এই মন তোমাকে দিলাম পর্ব-৪+৫

0
205

#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব-৪
#আরাদ্ধা_সাদাত_খান
দরজায় কয়েকবার বেল বাজানোর পর আরাদ্ধা এসে দরজা খুললো।সায়ন ঢুকেই নগদে ওর মাথায় একটা চাটি মারলো।এর মাঝেই রুম থেকে আরহানও বের হলো।
আরহানকে দেখে সায়ন সপ্তম আসমান থেকে ছিটকায় পরলো।আরাদ্ধার দিকে তাকাতেই দেখলো আরাদ্ধা মাথা ডলতে ডলতে তাকে চোখের চাহনি দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
সায়ন আস্তে তার পাশে ঘেষে দাঁড়ালো।কণ্ঠ নিচু করে জিজ্ঞেস করলো,
– তুই কি আরহান ভাইকে বিয়ে করেছিস?
আরাদ্ধা ধাম করে পিঠে একটা থাপ্পড় মেরে বলল,
– নাহলে এত রাতে ও এখানে কি করবে?
সায়ন পিঠ ডলতে ডলতে বলল,
– তাহলে বিয়ের পর তোর মন এত খারাপ ছিলো কেন?বিয়ে তো আরহান ভাইকেই করলি।এরপর আবার দিন রাত মধুচন্দ্রিমাও পালন করছিস।
আরাদ্ধা থতমত খেয়ে গেলো।জিজ্ঞেস করলো,
-মানে?
দুইজন এতক্ষন ফিসফিস করেই কথা বলছিলো। তবুও সায়ন আরও চাপা গলায় বলল,
– মেয়ে মানুষের ঠোঁটের লিপ্সটিক লেপটে যাবে অথচ তারা সেটা খেয়াল করবেনা, এটা অসম্ভব ব্যাপার।তারপর তোর কানের নিচেও কেমন লাল লাল দাগ দেখা যাচ্ছে।সরি রে!জানলে আরও ঘন্টাখানেক পর আসতাম।বিশ্বাস কর তোদের মধুচন্দ্রিমায় হানা দেওয়ার শুধু বিন্দু না,ন্যানো পার্সেন্ট ইচ্ছেও আমার ছিলো না।
আরাদ্ধা কোনো কথাই বলতে পারলো না আর। কি বলবে?!এই অসভ্যর সাথে এটা নিয়ে আরও কথা বাড়ানো মানেই উলটো বেফাস কথা শোনা।
তাদের এই ফুসুরফুসুর এর মাঝেই আরহান খ্যাক করে উঠলো,
– তোদের ফিসফিসানি থেমেছে?না থামলে আমার সাথেও বল?
সায়ন এবার আরহানের কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো,
– ব্রাদার।তোমার বউ আমাকে বলেওনি যে তার বিয়ে তোমার সাথে হয়েছে।আসলাম দুলাভাইর সাথে দেখা করতে, এখন দেখি দুলাভাই আগে থেকেই আমার ভাই লাগে।

আরহান হাসলো।ওকে নিয়ে সোফায় বসালো।আরাদ্ধা ততক্ষনে ফ্রেশ হতে চলে গেছে।এখন বাজে নয়টা। সে এসেছে সাড়ে আটটার আগে। সায়ন ফোন দিয়েছিলো দুপুরে।তখন আসতে চেয়েছিলো। আরাদ্ধা হাসপাতালে ছিলো বলে রাতে আসতে বলেছে। ফাহাদ আর রিয়ানদেরও আসতে বলেছে। মুগ্ধর সাথে যোগাযোগ করতে পারে নি। সায়নকে দেখে রূপন্তীর কথা মনে পড়ে গেলো।ওর ও তো ফেরত আসার কথা। মেয়েটার সাথে যোগাযোগ হয় না বহুদিন।

সায়ন, ফাহাদ, মুগ্ধ, আরাদ্ধা, রূপন্তী। এই কয়জন একসাথে মেডিকেলে পড়েছে।রূপন্তী আর আরাদ্ধা আবার রুমমেট ছিলো।তাদের আরও তিনজন ফ্রেন্ড আছে। শুধুমাত্র তারা এই ৭-৮জন বাঙালি ছিলো মেডিকেলে।সব জায়গায় গ্রুপে চলাফেরা করতো।
.
ফাহাদ, রিয়ানরা আসার পর ডিনার করতে বসা হলো।আরহা আপাতত নেই,ওর আগামীকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা। বিধায় সে সেখানে।
খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই এবার ড্রয়িংরুমের ফ্লোরে বসলো।তাফসি এক গামলা চা বানিয়ে রেখে এসেছে রান্নাঘরে।এখন সমানে আড্ডা চলবে এবং চায়ের রাউন্ড চলবে।।
কথার মাঝেই একসময় সায়ন জানালো আগামী শুক্রবার তার বিয়ে। কোথায় কোন মেয়ের সাথে সে জানে না। শুধু ওদেরকে দাওয়াত দিয়ে দিলো।ফাহাদ যেতে পারবে না। কিন্তু বাকি চারজন যাবে বলে জানালো।
.
রূপন্তী বের হয়েছিলো ফ্রিজ কিনতে৷বুক করে এসেছে, আগামী সোমবার আসবে।
আগামীকাল তার বিয়ে!
এই কথা মনে হতেই সে নিজেই অবাক হলো।কোনো শপিং করা লাগে নাই কারণ তার সবকিছু নাকি বরপক্ষই দিবে।
দুইদিন আগে মায়াকে ফোন করে জানিয়েছে যে সে মাদারের বাসায় বিয়েটা করতে চায়। মাদারের আপত্তি নেই যেহেতু বর পক্ষের মানুষ খুবই কম।
৫দিন হলো সে গুলশানের একটা হসপিটালে জব করে।বাসা তেঁজগায় নিয়েছে।বাসা থেকে হসপিটালের পথ বিশ মিনিট। সে হাসপাতাল থেকে বের হয়েছে সন্ধ্যায়। এরপর গেছে ফ্রিজ কিনতে।
সাড়ে নয়টা বাজে। সে মাত্রই বাসায় ঢুকলো।বাসা পুরোপুরি সাজাতেও পারে নাই।সে সোজা ফ্রেশ হয়ে ধাম করে বিছানায় শুয়ে পড়লো।আলসেমির ঠেলায় খেতেও ইচ্ছে করছে না।একবার মনে হলো আরাদ্ধাকে ফোন দিবে।এক সপ্তাহ আগে যে ছয় সাত বার কল দিয়েছে, এরপর ব্যাস্ততার ঠেলায় আর সময় পায় নাই।কালকে বিয়ে করছে অথচ নিজের এত কাছের একটা মানুষকে জানানো হলো না।
ফোন হাতে নিয়েও আর কল দিলো না।
আলসেমি লাগে!
উঠে খেতে গেলো। খেয়ে দেয়ে বারোটার দিকে শুবে তখনই হস্পিটালের এক সিনিয়র ম্যামের কল আসলো।জরুরি এক ও.টি করতে হবে কিন্তু তিনি একটা কারনে আসতে পারবে না।তাই রূপন্তীকে যেতে বলল।
রূপন্তী পড়লো বিপাকে।দেশের প্রথম ও.টি সে একা করবে না।কাওকে লাগবেই এসিস্ট করার জন্য।মাথায় আরাদ্ধার কথা আসলো।না এত রাতে মেয়েটাকে বের হতে বলা উচিৎ হবে। তার মধ্যে এই মেয়ে আবার বিয়াইত্তা।ফাহাদের কথা মনে পড়তেই ওরে মেসেঞ্জারে কল দিলো।ফোন নাম্বার নাই। সে ধরলো না।উপায় না পেয়ে চেইঞ্জ করতে করতে আরাদ্ধাকেই ফোন দিলো। একবার,দুইবার,তিনবার, চতুর্থবারের বেলায় একটা নারী কণ্ঠ ভারি দম ফেলতে ফেলতে হ্যালো বলল।
রুপন্তী সাথে সাথে চিৎকার করে বলল,
– দোস্ত। একটা অ.টি করতে হবে।আর্জেন্ট। ফাহাদ ফোন ধরে না। শেষে তোকেই দিলাম।এক্ষুনি ইউনাইটেড এ আয়।
ওইপাশে থেকে কিছুক্ষন নীরব থেকে জিজ্ঞেস করলো,
– কে?
– আরে আহাম্মক আমি রূপন্তী। বাকি কথা পরে হবে। তুই আয় আগে।
ফোন কেটে দিলো সে।ততক্ষনে রাস্তায়ও নেমে এসেছে। একটা সি.এন জি ঠিক করে রওয়ানা দিলো।ক্লিন হয়ে ওটিতে ঢোকার ১৫ মিনিটের মাঝে আরাদ্ধা আসলো।দুজনের কেউই কারো দিকে তাকালো না। মনযোগ দিলো রোগীর দিকে।
#চলবে।

#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব-৪
#আরাদ্ধা_সাদাত_খান
সায়নরা গতকালই রাজশাহী চলে এসেছে। জয়ার বড় ভাই থাকেন এখানে।সরাসরি তাই এখানেই এসেছে। বিয়ে সন্ধ্যার পর পড়ানো হবে । কারণ কনে আজ ভোরের ফ্লাইটে আসবে।তার ইচ্ছেতেই সন্ধ্যার পর পড়ানো হচ্ছে।উনারা আগামীকালই বউ নিয়ে চলে যাবে আবার।ইচ্ছে আছে কয়েকমাস পর বড় কর অনুষ্ঠান করার।

সায়ন ঘুম থেকে উঠলো বেলা এগারোটা বাজে।তার হাফ ভাব দেখলে কেও বুঝবে না যে সে আজ বিয়ে করছে। তার নিজেরও কোনো প্রকার অনুভূতি কাজ করছে না।
সকাল বেলায় কনের ডালা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
১২টার দিকে আরহান-আরাদ্ধা,রিয়ান-তাফসিও চলে আসলো।ছেলেরা নামাজ পড়ে এলো, সবাই দুপুরের খাওয়া দাওয়া করে একটু বিশ্রাম নিয়েই তোড়জোড় শুরু করলো রেডি হওয়ার জন্য।
রিয়ান,আরহান এবং রায়ান মিলে সায়নকে রেডি করিয়ে দিলো।যেহেতু ঘরোয়া অনুষ্ঠান, সেই অনুসারে সীমন্তী সায়নের জন্য পাঞ্জাবী কিনেছে আর কনের জন্য লাল টুকটুকে জামদানি কিনেছে। শেরওয়ানী কিংবা বেনারসির দিকে যায়নি আর।
সকলে মিলে রেডি হয়ে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বেরিয়ে পরলো।উদ্দ্যেশ্য,পরিবারের নতুন
সদস্য আনা।
.
রূপন্তী কখনও শাড়ি পড়েনি।একবারও না। মেয়েরা মূলত নিজেদের মা,বোনদের শাড়ি পড়ে ছোটবেলায়।তার তো কেও ছিলোই না।সে কিভাবে পড়বে?!

সে প্রচন্ড টায়ার্ড। গতরাতে সার্জারিটা করে এসে ঘুমিয়েছে ৩টার সময়। এরপর আবার ৬টায় উঠে যেতে হয়েছে। ওর ফ্লাইট ছিলো সাড়ে আটটায়। মাদারের বাসায় এসে পৌঁছেছে ১১টায়।গোসল করে,নামাজ পড়ে খাওয়া দাওয়া করতে করতে ৩টা বেজে গেলো।মায়া নিজের মেয়েকে নিয়ে চলে এসেছে। কারন রূপন্তীর বিয়ের ডালা উনার কাছে ছিলো।এরপর একটু শুয়ে ঘুমাবে তার আগেই উঠিয়ে দেওয়া হলো রেডি হতে হবে বলে।৪টা থেকে শুরু করলো রেডি হওয়া। সে একা একাই রেডি হচ্ছে। চুল,মেকাপ তার জন্য কোনো ব্যাপার না।কিন্তু বিসমিল্লাহ করে শাড়িতেই সে আটকে গেছে।টিউটোরিয়াল দেখেও পারছে না।শেষমেশ মায়া এসে ওকে শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে গেলেন।শাড়ি পড়তে পড়তেই ৫টা বেজে গেলো।এরপর বসলো সাজগোজ নিয়ে।প্রথমে ভেবছিলো ভারি সাজ দিবে। পরে মনে হলো প্রথম দিনেই শ্বশুরবাড়ির লোকদের ধোকা না দেওয়া ভালো।তাই হালকা সাজেই নিজেকে সাজালো।চুলও আর স্টাইল না করে খোপা করে নিলো।মাথার ওড়না সেট করতে আর জুয়েলারি পড়াতে আসলো মায়া রহমানের মেয়ে মালিহা৷ এবার ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছে। ওর সাথে কথা বলে রূপন্তী বুঝলো যে মেয়েটা একদমই মায়ের উল্টো। হাসিখুশি,চঞ্চল।মাথায় ঘোমটা দেওয়ার জন্য ওড়না আর গয়নাও ডালাতে ছিলো।মালিহা সুন্দর করে সেগুলো পড়িয়ে দিলো।এরমাঝেই কানে আসলো কলিংবেলের আওয়াজ। মায়া -আসমা দুজনই আসলেন জামাই চলে এসেছে সেটা জানাতে।রূপন্তী ততক্ষনে রেডি হয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে।
স্লিম মেইনটেইনড ফিগারে জামদানী পেঁচানো পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি লম্বা টুকটুকে মেয়েটাকে দেখে দুজনেই একসাথে বলে উঠলেন ‘বারাকাল্লাহ’।
উনাদের এরূপ রিয়েকশন দেখে রূপন্তী লজ্জা পেয়ে গেলো।আয়নায় তাকিয়ে তার নিজেরও মনে হলো তাকে সুন্দর লাগছে। আচ্ছা!যার সাথে আজ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তার জীবন জুড়ে যাবে,সে তাকে পছন্দ করবে তো?ভালোবাসবে তো?
হঠাৎ করেই তার খুব নার্ভাসনেস কাজ করছে। যদি এই মানুষটার থেকেও সে ভালোবাসা না পায়?!
.
সায়নরা নিজেদের সাথেই কাজী নিয়ে এসেছে।তারা আর দেরি করলো না, বিয়ে পড়ানো শুরু করতে বলল।কাজি সব প্রস্তুতি শেষে এবার বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন,
-হাজিরান মজলিশে ১১,০০,০০০ টাকা দেন মোহর ধার্য্য করিয়া নগদ গহনা বাবদ ৫০,০০০ টাকা বুঝিয়া পাইয়া, অবশিষ্ট টাকা বাকি রাখিয়া রাজশাহীর পুঠিয়া নিবাসী মহুরুম কর্নেল রায়হান রহমানের একমাত্র কন্যা ‘রাহদিয়া রহমান’ এর সাথে আমি তোমার সহিত বিবাহ দিলাম | বলুন আলহামদুলিল্লাহ, কবুল, কবুল,কবুল।
সবার মাঝে দুজন খালি স্তব্ধ হয়ে গেলো। প্রথমজন সায়ন এবং দ্বিতীয়জন আরাদ্ধা। নামটা শুনতে তারা কোনো প্রকার ভুল করেনি। সায়ন ঘোরের মাঝে চলে গেলো।আরাদ্ধা মনে মনে আহাজারি করতে লাগলো।এদের সংসার কিভাবে টিকবে!একটা আরেকটাকে দেখতেই পারে না।
এদিকে সায়নকে সবাই তাড়া দিচ্ছে। সায়ন ঘোরের মাঝেই কবুল পড়ে সাইন করে দিলো।
এবার সবাই আসলো রূপন্তীর কাছে। রূপন্তী মাথা নিচু করে বসে আছে। ওর একপাশে জয়া এবং অপর পাশে মায়া আর আসমা।কাজি পড়ানো শুরু করলেন,
-হাজিরান মজলিশে ১১,০০,০০০ টাকা দেন মোহর ধার্য্য করিয়া নগদ গহনা বাবদ ৫০,০০০ টাকা বুঝিয়া পাইয়া, অবশিষ্ট টাকা বাকি রাখিয়া সাভার নিবাসী এমপি তারিফ চৌধুরীর একমাত্র পুত্র ‘সায়ন চৌধুরীর’ সাথে তোমার সহিত বিবাহ দিলাম | বলুন আলহামদুলিল্লাহ, কবুল,কবুল,কবুল।
রূপন্তী একটু কেঁপে উঠলো। তবে মাথা উঁচু করলো না।প্রিয় বান্ধবীটার মনে কি চলছে সেটা একমাত্র আরাদ্ধা বুঝলো।
অনেক সময় নিয়ে সে কবুল বলল।সাইন করার সময়ে বাপাশে ‘সায়ন চৌধুরী’নামটা দেখে তার বুক আরেকবার হাহাকার করে উঠলো। কেন? সে একটু সুখে থাকলে কি হয়?!কেন জীবনে তাকে বারবার এরকম কঠিন সমস্যার মুখে এনে দাঁড় করায়?!
.
বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে অনেক্ষন।রূপন্তী,সায়ন দুজনেরই সাথে আরাদ্ধার আলাদা ভাবে কথা বলা দরকার। কিন্তু এই বাড়িতে সেই সুযোগ পাবে বলে মনে হচ্ছে না। ওই বাড়িতে গিয়েই কথা বলতে হবে।
বরপক্ষকে রাতের খাবার খাওয়ানো হলো।খুব ভালোমতো আপ্যায়ন করা হলো।এভাবেই রাত দশটা বেজে গেলো। এবার বিদায়ের পালা। মায়া রূপন্তীকে খালি একবার জড়িয়ে ধরলেন।আসমাও ধরে কাঁদলেন।
কিন্তু রূপন্তীর চোখ থেকে এক ফোটা পানিও বের হলো না।
পুতুলের মতো তাকে যেভাবে যা বলা হলো,সেটাই করলো।
গাড়িতে সায়নের সাথে বসা লাগলো।তার আরেক পাশে তাফসি।
সায়ন,রূপন্তী, দুজনের একজনও আরেকজনের দিকে তাকায়নি এখন পর্যন্ত।সায়ন চিন্তিত সামনের দিনগুলো নিয়ে। রূপন্তী ব্যাস্ত নিজের জীবন নিয়ে অভিযোগ জানাতে।
.
রাতে রূপন্তীকে আলাদা রুমে দেওয়া হলো। আগামীকাল সায়নের ঘর সাজিয়ে ওদের একসাথে থাকতে দেওয়া হবে।
সবাই গিয়েই ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো। অনেক রাত হয়েছে। তার উপর কালকে ওদের বাই রোড যেতে হবে। অতঃপর লম্বা জার্নি।রূপন্তীকে জয়া নিজের হাতে খাইয়ে দিয়ে গেছেন। আরাদ্ধা এসে কথা বলতে চাইতেই মান করে বলল,
-দোস্ত,আপাতত আমার একটা কথাও শুনতে ইচ্ছে করছে না।আপাতত আমাকে একটু একা থাকতে দে।পরে কথা বলবো।

আরাদ্ধাও আর জোর করেনি।গিয়ে আরহানকে পুরো ব্যাপার খুলে বলতেই আরহান জানালো সেও সায়নের সঙ্গে কথা বলবে।
রাত পোহালো। সকালে নাস্তা খেয়েই তারা রওয়ানা দিয়ে দিলো।রূপন্তীর গায়ে এবার সবুজ রঙের জামদানী। সে আর সায়ন আলাদা গাড়িতে।ওদেরকে একেবারে বাসরঘরে দেখা করতে দিবে।
তারা সাভার বিকেলে পৌঁছালো।রূপন্তীকে রাখা হলো সীমন্তীর ঘরে।ঘরে আরো মানুষ থাকাতে আরাদ্ধা আর সুযোগ পেলো না মেয়েটার সাথে কথা বলার।
সন্ধ্যার পর রূপন্তীকে আবার সাজানো হলো।এবার গায় স্থান পেলো গোলাপি কাতান। ওইদিকে সায়নকেও রিয়ান,আরহান,রায়ান মিলে পাঞ্জাবি পড়াচ্ছে। সাথে তাদের লাগামহীন বেফাঁস কথা তো আছেই। কিন্তু সায়নের এসব বিরক্ত লাগছে। যেই মেয়েটার সাথে কখনো ঝগড়া বাদে কোনো কথা হয় নাই,সেই মেয়ে জড়িত বিড়াল মারার কথা আসে কিভাবে?
রূপন্তীকে সায়নের রুমে বসিয়ে দেওয়া হলো।রুম পুরোটাই সাদা গোলাপে সাজানো। বাহিরে সায়নকে জব্দ করে দশ হাজার টাকা খসানো হলো।তারপর রুমে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো।
রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে সায়ন অনেক্ষন উল্টো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।এক-দেড় মিনিট পর গলা ঝেড়ে ঘুরে দাঁড়ালো।বিয়ের পর প্রথম বউ নামক মেয়েটার দিকে তাকালো।রূপন্তীও তাকালো।চোখাচোখি হলো।
এবং এই দৃষ্টি বিনিময়ের মাঝেই তেজী, শক্ত মনের মেয়েটা ঠোঁট ভেঙে হুহু করে কেঁদে দিলো।
#চলবে।