ইষ্ক ইবাদাত পর্ব-৭+৮

0
7385

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৭

-” তাথই । অস্পষ্ট ভাবে বলে ওঠে তানিয়া সামনের মেয়েটি কে দেখে।

-” লুক লাইক এ তাথই। বাট দ্য গার্ল ইজ নট এ তাথই ।অভি অবাক মুগ্ধ দৃষ্টিতে মেয়েটি কে দেখতে দেখতে বলে ওঠে।

তানিয়া সামনে দাঁড়ানো মেয়েটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে। তার চোখে মুখে এখন মিক্সড এক্সপ্রেশন দেখা যাচ্ছে ভয় বিস্ময় আর অবাক এর। সে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি কে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো ভাবে স্ক্যান করছে। আর তার পাশে অভি তো মোহে পড়ে দেখছে তার পাশে যে এখন তানিয়া বসে আছে সেটা যেনো ওর মাথায় থেকে চলে গেছে। আর এদিকে অডিয়েন্স আর বাকিদের মধ্যে গুঞ্জন পড়ে গেছে মেয়েটি কে দেখে সবার দৃষ্টি এখন আটকে আছে মেয়েটির ওপর। না মেয়েটি কে চেনে বলে নয় মেয়েটির সৌন্দর্যের জন্য।

রেয়ান্স এখনও মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে। সে তো চোখের পলক ফেলছে না । অডিয়েন্স এর গুঞ্জন আর পাশে বসে থাকা জাজদের আলোচনা এত জোর হয়ে গেছে যে রেয়ান্স তার ভাবনা ছেড়ে বাস্তবে ফিরে আসে। এবার চারিদিকে লক্ষ্য করে নিজে ঠিক হয়ে বসে সামনের দিকে তাকায়। মেয়েটি আলতো পায়ে সামনের দিকে এগিয়ে আসছে। কোইন্সিডেন্সলি তার আর মেয়েটির ড্রেস কালার ম্যাচ করে গেছে। রয়্যাল ব্লু এর ডিপ নেক স্লিভলেস গাউন পরে আছে যেটার লেস পিছন থেকে টানা খেতে খেতে আসছে। কাঁধের ওপর থেকে ও পা পর্যন্ত দুটো লেস ঝুলছে। যেটা মাঝে মাঝে দুটো হাত দিয়ে খুব সুন্দর ভাবে কভার করছে। মাথার চুল গুলো হালকা কার্ল করে ছাড়া আছে সামনের কিছু চুল ব্লু কালার করা। কিন্তু সব থেকে আকর্ষণীয় হল মুখটা কারণ মুখে কোনো মেকআপ নেই। লাইনার আর ঠোঁটে হালকা পিঙ্ক লিপগ্লস ছাড়া পুরো মেকআপ বিহীন ফর্সা মুখ। ঘন পাপড়ি যুক্ত খুব সুন্দর টানা টানা দুটো গভীর চোখ যে চোখের দিকে তাকালে হারিয়ে যাবে যে কেউ। ঠোঁট দুটো ও যেনো খুব নিখুঁত ভাবে বানানো হয়েছে। পুরো মুখটা যে কাউকে আকর্ষণ করতে যথেষ্ট। আর তার সাথে আছে হাঁটার স্টাইল লুক এক্সপ্রেশন সব কিছুই ওখানে থাকা প্রত্যেক এর নজর কেড়ে নিয়েছে। আর সব থেকে আকর্ষণীয় হল মুখের হাসি অ্যাকচুয়ালি বোঝায় যাচ্ছে না আসলে হাসছে কি না।

মেয়েটির এই রূপ দেখে সবাই আশ্চর্য হয়ে গেছে সাথে সব মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে স্টেজ আসতেই সবার নজর নিজের দিকে কেড়ে নিয়েছে। মিডিয়ার ক্যামেরা ফ্ল্যাশ ফটাফট আওয়াজ হচ্ছে। সাথে ওখানে থাকা প্রত্যেক টা লোকের মধ্যে ও চাপা উত্তেজনা কাজ করছে। সবাই এক দৃষ্টিতে পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করে যাচ্ছে। তানিয়া অবাক হয়ে দেখে যাচ্ছিলো হঠাৎ ওর চোখ পড়ে অভি এর দিকে দেখতে পায় কেমন একটা দৃষ্টিতে ও মেয়েটি কে দেখছে সাথে সাথে অভির হাতের ওপর ওর হাত আরো চেপে বসে।

তোড়া সামনে এসে সেন্টারে দাঁড়িয়ে যায় কোমরে হাত রেখে নিজের চেহারা ক্যামেরার দিকে করে। আসতে আসতে তিনবার পশ্চার চেঞ্জ করে। আর এই প্রত্যেকটা মুহূর্ত ছিল সবার জন্য চমক এর মত। লুক এক্সপ্রেশন পোজ পশ্চার চেঞ্জ সব কিছু তাক লাগিয়ে দিয়েছে সবাই কে। সবাই কে যেনো সে চুম্বক এর মত আকর্ষন করছে নিজের দিকে।

রেয়ান্স পুরো টা সময়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার প্রত্যেকটা মুভমেন্ট ফলো করছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো মেয়েটি তার দিকে একবার ও তাকায়নি তাকে পুরো পুরি ভাবে যেনো ইগনোর করে গেছে। এতক্ষণ এখানে যারা যারা পারফরম্যান্স দিয়ে গেছে তারা প্রত্যেকেই মেকআপ সুন্দরী আর তার সাথে সবাই তাকে নিজের দিকে আকর্ষণ করার চেষ্টা করছিলো সবাই তার দিকেই বেশি দেখেছিলো। কিন্তু এই মেয়েটি নিজের পারফরম্যান্স ছাড়া অন্য কোনও দিকে তার নজর নেই। আর তাকে তো পুরো নেই করে দিয়েছে মেয়েটা তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার কোনো চেষ্টায় করিনি কিন্তু সে নিজের থেকে যেনো খিঁচে চলে যাচ্ছে।

তোড়া ভিতরে যেতেই এবার আরো একবার বাকি সব প্রতিযোগীরা এক সাথে স্টেজ উঠে সামনের থেকে ঘুরে গিয়ে পর পর লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। আর এবারে ও সবার সাথে সবার নজর মেয়েটির ওপর আগে চলে যায়। হোস্ট এসে স্টেজ কভার করছে। কিছুক্ষণ পরে এবার আসে রেজাল্ট অ্যানাউন্স এর সময়। স্টেজ থাকা সবাই একে অপরের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ওখানে থাকা তিন জন জাজ রেয়ান্স এর সাথে কথা বলছে। রেয়ান্স কথা বলার মাঝে একবার কোনা চোখে তোড়া কে দেখে নেয় যে শান্ত হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে তার মধ্যে কোনো উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে না।

ওখানে থাকা তিনজন জাজ একে একে উইন টপ টেন মডেল এর নাম অ্যানাউন্স করছেন। আর সাথে সাথে ওখানে থাকা বাকি প্রতিযোগীরা সামনে এগিয়ে আসছে একে একে তাদের সবাই কে মডেল ট্যালেন্ট হান্ট কম্পিটিশন এর ব্যাচ পরিয়ে দেয়া হচ্ছে। ওদের মধ্যে বাকি আছে তিনজন। আর এটার সাথে সাথে ওখানে প্রত্যেক এর উত্তেজনা আকাশ ছুঁয়ে যাচ্ছে কে হবে উইনার। একে একে বাকি দুজনের ও নাম নেয়া হয়ে গেছে এবার আসে ফার্স্ট রানার আপ এর নাম অ্যানাউন্স করার। রেয়ান্স বাঁকা হেসে তাকিয়ে আছে তোড়ার দিকে যে এখনও সেই আগের মত চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। যখন ফার্স্ট কে হয়েছে জানার জন্য সবাই উৎসুক হয়ে আছে সাথে সাথে নাম অ্যানাউন্স হয়ে যায়।

-” তোড়া দেওয়ান ।

সাথে সাথে পুরো জায়গা জুড়ে চিৎকারে ভরে যায়। আর সবার মুখে এখন একটাই নাম তোড়া। রেয়ান্স এখনও তাকিয়ে আছে কিন্তু সে অবাক হয়ে কারণ মেয়েটি ফার্স্ট হয়েছে কিন্তু সে সেই আগের মত চুপচাপ সামনের দিকে এগিয়ে আসছে তার মুখের ভাব সেই এখনও আগের মত কোনো চেঞ্জ হয়নি। আর এটা দেখেই রেয়ান্স অবাক হয়ে যাচ্ছে। সবার মধ্যে আনন্দ উত্তেজনা বিরাজ মান থাকলেও সেটা তোড়ার মধ্যে নেই। সে চুপচাপ নিজের এগিয়ে সামনে।

তোড়ার সামনে এগিয়ে আসতে রেয়ান্স উঠে আসে নিজের জায়গা থেকে। স্টেজ এসে তোড়ার পাশে দাঁড়িয়ে যায়। রেয়ান্স এর হাতে ট্রফি তুলে দেয় তোড়া কে দেয়ার জন্য। রেয়ান্স বাঁকা হেসে তোড়ার দিকে এগিয়ে দেয় ট্রফি টা। তোড়া সেই একই ভাবে হাত এগিয়ে ট্রফি টা নিয়ে নেয় আর এই সময়ে এর মধ্যে একে অপরের হাতের সাথে টাচ করে যায়। কিন্তু এতে তোড়ার কোনো ভাবান্তর নেই কিন্তু রেয়ান্স এর যেনো শক লেগে গেছে তোড়ার হাতের সাথে স্পর্শ হতে। আর তার সাথে তার হার্ট ও প্রচণ্ড জোরে বিট করতে শুরু করেছে।

-“থ্যাঙ্কস । তোড়া রেয়ান্স এর দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে ওঠে।

তোড়ার মুখের থেকে এই একটা কথা শুনেই রেয়ান্স এর মধ্যে একটা ঠান্ডা শিরশিরানি অনুভব হয়। কারোর ভয়েস ও এত মিষ্টি এত কোমল হতে পারে যা শুনলেই গায়ের মধ্যে কেমন শিহরন জেগে যায়। এত মাদকতা কি হতে পারে কারোর ভয়েস। এটাই ভেবে চলেছে রেয়ান্স। এর পর স্টেজ থাকা প্রত্যেকে সাথে ছবি তুলে নেমে আসে তোড়া। সাথে সাথে মিডিয়া ও বাকি থাকা প্রত্যেকে তোড়ার সাথে কথা বলার জন্য হামলে পড়ে কিন্তু সাথে সাথে কয়েকজন গার্ড এসে তোড়া কে কভার করে নেয়। রেয়ান্স এখনও সেই একই জায়গা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোড়া কে দেখে যাচ্ছে।

-“স্যার যাবেন না? শাহীন এসে রেয়ান্স কে বলে ওঠে।

-“ওহ হ্যাঁ চলো। বলে রেয়ান্স সামনে পা বাড়িয়ে ও আবার ফিরিয়ে নেয়।

-“শাহীন আমার এই মিস তোড়া দেওয়ান এর ব্যাপার সব ডিটেইলস চাই। রেয়ান্স তোড়ার দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বলে ওঠে।

-” ওকে স্যার। অবাক হয়ে বলে ওঠে শাহীন। সে বুঝতে পারছেনা সে কি ভুল শুনেছে নাকি সত্যি এটাই। যে স্যার কখনো মেয়েদের থেকে দূরে থাকতো যে কখনো কোনো মেয়ের প্রতি ইন্টারেস্ট দেখায়নি সেই আজ একটা মেয়ের ব্যাপার জানতে চাইছে এটা ভেবেই সে রেয়ান্স এর পিছু পিছু বেরিয়ে যায়।

তোড়া মিডিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কারন তাকে ঘিরে আছে সবাই তাই এখনও সে দাঁড়িয়ে আছে। সে একবার চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নেয় দেখে সবাই এখন তার সাথে কথা বলার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। তোড়ার দৃষ্টি হঠাৎ করেই দূরে আটকে যায় আর সাথে সাথে তার চোখ মুখ শান্ত স্থির থেকে কঠিন হতে শুরু করে। তোড়া আর কোনো কথা না বলে তার গার্ড কে ইশারা করতে তারা তাকে নিয়ে বেরিয়ে যেতে থাকে ভিড় কাটিয়ে কিন্তু হঠাৎ কাঁধে কারোর স্পর্শ পেতেই থেমে যায়

-“তাথই । তানিয়া পিছন থেকে ভ্রু কুঁচকে ডেকে কাঁধে হাত দিয়ে ডেকে ওঠে। কারণ তার মনে এখনও কোনও কারণে সন্দেহ হচ্ছে সে যেনো এখনও ঠিক মেলাতে পারছে না সব কিছু।

তোড়া পিছন এক ঝটকা দিয়ে নিজের কাঁধের থেকে হাত সরিয়ে দেয়। তার পরেই পিছন মুড়ে তাকায় দেখে অভি ও তানিয়া তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। তোড়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে তানিয়ার দিকে দেখতে থাকে।

-“স্যরি মিস তাথই নয় তোড়া দেওয়ান। লেখা হঠাৎ করেই তানিয়ার সামনে এসে বলে ওঠে।

-” স্যরি অ্যাকচুয়ালি আমাদের মিসটেক হয়ে গেছে নামটা নিয়ে। অভি ম্যানেজ দিতেই একটা হাসি দিয়ে তোড়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

-“আপনারা কি আমাকে চেনেন? তোড়া ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-“না না। অভি বলে ওঠে।

-” তাহলে একজন অপরিচিত মানুষের কাঁধে হাত দিয়ে ডাকা কি কোনো ম্যানার্সের মধ্যে পড়ে। তোড়া রূঢ় আওয়াজ বলে ওঠে।

-” স্যরি মিস অ্যাকচুয়ালি আপনার পারফরম্যান্স দেখে ও খুব মুগ্ধ হয়ে গেছিল তাই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি অভি তাড়াতাড়ি করে বলে ওঠে।

তোড়া এখনও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তানিয়ার দিকে আর তানিয়া ও ভ্রু কুঁচকে তোড়া কে পর্যবেক্ষণ করছে।

-” মিস তোড়া হায় আমি অভিরাজ স্টার গ্রুপ এর সি ই ও। আমরা আসলে আপনার সাথে কন্ট্রাক্টড সাইন করতে চাইছি। আমরা আমাদের কোম্পানিতে আপনাকে মডেল হিসাবে সাইন করতে চাইছি সো এই ব্যাপারে কি কোনো কথা বলা যাবে। অভি গদগদ হয়ে বলে ওঠে।

-” স্যরি আম নট ইন্টারেস্টটেড। তোড়া বলে ওঠে।

-” মানে? অভি অবাক হয়ে বলে ওঠে।

-“মানে আমি এখন কন্ট্রাক্টড সাইন করার জন্য প্রস্তুত নয় তাই যদি কখনো মনে হয় তাহলে আমি নিশ্চয়ই কথা বলবো। বলে তোড়া বেরিয়ে যায়।

তোড়া আর লেখা বেরিয়ে যায় গাড়িতে উঠে আর এদিকে তানিয়া আর অভি এক ভাবে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে তোড়ার যাওয়ার দিকে। তোড়া যে তাদের কোম্পানিতে সাইন করার কথা খুব সুন্দর ভাবে নাকচ করে দিয়েছে সেটা বুঝতে পারে। তোড়ার এই অ্যাটিটিউড দেখে তানিয়া বোঝে এটা কিছুতেই তাথই হতে পারে না। আর এদিকে টি অভি লাট্টু হয়ে গেছে তোড়ার সৌন্দর্যে।

————–

রেয়ান্স লর্ড রেজেন্সি নিজের বাংলোতে ঢোকে তার মন মস্তিষ্কের মধ্যে এখনও তোড়া ঘোরাঘুরি করছে সে কালকের ইভেন্ট এর পর থেকে কোনও কাজে মন বসাতে পারেনি সারাক্ষণ তার মাথার ভিতরে জেকে বসে আছে তোড়া। চোখ বন্ধ করলেই ওই শান্ত মুখটা ভেসে আসছে তার চোখের পাতায়। তাই আজ তাড়াতাড়ি অফিসের সমস্ত কাজ শেষ করে বাড়ি চলে এসেছে। গাড়ির থেকে নেমে বাড়ির ভিতরে এন্টার করতে লিভিং রুমের দিকে চোখ যেতেই তার চোখ কপালে ওঠে। সে বুঝতে পারছেনা সে কি ঠিক দেখছে নাকি ভুল দেখছে এটা তার মনের ভুল নয়তো। সে পিছন ফিরে শাহীন এর দিকে দেখে সে ও তার মত হা করে লিভিং রুমের দিকে দেখছে। রেয়ান্স এখনও নিজের মন মস্তিষ্কের খেলা বুঝে উঠতে না পেরে নিজের হাতে চিমটি কাটে আর সাথে সাথে তার মুখ থেকে হালকা মৃদু চিৎকার বেরিয়ে আসে। এবার চোখ তুলে সামনে তাকাতেই আবারো দেখতে পায়। না এটা তার মনের ভুল নয় এটা সত্যি তার সামনে বসে থাকা মেয়েটা সত্যি।

-“তোড়া । রেয়ান্স এর মুখ থেকে অষ্ফুটে বেরিয়ে আসে নামটা।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে…..

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৮

লিভিং রুমের সোফায় বসে আছে তোড়া আর তার পাশেই বসে আছে তার দাদু আরো দুই জন কেউ বসে আছে তবে বোঝা যাচ্ছে না কে হতে পারে এদিকে পিছন করে বসে আছে তাই রেয়ান্স বুঝতে পারছে না। তার তো এখন চোখ জোড়া আটকে আছে সামনে বসা তোড়ার ওপর। মেয়েটা কে আগের দিনের তুলনায় আরো বেশি স্নিগ্ধ লাগছে। আজ আবারো নতুন করে যেনো আকর্ষণ করছে তাকে। রেয়ান্স এখনও সেই একই অবস্থায় দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে দেখছে। শাহীন পাশে দাঁড়িয়ে ব্যাপারটা খেয়াল করে। সে প্রথম থেকেই খেয়াল করেছিলো তার স্যার কে এই মেয়েকে দেখলেই যেনো হারিয়ে যায় এক ভাবে তাকিয়ে থাকে। এরই মাঝে হঠাৎ করে তোড়ার নজর গেট এর সামনে দাঁড়ানো রেয়ান্স এর ওপরে পড়ে সে দেখে লোকটা কিভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তোড়া ভ্রু উঁচু এক পলক তাকিয়ে চোখ ঘুরিয়ে নেয় আর এটা দেখেই রেয়ান্স হাত উঠিয়ে বুকে চেপে ধরে। আর ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি। এটা দেখেইতো শাহীন অবাক এর চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে সে কখনোই রেয়ান্স কে হাসতে দেখেনি মাঝে কখনও বাঁকা হাসি দেখলেও এই ভাবে মুচকি হাসি দেখেনি। তাই বড় করে হা করে শাহীন তাকিয়ে থাকে রেয়ান্স এর দিকে হটাৎ ওদের কথার মাঝে রেয়ান্স এর দাদুর নজর দরজায় দাঁড়ানো রেয়ান্স এর ওপরে পরে।

-“আরে রেয়ান্স দাঁড়িয়ে আছিস কেনো ওখানে? আর আজ এত তাড়াতাড়ি চলে আসলি যে? দাদু বলে ওঠে।

-” কিছুনা দাদু আজ তেমন কাজ ছিল না তাই। রেয়ান্স কোনা চোখে একবার তোড়া কে দেখে বলে ওঠে।

_”আরে রেয়ান্স বেটা কেমন আছো? মিসেস দেওয়ান বলে ওঠে।

-“আমি ভালো আছি পিপি তুমি কেমন আছো? আর কখন এলে? রেয়ান্স এগিয়ে এসে মিসেস দেওয়ান এর পাশে বসে বলে ওঠে।

-” ভালো আছি। আর সকালেই এসেছি এখানে। তা হঠাৎ ফিরে এলে যে কি ব্যাপার হা। আলতো হেসে বলে ওঠেন মিসেস দেওয়ান।

-“তোমার ড্যাড এর জন্য। তার শরীর খারাপ তাই আমিও সব কিছু ফেলে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলাম। রেয়ান্স তোড়ার দিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে বলে ওঠে।

-“কেমন আছো ব্রো। লেখা হেসে বলে ওঠে।

-” আমি সব সময়ে বিন্দাস থাকি। রেয়ান্স বলে ওঠে।

এদিকে রেয়ান্স এর দাদু আর মিসেস দেওয়ান অদ্ভূত চোখে রেয়ান্স কে দেখতে থাকে কারণ তাদের জানা মতে রেয়ান্স তেমন একটা কথা বলে না আর এমনি ভাবে তো কথা বলেই না তাহলে আজ এভাবে বসে কথা বলছে তারা এটাও খেয়াল করেছে রেয়ান্স কথার মাঝে মাঝে তোড়া কে ও দেখছিল। মিসেস দেওয়ান আর রেয়ান্স এর দাদু একে অপরের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে ইশারায় কথা বলে নেয়।

তাসনীম দেওয়ান হলেন রেয়ান্স এর ড্যাড এর বোন। তারা দুই ভাই বোন। রেয়ান্স এর ড্যাড আর মম প্লেন ক্রাশে মারা যায় যখন রেয়ান্স এর বয়স বারো বছর। আর তার পর থেকেই রেয়ান্স একদম চুপচাপ একা হয়ে গেছে তারপর থেকেই রেয়ান্স নিজেকে গুটিয়ে ফেলে নিজেকে পাল্টে নেয়। এর মাঝে তাসনীম দেওয়ান রেয়ান্স কে বেশির ভাগ সামলে রাখত। তারপরেই পড়াশোনা করতে বাইরে চলে যায় রেয়ান্স আর সেখান থেকে বিজনেসম্যান হয়ে দেশে ফেরে। মুম্বাই ফেরার পরে পরে ও রেয়ান্স লোনাওয়ালা তাসনীম দেওয়ান এর কাছে চলে যেতো বেশির ভাগ। তাসনীম লোনাওয়ালা নিজের বাংলো তে থাকতো মুম্বাই এর ঝনঝাট তার পছন্দের ছিল না। তাসনীম দেওয়ান এর হাজবেন্ড একজন ইন্ডিয়ান নেভির বড় অফিসার তাই তার দিন প্রায় বাইরে বাইরে কেটে যায়। তাদের দুজনের পছন্দের জায়গা লোনাওয়ালা ঠিক পছন্দের বললে ভুল কারণ এটাই ছিল তাদের একে অপরকে পাওয়ার যোগ সূত্র এখান থেকেই তাদের একে অপরের পরিচয় হয় তাই তাসনীম দেওয়ান এখানেই থেকে যায়।

রেয়ান্স কথা বলছে কম আর তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে শুধু। ওদের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে শাহীন সে দেখছে তার স্যার এর কাজ কর্ম। কিন্তু তোড়া তার এইসব নিয়ে কোনো ভাবান্তর নেই সে আছে নিজের মত করে । সে বসে বসে ফোন নিয়ে তার প্ল্যান সাজাতে ব্যস্ত।

-“পিপি ও। রেয়ান্স আর থাকতে না পেরে আমতা আমতা করে বলে ওঠে।

-” উফ দেখ তোর সাথে ওর পরিচয় করিয়ে দেবো সেটা ভুলে গেছি, বলেই কপাল চাপড়ান। মিসেস দেওয়ান।

-“তোকে আদর এর কথা বলেছিলাম মনে আছে। এই হল আদর আমার মেয়ে তোরা তো কখনো একে অপরকে দেখিস নি তুই ছিলি বিদেশে তাই পরিচয় হয়ে ওঠেনি তোদের। মিসেস দেওয়ান বলে ওঠে।

-“তোড়া দেওয়ান । কালকের কম্পিটিশন এর উইনার ও তোমার মনে নেই নিজের হাতেই তো ট্রফি টা তুলে দিলে। লেখা হেসে বলে ওঠে।

-” হুম মনে আছে আমার। রেয়ান্স মুচকি হেসে তোড়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

-“মম ফিরবে না যেতে দেরি হয়ে যাবে। তোড়া ধীর আওয়াজে বলে ওঠে।

-” মানে তোমরা কি আজকেই চলে যাবে নাকি পিপি? রেয়ান্স তাসনীম দেওয়ান কে কিছু বলতে না দিয়ে বলে ওঠে।

-” হা রে ফিরে যেতে হবে। এমনিতেই ওর শরীর ভালো না আমরা কাল সকালেই এসেছি লন্ডন থেকে ওকে নিয়ে। তাসনীম দেওয়ান বলে ওঠে।

-“দিদি ভাই আজ থেকে যা এখানে আজ আর এতটা রাস্তা জার্নি করে ফিরতে হবে না। আর তাছাড়া কতদিন পরেই তোকে দেখলাম বলত? মাঝে মাঝে এই বুড়োটাকেও মনে করতে হয় নাকি। দাদু বলে ওঠে।

-” ওকে দাদু। শান্ত ভাবে বলে ওঠে তোড়া।

রেয়ান্স তোড়া কে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে। মেয়েটা কে যখন থেকে দেখেছে মুখে এক ফোটা হাসির চিহ্ন দেখতে পাইনি। আর এখানে ও সেই একই ভাবে বসে আছে দেখে মনে হচ্ছে শরীর আছে কিন্তু মন নেই কেমন যেনো প্রাণ হীন লাগছে রেয়ান্স এর কাছে।

-“পিপি কি হয়েছিলো লন্ডন কেনো গেছিলে? আর আমি যখন তোমাকে কল করেছিলাম তখন তো বলনি। আর তোড়ার শরীর অসুস্থ মানে কি হয়েছে রেয়ান্স জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” আসলে তোর ফোন করার দু দিন পরেই ওর খুব বড় একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিলো। অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল ছিল তাই কিছু ডক্টর আর ওকে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে প্রাইভেট প্লেন করে ওকে নিয়ে চলে গেছিলাম।আর দেখ না এখনও ও পুরো পুরি সুস্থ হয়নি আর তার ওপরে আবার সার্জারি তাই ওকে নিয়ে আমি কোনো রিস্ক নিতে চাইনা। তাসনীম দেওয়ান হালকা বোজা বোজা আওয়াজে বলে ওঠে।

-“সার্জারি? কিসের। রেয়ান্স হঠাৎ করেই কিছুটা চিৎকার করে বলে ওঠে।

-” মম আমি একটু বেরোচ্ছি তাড়াতাড়ি চলে আসব চিন্তা করোনা। বলেই তোড়া উঠে দাঁড়ায়।

সাথে সাথে সবাই অবাক হয়ে তোড়ার মুখের দিকে তাকায় দেখে এতক্ষণ এর শান্ত মুখটা কেমন কঠিন হয়ে গেছে। রেয়ান্স শুধু অবাক চোখে দেখছে তোড়া কে।

-” কিন্তু এখন কোথায় যাচ্ছিস হঠাৎ করে? তাসনীম দেওয়ান খানিকটা আতঙ্ক হয়ে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” শিকার করতে মম। বলেই তোড়া দ্রুত বেরিয়ে যায়।

-“দিদিয়া ওয়েট আমি আসছি। বলেই লেখাও পিছন পিছন ছুটে বেরিয়ে যায়।

এদিকে লিভিং এর চিত্র টা হটাৎ করেই কেমন পাল্টে গেছে তাসনীম দেওয়ান আর রেয়ান্স এর দাদু কেমন অস্থির হয়ে গেছে আর তার সাথে ওদের কথা বার্তা গুলো কেমন ছিল যেনো হঠাৎ করে সেটা রেয়ান্স বোঝার চেষ্টা করছে। সে বুঝতে পারছে এর মাঝে নিশ্চয়ই কোনো না কোনো ঝামেলা আছে।

-“মেয়েটা কে এখন একদমই একা ছাড়া যাবেনা যতো ওরা ওকে না চিনলে ও নতুন করে আবার কোনো বিপদ না চলে আসে তাসনীম গার্ড কে ফোন করে ওর খেয়াল রাখতে বল যেনো আমার দিদি ভাই এর গায়ে আর কোনো আচড় না লাগে। রেয়ান্স এর দাদু কঠিন ভাবে বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ ড্যাড তুমি একদম ঠিক বলেছ আমি একবার আমার মেয়েকে হারিয়েছি আর ওকে নতুন করে হারাতে পারবো না। আমার এখনও ভাবলে বুক কেঁপে ওঠে সেদিন যদি আমরা ঠিক সময়ে না পৌঁছতাম তাহলে কি হতো। হয়তো ওকে আর বাঁচাতে পারতাম না। বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ে তাসনীম দেওয়ান।

-” পিপি কি হয়েছে তোমরা কিসের বিপদের কথা বলছো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না আর তোড়া কি পারমানেন্ট এর জন্য ওর বাড়ি থেকে চলে এসেছে ওকে ও তো ওর বাড়ি ফিরে যেতে হবে না কি? আর কি হয়েছে আমাকে কি একটু খুলে বলবে? রেয়ান্স অধৈয্য হয়ে বলে ওঠে।

-” ওর কোনো অন্য বাড়ি নেই রেয়ান্স ওর এখন একটাই পরিচয় ও তোড়া দেওয়ান আমার মেয়ে আর দেওয়ান পরিবারের বড় মেয়ে আমাদের সবার আদরের আদর ও। তাসনীম দেওয়ান তীক্ষ্ণ আওয়াজে বলে ওঠে।

-” মানে কি বলতে চাইছ? প্লিজ আমাকে একটু পরিষ্কার করে বল। রেয়ান্স অবাক হয়ে বলে ওঠে।

তাসনীম দেওয়ান কোনো কথা না বলে উঠে গিয়ে হতে একটা নিউজ পেপার নিয়ে ফিরে আসে। রেয়ান্স এর পাশে বসেই পেপার টা ওর সামনে ফেলে দেয়। রেয়ান্স অবাক হয়ে তাকাতেই ওর চোখ ফেটে বেরিয়ে আসার উপক্রম। পেপারে বড় বড় করে হেড লাইন লেখা আছে সুইসাইড নাকি অ্যাক্সিডেন্ট? মানান পরিবারের মেয়ে তাথই মানান এর মৃত্যু রহস্য। আর তার সাথেই তাথই এর একটা আগের ছবি দেয়া আছে। এটা দেখেই রেয়ান্স পুরো পুরি হতভম্ব হয়ে যায়।

-“এইসব কি পিপি দাদু। মৃত্যু মানে কিছুই বুঝতে পারছি না আর ছবিটা তো পুরোই তোড়ার মত লাগছে। রেয়ান্স বলে ওঠে।

-” ওটা তোড়া । তাসনীম দেওয়ান বলে ওঠে।

-” মানে কি বলতে চাইছ? কি হয়েছে আমাকে একটু বলবে? রেয়ান্স বলে ওঠে।

-” আদর এর আসল নাম তাথই মানান। ওর পরিবারের ব্যাপার বেশি কিছু জানতাম না। পাঁচ বছর আগেই একটা অ্যাক্সিডেন্ট এর মাধ্যমে আমি ওকে পেয়েছি নিজের মেয়ে করে। আদর এর মারা যাওয়ার পর আমি খুব ভেঙে পড়েছিলাম। আমি হটাৎ করেই ওর মৃত্যু টা মেনে নিতে পারছিলাম না আর সেই তোর আংকেল ও ছুটি নিয়ে বাড়িতে ছিল তখন লেখাটা ও ছোটো ছিল। সেদিন তোর আংকেল আমাকে আর লেখাকে নিয়ে বেরিয়ে ছিল। বাইরে যেতেই কিছুটা ফ্রেশ ছিলাম বাড়ি ফেরার পথে রাস্তার ধারে একটা মেয়েকে পড়ে থাকতে দেখেই আমার বুক কেঁপে ওঠে তাড়াতাড়ি গাড়ি থামাতে আমি নেমে যাই সাথে তোর আংকেল ও। কাছে যেতেই দেখি মেয়েটা জ্ঞান হারিয়েছে মাথায় থেকে রক্ত পড়ছে। মনে হচ্ছিলো কোনো গাড়ির সাথে অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। আর ফাঁকা রাস্তায় হয়তো মেয়ে টা কে ফেলে চলে গেছে। মেয়েটার মুখের দিকে তাকাতেই আমি মায়ায় জড়িয়ে একদম আমার আদর এর মত ছিল মেয়েটা যদি আদর এর থেকে ও অনেকটা ছোটো ছিল আর আমার আদর এর সাথে মুখের ও অনেক মিল ছিল। তাই ওকে দেখেই আমি নিজেকে আটকাতে পারিনি ওকে বাড়িতে নিয়ে যাই। মেয়েটা রাতে জ্বরের ঘোরে শুধু মাকে ডেকে গেছিলো আর আমাকে তার মা ভেবে জড়িয়ে রেখেছিলো নিজের সাথে। তখন থেকেই মেয়েটা কে আমি নিজের আদর ভাবতে শুরু করি। সকালে ঘুমের ঘোরের আমাকে খুঁজতে শুরু করেছিলো আমি পাশে বসে বুকে জড়িয়ে নিতেই আমাকে দু হাত দিয়ে আকড়ে ধরে যেনো আমি এখনই পালিয়ে যাবো আর তার সাথে বিড়বিড় করে কথা বলতে থাকে। ওর কথা গুলি শুনেই আমার চোখ দিয়ে পানি চলে আসে। বুঝতে পারি মেয়েটা মায়ের জন্য খুব কষ্ট পায় তখন জানতাম না আদেও ওর মা আছে কি না। আমি ওকে বুকে জড়িয়ে কান্না করতে করতে ওকে নিজের মেয়ে বলতে থাকি। তখনই মেয়েটা চোখ মেলে অবাক চোখে আমাকে দেখছিল। আমার বলা কথা গুলো আর আমার কান্না দেখে ও নিজেই আমাকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলে হয়তো কখনো এমন ভালোবাসা পায়নি মেয়েটা । তারপরেই ওর থেকে জানতে পারি ও এখানে ঘুরতে এসেছিল স্কুল থেকে। ওরা ঘুরতে বেরিয়ে ছিল তারপরেই ও ওদের থেকে আলাদা হয়ে যায় রাস্তার মাঝ থেকে হেঁটে যাচ্ছিল অন্যমনস্ক হয়ে আর তখনই গাড়ির সাথে অ্যাক্সিডেন্ট হয়। তার পরেই ওকে আমার কাছে রেখে দেই ওরা ওখানে যতো দিন ছিল তখন থেকেই মেয়েটা আমাকে মম বলে ডাকত ঠিক আদর এর মত করে। তোর আংকেল আর আমি ওকে আমাদের আদর এর জায়গায় বসিয়ে ফেলেছিলাম ততদিন। ও সময় পেলেই চলে যেতো আমাদের কাছে আর এমনি সব সময়ে ওর সাথে ফোনে কথা হতো। মেয়েটার জীবনে তার নিজের মা থেকেও কোনো মায়ের ভালোবাসা পায়নি সাথে বাড়ির ও। বলতে বলতে কান্না করতে থাকে তাসনীম দেওয়ান।

এতক্ষণ অবাক হয়ে শুনছিল রেয়ান্স আর শাহীন রেয়ান্স এর দাদু এর সব কিছুই জানতেন তাই উনি শুধু চুপ করেই বসে আছে। রেয়ান্স জানতো আদর এর জায়গায় তার পিপি কাউকে নিজের মেয়ে বানিয়েছে কিন্তু তার পিছনে এত কিছু সেটা জানতো না।

-“সেদিন আমি আর লেখা লোনাওয়ালা থেকে বেরিয়ে ছিলাম মুম্বাই এর জন্য তোর দাদু কে দেখতে আর আমার মেয়েটা কে সারপ্রাইজড করতে। ওর সাথে অনেক দিন দেখা হয়নি তাই। কিন্তু মাঝ রাস্তায় এসে থমকে গেছিলাম সেদিন মনে হয়েছিল আমার বুকের ভিতর থেকে কেউ যেনো হৃদপিন্ড টা টেনে বের করে আনছে। আদর সাততলা বিল্ডিং থেকে আমাদের গাড়ির ওপরে পড়ে রাস্তার মাঝে ছিটকে পড়েছিল। বিশ্বাস কর তখন ওকে ওই অবস্থায় দেখে আমার নিঃশ্বাস তাই আটকে আসছিলো মনে হচ্ছিলো আমি যেনো জমে গেছি। আমি তখনও নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম যে মেয়ের সাথে কয়েক ঘণ্টা আগেও কথা বলেছি তার এই অবস্থা দেখে। লেখা গাড়ি থেক ছুটে বেরিয়ে গেছিলো আমি কয়েক মিনিট পরে ছুটে গেছিলাম তখন গিয়ে দেখি ওর নিথর দেহ পড়ে আছে যেটা পুরো রক্তে মাখামাখি। মুখটা ও থেতলে গেছে এটা দেখেই আমি ওখানে পাথরের মত বসে পড়ি। তারপরেই ওকে ওখান থেকে নিয়ে হসপিটাল নিয়ে যায় কিন্তু ওখানে গিয়ে জানতে পারি আদর এর জীবনের ঝুকি আছে। আর তখনই ডক্টর এর সাথে কথা বলি। কয়েক জন ডক্টর কে নিয়ে ওকে ওখান থেকে বের করে নিয়ে লন্ডন চলে যায়। আর তোর দাদু সব কিছু দেখে এখানকার। ডক্টর আংকেল তোর দাদুর বন্ধুর সাহায্য নিয়ে অন্য একটা অ্যাক্সিডেন্ট বডি ওদেরকে দেয়া হয় আর তার গায়ে আদর এর ড্রেস পড়িয়ে দেয়া হয়। মেয়েটা জ্ঞান আসলে জানতে পারি কি হয়েছিলো আর তার আগে তোর দাদু ও খোঁজ নিয়ে কিছুটা জানতে পারে। বলেই অভি ও তানিয়ার কথা বলে তাসনীম দেওয়ান।

রেয়ান্স এতক্ষণ চুপচাপ শুনে যাচ্ছিলো কিন্তু এর পর আর সহ্য করতে পারছে না কোনো ভাবে শেষের কথা গুলো শুনেই যেনো রেয়ান্স এর মাথা ফেটে যাচ্ছে। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে পুরো।

-“পিপি তুমি চিন্তা করো না তোড়ার আর কিছুই হবে না। ওকে আর কোনো বিপদ ছুঁতে পারবে না। রেয়ান্স তীক্ষ্ণ ভাবে বলে উঠে দাঁড়ায়।

-” শাহীন মানান ফ্যামিলি অভি আর তানিয়ার পুরো ডিটেইলস আমার চায় সকালের মধ্যে। বলেই রেয়ান্স বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে।

পিছনে থাকা তিনজন এখন অবাক হয়ে দেখছে রেয়ান্স এর চলে যাওয়া। আর রেয়ান্স এর বলা কথা গুলো তারা ভেবে যাচ্ছে শুধু জানে এদের অবস্থা এবার করুন হতে চলেছে।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে…

ভুল ত্রুটি মার্জনা রি-চেক করিনি জ্বরের মধ্যে লিখেছি তাই জানিনা কেমন হয়েছে । সবাই নিজেদের মতামত জানাবেন।