#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ২২
_________________
“তুমি আসলেই একজন সন্ত্রাসী। আমার সাথে এরকম করতে পারো কীভাবে?”
ক্যানিয়ল অবাক হয়ে তাকালো,
“কী করেছি আমি তোমার সাথে?”
“তুমি আমাকে কি’ড’ন্যা’প করেছো।”
“কিডন্যাপ কাকে বলে তুমি জানো?”
“অবশ্যই জানি। কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে জোর করে নিয়ে যাওয়াই হলো কিডন্যাপ।”
“কিন্তু আমার কিডন্যাপের ধরনটা মোটেই এরকম থাকতো না। আমি তোমাকে কিডন্যাপ করলে অবশ্যই সুস্থ স্বাভাবিক নিয়ে আসতাম না তোমাকে। কষ্ট করে একটু পিছনের আসনে তাকাও।”
ইরতিজা তাকালো। একটা হকিস্টিক দেখতে পেয়ে পিলে চমকে উঠলো।
“তোমাকে কিডন্যাপ করলে আগে এটা দিয়ে মে/রে র’ক্তা’ক্ত করে তারপর নিয়ে আসতাম।”
ভয় সর্বপাশ দিয়ে জাপটে ধরলো ইরতিজাকে। কিন্তু নিজের দুর্বল ভাব প্রকাশ করলে মানুষ আরও বেশি সুযোগ পায়। তাই মনে ভয় থাকা সত্ত্বেও সে সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে বললো,
“তুমি কি ভেবেছো আমাকে মারার চেষ্টা করলে তুমি নিজে অক্ষত থাকতে?”
“থাকতাম না?”
“না।”
ক্যানিয়ল সহাস্যে বললো,
“কে মারতো আমাকে? তুমি? ছিঁচকাঁদুনে মেয়ে আবার মারতেও পারতো? ইন্টারেস্টিং তো!”
সে একটু থেমে বললো,
“এ পর্যন্ত আমি কতজনকে মেরেছি জানো?”
“কতজনকে?”
“সংখ্যাটা গণনা করিনি।”
“মারামারির জন্য পুলিশ স্টেশনে যাওনি কখনো?”
“গিয়েছি। কিন্তু ওখানে আটকে থাকিনি কখনও। বড়ো লোকদের সহজে আটকে রাখা যায় না কোথাও। একেক বার বলে দেয় ফারদার এই কাজ করলে আটক থাকতে হবে, কোর্টে তোলা হবে মামলা, আসলে এমন কিছুই হয় না।”
ইরতিজা বললো,
“তোমার তো পুলিশদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। উল্টো পুলিশদের ঘৃণা করো কেন? বলেছিলে সতেরো বছর বয়স থেকে ঘৃণা করো পুলিশদের। কী ঘটেছিল তোমার সতেরো বছর বয়সে?”
“কী আর ঘটবে, সতেরো বছর বয়সে তো আমি কার লাইসেন্স পাইনি। কিন্তু তাও লাইসেন্স বিহীন গাড়ি চালিয়েছিলাম। বাস, বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালানোর অপরাধে ওরা আমাকে ক্যাচ করে নিলো। ঝামেলা করলো। ওইদিন থেকেই ওরা আমার মনে ঘৃণার জায়গা দখল করেছে।”
“ঠিকই তো আছে, বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালাবে কেন তুমি?”
ক্যানিয়ল পাশ ফিরে ইরতিজার দিকে তাকালো। তার শক্ত চোখের চাহনিতে ভয় পেল ইরতিজা। ক্যানিয়ল বললো,
“একদম চুপ করে বসে থাকবে। একটা শব্দও যেন না বেরোয় মুখ দিয়ে। আমার কাছে কিন্তু ছুরিও আছে। সামনের ড্রয়ার খুলে দেখতে পারো। একটা রূপবতী ছুরি চকচক করছে ড্রয়ারের ভিতর।”
ইরতিজার নিঃশ্বাসে যেন ছুরি চালানো হচ্ছে। দমবন্ধ লাগছে তার। ক্যানিয়ল চোখ সরিয়ে নেওয়ার পর খানিক স্বস্তি অনুভব করলো। একটা কথাও বললো না আর। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। পাহাড়গুলো দেখে হঠাৎ পাহাড়ে হাইকিং করার শখ জাগলো। কবে আসবে গ্রীষ্ম? কবে করবে হাইকিং? আকাশের দিকে তাকালো এবার। মনে হচ্ছে না আজ আবহাওয়া খারাপ করবে। সারাদিনই বোধহয় সানলাইট পাওয়া যাবে। দুই মিনিটের ভিতর গাড়ি এন্ডারসন হাউজের সামনে এসে থামলো। ক্যানিয়ল নেমে গেল। ইরতিজাও নামলো। ছোটো লনের এক পাশে নানান রঙের টিউলিপ ফুল চোখে পড়লো। ফুলের সামনেই বসার জন্য ছোটো চেয়ার, টেবিল। অন্য পাশে তিনটা ম্যাপল ট্রি চোখে পড়লো। বাড়িটা দুই তলা হবে। চেনা চেনা লাগছে জায়গাটা। সে ক্যানিয়লকে বললো,
“এটা কোন জায়গা? আমাদের তো রেস্টুরেন্টে যাওয়ার কথা ছিল। বলেছিলে নামিদামি একটা রেস্টুরেন্টে তোমাকে ব্রেকফাস্ট করাতে হবে।”
ক্যানিয়ল একদৃষ্টে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
“ইট’স মাই সেকেন্ড হোম।”
এরপর ইরতিজার দিকে তাকিয়ে বললো,
“ভিতরে চলো। এখানে এর আগেও একবার এসেছো তুমি।”
ক্যানিয়লের কথায় ইরতিজা মনে করতে সক্ষম হলো। হ্যাঁ, এসেছিল তো সে। প্রথম যেদিন ক্যানিয়লের সাথে দেখা হয়েছিল। অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পর ক্যানিয়ল এখানেই নিয়ে এসেছিল তাকে। ক্যানিয়ল যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছে ইতোমধ্যে। ইরতিজা যাবে কি যাবে না ভাবলো। যাওয়াটা অনুচিত মনে হলো, তবুও আবার পা বাড়ালো যাওয়ার জন্য।
দরজার লক খুলে ভিতরে ঢুকলো ক্যানিয়ল, পিছন পিছন ইরতিজাও প্রবেশ করলো। বড়ো হলরুমটা নজরে পড়লো। এখানেও চকচকে সব আসবাবপত্র দেখা গেল। আর সহজে এটাও বোঝা গেল যে এগুলো অত্যন্ত দামি। প্রথম দিনে এতকিছু লক্ষ করে দেখা হয়নি, কিন্তু আজ দেখলো। হলরুমের মধ্যখানে সোফা রাখা। দেয়ালের একপাশে রয়েছে বইয়ে ঠাসা বুকসেলফ। দেয়ালের এক পাশ ঘেঁষে উঠে গেছে উপর তলায় যাওয়ার সিঁড়ি। সিলিংয়ে ঝুলছে বিলাসবহুল ঝাড়বাতি। বাড়িটা অদ্ভুত রকম নিস্তব্ধতায় ঘেরা। একটা পাতা পড়লেও তার শব্দ শোনা যাবে বলে মনে হচ্ছে। এত নিস্তব্ধতা কেন? ভয় করছে ইরতিজার। সে প্রশ্নটা না করে থাকতে পারলো না,
“এ বাড়িতে কি আর মানুষজন নেই?”
ক্যানিয়ল সহজ গলায় উত্তর দিলো,
“না, শুধু আমরা দুজন আছি।”
ইরতিজার চোখ কপালে উঠলো,
“হোয়াট? মি. হেনরি নামের লোকটাও নেই?”
“না, কেবল আমি এবং তুমি আছি।”
ইরতিজা ভয়ে আঁতকে উঠলো,
“ও মাই গড! তুমি একটা খালি বাড়িতে নিয়ে এসেছো আমাকে?”
বলেই সে দ্রুত পিছন ঘুরে পা বাড়িয়ে দিলো দরজার দিকে।
ইরতিজা চলে যাচ্ছে বুঝতে পেরেই ক্যানিয়ল এসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে সামনে দাঁড়ালো।
“হোয়াট’স ইওর প্রবলেম পাকিস্টানি গার্ল?” ভারি বিরক্তি নিয়ে বললো ক্যানিয়ল।
ইরতিজার কানে ঢোকেনি সে কথা। তার দৃষ্টি, মনোযোগ সব গিয়ে আটকেছে একটু দূরে পড়ে থাকা রক্তে ভেজা তুলোর উপর। মুখ ফসকে বিস্ময়ের সাথে আপনা আপনি বেরিয়ে এলো শব্দটা,
“রক্ত?”
ক্যানিয়ল ইরতিজার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো। ইরতিজা এগিয়ে গেল পড়ে থাকা তুলোর দিকে। হাঁটুভেঙে বসে ভালো করে দেখতে লাগলো। ক্যানিয়লের কণ্ঠ শোনা গেল এরই মাঝে,
“ওটা আমার রক্ত!”
ইরতিজা তাকালো। তার দু চোখে ভয়, কৌতূহল, উদ্বিগ্নতা, সন্দেহের ছাপ। ক্যানিয়লকে চোখ সরু করে কেমন অদ্ভুতভাবে দেখে নিয়ে বললো,
“তুমি মিথ্যা বলছো, এটা তোমার রক্ত নয়। কাকে মেরেছো তুমি? কার রক্ত এটা?”
“বললাম তো ওটা আমার। আঘাত পেয়েছি আমি আজ সকালে। ক্ষত স্থান মুছে ওই টেবিলে রেখেছিলাম, বাতাসে নিচে পড়ে গিয়েছে বোধহয়।”
ইরতিজা টেবিলে তাকালো। তার সামনেই টেবিল। টেবিলের কাছেই পড়ে রয়েছে তুলো। টেবিলের উপর ওষুধপত্র দেখা যাচ্ছে। ইরতিজা তাও বিশ্বাস করতে পারলো না। দাঁড়িয়ে বললো,
“কোথায় আঘাত পেয়েছো তুমি? দেখাও।”
“পেটে আঘাত পেয়েছি, দেখবে?”
ক্যানিয়ল গায়ের গেঞ্জি উপরে ওঠাতে উদ্যত হলেই চোখ সরিয়ে নিলো ইরতিজা। বিব্রত বোধ করলো সে। কিন্তু এতে তার সন্দেহ একটুও কমেনি। জিজ্ঞেস করলো,
“পেটে আঘাত পেয়েছো কীভাবে?”
“সেটা আমার মাথা ব্যথা, তোমার নয়।”
ইরতিজা আর কিছু বললো না। তার কৌতূহল বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। সে যদি এখন কথায় কথায় ক্যানিয়লকে রাগিয়ে দেয় সেটা নিশ্চয়ই তার জন্য ভালো হবে না। এই বাড়িতে কেবল সে আর ক্যানিয়ল আছে এখন। ক্যানিয়ল যদি রেগে গিয়ে তাকে আঘাত করে, আর সেই আঘাতে যদি তার মৃত্যুও হয়, তাহলে সেটা অন্যদের জানতেও কষ্ট হবে। এমনকি তাকে খুন করার অপরাধে ক্যানিয়লের মৃত্যুদণ্ডও হবে না। কারণ ক্যানিয়ল খুব ধনী। ধনীরা সহজে শাস্তি পায় না। ক্যানিয়ল নিজেও তো এ ব্যাপারে বলেছিল। আর তার তো সন্দেহ হচ্ছে, কেবলই মনে হচ্ছে ক্যানিয়ল তাকে এখানে নিয়ে এসেছে মারার জন্য। সে চুপচাপ দরজার দিকে এগোতে লাগলো।
ক্যানিয়ল বললো,
“কী করছো তুমি? এখান থেকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছো?”
ইরতিজা দাঁড়িয়ে গেল। বললো,
“হ্যাঁ, এই বাড়িতে কেবল আমরা দুজন থাকতে পারি না যেখানে অন্যদের উপস্থিতি নেই।”
বলে সে আবারও পা বাড়ালো। ক্যানিয়ল বললো,
“কে বললো কেবল আমরা দুজন আছি এখানে?”
ইরতিজা দাঁড়িয়ে গেল। অবাক চোখে ক্যানিয়লের দিকে চেয়ে বললো,
“তুমিই তো বললে।”
“হ্যাঁ মানুষ হিসেবে কেবল আমরা দুজনই আছি, কিন্তু আমরা ছাড়াও এখানে অন্যদের উপস্থিতি আছে।”
“বুঝলাম না।”
ক্যানিয়ল ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বললো,
“আমি মৃত আত্মাদের কথা বলছি। আমার ধারণা তোমার ডানে-বামে, সামনে-পিছনে চারটা মৃত আত্মা দাঁড়িয়ে রয়েছে। একটা আত্মা হয়তো তোমার হিজাব ধরে টানাটানি করছে, একটা আত্মা হয়তো আবার তোমার ঘাড় ধরে ঝুলে আছে, একটা আত্মা হয়তো তোমার নাক দিয়ে প্রবেশ করে তোমার ভিতরের কিডনি, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ইত্যাদি চেক করছে। হতেই পারে, তুমি তাদের দেখছো না, কিন্তু তারা তোমার সাথে এসব কাণ্ড ঠিকই ঘটাচ্ছে।”
ইরতিজা হতভম্বের মতো চেয়ে রইল। কী বলছে এসব ক্যানিয়ল? ওর মাথা ঠিক আছে?
“শুধু তোমাকে ঘিরেই মৃত আত্মাদের ভিড় নয়। আমি শিওর আমাকেও তারা চারদিক দিয়ে ঘিরে রেখেছে। আমার কাঁধটা খুব ভার ভার লাগছে। আমি নিশ্চিত–কোনো সুন্দরী মেয়ে আত্মা বোধহয় আমার কাঁধ জড়িয়ে ধরে আছে।”
“কী বলছো তুমি এগুলো?”
“মিথ্যা নয়, সত্যি। এই বাড়িটায় অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটেছে! এক কালে অনেক মানুষ বসবাস করতো এখানে। একবার সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করে সবাইকে হত্যা করে। তাদের আত্মাগুলো এখনও বন্দি এই বাড়িটায়।”
ক্যানিয়ল ইরতিজাকে ভয় পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল, কিন্তু ইরতিজার মাঝে ভীত ছায়া দেখা গেল না মোটেই। ক্যানিয়ল গিয়ে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে বললো,
“তোমায় আমি এখানে কেন নিয়ে এসেছি জানো?”
ইরতিজা হ্যাঁ অথবা না কিছু বললো না। এমনকি জানার আগ্রহও দেখালো না। ক্যানিয়ল নিজ থেকেই বললো,
“তোমাকে কিছু দেবো আমি।”
“কিছু দেওয়ার জন্য কি এখানে নিয়ে আসতে হবে এই মৃত আত্মাদের মাঝে?”
“নিয়ে আসার প্রয়োজন ছিল না, তবে আমি সবকিছু একটু ভিন্ন ধরনের করতেই পছন্দ করি।”
বলে উঠে দাঁড়ালো ক্যানিয়ল। হলরুম থেকে সদৃশ্যমান একটা দরজা দিয়ে একটা রুমে ঢুকলো। ফিরে এলো হাতে মাঝারি আকৃতির একটা বক্স নিয়ে।
“কী আছে এর ভিতর?”
“সেটা বাড়ি গিয়ে নিজেই খুলে দেখো, ধরো।”
“কখনোই না। যে কেউ কিছু দিলেই তা আমি গ্রহণ করতে পারি না।”
“ও আচ্ছা, নেবে না তুমি এটা? দয়া করে ওই টেবিলটার দিকে একটু তাকাও।”
সোফার সামনে থাকা টি-টেবিলটাকে ইঙ্গিত করলো ক্যানিয়ল। টেবিলের উপর ধারালো ছুরিটা দেখে আত্মা কেঁপে উঠলো ইরতিজার।
“ছুরিটা দেখতে সুন্দর না?”
ভীত সন্ত্রস্ত চোখে তাকালো ইরতিজা। ক্যানিয়ল বক্সটা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
“নাও।”
ইরতিজা ছুরিটার দিকে তাকিয়ে আছে। দু চোখে স্পষ্টতর ভয়ের ছাপ পড়ে আছে। আর সেই ভয় আরও একধাপ বেড়ে গেল ক্যানিয়লের কথায়। ক্যানিয়ল বললো,
“এখন যদি তোমাকে আমি মে/রে ফেলি তাহলে কেমন হয় পাকিস্টানি গার্ল? যদি মে/রে তোমার লা/শ গুম করে দিই তাহলে?”
ইরতিজার হৃৎপিণ্ড খাঁমচে ধরলো ভয়। বক্ষস্থলে আর্তনাদের চিৎকার শোনা গেল। সে তাকালো ক্যানিয়লের দিকে। ক্যানিয়লের দু চোখে দৃষ্টি পড়তেই থমকে গেল। তার হঠাৎ মনে হলো এই চোখ কোনো স্বাভাবিক মানুষের হতে পারে না। কারণ এই চোখ দুটোয় এখন কোনো মনুষ্যত্ব নেই। ভয়ে দ্রিম দ্রিম করছে ইরতিজার বুক। ক্যানিয়ল এক পা কাছে এগিয়ে আসতেই ইরতিজার হাতে থাকা বক্স হাত ফসকে পড়ে গেল। কিন্তু সে নড়তে পারলো না একটুও। ভয়ে নড়ার শক্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে।
(চলবে)
#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ২৩
_________________
ইরতিজার হাতে একটা গোলাপি বক্স। বক্সটার ভিতর কী রয়েছে সেটা এখনও জানে না জুহি। বললো,
“এটার ভিতর কী? কিছু কিনেছো না কি?”
ইরতিজা কিছুটা ভীত। ক্যানিয়লের ওখান থেকে কত ভয় পেয়ে যে ফিরেছে সেটা কেবল সে জানে। এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল ক্যানিয়ল ছুরি দিয়ে ক্ষ/ত বিক্ষত করে ফেলবে তার শরীর। কিন্তু সেরকম কিছুই করেনি ক্যানিয়ল। বরং গাড়িতে করে বাসায় পৌঁছে দিয়ে গেছে। ইরতিজা ইতস্তত গলায় বললো,
“আমি কিনিনি। আমায় গিফট দিয়েছে।”
জুহি পুলকিত হয়ে উঠলো,
“গিফট দিয়েছে? কে? সাজিদ ব্রো? ইওর ফিয়ন্সে?”
বলতে বলতে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে ইরতিজার হাত থেকে বক্সটা নিলো জুহি।
ইরতিজা বললো,
“না, এটা সাজিদ দেয়নি।”
থামলো জুহি। কিঞ্চিৎ অবাক হয়েই তাকালো।
“ব্রো দেয়নি? তাহলে কে দিয়েছে?”
ইরতিজার বলতে কুণ্ঠাবোধ হচ্ছে। ক্যানিয়লের কথা শুনলে জুহি কী ভাববে? জুহি এমনিতেই পছন্দ করে না ক্যানিয়লকে। ওদিকে জুহি উত্তরের আশা করে চেয়ে আছে। ইরতিজা কুণ্ঠাবোধকে উপশম করে বললো,
“এটা…এটা ক্যানিয়ল দিয়েছে।”
“ক্যানিয়ল?” বিস্ময়ের দমকা হাওয়া ছুঁয়ে গেল জুহিকে। হাতের বক্সটা ফেলে দিলো ফ্লোরে। ইরতিজার হাত ধরে ওকে নিয়ে বক্সটার থেকে দূরে সরে এলো।
“তুমি কি পাগল হয়েছো টিজা? ক্যানি গিফট দিলো আর তুমি সেটা নিয়ে এসেছো? ক্যানি কি গিফট দেওয়ার মানুষ? এটার ভিতর তো বোমাও থাকতে পারে। দেখা গেল এর ঢাকনা খুলেছি আর অমনি বিকট শব্দে একটা বিস্ফোরণ হয়েছে। আমাদের বাসা, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, পছন্দের ড্রেস ইত্যাদি সকল প্রিয় জিনিস পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। তুমি কি ম/র/তে চাও?”
“কিন্তু আমার মনে হয় না এটায় কোনো বোমা আছে।”
“কথার কথা বলেছি আমি। হতেও তো পারে এমনটা। মানুষজন বলে ও না কি রোবট! রোবটের কি আর কোনো অনুভূতি থাকে? সে মানুষের জন্য মায়া অনুভব করবে কীভাবে? মানুষ খু’ন করতে তো তার একটুও কষ্ট হবে না।”
ইরতিজা কিছু বললো না। এই মেয়েটার অদ্ভুত সব কথা!
জুহি বললো,
“ঠিক আছে, বক্সটা ওপেন করে দেখি চলো।”
বক্সটা নিয়ে জুহি ইরতিজার বেডরুমে এলো। এ সময় বাসায় কেউ নেই। শুধু ওরা দুজন আছে। অন্যরা নিজের কাজে বের হয়েছে। জুহি বক্স খুললো। খুলেই চমকালো সে,
“এগুলো কী?”
ইরতিজার কিংকর্তব্যবিমূঢ় দৃষ্টি বক্সের ভিতর। হিজাব?
জুহি একটার পর একটা হিজাব বের করতে লাগলো। অনেকগুলো হিজাব পাওয়া গেল। অতঃপর জুহি গুণে দেখলো কতটি হিজাব আছে। মোট একশটা হিজাব। সে হতভম্ব হয়ে বসে রইল কিয়ৎক্ষণ। তারপর ইরতিজার দিকে তাকিয়ে বললো,
“কী ব্যাপার? ক্যানি তোমায় হিজাব কেন দিলো? তাও আবার এতগুলো? তোমার হিজাব নিয়ে ওর এত মাথা ব্যথা কেন? আগেও একদিন তোমার মাথায় হিজাব পেঁচিয়ে দিয়েছিল! সমস্যা কী ওর?”
ইরতিজা নিজেও জানে না ক্যানিয়লের সমস্যা কী। এত মানুষ থাকতে তাকে কেন একগাদা হিজাব দিলো ক্যানিয়ল?
জুহি বলতে লাগলো,
“ক্যানিয়ল এমন একজন মানুষ যার কোনো বন্ধু নেই। ও কারো সাথে মিশে না তেমন। একা একা থাকে। মানুষজনও ওকে এর জন্য বিশেষ একটা পছন্দ করে না। কিন্তু সেই ক্যানি তোমার জন্য হিজাব কিনেছে, তোমাকে গিফট দিয়েছে! বিষয়টা আশ্চর্যকর নয় টিজা? এছাড়াও ও অন্য কারো সাথে না মিশলেও তোমার সাথে যেন বেশিই মেলামেশা করে। এমনটা কেন? এটা অবশ্যই সন্দেহজনক!”
জুহি ইরতিজার দিকে সন্দিহান দৃষ্টি দিয়ে হঠাৎ বললো,
“কোথাও এমনটা নয় তো যে তোমার আর ওর মাঝে গোপন রিলেশনশিপ চলছে?”
কথাটায় ইরতিজার অন্তর শিরশিরে এক অনুভূতি নিয়ে কেঁপে উঠলো। বললো,
“তুমি ভুল ভাবছো জুহি। এমনটা নয়।”
“তাহলে ব্যাপারটা কেমন? ও কেন তাহলে এমরকম করে? তুমি ক্যান্টিনে গিয়েছিলে, আমি পরে আসছি বলে তোমাকে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে আর ক্যান্টিনে গিয়ে তোমাকে পাইনি। ক্যানি এসে তোমাকে ওই সময় নিয়ে গিয়েছিল, তাই না? তারপর এই বক্সটা দিয়েছে। কোথায় নিয়ে গিয়েছিল ও তোমাকে?”
জুহির শেষ প্রশ্নে ইরতিজা একটু ইতস্তত বোধ করলো। ইতস্ততা নিয়েই বললো,
“ওর সেকেন্ড হোমে।”
জুহির চোখে বিস্ময় স্ফীত হলো,
“ও তোমাকে নিজের বাড়িতেও নিয়ে গিয়েছিল? অবিশ্বাস্য! তুমি কি শিওর তোমাদের মধ্যে আসলেই কোনো রিলেশনশিপ নেই?”
“অবশ্যই। তুমি যেটা ভাবছো এটা সেরকম নয়। তোমার ভাবনা সম্পূর্ণ ভুল।”
জুহি উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
“আমি বাসায় যাচ্ছি। মাথার ভিতর ছোটো ধরনের বিস্ফোরণ ঘটছে মনে হচ্ছে!”
জুহি চলে যাওয়ার পর ইরতিজা হিজাবগুলোর দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে থেকে ক্যানিয়লকে নিয়ে ভাবতে লাগলো। ছেলেটার সমস্যা কী? তবে ক্যানিয়লের থেকে হিজাবগুলো পেয়ে তার মনের গহীন প্রান্তরের ঝাপসা ভালোলাগাটা আরও খানিক প্রখরতা পেল। কেমন আনন্দের একটা রেশও দোল খাচ্ছে তার মনে। অনুভব করতে পারছে সেটা।
_______________
‘তুমি আকাশের তারা, আমার স্পর্শের বাইরে।
ছুঁতে চেয়ে হাত বাড়ালে যাও আরও দূরে সরে! এমন কেন তুমি? আমার হৃদয় যে অন্ধকারে পড়ে রয়!
আকাশের বুকে যেমন তারা হয়ে জ্বলজ্বল করো,
তেমনি আমার হৃদয়েও একটু-আধটু আলো জ্বেলো।
আমি পারি না এত অন্ধকারে থাকতে, সত্যিই পারি না প্রিয়!
একটুখানি আলো আমার হৃদয়েও জ্বেলো।’
সকাল সকাল এমন একটা ভয়েস মেইল পেয়ে একটুখানি নয়, বেশি পরিমাণেই মন খারাপ হলো ইরতিজার। জোনাস একটা পাগল! আজ থেকে আর এই পাগলের কথায় মন খারাপ করবে না বলে শপথ নিয়ে বিছানা ছাড়লো সে।
এক্সারসাইজের জন্য বাবার সাথেই বাসা থেকে বের হলো। বের হতো রিশনের সঙ্গে, কিন্তু রিশন ইতোমধ্যে বেরিয়ে গেছে। জিমে গেছে সে।
ইরতিজা এমনিতেও জিমে যেত না। সে জগিং করবে। আজাদ চৌধুরী সাইক্লিং করছে। ইরতিজা তাই তার থেকে অনেক পিছনে পড়ে গিয়েছে। একা একা দৌড়াচ্ছে। সাথে সঙ্গী নেই। জুহি একটা অপদার্থ। এখনও বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। সকাল সকাল উঠে একটু জগিং করতে বের হলে কী হয়? তাহলে কি আর সঙ্গীহীন জগিং করতে হতো তাকে? ইরতিজার মন বেজায় খারাপ হলো জুহির কথা ভেবে।
নিরিবিলি রাস্তা। রাস্তার দুই ধারে লম্বা পাইন গাছ। গাছগুলো যেন রাস্তাটাকে পাহারা দিচ্ছে। বাড়ির পাশেই এই রাস্তাটা। বিকেল বেলাও হেঁটে বেড়াতে দারুণ ভালো লাগে। ইরতিজা হঠাৎ থেমে গেল। তার কিছুটা সামনে দিয়ে একটা হরিণ দৌড়ে জঙ্গলের ভিতর ঢুকে গেল। রাস্তার এক সাইড দিয়ে এসে অন্য সাইডের ফরেস্ট এরিয়ায় প্রবেশ করেছে।
ইরতিজা একটু হাঁপিয়ে নিয়ে আবারও দৌড়াতে শুরু করলো। হঠাৎ তার মনে একটা ভাবনার উদয় ঘটলো–এখন যদি ক্যানিয়লের সাথে দেখা হয়ে যায় তাহলে কেমন হবে? মাথায় হিজাব পরে বের হয়নি। ক্যানিয়ল দেখলে তো বলবে, ‘আমি এতগুলো হিজাব কিনে দেওয়ার পরও তুমি হিজাব ছাড়া বের হয়েছো পাকিস্টানি গার্ল? এর অপরাধে তোমার শিরশ্ছেদ করা হবে!’
ইরতিজা মাথায় হুডি টেনে দিলো। ছেলেটা তো বড্ড জ্বালায় তাকে, একটুও শান্তিতে থাকতে দেয় না!
মাথায় টেনে দেওয়া হুডিটা হঠাৎই মাথা থেকে সরে গেল ইরতিজার। পিছন থেকে একটা হাত টেনে নামিয়ে দিয়েছে তার হুডি।
ইরতিজা চমকিত হয়ে পিছন ফিরলো। পরপরই প্রশ্নটা বেরিয়ে এলো মুখ দিয়ে,
“ইউ?”
“আমার বাসা এই এলাকাতেই, এই রাস্তায় আমি থাকবো স্বাভাবিক।”
ইরতিজা ভ্রু কুঁচকে সন্দেহের ছাপ ফেলে বললো,
“তুমি কি আমার পিছনে ছিলে? জগিং করছিলে তুমি? তুমি না আহত? জগিং করছো কীভাবে তাহলে?”
ক্যানিয়ল একটু পিছনে থাকা বেঞ্চটা দেখিয়ে বললো,
“আমি ওখানে বসে ছিলাম ইডিয়ট!”
“মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ!” চোখ কঠিন করে বললো ইরতিজা।
“চুপ থাকো ইডিয়ট গার্ল।”
নিজের নামকরণ করা হাতের ‘ভায়োবিন’ ফুলগুলো ছুঁড়ে ফেললো ক্যানিয়ল। অতঃপর ইরতিজার মাথার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“আগামীকাল তুমি আমার দেওয়া হিজাবগুলো ফিরিয়ে দেবে। যদি ওগুলো ইউজ না করো তাহলে ওগুলো তোমার কাছে রেখে লাভ কী? ভেবো না যে আমার উডবি ওয়াইফ হিজাব-টিজাব পরে না। ওগুলো আমাকে ফেরত দিয়ে দেবে, ওগুলোর সাথে আরও দুইশ হিজাব যোগ করে আমি আমার কিউট উডবি ওয়াইফকে গিফট করবো।”
বলে ক্যানিয়ল পা বাড়িয়ে দিলো সামনে।
ইরতিজা বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। বিষণ্নতা যেন গ্রাস করে নিতে চাইছে তাকে। মনে মনে বললো,
‘পাজি! গিফট দিয়ে তা আবার ফেরত চাচ্ছে উডবি ওয়াইফকে দেওয়ার জন্য!’
রাস্তা থেকে ক্যানিয়লের ফেলে দেওয়া ভায়োলেট রঙের ফুলগুলো হাতে তুলে নিলো ইরতিজা। কিছু না ভেবেই কিছু ফুল গুঁজে নিলো কানে। আর জগিং করবে না। খানিক সময় ওয়াকিং করে বাড়ি ব্যাক করবে। ডান দিকে বাঁক নিয়ে ক্যানিয়ল চোখের অদৃশ্য হয়ে গেল। ইরতিজা ফুলগুলোকে দেখতে দেখতে ধীর পায়ে এগিয়ে চললো সামনের দিকে। ফুলগুলো পছন্দ হয়েছে তার। নাম কী এগুলোর? অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটছিল ইরতিজা।
যখন হেঁটে এসে বাঁকের মুখে দাঁড়ালো তখন পুরো শরীর স্তব্ধ হয়ে গেল তার সামনের দৃশ্যটা দেখে। হৃৎপিণ্ড নড়ে উঠলো। দু চোখে ভয় আর বিস্ময়ের বিস্ফোরণ। যে মানুষটা একটু আগে সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে হেঁটে এসেছিল সেই মানুষটা এখন আহত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছে! কপাল বেয়ে একটা রক্তের স্রোত নেমেছে। হাত দিয়ে চেপে ধরে আছে পেটের এক অংশ। যে অংশ দিয়ে রক্ত নির্গত হচ্ছে। রক্তে ভিজে গেছে হাত। ক্যানিয়লের এই অবস্থা দেখে দম বন্ধ হয়ে এলো ইরতিজার। পড়ে গেল হাতে থাকা ভায়োবিন ফুলগুলো। সে এগিয়ে এলো ক্যানিয়লের দিকে। ওর সামনে বসে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে ডাকলো,
“ক্যানিয়ল!”
ক্যানিয়লের জ্ঞান আছে, কিন্তু সেই জ্ঞান আর কিছুক্ষণ পরই হারিয়ে যাবে মনে হচ্ছে। এই শীতের মাঝেও তার শরীর ঘামে একাকার। নিঃশ্বাস টেনে তোলায় যে কষ্ট হচ্ছে ইরতিজাও উপলব্ধি করতে পারছে তা। ঘোলাটে চোখ জোড়া বুজে আসতে চাইছে। ঝাপসা দৃষ্টিতে ইরতিজাকে দেখতে পেল সে। কণ্ঠ আর কথা বলার শক্তি রাখে না, তবুও সে কষ্ট করে অস্পষ্ট গলায় কথাটা উচ্চারণ করলো,
“আমি মরে গেলে তুমি খুশি হবে ইজা?”
(চলবে)
#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ২৪
_________________
ক্যানিয়লকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। নাইন ওয়ান ওয়ানে কল করে জরুরি সেবা নেওয়া হয়েছিল। ক্যানিয়লের এই অবস্থা খবরটা ইতোমধ্যে মুহাম্মদ ইসহাকের কাছে পৌঁছেছে। হাসপাতালে মি. হেনরি উপস্থিত আছে। ইরতিজাও আছে। ইরতিজা ভয়েই অভিভূত। কে মেরেছে ক্যানিয়লকে সে এখনও বুঝতে পারছে না। এই এতটুকু সময়ের ভিতর কেউ কীভাবে মারলো?
মাথায় ভারি কিছুর দ্বারা আঘাত করা হয়েছে ক্যানিয়লকে। যার ফলে আঘাতটা খুব বাজে ভাবেই লেগেছে। আর পেটে ধারালো অস্ত্রের একটা অগভীর ক্ষত আছে। ওই ক্ষতটা না কি আগের সৃষ্টি হওয়া। ক্ষত স্থানে আঘাত লাগায় রক্তপাত ঘটেছে। ডক্টর এমনটাই বললেন। এক্ষেত্রে ইরতিজার ক্যানিয়লের গতকালকের বলা কথাটা সত্যি মনে হলো। ক্যানিয়লের বাড়িতে যে রক্ত ভেজা তুলা দেখেছিল ওটা ক্যানিয়লের রক্তই ছিল।
ক্যানিয়লের পরিবার কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে এলো। এসেছে মুহাম্মদ ইসহাক, সোফিয়া, ইয়াদা এবং নাইলা সালেম। ক্যানিয়লের ভাই-বোনদের ভিতর থেকে কেউ আসেনি? বিষয়টা ভেবে ভ্রুকুটি হলো ইরতিজার।
আরও কিছুক্ষণ পর এলো সামুরা এবং বোনদের ভিতর ছোটো যে জন সে, রাম্মিকা।
ক্যানিয়লের জ্ঞান ছিল না এতক্ষণ, কিছুক্ষণ আগে জ্ঞান ফিরলো।
রুমের ভিতর কীসব কথা হচ্ছে ইরতিজা বুঝতে পারছে না। সে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। পুলিশও এসেছিল। মি. হেনরি কথাবার্তা বললো। ইরতিজাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। যেহেতু সর্বপ্রথম ক্যানিয়লের কাছে সেই গিয়ে উপস্থিত হয়েছিল। ইরতিজা হাসপাতালে আছে অনেকক্ষণ ধরে। এরমধ্যে বাবার কল এলো। ইরতিজা রিসিভ করে বললো,
“হ্যালো আব্বু!”
“কোথায় আছো তুমি? জগিংয়ে বের হয়ে কোথায় চলে গিয়েছো? বাসায় না কি এখনও ফেরোনি?”
“আমি হসপিটালে আছি।” গলা নিচু করে বললো ইরতিজা। যতটা সম্ভব আস্তে কথা বলার চেষ্টা করছে।
আজাদ চৌধুরী অবাক এবং ব্যস্ত স্বরে বললেন,
“হসপিটালে কেন? কী হয়েছে তোমার?”
“আমার কিছু হয়নি। আমাদের এখানে একজন অ্যাটেম্পট টু মার্ডার হয়েছে শুনেছো নিশ্চয়ই? ওকে হসপিটালে আনা হয়েছে। সেখানে আছি আমি।”
“ওখানে কী করছো? এসব ব্যাপারে নিজেকে জড়িয়ে নিচ্ছ না কি? জলদি জলদি বাসায় চলে যাও ওখান থেকে।” সাবধানী কণ্ঠ আজাদ চৌধুরীর।
ইরতিজা মুখ নিস্তেজ করে বললো,
“আচ্ছা।”
আজাদ চৌধুরী আহত ব্যক্তির অর্থাৎ ক্যানিয়লের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলেন। ইরতিজা বাবাকে বললো সব। ক্যানিয়লকে কয়েকদিন হাসপাতালে থাকতে হবে।
ইরতিজার আসলে চলে যেতে ইচ্ছা করছে না। চলে গেলে সে ক্যানিয়লের সম্পর্কে জানবে কীভাবে? আর চলে যাওয়ার আগে একবার ক্যানিয়লের সাথে দেখা করেও যেতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু ভিতরে ক্যানিয়লের পরিবারের লোকজন থাকায় সে ভিতরে প্রবেশ করলো না।
দরজার বাইরে থেকে ক্যানিয়লকে দেখে হসপিটাল ত্যাগ করলো। কে মারলো ক্যানিয়লকে? ক্যানিয়লের জন্য মনটা উদগ্রীব এবং চিন্তাযুক্ত। কষ্টও লাগছে তার! পাজি ছেলেটার জন্য হঠাৎ এমন অনুভব করছে কেন সে?
________________
বাড়ি আসার পরও ক্যানিয়লের ভাবনা সর্বক্ষণ গ্রাস করে রাখলো ইরতিজাকে। এক মুহূর্তের জন্যও শান্তি পেল না মনে। বাইরে রোদ্রের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সুন্দর একটা দিন উপহার দিচ্ছে প্রকৃতি। অথচ তার মনে একরাশ কালো মেঘের মতো চিন্তা বিরাজমান। সাজিদ একটা পার্সেল পাঠিয়েছে আজকে। কিন্তু সেই পার্সেল একটু খুলে দেখার ইচ্ছা জাগেনি।
বাসায় আসার পর থেকে জুহির দেখা পায়নি। মেয়েটা ঘুমিয়ে ছিল না বাইরে ছিল জানে না। জুহি যখন ইরতিজার কাছে এলো ইরতিজা তখন বাসার পিছনের ছোটো লনটায় উদাসী মনোভাব নিয়ে বসে আছে। সে এসে ইরতিজার সামনের চেয়ারটা দখল করে বসে বললো,
“কোথায় ছিলে তুমি? সকাল থেকে না কি বাসায় ছিলে না?”
“হসপিটালে ছিলাম।”
“কেন? জ্বর করেছে?”
বলতে বলতে চেয়ার থেকে উঠে ইরতিজার কপালে হাত রাখলো জুহি।
ইরতিজা বললো,
“আমি ঠিক আছি। কিন্তু…” একটু থেমে জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি শোনোনি ঘটনাটা?”
জুহি অজ্ঞর মতো বললো,
“কোন ঘটনা? কোনো ঘটনা ঘটেছে? আমি টের পাইনি তো!”
“তুমি সত্যিই জানো না?”
“উফ ভণিতা করো না টিজা। বলো কোন ঘটনা সম্পর্কে কথা বলছো?”
“ক্যানিয়লের উপর অ্যাটাক করা হয়েছে! ও এখন হসপিটালে। জানো না তুমি?”
জুহি যেন আকাশ থেকে পড়লো,
“কী? ক্যানি হসপিটালে? এই খবরটা তুমি আমাকে এখন দিচ্ছ টিজা? তোমাকে দিয়ে কোনো কাজ হয় না।” শেষের কথাটা বিরক্তির শোনালো। জুহি দৌড়ে চলে গেল ঘরে।
কয়েক মিনিট পরই গায়ে জ্যাকেট পরে বেরিয়ে এলো। হাতে ব্যাগও দেখা যাচ্ছে।
“লেট’স গো।”
“কোথায়?”
“হসপিটালে। ক্যানি অসুস্থ এটা জানার পরও কি আমি বসে থাকবো?”
ইরতিজা অবাক। যে মানুষটাকে পছন্দ করে না সেই মানুষটার জন্য এত উদ্বিগ্নতা জুহির? না কি এখনও চুপি চুপি পছন্দ করে ক্যানিয়লকে? না কি কোনো এক সময় ক্যানিয়লকে ভালো লাগতো বলে এই উদ্বিগ্নতার সৃষ্টি? না কি ক্যানিয়ল চেনা পরিচিত এক জায়গার মানুষ বলে? তবে ইরতিজা হাসপাতালে যাওয়ার একটা সুযোগ পেয়ে আনন্দিত। তার তো বার বার মনে হচ্ছিল সে এক ছুটে হাসপাতালে গিয়ে দেখে আসে ক্যানিয়লকে।
হসপিটালে আসতে দশ মিনিটের মতো সময় লাগলো। উবারে করে এসেছে। আসার সময় বেশি উদ্বিগ্নতা জুহি দেখালেও, জুহির থেকে এখন ইরতিজার উদ্বিগ্নতাই বেশি। সে আগে আগে পা ফেলে এসেছে। ক্যানিয়লের রুমের কাছে আসতেই তার ব্যস্ত পা থেমে গেল। ইরতিজাকে থামতে দেখে জুহি বললো,
“কী হয়েছে?”
প্রশ্নের উত্তরটা ইরতিজার দিতে হলো না। জুহি নিজেই বুঝতে পারলো। ভিতরে কেউ একজন আছে ক্যানিয়লের সাথে। দরজার কাচের অংশটা দিয়ে দেখা যাচ্ছে খয়েরি ড্রেস পরা একজন মহিলা বসে আছে।
ভিতরের কথোপকথন শুনতে যাচ্ছে ইরতিজা এবং জুহি।
“আমি চাইনি তুমি এখানে আসো। কেন এসেছো? এখনই চলে যাও। তোমাকে দেখলেও আমি ঘৃণা বোধ করছি, সত্যিই করছি! চলে যাও।”
ক্যানিয়লের কথার প্রত্যুত্তরে মহিলাটি বললো,
“তুমি আহত, হসপিটালে আছো, এটা শোনার পরও আমি তোমায় দেখতে আসবো না? কাম অন ক্যানিয়ল, এতটা কঠিনও হতে পারো না তুমি! তুমি আমায় ঘৃণা করলেও আমি তো তোমায় ভালোবাসি।”
মহিলাটির কণ্ঠ কাতর শোনালো।
ক্যানিয়ল হাসলো। যদিও ওর চেহারায় আলতো কষ্টের প্রলেপ পড়ে আছে। ওই চেহারাতে হাসিটা অদ্ভুত দেখালো, সুন্দর দেখালো। এক কথায় বলতে গেলে অদ্ভুত সুন্দর দেখালো ওর হাসিটা। ও তুচ্ছ কণ্ঠে বললো,
“ভালোবাসা!” কথাটা বলে আবারও অদ্ভুত সুন্দর হেসে বললো,
“আহত কেন? আমি যদি মরেও যেতাম তাহলেও চাইতাম না তুমি আমায় দেখতে আসো। যদি আগে আমার মৃত্যু ঘটে তাহলে তুমি আমাকে দেখতে আসবে না! আমি চাই না তুমি আসো। আসবে না তুমি!”
এমন কথায় দগ্ধ হলেন বেলা লিমাস। বললেন,
“এমন কথা আর বলবে না ক্যানিয়ল!”
ক্যানিয়ল বড়ো করে নিঃশ্বাস ত্যাগ করে চোখ বুজলো। আধ শোয়া অবস্থায় আছে সে। এবার শান্ত ধীর কণ্ঠে বললো,
“চলে যাও। এখনই আমার ড্যাড এসে পড়বে। তার সাথে তোমার দেখা হওয়া নিশ্চয়ই ভালো কোনো ব্যাপার হবে না। তুমি এখানে বসে আছো বলে আমি কষ্ট পাচ্ছি! মনে হচ্ছে আমার হৃদয় চেপে ধরে আছে কষ্টের শত হস্ত! নিঃশ্বাস নিতে পারছি না আমি। তুমি চলে যাও, আমি একটু প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিই!”
মিস বেলা লিমাসের চোখে অশ্রু। হৃদয় ভার। উচ্ছল হয়ে ওঠা কান্নাকে ঢোক গিলে সামলে নিয়ে টুল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। ব্যাগটা হাতে নিয়ে বললেন,
“নিজের যত্ন নেবে, ভালো থাকবে, আর…”
কথাটা বলতে গিয়ে একটু থামলেন তিনি।
“আর পারলে আমাকে একটু কম করে ঘৃণা করবে!”
বেলা লিমাস দ্রুত পায়ে বেরিয়ে এলেন।
ইরতিজা ও জুহি সরে গেল দরজার সামনে থেকে।
বেলা লিমাস ওদের লক্ষ না করেই চলে গেলেন। তবে ইরতিজা লক্ষ করলো। বেলা লিমাসের সিক্ত চোখ জোড়াও চোখ এড়ালো না। বিষয়টা তার মনের ভাবনা গভীর করলো।
জুহি এতক্ষণের ঘটমান পরিস্থিতির জন্য বললো,
“চলো টিজা, ফিরে যাই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক লাগছে না।”
ইরতিজার মাঝে চলে যাওয়ার ভাব পরিলক্ষিত হলো না। সে প্রশ্ন করলো,
“মহিলাটিকে তুমি চেনো?”
জুহি মনে করার চেষ্টা করে বললো,
“মনে পড়ছে না। তবে চেনা চেনা লাগছে। হয়তো দেখেছি এর আগে।”
“মহিলা সম্পর্কে ক্যানিয়লের কী হয় এ বিষয়ে ধারণা আছে তোমার?”
“না।”
ইরতিজা দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো। আচমকা ঘটিয়ে ফেললো কাজটা। জুহি বলে উঠলো,
“যেয়ো না।”
ইরতিজা ভিতরে প্রবেশ করলেও জুহি প্রবেশ করলো না। এই মুহূর্তে তার ক্যানিয়লের সামনে যেতে কেমন যেন লাগছে। একটু আগেই ক্যানিয়ল একটা মহিলার সাথে কেমন কষ্টপূর্ণ কথা বললো। এখনই গিয়ে ক্যানিয়লকে ডিস্টার্ব করা কি উচিত কাজ?
ইরতিজা চুপচাপ এসে বেডের পাশে দাঁড়ালো, কোনো শব্দ করলো না। ক্যানিয়ল চোখ বুজে থেকেও বেশ বুঝতে পারলো ইরতিজা এসে পাশে দাঁড়িয়েছে। ইরতিজার থেকে পরিচিত পারফিউমের সুবাস নাকে এসে লাগছে। সে চোখ মুদিত অবস্থাতেই বললো,
“পাকিস্টানি গার্ল, চুপি চুপি কেন আসো? ঝড়ের বেগে শব্দ তুলে এসে আমাকে ভাসিয়েও তো নিতে পারো।”
কথাটায় হঠাৎ হৃদয় কেমন করে উঠলো ইরতিজার। ক্যানিয়ল চোখ মেলে তাকালো। ওর চোখে চোখ পড়তে ঘাবড়ে গেল ইরতিজা। দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
“কেমন বোধ করছো এখন?”
“একটা অসুস্থ মানুষ কেমন বোধ করতে পারে?”
“ভালো নেই তুমি।”
ক্যানিয়ল হাসলো,
“কিন্তু আমি ভালো আছি।”
ইরতিজা দুই পাশে মাথা নেড়ে বললো,
“ভালো নেই।”
ক্ষণকাল নীরব থেকে বললো,
“ওই মহিলা কে ছিল?”
“কোন মহিলা?” না জানার ভাণ করলো ক্যানিয়ল।
“একটু আগে যার সাথে কথা বললে।”
“লুকিয়ে লুকিয়ে শুনছিলে তুমি?”
“অপরাধ করেছি? মারবে আমাকে? ছু’রি দিয়ে আঘাত করবে?”
“অপরাধ করোনি।”
“কে সে?”
“চিনি না। প্রথম দেখা হয়েছে আজকে।”
“মিথ্যা কেন বলছো? সে তোমার মম। ইওর রিয়েল মাদার!”
‘ইওর রিয়েল মাদার’ কথাটা ক্যানিয়লের ধূসর রঙা আকাশকে পুরোপুরি কালো করে দিলো। সে একবারও চোখের পলক না ফেলে একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে বললো,
“শি ইজ নট মাই মম!”
“নিজের মমকে ঘৃণা করো?”
“সে কি কেবল ঘৃণা পাওয়ারই যোগ্যতা রাখে না?”
“জানি না আমি। যদি সে কেবল ঘৃণা পাওয়ারই যোগ্যতা রাখে তাহলে তুমি তো অন্যায় করছো। তুমি অন্যায়ভাবে ভালোবাসো তোমার মমকে!”
ইরতিজার কথা দুর্বল করে দিচ্ছে ক্যানিয়লকে। কিন্তু সে বাইরে যথেষ্ট কঠিন থেকে বললো,
“আজেবাজে বকা বন্ধ করো মেয়ে।”
“বন্ধ করে দিলে তুমি খুশি হবে?”
ক্যানিয়ল কিছু না বলে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো অন্যদিকে।
ইরতিজা জানে না ক্যানিয়লের মমের সাথে ক্যানিয়লের কী হয়েছে। তবে সে ক্যানিয়লের বলা কথা এবং ক্যানিয়লের অভিব্যক্তি দেখে সহজেই বুঝতে পারছে, ক্যানিয়ল যদি নিজের মমকে ঘৃণা করে থাকে তার চেয়ে বরং ভালোবাসে বেশি। ইরতিজা এখনকার মতো এই বিষয়টার সমাপ্তি ঘটিয়ে দিলেও তার মন থেকে পুরো বিষয়টি জানার কৌতূহল কিন্তু দমেনি। ক্যানিয়ল অসুস্থ বলে সে এই প্রসঙ্গে কথা বলবে না আর। কিন্তু পরে অবশ্যই বিষয়টা খতিয়ে দেখবে।
ইরতিজা ক্যানিয়লের বেডের পাশে বসলো।
ক্যানিয়ল গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
“এত কাছে বসবে না। তোমার পারফিউমের বাজে গন্ধে আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে!”
ইরতিজা ক্যানিয়লের কথা বিশেষ গায়ে মাখলো না। ক্যানিয়লের উপর কোমল দৃষ্টি রেখে বললো,
“ইনশাআল্লাহ দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে তুমি।”
“জানি, এইটুকু আঘাতে মরবো না আমি!”
ইরতিজা হাসলো। বেড থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে এক পা বাড়িয়ে আবার থামলো। হঠাৎ মনে পড়েছে এমন ভঙ্গিতে বললো,
“ও হ্যাঁ, তাড়াহুড়ো করে আসায় হিজাব পরে আসা হয়নি। আগামীতে নিশ্চয়ই তুমি কখনও হিজাব ছাড়া দেখতে পাবে না আমাকে। তোমার দেওয়া ওই হিজাবগুলো আর ফেরত পাবে না তুমি।”
ইরতিজার কথাগুলোয় প্রথমে বিস্মিত হলো ক্যানিয়ল। কথাগুলো যখন যথাযথ উপলব্ধি করতে পারলো তখন হাসলো।
ইরতিজাও একটুখানি হেসে পা বাড়ালো যাওয়ার জন্য। ক্যানিয়ল পিছন ডাকলো,
“দাঁড়াও।”
ইরতিজা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। ক্যানিয়ল বললো,
“কাছে এসো।”
ইরতিজা এগিয়ে এলো।
ক্যানিয়ল বললো,
“একটু নিচু হও।”
ইরতিজা অবাক হয়ে বললো,
“কেন?”
“আমি বলছি তাই।”
“কী করতে চাইছো?”
“বেশি কথা বলা কি পাকিস্টানিদের রক্তে মিশে আছে?”
ইরতিজা কথা না বাড়িয়ে হালকা একটু ঝুঁকলো ক্যানিয়লের দিকে। আচমকা ক্যানিয়লের একটা হাত উঠে এলো ইরতিজার ঘাড়ে। ইরতিজার মাথাটা আরও নিকটে টেনে নিলো সে। ইরতিজা ঘাবড়ে গেল। চোখে-মুখে ঘাবড়ে যাওয়া ভাবটা ছেপে গেল সরলতার সাথে।
ক্যানিয়ল খুব কাছ থেকে ইরতিজার চোখে স্থির দৃষ্টি রেখে বললো,
“জানো তো, আমি মানুষের সাথে খুব একটা মিশতে পারি না, কিন্তু আজবভাবে তোমার সাথে মিশে যাচ্ছি! সেই শুরু থেকে তোমার সঙ্গ ত্যাগ করতে পারছি না। বরং আরও নিজ থেকে গিয়ে সঙ্গ নিচ্ছি! এটা অদ্ভুত এবং অবিশ্বাস্য একটা ব্যাপার!”
(চলবে)