ইষ্ক ইবাদাত পর্ব-১১+১২

0
6939

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_১১

লিভিং রুমে এর সোফায় লাইন দিয়ে বসে আছে তাসনীম দেওয়ান লেখা শাহীন রেয়ান্স ও রেয়ান্স এর দাদু। আর তার সামনে বসে আছে উকিল ও কাজী সাহেব। আর ওদের সামনে ল্যাপটপ স্ক্রিন ভিডিও কলে আছেন মিস্টার তামিম দেওয়ান তাসনীম দেওয়ান এর হাজবেন্ট। ওখানে থাকা সবাই অপেক্ষা করে বসে তোড়ার। যে এখন ও এখানে উপস্থিত হতে পারে নি। তাই সবাই বসে আছে রেয়ান্স অধীর আগ্রহে দৃষ্টি সিঁড়ির দিকে করে বসে আছে।

সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তোড়া নেমে আসে। রেয়ান্স তোড়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তোড়া কে দেখার জন্য তার মন আর চোখ দুটো ছটফট করছিলো আর এখন তাকে চোখের সামনে দেখে যেনো তার মন ও চোখ দুটো জড়িয়ে যাচ্ছে। হৃদয়ে আলাদা একটা শান্তি অনুভব করে। ওখানে থাকা বাকিরা ও তোড়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তোড়া এসে রেয়ান্স এর পাশে বসতেই রেয়ান্স এর হার্ট যেনো দ্বিগুণ গতিতে ছুটতে থাকে কোনা চোখে রেয়ান্স তোড়ার দিকে দেখছে মুগ্ধ দৃষ্টিতে । তোড়া গায়ে না আছে কোনো ভারী ড্রেস না শাড়ি আর না বিয়ের ড্রেস। তার পরে ও রেয়ান্স তোড়া মুগ্ধ ভাবে দেখে যাচ্ছে।

পরিস্থিতি এখন গোলমেলে হয়ে আছে। রেয়ান্স তোড়া কে ভালোবাসলে ও তোড়া তো রেয়ান্স কে ভালোবাসে না। আর এই বিয়েটা ও হুট করে ঠিক হয়েছে। আর তার আগে তোড়া এটা ও বলে দিয়েছে সিম্পল ভাবে বিয়ে হবে তাই কোনো রকম কোনও আয়োজন নেই বলতে গেলে একদম নিরামিষ বিয়ে হচ্ছে। তোড়ার পরনে আছে ব্ল্যাক জিন্স ও ব্ল্যাক অফ সোল্ডার টপ । চুল গুলো হাই পনিটৈইল করে রাখা আছে। মুখে কোনো প্রসাধনির ছোঁয়া নেই। চোখে গাড়ো করে কাজল দেয়া আর ঠোঁটে লাইট পিঙ্ক লিপগ্লস দেয়া আছে যার দরুন ঠোঁট টা হালকা চিক চিক করছে। ব্যাস এত টুকু বিয়ের কোণে রেডি হয়েছে। রেয়ান্স ও ব্ল্যাক কম্পিলিট স্যুট পরেছে সব সময়ের মতো তাকে আজকে ও বেশ আকর্ষণীয় লাগছে এক কথায় চকলেট বয় লাগছে।

তোড়া এসে বসতেই উকিল তার রেডি করা পেপার্স এগিয়ে দেয় রেয়ান্স ও তোড়ার দিকে। রেয়ান্স একবার তোড়ার দিকে তাকায় যে এখন সামনের দিকে তাকিয়ে আছে তার মুখে এখন কোনো এক্সপ্রেশন লক্ষ করা যাচ্ছে পুরোটাই যেনো একদম সাদা হয়ে আছে। রেয়ান্স তোড়ার থেকে মুখ সরিয়ে সাইন করতে থাকে। এতক্ষণ সবাই উন্মুখ হয়ে বসেছিল তাদের এই বিয়ের জন্য আর রেয়ান্স এর দাদু তো বেজায় খুশি তার নাতি অন্তত বিয়ে তো করছে সেটা সিম্পল হোক আর জাঁকজমক হোক। তার কাছে এখন বিয়ে টা আসল পরে না হয় জাঁকজমক করা যাবে। তাসনীম দেওয়ান ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে তোড়া ও রেয়ান্স এর দিকে। তার ঠোঁটে হাসি থাকলে কি হবে চোখের কোণে রয়েছে পানি। এই অশ্রু দুঃখ কষ্টের নয়। এই অশ্রু কনা খুশির সমস্ত দুঃখ কষ্ট ভুলিয়ে সুখের রাজ্যে পাড়ি দেয়ার খুশি। এই দুজন তার ভালোবাসার কনা একটা মেয়ে ও আরেকটা ছেলে হ্যাঁ ছেলে তো কারণ রেয়ান্স কে তো সেই কোলে পিঠে মানুষ করেছে তার বাবা মা মারা যাওয়ার পর তো সেই একমাত্র তাকে দেখাশোনা করেছে। তাহলে ছেলে নয়তো কি। আর তার নিজের মেয়ে হারিয়ে পাঁচ বছর আগে এই মেয়েটা কে তিনি পেয়েছেন যাকে সে নিজের মেয়ে করে নিয়েছে যার সাথে জুড়ে আছে তার সুখ দুঃখ। মেয়েটা ছোটো থেকে এতদিন শুধু কষ্ট পেয়েছে। আজ থেকে তার সুখের দিন শুরু হতে চলেছে তিনি জানেন তোড়া রেয়ান্স কে না ভালোবাসলে তোড়া কে রেয়ান্স ভালোবাসে। আর তিনি এটাও জানেন তার তোড়া কে ভালোবাসা দিয়ে রেয়ান্স আগলে রাখবে এখন তার মেয়ের কাছে এটা স্বাভাবিক না হলেও কিছুদিন পর এটাই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তাই আজ এই শুভ দিনে তার চোখে পানি চলে এসেছে।

লেখা তো বেজায় খুশি সে শুধু বসে বসে লাফিয়ে যাচ্ছে। আর ফোন নিয়ে রেয়ান্স ও তোড়ার ছবি তুলে যাচ্ছে এর মধ্যে তোড়ার স্থির দৃষ্টি ও সিরিয়াস মুখ তো অন্য দিকে রেয়ান্স এর হাসি খুশি মুখ। ল্যাপটপে ভিডিও কলে মিস্টার তামিম দেওয়ান ও মুখে হাসি নিয়ে দেখছে। তার মুখে ও লেগে রয়েছে তাসনীম দেওয়ান এর মত খুশির ছোঁয়া।

রেয়ান্স এর সাইন করা হয়ে গেলে পেপার্স টা তোড়ার দিকে এগিয়ে দেয়া হয়। তোড়া কোনো কথা না বলে পেপার্স এর দিকে তাকিয়ে থাকে। সে মাথা ঘুরিয়ে একবার তার মম এর দিকে তাকায় দেখে তার মম তার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে আছে। তোড়া চোখ ঘুরিয়ে পেপার্স এর দিকে তাকায় পাশের থেকে পেন তুলে নিয়ে পাশে থাকা সাইন এর দিকে দেখে যেখানে জ্বল জ্বল করছে নামটা “রেয়ান্স রাওয়াত” কিছু সেকেন্ড নামটা দেখে নেওয়ার পর সে নিজেই সই করতে নিজের নাম “তোড়া দেওয়ান” এই সই এর সাথে সাথে তারা আজ থেকে স্বামী স্ত্রী এর বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেলো। কিন্তু তার মধ্যে তেমন কোনো অনুভূতি কাজ করছে না। সে কি তাহলে নিঃপ্রান হয়ে গেছে। না আসলেই তার অনুভূতির দল গুলো কোনো কাজ করছে না সব গুলো ভোঁতা হয়ে গেছে। কাছের মানুষের থেকে আঘাত পাওয়ার পর থেকেই তার অনুভূতিরা তাকে ছেড়ে চলে গেছে।

-“আজ থেকে আপনারা হাজব্যান্ড ওয়াইফ।

উকিল এর বলা কথায় ঘোর কেটে যায় তোড়ার। সে সামনে তাকাতে দেখে সবাই তার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে আছে। তোড়া বুঝতে পারছে এখানে থাকা প্রতি টা মানুষ আজকে খুব খুশি হয়েছে। উকিল এর কাজ শেষ হতে কাজী বিয়ে পড়াতে শুরু করে। এবার সবাই দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। কবুল বলার সময় আসতেই কাজী রেয়ান্স এর দিকে তাকিয়ে কবুল বলতে বলে রেয়ান্স কিছুটা সময়ে নিয়ে হাসি মুখে বলে ওঠে।

-” কবুল।

-” এই কবুল বলার সাথে সাথে আজ থেকে আমি তোমার সমস্ত দায়িত্ব নিজের করে নিচ্ছি কথা দিচ্ছি তোমার জীবন থেকে সমস্ত দুঃখ কষ্ট ভুলিয়ে দেবো আমার ভালোবাসা দিয়ে। রেয়ান্স কবুল বলার পর মনে মনে বলে ওঠে।

-“কবুল।

-“কথা দিচ্ছি আমার শরীরে প্রাণ থাকা পর্যন্ত কখনো তোমার কোনো বিপদ আসতে দেবো না তার আগেই সব কিছু আমার ওপর নিয়ে নেবো। তোমার প্রতিটা কান্না হাসির সঙ্গী হব আমি তোমার জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত রঙিন করে দেবো আমার ভালোবাসার রং দিয়ে। আমার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আসতে দেবো না কখনো তোমাকে কষ্ট দেবো না সব সময়ে মুড়ে রাখব আমার ভালোবাসার চাদরে। আবারও রেয়ান্স মনে মনে বলে ওঠে।

-“কবুল।

-” এই শেষ কবুল বলার সাথে আজ থেকে আমরা একে অপরের সাথে জুড়ে গেলাম সারাজীবন আর এই সারাজীবন তোমার সাথে থাকতে তোমার পাশে থাকতে তোমার প্রতিটা পদক্ষেপের সাথে থাকতে চাই। তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনও কাজ করার জন্য জোর করব না। তোমার জীবনের সমস্ত ইচ্ছা স্বপ্ন গুলো পূরণ করতে চেষ্টা করব আমার সাধ্য অনুযায়ী। জীবনে চলার পথে তোমার সব কিছুকে নিজের করে নিতে চাই তোমার ভালোবাসার ভালোলাগা পছন্দের জিনিস গুলো আমি নিজের করে নেবো। আজকের পর থেকে প্রতি টা মুহূর্ত প্রতি তা সময়ে আমি তোমার মাঝে বিলীন হতে চাই। তোমাকে আমার ভালোবাসা দিয়ে আমাকে ভালোবাসতে শেখাবো। তার পর বয়স কাল পর্যন্ত রোম্যান্স করব। রেয়ান্স শেষের কথাটা বলার সময়ে হেসে ফেলে।

রেয়ান্স এর কবুল বলার সাথে সাথে এবার সবাই আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে তোড়ার দিকে। তোড়া চুপচাপ বসে আছে। রেয়ান্স ও তাকিয়ে আছে তোড়ার মুখের দিকে। এবার তোড়ার কবুল বলতে বললে সে চুপ করে বসে আছে। তোড়ার কাছে এই দিন এর অনুভূতি টাই আলাদা হওয়ার কথা ছিল কিন্তু পরিস্থিতি আজকে সব কিছু উল্টো পাল্টা করে দিয়েছে। তোড়ার বুকের মধ্যে যেনো কেমন ঢিপঢিপ শুরু হয়েছে সেটা সে বুঝতেই পারছে না। না কি বোঝার চেষ্টা করছে না সেটা সে জানে না। তোড়া কিছু সময় চুপ করে থেকেই বলে ওঠে।

-“কবুল… কবুল… কবুল। খানিকটা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ওঠে।

তোড়ার মুখের কবুল শুনে রেয়ান্স এর মুখের হাসি যেনো আরো খানিকটা বেড়ে গেছে। সবাই খুশিতে চিৎকার করে ওঠে। উকিল ও কাজী বিয়ে হয়ে যেতেই বেরিয়ে পড়ে। লেখা উঠে গিয়ে দুটো মালা নিয়ে আসে একটা তোড়ার হাতে ও একটা রেয়ান্স এর হাতে ও একটা তোড়ার হতে ধরিয়ে দেয়। তোড়া রেয়ান্স একে ওপরের সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আছে রেয়ান্স হাত বাড়িয়ে তোড়ার গলায় মালা টা পরিয়ে দেয়। তোড়া হাত এগিয়ে রেয়ান্স এর গলায় মালা টা পরিয়ে দিয়ে মাথা উঁচু করে তাকায় রেয়ান্স এর দিকে। এতক্ষণ যাবৎ তোড়া রেয়ান্স এর মুখের দিকে তাকায়নি কিন্তু এবার রেয়ান্স এর মুখের দিকে তাকায় তোড়া। দেখে তার মুখের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে হালকা পিঙ্ক ঠোঁটের কোণে লেগে আছে আলতো হাসি চোখ দুটো থেকে ও যেনো খুশির ঝলক দেখা যাচ্ছে। ট্রিম করা দাড়ি গালে তিল আর ওই মায়াবী চোখ। তোড়ার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক সুদর্শন পুরুষ দেখতে কোনো রাজার থেকে কম নয়। তোড়া এতদিন রেয়ান্স কে ভালোভাবে লক্ষ করেনি আজ দেখতেই বুঝতে পারছে যে ছেলেটা এক কথায় চকলেট বয়।

রেয়ান্স তোড়ার তাকানো দেখেই মুচকি হাসে। সে বুঝতে পারছে তোড়া তাকে দেখছে সে এই কয়দিন দেখেছে তোড়া তার দিকে ঠিক ভাবে দেখেনি আর আজ সে দেখছে এটা ভেবেই মনে মনে খুশি হয়ে যায়। তাসনীম দেওয়ান এগিয়ে এসে তোড়া কে জড়িয়ে ধরে। লেখাও এগিয়ে। একে একে সবাই সবার সাথে কথা বলে তোড়া দাঁড়িয়ে পড়ে।

-“আমাকে বেরোতে হবে মম। তোড়া উঠে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে।

-” কোথায় যাবি এখন আদর? তাসনীম দেওয়ান বলে ওঠে।

-“স্টার গ্রুপ জয়েন করতে মম । তোড়া বলে ওঠে।

-” কি? জোরে বলে ওঠে তাসনীম দেওয়ান।

-“হ্যাঁ মম শিকার করতে হলে জঙ্গলে যেতেই হবে তাই না মম। তোড়া বলে ওঠে।

-” চলো আমি তোমাকে ড্রপ করে অফিসে যাবো রেয়ান্স তোড়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

তোড়া কোনো কথা না বলে রেয়ান্স এর দিকে এক পলক তাকিয়ে বেরিয়ে যায় রেয়ান্স এর পিছন পিছন। গাড়িতে এসে বসে পড়ে তোড়া রেয়ান্স এর পাশে। রেয়ান্স তোড়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট করে। দুজন এর মুখে কোনো কথা নেই তোড়া বাইরের দিকে মুখ করে আছে আর মাঝে কোনা চোখে রেয়ান্স এর দিকে দেখছে আর ভাবছে এই বিড়াল চোখ ওয়ালা ছেলেটা এখন তার হাজব্যান্ড। তার জীবনটা কোথায় থেকে কোথায় ভেসে যাচ্ছে বুঝার চেষ্টা করছে তবে আগে যা হয়েছে এবার তার উল্টো পথ চলার শুরু তাই সে তার বিয়ের দিন থেকেই শুরু করেছে। এই বিড়াল চোখ ওয়ালা ছেলে টা দেখতে বেশ একদম চকলেট এর মত ।

-“আমাকে দেখতে হলে সরাসরি দেখতে পারো কোনা চোখে দেখার দরকার নেই আফটার অল আমি তোমার হাজব্যান্ড হই। রেয়ান্স বলে ওঠে।

তোড়া রেয়ান্স এর এমন কথায় খানিকটা চমকে যায়। রেয়ান্স যে এমন কথা বলবে তোড়া ভাবতেও পারেনি। তাই তার সব ভাবনা ছেড়ে তোড়া আর কোনো কথা না বলে বাইরের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। স্টার গ্রুপ এর সামনে গাড়ি এসে থামতে তোড়া চোখ তুলে উপরের দিকে তাকায়। একদিন নিজের হাতে ও এটা গড়ে তুলেছিল নিজের কষ্ট পরিশ্রম দিয়ে আর আজ তা তার কাছে নেই। কিন্তু চিন্তা নেই আজকের পর থেকে এই স্টার গ্রুপ এর বরবাদ এর দিন শুরু হবে। ও যেমন এটা গড়ে ছিল তেমনি আজকে থেকে এটা ভাঙ্গার কাজ শুরু করবে কারণ এটা পুরোটাই নোংরা জঞ্জাল ভরে গেছে।

-“এসে গেছি। রেয়ান্স বলে ওঠে।

রেয়ান্স এর কথায় তোড়ার ঘোর কাটে চোখ ঘুরিয়ে রেয়ান্স এর দিকে তাকাতে দেখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তোড়া গাড়ি থেকে নামতে গেলে রেয়ান্স তোড়ার হাত ধরে আটকে ফেলে। রেয়ান্স এর স্পর্শে তোড়া হালকা কেঁপে ওঠে তার বুকের মধ্যে কেমন ধুকধুক করছে হঠাৎ করে সে বুঝতে পারছে না। মাথা ঘুরিয়ে তাকাতে দেখতে পায় রেয়ান্স তার দিকে তাকিয়ে আছে।

-“আমি সব সময়ই তোমার সাথে আছি তোমার পাশে আছি তাই তোমার যা মন চায় তুমি করো। কিন্তু এটা মাথায় রেখো তুমি আজ থেকে কিন্তু তোড়া দেওয়ান নও তুমি আজকে থেকে রেয়ান্স রাওয়াত এর ওয়াইফ তোড়া রেয়ান্স রাওয়াত ।তাই তুমি শুধু মাত্রই আমার বুঝতে পেরেছ তোমার গায়ে একটা আচড় ও আমি সহ্য করব না তোমার যেমন ভাবে ইচ্ছা তুমি তেমনি ভাবে খেলতে পারো শুধু মনে রেখো গায়ে কোনো আচড় না লাগে। রেয়ান্স বলে ওঠে।

-“আরেকটা কথা যতটা সম্ভব ছেলেদের থেকে দূরে থাকবে যাতে তোমার হাত না নোংরা হয়। আর যদি ও নোংরা হয় তো সেটা আমিই ক্লিন করে দেবো আগের মত কিন্তু তুমি ভুল ভাল কিছু করবে না গট ইট। রেয়ান্স বলে ওঠে।

তোড়া এতক্ষণ অবাক হয়ে রেয়ান্স এর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল তার প্রত্যেক টা কথা মন দিয়ে শুনছিল। রেয়ান্স কি বলতে চাইলো তাকে যাতে আমার হাত না নোংরা হয় কারোর স্পর্শ লেগে তাই কি আমাকে দূরে থাকতে বললো কিন্তু ও আগের মত মানে কি বলতে চাইছে। তোড়া মনে মনে ভাবতে থাকে।

-“এত না ভাবতে হবে না নিজের কাজের দিকে মন দাও। আজকে থেকে তোমার লড়াই শুরু আর তোমার এই লড়াই এ আমি তোমার সাথে আছি তাই ভয় পাওয়ার একদম দরকার নেই ওকে। রেয়ান্স তোড়ার মুখে দু হাত দিয়ে ধরে বলে ওঠে।

-” এবার যাও আর হ্যাঁ তোমার ফোনে আমার নাম্বার সেভ করে দিয়েছি কাজ শেষ হলে আমাকে ফোন করে নেবে। রেয়ান্স তোড়ার কপালে একটা গভীর চুমু খেয়ে বলে ওঠে।

তোড়া হা করে রেয়ান্স এর মুখের দিকে দেখে রেয়ান্স চোখের ইশারা করলে তোড়া কোনো কথা না বলে গাড়ি থেকে নেমে যায়। আসতে আসতে সে স্টার গ্রুপ বিল্ডিং এর ভিতরে ঢুকে কিন্তু পুরো ভিতরে না গিয়ে পিছন মুড়ে উঁকি দিয়ে দেখে রেয়ান্স গাড়ি স্টার্ট করে বেরিয়ে যাচ্ছে। তোড়া রেয়ান্স এর কথা গুলো মনে করে আর তার কপালে চুমু দিয়েছে এটা ভাবতেই তার অজান্তেই তার ঠোঁটের কোণে হাঁসি ফুটে ওঠে যেটা তার মুখ থেকে হারিয়ে গিয়েছিলো। তোড়ার একটা হাত চলে যায় তার কপালে রেয়ান্স এর চুমু দেয়া জায়গায়। তোড়া নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে স্টার গ্রুপ বিল্ডিং এর ভিতরে চলে যায়।

————-
-“মিস্টার অভি এর কেবিন। তোড়া রিসেপশনে গিয়ে বলে ওঠে।

রিসেপশনে থাকা মেয়েটি তোড়ার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপরেই মুখে হাসি ফুটিয়ে কেবিন বলে দেয়। তোড়া ও মুচকি হাসি দিয়ে চলে যায়। টপ ফ্লোরে অভি এর কেবিন এর সামনে এসে দাঁড়ায়। নাম প্লেট এর দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে মুখে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে। দরজায় নক করতে ভিতর থেকে আওয়াজ আসে। তোড়া কোনো কথা না বলে ভিতরে ঢুকে যায়। দেখে অভি মনোযোগ দিয়ে ল্যাপটপ দেখছে।

-“মিস্টার অভি । তোড়া মৃদু ভাবে ডেকে ওঠে।

তোড়ার আওয়াজ শুনেই অভি ল্যাপটপ থেকে মুখ সরিয়ে তোড়ার দিকে তাকায় দেখে তার সামনে তোড়া দাঁড়িয়ে আছে। এটা দেখতেই অভি এর মুখে হাসি ফুটে ওঠে। তাড়াতাড়ি চেয়ার থেকে উঠে তোড়ার সামনে এসে দাঁড়ায় অভি।

-” আমি জানতাম তুমি আসবে। ইনফ্যাক্ট আমি তোমার অপেক্ষায় ছিলাম। অভি হেসে তোড়ার হাত ধরেবলে ওঠে।

তোড়া কোনো কথা না বলে বাঁকা হাসতে থাকে অভি এর দিকে তাকিয়ে। অভি এর থেকে একটু সরে এসে নিজের হাত অভির হাত থেকে ছাড়িয়ে নেয়।

-” আমাকে তো আসতেই হতো। তোড়া বলে ওঠে।

-“হ্যাঁ । আমার কোম্পানী জয়েন করো তারপর দেখো তুমি কোথায় পৌঁছে গেছো। অভি বলে ওঠে।

-“সে তো অবশ্যই এটা তো দেখার জে কোথায় থেকে কোথায় পৌঁছে যায়। তোড়া বাঁকা হেসে বলে ওঠে।

-” ওকে বসো । অভি তোড়ার দিকে চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে।

তোড়া বসে পড়তেই অভি গিয়ে চেয়ারে বসে পড়ে। কন্ট্রাক্টড পেপার নিয়ে এগিয়ে দেয় তোড়ার দিকে। তোড়া পেপার টা নিয়ে পড়তে থাকে আর অভি তোড়ার দিকে তাকিয়ে আছে সে তোড়া কে ওপর থেকে নিচে শুধু স্ক্যান করে যাচ্ছে তার চোখ চক চক করে উঠছে তোড়া কে দেখে। তোড়া বুঝতে পারছে অভি তার দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু কোনো কথা না বলে সে পেন নিয়ে সাইন করে দেয় পেপারে। পেপার নিয়ে ফিরিয়ে দেয় অভির দিকে অভি ফাইল টা নিয়ে তোড়ার হাত চেপে ধরে।

তোড়া তার হাতের দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে অভি এর দিকে তাকায় দেখে সে তাকে পাওয়ার লোভ চোখে ভেসে আছে। তোড়া কোনো কথা না বলে তাকিয়ে আছে।

-” মিস তোড়া আমি তোমাকে আগে ও বলেছি তুমি খুব সুন্দর দেখতে আর আজকে ও বলছি তোমাকে আজকে ও খুব সুন্দর লাগছে দেখতে। অভি তোড়ার হাতের ওপর স্লাইড করতে করতে বলে ওঠে।

তোড়া কোনো কথা না বলে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। সাথে সাথে অভি এসে তোড়া সামনে দাঁড়িয়ে যায়। তোড়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার চোখ যায় দরজার দিকে দেখতে পায় তানিয়া দরজার কাছে এসে গেছে। এটা দেখেই বাঁকা হাসে তোড়া। সামনে এগিয়ে যেতে নিলে তোড়া হাত ধরে আবার অভি আর তখনই তানিয়া ভিতরে ঢুকে যায়।

-“অভি । তানিয়া ঢেকে ওঠে দাঁতে দাঁত চেপে।

অভি তানিয়া কে দেখেই তোড়ার হাত ছেড়ে দেয়। তোড়ার ওদের দুজনের দিকে দেখে নিয়ে বাই বলে বাঁকা হাসি দিয়ে বেরিয়ে যায়। সে জানে এবার এখানে কি হতে চলেছে।। আর তোড়া তো এটাই চায়। খেলা তো সবে শুরু হয়েছে এবার তাদের খেলার দিন আসতে আসতে শেষ হতে চলেছে সব কিছু শেষ করতেই তো তোড়া স্টার গ্রুপ জয়েন করেছে। তোড়া নিজের হাতের ফোন তুলে নিয়ে কল লগে গিয়ে ফার্স্ট নাম্বার এ কল করে।

-“অভি তুমি এটা কি করছিলে হ্যাঁ তোড়ার হাত কেনো ধরেছিলে। তানিয়া রাগী ভাবে বলে ওঠে।

-” সুইটহার্ট তুমি ভুল ভাবছ। এটা তেমন কিছু নয়। তুমি তো জানো তোড়া আমাদের কোম্পানীর জন্য একটা গোল্ডেন চান্স তাই ওকে তো আমাদের হাতে রাখতে হবে। অভি তানিয়ার কোমর জড়িয়ে ধরে গালে স্লাইড করতে করতে বলে ওঠে।

-” তার জন্য হাত কেনো ধরতে হবে। আর এখানে তোড়া এসেছে বলে কি আমার প্রেজেন্স কমে যাবে তোড়া একটা নিউ কমার আর আমি টপ মডেল অভি। তানিয়া রেগে বলে ওঠে।

-” কামডাউন বেবি ।আমি তো জানি তোমার আগে কেউ নেই তুমি এই কোম্পানির টপে আছো। কিন্তু তোড়া কে আমাদের হাতে রাখতে হবে যাতে ওকে অন্য কেউ হায়ার করতে না পারে তাই না। অভি তানিয়া কে শান্ত করতে তানিয়ার গলায় মুখ ডুবিয়ে বলে ওঠে।

-” আই লাভ ইউ জান। তানিয়া অভি কে জড়িয়ে নিয়ে বলে ওঠে।

-” লাভ ইউ বেবি। অভি তানিয়া কে জড়িয়ে নিয়ে বলে ওঠে।

মেতে ওঠে একে অপরের প্রতি বন্য প্রেমে। অভি তানিয়া কে ভোলাতে ডুবে যায় তাকে নিয়ে শরীরি খেলায়। আর অন্য দিকে তাদের জন্য একটু একটু করে মাকড়শার মত জাল বিছাতে আছে ঠিক সময়ে একটু একটু করে জাল গুটিয়ে সব কিছু শেষ করে দেয়ার জন্য। যে জাল কেটে বেরোনোর পথ ও খুঁজে ও পাবে না অভি তানিয়া।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে…..

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_১২

তোড়া বিল্ডিং এর বাইরে এসে দাঁড়াতে কিছুক্ষণ পর তার সামনে একটা স্পোর্টস কার এসে দাঁড়ায়।গাড়িটা দেখতেই তোড়ার ভ্রু কুঁচকে যায়। তোড়া এই মুহূর্তে এখানে এখন একদম আসা করিনি। রেয়ান্স গাড়ির মধ্যে বসেই গাড়ির দরজা খুলে দেয়। তোড়া কে তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতে দেখেই ইশারায় ভিতরে চলে আসতে বলে। তোড়া ও ভালো মেয়ের মত গাড়িতে উঠে বসে। তোড়া এখনও ভাবছে সে তো লেখা কে ফোন করেছিলো গাড়ি পাঠাতে। কিন্তু এখানে রেয়ান্স চলে এলো কি করে সে তো অফিসে গেছিলো তারপরে ও তাকে নিতে কি ভাবে চলে এলো।

-“বলেছিলাম না কাজ হয়ে গেলে আমাকে ফোন করতে? তাহলে? রেয়ান্স হটাৎ করেই বলে ওঠে।

-” হুম.. আসলে.. জানতাম না কি নামে সেভ ছিল। তোড়া আমতা আমতা করে বলে ওঠে।

-“তুমি দেখেছিলে? রেয়ান্স তোড়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

তোড়া রেয়ান্স এর দিকে এক পলক তাকিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে যায়। হটাৎ করেই তোড়ার মাথায় কিছু আসতেই তোড়া তার হাত দুটো রেয়ান্স এর দিকে বাড়িয়ে দেয় কিন্তু নিজের মুখ এখনও বাইরের দিকে করে রেখেছে। রেয়ান্স হঠাৎ করেই নিজের সামনে তোড়ার হাত এগিয়ে দিতে একটু চমকে যায় কিন্তু পরে পরে বুঝতেই পারে যে তোড়া কেনো হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তার দিকে। এটা ভেবেই মুখে একটা হাসি ফুটে ওঠে রেয়ান্স এর কিন্তু তার সাথে সাথে একটা রাগ ও যেনো মুখে স্পষ্ট হচ্ছে। রেয়ান্স কিছু না বলে গাড়িটা কে সাইট করে দাঁড় করিয়ে দেয়। তোড়ার মুখের দিকে একবার তাকায় দেখে এখনও তোড়া বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। রেয়ান্স চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে তোড়ার হাত দুটো নিজের হাতের মধ্যে নেই। আর এই ছোঁয়ার সাথে সাথে তোড়া হালকা কেঁপে ওঠে। তার মধ্যে যেনো কেমন একটা অনুভূতি হতে শুরু করেছে কিন্তু ও সেটাই বুঝতে পারছে না।

অভি এই হাত দুটোই ধরে ছিল তখন। সাথে সাথে তখন তোড়ার শরীরে কেমন একটা জ্বালা অনুভূতি হয় অভি এর স্পর্শে। মনে হচ্ছিলো ওখানেই অভির হাত দুটো ভেঙে দিতে কিন্তু নিজের রাগ টা কে শান্ত করে রেখেছিলো তোড়া আর না তারপরেও কিছু করেছে অভি ছোঁয়ার জন্য কারন তার মাথায় তখন একটা মুখ ভেসে আসছিল আর কানে বাজ ছিল রেয়ান্স এর বলা কথা গুলো তাই নিজের রাগ টা কে নিজের মধ্যেই দাবিয়ে নেয়। কিন্তু একটু আগেই ওর মনে পড়ে রেয়ান্স তাকে বলেছিলো হাত নোংরা হলেও সে ক্লিন করে দেবে তাই সে রেয়ান্স এর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। হঠাৎ নিজের হাতে ঠান্ডা অনুভূতি হয়। বাইরের থেকে মাথা ঘুরিয়ে দেখে রেয়ান্স তার হাতে ওয়েট টিস্যু দিয়ে মুছে দিচ্ছে।

রেয়ান্স এর এই হালকা পাতলা স্পর্শ ও যেনো গায়ের কাঁটা দেয়ার মত তার হাতের ওপর রেয়ান্স এর হাতের ছোঁয়া লাগতে তার নিজের মধ্যে কেমন একটা শিরশিরানি অনুভব করতে পারে। তোড়া এক দৃষ্টিতে রেয়ান্স এর দিকে দেখে যে এখন খুব গভীর মনোযোগ দিয়ে তার হাত ক্লিন করছে। এই মুহূর্তে তাকে দেখতে অনেকটা স্নিগ্ধ লাগছে আর তার সাথে অনেকটাই মায়াবী নেশাকীয়। রোডের স্ট্রিট লাইট এর আলোর ফোকাস গাড়ির কাঁচের ওপর রিফ্লেক্ট হয়ে রেয়ান্স এর মুখে পড়ছে। চারিদিকে এই হালকা অন্ধকার আর হালকা আলো তে আর তার সাথে রিফ্লেক্ট এর জন্য রেয়ান্স কে নেশাকীয় কোনো জিনিষ মত লাগছে যেটা তাকে আকর্ষন করছে চুম্বক এর মত। আর সব থেকে যেটা তোড়া কে আকর্ষণ করছে সেটা হলো রেয়ান্স এর গালে থাকা তিল টা যা ওর ওর দুধের থেকে ও সাদা মুখের ওপর জ্বল জ্বল করছে এই আলো আঁধারিতেও। তোড়ার মন চাইছে যেনো সে একটু ছুয়ে দেয়। সে কিছু ভুল বলেনি এই বিড়াল চোখ ওয়ালা ছেলেটি আসলে সুদর্শন পুরুষ কোনো রাজার থেকে কোনও অংশে কম নয় পুরোই একটা চকলেট বোম ও না চকলেট বয়। তোড়া রেয়ান্স এর মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে এই সব ভেবে যাচ্ছে।

হঠাৎ করেই হাতে উষ্ণ স্পর্শ পেতেই কেঁপে ওঠে তোড়া কোনা চোখে হাতের দিকে তাকাতেই দেখে রেয়ান্স তার হাতে তার ঠোঁটের স্পর্শ দিচ্ছে। এটা দেখতে আসতে চোখ বুজে আসে তোড়ার সে যেনো আর চোখ খুলে তাকাতে পারছে না। তার শরীর যেনো হঠাৎ করেই কাঁপা শুরু করছে খুবই খারাপ ভাবে তার সাথে বুকের ধুকধুক আওয়াজ টাও দ্রুত গতিতে ছুটে চলেছে মনে হচ্ছে এখুনি বেরিয়ে আসবে। রেয়ান্স তোড়ার হাতে চুমু খেতে খেতে হটাৎ দেখে তার হাতের মধ্যে থাকা তোড়ার হাত ভীষণ ভাবে কাঁপছে। তোড়ার হাতে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে রেখেই চোখ তুলে দেখে তোড়া সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে সাথে তার পুরো শরীর টা কাঁপছে। রেয়ান্স তোড়ার মুখের দিকে তাকাতেই চোখ আটকে যায় তোড়ার ঠোঁটের ওপরে। যেটা তিরতির করে কাঁপছে আর তোড়া তার ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়ার সাথে সাথেই দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে নিচ্ছে আর তারপরেই জীব দিয়ে ঠোঁট এর ওপর বুলিয়ে নিচ্ছে। এটা দেখেই রেয়ান্স তার ঠোঁটের স্পর্শ এবার গভীর করে দিতে থাকে। কিছুক্ষণ পরেই তোড়ার এমন অবস্থা দেখে রেয়ান্স এর বুকের মধ্যে ঝড় উঠতে থাকে সে এবার নিজেই তোড়ার ওই কাঁপতে থাকা ঠোঁট আর তার সাথে হালকা কামড়ে ধরা আবার জীব বুলিয়ে নেওয়া দেখেই সে যেনো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। তাই শেষে তোড়ার হাতে লম্বা একটা চুমু দিয়ে হাত ছেড়ে দেয়। সোজা হয়ে বসে বাইরের দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে বড় বড় কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে নেয়।

-“উফ এই মেয়ে আমাকে পাগল বানিয়ে দেবে। এত আকর্ষণ করে কেনো? ওকে দেখলেই নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকি না। এই মেয়ে আমার এই আটাশ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। যে ছেলে কিনা কাজ কেই নিজের দুনিয়া করে রেখেছিলো কোনো মেয়েকে নিজের কাছে পর্যন্ত আসতে দেই নি আজ আমি সেই কিনা এই মেয়েকে দেখে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছিনা। ওকে দেখতে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছি। যে আমি কিনা কখনো কারোর দিকে চোখ তুলে তাকায় নি আজ আমি ওর দিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকিয়ে থাকলে ও মনে হবে যেনো এখনও তৃষ্ণা মেটেনি। উফ কি হচ্ছে এটা আমার সাথে। না আমি এখন কোনো ভাবেই নিজের আবেগ কে বাইরে নেবো না। তোমার মনে আমার জন্য অনুভূতি ভালোবাসা শিখিয়ে তোমাকে আমার ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে নিয়েই তবে আমি তোমাকে আমার করে নেবো। বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস নিঃশ্বাস ফেলে রেয়ান্স

এদিকে তোড়া ও আসতে আসতে স্বাভাবিক হয়ে নিজের চোখ খোলে। এখনও তার বুকের মধ্যে কেমন একটা অনুভূতি হয়ে যাচ্ছে। তবে এখন আগের থেকে ঠিক আছে। চোখ ঘুরিয়ে পাশে তাকাতেই দেখে রেয়ান্স তার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। তার তাকানো দেখেই রেয়ান্স একটা মুচকি হাসি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করে। কিছুক্ষণ পরেই তার এক হাত টেনে নিয়ে গিয়ার ওপরে নিজের হাতের সাথে নিয়ে ড্রাইভ করতে থাকে রেয়ান্স। মুখে রয়েছে একটা হালকা মিষ্টি হাসি। তোড়া ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে রেয়ান্স এর মুখের দিকে কিন্তু কোনো কথা বলে না চুপ করে সামনের দিকে তাকায়।

-“সাইন করা হয়ে গেছে কন্ট্রাক্টড। রেয়ান্স হঠাৎ বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ । তোড়া কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলে ওঠে।

-“ভালো করে দেখে সাইন করেছো তো? সব ঠিক ঠাক তো। রেয়ান্স আবারো বলে ওঠে।

-” দেখুন মিস্টার রেয়ান্স জানি আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে। এখন আমার সব কিছুর ওপরে আপনার সম্পূর্ণ রাইট আছে। এতে আমার কোনো অসুবিধা ও নেই। আপনি আমার হাজব্যান্ড। কিন্তু কাজের ব্যাপারে আমি কোনো কথা বলতে চাইনা না মানে আমি নিজের থেকে সব কিছু করতে চাই আপনার স্ত্রী হওয়ার ফেবারে আমি কোনো সাহায্য নিতে চাইনা। প্লিজ খারাপ ভাববেন না আমি নিজেই নিজের থেকে আপনার যোগ্য হতে চাই। কোনো সাহায্য ছাড়া। আর তাছাড়া আমি নিজেও এই বিয়েটা কে সম্পূর্ণ ঠিক ঠাক ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমিও চাই আমাদের সম্পর্ক টা আরো বাকি সবার মত স্বাভাবিক হোক ইনফ্যাক্ট এর থেকেও আরো মিষ্টি হোক তার জন্য আমি সবটা ঠিক ভাবেই আর সঠিক শুরু করতে চাই। আমি চাইনা আমাদের সম্পর্ক কোনো দেয়া নেওয়ার ওপরে থাকুক। আশা করি আপনি আমার কথা টা বোঝার চেষ্টা করবেন। তোড়া এক নিঃশ্বাস নিয়ে বলে ওঠে।

রেয়ান্স এর মুখে হাসি ফুটে ওঠে তোড়ার কথা গুলো শুনে। তোড়া যে তাদের বিয়ে টা কে মেনে নিতে চাইছে। স্বাভাবিক তার থেকেও মিষ্টি একটা সম্পর্ক চাইছে এটা ভেবেই মুখে একটা হাসি খেলে যায়। কিন্তু কিছু কথায় মুখটা গম্ভীর হয়ে যায়। রেয়ান্স তার হাত ঘুরিয়ে নিয়ে তোড়ার কাঁধে জড়িয়ে নিয়ে কাছে টেনে নেয়। তোড়া হঠাৎ এমন কাজে হকচকিয়ে যায়। রেয়ান্স একবার তোড়ার দিকে তাকিয়ে নিয়ে সামনে তাকিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে।

-“প্রথমত আপনি নয়। আর কোনো মিস্টার নয় শুধু রেয়ান্স বা তুমি কোনও নিক নেম দিতে পারো আর না আপনি শুধু তুমি। মাথায় ঢুকিয়ে নাও। রেয়ান্স তোড়ার দিকে তাকিয়ে বলে।

-” দেখো আমি তোমার কাজের ব্যাপার নিয়ে কোনো কথা বলছিনা। তোমার যেমন ভাবে ইচ্ছা তেমনি করো। আমি এটা নিয়ে কোনো কথা বলছিনা আমিও চাই তুমি নিজের থেকে করো। কিন্তু আমি তোমার ব্যাপারে সব কিছু জানতে চাই। না কোন সাহায্য করার জন্য নয় তোমাকে নিয়ে যাতে আমি নিশ্চিত থাকতে পারি তার জন্য। আর হ্যাঁ তুমি হয়তো এটাও জানো যে আমি এই ইন্ডাস্ট্রির কোনো কিছু জানতে চাইলে সেটা আমার কাছে কোনো ব্যাপার না। তাই আমি তোমার ব্যাপার সব কিছু জানতে পেরে যাব কিন্তু আমি তোমার থেকে সব কিছু জানতে চাই। না আমি কোনো খবরদারির জন্য নয়। তোমার কাজ তুমি তোমার মত করেই করে যাবে। এর জন্য আমি নিজেই তোমার জন্য গর্ব করি যে তুমি এটা ভাবো। তবে একটা কথা আমি আমার ওয়াইফ এর জন্য নিজের থেকেই কিছু করতে পারি। কিন্তু সেটা ততক্ষণ যতক্ষণ তোমার হাতে সব কিছু থাকবে কিন্তু তোমার হাতের বাইরে কিছু চলে গেলে তারপরে তো আমি আমার ওয়াইফ এর জন্য করতে পারি তাইনা। আর একটা কথা সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাস টাই আসল। আমি তোমাকে বিশ্বাস করি তোড়া তাই কখনো যেনো আমার এই বিশ্বাসে আঘাত না লাগে। আর যা খুশি করো কিন্তু নিজেকে বাঁচিয়ে কেমন। রেয়ান্স বলে ওঠে।

-“আর হ্যাঁ একটা কথা নো আপনি ওকে অনলি তুমি। বলেই হেসে দেয় রেয়ান্স।

তোড়া মুগ্ধ নয়নে রেয়ান্স এর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। রেয়ান্স বলা প্রতিটা কথা তার বুকে গিয়ে লেগেছে আজ পর্যন্ত তার জন্য কেউ এতটা চিন্তা করেনি শুধু তার মম ও লেখা ছাড়া। ইনফ্যাক্ট তার নিজের পরিবার ও নয়। তার প্রতি রেয়ান্স এর কেয়ার টুকরো টুকরো অধিকার বোধ দেখানো তাকে আগলে রাখা তার জন্য চিন্তা করা সব কিছু যেনো তোড়ার মন ছুঁয়ে যাচ্ছে। আর তার সাথে রেয়ান্স এর আলতো উষ্ণ স্পর্শ গুলো ও তার মনের অনুভূতি গুলো কে দম লাগিয়ে দিয়েছে তারা শুধু ছুটে চলেছে থামার নামই নিচ্ছে না। এগুলো কিসের সঙ্কেত। কি নাম দেবে তোড়া এই অজানা অনুভূতির যেটার সাথে সে আগে কখনো পরিচিত হয়নি। কি করে বুঝবে কি বলে এগুলো কে।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে….