একগুচ্ছ কালো গোলাপ পর্ব-১৮+১৯

0
484

#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_১৮+১৯

🍁
{উদাসী দিন}
প্রতিদিনকার মতো আরেকটি সকাল । শীতের হালকা আমেজ এসেছে প্রকৃতিতে । হালকা শিশির লেগে আছে ফুল গুলোর উপর । এই সকাল গুলোতে ঘুমোতে ইচ্ছা করে না । মনে হয় অনেক বড় লীলা মিস করে ফেললাম । ঠান্ডা বাতাসে চোখ বন্ধ করে মিষ্টি ছোয়া গুলো অনুভব করছি । পেছন থেকে আম্মুনি এসে জড়িয়ে ধরলো – গুড মর্ণিং মাই বেবি।
– গুডু গুডু ঠান্ডা সু অর্থ সুন্দর প্রভাতি অর্থ ভার সকাল আম্মুনি ।
– একটা কথাও ঠিক করে বলতে পারিস না তাইনা ? রাগ দেখিয়ে চলে গেলো ।
কেউ ভালুপাসেনা😒
বিছানায় বসে একটু পড়ে নিয়ে আম্মুনির কাছে গিয়ে গুড়া দুধের প্যাকেট নিয়ে বসলাম । হাতের তালুতে নিয়ে দেখিয়ে দেখিয়ে চেটে চেটে খাওয়া শুরু করলাম । একটু আগেই ঝাড়ি খেয়েছি । এখন গুড়া দুধ চেটেচেটে খাবো । আম্মুনি ভ্রু কচকে তাকিয়ে থেকে বললো – ওহ দুধ খাবি । আগে বলবিতো । এখনি গরম করে দিচ্ছি । আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চাটতেই থাকলাম । আম্মুনি গ্লাসে ডেলে যেই আমার দিকে আসছে সেই দৌড় দিয়ে রুমে এসে দরজা লক করে দিলাম । ডায়রি নিয়ে লিখতে বসলাম —

” ভেবেছিলাম শীতল হাওয়ায় ভেসে ফুরফুরা মেজাজে দিন কাটাবো । কিন্তু ঝাড়ি খেয়ে মুড অফ । আব্বু আজ সারাদিন থাকবেনা। তাই মনের মতো খুশি খুশি সেড দিন সেলিব্রেট করবো আজ । যা ইচ্ছা তাই করবো । বিকজ কেউ ভালুপাসে না 😒।”
ব্যাগ থেকে সব বই বের করে একটা খাতা আর কলম ডুকিয়ে চকলেট বক্স , কয়েকটা প্রান চাটনি ডুকিয়ে নিলাম । আব্বুর রুমে এসে ড্রয়ার থেকে দশ টাকার দশটা চকচকে নোট নিলাম । ফ্লোর টাচ একটা সবুজ গাউন পড়ে চুলগুলা ছেড়ে দিলাম । আচড়াবো না । আওলা ঝাওলা চুল দেখতে সুন্দর লাগে আমার কাছে । তাই আরো আওলা ঝাওলা করে ফুলিয়ে দিলাম । দেখে মনে হইতেছে কাঙ্গানা রাওনাট এর তুহি মেরি সাব হে ..সুবাহে ..তুহি মেরি দুনিয়া .. গানের শুটিং করতে যাইতেছি । বাট ওয়াইন পাবো কই? ঠোটে মেরিল দিয়ে গালে পাউডার দিলাম ইচ্ছামতো । এখন পুরো বিলাই লাগতাছে। বাপরে আমি তো এত্তোগুলা সুন্দর । ব্যাগ কাধে ঝুলিয়ে ডাইনিং থেকে ধনিয়া নিয়ে বের হলাম চিবুতে চিবুতে । সামনে পড়লো জেম্মা । এগিয়ে এসে বলে – কই যাস পাগলির মতো? স্কুল ড্রেস কই ? ড্রেস ছাড়া স্কুলে যাবি না ।
– এইযে আসছে হেডু কাকা স্যারের শাশুমা । শোন জেম্মা স্কুলটা কার ? আমার দুলাভাই কাকুর । সো যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে যাবো ।
– দুলাভাই কাকু বলিস কেনো তুই প্রায়ই বোঝিনা?
– তোমার বোঝার বয়স হয় নাই । চুল পাকলেই বয়স হয় না বুঝলে । দুলাভাই কাকুর একটা চুল ও পাকে নাই বয়স কিন্তু ঠিকি হইছে । কি দেখে যে আমার দুধের শিশু বোনটারে বিয়ে দিছিলা আমি জানিনা । বাই ।
পেছন থেকে সাবিনা দৌড়ে আসতেছে ভাত খেয়ে যা ভাত খেয়ে যা বলে । দিলাম এক দৌড়ে মেইন রোড়ে এসে থামলাম । সামনের দোকান থেকে আধা হাফ লিটারের একটা কোকা কোলা কিনলাম । দোকানদার বেটা দেখি তাকায়ে আছে আমার দিক । ভাব নিয়ে বললাম – জানি তাকাইয়া থাকবেন ই । সুন্দরী মেয়ে দেখলে যা হয় ।
দোকানদার আরো হা করলো । আমার কি ? হাটতে লাগলাম সামনের দিক। বাহ আমিতো ভালোই ভাব নেই । কিন্তু এই ডায়লগ কোন জানি সিনেমা থেকে শিখছিলাম 🤔। মনে নাই । মনে পড়লে বলমুনি । শুধু মনে আছে নায়কা পপির ডায়লগ । আমি আজ সকাল থেকে জোরে জোরে বক বক করতাছি কেন ? ঠিকি আছে তাই করমু আজকে😁। বাজারে ঢুকতেই সবাই যেনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে দেখতেছি । সেটা বড় কথা না । কথা হচ্ছে যে ঘাড়ের মধ্যে চুলে কাতুকুতু লাগতাছে । উফফ অসহ্যকর । এগুলারে টাইট দিতে হবে । কিন্তু বাধমু কই ? চিরুনি আছে , ব্যন্ড আছে মিরর তো নাই । আরেকটু এগিয়ে দেখি একটা ব্লাক কালার ছোট প্রাইভেট কার । চার সিটের । কেরাবেরা করে নাম লিখছে পড়তে পারি না । সামনে গিয়ে গ্লাসের দিকে তাকিয়ে ব্যাগটা দু হাটুর চিপায় রেখে চিরুনি দিয়ে চুল আচড়ে ছোট ছোট চুলের যেমন শিংয়ের মতো ঝুট্টি করে তেমন ঝুট্টি করলাম । কিন্তু কাঙ্গানা রেওনাট কি কখনো এরোকম ঝুট্টি করছিলো 🤔 । হটাৎ দেখি গ্লাস খুলে গেল । ভিতর থেকে আওয়াজ এলো – দুষ্টু পুতুল ….।
ওমা এতো দেখি স্যার । হাত নাড়িয়ে বললাম
– হাই😅। বাই😅। হন হন করে চলে এলাম । আমি কি এখন দুষ্টু পুতুল নাকি ? আমি এখন কাঙ্গানা রেওনাট ।
তানভীর ভ্রু কুচকে তাকায় । এমন লাগছে কেন সব ? গাড়ি থেকে নেমে লাবিবার পিছু পিছু যায় । মাঝরাস্তায় লাবিবা দাড়িয়ে পড়ে ।
আচ্ছা আলালের টায় যাবো নাকি নোটনের টায় ? নোটনের টায় তো নীল চা নাই । আলালের টায় যাই । হোটেলে ডুকেই আলালের সামনে যেয়ে বললাম
– আলাল ভাই নীল চায়ের দাম কতো ? আচ্ছা তুমি নীল চায়ে কি কি উপকরন দাও ? নীল রং টা কোনটা দাও ? কাপড়ের নীল দাও নাকি দেয়ালের রং দাও নাকি কলমের নীল কালি দাও ? আচ্ছা এটা কি চিনি দিয়ে বানাও নাকি নুন দিয়ে ? এটা গরম পানি দিয়ে করো নাকি ঠান্ডা পানি দিয়ে ? এটা তুমি বানাও নাকি ঐ ছেলেগুলা বানায় ?
“সেট আপ দুষ্টু পুতুল। স্টপ ইউর নন স্টপ বকবকুনি।”
” উফফ আমার ডিস্টাব নষ্ট করলো কে ?”
পেছন ফিরে দেখি স্যার দাড়িয়ে ।
” আজাইরা বকবকানি রাখো । চা খাবে তো । মামা দুধচা দেন ”
” আমি নীল চা খাবো ”
আলাল-” আমিতো নীল চায়ের নাম ই শুনিনী কখনো ”
” কিহ… এরা তো দেখি এখোনো কলি যুগেই হামাগুড়ি খাচ্ছে । মঙ্গল গ্ৰহে বাস করেও পৃথিবীর নাম জানে না । হুস হুস ”
রাস্তা দিয়ে হাটা ধরলাম । স্কুলে এসে ক্লাসে না গিয়ে বারান্দায় পা ঝুলিয়ে বসে চকলেট খাচ্ছিলাম । এক লোক আগে কখনো দেখি নি সামনে এসে দাড়িয়ে হাসতেছে । পান খাওয়া লাল কালা দাত দেখে রাগ উঠে গেলো ।
” দাত কেলান কিলা ?
” এই ভাবে কথা বলো কেন ? মাথার উপরে পাখির বাসা বানাইছো নাকি ?”
পেছন থেকে হি হি শব্দ পেয়ে তাকিয়ে দেখি সবাই ক্লাসে । জানি এখানেই ছিলো সবগুলা। আমার সামনে কিছু বলার সাহস নেই তাই চলে গেছে । পান দাত ওয়ালা দেখি এখনো ভেটকাইতাছে ।
” কাকু এইটা নিউ স্টাইল । প্রথমে নাম ছিলো nest style . আমি আপডেট কইরা দিছি monkey style. যদিও নামের সাথে কোন মিল নাই ।
ক্লাসে চলে এলাম । নুপুর এসে রাগ দেখিয়ে আমার ঝুটি খুলে আচরিয়ে পেছনে খুলে দিলো । যদিও এখনো কাঙ্গানা রেওনাট লুক পাইতেছি😎। দুই ক্লাস করে আর করতে ইচ্ছা করলো না । লিপি মেডামের সামনে গিয়া পেট ধরে দাড়িয়ে থাকলাম । উনি পাড়াপড়শি বৌদি লাগে আমার । হিন্দু মানুষ। আমার কাধে হাত রেখে বলতেছে
– হায় ভগবান ..লাবি মনি কি হইছে তোমার হে ? তুমি পেট ধরে দাড়িয়ে আছো কেন হু?তোমার পেট ব্যথা করতেছে হ ? তুমি ঠিক আছো তো হা?
উনার হে হু হ হা শুনলেই আমার প্রচুর হাসি পায় । কিন্তু এখন হাসা যাবে না । না হাসতে পেরে সরি ফিল করে দিলাম কেদে ।
– বাড়ি যাবো হ ।
– যাও যাও হা । মুক্তা স্যারকে বলমু হে ?
– বলা লাগবে না হ। আমি একাই যেতে পারবো হা ।
চলে এলাম স্কুল থেকে । ব্যপার টা হলো যে কোন ব্যপার ই না এগুলো মেনেজ করা আমার পক্ষে । রাস্তায় দেখি ঐ পান দাত ওয়ালা কাকু গাড়ির সামনে দাড়িয়ে । তার মানে ঐটা তার ই গাড়ি । উচিত শিক্ষা দিবো এটাকে । আমাকে দেখে দাত কেলানো । সামনে দেখি মাথায় করে কলার ঝুড়ি নিয়ে যাচ্ছে । সম্ভবত আমাদের বাগানের কলাই । সাইজ দেখেই বোঝা যাচ্ছে । লোকটার সামনে এসে জিজ্জাসা করলাম
– which the দাম of কলা ?
লোকটা বত্রিশ পাটি খুলে
– কলা কিনবা ? এক হালি দশ টাকা ।
– দেও me দুই হালি banana of কলা ।
– কি কও এগ্লা ?
– উগান্ডার ইংরেজি শুদ্ধ বানানিকা ।
বিশ টাকা দিয়ে দু হালি কলা নিলাম। কলা গুলা ছুলে ছাল গাড়ির সামনে সমান করে লাইন করে রাখলাম । কলা গুলা পাশের ক্ষেতে ফেলে দিলাম সারের কাজ করবো ।দেখছো আমি কতো ভালা মানুষের কপোকার করি🤠। কিন্তু একি ?? ছালের উপর দিয়ে বেটায় প্রাইভেট কার নিয়ে চলে গেলো একটুও পিছলাইলো না । হায়রে মন্দ luck আমার । ছাল গুলো খুটে খুটে তুলে ক্ষেতে ফেলে দিলাম নয়তো আবার আমিই পিছলামু । হাত ধুয়ার জন্য মালেকের দিঘির উদ্দেশ্যে ছুটলাম । হাত ধুয়ে ঘাটেই বসলাম । পাশেই হিন্দু বাড়ি । তাই দিঘির ধার ঘেসে তুলসি , জবা, বেলি, পাতাবাহার খুব সুন্দর লাগতেছে । আহা এখানে যদি কালো গোলাপের একটা গাছ হতো ফুল গুলো সব আমিই নিতাম । মনটা খারাপ হয়ে গেলো । কয়েকটা পাথর কুড়িয়ে এনে পানিতে মারতে লাগলাম আর আচুর বের করে খেতে লাগলাম। আনমনে নিজের কাজ করে যাচ্ছি । হটাৎ পাশে কে যেন ধপ করে বসে পড়লো । ভয় পেয়ে তাকিয়ে দেখি স্যার । আল্লাহ আল্লাহ করে বুকে থু থু দিলাম ।
তানভীর ঝালমুড়ি সামনে ধরলো ।
” ঝাল মুড়ি …ইয়াম্মি…মিস করছিলাম । ঝাল দিয়েছেতো বেশি করে ..”
” হুম । ময়না মামা বললো তার এক রেগুলার কাস্টমার নাকি আজ মিসিং তাই নিয়ে এলাম ।”
” হু”
ঝালমুড়ি নিয়ে খেতে থাকলাম । ঝাল ঝাল মুড়ি আমার বেশ ফেভারিট।
” উদাস কেন ?
উদাসী দিনে ভাবো কি তুমি
দিক দিগান্তের মুখ করে ?
শুকনো মুখে তপ্ত দুপুরে
দিঘীর জলে নিজ ছায়ার
ঢেউ খেলানো দেখে দেখে ।”

” কেউ ভালুপাসে না ।”
” কিহহ?? কে বললো তোমাকে ? তুমি জানো তোমার আব্বু, আম্মুনি ,জেঠু ,জেম্মা ,আপু, দুলাভাই , নুপুর , আমার ফেমেলি কতো ভালোবাসে ?”
” আপনি ভালুপাসেন ? আপনি একটুও ভালুপাসেন না
। একটা রোজ দিলে কি হয় আপনার ? একটাই তো কালো গোলাপ চেয়েছিলাম । একগুচ্ছ কালো গোলাপ তো চাইনি । আপনি একটা ডেভিল। ”
ব্যাগ নিয়ে চলে আসলাম ।

তানভীর দেখলো লাবিবা চাটনি টা ফেলে গেছে । হাতে নিয়ে যেখান দিয়ে লাবিবা খেয়েছে সেখানেই একটা চাট দিলো। লাবিবার রেখে যাওয়া পাথর গুলো এক এক করে পানিতে ফেললো ।
” তুমিতো একটা কালো গোলাপ চেয়েছো । একটা গোলাপ কাউকে দিয়ে নিজের ক্ষতি করতে চাইনা আমি । সমস্ত গোলাপ শুধু একজনের জন্য । যা আজ ফুটছে তাও তার নামেই দিয়েছি আমি । যা পরে ফুটবে তাও তার নামেই দিয়েছি । তুমি হয়তো সেই একজন হতে পারবেনা । কারন তোমার আমার ব্যবধান আজো সর্বোচ্চ। যদি হয়েও যাও তবুও তোমায় দিবোনা আমি যতোক্ষন পর্যন্ত তুমি #একগুচ্ছ কালো গোলাপ আমার থেকে না চাইবে । যদি কখনো একগুচ্ছ কালো গোলাপ চাইতে পারো .. তাহলে আমি তোমায় পুরো গাছটার রানী করে দিবো সাথে আমার রানীও। ”

To be continue _____

#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_১৯

🍁
ক্লাস শেষ হওয়ার পর স্যার রা বলে গেলো কিছুক্ষন ওয়েট করতে । আজ কমিটির সবাই এসেছে কি নাকি সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের বলবে । বসে থাকতে থাকতে জান যায় তবুও স্যাররা আসে না । জানালায় উঠে বসে পেছন দিকে প্রকৃতি দেখছে লাবিবা । পেছনেই সরকারি হাসপাতাল । দু তালায় কোয়াটার সেদিকে তাকাতেই জানালা দিয়ে দেখে টিভিতে সিসিমপুর হচ্ছে । চোখ দুটো উপরে উঠে যায় লাবিবার ।
মানে টা কি ? আজ তো মঙ্গলবার তাহলে সিম সিম পুর হচ্ছে কেন ? আবার একদিন এগিয়ে দিলো । তারমানে এখন মঙ্গল আর বুধবার হবে । আমি এখনো স্কুলে .। আর এক মুহূর্ত নয় দুলাভাই কাকুর স্কুলে । নুপুর তুই থাক আমি উলাল্লা উলাল্লাই এক দৌড়ে পালাই ।
– জানু…উলাল্লা উলাল্লা আমাক সাথে নিয়েই পালা । বলে নুপুরো পিছু পিছু দৌড় ।
কিন্তু বিপত্তি বাজলো মাঠ পেরুতেই । সামনে কামরুল স্যার এসে দাড়ানো তা দেখে লাবিবা নুপুর দুজনেই ব্রেক কষলো । কামরুল স্যার -কিরে কোথায় যাওয়া হচ্ছে হ্যাড স্যারের শালিকারা ?
লাবিবা- স্যার আজকো টিভি পে আছে না ..সিম সিম পুর দেখালিয়া । মে উসকো নেহি মিস কর চাতিহু । আর ইউ বুঝতিহু ? আগার মে নেহি যাতি হিনু ..উসকো সিম সিম পুর সাইসুইড খানালিয়া । সিম সিম পুর সাউট কারতিহু মেনে লাবিবা কেন নেহি দেখলিয়া ..কেন নেহি দেখলিয়া । আর ইউ বুঝতিহু ? টিভিকা সামনে বেঠিহে প্লেস আছিসা উসকো কানতাহু মেরে লিয়া ।মে যাহিতু দেন বঠিহু দেন প্লেস কান্না বন্ধ করতিহু । আর ইউ বুঝতিহু ?
কামরুল মাথা থেকে কেপ খুলে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে – কি বলস ? কিছুই তো বুঝতেছিনা ।
নুপুর – আর ইউ নেহি হিন্দি বুঝতাহু ? তো যাও পানিতে সাকিং করে মরতাহু । আপনা বিচলিকেলিয়ে নেহি অধিকার আতিহু ।
লাবিবা ন্যড়া মাথার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ফিক করে হেসে দিয়ে বলে – জাম্বুরা ।
কামরুল স্যারের জাম্বুরার কথা শুনে জিবে জল চলে আসে ।
– কি জাম্বুরা ? আছেনি তগো গাছে ?
লাবিবা- হ্যা জিয়ে । আপনি দুই মিনিট খারিয়ে মে আপনাকা লিয়ে হামারা বসত ভিটা থেকে জাম্বুরা আনিয়ে । দেন আপনার মুখে মারিয়ে আপ দাত কেলিয়ে পড়ে যাইয়ে । মে আনিয়ে ।
– অয় অয় জাম্বুরা আনবি ।
– হ জাম্বুরা । আনতাছি । আপনি অপেক্ষা করুন । নুপু চল । বলেই হাত ধরে দুটোই দৌড় । এক দৌড়ে লাবিবাদের বাসা । নুপুর দের বাড়ি যেতে অনেক টাইম লাগবে তাই লাবিবার বাসায় এসেছে ।
এদিকে কামরুল স্যার শহীদ স্যারের কাছে গিয়ে বলতাছে – আজকে জাম্বুরা নিয়ে বাসায় যাবো স্যার ।আপনার মেডামের অনেক পছন্দ।
– বাজারে জাম্বুরা উটছে নাকি স্যার ?
– না লাবিবা বলে গেছে জাম্বুরা দিবে ওদের গাছের । তাই বাসায় গেলো জাম্বুরা আনতে ।
পেছন থেকে মুক্তা শুনে অবাক । সাথে সাথে হেসেও ফেললো । কারন লাবিবা ন্যাডা মাথাকে জাম্বুরা বলে । আর আসল ফল জাম্বুরাকে বাতাবী লেবু বলে । শহীদ আর কামরুল মুক্তা স্যারের হাসির দিকে তাকিয়ে থাকে ।

বাসায় এসেই দুজনে চেঞ্জ না করে আগে সিমসিমপুর শেষ করে । তারপর ফ্রেশ হয়ে খেতে বসে ।দুজনেই খাবারে হাত নাড়ছে আর চোখে চোখ রেখে বসে থাকে । নুপুর – জানু ..এগুলাতো বাসাতেও খাই । তুইও এসবি খাওয়াবি ?
– একদম না । স্পেশাল মজা করে খাবো । চল ।
হাত ধুয়ে একটা হরলিক্সের বোয়াম নিয়ে যেটা তানভীর এনেছিলো সেটা নিয়ে বারান্দার কোনে গিয়ে দুজনে ফ্লোরে বসে চেটে চেটে খেতে থাকে । এদিকে আনিস এসে হাজির মেয়েকে খুজতে খুজতে । ইসমাইল ও এসেছে । দুই বন্ধু খুজতে এসে দেখে দুই বান্ধুবী মুখে হাতে হরলিক্স দিয়ে বিড়াল রুপ ধরে আছে । আনিস নুপুরকে নিয়ে চলে যায় ।

পড়তে বসেছে লাবিবা আর নুপুর । সামনে বসা তানভীর । বইয়ের থেকে তানভীরের দিকে চোখ বেশি পড়ছে লাবিবার । তানভীর যখন খেয়াল করে লাবিবা তার দিকে তাকিয়ে তখন ভ্রু কুচকে তাকায় । লাবিবা ঠোট প্রশস্ত করে মিকি হাসি দেয় ।
– স্যার । আজকে আমি সব পড়া শিখছি ।
– সেটা আমি এখানে বসেই তোমাকে শিখিয়ে দেই ।
লাবিবা মাথা নেড়ে পড়ায় মন বসায় ।
কিছুক্ষন পর লাবিবা আবার তাকিয়ে আছে দেখে তানভীর চোখ উপড় করে কি জিজ্জাসা করে ।
– স্যার আপনি কোন স্কুলের টিচার ?
– আমি লাবিবার স্কুলের টিচার । যে স্কুলে মাত্র তিন জন স্টুডেন্ট। লাবিবা নুপুর আর তানিয়া ।
– স্যার আরো কোন স্টুডেন্ট নিবেন ? আর বন্ধু নাঈম পড়বে ।
– জি না । সিট ফিল আপ ।
লাবিবা পড়ায় মন দেয় । পড়া শেষ করে বের হতে নেয় তখন আবার ঘুরে এসে বলে
– ও স্যার স্যার ।
– বলো ।
– আপনার বয়স কতো ?
– তুমি যখন ক্লাস ওয়ানে পড়ো তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি । বুঝলে ?
– আপনিতো বুইড়া ।
– কিহ ??
– না স্যার কিছুনা । স্যার আপনি বিয়ে কবে করবেন ?
– কেনো ?
– লাবিবা এগিয়ে এসে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে গ্যালারিতে ঢুকে একটা ছবি বের করে সামনে ধরে ।
তানভীর দেখে একটা মেয়ের ছবি । বয়স কম ।
– কে এটা ?
– তিথী । আমার ফ্রেন্ড। আপনি সেদিন যখন স্কুলে গিয়েছিলেন তখন আপনার প্রতি ক্রাসিতো হয়েছে । ও অনেক সুন্দর । ফর্সা লম্বা সুন্দর । দেখুন স্যার ছবিতে দেখুন ।
– তো এখন কি করবো আমি ?
– ওর বিয়ের দেখাশুনা চলছে । ও আপনাকে পছন্দ করে । এখন আপনি ওকে বিয়ে করুন ।
তানভীর চুপ ।
ছবি চেঞ্জ করতেই লাবিবার একটা ছবি আসে । তানভীর দেখিয়ে বলে – দুষ্টু পুতুল দেখো তিথীর থেকে এই মেয়েটাকে বেশি ভালো লাগছে । আমি একে দেখে ক্রাসিত । তুমি বরং এক কাজ করো তুমি তিথীর ঘটকালি না করে আমারটা করো । আমি তোমায় অনেক গুলো চকলেট দিবো ।
– ও আমার আল্লাহ ..স্যার এইটাতো আমি ।
– কে বলছে এইটা তুমি ? তুমি দেখতে পাওনা ? এই মেয়েটা কেমন আর তুমি কেমন দেখোনা ।
– না স্যার এটা সত্যি আমি।
– আরে এটা তো বড় একটা মেয়ে । তুমিতো আম্মুনিকা হরলিক্স খাওয়াকা বাচ্চিকা ।
– না স্যার এটা আমি ।
– না এটা তুমি না । আমি একে বিয়ে করবো ।
– স্যার এইটা আমি ।
– না এইটা আমার হবু বউ । নাম্বার দাও আমার হবু বউয়ের । আজি বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো।
– না । এইটা আমি বিশ্বাস করুন স্যার ।
– না এইটা আমার বউ।
এবার লাবিবা কেদে ফেলে
– স্যার এইটা আমি😭
– কাদেনা । তুমি বসে বসে কাদলে আমার বিয়ের ঘটকালি কে করবে বলো।
– এইটা আমি😭।
কান্না শুনে সোহানা আসে । লাবিবাকে নিয়ে উপরে যেতে থাকে । লাবিবা বার বার পিছু ফিরে ভেজা চোখে পিট পিট করে তানভীর কে দেখে।
লাবিবা চলে যেতেই তানভীর হো হো করে হেসে ফেলে ।
উপরে এনে লাবিবাকে খাটে বসিয়ে একটা শপিং ব্যাগ এনে দেয় সোহানা ।লাবিবা বের করে দেখে একটা রেডিমেট সেলোয়ার কামিজ ।
– এইটা আমার ?
– হ্যা। পছন্দ হয়েছে মা ?
– শাশুমা আমি তো সেলোয়ার কামিজ পড়ি না ।
– পড়িস না তো পড়বি । বড় বড় লাগবে তোকে।
– পড়ে এসে দেখিয়ে যাবি আমাকে ।
– আচ্ছা । এখন বাই।

To be continue ____