিতে।

কল্প কিছু বলার আগেই তরু আর নাতাশা মিলে ইয়ে হিপ হিপ হুররে বলে চিৎকার করে উঠলো। কল্প কিছু বলার ভাষা আর নাই।বৌ বলে কথা বেশি কিছু করতে গেলে। খাটে জায়গা দিবে না এটা ভেবেই বলতে লাগলো,

৩দিনের নিতে পারবো।

প্রিয় আর কি বা বলবে তাই সেও মাথা নাড়ালো।এখন সমস্যা আফজাল চৌধুরিকে নিয়ে ওনাকে কি বাড়িতে একা একা রেখে যাওয়া ঠিক হবে নাকি। তাই সিদ্ধান্ত নেয় যে ওনি ওনার বোনের বাড়িতে যেহেতু গিয়েছে তাই সেখানেই থেকে যেত কয়টা দিন। আর দুদিন পরই তো রার তারিখ।

আজ আকাশটা ঘন কালো হয়ে আছে। হয়তো বৃষ্টি নামবে একটু পর। হালকা হালকা ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে আনাচে কানাচে। আবহাওয়ারটা বেশ ফুরফুরে বলে মনে হচ্ছে। বিদ্যুৎ চমকানোর আবাশও কিছুটা দেখতে পাচ্ছে প্রিয়। কেন যে অতিতগুলো আজ বড্ড মনে পড়ছে। নাতাশাকে ভাইয়ের পাশে দেখে জেলাস নয় বরং ভালোই লাগছে তার। কারন কল্পের মতো একজন সৎ ভালো লোকের কাছে নাতাশার ভার দিতে পেরেছে এর চেয়ে আনন্দ আর কি হতে পারে। এ কথাগুলো ভেবেই প্রিয় সেদিন কোনো কথা বলে নি বাবার উপর ডিফেন্স করে সব মেনে নিয়েছে। তবে কেন আজ এমন লাগছে তার। নাতাশারও কি এমন লাগছে নাকি সে কল্প কে পেয়ে সব অতীত মুছে ফেলেছে। এসব ভেবেই প্রিয় আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

খুব মনে পড়ছে। নাতাশার পাগলামি গুলো। রাত ১০বাজে বায়না ধরতো আইসক্রিম পার্লারে নিয়ে যেতে। ফুচকা খাওয়াতে। এটা সেটা কত কি বায়না। না এনে দিলে বলতো। যখন হারিয়ে যাব তখন বুঝবে। সত্যিই আজ মানুষটা হারিয়ে গেল শুধু তার জীবন থেকে কিন্তু স্মৃতিগুলো এখনো গেঁথে আছে মনের এক গহিন কোনে। প্রিয় এসব ভাবতে ভাবতেই পেছনে কারো হাতের স্পর্শ পেল।তাকিয়ে দেখতে পেল তরু দাড়িয়ে আছে। মেয়েটা এমন কেন মন খারাপের সময় তার কথা না ভাবতেই সে এসে হাজির।

তরু প্রিয়র কাঁধে হাত রেখে বলতে লাগলো,

সোনা আপুর কথা মনে পড়ছে তাই না?

প্রিয় কিছুই বললনা। যেখানে মেয়েটা জেলাস ফিল করার কথা সেখানে কিনা তার এক্সকে মনে করিয়ে দুঃখজনক শান্তনা দিতে আসছে এই মেয়ে। মেয়েটার কি আমার অতীত জেনে একটুও খারাপ লাগছে না। এসব মনে মনে ভাবলো প্রিয়।

তরু আবারো বলতে লাগলো,

একটা কথা কি জানেন তো। সোনা আপু আমার কাছে ঠিক আমার মায়ের মতো। মায়ের পর যদি কেউ আমাকে মায়ের মতো বুঝে থাকে সেটা সোনা আপু।তবে ওনাকেই আমি ওনার জীবনের সব চেয়ে বড় কষ্টটা দিলাম।।

#চলবেে