ইষ্ক ইবাদাত পর্ব-৭০ এবং শেষ পর্ব

0
6330

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৭০(অন্তিম পর্ব)

হসপিটালে ওপারেশন থিয়েটার এর বাইরে বসে আছে রেয়ান্স। তোড়া কে ভিতরে নেওয়া হয়েছে কিছুক্ষণ আগেই। বাড়ির লোক ও সবাই দাঁড়িয়ে আছে। হটাৎ করেই তোড়ার যন্ত্রণা শুরু হতে রেয়ান্স দ্রুত হসপিটাল নিয়ে আসে। ডক্টর চেক আপ করে ভর্তি করে নেয়। কিন্তু তারপরে হঠাৎ করে তোড়া অবস্থা খারাপ হতে দেখে ওপারেশন থিয়েটার নিয়ে যাওয়া হয়। বাইরে এখন সব চিন্তিত হয়ে বসে। আর রেয়ান্স একদম পাথর হয়ে শূন্য দৃষ্টি নিয়ে ওপারেশন থিয়েটার এর দিকে চেয়ে আছে । তোড়ার যখন যন্ত্রণাতে চিৎকার করেছিলো তখন যেনো রেয়ান্স এর বুকের মধ্যে হাজারো ছুরি বিদ্ধ হচ্ছে।

এই কয়েক মাসে রেয়ান্স তোড়া কে আগলে রেখেছিলো। তার ভালোবাসার চাদরে মুড়ে রেখেছিলো সব সময়ে চোখ চোখে রাখত যাতে কোনও বিপদ না আসে। তার এতদিন চিন্তা একটা থাকলেও একটু আগে তোড়ার যন্ত্রণাক্লিস্ট মুখ দেখেই এখন তার মনের মধ্যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ভিতরে থেকে এখনও তোড়ার চিৎকার ভেসে আসছে। আর এই চিৎকারে ভিতরে ভিতরে দগ্ধ হয়ে যাচ্ছে রেয়ান্স।

অন্য দিকে তামিম শুধু পায়চারি করে যাচ্ছে। সেও আজ চিন্তিত হয়ে আছে তার দিভাই কে নিয়ে। কয়েকমাস হাসি মজার মধ্যে দিয়ে যে কিভাবে কেটে গেছে মামা হওয়ার একটা আলাদা অনুভূতি অনুভব করেছে কিন্তু আজ তার দিভাই এর কষ্ট তাকেও চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। লেখা তার মম এর পাশে বসে বসে তামিম কে দেখে যাচ্ছে কেমন চিন্তিত হয়ে পায়চারি করে যাচ্ছে। এতদিনে তাদের মধ্যে হতে থাকা ঝগড়ার রেশ কমে এসেছে ভিতরে জমে থাকা একে অপরের প্রতি যে অদ্ভূত অনুভূত তারা অনুভব করত এখন তার নাম ও জানে। তারা যে একে অপরকে পছন্দ করে সেটাও বোঝে। এখন আর ঝগড়া হয় না একে অপরের চোখে তাকিয়ে লজ্জা মিশ্রিত হাসি উপহার দেয়। তবে তামিম মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে লেখা কে রাগিয়ে দেয় আর সাথে সাথে বেঁধে যায় ঝগড়া। কারণ তার লেখা কে রাগিয়ে দিতে ভালো লাগে।

লেখা তার মম এর পাশে থেকে উঠে এসে তামিম এর সামনে দাঁড়িয়ে যায় চোখের ইশারায় শাহীন কে শান্ত করতে থাকে। আর শাহীন লেখার দিকে অসহায় চিন্তিত হয়ে তাকিয়ে থাকে। লেখা কোনো কথা না বলে তামিম কে এনে বসিয়ে দেয়। সবাই বসে বসে প্রহর গুনতে থাকে।

প্রায় এক ঘন্টা পরেই ভিতরে থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ আসতে সব বসা থেকে লাফিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। রেয়ান্স বুকে যেনো এক টুকরো প্রশান্তি বয়ে যায়। নার্স বেরিয়ে আসতেই সবাই এগিয়ে যায়। তবে দুটো নার্স কে পরপর বেবি কোলে বেরিয়ে আসতে দেখেই সবার চোখ কপালে উঠে যায়। সাথে এক টুকরো আনন্দ খেলে যায়। নার্স দুটো এসে রেয়ান্স এর সামনে দাঁড়াতে। রেয়ান্স মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে নার্স এর কোলের দিকে।

-“কংগ্রাচুলেশন মিস্টার রাওয়াত । আপনার টুইন্স বেবি ছেলে বেবি ও মেয়ে বেবি হয়েছে। নার্স দুটো রেয়ান্স দিকে বেবি কে এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে।

রেয়ান্স ওদের কে না ছুয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে। তার কিছু সেকেন্ড পর নার্স এর দিকে তাকিয়ে চিন্তিত হয়ে বলে ওঠে।

-” আমার ওয়াইফ? তোড়া কেমন আছে?

-” মিসেস রাওয়াত একদম ঠিক আছেন। তবে ওনার জ্ঞান ফেরেনি একটু পরেই ওনাকে নরমাল কেবিনে দেয়া হবে। নার্স বলে ওঠে

-“দেখা করতে পারি? রেয়ান্স বলে ওঠে।

নার্স মাথা নড়াতে রেয়ান্স আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করেনা উঠে বেরিয়ে যায়। আর এদিকে লেখা আর তামিম দুজন বেবি কে কোলে তুলে নেয়। সবাই এর মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায় মেতে ওঠে দুজন বেবি কে নিয়ে। ইতি মধ্যেই ওখানে রাই শাহীন ও চলে এসেছে। তারা দুজন ক্ষুদে কে নিয়ে মেতে ওঠে।

————

রেয়ান্স কেবিনে ঢুকে সামনে বেডে তোড়া কে অচৈতন্য হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে তার বুকে একটা ধাক্কা লাগে। সে এই ভাবে কখনোই তোড়া কে দেখেনি। রেয়ান্স আসতে আসতে এগিয়ে গিয়ে তোড়ার পাশে বসে পড়ে। তোড়ার সেলাইন চলা হাত আলতো করে নিজের হাতের মুঠো তে নিয়ে নেয় নিজের ঠোঁট স্পর্শ করায় চ্যানেল করা অংশে। আরেকটা হাত এগিয়ে এনে মাথায় বুলিয়ে দিতে থাকে। কিছুক্ষণ পর তোড়ার মুখের দিকে তাকিয়ে তোড়ার কপালে একটা ভালোবাসার উষ্ণ স্পর্শ বুলিয়ে দেয়। তোড়া জ্ঞান ফিরতে অনুভব করে রেয়ান্স এর উষ্ণ স্পর্শের। সাথে মুখে ফুটে ওঠে এক টুকরো হাসি রেখা। দুর্বল ভাবে পিট পিট করে চোখ খুলে তাকায়। সাথে সাথে তার চোখের সামনে ভেসে আসে আসে রেয়ান্স এর মুখ। রেয়ান্স তোড়ার জ্ঞান ফিরেছে দেখেই তোড়ার সারা মুখে তার ভালোবাসার স্পর্শ বুলিয়ে দিতে। তোড়ার কম্পনরত শুষ্ক ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। শুষে নিতে থেকে তোড়ার সমস্ত কষ্ট যন্ত্রণা। বেশ কিছুক্ষণ পরে তোড়ার থেকে সরে আসে। তোড়ার
বুকে মুখ গুঁজে দেয়। তোড়া বুঝতে পারে রেয়ান্স এর মনের অবস্থা।

-” আম স্যরি। আমার জন্য তোমাকে কত কষ্ট সহ্য করতে হলো। রেয়ান্স বলে ওঠে।

-” মিস্টার রাওয়াত আমি ঠিক আছি দেখো। আর তাছাড়া এমন কষ্ট সবাই এর হয়। শুধু আমার একার হয়নি। আর এই মুহূর্তে কেউ তোমার কথা শুনলে ভাববে যে তুমি কি করে নাম্বার ওয়ান বিজনেসম্যান হলে। তোড়া রেয়ান্স কে স্বাভাবিক করার জন্য মজা করে মৃদু হেসে বলে ওঠে।

রেয়ান্স তোড়ার থেকে সরে এসে দু হাতে তোড়ার মুখে তুলে কপালে উষ্ণ পরশ বুলিয়ে দেয়। তোড়া রেয়ান্স এর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-“বেবিদের কে দেখেছ?

-” হুম । তবে ছুয়ে দেখিনি। রেয়ান্স বলে ওঠে।

-“জানি তো। তোড়া রেয়ান্স এর গালে টিপে দিয়ে বলে ওঠে।

এর মধ্যে হইহই করে বাড়ির সবাই রুমে ঢুকে আসে বেবিদের যে নিয়ে। তামিম ও লেখা দুজন কে নিয়ে তোড়ার পাশে শুয়ে দেয়। তোড়ার মম এসে তোড়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তোড়ার কপালে চুমু খায়। সবাই একে একে শুভেচ্ছা জানাই। রুমের মধ্যে লেখা তামিম তাহা সবাই মিলে সেলফি সেশন শুরু করে। রেয়ান্স এক দৃষ্টিতে তোড়ার দিকে চেয়ে থাকে। তোড়া সবার সাথে কথা বললেও কোনা চোখে রেয়ান্স এর দিকে তাকিয়ে দেখে যে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

সবাই রেয়ান্স তোড়ার অবস্থা বোঝার পরই সবাই মৃদু হেসে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। সবাই বেরিয়ে যেতেই রেয়ান্স তোড়ার কাছে এগিয়ে এসে বসে। বাচ্চাদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার সদ্যোজাত বেবি তার রক্তের দিকে। দুটো বাচ্চা পুতুল শুয়ে আছে। যারা চোখ দুটো বুজে রেখেছে ঠোঁটের কোণে একটা হাসি খেলে আছে। হাত দুটো মুঠো বেঁধে থুতনির কাছে রাখা আছে। রেয়ান্স এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার বেবিদের দিকে। তোড়া তার বেবি ও তার বেবির বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। দেখছে কেমন ভাবে রেয়ান্স তাকিয়ে আছে।

রেয়ান্স নিচু হয়ে আলতো করে বেবিদের কপালে চুমু এঁকে দেয়। আর তার হাত দুটো নিয়ে ছোটো আঙুল গুলো জড়িয়ে রেখেছে। কিছুক্ষণ পর কেঁদে উঠতেই তোড়া হেসে ফেলে। আর রেয়ান্স চমকে ওঠে ওদের কান্না দেখে। ইতি মধ্যে রুমে ঢুকে আসে নার্স।

-“স্যার আপনাকে বাইরে যেতে হবে। এখন বেবিদের কে বেস্ট ফিডিং করাতে হবে। নার্স বলে ওঠে।

রেয়ান্স তোড়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আর নার্স এসে বেবি কে নিয়ে তোড়ার কাছে এগিয়ে ফিডিং করানোর জন্য। তোড়ার মুখে ফুটে ওঠে অনাবিল হাসির রেখা। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে কয়েক বিন্দু চোখের পানি। আজ সে মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করছে। মুখ নামিয়ে বেবির কপালে এঁকে দেয় ভালোবাসার স্পর্শ। এটা যে তাদের ভালোবাসার চিহ্ন তার রেয়ান্স এর চিহ্ন। তার বেবি ।

————–

কেটে গেছে চার মাস এর মধ্যে হাসি খুশিতে কেটে গেছে। তোড়ার সারাদিন কেটে যায় দুটো বিচ্চু কে নিয়েই। যেহেতু দুজন টুইন্স তাই তাদের কাজ কর্ম গুলোও একই হয়। আর ওদের সামলাতে সামলাতে বাড়ির সবাই হিমশিম খেয়ে যায়। সবাই মেতে থাকে এই দুজন কে নিয়ে। রেয়ান্স তার অফিস করে বাড়িতে এসে বসে যায় তার বেবি কে নিয়ে। আর বাচ্চা দুটো ও হয়েছে ও তেমন তাদের পাপা ছাড়া কাউকে চেনে না। একবার তাকে দেখলে আর ছাড়বে না। বেবি হয়ে যাওয়ার কিছু দিন পর থেকেই রেয়ান্স আবারো তোড়া কে প্রতিনিয়ত জিমে নিয়ে যায় তার ফিটনেস ঠিক রাখার জন্য। কারণ রেয়ান্স চায়না যে বেবিদের জন্য তোড়া তার ক্যারিয়ার থেকে সরে আসুক। বাড়ির সবাই ও তাই চায়। তাই এখন থেকেই তাকে আবারো তার ফিটনেস এর দিকে ধ্যান দেয়ায়। তবে তোড়া এখন কোনো কাজ করে না কেটে যায় তার এই বেবিদের আর তাদের বাবা কে।

তোড়া রেয়ান্স এর বেবিদের কে যদি ও এখনও মিডিয়ার সামনে আনা হয়নি বা এখনও জানানো হয়নি যে তার টুইন্স বেবি হয়েছে শুধু দু মাস পরেই লেখা তোড়ার ছেলের সাথে ছবি তুলে তার সোস্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে পোস্ট করতে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তারা শুধু জানে যে তোড়া রেয়ান্স এর শুধু একটা ছেলে হয়েছে এর থেকে বেশি কিছু নয়।

তোড়ার ওশিয়ান স্টার কোম্পানীর সাথে কন্ট্রাক্টড সাইন হয়ে ছিল কিন্তু নিমেষে এর ঘটনা এর পর পরই তোড়া তার কন্ট্রাক্টড ক্যানশেল করিয়ে দেয়। তোড়ার সমস্ত ডকুমেন্ট নিয়ে রেয়ান্স নিজের কোম্পানী আর আর কোম্পানিতে জয়েন করিয়ে নেয়। তবে এখনও অফিসিয়াল ভাবে কাজ শুরু করেনি তোড়া।

অন্য দিকে লেখা তামিম নিজেদের মনের কথা মুখ থেকে বের করে দিয়েছে। বলতে গেলে এই জুটি এখন চুটিয়ে প্রেম করছে একসাথে ইউনিভার্সিটি যাওয়া বাড়িতে একসাথে থাকা আর মাঝে মাঝে খুনশুটি করা লেগেই আছে। এটা কারোর নজরে না পড়লেও তোড়ার নজরে ঠিক এসেছে।

—————–

তিন বছর পর…..

লন্ডন… আজ ও একই রকম ভাবে তিন বছর আগের মত অ্যাওয়ার্ড শেরিমেনি হলে বসে আছে তোড়া। সাথে আছে বাড়ির লোক। তবে এখানে তার সাথে রেয়ান্স ও তার বেবিদের কে দেখা যাচ্ছে না। তোড়ার পরনে রয়েছে একদম বাঙালি সাজ সাদা ও লাল পাড় এর বেনারসি। মাথায় খোপায় বেলি ফুলের মালা জড়ানো। হাতে সোনার ও হিরের তৈরী ডিজাইনিং রুলি বাঁধানো। তার সাথে আগের দেয়া সেই ব্রেসলেট। নাকে নোস পিন। ও গলায় সোনার মাল্টি লেয়ার এর সিম্পল লং নেকলেস। তোড়া কে দেখতে আজ একদম বাঙালি গৃহ বধূ লাগছে। তার দিকে থেকে এই মুহূর্তে চোখ সরানো দায়।

আজ এখানে ওয়ার্ল্ড নাম্বার ওয়ান মডেল অ্যাওয়ার্ড শো এর ইভেন্ট চলছে যেখানে তোড়ার ও নাম আছে। তবে আজ আর তোড়ার মধ্যে কোনো চাপা উত্তেজনা কাজ করছে না তার মধ্যে এখন কনফিডেন্ট হাই লেভেল হয়ে গেছে যদি ও এখানের এই লড়াই খুব টাফ। এখানে যাদের নাম আছে তারা সবাই খুবই স্কিলড মডেল।

এর মধ্যে হঠাৎ করেই আবারো তোড়ার উপরে এসে স্পট লাইট থেমে যায়। সাথে সাথে তোড়ার নাম অ্যানাউন্স করে। তোড়ার নামের সাথে এর ও নাম যোগ আছে সে তাদের বিয়ের অ্যানাউন্স এর পর থেকে আর তোড়া দেওয়ান বলে পরিচিত দেয়না সে তারপর থেকেই তার সার নেম মিসেস তোড়া রেয়ান্স রাওয়াত রেখেছে ।আর সব জায়গাতেই এই নাম উঠে এসেছে তোড়ার কাজের সাথে সাথে।

আর এবারও তোড়া কে কিছু বলতে বলা হলে সে সেই আগের একই উত্তর দিয়ে দেয় তবে তার সাথে যোগ হয়েছে তার দুই পিচ্চি বাচ্চার নাম। অ্যাওয়ার্ড যিনি দিতে আসছেন তার নাম শুনতেই তোড়ার অজান্তেই তোড়ার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। রেয়ান্স নাম্বার ওয়ান বিজনেসম্যান আর তাকে প্রায় দু বছর পরে পরে এই দিন উইনার এর হাতে পুরস্কার তুলে দিতে হয়। আর আজ সে পুরস্কার তুলে দেবে তার স্ত্রী এর হাতে। হ্যাঁ এখানে রেয়ান্স কে ডাকা হয়েছে।

হঠাৎ করে আদো আদো বুলিতে মাম্মা ডাক শুনে তোড়া পাশে তাকাতেই দেখতে পায় তার দুই পিচ্চি রেয়ান্স এর দুই হাত ধরে এগিয়ে আসছে। তাদের বয়স তিন বছর এখন তারা আদো আদো বুলিতে কথা বলে। ওখানে থাকা বাকি সবাই অবাক হয়ে যায় পিচ্চি বাচ্চার কথা শুনে। তোড়া ওদের দেখেই হাত বাড়িয়ে দেয় এর সাথে সাথে দুজন এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে তোড়ার বুকে।

রেয়ান্স তোড়ার কাছে এসে এক হাত দিয়ে ট্রফি নিয়ে হাঁটু ভেঙে বসে দুই বাচ্চার সাথে হাতে হাত মিলিয়ে ট্রফি টা তোড়ার দিকে এগিয়ে । তোড়ার জীবনের সেরা পাওনা ছিল এটা। তার এত স্টাগল আজ সার্থক হলো। তোড়া ট্রফি টা নিতেই সব এক সাথে জড়িয়ে ধরে। বাকিরা শুধু তাদের সামনে হতে থাকা দৃশ্য দেখতে থাকে। এত আবেগ ঘন ভালোবাসা মোড়া মুহূর্ত দেখেই তাদের চোখে ও পানি ফুটে ওঠে।

রেয়ান্স উঠে দাঁড়িয়ে তোড়া কে একহাত দিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে। তাদের দুজনের কোলে রয়েছে তাদের বেবি। রেয়ান্স এবার সারা পৃথিবীর সামনে তার স্ত্রী ও ছেলে মেয়ের পরিচয় করিয়ে দেয়। এতদিন পর রেয়ান্স তার ছেলে মেয়ের পরিচয় সবার সামনে নিয়ে আসে।

-“রাগ রাওয়াত । তোড়া তাদের ছেলে কে দেখিয়ে বলে ওঠে।

-” রহস্যা রাওয়াত ।রেয়ান্স তার কোলে থাকা পুতুল কে দেখিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।

সাথে সাথে পুরো জায়গা জুড়ে কোলাহল ভরে ওঠে। আজ ওয়ার্ল্ড নাম্বার ওয়ান বিজনেসম্যান ও ওয়ার্ল্ড নাম্বার ওয়ান মডেল এর বেবি কে সবার সামনে পরিচয় দিলো। সবাই একসাথে তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছে।

————-

-“রাগ, সিড তোমরা তাড়াতাড়ি এসো জলদি রেডি হতে হবে রুহু রেডি হয়ে গেছে। তোড়া ডেকে ওঠে।

-” ইয়েস মাম্মা আম কামিং। রাগ সাড়ে তিন বছরের ছেলে বলে ওঠে।

-“মাম আমিও এসে গেছি। সিড বলে ওঠে।

রাগ আর সিড সব সময়ে একসাথে থাকে সাথে আরো একজন রহস্যা তাদের ছোট্ট পুতুল। রাগ রহস্যার থেকে এক মিনিট এর বড় তবুও বড় মাঝে মাঝে বুনু বলে ডাকে তো কখনও রুহু বলে ডাকে। সিড হল রাই ও শাহীন এর ছেলে আড়াই বছরের বাচ্চা কিন্তু প্রচণ্ড দুরন্ত। তোড়া রেয়ান্স এর ছেলে মেয়ে একদম বাবা ও মায়ের কপি ক্যাট এখন থেকেই তারা তাদের মাম্মা ও পাপার স্টাইল কপি করে একই রকম ভাবে কথা বলবে আর অ্যাটিটিউড তো কুট কুট করে ভরা। দেখেই মনে হবে যে এই দুজন রেয়ান্স রাওয়াত এর ছেলে মেয়ে। একদম বাবার জেরক্স কপি এই দিকে থেকে।

তোড়া ওই তিনজন পিচ্চি কে রেডি করে নিচে চলে আসে। সিড বেশির ভাগ সময়ে রাগ রহস্যার সাথেই কেটে যায় যেহেতু রাই ও শাহীন দুজনই তোড়া রেয়ান্স এর অ্যাসিস্ট্যান্ট তাই ওদের সাথে থাকতে হয়। যদি তোড়া রেয়ান্স তাদের কাজ করলে ও তাদের বেবি কে টাইম দিতে ভলে না। আর তোড়া সেতো তার এই বাচ্চাদের উপর জান দিয়ে দেয় সে চায়না সে ছোটো থেকেই যে অবহেলায় বড় হয়েছে তার ছেলে মেয়ে যেনো তার এক অংশ না পায়।

এদিকে নিচে এসেই তিনজন পিচ্চি ফটো শুট করতে শুরু করে দিয়েছে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে। আজ কে তামিম ও লেখার বিয়ে। তারা আজ তাদের সমস্ত রাগ ঝগড়া ভুলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছে সারাজীবন এর জন্য। আর সেখানেই এই তিন জন একদম অ্যাটিটিউড নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

-“আংকেল আমাদেল ছবি তুলুন। সিড এসে আদো আদো ভাবে বলে ওঠে।

ফটোগ্রাফার এত ক্ষুদে একজন কে দেখে অবাক হয়ে গেছে সাথে তাদের তিনজনের পোজ দেয়ার স্টাইল দেখে হয়রান হয়ে গেছে। তারা একের পর এক পোজ দিয়ে ফটো তুলে যাচ্ছে। রাগ আর রহস্যা কে দেখে সত্যি মনে হচ্ছে এরা একজন আর্টিস্ট এর বেবি। দুজনই তাদের বাবা মায়ের স্কিল রপ্ত করেছে।

বিয়ে বাড়িতে এসে সবাই বিয়ে উপভোগ করবে কি তারা হা হয়ে এই তিন পিচ্চি ছবি তোলা দেখে যাচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ তোড়া এসে ওদের সরিয়ে নিয়ে যায়। আর ফটোগ্রাফার তো যেনো দম নিয়ে বেঁচে গেছে এতক্ষণ তাকে হয়রান করে ছেড়ে দিয়েছে এই তিন পিচ্চি।

এদিকে বিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে। রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেছে এবার ধর্মীয় মতে বিয়ে বাকি আছে। এদিকে দোয়া পড়ে ওদের কবুল বলার সময় এলেই একে একে কবুল বলে দেয়।

-“মাম্মা । মামাই আর মিমি কবুল কেনো বলছে? রাগ প্রশ্ন করে ওঠে।

-” বেটা তোমার মামাই আর মিমি তো বেস্ট ফ্রেন্ড হয় তাই তারা একসাথে থাকার জন্য কবুল বলছে। তোড়া বলে ওঠে ।

-“ওহ তাহলে আমিও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে কবুল বলব তাহলে আমিও সিড এর সাথে একসাথে থাকতে পারবো তাই না। রহস্যা বলে ওঠে।

আর এই কথা শুনেই তোড়া কপাল চাপড় মারে। আর ওদের পাশে থাকা বাকিরা হেসে ওঠে। রেয়ান্স তোড়ার পাশে এসে দাঁড়িয়ে এক হাত দিয়ে তোড়ার কোমর জড়িয়ে মুচকি হেসে ওঠে। আর ওই দিকে রাগ রহস্যা সিড তিনজন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে একসাথে কবুল বলে ওঠে।

ওদের এই কান্ড দেখে চারদিকে হাসির রোল উঠে পড়ে। সবাই বিয়ে ছেড়ে ওদের নিয়ে পড়ে। আর এদিকে রেয়ান্স তোড়া কে নিয়ে ।কাজের চাপে আজ সারাদিন তোড়া কে কাছে পায়নি। একটু যে মন ভরে দেখবে সে চান্স টুকু ও পায়নি। তাই এখন সুযোগ বুঝে রেয়ান্স তোড়া কে নিয়ে বাগানের উল্টো সাইডে চলে আসে যেখানে কোনো কেউ নেই ওরা ছাড়া।

রেয়ান্স তোড়া কে কোমরে জড়িয়ে রেখেই তোড়ার মুখের দিকে চেয়ে আছে। আজও তার ওয়াইফি কে অসাধারণ লাগছে যার দিকে থেকে সে চোখ সরাতে পারছে না। তোড়া রেয়ান্স এর এমন ঘোর লাগা দৃষ্টি দেখেই চোখ বন্ধ করে নেয় সাথে সাথে অনুভব করে তার কপালে উষ্ণ স্পর্শ। ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে একটা মিষ্টি হাসি।

-“ভালোবাসি ওয়াইফি । রেয়ান্স তোড়া কে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে তোড়ার আলতো করে ঠোঁট ছুয়ে বলে ওঠে।

-“ভালোবাসি মিস্টার রাওয়াত । তোড়া রেয়ান্স এর বুকে নিজের মাথায় ঠেকিয়ে বলে ওঠে।

আজ এই দ্বিতীয়বার এর জন্য তারা দুজন মুখ ফুটে একে অপরকে তাদের ভালোবাসার কথা বললো। তারা মুখে না বলে এতদিন নিজেদের ব্যবহারের মাধ্যমে বুঝিয়ে এসেছে একে অপরের প্রতি থাকা ভালোবাসার উষ্ণ অনুভূতি। আজ তাদের ভালোবাসার মুহুর্ত গুলো যেনো প্রাণবন্ত হয়ে আছে একদম সেই প্রথম দিনের মতো। যা কখনোই পরিবর্তন হওয়ার নয় বরং আরো দ্বিগুণ হারে বাড়তেই থাকবে সময়ে এর সাথে সাথে।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. সমাপ্ত…….. ।

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…. ।