ইষ্ক ইবাদাত পর্ব-৩৬+৩৭+৩৮

0
6108

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৩৬

ব্রেকিং নিউজ – তাথই এর মৃত্যু রহস্য উন্মোচন। রহস্যের সমস্ত জাল ছিড়ে বেরিয়ে এসেছে তাথই এর মৃত্যুর কারণ। সুইসাইড নয় এটা একটা মার্ডার কেস। আর এই সব কিছুর পিছনে রয়েছে মুম্বাই এর টপ ইন্টারন্যাশনাল মডেল তানিয়া। এর আগেও আমরা যে তথ্য পেয়েছি সেখানে তানিয়া ও অভির নিজেদের গোপন সম্পর্ক ও তাথই এর বিরুদ্ধে তাদের পরিকল্পনার কথা ছিল আর কিছু স্বীকারোক্তি। কিন্তু এই ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তাথই এর মৃত্যুর কারণ সেই সময়ে এর ফুটেজ।এখানে তানিয়ার কথা শুনে মনে হচ্ছে তিনি তাথই কে পছন্দ করেন না কিন্তু কেনো নিজের বোন হয়ে কি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। ফুটেজ আর তার ভিতরের কথোপকথন শুনেই বোঝা যাচ্ছে তানিয়ার মনে কতটা ঘৃণা লুকিয়ে আছে তাথই বিরুদ্ধে।

তানিয়া ও অভির রুমে থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পাঁচ মিনিট পরই তাথই বাইরে আসে সাথে আর তার সাথে সাথেই তানিয়ার সামনে পড়ে কিছু ক্ষণ কথা কাটাকাটির পর তানিয়া তাথই কে টেনে নিয়ে যায়। তাথই এর অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সে দাঁড়াতে পারছে না। তানিয়া তাথই কে টেনে নিয়ে এসেছে কাঁচের গ্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে জোরে ধাক্কা দেয় তাথই কে সাথে সাথে কাঁচ ভেঙে বিল্ডিং থেকে নিচে পড়ে যায় তাথই। আর তানিয়ার মুখে দেখা একটা শয়তানি হাসি। এখানেই ফুটেজ শেষ।

নিউজ ভাইরাল হতে চারিদিকে শোরগোল পড়ে যায়। মিডিয়া রিপোর্টারা নিউজ কালেকশন করার জন্য তানিয়ার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। এই নিউজ তার ব্রোডকাস্ট করতে পারলেই তাদের চ্যানেল এর টি আর পি বাড়বে। এখন রিপোর্টাররা কেউ সত্যের মুখোমুখি হতে চায় না সবাই তাদের চ্যানেল এর টি আর পি বাড়ানোর চেষ্টায় থাকে।

আগের নিউজ রিলিজ এর দু ঘন্টা পরই এই নিউজ ভাইরাল হয়। রেয়ান্স এই ইন্ডাস্ট্রির রাজা তাই সে চাইলে যা কিছু করতে পারে আর সেখানে তো মাত্র এই কত গুলো ফুটেজ ছিল। তার কাছে সত্যি সামনে আনা বড় কোনো ব্যাপার নয়। আর তোড়া সে মুম্বাই আসার পর পরই এই ভিডিও কালেক্ট করে নেয় ওই হোটেল থেকে তার সোর্স লাগিয়ে। যেহেতু দেওয়ান পরিবারের রেপুটেশন কম কিছু না আর তাছাড়া এখন টাকা দিলে সব কিছুই হয় তাই তোড়ার এই ফুটেজ কালেক্ট করতে কোনো অসুবিধা হয়নি।

মানান পরিবারে হুলুস্থুলু কান্ড বেঁধে গেছে এই নিউজ দেখার পরেই। কয়েক ঘণ্টা আগেই মার খেয়ে তার অবস্থা পুরো বেহাল। উঠে দাঁড়ানোর মত শক্তি বেঁচে নেই। সারা শরীর ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে বেল্ট এর আঘাতে। তানিয়া ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে আছে। হটাৎ আবারও মাথায় চুলের টান খেয়ে চিৎকার করে ওঠে যন্ত্রণায়। এহসান মানান রেগে বোম হয়ে এসেই তানিয়ার চুলের মুঠো ধরেই মেঝে থেকে তুলে বাইরে আনে টানতে টানতে। লিভিং রুমে আসতেই তানিয়া দেখে তার পরিবারে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। তানিয়ার এহসান মানান এর মারের হাত থেকে বাঁচার জন্য এবার সবার কাছে আকুতি করতে থাকে।

-“দাদু প্লিজ আমাকে বাঁচাও ড্যাড আমাকে মেরে ফেলবে। প্লিজ দাদু। তানিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে।

তার দাদু কোনো কথা না বলে মুখ ঘুরিয়ে নেয় তার আজ কোনো কথা বলার নেই এমনিতেই তিনি প্রথম থেকে তানিয়ার কাজের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলো আর তাছাড়া তাথই তার খুব আদরের। তার মনে হচ্ছে তিনি যেনো এই মুহূর্তে তানিয়া কে কেটে কুচি কুচি করে। তানিয়া তার দাদুর মুখ ফিরিয়ে নেওয়াতে। তানিয়া এবার তার ভাই তামিম এর দিকে ফিরে চিৎকার করে।

-” তামিম প্লিজ আমাকে বাঁচা প্লিজ আমি তো তোর বোন হই বল। প্লিজ আমাকে বাঁচিয়ে নে।

তামিম তানিয়ার কথা শুনে এগিয়ে এসে ঠাস করে একটা জোরে থাপ্পড় মেরে দেয় তানিয়ার গালে। এতক্ষণ এহসান মানান তানিয়ার চুলের মুঠো ধরে রেখেছিলো আর তানিয়া ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করছিলো কিন্তু তামিম এর থাপ্পড় খেয়ে শান্ত হয়ে যায়।

-“তাথই ও আমার বোন ছিলো। তাথই তোর ও বোন ছিলো তাহলে কি করে ওকে মেরে ফেলতে পারলি। তোকে নিজের বোন বলতেও ঘৃণা হচ্ছে আমার। ছিঃ। তামিম চিৎকার করে বলে ওঠে।

তানিয়া তামিম এর কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় সে এতক্ষণ মার খেয়ে রুমের মেঝেতে লুটিয়ে পড়েছিলো তাই এই নিউজ এর ব্যাপারে কিছুই জানে না কিন্তু এখন তামিম এর কথা শুনে বুঝে যায় যে এটা ও হয়তো সবার সামনে চলে এসেছে যে সেই তাথই কে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে সেই মৃত্যুর কারণ। সে পুরো স্থির হয়ে গেছে। এদিকে এহসান মানান নিজের মত করে মেরে যাচ্ছে। তানিয়ার মারের আঘাতে এবার তার মা এর দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে।

-“মা প্লিজ আমাকে বাঁচিয়ে নাও। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। প্লিজ আমাকে বাঁচিয়ে নাও।

-” তুই কি তাথই কে ছেড়ে ছিলি যে আমি তোকে বাঁচাতে যাবো। তুই ওকে শেষ করে দিয়েছিস কেড়ে নিয়েছিস আমার মেয়ে কে আমার থেকে এর পরেও কি করে ভাবিস আমি তোকে বাঁচাবো। শুধু মাত্র তোর জন্য তাথই কে অবহেলা করেছি তোকে সব সময়ে বেশি প্রায়োরিটি দিয়েছি আর আজ তুই তার এই প্রতিদান দিলি। আমি চাই তোর কঠিন শাস্তি হোক। তোড়ার মা বলে ওঠে।

এতক্ষন এহসান মানান থাপ্পড় এ সীমাবদ্ধ থাকলেও তার স্ত্রী এর কথা শুনে তার ও মনে পড়ে সে ও একই কাজ করে গেছে তাথই এর সাথে কখনও ভালো করে দুটো কথা বলেননি তানিয়া কে নিয়ে তারা ছিল। এটা ভাবতেই তার গায়ে যেনো আগুন ধরে যায় তিনি গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে তানিয়ার গলা চেপে ধরেন। এদিকে বাড়ির সবাই এই কাজে হতভম্ব হয়ে গেলেও তারা কেউ ছাড়াতে যায়নি। তখনই বাড়ির ভিতরে ঢুকে আসে পুলিশ। এহসান মানান কে তানিয়ার গলা চেপে থাকতে দেখে দুজন গিয়ে তাড়াতাড়ি করে ছাড়িয়ে নেয়। সাথে সাথে তানিয়া কাশতে কাশতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

-“প্লিজ ওকে নিয়ে যান। আর দেখবেন যাতে ওর কঠিন থেকে কঠিন শাস্তি হয়। তোড়ার দাদু বলে ওঠে।

দুটো মহিলা পুলিশ অফিসার তানিয়া কে ধরে নিয়ে বেরিয়ে যায়। এদিকে বাড়ির এত চাপ সহ্য করে নিলে ও বাইরে বেরোতে তানিয়ার যেনো মনে হয় সে আর বেঁচে নেই একদিন অভি কে দেখেছি সে হেসে ছিলো আর সে নিজেই নিজের ওপর হাসছে।

তানিয়া কে নিয়ে বাইরে বেরোতে চারিদিকে থেকে মিডিয়া রিপোর্টার আর পাবলিক ঘিরে ধরে। রিপোর্টার প্রশ্নবানে জর্জরিত হয়ে যায়। সে নিজের চেহারা লুকানোর চেষ্টা করেও বিফল হয়। তার এখন কার এই কুৎসিত চেহারা লুকাতে পারেনা। চারিদিকে থেকে তার ওপরে পাবলিক আক্রমণ করে। ডিম টমেটো পাথর কালো রং যে যা পেরেছে মেরেছে। আর পুলিশদের দেখে মনে হচ্ছে তারা ইচ্ছা করেই তানিয়া কে এই অবস্থায় আরো কিছুক্ষণ রাখতে চাইছে যাতে সে পাবলিক এর আক্রমণে আরো বেশি করে জর্জরিত হয়ে যায়। তানিয়া কে এখন আর চেনা যাচ্ছে না তার সারা শরীরে এখন ডিম টমেটো কালো রং এ মাখামাখি হয়ে আছে। আর তার সাথে তার বিধ্বস্ত চেহারা দেখতে পুরো এখন বীভৎস লাগছে তানিয়া কে ।

————–

অভি তাথই এর মৃত্যুর পিছনে যে তানিয়ার হাত আছে এটা শুনেই থমকে যায়। সে ভাবতেই পারছে না যে তানিয়া এই কাজটা করেছে। সে তো তাকে ঠকিয়েছে তাকে এক রাতের জন্য অন্যের বিছানা সঙ্গী করতে চেয়েছিলো এতে যদি তার সাথে সাথে তানিয়ার ও হাত আছে কিন্তু সে কখনওই চাইনি তাথই এর মৃত্যু হোক। সে ওই ঘটনার পর একটা ভ্যালিড রিজন দেখিয়ে তাথই কে ছেড়ে দিত। কিন্তু মৃত্যু না সে আর ভাবতেই পারছে না। সে যখন থেকে জেলে এসেছে তানিয়া এক বারের জন্য ও তার খোঁজ করেনি ইনফ্যাক্ট সে যেদিন অ্যারেস্ট হয়েছে সেদিন ও তার কোনো খোঁজ মেলেনি। বরং তার অ্যারেস্ট হওয়ার পিছনে এমন একটা কারণ ছিল যেটা সে করেইনি আর তাছাড়া ওই রকম একটা নিউজ কে বা মিডিয়া কে দিলো।

অভি এখন ভাবতে থাকে তানিয়ার কথা গুলো তাথই এর মৃত্যুর পরের দিন রিপোর্টার এর সাথে কথা বলার পরই তার সাথে কথা বলার সময়ে মুখ ফসকে তাথই এর কথা বলে ফেলে ছিল। আর কয়েকদিন আগেই যখন সে নিউজে ভাইরাল হয়েছিলো সেদিন ও তানিয়া তার ভয়ের মধ্যে তাথই এর কথা তুলেছিল। অভি কথা গুলো ভাবতেই তার চোখের সামনে সিন গুলো ভেসে ওঠে। এখন সে স্পষ্ট বুঝতে পারছে যে তানিয়া তার কাছে লুকিয়ে গেছিলো এই ব্যাপারে আর সেই তাথই এর মৃত্যুর জন্য দায়ী।

অভি এখন বুঝতে পারে সে কতটা ভুল করেছে তানিয়া কে তার জীবনে এনে। আর তাথই কে ঠকিয়ে । সে এখন অনুতপ্ত তার আগের কাজের জন্য। সে যদি এখন তাথই কে সামনে পেতো তাহলে হয়তো তার পায়ে পড়েও তার কাছে ফিরে যাওয়ার ভিক্ষা চাইতো। তার মনে পড়ে তাথই এর সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো। সে তার মন পাওয়ার জন্য তার পছন্দ মত সব কিছুই করতো। তার জন্য চিন্তা তার কেয়ার গুলো এখন অভির স্মৃতিপটে ভেসে উঠছে। অভি বুঝতে পারছে সে কত বড় ভুল করেছে তার জীবনে তানিয়া কে চুজ করে।

কিন্তু এখন আর অনুতপ্ত হয়ে কোনো কাজ নেই শাস্তি তো তাকে পেতেই হবে।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে…..

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৩৭

-“আদর! আদর!

তোড়া ডাক শুনে উপর থেকে দৌড়ে নিচে নামতে থাকে এই নাম তো তার মম ডাকে আর নিশ্চয়ই তার মম এসেছে। তোড়া দৌড়ে লিভিং রুমে এসেই থমকে যায়। সেখানে দাঁড়ানো সবাই কে দেখেই। তার সামনে তার মম লেখা তার দাদু ভাই (রেয়ান্স এর দাদু) আর তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে তার বাপি। হ্যাঁ এই মানুষটার কাছে সে একজন ভালোবাসা পেয়েছে। যে তাকে নিজের মেয়ের মত আগলে রাখে তাকে ভালোবাসে। সে যে তাদের নিজের মেয়ে নয় সেটা কখনোই মনে আনতে দেই নি। তোড়া সবাই কে একসাথে দেখে খুশি হয়ে যায় সাথে তার বাপি কে এতদিন পর দেখে ইমোশনাল হয়ে পড়ে।

-“আদর! তালিব দেওয়ান তার দু হাত বাড়িয়ে দিয়ে ডেকে ওঠে।

-” বাপি! তোড়া ঝাঁপিয়ে পড়ে তার বাপির বুকে।

বাড়ির সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে তারা জানে এটাই হবে। তোড়া আর তার বাপির বন্ডিং খুব তারা সবাই জানে তোড়া এই বাপি বলতে কতটা পাগল আর তার কারণ ও জানে। ছোটো বেলায় থেকে সে কখনো তার ড্যাড এর ভালোবাসা পায়নি যা সে এই মানুষটা তার বাপির থেকে পেয়েছে। তার এই জীবনে তার এই মম বাপি আর লেখাই সব কিছু ছিল কিন্তু এখন তার সাথে যোগ হয়েছে রেয়ান্স।

-“বাহ বাহ দেখো দুই জন কেমন মিল হয়ে গেলো আমাকে কেউ ভালোবাসে না। লেখা মুখ ফুলিয়ে বলে ওঠে।

ওখানে থাকা সবাই হেসে ওঠে লেখার কথা শুনে। তালিব দেওয়ান তোড়া কে এক হাতে জড়িয়ে রেখেই লেখার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে লেখা এসে তার বাপি ও তার দিদিয়া কে একসাথে জড়িয়ে ধরে।

-“আমার দুটো মেয়ে সমান সমান কেউ কোন দিকে থেকে কম নয়। তালিব দেওয়ান হেসে বলে ওঠেন।

-” বাপি তুমি কবে ফিরে এলে। মম কই আমাকে তো কিছু জানালো না যে তুমি আসছো। তোড়া বলে ওঠে।

-“আরে বাবা তোর বাপি কি আমাকেও জানিয়েছে নাকি যে তোকে বলবো। তোর বাপি কালকে রাতে ফিরেছে তাও আমাদের সবাই কে সারপ্রাইজড করতে। আর তারপরেই সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ছে তার আদর কে দেখবে বলে। তাসনীম দেওয়ান বলে ওঠেন।

-” বাহ কালকে ফিরেছে তো আমাকে কেনো জানানো হয়নি? তোড়া এবার মুখ ফুলিয়ে বলে ওঠে।

-” আমার আদর কে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য আমি জানাতে বারণ করেছি। কালকে যদি জানিয়ে দিত যে আমি এসেছি তাহলে কি আজকের আমার আদর মা কে সারপ্রাইজ দিতে পারতাম। তালিব দেওয়ান তোড়ার গাল টিপে দিয়ে বলে ওঠে।

-” আরে বাবা এত দেখছি বাপি কে দেখে মম কে ভুলে গেছে। কোথায় ভাবলাম এতদিন পর এসেছি একটু বেশি ভালোবাসা পাবো আমার মেয়েটা খুশি হবে কিন্তু কোথায় কি। তাসনীম দেওয়ান বলে ওঠে।

তোড়া তার বাপির দিকে তাকিয়ে হেসে চোখ টিপে তার মম কে গিয়ে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু বসিয়ে দেয়। তাসনীম দেওয়ান মুখ ঘুরিয়ে রাখলেও তোড়ার জড়িয়ে ধরতে আর গালে চুমু দিতেই হেসে জড়িয়ে ধরে তোড়া কে।

ওদের এই হাসি খুশি দৃশ্য নিজের চোখে দেখছে তোড়ার দাদু আর তার ভাই তামিম সাথে রেয়ান্স ও। তারা বাড়ির গেটের মুখে দাঁড়িয়ে দেখছে ভিতরের এই সুন্দর মুহূর্ত গুলো। তোড়ার দাদুর চোখে থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে মুখের কোণে লেগে আছে এক টুকরো হাসির ঝিলিক। তামিম ও খুশি হয়েছে তার দিভাই এর খুশি দেখে। তার দিভাই তার মা আর ড্যাড এর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আকুল ছিল কিন্তু পায়নি আর এরা তার দিভাই নিজের কেউ না হয়ে ও তাকে কতটা ভালোবাসে তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তোড়ার এই খুশিতে তোড়ার দাদু আর তামিম খুব খুশি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত মেয়েটা তার বাবা মা পেলো একটা পরিবার পেলো। তার না পাওয়ার জীবনে এক টুকরো খুশির আলোর মত চমকাচ্ছে।

তানিয়ার পুলিশ অ্যারেস্ট হয়ে যাওয়ার পর মানান পরিবার পুরো ভেঙে পড়েছে। তার মা ড্যাড এবার তাথই এর জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েছে। তোড়ার দাদুর আর তামিম এর এই সব দেখতে বিরক্তি ধরে গেছিলো যখন মেয়েটা ছিল তখন কদর করেনি আর এখন এসেছে তার জন্য মরা কান্না কাঁদতে। তাই তারা একে একে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। এমনিতে তারা অনেক দিন তাদের তাথই কে দেখেনি তাই তারা লর্ড রেজেন্সি তে চলে আসে। এখানে এসেই গেটের মুখে রেয়ান্স এর সাথে দেখা হয় আর তারপরে একসাথে ভিতরে ঢুকে কিন্তু তারা প্রবেশ করতে পারিনি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ভিতরের চলতে থাকা সুন্দর মুহূর্ত টা নিজের চোখের ক্যামেরা দিয়ে বন্দি করতে থাকে।

-“দিভাই ।

তোড়া এতক্ষণ সবার সাথে মেতে থাকলে ও এই ডাক শুনে পিছনে দেখে সাথে সবাই। তোড়া পিছনে দেখতে দেখে তার দাদু তামিম আর রেয়ান্স দাঁড়িয়ে আছে। রেয়ান্স তার দিকে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ দৃষ্টি নিয়ে। তোড়া এক পলক তাকিয়ে চোখ ঘুরিয়ে তার দাদু আর ভাই এর দিকে তাকায় ।তার দাদুর চোখের জল দেখতেই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যায়।

-“দাদু তোমার কি হয়েছে? তোমার চোখে জল কেনো? তোড়া বলে ওঠে।

-” এটা আনন্দের পানি। আমার দিদিভাই টা কত খুশি তাই দেখে আমার চোখে ও পানি চলে এসেছে। তোড়ার দাদু বলে ওঠে।

তোড়া কিছু না বলে তার দাদু কে জড়িয়ে ধরে তার চোখে থেকে ও দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। তবে রেয়ান্স এর ইশারায় চোখের পানি মুছে নেয় উফ জ্বালা এই মানুষটা তার চোখের পানি ও আসতে দেবে না আরে বাবা খুশিতে কি একটু পানি ও আসতে পারবে না চোখে।

তোড়া তার দাদু আর ভাই কে ভিতরে নিয়ে গিয়ে তার বাপি ও মম এর সাথে পরিচয় করে দেয়। আর দুই দাদু তো গলায় গলায় জড়িয়ে ধরে। সবাই কে একসাথে মজা করতে দেখে তোড়ার চোখে আবারো পানি চলে আসে। সে তো এমনই একটা পরিবার চেয়েছিলো যেখানে হাসি খুশিতে ভরা থাকবে। থাকবে না কোনো ভেদাভেদ। আর আজ তার আশা পূরণ হয়েছে। সে তার পরিবার কে পেয়েছে। তোড়া ওদের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ভাবছে। রেয়ান্স চারিদিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে তোড়া কে টেনে সাইট হয়ে যায়।

তোড়া হঠাৎ এমন টান খেয়ে হকচকিয়ে যায়। তাকাতেই দেখে রেয়ান্স তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। তোড়া রেয়ান্স এর দিকে কটমট করে তাকাতেই রেয়ান্স তোড়ার দুই গালে টুপ টুপ করে চুমু খেয়ে নেয়। তোড়া রেয়ান্স এর এমন কাজে চোখ বড় বড় করে তাকায়। তারপরে চারিদিকে তাকিয়ে দেখে তাকে লিভিং রুমে থেকে টেনে অন্য সাইটে নিয়ে চলে এসেছে এবার নিজের দিকে তাকাতে দেখে তাকে পিলার এর সাথে চেপে ধরে আছে।

-“আমাকে এখানে কেনো আনলে? তোড়া দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।

-” একটু ভালোবাসা পেয়েছে তাই। সবাই তো তোমাকে ভালোবাস ছিল। তাই আমার ও একটু একটু ভালোবাসা পেয়েছে। রেয়ান্স বলে ওঠে।

-“ভালোবাসা পেয়েছে তো আমাকে টেনে আনার দরকার কি ছিল?

-” আরে বাবা তোমাকে না আনলে ভালো টা বাসবো কাকে? রেয়ান্স মুখে দুষ্টু হাসি নিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে ওঠে।

-” অসভ্য।

-“তোমার জন্য।তাহলে দোষটা কার আমার এমন অসভ্য হওয়ার পিছনে। রেয়ান্স বলে ওঠে।

-“আমি কি জানি। তোড়া মুখ বেকিয়ে বলে ওঠে।

-“তুমি কেনো জানবে না শুনি। আমি তো তোমার প্রেমে অসভ্য হয়ে গেছি। তোমাকে দেখেই আমি অসভ্য হয়ে গেছি। তোমাকে ভালোবেসে অসভ্য হয়েছি। তাহলে দোষটা কার। আমি তো এমন ছিলাম না। তুমি নিশ্চয়ই জানো আমি এর আগে একটা ভোলা ভালা বাচ্চা ছিলাম যার সাথে কোনো মেয়ের নাম জড়িয়ে যায় নি। আর এখন দেখো শুধু নাম নয় আমিতো তার মধ্যে ডুবে আছি। রেয়ান্স এক চোখ টিপে বলে ওঠে।

-“হু ঠিক সময়ে বিয়ে করলে বাচ্চার বাবা হয়ে যেতো আর সে নাকি বাচ্চা ছিল ঢং করো তুমি ঢং। তোড়া মুখ বাকিয়ে বলে ওঠে।

-” বলছো বাবা হয়ে যেতাম তাহলে এখন তো আমি বিবাহিত তাহলে বাবা যাওয়ার প্রস্তুতি নেই কী বলো। রেয়ান্স দুষ্টু হেসে বলে ওঠে।

-“এই এই চুপ। অসভ্য কোথাকার মুখে কিছু আটকায় না। তুমি তো দেখছি ভয়ংকর অসভ্য। দেখলে তো মনে হয় ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানেনা হু। বাইরে তোমাকে এমন ভাবে দেখলে না তোমার ফ্যানরা হা হয়ে যাবে। তাদের কাছে তো তুমি একজন রাজার মতো। তোড়া রেয়ান্স এর মুখ চেপে বলে ওঠে।

রেয়ান্স তার মুখে চেপে থাকা তোড়ার হাতে চুমু খায়। সাথে সাথে তোড়া হাত সরিয়ে নেয়।রেয়ান্স তোড়ার কোমরে টেনে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে ওঠে।

-“আমি বাইরে সবার কাছে রাজার মতো যাকে ছোঁয়া তো দূরের কথা তার কাছে আসতে গেলে দশ হাত দূরেই দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়। আর তুমি হলে সবার থেকে আলাদা মিসেস রেয়ান্স আমার ওয়াইফ তাই তোমার কাছে আমি আলাদা একটা খোলা বইয়ের মত যার সব পাতায় তোমাকে ঘিরে লেখা।

তোড়া কোনো কথা না বলে অপলক ভাবে রেয়ান্স কে দেখতে থাকে। রেয়ান্স এর বলা প্রতি টা কথা তার বুকে ধাক্কা দিয়েছে ভয়ংকর ভাবে। রেয়ান্স তোড়া কে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে থেকে টুপ করে তোড়ার ঠোঁটে চুমু খেয়ে নেয়।

-“অসভ্য। বলেই তোড়ার রেয়ান্স কে ধাক্কা মেরে হাসতে হাসতে চলে যেতে থাকে।

আর রেয়ান্স তোড়ার জায়গায় দাঁড়িয়ে তোড়ার চলে যাওয়া দেখে হাসতে থাকে।

তোড়া হাসতে হাসতে লিভিং আসতে ওখানে হওয়া কথা গুলো শুনে তার মুখের থেকে হাসি উড়ে যায়। এখন তার মুখে রাগের ছাপ ফুটে উঠেছে। চোখ মুখ কঠিন হয়ে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে ধরে চিৎকার করে বলে ওঠে সবার উদ্দেশ্যে।

-“তাথই মারা গেছে।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে…..

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৩৮

তোড়ার হঠাৎ এমন আগমনে সবাই চুপ হয়ে গেছে। তোড়ার মম ভীতু চোখে তোড়ার দিকে তাকায়। আর বাড়ির সবাই ও তোড়া কে দেখছে। তারা এতক্ষণ তোড়া কে নিয়েই কথা বলছিলো। তোড়ার দাদু তাদের বাড়ির কথা বলছিল সবাই কে তোড়ার মা আর ড্যাড এখন তোড়ার জন্য কতটা কষ্ট পাচ্ছে এই সব আলোচনা করছিলো আর তার মাঝেই তোড়ার আগমন ঘটে। রেয়ান্স তোড়ার এমন চিৎকার শুনে এসে দেখে তোড়া ক্ষুব্ধ হয়ে সবার দিকে তাকিয়ে আছে আর বাড়ির লোক সব চুপ হয়ে আছে। রেয়ান্স এসে তোড়া কে কিছু বলতে নিলেই তার আগেই তোড়া চেঁচিয়ে ওঠে।

-“তাথই মারা গেছে। তার আর কোনো অস্তিত্ব নেই। আমি শুধু মাত্র তোড়া । আমার একটাই পরিচয় দেওয়ান পরিবারের বড় মেয়ে তাসনীম দেওয়ান ও তালিব দেওয়ান এর মেয়ে আর রেয়ান্স এর স্ত্রী। আর কারোর মেয়ে হতে চাইনা আমি আর না কারোর পরিচয়। তাথই সেই রাতেই মারা গেছে সাথে তার সমস্ত পরিচয় ও। তাই দ্বিতীয়বার এই নামটাও আর উচ্চারণ করবে না।

কে আমার মা ড্যাড? ওনাদের কোনো যোগ্যতা নেই আমাকে নিজের মেয়ে বলে দাবি করার। শুধু জন্ম দিলেই বাবা মা হওয়া যায়না। তার সাথে বাবা হওয়ার কর্তব্য ও পালন করতে হয়। আর আমার যতদূর মনে পড়ে ওনারা ছোটো থেকে আমাকে অবহেলা ছাড়া কিছুই দেন নি তাদের নিজেদের লজ্জা বোধ হত আমাকে নিয়ে। সমাজে আমাকে মেয়ে বলে পরিচয় দিলে ওরা নিজেদের নিচু মনে করতো। তাহলে হঠাৎ কেনো ওদের আমার মত একটা নগন্য মেয়ের কথা মনে পড়ছে কেন বা আমাকে মেয়ে বলে দাবি করছেন। ছোটো থেকে ওদের থেকে একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমি ছটফট করেছি কিন্তু ওরা আমাকে দেখেও দেখেনি ওরা সব সময়ে মেতে থাকতো তাদের আরেকটা মেয়ে নিয়ে। আমি আজও জানি না আমাকে নিয়ে তাদের এত সমস্যা কি আমি কি এমন দোষ করেছিলাম যার জন্য ওদের ভালোবাসা পাইনি। তবে আর আফসোস নেই। তাথই মারা যাওয়ার সাথে সাথে তার সমস্ত চিহ্ন ও মিটিয়ে দিয়েছে। এখন আমার জীবনে আমার মা বাবা বোন সব কিছুই আছে তাই আর কাউকে প্রয়োজন নেই। তাই আমি দ্বিতীয়বার যেনো আর ওদের নাম না শুনি।

সহ্য করতে পারিনা আমি ওদের নাম আর ওদের সাথে জড়িয়ে কোনো কথা।

কথা গুলো বলেই তোড়া ওখান থেকে ওপরে চলে যায়। এতক্ষণ সবাই চুপচাপ তোড়ার কথা গুলো শুনছিল। তোড়ার কষ্ট আর কেউ জানুক আর না জানুক তোড়ার দাদু আর তামিম জানে যে ছোটো থেকেই তোড়া কত কষ্ট পেয়েছে। তোড়ার মম তোড়ার কথা গুলো শুনে আবেগী হয়ে পড়েন।

-“আমারই ভুল হয়েছে আমি কেনো বলতে গেলাম ওদের কথা। আমি তো জানতাম আমার দিদিভাই টা কতটা কষ্ট পেয়েছে ছোটো থেকে। তোড়ার দাদু দুঃখী হয়ে বলে ওঠেন।

-” আমার দিভাই অনেক কষ্ট পেয়েছে জীবনে ওদের জন্য। এখন একটু শান্তিতে আছে আর আমাদের উচিত হয়নি ওই বাড়ির কথা বলা। আমার দিভাই খুব অভিমানী আমাদের এই আলোচনায় ও অনেক কষ্ট পেয়েছে। তামিম কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে ওঠে।

বাড়ির বাকিরা ও মন খারাপ করে বসে আছে। আসলেই তাদের উচিত হয়নি। কিন্তু তোড়া আর রেয়ান্স কে তারা এখানে না দেখেই ভেবেছিল ওপরে আছে তাই ওই সব আলোচনা করছিলো তারা নিজেরাও বুঝতে পারিনি যে তোড়া ওই ভাবে চলে আসতে পারে।

রেয়ান্স এতক্ষণ চুপচাপ সবটা দেখছিল। সে জানে তোড়া এখন কতটা হার্ট হয়েছে। এর আগেও রেয়ান্স দেখেছে তোড়া তার ড্যাড এর মুখে তার নাম আর তাকে মেয়ে বলে পরিচয় দেয়ার জন্য কতটা কষ্ট পেয়েছে। আর আজ তো দ্বিগুণ বেশি এখন না জানি ওপরে গিয়ে কি শুরু করেছে। রেয়ান্স নিজের মনে চিন্তিত হতে থাকে।

কিন্তু একটা জিনিষ কিছুতেই মাথায় আসছে না তোড়া ও যেহেতু তাদের নিজেদের মেয়ে তাহলে এত অবিচার কেনো তোড়ার প্রতি। তাদের আরেক মেয়েকে তো ভালোভাবেই ট্রিট করেছেন তাহলে তোড়া কে নয়। কি হতে পারে এর পিছনের আসল রহস্য। কিছু হতে পারে বড় রকম যার জন্য তোড়ার সাথে তাদের এত অবিচার। রেয়ান্স যেনো এর মধ্যে কোনো বড়ো রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে।

-“তোমরা কোনো চিন্তা করো না আমি দেখছি তোড়া কে। রেয়ান্স সবার দিকে তাকিয়ে বলে উপরের দিকে যেতে থাকে।

রেয়ান্স নিজের মনে ভাবতে ভাবতে পকেট থেকে ফোন বের করে শাহীন কে কল করে।

-” আমি মানান পরিবারের সমস্ত ডিটেইলস চাই। ছোটো থেকে বড় সমস্ত কিছু গট ইট। রেয়ান্স শাহীন কে বলে ওঠে।

-” ইয়েস স্যার। বলেই শাহীন ফোন কেটে দেয়।

রেয়ান্স তার সমস্ত ভাবনা চিন্তা ছেড়ে রুমে ঢোকে। সামনে তাকাতেই দেখে তোড়া ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে আছে। চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে। চোখ মুখ ফুলে গেছে নিশ্চয়ই কান্নাকাটি করেছে। রেয়ান্স গুটি গুটি পায়ে তোড়ার সামনে এসে বসে। রেয়ান্স কিছু না বলেই তোড়া কে দু হাত দিয়ে নিজের বুকের মাঝে টেনে নেয়। বাবা মা থাকার কষ্ট সে ও বোঝে সে ও তো বাবা মা হারিয়েছে। তাই কিছু না বলেই তোড়া কে বুকের মাঝে জড়িয়ে রেখেই মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। সব সময়ে মুখে বলার প্রয়োজন বলার হয় না। পাশে থেকে হাতে হাত রেখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ও বোঝানো যায় সে পাশে আছে তার সব সময় এর জন্য।

তোড়া রেয়ান্স কে আকড়ে ধরে ফুফিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। আর রেয়ান্স তার মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে। তোড়ার চোখে পানি দেখে রেয়ান্স এর বুক ফেটে গেলেও সে শান্ত হয়ে তোড়ার কান্না শেষ হওয়ার অপেক্ষা করছে। সব সময়ে কষ্ট মনের মধ্যে চেপে না রেখে কেঁদে নিয়ে কিছুটা মন হালকা করা যায়। তাই রেয়ান্স চুপচাপ হয়ে আছে।

কিছুক্ষণ পর তোড়া শান্ত হতে রেয়ান্স তোড়ার মাথায় একটা স্নেহ চুম্বন একে দেয়। রেয়ান্স তোড়ার মাথা নিজের বুকে রেখেই বলে ওঠে।

-“ঠিক আছো তুমি? ঠিক লাগছে না এখন?

-” হু । তোড়া আর কোনো কথা বলে না।

রেয়ান্স তোড়া কে ওই অবস্থায় কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। বাথটাবের মধ্যে বসিয়ে দিয়ে পানি ছেড়ে দেয়। তোড়ার এই ঠান্ডা পানিতে যেনো এতক্ষণের সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। সামনে তাকাতেই দেখে রেয়ান্স তার দিকে ঝুঁকে বসে আছে। তোড়া রেয়ান্স এর দিকে হাত বাড়াতে রেয়ান্স বাথটাবের মধ্যে নেমে তোড়া কে নিজের বুকে নিয়ে চোখ বন্ধ করে এই মুহুর্ত টা কে উপভোগ করতে থাকে।

তাদের মধ্যে এখন তেমন কথা না হলেও একে অপরের পাশে থেকে নিজেদের কে অনুভব করছে তারা একে অপর এর সাথে মিশে আছে সব সময়ে অনুভূতি প্রকাশের জন্য কথার প্রয়োজন পড়ে না। কখনো কখনো নিরবতা ও অনুভূতি বোঝাতে সক্ষম থাকে।

তোড়া ওয়াশরুমে থেকে বেরোতে দেখতে পায় রেয়ান্স বাথরোব গায়ে জড়িয়ে রেখেই ফোনে কথা বলছে সাধারণত পুলিশের সাথে কথা বলছে। তোড়া একটু এগিয়ে আসতেই বুঝতে পারে রেয়ান্স তানিয়া আর অভির ব্যাপারে অফিসার এর সাথে কথা বলছে। তোড়া তানিয়ার নাম শুনতেই তার চোখ মুখ কঠিন হয়ে আসে। সে চুপচাপ রেয়ান্স এর কথা শেষ হওয়ার অপেক্ষা করতে থাকে।

রেয়ান্স ফোনে কথা বলা শেষ করে ঘুরে দেখে তোড়া দাঁড়িয়ে আছে চোখ দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তার মনের ভিতরে কি চলছে। রেয়ান্স এগিয়ে গিয়ে তোড়া কে নিজের কাছে টেনে নেয়। তোড়া রেয়ান্স এর দিকে তাকিয়ে এক পলক দেখে নিয়েই বলে ওঠে।

-“আমি তানিয়ার শাস্তি চাই। কঠিন থেকে কঠিন শাস্তি। ঠিক তেমনই শাস্তি যেমনটা ও আমার সাথে করতে চেয়েছিলো। সেই একই শাস্তি আমি ওকে দিতে চাই। আর তারপরে দেখতে চাই ও বেঁচে থাকে না কি মরে যায়। এটাই হবে ওর শাস্তি ওকে ও অনুভব করতে হবে মৃত্যু ভয় কাকে বলে।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে….

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন । রি-চেক করা হয়নি তাই টাইপিং মিসটেক থাকলে বুঝে নেবেন ।