ইষ্ক ইবাদাত পর্ব-৫+৬

0
7984

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৫

আয়নায় নিজের মুখের দিকে তাকাতেই চিৎকার করে ওঠে আদর। সারা রুমে ভরে ওঠে আদর এর আর্তনাদ। পিছু সরে যেতে যেতে দেয়াল ঘেঁষে আসতে আসতে নিচে বসে পড়ে। দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নেয়। কান্নায় ভেঙে পড়ে ওয়াশরুমের মধ্যে। বাইরে থেকে আদর এর এমন চিৎকার শুনে হন্তদন্ত হয়ে এসে ভিতরে ঢোকে লেখা। সামনের দিকে দেখতেই নীচে দেয়াল ঘেঁষে তার দিদিয়া কে বসে থাকতে দেখে। লেখা তার দিদিয়া কে এই অবস্থায় দেখে বুঝতে পারে কি হয়েছে তার চোখ দিয়ে ও পানি গড়িয়ে পড়ছে। লেখা আসতে আসতে গিয়ে আদর কে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। দু হাত দিয়ে ধরে তুলে বাইরে নিয়ে আসে।বেডে এনে বসাতে আরো কান্নায় ভেঙে পড়ে আদর। লেখা ও কাঁদতে কাঁদতে নিজের সাথে চেপে জড়িয়ে নেয়।

কিছুক্ষণ আগেই আদর এর মুখের ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে। কিন্তু তখন ও জানতো না ওর মুখের কি অবস্থা। ওয়াশরুমে গিয়ে সামনের আয়নার দিকে চোখ যেতেই নিজের মুখ দেখতে পায় আর তার সাথেই চিৎকার করে। মুখের এক সাইট পুরো থেথলে গেছে হালকা রক্ত আর তার সাথে খুবলা খুবলা মাংস ওঠা আর অন্য সাইটে হালকা হালকা কাট হয়ে আছে। এই মুহূর্তে দেখতেই ভীষণ ভয়ংকর লাগছে হটাৎ কেউ দেখলেই ভয় পেয়ে যাবে।

-“দিদিয়া শান্ত হো। তোকে কান্না করলে চলবে না। তোকে এবার ঘুরে দাঁড়াতে হবে। লেখা কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ শক্ত করে বলে ওঠে।

-” আদর মা তোর মম তোর সাথে আছে এই লড়াই এ তোকে শক্ত হতে হবে তোর প্রতি হওয়া অন্যায়ের সব মূল্য মেটাতে হবে। মিসেস তাসনীম দেওয়ান রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে ওঠে।

তাসনীম দেওয়ান ও এসে আরেক দিকে থেকে জড়িয়ে ধরে আদর কে। লেখা আর তাদের মিলে আদর এর এই কান্না দেখে নিজেদের চোখের পানি আটকে রাখতে পারে না। আদর এবার ওদের দুজন কে সোজা হয়ে বসে হাত উঁচু করে চোখের পানি মুছতে নিলেই হাত এর দিকে চোখ যায় হাত এখনও ব্যান্ডেজ করা। হাতের দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে চোখের পানি মুছে নেয়। আসতে আসতে চোখ মুখের ভাব পাল্টাতে থাকে। লেখা ও তাসনীম দেওয়ান আদর এর মুখের ভাব লক্ষ করে। আদর এর চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেছে আর দৃষ্টি স্থির।

-“মম কসমেটিক সাজার্রির ব্যবস্থা করো। যতো দ্রুত সম্ভব আমি মুম্বাই ফিরতে চাই । আদর কঠিন স্বরে বলে ওঠে।

-” আমি কথা বলে রেখেছি সোনা। সব ব্যবস্থা হয়ে আছে। তাসনীম দেওয়ান মুখের কোণে হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে।

-“ওকে আমি কোনো দেরি করতে চাইছি না। আদর বলে ওঠে।

-” ওকে বেটা। বলে হেসে আদর এর কপালে একটা চুমু খেয়ে বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায় ।

আদর লেখার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বেড থেকে উঠে কাঁচের দেয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে যায়। দৃষ্টি সামনের দিকে এখনও স্থির হয়ে আছে। এখন যেনো দেখে মনে হচ্ছে অনুভূতি শুন্য একটা নির্জিব। চোখের সামনে ভেসে আসছে কিছু দৃশ্য।

“মুম্বাই এর এক রয়্যাল পার্টিতে একের পর এক ড্রিংক নেয়ার পরে মাথা ভার হয়ে আসে আসতে আসতে ঢোলে পড়ে পাশে থাকা মানুষটার ওপর। তখন যদিও পাশে থাকা মানুষটার ওপর চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করত তাই ভরসা ছিল কিন্তু না সে ভুল করেছিলো হ্যাঁ তার জীবনের সব থেকে বড় ছিল। আর সেটা সে তার কয়েক ঘণ্টা পর বুঝতে পারে। সে বিশ্বাস করতে পারিনি যে মানুষটা কে সে ভালোবেসে ছিল যে মানুষটার সাথে সারাটা জীবন কাটাতে চেয়েছিলো সেই তাকে টাকার জন্য অন্যের কাছে রাত কাটানোর জন্য বিক্রি করে দিতে পারে। আর আরেক জন তার পিট পিছে তার ভালোবাসার মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরী করে। কি করে করতে পারলো তারা। টুকরো টুকরো স্মৃতি ভেসে ওঠে আদর এর চোখের সামনে। হ্যাঁ সে আদর সারাজীবন এর জন্য সে আদর হয়েই থাকবে আগেও ছিল কিন্তু তার সাথে তার আরো একটা পরিচয় ছিল তাথই মানান। কিন্তু সেই রাতে তো তাথই মানান এর মৃত্যু ঘটে গেছে। সে তো আর বেঁচে নেই। হ্যাঁ তাথই মানান মারা গেছে সারাজীবন এর জন্য। সে শুধুমাত্র এখন আদর হয়েই বেঁচে থাকবে। এখন থেকে তার একটাই পরিচয় তাসনীম দেওয়ান ও কবীর দেওয়ান এর বড় মেয়ে তাদের আদর।

হঠাৎ করেই কাঁধে কারোর হাতের স্পর্শ পেতেই ঘুরে তাকিয়ে দেখে লেখা তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখ মুখে ফুটে আছে তার জন্য ভালোবাসা আনন্দ খুশি। লেখা আদর কে তার দিকে তাকাতে দেখেই আদর এর এক হাত জড়িয়ে নিয়ে কাঁধে মাথা রাখে আদর ও কোনও কথা বলে না তার মাথাটা হেলিয়ে লেখার মাথার সাথে লাগিয়ে দেয়। আর ভাবতে থাকে। এটাই তার বোন হ্যাঁ নিজের বোন এর থেকেও বেশি। যার চোখ রেখে রয়েছে তার জন্য একরাশ ভালোবাসা। তাকে যে খুব ভালোবাসে। আজ থেকেই তার একটা মাত্র বোন এর সেটা হলো লেখা। এবার থেকেই তার পরিবার এরা মম ড্যাড আর লেখা।

————-

-“স্যার মডেল ট্যালেন্ট হান্ট ইভেন্ট থেকে ওখানে আপনাকে চিপ গেস্ট হিসাবে ইনভাইট এসেছে। শাহীন রেয়ান্স এর অ্যাসিস্ট্যান্ট হাঁটতে হাঁটতে বলে ওঠে।

রেয়ান্স দ্রুত গতিতে তার অফিসের বিল্ডিং এর ভিতরে যাচ্ছে আর তার পিছু পিছু শাহীন তার সমস্ত সিডিউল বলতে বলতে যাচ্ছে। রেয়ান্স এর সাথে থাকতে থাকতে শাহীন ও একটা রোবট এর মত পরিনত হয়েছে সারাদিন শুধু কাজ কাজ আর তাছাড়া আর কিছু জানে না।

-“স্যার আজ মিস আরোহীর সাথে আপনার দুপুর দুটোই ফেব্ররিক রেস্টুরেন্টে মিটিং আছে। শাহীন বলে ওঠে।

-” হু ইজ দিস মিস আরোহী? রেয়ান্স হঠাৎ করেই হাঁটা থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। ঘাড় ঘুরিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।

-“স্যার আপনার দাদু মিস আরোহীর আনান্দ এর সাথে আপনার বিয়ে ঠিক করেছেন। আর আজ তাই আপনাদের কথা বলার জন্য মিটিং ফিক্সড করা হয়েছে। শাহীন ঢোক গিলে বলে ওঠে।

শাহীন এর কথা শুনতেই রেয়ান্স এর ভ্রু আরো বেশি করে কুঁচকে যায়। মুখের এক্সপ্রেশন নরমাল থেকে চেঞ্জ হয়ে কঠিন হতে থাকে। এক সেকেন্ড রেয়ান্স শাহীন এর দিকে তাকিয়ে তুফান এর মত হাঁটতে থাকে।

-“দু মিনিট এর মধ্যে এই মিস হোয়াটএভার এর সমস্ত ডিটেইলস আমার টেবিলে থাকা চাই বলেই চলে যায়।

শাহীন রেয়ান্স চলে যেতেই হাফ ছেড়ে বাঁচে এতক্ষণ সে তার নিঃশ্বাস আটকে রেখেছিলো তাই এখন বড় বড় করে কয়েকটা দম নিয়ে নেয়। সে বুঝতে পারে না কোন দিকে যাবে কাকে সামলাবে দাদু কে না নাতি কে। যেমন দাদু তার তেমনই নাতি। পুরো কাঁটায় কাঁটায় কেউ কম যায় না। একটা বিশাল দীর্ঘশ্বাস ফেলে পা বাড়ায় শাহীন রেয়ান্স এর কেবিনের দিকে।

————-

-“আজ থেকে শুরু হল বিনাশ এর যাত্রা। যে পথে আছে তোমাদের জন্য শুধুমাত্র হাজারো ছুরির আঘাত। যেখানে থাকবে তোমাদের জন্য পদে পদে ধামাকা। তোমাদের সবার পতনের শুরু হলো আজ থেকে । এর পর দেখো আগে আগে কি কি হয়। প্রত্যেকটা অন্যায়ের হিসাব সুদে আসলে মেটাতে হবে তোমাদের সব কিছু দিয়ে । বুঝতে ও পারবে না কোথায় থেকে কি ভাবে তোমাদের জীবনের শেষ ঘটবে। উল্টো গোনা শুরু। তৈরী থেকো নিজেদের শেষ দেখতে। যতো খুশি এখন আনন্দ পার্টি করে নাও কারণ এটাই হবে তোমাদের শেষ হাসি আনন্দ পার্টি। এর পর থেকেই শুরু মরণ কান্না আর তোমাদের দেখে আমি শেষ হাসিটা হাসবো। আসছি আমি তোমাদের সব কিছু কেড়ে নিতে। তোমাদের নরকের সুখ দেখাতে। সামনের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে কাঁচের দেয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে আদর ।

-“মিস দেওয়ান এবার আপনাকে যেতে হবে ওটি রেডি আছে। একটা নার্স রুমের মধ্যে ঢুকে বলে ওঠে ।

-” দিদিয়া । চল যেতে হবে। লেখা মুচকি হেসে বলে ওঠে।

আদর কোনো কথা না বলে দৃষ্টি ঘুরিয়ে পিছন মুড়ে আসতে আসতে লেখা আর নার্স এর সাথে রুমের থেকে বেরিয়ে যায়।

—————

-” শাহীন মিস আরোহী কে রিজেক্ট করো। এই মিটিং এখানে শেষ। রেয়ান্স বলতে বলতে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যেতে থাকে।

পিছন থেকে একটা মেয়ে চিৎকার করে ডাকছে কিন্তু সেদিকে কোনো পাত্তা না দিয়ে রেয়ান্স বেরিয়ে যেতে থাকে। শাহীন এর আর কি করার সেও তাই পিছন আসতে থাকে কিন্তু তার স্যার এর কথা শুনে চমকে যায় আর বুঝতে ও পারে এখন মেজাজ পুরো হিট হয়ে আছে। কিছু একটু ভুল হলেই ব্লাস্ট হবে। আর সে জানে তার স্যার এর এমন করার কারণটা ও সে এমনি জায়গায় থাকলেও সে নিজেই এটা করত এই সব নেকু পুশু গায়ে পড়া মেয়ে স্যার এর একদম পছন্দ নয় আর তার ওপর এ আরো চার গুণ বাড়া।

-“কিন্তু স্যার আপনার দাদু? শাহীন বলে ওঠে।

-” ওনাকে বলে দেবে আমি এই মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো না যদি ওনার যদি এই মেয়ে কে এতই পছন্দ হয় তাহলে তাকে বিয়ে করে নিতে বল। রেয়ান্স দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।

-“কিন্তু স্যার আপনি যে কথা দিয়েছেন এক সপ্তাহ পর বিয়ে করবেন। তার মধ্যে একদিন হয়ে গেছে। তাহলে? শাহীন ঢোক গিলে বলে ওঠে।

-” বিয়ে করবো যখন কথা দিয়েছি তখন বিয়ে করবো কিন্তু এই মেয়ে কে নয়? আমি কখনো কথার খেলাপ করি না। আমার বিয়ে নিয়ে কথা তাই বিয়ে করলেই হলো। বলে দাও বুড়ো কে। রেয়ান্স বলেই গাড়িতে উঠে যায়।

শাহীন কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থেকে সে ও হুড়মুড়িয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করেই বেরিয়ে যায়।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে….

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৬

মুম্বাই মডেল ট্যালেন্ট হান্ট ইভেন্ট এর ট্রায়াল চলছে আর কিছুক্ষণের মধ্যে ইভেন্ট শুরু হবে। চারিদিকে সবাই ব্যস্ত যে যার কাজের মধ্যে। আজ এখানে মডেল ট্যালেন্ট হান্ট ইভেন্ট এর মাধ্যমে বেঁচে নেওয়া হবে সেরা মুখ। প্রতি বছর এই ইভেন্ট হয়। আর এখানে থেকে আজ ইভেন্ট এর মধ্যে হওয়া সেরা দশ জন হয়েছে মডেলিং ইন্ডাস্ট্রির নতুন মুখ যাদের ক্যারিয়ার এর পর আকাশ ছুতে থাকবে আর বড় বড় কোম্পানি যাদের কে সাইন করার জন্য নিজের নিজের কন্ট্রাক্টড পাঠাবে। আর তাছাড়া আজ এখানে এই ইভেন্ট এর টি আর পি আরো বেশি কারণ এখানে ওয়ার্ল্ড টপ ওয়ান বিজনেসম্যান রেয়ান্স রাওয়াত চিপ গেস্ট হিসাবে আসতে চলেছে এই খবর পুরো মুম্বাই ছড়িয়ে পড়েছে।

-“হ্যালো মিস মডেল ট্যালেন্ট হান্ট কম্পিটিশন এর জন্য নাম এন্ট্রি করাতে চাই।

-” স্যরি ম্যাম লিস্ট তো ফুল হয়ে গেছে। আর তাছাড়া এখানে আগের থেকে পোর্টফলিও এর ডেট ওভার হয়ে গেছে। রিসেপশনে থাকা মেয়েটি মুখ না তুলে বলে ওঠে।

-“আমার পোর্টফলিও করানোর কোনো দরকার নেই আপনি জাস্ট নাম টা অ্যাড করে নিন। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি আবার ও বলে ওঠে।

-” কেনো আপনি কে হ্যাঁ যে আপনার পোর্টফলিও করা লাগবে না আপনি কি নিজেকে খুব সুন্দরী মনে ক….। রিসেপশনে থাকা মেয়েটি কথা বলতে বলতে মাথাটা ওপরের দিকে করতেই কথাটা আর পুরো করতে পারে না মুখের কথা মুখেই রয়ে যায় সামনে দাঁড়ানো মেয়েটি কে দেখে।

এতক্ষণ মেয়েটি মাথা নিচু করে নিজের কাজ করতে করতে কথা বলছিল তাই সামনে কে দাঁড়িয়ে আছে দেখেনি। কিন্তু এখন নিজেই চোখ তুলে তাকিয়ে হা হয়ে যায় মুখের কথা মুখেই আটকে যায়। মুখটা ও এখন হা করে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখ দুটো আটকে আছে সামনে দাঁড়ানো মেয়েটির ওপর। মুখের থেকেও আর এখন কোনো কথা বেরোচ্ছে না।

-“আমি কে সেটা না হয় পরে জানতে পারবেন। আর আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আমি নিজেকে সুন্দরী না মনে করলেও সুন্দরী তো বটেই তাই না। হালকা বাঁকা হেসে বলে ওঠে সামনে দাঁড়ানো মেয়েটা।

-” ওয়াও । আনমনে রিসেপশনে থাকা মেয়েটির মুখ থেকে বেরিয়ে যায় তার সামনে দাঁড়ানো মেয়েটি হালকা বাঁকা হাসি দেখে।

-” এক্সকিউজমি

-“স্যরি ম্যাম আসলে কাজ করছিলাম আপনাকে না দেখেই বলে ফেলেছি আর তাছাড়া লিস্ট ফুল হয়ে গেছে তবুও কোনো ব্যাপার না আপনার নাম তো নিতেই হবে। কিন্তু ম্যাম পোর্টফলিও তো লাগবেই। রিসেপশনে থাকা মেয়েটি হড়বড়ি করে বলে ওঠে।

-“সেটা নিয়ে আপনাকে টেনশন করতে হবে না।

-“ওকে ম্যাম । আপনার নামটা? রিসেপশনে থাকা মেয়েটি বলে ওঠে।

-“তোড়া দেওয়ান । বলেই ব্যাগ থেকে একটা পোর্টফলিও বের করে টেবিলে রেখে আবার ও একটা বাঁকা হাসি দিয়ে ভিতরে চলে যায়।

রিসেপশনে থাকা মেয়েটি এখনও হা করে তাকিয়ে আছে তার যাওয়ার দিকে সে মেয়ে হয়ে ও একটা মেয়ের ওপর ভীষণ ভাবে ক্রাশ খেয়ে গেছে। সে বুঝতে পারছে না কি ভাবে বর্ননা করবে তার সামনে থেকে চলে যাওয়া মেয়েটার। তার ব্যাক এর এক ঝলক ও কেউ দেখলে প্রেমে পড়ে যাবে। তার হাঁটার স্টাইল আর তার সাথে তাল মিলিয়ে কোমর ও চুলের আদা যেনো হুস উড়িয়ে দেয়ার জন্য সদা প্রস্তুত। আর সে তো টেবিলের ওপর হাত রেখেই মুখ হা করে এখনও দেখছে। পিছন থেকে দেখতে ও কোনও টপ মডেল এর থেকেও কম লাগছে না তার তো এখন এটা মনে হচ্ছে যে মুম্বাই এর সব টপ মডেল ও হার মেনে যাবে ব্যাক থেকে এই মেয়ের কাছে। আনমনে দেখতে দেখতে নাম টা উচ্চারণ করে ওঠে।

-“তোড়া দেওয়ান ।

—————–

সন্ধে সাতটা মুম্বাই তাজ হোটেলে মডেল ট্যালেন্ট হান্ট ইভেন্ট শুরু হয়ে গেছে। চারিদিকে প্রেস মিডিয়ার ভিড় লেগে আছে আছে আজকের এই কম্পিটিশনে নামি দামি বিজনেসম্যান ও ইন্ডাস্ট্রির বড় মাপের লোক ও বিভিন্ন কোম্পানীর বস এসে হাজির হয়েছে ইতি মধ্যে কারণ আজকে তাদের কাছে বড় সুযোগ এখানে এই কম্পিটিশনে হওয়া টপ টেন মডেলদের মধ্যে বেস্ট মডেল কে নিজেদের কোম্পানিতে সাইন করানোর জন্য। আর এদের মধ্যে অভি ও এসেছে তার কোম্পানির সি.ই.ও হয়ে আর তার সাথে আছে তানিয়া একজন নামকরা মডেল আর এক্ট্রেস ও তার সাথে অভি এর গার্লফ্রেন্ড এর পরিচয়ে। আর সব থেকে বেশি এখানে যাদের ভিড় জমে আছে তারা হল রেয়ান্স রাওয়াত এর ফ্যান তারা এন্ট্রান্স এর সামনে ভিড় জমিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

কিছুক্ষণ এর মধ্যে হোটেল এর এন্ট্রান্স এর সামনে এসে দাঁড়ায় রেয়ান্স এর রলস রয়েস কার। আর সাথে সাথে পুরো জায়গাটা চিৎকারে ভরে যায়। চারিদিকে থেকে ভিড় ও মিডিয়ার লোক ঘিরে ধরে তবে একটা দুরত্ব রেখে। যতোই তারা রেয়ান্স এর ফ্যান হোক না কেনো তার কাছে আসতে গেলে তাদের ভয় লাগে। রেয়ান্স এর একবার গম্ভীর ভাবে তাকানো দেখলে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা সবাই ভয়ে রাস্তা ছেড়ে দেবে। তাই কাছে আসার থেকে সবাই নিজেদের দুরত্ব মেপে দাঁড়িয়ে আছে।

গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে আসে রেয়ান্স। আর সাথে সাথে সবার মুখের থেকে আবারো চিৎকার বেরিয়ে যায়। তারা সবাই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রেয়ান্স এর দিকে। রেয়ান্স এর উপস্থিত টাই সবার মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে সব সময়ের মতো। ডার্ক ব্লু কালার এর কম্পিলিট স্যুট পরে আছে কোট এর পকেট থেকে সাদা রঙের স্কার্ফ এর সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্ল্যাক ফরমাল সু। হাতে প্ল্যাটিনাম এর রিস্ট ওয়াচ পরে আছে। হাল্কা ব্রাউন সিল্কি চুল গুলো স্পাইক করা লাইট এর আলো পড়তেই চিক চিক করছে। চেহারার গঠন আর হালকা পিঙ্ক খুব সুন্দর ঠোঁট যে কোনও মেয়ের হুস কেড়ে নেওয়ার জন্য কাফি। ঘন ভ্রু আর ফর্সা মুখে ট্রিম করা দাঁড়ি আর তার সাথে গালে একটা তিল যেটা সব থেকে বেশি আকর্ষণীয়। নিজের পার্সোনালিটি দিয়ে হাজারো ভিড় এর মধ্যে থেকে যে কারোর মন জিতে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে রেয়ান্স।

গাড়ি থেকে নেমে সামনের দিকে এক পলক তাকিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে রেয়ান্স এর পিছন পিছন শাহীন আসতে আসতে থাকে। রিপোর্টার তাড়াতাড়ি তাদের ক্যামেরা রেয়ান্স এর দিকে তাক করে ফটাফাট ছবি ও ভিডিও নিতে থাকে। কারণ তারা এর থেকে বেশি কিছু করতে পারবে না। রেয়ান্স কখনো ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পছন্দ করে না। আর তাই মিডিয়ার লোক দূর থেকেই তার ছবি নেয় তার কাছে আসার চেষ্টা করে না। তাদের কাছে এই ছবি তাদের মিডিয়া কোম্পানির টি আর পি বাড়ানোর জন্য যথেষ্ঠ রেয়ান্স এর এক ঝলক তাদের ক্যামেরা তে বন্দি করতে পারলে তার ম্যাচ জেতার মত আনন্দ হয় । আর এদিকে রেয়ান্স এর ফ্যান তার নাম নিয়ে চিৎকার করে যাচ্ছে।

————–

শো শুরু হয়ে গেছে আর সবাই এক্সাইটেড হয়ে বসে আছে। ক্যামেরা ফ্ল্যাশ লাইট চলতে আছে স্টেজ এর চারিদিকে ক্যামেরা মান ঘিরে আছে আর তার কিছু পরে চারিদিকে নামি দামি বিজনেসম্যান ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস ও কোম্পানির লোকেরা বসে আছে। অভি ও সামনের সারিতে বসে আছে তার চোখ এখন স্টেজ এর দিকে আর তার পাশে তার সাথে চিপকে তার এক হাত জড়িয়ে বসে আছে তানিয়া। মুখে রয়েছে ছড়া মেকআপ। আর তার কিছু পরেই থেকে অডিয়েন্স এর ভিড় জমে আছে। স্টেজ এর অন্য পাশে জাজদের সিট করা হয়েছে। ওখানে রেয়ান্স ছাড়া আরো তিনজন বসে আছে এক জন ছেলে ও দুজন মেয়ে জাজ।

সফট মিউজিক এর সাথে সাথে শো শুরু হয় আর তারপরেই নাম অ্যানাউন্স হতে একের পর এক স্টেজে এর ওপর আসতে থাকে। একে অন্যের বিপরীত গিয়ে নিজেদের ট্যালেন্ট দেখাতে ব্যস্ত সবার মধ্যে নিজেদের কে বেস্ট জাহির করতে থাকে। তানিয়া এদের দেখে নিজের নাক ছিটকাতে থাকে কারণ নিজেকে এদের থেকে নিজেকে সব থেকে বেশি সুন্দরী মনে করে আর তার সাথে সে ইতি মধ্যে একজন নামকরা মডেল ও এক্ট্রেস এর খেতাব ও পেয়ে গেছে তাই তার অ্যাটিটিউড হাই লেভেল এর হয়ে আছে। আর এক এক জন মডেল কে নিয়ে নিজের কূট মন্তব্য অভি এর কানে ভরতে থাকে।

রেয়ান্স চুপচাপ গালে হাত দিয়ে বসে একের পর এক পারফরম্যান্স দেখে যাচ্ছে যেখানে তার পাশে বসে থাকা অন্য জাজরা প্রত্যেক প্রতিযোগির নাম্বার নোট করছে। রেয়ান্স চুপচাপ বসে আছে তার কাছে এটা এখন একটা গেম এর মত লাগছে এটা কম্পিটিশনের থেকে তার কাছে লোক দেখানো বেশি মনে হচ্ছে কারণ প্রত্যেক প্রতিযোগী স্টেজ এ আসার পর নিজেদের পারফরম্যান্স এর ওপর নজর কম তার থেকে বেশি তার নজরে আসার জন্য চেষ্টা করছে তাদের এক একটা পোজ হাঁটার স্টাইল পশ্চার চেঞ্জ বডি ল্যাঙ্গুয়েজ সব কিছুই বেকার মনে হচ্ছে তার। তাই বিরক্তি নিয়ে পুরো শো টা দেখতে থাকে। তার এখনও একটাও এমন চোখে পড়ে নি যে নিজের কম্পিটিশনের ওপর ফোকাস করে নিজের বেস্ট পারফরম্যান্স দিচ্ছে নাকি তার দিকে তাকিয়ে তার নজরে পড়ার চেষ্টা না করে।

রেয়ান্স নিজের ফোন বের করে কিছু একটা দেখতে থাকে আর তখন হোস্ট অ্যানাউন্স করে লাস্ট প্রতিযোগীর এটা শুনতেই রেয়ান্স এর মনের মধ্যে আসে এটা ও একটা বেকার হবে। ভাবতে না ভাবতেই নাম অ্যানাউন্স করে।

-“তোড়া দেওয়ান ।

নামটা শুনতেই রেয়ান্স মোবাইল অফ করে আর অন্য দিকে অডিয়েন্স এর মধ্যে ও হালকা গুঞ্জন শুরু হয়। রেয়ান্স চোখ তুলে সামনের দিকে তাকাতেই তার চোখ আটকে যায় সামনে হেঁটে আসা মেয়েটার ওপরে। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেয়েটার দিকে চেয়ে ও নিজের চোখ সরিয়ে নিতে পারছে না। নাকি সে নিজে চোখ সরিয়ে নিতে চাইছে না সেটাই বুঝতে পারছে না। আর সাথে সাথেই যেনো তার হার্ট বিট ও সমান গতিতে সিগন্যাল দিতে আছে কিন্তু সেদিকে যেনো রেয়ান্স এর কোনো ধ্যান নেই সে তো এখন দেখতে ব্যস্ত তার সামনে দিকে এগিয়ে আসা মেয়েটার দিকে।

এদিকে স্টেজ এর সামনে বসে থাকা অভি ও তানিয়ার মুখের ভাব পাল্টে গেছে। তানিয়ার মুখের দিকে তাকালে কেউ বুঝতে পারবে না এখন তার মনের মধ্যে কি হচ্ছে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি কে দেখে। সে অভি এর হাতের ওপর ধরে থাকা তার নিজের হাত এর বাধন আরো শক্ত করে নেয়। তার মুখে কিছুক্ষণ আগের থাকা সেই অহংকার আর অ্যাটিটিউড লুক পুরোই চেঞ্জ হয়ে গেছে মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে তার। চোখ স্থির সামনে থাকা মেয়েটির ওপরে। অভি ও তাকিয়ে এক দৃষ্টিতে সামনে থাকা মেয়েটির দিকে। তার ও চোখ মুখের ভাব পাল্টে গেছে। আর চারিদিকে অডিয়েন্স ও সামনের সারিতে বসে থাকা বিজনেসম্যান ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস ও বিভিন্ন কোম্পানির বসদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে। নিজেদের মধ্যে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি কে দেখে অবাক হয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করে দেয়। এদিকে জাজরা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকে শুধু মাত্র রেয়ান্স ছাড়া সে এখনও তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি কে দেখতে আছে। চারপাশের কোনো কথা আর গুঞ্জন তার কানের কাছে গিয়ে পৌঁছাতে পারছে না আর না তার খেয়াল আছে চারিদিকে কি শুরু হয়েছে সে এখন দেখতে ব্যস্ত।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে….

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন । সবাই নিজেদের মতামত জানাবেন।